الَّذِينَ
كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ أَضَلَّ
وَالَّذِينَ
آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَآمَنُوا بِمَا نُزِّلَ عَلَىٰ مُحَمَّدٍ
وَهُوَ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ ۙ كَفَّرَ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَأَصْلَحَ
بَالَهُمْ [٤٧:٢
ذَٰلِكَ
بِأَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا اتَّبَعُوا الْبَاطِلَ وَأَنَّ الَّذِينَ آمَنُوا
اتَّبَعُوا الْحَقَّ مِن رَّبِّهِمْ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ لِلنَّاسِ
أَمْثَالَهُمْ [٤٧:٣
সরল অনুবাদঃ
“যারা কুফরি
করেছে এবং আল্লাহর পথে চলতে বাঁধা দিয়েছে, আল্লাহ তাদের সমস্ত কাজকর্ম ব্যর্থ করে দিয়েছেন
।
আর যারা ঈমান
এনেছে, নেক কাজ করেছে এবং মুহাম্মদের প্রতি যা নাজিল করা হয়েছে তা মেনে নিয়েছে
- বস্তুত তা তো তাদের রবের পক্ষ থেকে নাজিলকৃত অকাট্য সত্যকথা
- আল্লাহ তাদের খারাপ কাজগুলো তাদের থেকে দূর করে দিয়েছেন এবং তাদের অবস্থা শুধরে দিয়েছেন
।
কারণ হলো, যারা
কুফরি করেছে তারা বাতিলের আনুগত্য করেছে এবং ঈমান গ্রহণকারীগণ তাদের রবের পক্ষ থেকে
আসা সত্যের অনুসরণ করেছে । আল্লাহ এভাবে মানুষের সামনে তাদের উদাহরণসমূহ উপস্থাপন করেন (সঠিক মর্যাদা ও অবস্থান
বলে দেন) ।” সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ১-৩
নামকরণঃ
নামকরণঃ
সূরা মুহাম্মদের মোট আয়াত সংখ্যা
৩৮
। দ্বিতীয় আয়াতে উল্লেখিত
وَالَّذِينَ
آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَآمَنُوا بِمَا نُزِّلَ عَلَىٰ مُحَمَّدٍ
وَهُوَ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ ۙ ‘মুহাম্মদ’
শব্দ হতে এর নাম গৃহীত হয়েছে । এই সূরাটির অপর একটি নাম ‘কিতাল’ । ২০ নম্বর আয়াতে উল্লেখিত
শব্দ হতে এই নামটি নেয়া হয় । তাছাড়া সূরাটিতে মোটামুটিভাবে ‘কিতাল’ সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা
এসেছে
।
নাজিলের সময়কালঃ
মাদানী যুগের
প্রাথমিক সময়ে যখন মুসলিমদের যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে কিন্তু তখনও যুদ্ধ শুরু হয়নি
সেই সময় এই সূরাটি নাজিল হয় ।
পটভূমিঃ
হিজরতের কিছুকাল
অতিবাহিত হয়েছে । বিভিন্ন জায়গা হতে নির্যাতিত মুহাজিরগণ
মদীনায় এসে আশ্রয় নিয়েছেন । তারা অর্থনৈতিক দিক থেকেও যথেষ্ট দুর্বল
। আবার মুহাজিরদের আগমনে মদীনার অর্থনৈতিক অবস্থাও কিছুটা চাপে পড়েছে
। অন্যদিকে মদীনার চারিদিকে অবস্থিত কাফির-মুশরিক জাতিগুলো এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটির
অস্তিত্ব মিশিয়ে দেয়ার পণে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে লিপ্ত
। সবসময় একটা আশঙ্কায় দিনাতিপাত করছে মুসলিমগণ
। ঠিক সেই সময় যুদ্ধ সংক্রান্ত আয়াতগুলো নাজিল হয়
। প্রথমে সূরা হজের ৩৯ নম্বর আয়াত যেখানে মুসলিমদেরকে যুদ্ধের অনুমতি প্রদান করা
হয় : “অনুমতি দেয়া হলো তাদেরকে যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হচ্ছে, কেননা তারা মজলুম
। এবং আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখেন
।”
এবং এর পর পরই
সূরা বাকারার ১৯০ নম্বর আয়াতে যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হয় : “আর তোমরা আল্লাহর পথে তাদের
সাথে যুদ্ধ করো, যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে, কিন্তু বাড়াবাড়ি করো না
। কারণ যারা বাড়াবাড়ি করে আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন না
।”
এই পরিস্থিতিতে
মুসলিমগণকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা এবং যুদ্ধের কথায় দুর্বলচিত্ত মুসলিম ও মুনাফিকদের
বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তার জবাবসহ এই সূরাটি নাজিল হয়
।
বিষয়বস্তুঃ
সূরাটিতে নিম্নোক্ত
বিষয়সমূহ আলোচিত হয়েছে
১. দু’টি বিপরীতমুখী দলের পরিচিতি ও পরিণতি
।
২. মুসলমানদেরকে প্রাথমিক সামরিক নির্দেশনা, কুরবানি
ও ত্যাগের নজরানা পেশের নির্দেশ ।
৩. কাফেরদের আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত ও ব্যর্থ
হওয়ার ঘোষণা ।
৪. মুনাফিকদের ভীতি ও দ্বিমুখীতার স্বরূপ উন্মোচন
।
৫. নিজেদের স্বল্প
সংখ্যা ও উপকরণ দেখে সাহস না হারানো এবং সন্ধির প্রস্তাব দিয়ে দুর্বলতা প্রকাশ না করার
নির্দেশ । শুধুমাত্র আল্লাহর উপরই ভরসা রেকে
বাতিলকে চূর্ণ করার নির্দেশ ।
৬. সবশেষে এহেন
পরিস্থিতিতেও আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় ও কৃপণতা পরিহারের নির্দেশ
। সেই সাথে আদেশসমূহ পালন না করলে শাস্তি ও অন্য জাতি দ্বারা স্থলাভিষিক্ত হওয়ার
হুঁশিয়ারী ।
সংশ্লিষ্ট হাদিসঃ
সহীহ বুখারীর
কিতাবুত তাফসীরে রক্তসম্পর্ক সম্পর্কিত একটি হাদিসে সূরা মুহাম্মদের উদ্ধৃতি এসেছে
: আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহতাআলা
সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেন । এ থেকে তিনি ফারেগ হলে, রাহিন (রক্তসম্পর্ক) দাঁড়িয়ে পরম করুণাময়ের আঁচল টেনে ধরলো
। তিনি তাকে বললেন, থামো! সে বলল আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ব্যক্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনার
জন্যই আমি এখানে দাঁড়িয়েছি । আল্লাহ বললেন, যে তোমাকে সম্পৃক্ত রাখে আমিও তাকে সম্পৃক্ত রাখবো; আর যে তোমার
থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে, আমিও তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবো- এতে কি তুমি সন্তুষ্ট নও
? সে বলল, নিশ্চয়ই হে আমার প্রভু । তিনি বললেন, যাও, তোমার জন্য তাই করা হলো
।”
আবু হুরায়রা
রা: বলেন, ইচ্ছা হলে তোমরা পড় “ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয়
সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে
।” মু’আবিয়া ইবনে আবুল মুযাররাদ রা: থেকেও অনুরূপ বর্ণনা পাওয়া
যায় ।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাঃ
আয়াত নম্বর ১ : الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ أَضَلَّ
“যারা কুফরি
করেছে এবং আল্লাহর পথে চলতে বাঁধা দিয়েছে, আল্লাহ তাদের সমস্ত কাজকর্ম ব্যর্থ করে দিয়েছেন
।”
কুফরি করা অর্থ
হলো, রাসূলের সা: -এর শিক্ষা ও পথনির্দেশ মানতে অস্বীকৃতি জানানো
। এটি বিভিন্ন পর্যায়ের হতে পারে
। যেমন :
১. ঈমানের বিষয়সমূহ সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করা
২. রাসূল সা: এর শিক্ষা ও পথনির্দেশের কিছুটা অংশ মানতে অস্বীকার করা
৩. কুফরি মতবাদ সমর্থন / পালন করা প্রভৃতি ।
৪. ব্যক্তিগত
জিবনে
,সমাজ
জিবনে
এবং
রাষ্ট্রিয়
ভাবে
ইসলামের
হুকুম
মানতে অস্বীকার করা বা
প্রতিষ্ঠার বিরুধীতা
করা
কুফরি ।
অন্যদিকে আল্লাহর
পথে চলতে বাঁধা দেয়াটাও বিভিন্ন পর্যায়ের
।
প্রথমত, সরাসরি
বা প্রত্যক্ষ বাঁধা । দ্বিতীয়ত, পরোক্ষভাবে বাঁধা দেয়া ।
অন্যদেরকে বাঁধা
দেয়াটা নিম্নরূপ হতে পারে :
১.
জোরপূর্বক বাঁধা দেয়া
।
২. নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়ে বাঁধা দেয়া
।
৩. যারা দ্বীনের অনুসারী তাঁদের মধ্যে দ্বীনের ব্যাপারে বিভ্রান্তি
ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি ।
৪. প্রতিটি কাফির ব্যক্তি তার পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য আল্লাহর
পথে চলতে বাঁধা ।
৫. প্রতিটি কুফরি মতবাদ লালনকারী সমাজ সেই সমাজের সদস্যদের জন্য
দ্বীনের পথে চলতে বাঁধা
সমস্ত কাজকর্ম
বা কর্মফল ব্যর্থ হওয়ার অর্থ হতে পারে :
১. বিপথগামী হওয়া / পথভ্রষ্ট হওয়া / ধ্বংস হওয়া / পণ্ড করা ।
২. তাদের চেষ্টা ও শ্রম সঠিক হওয়ার তৌফিক ছিনিয়ে নেয়া
।
৩. ধারণার বশবর্তী হয়ে যে নেক কাজগুলো করে তার প্রতিদান বিনষ্ট
হওয়া ।
৪. ন্যায়ের বিরুদ্ধে তাদের কৌশল বা ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়া
।
আয়াত নম্বর ২:
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَآمَنُوا
بِمَا نُزِّلَ عَلَىٰ مُحَمَّدٍ وَهُوَ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ ۙ كَفَّرَ
عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَأَصْلَحَ بَالَهُمْ
বলা হচ্ছে,
“আর যারা ঈমান এনেছে, নেক আমল করেছে এবং মুহাম্মদের প্রতি যা নাজিল হয়েছে তা মেনে নিয়েছে
- বস্তুত তা তো তাদের রবের পক্ষ থেকে নাজিলকৃত অকাট্য সত্য কথা
- আল্লাহ তাদের খারাপ কাজগুলো তাদের থেকে দূর করে দিয়েছেন এবং
তাদের অবস্থা শুধরে দিয়েছেন ।”
এই আয়াত অনুযায়ী
ঈমানের বিষয়বস্তু : সূরা বাকারার ৩ -৪ নম্বর আয়াতে এভাবে বর্ণিত হয়েছে,
الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ
وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ [٢:٣
وَالَّذِينَ
يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ
هُمْ يُوقِنُونَ [٢:٤
যারা অদেখা বিষয়ের
উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে
। আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে
এবং যারা বিশ্বাস
স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের
উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে
। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে
।
এই আয়াত অনুযায়ী
ঈমানের বিষয়বস্তু : সূরা বাকারার ১৭৭ নম্বর আয়াতে এভাবে বর্ণিত হয়েছে,
لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ
الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ
الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ
ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ
وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ
وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا ۖ وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ
وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ ۗ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا ۖ وَأُولَٰئِكَ
هُمُ الْمُتَّقُونَ
“তোমাদের মুখ
পূর্ব দিকে বা পশ্চিম দিকে ফিরাবার মধ্যে কোনো পুণ্য নেই
। বরং সৎকাজ হচ্ছে এই যে, মানুষ আল্লাহ, কিয়ামতের দিন, ফেরেশতা, আল্লাহর অবতীর্ণ
কিতাব ও নবীদেরকে মনেপ্রাণে মেনে নেবে
এবং আল্লাহর
প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের প্রাণপ্রিয় ধন-সম্পদ, আত্মীয় -
স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ও ক্রীতদাসদের
মুক্ত করার জন্য ব্যয় করবে । আর নামাজ কায়েম করবে এবং যাকাত প্রদান করবে
। যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করবে এবং বিপদে-অনটনে ও হক-বাতিলের সংগ্রামে সবর করবে
তারাই সৎ ও সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকী ।”
এখানে পূর্ব
ও পশ্চিমের দিকে মুখ করার বিষয়টিকে নিছক উপমা হিসেবে আনা হয়েছে
। আসলে এখানে যে কথাটি বোঝানো হয়েছে সেটি হচ্ছে, ধর্মের কতিপয় বাহ্যিক অনুষ্ঠান পালন
করা, শুধুমাত্র নিয়ম পালনের উদ্দেশ্যে নির্ধারিত কয়েকটা ধর্মীয় কাজ করা এবং তাকওয়ার
কয়েকটা পরিচিত রূপের প্রদর্শনী করা আসল সৎকাজ নয় এবং আল্লাহর কাছে এর কোনো গুরুত্ব
ও মূল্য নেই ।
সূরা মু’মিনুনের
১ - ১০ নম্বর আয়াত কয়টি ঈমানের প্রকৃষ্ঠতম দৃষ্টান্ত
।
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ [٢٣:١
( ১ ) মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে,
الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ [٢٣:٢
( ২ ) যারা নিজেদের
নামাযে বিনয়-নম্র;
وَالَّذِينَ
هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ [٢٣:٣
( ৩ ) যারা অনর্থক
কথা-বার্তায় নির্লিপ্ত,
وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ [٢٣:٤
( ৪ ) যারা যাকাত দান
করে থাকে
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ [٢٣:٥
( ৫ ) এবং যারা নিজেদের
যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে ।
إِلَّا
عَلَىٰ أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ
مَلُومِينَ [٢٣:٦
( ৬ ) তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না
রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না ।
فَمَنِ ابْتَغَىٰ وَرَاءَ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ
الْعَادُونَ [٢٣:٧
( ৭ ) অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালংঘনকারী
হবে ।
وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ [٢٣:٨
( ৮ ) এবং যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুশিয়ার থাকে
।
وَالَّذِينَ هُمْ عَلَىٰ صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ [٢٣:٩
( ৯ ) এবং যারা তাদের নামাযসমূহের খবর রাখে
।
أُولَٰئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ [٢٣:١٠]
( ১০ ) তারাই উত্তরাধিকার লাভ করবে
।
الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
[٢٣:١١
( ১১ ) তারা শীতল ছায়াময় উদ্যানের উত্তরাধিকার লাভ করবে
। তারা তাতে চিরকাল থাকবে ।
নিচের এই আয়াত অনুযায়ী ঈমানের বিষয়বস্তু : সূরা নিসার ৭৬ নম্বর আয়াতে এভাবে বর্ণিত হয়েছে,
الَّذِينَ آمَنُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۖ
وَالَّذِينَ كَفَرُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ فَقَاتِلُوا
أَوْلِيَاءَ الشَّيْطَانِ ۖ إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفًا
যারা ঈমানের পথ অবলম্বন করেছে তারা লড়াই করে তাগুতের পথে ৷ কাজেই শয়তানের সহযোগীদের সাথে লড়ো এবং নিশ্চিত জেনে রাখো, শয়তানের কৌশল আসলে নিতান্তই দুর্বল ৷
ঈমান দারদের জন্য
এটি
আল্লাহর একটি দ্ব্যর্থহীন ফায়সালা । আল্লাহর পৃথিবীতে একমাত্র আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে লড়াই করা হচ্ছে ঈমানদারদের কাজ । যথার্থ ও সত্যিকার মুমিন এই কাজ থেকে কখনো বিরত থাকবে না । আর আল্লাহর পৃথিবীতে আল্লাহ বিরোধী ও আল্লাহদ্রোহীদের রাজত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য তাগুতের পথে লড়াই করা হচ্ছে কাফেরদের কাজ । কোন ঈমানদার ব্যক্তি এ কাজ করতে পারে না ।
অর্থাৎ আপাত দৃষ্টিতে শয়তান ও তার সাথীরা বিরাট প্রস্তুতি এগিয়ে আসে এবং জবরদস্ত কৌশল অবলম্বন করে কিন্তু তাদের প্রস্তুতি ও কৌশল দেখে ঈমানদারদের ভীত হওয়া উচিত নয় অবশ্যি তাদের সকল প্রস্তুতি ও কৌশল ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে ।
সহীহ বুখারী
শরীফের কিতাবুল ঈমান অধ্যায়ের হাদিসসমূহও এক্ষেত্রে দেখা যেতে পারে
।
রিসালাতের ক্ষেত্রে
মুহাম্মদ সা : - এর রিসালাত অবশ্যই মানতে হবে
। এমনকি যদি আল্লাহ, আখিরাত ও পূর্ববর্তী রাসূল এবং তাদের অবতীর্ণ কিতাব মানা সত্ত্বেও
মুহাম্মদ সা: এর রিসালাত ও আল কুরআনকে না মানা হলে ঈমান হবে না
।
খারাপ কাজসমূহ
দূর করার অর্থঃ
১. পূর্বে কৃত সকল অপরাধ মওকুফ হওয়া
।
২. জাহেলিয়াতের পরিবেশ ও দুষ্কৃতি হতে নিস্তার পাওয়া
।
৩. জাহেলী রসম - রেওয়াজ হতে মুক্ত হওয়া
।
শুধরে দেয়া অর্থ
হতে পারেঃ
জাহেলী সমাজের
বিশৃঙ্খলা হতে মুক্তি লাভ করে ইসলামী সুবিন্যস্ত ও সুসজ্জিত জীবন লাভ
এতদিন নির্যাতিত হওয়ার পর এখন বাতিলের উপর বিজয়ী হয়ে নিজেদের
অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো ।
আয়াত নম্বর ৩
:
ذَٰلِكَ بِأَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا اتَّبَعُوا الْبَاطِلَ
وَأَنَّ الَّذِينَ آمَنُوا اتَّبَعُوا الْحَقَّ مِن رَّبِّهِمْ ۚ كَذَٰلِكَ
يَضْرِبُ اللَّهُ لِلنَّاسِ أَمْثَالَهُمْ
আয়াতের অর্থ
হচ্ছে, “কারণ হলো, যারা কুফরি করেছে তারা বাতিলের আনুগত্য করেছে এবং ঈমান গ্রহণকরীগণ
তাদের রবের পক্ষ থেকে আসা সত্যের অনুসরণ করেছে
। আল্লাহ এভাবে মানুষের সঠিক মর্যাদা ও অবস্থান বলে দেন
।”
এখানে বাতিলের
আনুগত্য নিম্নোক্ত কারণে হতে পারেঃ
১. আংশিক বা পূর্ণ আনুগত্য
।
২. ঈমানের পথে সক্রিয় না থাকা ( সে ব্যক্তি মুনাফিকের ন্যায় মরলো
যে না জিহাদ করেছে আর না তার মনে জিহাদের কোনো আকাক্সক্ষা জাগ্রত হয়েছে
)
৩. বাতিল ব্যবস্থার অধীনে সন্তুষ্ট চিত্তে থাকাও বাতিলের আনুগত্য
।
শিক্ষণীয় বিষয়ঃ
১. কুফরি বা বাতিলের আনুগত্য থাকলে সকল নেক আমলের
পুরস্কার ধ্বংস হয়ে যাবে ।
২. যারা কুফরি করে বা আল্লাহর পথে বাঁধা দেয়, তাদের
আমল বিনষ্ট হয়ে যাওয়া বা তাদের সকল কর্মপ্রচেষ্টা বিফল হওয়ার ঘোষণা আসায় এখন বাতিলপন্থীদের
ভয় পাওয়ার কোনো কারণই থাকতে পারে না ।
৩. ঈমানদারদের সাফল্যের কারণ এবং আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের দেয়া নেয়ামতের জন্য শুকরিয়া
আদায় করা, কৃতজ্ঞ হওয়া ও আল্লাহর আদেশ পালনে অলসতা না করা
।
৪. ঈমানদারদের জন্য আল্লাহর পথে সক্রিয় থাকাটা দুনিয়া
ও আখিরাতে মুক্তি লাভের জন্য জরুরি ।
৫. আল্লাহর
পৃথিবীতে
একমাত্র
আল্লাহর
দীন
প্রতিষ্ঠিত
করার
উদ্দেশ্যে
লড়াই
করা
হচ্ছে
ঈমানদারদের
কাজ
।
৬. আর
আল্লাহর
পৃথিবীতে
আল্লাহ
বিরোধী
ও
আল্লাহদ্রোহীদের
রাজত্ব
ও
কর্তৃত্ব
প্রতিষ্ঠার
জন্য
তাগুতের
পথে
লড়াই
করা
হচ্ছে
কাফেরদের
কাজ
।
আল্লাহ আমাদের
সকলকে তার হেদায়েতের উপর কায়েম রাখুন । আমিন ।
- মুহাম্মদ হামিদুল ইসলাম আজাদ