মনের পশুটাকে জবাই করি

ফরিদ আহমেদ হৃদয় : বিকেল বেলা আমি এবং আমার বন্ধু বরকত আমরা দু’জনে মিলে বাড়ির পাশের একটি খোলা মাঠে হাটতে গেলাম। অনেকক্ষণ হাটাহাটি ঘুরাঘুরি করে তারপর দু’জনে একটু দুর্বা ঘাসে বসে বিশ্রাম নিলাম। সামান্য গল্পও করলাম দু’জন। কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা নেমে এলো। তখন আমরা ফিরে এলাম। বরকত ওর বাড়িতে চলে গেল। আমিও আমাদের বাড়িতে চলে আসি এবং আমার রুমে গিয়ে বিশ্রাম নিতে থাকি। মাগরিবের নামাজটা শেষ করে এসে বাবা ডেকে বলল ওরে খোকা এ দিকে একটু আয়তো। আমি বাবার ডাকে সাড়া দিয়ে বাবার কাছে ছুটে এলাম। বাবা বলল কুরবানীর আর মাত্র একদিন বাকি আছে। কালকে তুই আর তোর বন্ধু বরকত মিলে গরুর হাটে গিয়ে একটি হৃষ্ট-পুষ্ট দেখে গরু কিনে আনবি, আমার শরীরটা বেশি ভাল যাচ্ছে না। আমি যেতে পারব না বাবা বলল।



পরদিন বিকেল বেলা আমি আর বরকত তৈরি হলাম হাটে যাওয়ার জন্য। বাবা তখন আমার হাতে চল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে বললেন মোটাসোটা দেখে গরু আনবি। কোন রোগা শোখা যাতে না হয় কেমন। কেননা হাদিস কোরআনে বলা আছে হৃষ্টপুষ্ট দেখে কুরবানী কর। তাই সেই মোতাবেক পশুটা যেন পুষ্ট হয় ভাল হয়। আমি বললাম ঠিক আছে বাবা তাই করব। পরে আমি ও বরকত হাটে গেলাম। হাটে গিয়ে ঘুরাঘুরি করে অনেক পশু দেখলাম যেমন- গরু, মহিষ, উট, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি। একটি গরু আমার খুব পছন্দ হলো বরকতেরও পছন্দ হলো। যেমনটি বাবা বলেছেন তেমনি মোটাসোটা। দামও ভালই আমাদের আয়ত্বের মধ্যে। তখন ঐ গরুটা আমরা কিনে নিলাম। এবং আসলি দিলাম তারপর হাটের থেকে দুইটা মালা কিনলাম। একটি গরুর গলায় পড়ালাম অন্যটি ওর শিং-এর মধ্যে পরিয়ে দুটি রশি দিয়ে একপাশে আমি ধরলাম অন্য পাশে বরকত ধরে আমরা গরুটিকে বাড়িতে নিয়ে এলাম।
পথিমধ্যে অনেক লোক দাম জিজ্ঞেস করল। তাদেরকে বলতে বলতে এলাম। বাড়ির একটি মোটা আম গাছে বেঁধে রাখলাম। বাবা এশার নামাজ পরে এসে গরুটাকে দেখলো। দেখে বাবা বলল মাসাল্লাহ ভাল গর আনসিসতো বাবা। আমার অনেক পছন্দ হয়েছে কত টাকায় আনছিস বাবাকে বললাম চল্লিশ হাজার বাবা খুশি হলেন। বাবাকে খুশি হতে দেখে আমারও অনেক ভাল লাগলো। আমিও খুশি হলাম। পরদিন অনেক মানুষ এলো গরুটাকে দেখতে। আমি বাজার থেকে ভূসি, খইল, খড় ইত্যাদি কিনে এনে ওকে খাওয়ালাম। এভাবে প্রতিদিন গরুটাকে যত্ন নিতাম আস্তে আস্তে গরুটার প্রতি কেমন যেন একটা মায়ার সম্পর্ক হয়ে গেল। নদীতে নিয়ে গোসল করাতাম শরীরটাকে ভাল করে ঘসেমেজে দিতাম। রাতে ঘোয়াল ঘরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখে ওতে ঘুমাতে দিতাম। বুঝতে পারলাম আগামী কাল ঈদ হবে এবং গরু জবাই হবে। তখন আমার মনের ভিতর কেমন যানি কষ্ট অনুভূত হলো। বাবা আমাকে বললেন, কাল গরুটা খুব সকালে গোসল করিয়ে মাঠে নিয়ে যাবে। কাল ঈদ তাই ঈদের নামাজ হবে। ঈদের নামাজ শেষে গরুর কুরবানী হবে। ইমাম সাহেব ঐ মাঠেই গরু জবাই করবে। তাই আমাদের গরুটাও ঐ মাঠে জবাই করব। এই জবাই বা কুরবানী এই শব্দটি যেন আমার মনে একটি কাঁটার মত বিঁধল। কিন্তু কি করা আল্লাহর হুকুম মানতেই হবে। আল্লাহপাক কি সুন্দর নিয়ম কুরবানী করে সবার মাঝে গোস্ত বণ্ঠন করতে আদেশ দিয়েছেন যাতে করে গরীব, দুখি, ধনী সবাই গোশত খেতে পারে। এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নিয়ম বলে মনে হলো আমার কাছে।
পরদিন সকালে অর্থাৎ আজকে ঈদের দিন। আমি খুব সকালে গরুটাকে গোসল দিয়ে মাঠে রেখে আসি তারপর আমি গোসল করে নতুন জামা পরে ঈদগাহে গেলাম। কিছুক্ষণ পর নামাজ শুরু হল এবং এক সময় নামাজ শেষ হয়ে গেল। সবাই মাঠে ছুটাছুটি করছে গরু কুরবানী দেয়ার জন্য। ইমাম সাহেব বড় একটি ছুরি নিয়ে একটার পর একটা পশু কুরবানী করছেন। এক সময় এলো আমাদের গরুটাকে কুরবানী করা হবে। তখন সবাই মিলে রশি বেঁধে গরুটাকে মাটিতে শোয়ায়ে দিল তারপর ইমাম সাহেব আল্লাহ-আকবার বলে ছুরি চালালে গরুটি জবাই হয়ে যায়। তখন ওর জন্য আমার মায়া হচ্ছিল চোখের কোনে পানি চলে আসে আমাকে ইমাম সাহেব বললেন। মন খারাপ না করে একটি কথা শোন, আজকে এই পশু জবাই-এর মাধ্যমে সবাই “মনের পশুটাকে জবাই করো”। কেননা মনের মধ্যে যে পশুটা বাস করে সেটা হল, হিংসা, বিদে¦ষ, লোভ লালসা ইত্যাদি কাজে লিপ্ত থাকে। তাই আজ কুরবানী পশুর সাথে সাথে মনের পশুকে খতম করতে হবে ওটাকে খতম করে এগিয়ে আসতে হবে মানুষের কল্যাণে পরিত্যাগ করতে হবে হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ, লালসা ইত্যাদি। তবেই এই সমাজটা এই পৃথিবীটা আমাদের দৈনন্দিন জীবন হয়ে উঠবে সুন্দর ও সুখময় ও কলুষমুক্ত।