মেহমানকে মুগ্ধ করার কিছু কৌশল


মেহমানকে মুগ্ধ করার কিছু কৌশল



মেহমানকে মুগ্ধ করার কিছু কৌশল
মেহমানদারী করতে কে না ভালোবাসে আর সে যদি হন আপনার কাঙ্ক্ষিত কোন ব্যক্তি কিংবা পরিবার। কিংবা একেবারেই নতুন, তাদের আপ্যায়নের ব্যপারে একটু ব্যতিক্রম কিছু ভাবতেই হয়। আর সেক্ষেত্রে বাড়ি সাজানো থেকে শুরু করে অতিথি অভ্যর্থনা সমস্ত দায়িত্ব আপনার উপর এসে পরে। তাই এ কাজ টা যেন সুন্দর রুচি সম্মত ও সম্মানজনক হয় তার জন্য বিশেষ কিছু কিছু দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখাটা জরুরী।

পরিষ্কার -পরিচ্ছন্নতা: মেহমান কে অভিভূত করার জন্য এবং তার সম্মানার্থে প্রথমে যে বিষয়টি চোখে পড়ার মতো সেটা হল পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা। ঘরবাড়ী পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা আপনার রুচির বর্হি:প্রকাশ। মেহমান আসার কয়েকদিন আগেই এ কাজটা সেরে ফেলুন কখনো মেহমান আসার আগের দিন করবেন ভাবলে সব গোলমাল হয়ে যাবে ।

নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করুনঃ এক্ষেত্রে আপনার নিজের কিছুটা রূপচর্যার দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন এবং স্বামী সন্তান সবার প্রতিই। এমন যেন না হয় বাড়ি ঘর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন খাবার-দাবার আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী করলেন কিন্তু নিজেকে রাখলেন কাজের মেয়েদের মতো। আপনার সুন্দর ব্যবহার এবং পরিচ্ছন্ন রূপ পরিচর্যার বর্হি:প্রকাশে  মেহমানদের কাছে আপনি হয়ে উঠবেন স্মার্ট এবং আকর্ষণীয় ।

নিমন্ত্রন জানান আন্তরিক ভাবে: আজকাল কোন বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া কারো বাসায় গিয়ে দাওয়াত দেয়া হয় না। তারপরে আছে সবার কর্ম ব্যস্ততা তাই ফোন কিংবা মোবাইলে আমন্ত্রন জানালে অবশ্যই বাড়ির ঠিকানা ভালো করে বুঝিয়ে বলবেন এবং তাকে আশ্বস্ত করবেন যে, তাদের বাড়ি চিনতে যেন কোন সমস্যা না হয় তার জন্য নির্ভরযোগ্য কেও বাড়ির সামনে অপেক্ষা করছেন।

নিজেই অভ্যর্থনা জানান: অতিথিকে আপনি নিজে হাসিমুখে সালাম দিয়ে মুসাফাহা করে অভ্যর্থনা জানান। পথে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করুন। এতে মেহমান আপনার সাথে সহজ হতে পারবে এবং তার কোন সমস্যা হলে নিঃসঙ্কচে বলতে পারবে ।

খাবার দাবার: অতিথি আসার সাথে সাথে তাকে ফলের জুস, দইয়ের শরবত, কোল্ড ড্রিংকস দিয়ে আপ্যায়ন করতে পারেন। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী রুচি সম্মত খাবারের ব্যবস্থা করুন। সচরাচর খাবারে বৈচিত্র্য আনতে চেষ্টা করুন। নতুন স্বাদের কোন খাবার প্রস্তুত করুন এবং খাবারের পরে কোন মিষ্টি জাতীয় ভিন্ন স্বাদের খাবারের ব্যবস্থা রাখুন যেন অতিথি আপনার আন্তরিকতা বুঝতে পারে। সবার খাবারের তদারকি আপনি নিজেই করার চেষ্টা করুন। অতিথিদের বাচ্চাদের প্রতি খেয়াল রাখুন এবং অতিথীকে নিশ্চিন্তে খাবার খাওয়ারয়ার প্রতি আন্তরিকতা দেখান। তাতে মেহমান আপনার প্রতি যথেষ্ট কৃতজ্ঞ হবেন ।

আচরণে ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিন: অতিথি নতুন হলে পুরো বাসা ঘুরিয়ে দেখান। জিনিসপত্রের দাম নিয়ে আলোচনা করা বা তুলনা করা শোভনীয় দেখায় না। কোন কোন অতিথি হয়তো আপনার বাড়ির পরিপাটির বিষয়ে নিজের মন্তব্য দিতে পারেন। এতে বিরক্ত হবেন না বরং হাসি মুখে তার মন্তব্যকে সমর্থন দিন। অতিথি যদি কোন জিনিস ভেঙ্গে ফেলে বা অতিথিদের বাচ্চারা যদি কিছু নষ্ট করে ফেলে তবে বিরক্তি ও রাগ প্রকাশ করবেন না।

উপহার প্রদান করুন: আপনার অতিথিকে আপনি কতটা পছন্দ করেন তার বর্হি:প্রকাশ হতে পারে কোন উপহার প্রদানের মাধ্যমে। উপহার এমন একটা জিনিস যা সবাই পছন্দ করে। আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী মেহ্মান্দের ছোট খাট কিছু উপহার দিন তাতে আপনাদের মধ্য হৃদ্যতা বাড়বে ।

আড্ডায় ব্যক্তিগত প্রসঙ্গগুলো বাদ দিন: অনেকেই আছে যারা ব্যক্তিগত দূর্বলতা আলচনা করতে পছন্দ করেন না তাই ওসব প্রসঙ্গ নিয়ে বেশী ঘাঁটা ঘাঁটি করবেন না। ভদ্রতা সহকারে যতটুকু জানতে চাওয়ার তততুকুই জানার চেষ্টা করুন। যখনি বুঝতে পারবেন আপনার অতিথি প্রশ্নের উত্তর দিতে সঙ্কোচ বোধ করছেন, বিষয়টা ওখানেই থামিয়ে দিন।

সময়টাকে অর্থবহ করে তুলুনঃ আজকাল আড্ডা মানেই অনর্থক কথার ছড়াছড়ি। আপনার মেহমান যদি আপনার থেকেও ইসলামের বিভিন্ন দিকগুলি ভালো বুঝেন তাহলে তার কাছ থেকে কিছু উপকারি জিনিস জেনে নিতে চেষ্টা করুন আর তারা যদি ইসলামকে ওরকম না মানে বা জানে তাকে সুকৌশলে জানানোর বুঝানোর চেষ্টা করুন। আপনাদের আড্ডা টাকে করে তুলুন অর্থবহ।

বাড়তি খুশী দেয়ার চেষ্টা করুনঃ আপনার এবং আপনার অতিথিদের যদি হাতে সময় থাকে এবং আপনার এলাকায় যদি সুন্দর বা বিশেষ কোন জায়গা থাকে তাহলে খাওয়া-দাওয়া আর আড্ডা শেষে তাদেরকে সে সব সুন্দর জায়গাগুলো ঘুরিয়ে দেখাতে পারেন তাতে তারা যেমন আনন্দিত হবে তেমনি আপনারদের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠবে ।

মনে রাখা প্রয়োজন বাইরের সৌন্দর্য্যই একজন মানুষকে আরেকজন মানুষের প্রতি আকৃষ্ট করে না। একজন মানুষের মন জয় করার জন্য প্রয়োজন তার আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য্য যা তার আচার আচরণ থেকে অনুমান করা যায় আর একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব ও তার আন্তরিকতা অনুমান করা যায় সে কিভাবে অতিথিকে সমাদর ও আপ্যায়ন করছে তার ওপর ।
পরিশেষে বলব, মেহমানদারী করা যেমন একটা চিরচারিত সামাজিক রীতি তেমনি ইসলামে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী তার কতর্ব্য হল মেহমানকে সম্মান করা।” (বুখারী ও মুসলিম)
সুতরাং মেহমানদারী করতে হবে সওয়াবের উদ্দেশ্যে-আন্তরিকতার সাথে। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকে তাওফীক দান করেন। আমীন।