মুহাররম মাসে করণীয় ও বর্জনীয়
ভূমিকাঃ আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বারটি নির্ধারিত; এতে কম-বেশী করার ক্ষমতা কারো নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ
অর্থাৎঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বারটি, আসমান সমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে।(সূরা তাওবাঃ৩৬)
অর্থাৎঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বারটি, আসমান সমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে।(সূরা তাওবাঃ৩৬)
এর মধ্যে মুহাররম মাস প্রথম আর যুল
হিজ্জাহ সর্বশেষ। বারটি মাসের মধ্যে আবার চারটি মাস অতি সম্মানিত। এ
মাসগুলোতে যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রক্তপাত হারাম ছিল। কিন্তু তা বর্তমানে ইসলামী
শরীয়তে রহিত, তবে আদব ও সম্মান প্রদর্শন এবং ইবাদতে যত্নবান হওয়ার হুকুমটি
এখনও বাকী আছে।
সম্মানিত মাসগুলোকে চিহ্নিত করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তিনটি মাস হল ধারাবাহিক- যিল ক্বদ, যিল হাজ্জ ও মুহাররম
আর অপরটি হল মুযার গোত্রের রজব। হাদীসে মুযার গোত্রের রজব বলার কারণ হল;
রজব সম্পর্কে আরববাসীদের মতানৈক্য ছিল, তন্মধ্যে মুযার গোত্রের ধারণা মতে
রজব হল জামাদিউস সানীর পরে এবং শাবান মাসের পূর্বের মাসটি। তাই রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুযার গোত্রের রজব বলে বিষয়টি পরিষ্কার
করে দেন।উক্ত আয়াতের মধ্যে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আরও বলেন;
فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ
অর্থাৎঃ সুতরাং তোমরা এ মাসগুলোতে নিজেদের প্রতি অবিচার করনা।
অর্থাৎ এ চারটি মাসের যথাযথ আদব রক্ষা না করে এবং সৎ আমল সমূহের প্রতি যত্নবান না হয়ে তোমাদের নিজেদের ক্ষতি করো না।
আসুন! এক্ষণে আমরা আলোচনা করবো, উক্ত চারটি মাস সমুহের মধ্যে প্রথম মাস মুহাররমে আমাদের কি করণীয় আছে এবং সংক্ষেপে এই মাসের কিছু ফযিলত ও বিদআতেরও আলোচনা করবো ইনশা-আল্লাহ।
মুহাররম মাসের গুরুত্ব বা ফযিলতঃ
যে বিষয়গুলো এ মাসের গুরুত্ব বহন করে তা হলঃ
১. বারটি মাসের মধ্যে এ মাসটি সর্বপ্রথম।
2. এ মাসটিকে আল্লাহর দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয়েছে, বলা হয়েছে “আল্লাহর মাস মুহাররম”।
3. স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে চারটি মাসকে সম্মানিত অভিহিত করেছেন তার মধ্যে মুহাররম একটি, যা এ মাসের গুরুত্ব প্রমাণ করে।
4. হারাম মাসগুলোর সম্মানার্থে প্রাক ইসলাম যুগেও মুশরিকরা এই মাসগুলোতে যুদ্ধ-বিগ্রহ করা হতে বিরত থাকত। যা ইসলামের প্রথম দিকে ঠিক ছিল, কিন্তু তা পরবর্তিতে রহিত হলেও এ মাসের সম্মান করা বর্তমানেও জারী আছে।
5. এ মাসের মধ্যে এমন একটি দিন আছে যাকে “আশূরার দিন” বলা হয়। যে দিনটিতে রোজা রাখলে বিগত এক বছরের পাপরাশি মোচন হয়।
১. বারটি মাসের মধ্যে এ মাসটি সর্বপ্রথম।
2. এ মাসটিকে আল্লাহর দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয়েছে, বলা হয়েছে “আল্লাহর মাস মুহাররম”।
3. স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে চারটি মাসকে সম্মানিত অভিহিত করেছেন তার মধ্যে মুহাররম একটি, যা এ মাসের গুরুত্ব প্রমাণ করে।
4. হারাম মাসগুলোর সম্মানার্থে প্রাক ইসলাম যুগেও মুশরিকরা এই মাসগুলোতে যুদ্ধ-বিগ্রহ করা হতে বিরত থাকত। যা ইসলামের প্রথম দিকে ঠিক ছিল, কিন্তু তা পরবর্তিতে রহিত হলেও এ মাসের সম্মান করা বর্তমানেও জারী আছে।
5. এ মাসের মধ্যে এমন একটি দিন আছে যাকে “আশূরার দিন” বলা হয়। যে দিনটিতে রোজা রাখলে বিগত এক বছরের পাপরাশি মোচন হয়।
এ মাসে যা করণীয়ঃ
এ মাসে রোযা রাখার গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ রমজান মাসের রোযার পরেপরেই শ্রেষ্ঠ
রোযা হল আল্লাহর মাস মুহাররমের রোযা। আর ফরয নামাযের পরেপরেই শ্রেষ্ঠ নামায
হল রাত্রের (তাহাজ্জুদের) নামায।(মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ ও ইবনে মাজা)
আশুরার দিনে রোযার উৎপত্তিঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম মক্কা হতে মদীনায় হিজরত করার পরের বছর মদীনার ইয়াহুদীদেরকে আশুরার
দিন রোযা রাখতে দেখে প্রশ্ন করলেন; এটি কিসের রোযা? তারা উত্তরে বললঃ এ
দিনটি মঙ্গলময় দিন। (অন্য বর্ণনায় আছে; এ দিনটি সম্মানিত ও মর্যাদার দিন)
এই দিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর জাতি বানী
ইসরাঈলকে তাদের শত্রু ফেরআউনের অত্যাচার হতে সমুদ্র পার করার মধ্য দিয়ে
বাঁচিয়ে ছিলেন। পক্ষান্তরে ফেরআউন ও তার দলবলকে সমূদ্রে ডুবিয়ে ধ্বংস
করেছিলেন। ফলে মুসা আলাইহিস সালাম এই দিনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে রোযা
রেখেছিলেন, তাই আমরাও এই দিন রোযা রাখি। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ সুতরাং তোমাদের চেয়ে আমরাইতো মুসার
ব্যাপারে বেশী হক্বদার। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম সে দিন রোযা রাখলেন এবং অন্যদেরকেও রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন।
(বোখারী ও মুসলিম)
আর ইমাম আহমাদ অতিরিক্ত বর্ণনা করেন, তা ছিল সেই দিন যে দিন নূহ আলাইহিস সালামের নৌকা জূদী পর্বতে ভিড়েছিল, তাই নূহ আলাইহিস সালাম সে দিন কৃতজ্ঞতা স্বরূপ রোযা রেখেছিলেন।
আশুরার দিন রোযা রাখার প্রচলন প্রাক নবুওয়াত যুগে মুশরিকদের মাঝেও বিদ্যমান ছিল। উম্মুল মুমেনীন আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ জাহেলী লোকেরা সেই দিন রোযা রাখত।
ইমাম কুরতুবী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ কুরাইশরা তাদের রোযা রাখার ব্যাপারটির সম্পৃক্ততা সম্ভবত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের শরীয়তের সাথে করে থাকে।
আর এটাও প্রমাণিত যে আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দিনে মদীনায় হিজরতের পূর্বে মক্কায় রোযা রাখতেন। তারপর মদীনায় এসে যখন দেখলেন; এই দিনে ইয়াহুদীরা (রোযা সহ) উৎসব করছে তখন তিনি তাদের উৎসবের কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা পূর্বে উল্লেখিত উত্তর দেয়। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ঐ দিনে উৎসবের বিপরীতে মুসলমানদের রোযা রাখার নির্দেশ দেন।
আবু মুসা আশআরী রাযিয়াল্লআহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ইয়াহুদীরা আশুরার দিনকে অতি মর্যাদা দিত, যার কারণে ঐ দিনকে তারা ঈদের (উৎসবের) দিন হিসেবে পালন করত।(মুসলিম)
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে; খায়বারের অধিবাসিরা (ইয়াহুদীরা) আশুরার দিনকে উৎসবের দিন বানিয়েছিল, তাই তাদের নারীরা ঐ দিন তাদের অলংকার ও প্রতীক পরিধান করত। ফলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বিপরীতে বলেনঃ — সুতরাং সেই দিন তোমরা রোযা রাখ। ( বোখারী )
আর ইমাম আহমাদ অতিরিক্ত বর্ণনা করেন, তা ছিল সেই দিন যে দিন নূহ আলাইহিস সালামের নৌকা জূদী পর্বতে ভিড়েছিল, তাই নূহ আলাইহিস সালাম সে দিন কৃতজ্ঞতা স্বরূপ রোযা রেখেছিলেন।
আশুরার দিন রোযা রাখার প্রচলন প্রাক নবুওয়াত যুগে মুশরিকদের মাঝেও বিদ্যমান ছিল। উম্মুল মুমেনীন আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ জাহেলী লোকেরা সেই দিন রোযা রাখত।
ইমাম কুরতুবী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ কুরাইশরা তাদের রোযা রাখার ব্যাপারটির সম্পৃক্ততা সম্ভবত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের শরীয়তের সাথে করে থাকে।
আর এটাও প্রমাণিত যে আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দিনে মদীনায় হিজরতের পূর্বে মক্কায় রোযা রাখতেন। তারপর মদীনায় এসে যখন দেখলেন; এই দিনে ইয়াহুদীরা (রোযা সহ) উৎসব করছে তখন তিনি তাদের উৎসবের কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা পূর্বে উল্লেখিত উত্তর দেয়। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ঐ দিনে উৎসবের বিপরীতে মুসলমানদের রোযা রাখার নির্দেশ দেন।
আবু মুসা আশআরী রাযিয়াল্লআহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ইয়াহুদীরা আশুরার দিনকে অতি মর্যাদা দিত, যার কারণে ঐ দিনকে তারা ঈদের (উৎসবের) দিন হিসেবে পালন করত।(মুসলিম)
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে; খায়বারের অধিবাসিরা (ইয়াহুদীরা) আশুরার দিনকে উৎসবের দিন বানিয়েছিল, তাই তাদের নারীরা ঐ দিন তাদের অলংকার ও প্রতীক পরিধান করত। ফলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বিপরীতে বলেনঃ — সুতরাং সেই দিন তোমরা রোযা রাখ। ( বোখারী )
আশুরার দিন কবেঃ
আশুরার দিন হচ্ছে মুহাররম মাসের দশ তারিখ।
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু
আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
মুহাররম মাসের দশ তারিখে আশুরার রোযা রাখার নির্দেশ দেন। (তিরমিযি, এবং
তিনি হাদীসটিকে হসিান, সহীহ বলেছেন)।
আশুরার রোযার ফযিলত
আবু কাতাদাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে
বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার
দিন রোযা রাখা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেসিত হলে তিনি বলেনঃ (উক্ত রোযা) বিগত এক
বছরের পাপরাশি মোচন করে দেয়।(মুসলিম)
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার দিনের রোযা এবং রমযান মাসের রোযাকে যেরূপ অগ্রধিকার ও ফযিলত দান করতেন, এরূপ অন্য কোন মাস বা দিনকে অগ্রধিকার ও ফযিলত দান করতে আমি দেখি নাই। (বোখারী)
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার দিনের রোযা এবং রমযান মাসের রোযাকে যেরূপ অগ্রধিকার ও ফযিলত দান করতেন, এরূপ অন্য কোন মাস বা দিনকে অগ্রধিকার ও ফযিলত দান করতে আমি দেখি নাই। (বোখারী)
রোযা কয়টিঃ
আশুরার রোযা সাধারণত: একটি এবং তা দশই
মুহাররম । কিন্তু যেহেতু ইয়াহুদীরা শুধু দশ তারিখে একটি রোযা রাখতো তাই
তাদের বিপরীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যদি আমি আগামী
বছর বেঁচে থাকি তাহলে ৯ই তারিখও রোযা রাখবো। (সহীহ মুসলিম)
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আশুরার দিন রোযা রাখ এবং ইয়াহুদীদের বিপরীত কর, সুতরাং তোমরা আশুরার এক দিন পূর্বে অথবা পরে রোযা রাখ। (আহমাদ, ইবনু খুযায়মা, তবে হাদীসটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে মারফূ হিসেবে দূর্বল)
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ সর্বোত্তম ও পরিপূর্ণ হল তিনটি রোযা রাখা। অর্থাৎ ৯, ১০ ও ১১।
সুতরাং উত্তম হচ্ছে দুটি রোযা রাখা, আর তা হল; নয় ও দশ তারিখ। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরবর্তী বছরে ইয়াহুদীদের বিপরীতে নয় তারিখেও রোযা রাখার ইচ্ছা করেছিলেন।
আর তিনটি রোযা হল পরিপূর্ণ (কারণ মাস গণনায় কম বেশী হলে এর মধ্যে ১০ এসেই যাবে, তবে তা জরুরী নয়, কারণ আশুরার রোযা ওয়াজিব নয়, বরং তা নফল বা মুস্তাহাব)
আর শুধুমাত্র দশ তারিখে একটি রোযা রাখাও জায়িয।
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আশুরার দিন রোযা রাখ এবং ইয়াহুদীদের বিপরীত কর, সুতরাং তোমরা আশুরার এক দিন পূর্বে অথবা পরে রোযা রাখ। (আহমাদ, ইবনু খুযায়মা, তবে হাদীসটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে মারফূ হিসেবে দূর্বল)
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ সর্বোত্তম ও পরিপূর্ণ হল তিনটি রোযা রাখা। অর্থাৎ ৯, ১০ ও ১১।
সুতরাং উত্তম হচ্ছে দুটি রোযা রাখা, আর তা হল; নয় ও দশ তারিখ। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরবর্তী বছরে ইয়াহুদীদের বিপরীতে নয় তারিখেও রোযা রাখার ইচ্ছা করেছিলেন।
আর তিনটি রোযা হল পরিপূর্ণ (কারণ মাস গণনায় কম বেশী হলে এর মধ্যে ১০ এসেই যাবে, তবে তা জরুরী নয়, কারণ আশুরার রোযা ওয়াজিব নয়, বরং তা নফল বা মুস্তাহাব)
আর শুধুমাত্র দশ তারিখে একটি রোযা রাখাও জায়িয।
আশুরার প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত
পূর্বের আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার বোঝা
গেল যে, মুহাররম মাসের নয় ও দশ তারিখে রোযা রাখাই হচ্ছে এই মাসের করণীয়
সুন্নাতী আমল। আর রোযার দিন উৎসব পালন ইসলামী কৃষ্টি কালচারের বিপরীত কাজ।
সুতরাং মুহাররম আসলেই যে চিত্র দেখা যায় তা আদৌ ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত কিনা
তা ভেবে দেখা প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির দায়িত্বও কর্তব্য। উপরোক্ত রোযা
রাখার স্পষ্ট সহীহ হাদীসগুলোকে পাশ কাটিয়ে বানোয়াট কিছু হাদীস ও কাল্পনীক
ইতিহাস রচনা করে আজ এই মুহাররম মাসে কত যে মিথ্যাচারের ছড়াছড়ি তা বিস্ময়করই
বটে!
ভাবতেও অবাক লাগে, আজকে সত্য ও পরিষ্কার ইতিহাস বিকৃত করে এক শ্রেনীর লেখকেরা আশুরার দিনে কারবালার ইতিহাস সংযুক্ত করে বলার চেষ্টা করছে যে, ঐতিহাসিক কারবালার দিনে ইমাম হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু নির্মম খাবে মৃত্যু বরণ করেন তাই এই দিনে রোযা রাখা হয়।
কারবালার যুদ্ধ হয়েছিল হিজরী ৬০ সালে। আর আশুরার রোযা ইসলামে প্রবর্তন হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কা হতে মদীনায় হিজরত করার পর দ্বিতীয় হিজরীতে। প্রাক ইসলাম যুগেও মুশরিকরা তা পালন করত যা ইতিপূর্বে সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে বর্ণনা করা হয়েছে। আর তার কারণ ছিল, মূসা আলাইহিস সালাম ফেরআউনের অত্যাচার হতে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আল্লাহর রহমতে বেঁচেছিলেন তাই শুকরিয়া আদায় হেতু তিনি রোযা রেখেছিলেন। কিন্তু শুরুর সেই মহাসত্য ইতিহাসকে বর্জন করে পরবর্তীতে ৫৮ বছর পর ঘটনাচক্রে একই তারিখে কারবালার যুদ্ধে ইমাম হুসাইনের মৃত্যুকে আশুরার ইতিহাস বলা হচ্ছে। শুধু তাই নয় বরং হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাত বরণ সম্পর্কেও ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি অতি ভক্তি ও ভালবাসা দেখাতে গিয়ে ইমাম ইয়াযিদকে বিভিন্ন অসৎ গুণে দোষারোপ ও গালি গালাজ করা হয়ে থাকে। যেমন বলা হয়; চোর, ভন্ড, যেনাকারী, অহংকারী, মিথ্যুক, মদখোর, রক্ত পিপাসু, পাপিষ্ট, ক্ষমতালিপ্সু কত কি তার ইয়ত্যা নেই। (আল্লাহ মাফ করুন)
কারবালার ইতিহাস নিয়ে লিখা মীর মোশাররফের “ বিষাদ সিন্দু” কোন্ ইতিহাস হতে তথ্য নিয়ে লেখা হয়েছে তা একটু ভাবা দরকার। কারণ পূর্ববর্তী গ্রহণযোগ্য কোন ইতিহাসেই ইমাম ইয়াযিদকে এত মিথ্যা গুণের অধিকারী বর্ণনা করা হয় নাই। বরং স্বর্ণযুগের সমস্ত ইতিহাস গ্রন্থেই ইয়াযিদকে সৎ, ধার্মিক, আল্লাহভীরু, দূরদর্শী, সত্যবাদি, দানবীর ইত্যাদি অনেক সৎগুণের অধিকারী বলা হয়েছে। তিনি নিজেও তাঁকে হত্যা করেন নি বা হত্যা করার নির্দেশও দেননি। বরং তিনি যখন হুসাইনের শাহাদাতের সংবাদ শোনেন তখন তিনি অশ্রুসিক্ত হয়ে বার বার আফসোস করতে থাকেন এবং হত্যাকারীকে অভিশাপ দিতে থাকেন। (বিস্তারিত দেখুন; ইমাম ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহর রচিত “আল বেদায়া ওয়ান নিহায়া)
ভাবতেও অবাক লাগে, আজকে সত্য ও পরিষ্কার ইতিহাস বিকৃত করে এক শ্রেনীর লেখকেরা আশুরার দিনে কারবালার ইতিহাস সংযুক্ত করে বলার চেষ্টা করছে যে, ঐতিহাসিক কারবালার দিনে ইমাম হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু নির্মম খাবে মৃত্যু বরণ করেন তাই এই দিনে রোযা রাখা হয়।
কারবালার যুদ্ধ হয়েছিল হিজরী ৬০ সালে। আর আশুরার রোযা ইসলামে প্রবর্তন হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কা হতে মদীনায় হিজরত করার পর দ্বিতীয় হিজরীতে। প্রাক ইসলাম যুগেও মুশরিকরা তা পালন করত যা ইতিপূর্বে সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে বর্ণনা করা হয়েছে। আর তার কারণ ছিল, মূসা আলাইহিস সালাম ফেরআউনের অত্যাচার হতে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আল্লাহর রহমতে বেঁচেছিলেন তাই শুকরিয়া আদায় হেতু তিনি রোযা রেখেছিলেন। কিন্তু শুরুর সেই মহাসত্য ইতিহাসকে বর্জন করে পরবর্তীতে ৫৮ বছর পর ঘটনাচক্রে একই তারিখে কারবালার যুদ্ধে ইমাম হুসাইনের মৃত্যুকে আশুরার ইতিহাস বলা হচ্ছে। শুধু তাই নয় বরং হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাত বরণ সম্পর্কেও ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি অতি ভক্তি ও ভালবাসা দেখাতে গিয়ে ইমাম ইয়াযিদকে বিভিন্ন অসৎ গুণে দোষারোপ ও গালি গালাজ করা হয়ে থাকে। যেমন বলা হয়; চোর, ভন্ড, যেনাকারী, অহংকারী, মিথ্যুক, মদখোর, রক্ত পিপাসু, পাপিষ্ট, ক্ষমতালিপ্সু কত কি তার ইয়ত্যা নেই। (আল্লাহ মাফ করুন)
কারবালার ইতিহাস নিয়ে লিখা মীর মোশাররফের “ বিষাদ সিন্দু” কোন্ ইতিহাস হতে তথ্য নিয়ে লেখা হয়েছে তা একটু ভাবা দরকার। কারণ পূর্ববর্তী গ্রহণযোগ্য কোন ইতিহাসেই ইমাম ইয়াযিদকে এত মিথ্যা গুণের অধিকারী বর্ণনা করা হয় নাই। বরং স্বর্ণযুগের সমস্ত ইতিহাস গ্রন্থেই ইয়াযিদকে সৎ, ধার্মিক, আল্লাহভীরু, দূরদর্শী, সত্যবাদি, দানবীর ইত্যাদি অনেক সৎগুণের অধিকারী বলা হয়েছে। তিনি নিজেও তাঁকে হত্যা করেন নি বা হত্যা করার নির্দেশও দেননি। বরং তিনি যখন হুসাইনের শাহাদাতের সংবাদ শোনেন তখন তিনি অশ্রুসিক্ত হয়ে বার বার আফসোস করতে থাকেন এবং হত্যাকারীকে অভিশাপ দিতে থাকেন। (বিস্তারিত দেখুন; ইমাম ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহর রচিত “আল বেদায়া ওয়ান নিহায়া)
মুহাররম মাসে কিছু বিদআতের চিত্র
প্রতি বছর মুহাররম মাস আসলেই এক শ্রেনীর
লোকেরা না বুঝে ইমাম ইয়াযিদকে গালিগালাজ করে থাকে আর হুসাইন রাযিয়াল্লাহু
আনহুর মৃত্যু শোকে শোক গাঁথা রচনা করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে থাকে।
মুহাররমের তাজিয়া, নিশানা, মার্সিয়া, বাদ্য, আত্মপ্রহার দ্বারা শোক পালন
এবং অন্যান্য সমারোহ ও এ সবের মধ্যে মাতম করা জাহেলিয়াতের প্রথা ছাড়া আর
কিছুই না। হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুর জন্য ঐ দিনে অথবা আর কারো জন্য অন্য
কোন দিনে শোক পালন ও মৃত্যু দিবস পালন করা বিদআত। আশুরার দিনকে শিয়া
সম্প্রদায় শোক পালনের দিন রূপে গ্রহণ করে আহাজারী, কান্নকাটি এমনকি
মুহাররমের প্রথম দিন হতে হাত দ্বারা বুক চাপড়িয়ে, লোহা, ছুরি বা অন্য কিছু
দ্বারা পিঠে আঘাত করে রক্ত প্রবাহিত ইত্যাদি করে থাকে। অপর দিকে ঐ দিনকে
নাসেবী সম্প্রদায় যারা আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর বংশধরের প্রতি বিদ্বেষ
রাখে তারা ঈদ বা খুশীর দিন রূপে গ্রহণ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন; আলোক
সজ্জা, খাওয়া দাওয়া, পটকা বাজি ইত্যাদি করে থাকে।
আশুরার দিন সম্পর্কে বানোয়াট হাদীসের নমুনা
১. যে ব্যক্তি আশুরার দিন চোখে সুরমা
লাগাবে তার ঐ বৎসরে চোখের কোন রোগ হবে না। আর যে ব্যক্তি আশুরার দিনে গোসল
করবে সে ঐ বৎসরে অসুস্থ হবে না।
২. যে ব্যক্তি আশুরার দিন তার পরিবারকে তুষ্ট ও তৃপ্তি সহকারে আহার করাবে, আল্লাহ তায়ালাও সারা বৎসর তাকে তুষ্ট করবেন। সুতরাং সে বৎসর তার কোন অভাব অনটন হবে না।
উভয় হাদীস দুটিই আশুরার নামে বানোয়াট, মিথ্যা, মাওজু হাদীস।
সুতরাং আশুরার রোযা ছাড়া সেই দিনের সহীহ কোন করণীয় কাজ নেই। তাই রোযা পালন ছাড়া ঐ দিনে যা কিছু করা হয় তার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই, সুতরাং তা বিদআত, আর বিদআত বর্জনীয়।
২. যে ব্যক্তি আশুরার দিন তার পরিবারকে তুষ্ট ও তৃপ্তি সহকারে আহার করাবে, আল্লাহ তায়ালাও সারা বৎসর তাকে তুষ্ট করবেন। সুতরাং সে বৎসর তার কোন অভাব অনটন হবে না।
উভয় হাদীস দুটিই আশুরার নামে বানোয়াট, মিথ্যা, মাওজু হাদীস।
সুতরাং আশুরার রোযা ছাড়া সেই দিনের সহীহ কোন করণীয় কাজ নেই। তাই রোযা পালন ছাড়া ঐ দিনে যা কিছু করা হয় তার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই, সুতরাং তা বিদআত, আর বিদআত বর্জনীয়।
উপসংহার
পরিশেষে বলব আশুরার রোযা মূসা আলাইহিস
সালাম আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপনার্থে পালন করেছিলেন, তাই আমরাও তাঁর
সহমর্মিতায় বা তাঁর সম্মানে সেই দিন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই রোয
রাখি। কারবালার ইতিহাস ও হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের ঘটনার সাথে
আশুরার রোযার কোনই সম্পর্ক নেই। যদিও ঘটনাচক্রে একই তারিখে তা সংঘটিত
হয়েছিল। আর রোযা পালন ছাড়া সেই দিনকে শোক দিবস অথবা আনন্দ দিবস হিসেবে যাই
করা হউক না কেন সবই বিদআত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে সত্য বোঝার
এবং তা মানার তাওফীক দান করুন। আমীন।”’