মহানবীর সা. সমাজ সংস্কার পদ্ধতি
৫৭০ ঈসায়িতে আরবের প্রখ্যাত মক্কা নগরীতে সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মহানবীর সা. জন্ম। তাঁর পিতা আবদুল্লাহ ও মাতা আমিনা। আবদুল্লাহ্ অর্থ আল্লাহর অনুগত (গোলাম) এবং আমিনা অর্থ শান্তি। মহানবীর সা. মাতাপিতা উভয়েই ছিলেন তৎকালীন আরবের অতিশয় সম্ভ্রান্ত বংশের লোক। উভয়ের বংশসূত্রই মুসলিম মিল্লাতের পিতা ইবরাহিম আ.-এর সাথে যুক্ত। দাদা আবদুল মুত্তালিব ছিলেন কুরাইশ বংশের নেতা। দাদার মৃত্যুর পর চাচা আবু তালিব কুরাইশ বংশের নেতৃত্ব লাভ করেন। মহানবী সা. মায়ের গর্ভে থাকাবস্থায় পিতা আবদুল্লাহর মৃত্যু হয়।
মাত্র ছয় বছর বয়সে তিনি মাতৃহারা হন। দাদা আবদুল মুত্তালিবের অপর্ত স্নেহ-মমতায় তিনি লালিত-পালিত হন। কিছুদিন পর দাদা মৃত্যুবরণ করলে চাচা আবু তালিব শিশু মুহাম্মদের সা. লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।শৈশবকাল থেকেই মহানবী সা. অত্যন্ত সুন্দর, নম্র, ভদ্র ও বিনীত স্বভাবের অধিকারী ছিলেন। তাঁর সত্যবাদিতা ও আমানতদারির জন্য ঐ বয়সেই তাঁকে ‘আল-আমিন’ ও ‘আস-সাদিক’ উপাধি দেয়া হয়। মাত্র পনেরো বছর বয়সে মহানবী সা. তাঁর সমবয়সী কতিপয় উৎসাহী কিশোরকে নিয়ে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামক একটি সমাজ সংস্কারমূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। পঁচিশ বছর বয়সে তিনি তৎকালীন আরবের ধনাঢ্য, অভিজাত বিধবা মহিলা খাদিজাতুল কুবরার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর অগাধ ধন-সম্পত্তির অধিকারী হয়ে তিনি সকল বিত্তবৈভব গরিব-দুঃখী মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেন। কিন্তু সমাজের দুরবস্থা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি চিন্তাকুল হয়ে পড়েন এবং দীর্ঘ পনেরো বছর কাল মক্কার অদূরে হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন জীবন অতিবাহিত করেন। চল্লিশ বছর বয়সে হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় এক রাত্রিতে তাঁর ওপর ওহি নাজিল হয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি নবুওয়ত প্রাপ্ত হন এবং তারপর দীর্ঘ তেইশ বছরের নবুওয়তি জিন্দেগিতে তিনি ক্রমান্বয়ে দুর্বিষহ দুঃখ-কষ্ট-নির্যাতন সহ্য করে সংগ্রাম-সংঘাতের রক্ত পিচ্ছিল পথে সমগ্র আরব ভূখন্ডে ইসলাম প্রচার করে এক নতুন কল্যাণময় সুন্দর সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।মহানবীর সমাজ সংস্কারের মূলভিত্তি ছিল আল্লাহর বিধানÑ দ্বীন ইসলাম বা আল-কুরআন। কোন পদ্ধতিতে কিভাবে ধীরে ধীরে তিনি সমাজ সংস্কারের কাজে অগ্রসর হয়ে এক আদর্শ মানবসমাজ গড়ে তুললেন, তা আলোচনার পূর্বে তৎকালীন আরব সমাজের কিছু পরিচয় তুলে ধরা প্রয়োজন।মহানবীর সা. নেতৃত্বে আদর্শ সমাজ গঠনের পূর্ব পর্যন্ত সমগ্র আরব উপসাগরীয় এলাকার সমাজ-কাঠামো সম্পূর্ণ ধসে পড়েছিল। তারা ছোট ছোট গোত্রে বিভক্ত ছিল, পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ, নানা দ্বন্দ্ব-কলহ, যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হতো এবং সে যুদ্ধ চলতো কখনো যুগ যুগ ধরে বংশানুক্রমে। তাদের নৈতিক মান ছিল অতি নিচুস্তরের, চুরি-ডাকাতি, হত্যা-লুণ্ঠন, মদ-জুয়া, ব্যভিচার ইত্যাদি সমাজ ও চরিত্র-বিধ্বংসী নানা অপতৎপরতায় শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়ে পড়েছিল। তৎকালীন আরব সমাজের অবস্থা ছিল সংক্ষেপে এরূপ :এক. এক আল্লাহর পরিবর্তে সেখানে অসংখ্য মনগড়া দেব-দেবী এবং হাতে বানানো মূর্তির পূজা প্রচলিত ছিল। শতধা বিভক্ত জাহিলিয়াতের সমাজ-ব্যবস্থায় তখন অসংখ্য দেব-দেবীর অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল। প্রত্যেক গোত্রের প্রতিভূ হিসেবে এক একজন প্রধান দেবতা বা দেবী ছিল। মানুষ এসব কাল্পনিক দেব-দেবীর মূর্তি বানিয়ে পূজা-অর্চনা করতো। আরব উপসাগরীয় এলাকায় তখন ৩৬০টি গোত্রের প্রতিভূ হিসেবে পবিত্র কাবাগৃহে মোট ৩৬০টি মূর্তি স্থাপন করা হয়।দুই. তৎকালীন আরবে চরম অজ্ঞতা ও নির্মম বর্বরতা বিরাজমান ছিল। দুর্বলদের ওপর সবলের অত্যাচার ও শোষণ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এ ধরনের আচরণে সমাজের বিবেক আহত হওয়া দূরে থাক, বরং অন্যরা এগুলোকে হাসি-তামাশার বিষয়রূপে গণ্য করত।তিন. ছোট-খাটো বা তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে মানুষে মানুষে, গোত্রে গোত্রে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও রক্তারক্তি কান্ড ঘটে যেত। এ ধরনের অর্থহীন রক্তপাত বা দাঙ্গা-হাঙ্গামার জের অনেক সময় চলতো বংশানুক্রমে যুগ যুগ ধরে।চার. সমাজে নারীর অধিকার ও মর্যাদা বলতে কিছুই ছিল না। পরিবারের অর্থ-সম্পদে নারীদের কোন অংশ নির্ধারিত ছিল না। তাদেরকে কেবল ভোগ-লালসার উপকরণ মনে করা হতো। পরিবারে কন্যাসন্তানদের জন্মকে মনে করা হতো চরম অভিশাপ ও অবমাননাকর। এ অভিশাপ ও অবমাননার হাত থেকে পরিত্রাণের উদ্দেশ্যে অনেক সময় জন্মের পর শিশুকন্যাকে জীবন্ত প্রোথিত করে পরিবারের মান-সম্ভ্রম অক্ষত রাখার ব্যবস্থা করা হতো।
পাঁচ. ক্রীতদাস প্রথার ব্যাপক প্রচলন ছিল। দাস-দাসীরা তাদের প্রভুদের গৃহে বন্দী হয়ে অসহায় ও চরম লাঞ্ছনাপূর্ণ জীবন যাপন করতো। পশুরা যেরূপ ব্যবহার পেত, অনেক সময় দাস-দাসীরা সেরূপ ব্যবহারও পেত না, পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট মনে করা হতো তাদেরকে।
ছয়. চুরি-ডাকাতি, লুণ্ঠন-রাহাজানি, পরস্পহরণ, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি ছিল সমাজের স্বাভাবিক রীতি।
সাত. মদ্যপান, ব্যভিচার, নাচ-গান ও চরম নৈতিকতা-বিরোধী আচরণ, আনন্দ-উৎসব ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। ফলে সমাজে পাপবোধ এক রকম রহিত হয়ে গিয়েছিল।
আট. অর্থনীতির নামে সুদ ও শোষণমূলক নানা ব্যবস্থা সমাজ-মূলে দৃঢ়ভাবে আসন করে নিয়েছিল। ফলে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ন্যূনতম ব্যবস্থাও ছিল না এবং ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান ছিল পর্বত প্রমাণ।
নয়. সমাজে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত দুর্বল। অসংখ্য ছোট-বড় গোত্রে বিভক্ত সমাজে তাই সবলের রক্ত-চক্ষু ও খড়গ-কবলে দুর্বলের জীবন ছিল ত্রস্ত-বিপন্ন।
দশ. আইনের শাসনের অনুপস্থিতি ও ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠা না থাকায় অন্যায়, অনাচার ও নিরাপত্তাহীনতায় মানুষের জীবন ছিল সর্বদা বিপদাপন্ন। বর্বরতা ছিল সর্বব্যাপক।
মহানবীর সা. সমাজ-সংস্কার কাজ শুরু হবার পূর্বে বা নবুওয়ত লাভের সময় পর্যন্ত আরব দেশের সামাজিক অবস্থা কিরূপ ছিল উপরে সংক্ষেপে তার বিবরণ তুলে ধরা হলো। তৎকালীন আরবদের অবশ্য একটা খ্যাতি ছিল, সেটা হলো তাদের কাব্যপ্রীতি। মুখে মুখেই তারা কাব্য রচনা করতো। কবিতার বাহাস হতো। বিভিন্ন উৎসব-আনন্দের অনুষ্ঠানে কবিদের ডাক পড়তো। কবিরা সেখানে তাদের কাব্য নৈপুণ্যের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে উপস্থিত দর্শক- শ্রোতাদের বাহ্বা কুড়াতেন। শ্রোতারাও ছিল কাব্য-রসিক। কবিতার গুণাগুণ বিচারে তাদের পারদর্শিতাও কম ছিল না। এসব আসরে শ্রোতাদের প্রশংসাধন্য কবিরাই তৎকালীন আরব সমাজে খ্যাতিমান কবির মর্যাদা পেতেন। কিন্তু ঐসব কাব্য-কবিতার মধ্যেও নগ্নতা, অশ্লীতা ও বিকৃত মানসিকতার পরিচয় ছিল সুস্পষ্ট। এরূপ চরম অধঃপতিত, অনাচারগ্রস্ত ও অজ্ঞতার নিকষ কালো অন্ধকারে আচ্ছাদিত বর্বর সমাজে মহানবী সা. এলেন ঐশী আলোর উজ্জ্বল বর্তিকা নিয়ে। অমা-রজনীর জমাট অন্ধকার যেমন ঊষার রক্তিম আলোর বন্যায় অপসৃত হয়, মহানবীর সা. নবুওয়তি আলোক-ধারায় তেমনি আরব সমাজের নিঃñিদ্র কালো অন্ধকাররাশি ধীরে ধীরে অপসৃত হয়। তিনি আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী এমন এক আদর্শ সমাজ কায়েম করেন, যা শুধু আরব জাতির ইতিহাসে নয়; বিশ্ব-সভ্যতার ইতিহাসে বিশ্ব-মানবের জন্য এক দীপ্ত প্রেরণার অনন্ত উৎস হয়ে রয়েছে। যুগ যুগ ধরে সে প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে বিশ্বের অগণিত মানুষ। পৌত্তলিক-মুশরিক সমাজে আল্লাহর একত্ববাদ কায়েম হয়। শত-সহস্র বছরের অনাচার, বিশৃঙ্খলা, অশান্তি, পাপ-পঙ্কিলতার অবসান ঘটে এক শান্তিপূর্ণ কল্যাণকর সুন্দর মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
এটা সম্ভব হয়েছিল দু’টি কারণে। প্রথমত আল্লাহ্র দেয়া জীবন-বিধান ছিল এ আদর্শ সমাজের মূলভিত্তি। দ্বিতীয়ত ঐশী বিধান ও মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ মহানবীর সা. সুন্নাতের ভিত্তিতে পরিগঠিত এ আদর্শ সমাজ শুধু আরব জাতির ইতিহাসে নয়, বিশ্ব-সভ্যতার ইতিহাসেও দুনিয়ার সব মানুষের জন্য এক দীপ্ত প্রেরণার অনন্ত উৎস হয়ে রয়েছে। যুগ যুগ ধরে সে প্রেরণায় উদ্ধুদ্ধ হবে বিশ্বের অগণিত মানুষ। বর্তমানেও একমাত্র রাসূলুল্লাহর সা. প্রতিষ্ঠিত আদর্শ সমাজের আদলে নতুন মানবিক সমাজ গঠিত হলেই কেবল বিশ্বে শান্তি, কল্যাণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে পারে।
ঈপ্সিত শান্তি, কল্যাণ ও সুন্দর মানবসমাজ পরিগঠনে মহানবী সা. প্রতিষ্ঠিত আদর্শ সমাজই হতে পারে একমাত্র মডেল। যে সমাজে সকল শ্রেণীর মানুষ সম অধিকারের ভিত্তিতে সুখী-সমৃদ্ধ নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা পায়। এমনকি, অমুসলিমদের জন্যও এ ধরনের নিশ্চয়তা রয়েছে এখানে। মদিনা সনদে আইনের দৃষ্টিতে মুসলিম-অমুসলিম সকলে মমর্যাদা ও সমঅধিকার লাভের যোগ্য। আইনের দৃষ্টিতে মুসলিম-অমুসলিম, জাতি-ধর্ম-বর্ণ ইত্যাদির কোন ভেদাভেদ নেই। নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রেও কোন বৈষম্য করা হয়নি। ন্যায়বিচার, সমঅধিকার ও মানুষ হিসাবে সমমর্যাদার অধিকারী দেশের প্রতিটি নাগরিক। এ কারণেই রাসূলুল্লাহর সা. নেতৃত্ব সম্পর্কে কখনো কোন প্রশ্ন ওঠেনি। মদিনার ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুশরিকগণও নির্দ্বিধায় রাসূলুল্লাহকে সা. তাদের নেতা ও রাষ্ট্রের কর্ণধর হিসাবে মেনে নিয়েছিলেন, তাদের সকল বিচার-সালিস এবং সমস্যার কথা অকপটে রাসূলুল্লাহর সা. নিকট পেশ করে সেগুলোর যথাযথ যৌক্তিক ও ন্যায়ানুগ সমাধান খুঁজে পেয়েছেন।
বর্তমানে রাসূলুল্লাহর সা. অবর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠিত আদর্শ সমাজ কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে, সে ব্যাপারে প্রশ্ন উঠতে পারে। এ প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো এই যে, রাসূলুল্লাহ সা. যে আদর্শ ও নীতিমালার ভিত্তিতে রাষ্ট্র ও সমাজ গঠন ও পরিচালনা করতেন, বিচার-সালিস সম্পাদন করতেন, মানুষে মানুষে সুবিচার ও ন্যায়ানুগ অনুশাসন প্রবর্তন করেছিলেন, সে কুরআনি নীতিমালা ও সুন্নতে রাসূলুল্লাহ সা. এখনো অক্ষত অবস্থায় বিদ্যমান। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে এ দু’টি মূলভিত্তির ওপরই তা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হবে। অতএব, আদর্শ সমাজের মূলভিত্তি যেখানে অটুট রয়েছে, সে মূলভিত্তি অনুযায়ী সমাজ গঠন করলে অবশ্যই বর্তমান যুগেও অনুরূপ আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। মানুষের জীবন অস্থায়ী ও নশ্বর, কিন্তু আল্লাহ্-প্রদত্ত বিধান ও তাঁর প্রেরিত পুরুষদের জীবনাদর্শ চির অবিনশ্বর এবং মানবজাতির জন্য তা চিরন্তন প্রেরণার উৎস।
নবুওয়তপ্রাপ্তির পূর্বে চল্লিশ বছর পর্যন্ত মানুষ মুহাম্মদের সা. জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল একটিই। ঐতিহাসিক মাসুদীর ভাষায় তা হলো : সকল জুলুম-নির্যাতন প্রতিরোধ এবং সর্বক্ষেত্রে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এহেন ব্যক্তিত্বের পক্ষেই একটি অধঃপতিত সমাজের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে এক নতুন কল্যাণময় সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তাই দেখা যায়, একটি অসভ্য, বর্বর সমাজের কর্দমাক্ত স্রোতধারায় গা না ভাসিয়ে সে সমাজকে পঙ্কিলতার অতল গহ্বর থেকে কিভাবে উদ্ধার করা যায়, সে চিন্তায় তাঁর শৈশব, কৈশোর ও যৌবন অতিবাহিত হয়েছে। বয়োঃবৃদ্ধির সাথে সাথে তাঁর এ চিন্তা আরো পরিপক্বতা লাভ করেছে।
তাই দেখা যায়, পঁচিশ বছর বয়সে তৎকালীন আরবের এক অতি সম্ভ্রান্ত, অভিজাত পরিবারের ধনাঢ্য মহিলা খাদিজা রা.-এর সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হবার পর বিশাল ধন-সম্পত্তির অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও গরিব লোকদের মধ্যে সে ধন-সম্পদ বিলিয়ে দিয়ে সমাজ তথা সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ-চিন্তায় তিনি মক্কার অদূরে হেরা পর্বতের গুহায় নির্জনে নিবিষ্টচিত্তে ধ্যানমগ্ন হন। একাদিক্রমে সুদীর্ঘ পনের বছর কাল ধরে এভাবে গভীর চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-সাধনার পর তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহি বা প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত হন। এভাবে চল্লিশ বছর বয়সে তাঁর ওপর মানবজাতির মুক্তি ও কল্যাণের উদ্দেশ্যে রিসালাত বা নবুওয়তের সুমহান গুরু দায়িত্ব অর্পিত হয়।
মূলত জাহিলিয়াতের পুঁতিগন্ধময়, ঘূণেধরা জরা-জীর্ণ, কদর্য ও কালিমাযুক্ত সমাজ-ব্যবস্থাকে সমূলে উৎখাত করে সত্য ও ন্যায়ভিত্তিক, সুন্দরতম, কল্যাণময় সমাজ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যেই মহান স্রষ্টা তাঁকে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। যে সমাজ শুধুমাত্র আরবের জন্য নয়, সমগ্র পৃথিবীতে কিয়ামত পর্যন্ত অনাগত সকল মানুষের জন্য নিখুঁত মডেল হিসাবে সর্বদা অনুপ্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে।