কালিমাতুশ শাহাদাহ এর ছয়টি শর্ত :

কালিমাতুশ শাহাদাহ এর ছয়টি শর্ত :

কালিমাতুশ শাহাদাহ এর ছয়টি শর্ত একই সাথে পূরণ করতে হবে । তা হলেই কেবল প্রকৃত অর্থে মুসলমান হওয়া যাবে । কালিমাতুশ শাহাদাহ এর ছয়টি শর্ত নিচে আলোচনা করা হলো ।

১ . জ্ঞান , যাতে থাকবে না অজ্ঞতার লেশমাত্র :
সুস্পষ্টভাবে জানতে হবে এই কালিমাতুশ শাহাদাহ এর প্রকৃত অর্থ ,তাৎপর্য এবং এর দাবি ও চাহিদা । কেননা আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন :
অতএব, হে নবী ! ভাল করে জেনে নাও , আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ইবাদাতের যোগ্য নয় ৷ নিজের ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো ৷ এবং মু’মিন নারী ও পুরুষদের জন্যও ৷ আল্লাহ তোমাদের তৎপরতা সম্পর্কে অবহিত এবং তোমাদের ঠিকানা সম্পর্কেও অবহিত ৷ সূরা মুহাম্মদ : ১৯
আল্লাহ তায়ালা আলোচ্য আয়াতে কালিমাতুশ শাহাদাহ এর প্রতি ঈমান আনার পূর্বে সুস্পষ্টভাবে এই কালিমাতুশ শাহাদাহ এর প্রকৃত অর্থ ,তাৎপর্য এবং এর দাবি ও চাহিদা সম্পর্ক জ্ঞান অর্জন করতে বলেছেন । তারপর আমল ও ইস্তেগফার করতে বলেছেন ।
আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেছেন : 
পড়ো ( হে নবী ) , তোমার রবের নামে , যিনি সৃষ্টি করেছেন ৷
জমাট বাঁধা রক্তের দলা থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ৷
পড়ো , এবং তোমার রব বড় মেহেরবান , 
যিনি কলমের সাহায্যে জ্ঞান শিখিয়েছেন ৷
মানুষকে এমন জ্ঞান দিয়েছেন , যা সে জানতো না ৷ সূরা আলাক : ১ - ৫
কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে জ্ঞানীদের কাছে জিজ্ঞেসা করা জাবে ।
হে মুহাম্মাদ ! তোমার আগে আমি যখনই রসূল পাঠিয়েছি , মানুষই পাঠিয়েছি, যাদের কাছে আমি নিজের অহী প্রেরণ করতাম ৷ যদি তোমরা নিজেরা না জেনে থাকো তাহলে বাণীওয়ালাদেরকে জিজ্ঞেস করো ৷ সূরা নাহল : ৪৩

২ . সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলে সুদৃঢ় বিশ্বাস করা ,যাতে থাকবে না সন্দেহের লেশমাত্র :
 আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন : প্রকৃত ঈমানদার তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান এনেছে এবং এ ব্যাপারে পরে আর কোন সন্দেহ পোষণ করেনি ৷ তারপর প্রাণ ও অর্থ - সম্পদ দিয়ে জিহাদ করেছে ৷ তারাই সত্যবাদী ৷ সূরা হুজরাত : ১৫

৩ . তাগুত সমূহকে অস্বীকার ও বর্জন করা :
 আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন : দীনের ব্যাপারে কোন জোর - জবরদস্তি নেই ৷ ভ্রান্ত মত ও পথ থেকে সঠিক মত ও পথকে ছাঁটাই করে আলাদা করে দেয়া হয়েছে ৷ এখন যে কেউ তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনে , সে এমন একটি মজবুত অবলম্বন আঁকড়ে ধরে , যা কখনো ছিন্ন হয় না ৷ আর আল্লাহ ( যাকে সে অবলম্বন হিসেবে আঁকড়ে ধরেছে ) সবকিছু শোনেন ও জানেন ৷ সূরা বাকারাহ : ২৫৬
আভিধানিক অর্থে এমন প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে 'তাগুত' বলা হবে, যে নিজের বৈধ অধিকারের সীমানা লংঘন করেছে । কুরআনের পরিভাষায় তাগুত এমন এক বান্দাকে বলা হয়, যে বন্দেগী ও দাসত্বের সীমা অতিক্রম করে নিজেই প্রভু ও খোদা হবার দাবীদার সাজে এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজের বন্দেগী ও দাসত্বে নিযুক্ত করে । আল্লাহর মোকাবিলায় বান্দার প্রভূত্বের দাবীদার সাজার এবং বিদ্রোহ করার তিনটি পর্যায় আছে । প্রথম পর্যায় বান্দা নীতিগতভাবে তাঁর শাসন কর্তৃত্বকে সত্য বলে মেনে নেয় কিন্তু কার্যত তার বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করে । একে বলা হয় ফাসেকী । দ্বিতীয় পর্যায়ে সে আল্লাহর শান কর্তৃত্বকে নীতিগতভাবে মেনে না নিয়ে নিজের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয় অথবা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো বন্দেগী ও দাসত্ব করতে থাকে । একে বলা হয় কুফরী । তৃতীয় পর্যায়ে সে মালিক ও প্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তার রাজ্যে এবং তার প্রজাদের মধ্যে নিজের হুকুম চালাতে থাকে । এই শেষ পর্যায়ে যে বান্দা পৌছে যায় তাকেই বলা হয়া 'তাগুত' । কোন ব্যক্তি এই তাগুতকে অস্বীকার না করা পর্যন্ত কোন দিন সঠিক অর্থে আল্লাহর মু'মিন বান্দা হতে পারে না ।
 আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেছেন : যারা ঈমানের পথ অবলম্বন করেছে তারা লড়াই করে তাগুতের পথে ৷ কাজেই শয়তানের সহযোগীদের সাথে লড়ো এবং নিশ্চিত জেনে রাখো, শয়তানের কৌশল আসলে নিতান্তই দুর্বল ৷ সূরা আন নিসা ৭৫
এটি আল্লাহর একটি দ্ব্যর্থহীন ফায়সালা । আল্লাহর পৃথিবীতে একমাত্র আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে লড়াই করা হচ্ছে ঈমানদারদের কাজ । যথার্থ ও সত্যিকার মুমিন এই কাজ থেকে কখনো বিরত থাকবে না । আর আল্লাহর পৃথিবীতে আল্লাহ বিরোধী ও আল্লাহদ্রোহীদের রাজত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য তাগুতের পথে লড়াই করা হচ্ছে কাফেরদের কাজ  । কোন ঈমানদার ব্যক্তি এ কাজ করতে পারে না ।

৪ . পূর্ণাঙ্গজীবন বিধান ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশের প্রকাশ্যে ঘোষণা ও সাক্ষ্য দেয়া :
 আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন :
আমি তো একনিষ্ঠভাবে নিজের মুখ সেই সত্তার দিকে ফিরিয়ে নিয়েছি যিনি যমীন ও আসমান সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কখনো মুশরিকদের অন্তরভুক্ত নই ৷  সূরা আল আনআম : ৭৯
আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেছেন :
বলো, আমার নামায, আমার ইবাদাতের সমস্ত অনুষ্ঠান , আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য ।
যার কোন শরীক নেই ৷ এরি নির্দেশ আমাকে দেয়া হয়েছে এবং সবার আগে আমিই আনুগত্যের শির নতকারী ৷  সূরা আল আনআম : ১৬২ - ১৬৩
হে ঈমানদারগণ ! তোমরা পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের অনুসারী হয়ো না, কেননা সে তোমাদের সুস্পষ্ট দুশমন ৷ সূরা আল বাকারা : ২০৮
অর্থাৎ কোন প্রকার ব্যতিক্রম ও সংরক্ষন ছাড়াই, কিছু অংশকে বাদ না দিয়ে এবং কিছু অংশকে সংরক্ষিত না রেখে জীবনের সমগ্র পরিসরটাই ইসলামের আওতাধীন করো । তোমাদের চিন্তা - ভাবনা , আদর্শ, মতবাদ, জ্ঞান - বিজ্ঞান, শিক্ষা, আচরণ, ব্যবহারিক জীবন, লেনদেন এবং তোমাদের সমগ্র প্রচেষ্টা ও কর্মের পরিসরকে পুরোপুরি ইসলামের কর্তৃত্বাধীনে আনো । তোমাদের জীবনের কিছু অংশে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলবে আর কিছু অংশকে ইসলামী অনুশাসনের বাইরে রাখবে, এমনটি যেন না হয় ।

৫ . ইলম ও ঈমান অনুযায়ী কাজ করা বা আমল করা : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন :
জিন ও মানুষকে আমি শুধু এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার দাসত্ব  করবে ৷ সূরা আয যারিয়াত : ৫৬
অর্থাৎ আমি তাদেরকে অন্য কারো দাসত্বের জন্য নয় আমার নিজের দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করেছি । তারা আমার দাসত্ব করবে এ জন্য যে, আমি তাদের স্রষ্টা । যখন অন্য কেউ তাদের সৃষ্টি করেনি তখন তার দাসত্ব করার কি অধিকার এদের আছে ৷ তাছাড়া তাদের জন্য এটা কি করে বৈধ হতে পারে যে, এদের স্রষ্টা আমি অথচ এরা দাসত্ব করবে অন্যদের !
এ আয়াতে 'ইবাদত' শব্দটিকে শুধু নামায রোযা এবং এ ধরনের অন্যান্য ইবাদত অর্থে ব্যবহার করা হয়নি । তাই কেউ এর এ অর্থ গ্রহণ করতে পারে না যে জিন ও মানুষকে শুধু নামায পড়া রোযা রাখা এবং তাসবীহ তাহলীল করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে । এ অর্থটিও এর মধ্যে শামিল আছে বটে, তবে এটা তার পূর্ণাংগ অর্থ নয় । এর পূর্ণাংগ অর্থ হচ্ছে, জিন ও মানুষকে আল্লাহ ছাড়া অন্যের পূজা আনুগত্য আদেশ পালন ও বিনীত প্রার্থনার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি । অন্য কারো সামনে নত হওয়া, অন্য কারো নির্দেশ পালন করা , অন্য কাউকে ভয় করা, অন্য কারো রচিত দীন বা আদর্শের অনুসরণ করা অন্য কাউকে নিজের ভাগ্যের নিয়ন্তা মনে করা এবং অন্য কোন সত্তার কাছে প্রার্থনার জন্য হাত বাড়ানোর তাদের কাজ নয় ।
তাই তো ইলম ও ঈমান অনুযায়ী কাজ করা বা আমল করা ঈমানদার দের প্রধান কাজ । 
আল্লাহ তায়ালা বলেন : বলুন, হে আমার বিশ্বাসী বান্দাগণ ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর । যারা এ দুনিয়াতে সৎকাজ করে, তাদের জন্যে রয়েছে পুণ্য । আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত । যারা সবরকারী, তারাই তাদের পুরস্কার পায় অগণিত । 
বলুন, আমি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর এবাদত করতে আদিষ্ট হয়েছি ।
আরও আদিষ্ট হয়েছি, সর্ব প্রথম নির্দেশ পালনকারী হওয়ার জন্যে ।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন :
সময়ের কসম ৷ মানুষ আসলে বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে ৷ তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে এবং একজন অন্যজনকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে । সূরা আল আসর : ১ - ৩
আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেছেন :
যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তারা নিশ্চিত ভাবে সৃষ্টির সেরা ৷ তাদের পুরষ্কার রয়েছে তাদের রবের কাছে চিরস্থায়ী জান্নাত, যার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহিত ৷ সেখানে তারা চিরকাল থাকবে ৷ আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট ৷ এসব সে ব্যক্তির জন্য যে তার রবকে ভয় করে ৷
আল বাইয়্যেনা : ৭ - ৮
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন :
তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের আপ্যায়নের জন্য থাকবে ফেরদৌসের বাগান ৷ সেখানে তারা চিরকাল থাকবে এবং কখনো সে স্থান ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে তাদের মন চাইবে না ৷ সূরা কাহাফ : ১০৭ - ১০৮

৬ . অন্যকে এই ইলম ও আমলের দিকে আহ্বান করতে হবে বা পূর্ণাঙ্গজীবন বিধান ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশের জন্য মানুষদের কে আহ্বান করতে হবে : আল্লাহ তায়ালা বলেন :
এখন তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল ৷ তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য ৷ তোমরা নেকীর হুকুম দিয়ে থাকো, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো ৷ এই আহলি কিতাবরা ঈমান আনলে তাদের জন্যই ভালো হতো ৷ যদিও তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ঈমানদার পাওয়া যায়, কিন্তু তাদের অধিকাংশই নাফরমান ৷ আলে ইমরান : ১১০
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারীদের বলা হচ্ছে, নিজেদের অযোগ্যতার কারণে বনী ইসরাঈলদেরকে দুনিয়ার নেতৃত্ব ও পথপ্রদর্শনের যে আসন থেকে বিচ্যুত করা হয়েছে সেখানে এখন তোমাদেরকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে । কারণ নৈতিক চরিত্র ও কার্যকলাপের দিক দিয়ে এখন তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম মানব গোষ্ঠী । সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ নেতৃত্বের জন্য যেসব গুণাবলীর প্রয়োজন সেগুলো তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়ে গেছে । অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে ন্যায় ও সৎবৃত্তির প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায় ও অসৎবৃত্তির মূলোৎপাটন করার মনোভাব ও কর্মস্পৃহা সৃষ্টি হয়ে গেছে । আর এই সংগে তোমরা এক ও লা - শরীক আল্লাহকেও বিশ্বাসগত দিক দিয়ে এবং কার্যতও নিজেদের ইলাইহ, রব ও সর্বময় প্রভু বলে স্বীকার করে নিয়েছো । কাজেই এ কাজের দায়িত্ব এখন তোমাদের মাথায় চাপিয়ে দেয়া হয়েছে । তোমরা নিজেদের দায়িত্ব অনুধাবন করো এবং তোমাদের পূর্ববর্তীরা যেসব ভুল করে গেছে তা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখো ।
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন :
তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে এবং একজন অন্যজনকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে । সূরা আল আসর : ১ - ৩
সেই ব্যক্তির কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হবে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, সৎ কাজ করলো এবং ঘোষণা করলো আমি মুসলমান ৷ হা - মীম আস সাজদাহ : ৩৩
মু'মিনদের কে তাদের আসল কাজের প্রতি উৎসাহিত করা হচ্ছে । আগের আয়াতে তাদের বলা হয়েছিলো, আল্লাহর বন্দেগীর ওপর দৃঢ়পদ হওয়া এবং এই পথ গ্রহণ করার পর পুনরায় তা থেকে বিচ্যুত না হওয়াটাই এমন একটা মৌলিক নেকী যা মানুষকে ফেরেশতার বন্ধু এবং জান্নাতের উপযুক্ত বানায় । এখন তাদের বলা হচ্ছে, এর পরবর্তী স্তর হচ্ছে, তোমরা নিজে নেক কাজ করো, অন্যদেরকে আল্লাহর বন্দেগীর দিকে ডাকো এবং ইসলামের ঘোষণা দেয়াই যেখানে নিজের জন্য বিপদাপদ ও দুঃখ - মুসিবতকে আহবান জানানোর শমিল এমন কঠিন পরিবেশেও দৃঢ়ভাবে ঘেষণা করো, আমি মুসলমান । মানুষের জন্য এর চেয়ে উচ্চস্তর আর নেই । এ কথার গুরুত্ব পুরোপুরি উপলব্ধি করার জন্য যে পরিস্থিতিতে তা বলা হয়েছে তার প্রতি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন । সে সময় অবস্থা ছিল এই যে, যে ব্যক্তিই মুসলমান হওয়ার কথা প্রকাশ করতো সে হঠাৎ করেই অনুভব করতো যেন হিংস্র শ্বপদ ভরা জংগলে পা দিয়েছে যেখানে সবাই তাকে ছিঁড়ে ফেড়ে খাওয়ার জন্য ছুটে আসছে । যে ব্যক্তি আরো একটু অগ্রসর হয়ে ইসলাম প্রচারের জন্য মুখ খুলেছে সে যেন তাকে ছিঁড়ে ফেড়ে খাওয়ার জন্য হিংস্র পশুকুলকে আহবান জানিয়েছে । এই পরিস্থিতিতে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তির আল্লাহকে রব হিসেবে স্বীকার করে সোজা পথ গ্রহণ করা এবং তা থেকে বিচ্যুত না হওয়া নিসন্দেহে বড় ও মৌলিক কাজ । 
কিন্তু আমি মুসলমান বলে কোন ব্যক্তির ঘোষণা করা পরিণামের পরোয়া না করে সৃষ্টিকে আল্লাহর বন্দেগীর দিকে আহবান জানানো এবং কেউ যাতে ইসলাম ও তার ঝান্ডাবাহীদের দোষারোপ ও নিন্দাবাদ করার সুযোগ না পায় এ কাজ করতে গিয়ে নিজের তৎপরতাকে সেভাবে পবিত্র রাখা হচ্ছে পূর্ণ মাত্রার নেকী ।

দাওয়াতী কাজের স্তর হবে ৩ টি :
১ . ব্যক্তি , পরিবার ও সমাজ জীবনে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া ।
প্রত্যেক মুসলিমকে তার পরিবার পরিজন ও সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেয়া ও ইসলামের বিধান মানতে আহ্বান করা । কুরআনে এসেছে,
অর্থ : হে ইমানদারগণ ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও’ । সূরা তাহরীম : ৬
আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন :
হে নবী, আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন । সূরা শু’আরাঃ ১১৪
আপনি তাদেরকে সঠিক দ্বীনের শিক্ষা দিন । দ্বীনের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করুন । তাদেরকে এই শুভসংবাদ দিন যে, দ্বীন মেনে চললে দুনিয়ায় মিলবে সুখ, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে জান্নাত এবং এক মহা আনন্দময় জীবন ।
সেই সাথে তাদেরকে আল্লাহর শাস্তির ভয় দেখান । যেমন , মানবজাতির জন্য আলোর দিশারী এবং জীবন সংবিধান হিসেবে অবতীর্ণ মহা গ্রন্থ আল কুরআনকে কেউ যদি অস্বীকার করে অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অস্বীকার করে যাকে আল্লাহ তা’আলা সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্য দয়া ও কল্যাণের বার্তাবাহী হিসেবে প্রেরণ করেছেন তাহলে তাদের জন্য কত কঠিন পরিণতি অপেক্ষা করছে সে ভয় তাদেরকে প্রদর্শন করুন ।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন ,
অর্থ : কুরআনের বিষয়ে তোমাদের উপর অবশ্য পালনীয় এই যে, কুরআন শিক্ষা করা এবং তোমাদের সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেয়া । কেননা এ বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে এবং তার প্রতিদানও দেয়া হবে । শরহে সহীহ বুখারী, ইবন বাত্তাল : ৪৬

২ . সামাজীক , রাষ্ট্রিয় ও আর্ন্তজাতিক সকল বাতিল মতবাদের উপর ইসলামকে বিজয়ী করার আহ্বান করতে হবে ।
অর্থ : তিনিই মহান আল্লাহ যিনি তাঁর রসূলকে হিদায়াত ও সত্য দীন দিয়ে পাঠিয়েছেন, যাতে করে সেটিকে সে সকল মতবাদের উপর বিজয়ী করে । সূরা ৬১ সফ : আয়াত ৯

৩ . ইসলামী দাওয়াতের মূল আহ্বান হবে দ্বীন প্রতিষ্ঠার করার :
তিনি তোমাদের জন্য দীনের সেই সব নিয়ম - কানুন নির্ধারিত করেছেন যার নির্দেশ তিনি নূহকে দিয়েছিলেন এবং ( হে মুহাম্মাদ) যা এখন আমি তোমার কাছে ওহীর মাধ্যমে পাঠিয়েছি ৷ আর যার আদেশ দিয়েছিলাম আমি ইবরাহীম আ . মূসা আ . ও ঈসা আ . ৷ তার সাথে তাগিদ করেছিলাম এই বলে যে, এ দীনকে কায়েম করো এবং এ ব্যাপারে পরস্পর ভিন্ন হয়ো না ৷ (হে মুহাম্মাদ) এই কথাটিই এসব মুশরিকের কাছে অত্যন্ত অপছন্দনীয় যার দিকে তুমি তাদের আহবান জানাচ্ছো ৷ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা আপন করে নেন এবং তিনি তাদেরকেই নিজের কাছে আসার পথ দেখান যারা তাঁর প্রতি রুজু করে ৷ আশ শূরা : ১৩

ইসলামী দাওয়াতী কাজের পদ্ধতি :

হে নবী, সৎ কাজ ও অসৎ কাজ সমান নয় ৷ তুমি অসৎ কাজকে সেই নেকী দ্বারা নিবৃত্ত করো যা সবচেয়ে ভাল ৷ তাহলে দেখবে যার সাথে তোমার শত্রুতা ছিল সে অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে গিয়েছে ৷ হা - মীম আস সাজদাহ : ৩৪
এ কথার অর্থও পুরোপুরি বুঝার জন্য যে অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ও তাঁর মাধ্যমে তাঁর অনুসারীদেরকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো তা বিবেচনা থাকা দরকার । তখন অবস্থা ছিল এই যে, চরম হঠকারিতার এবং আক্রমণাত্মক বিরোধিতার মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের মোকাবিলা করা হচ্ছিলো যেখানে নৈতিকতা , মানবতা এবং ভদ্রতার সমস্ত সীমা লংঘন করা হয়েছিলো । নবী সা. ও তাঁর সংগী সাথীদের বিরুদ্ধে সব রকমের মিথ্যা আরোজ করা হচ্ছিলো । তাঁকে বদনাম করা এবং তাঁর সম্পর্কে লোকের মনে খারাপ ধারণা সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য সব রকমের দুষ্টবুদ্ধি ও কৌশল কাজে লাগানো হচ্ছিলো । তাঁর বিরুদ্ধে নানা রকমের অপবাদ আরোপ করা হচ্ছিলো এবং শত্রুতামূলক প্রচারনার জন্য পুরো একদল লোক তাঁর বিরুদ্ধে মানুষের মনে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করে যাচ্ছিলো । তাঁকে তাঁর সংগীদেরকে সর্ব প্রকার কষ্ট দেয়া হচ্ছিলো । তাতে অতিষ্ঠ হয়ে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমান দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল । তাছাড়া তাঁর ইসলাম প্রচারের ধারাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য পরিকল্পনা মফিক হৈ চৈ ও হট্রগোললকারী একদল লোককে সব সময় ওঁত পেতে থাকার জন্য তৈরী করা হয়েছিল । যখনই তিনি ন্যায় ও সত্যের দাওয়াত দেয়ার জন্য কথা বলতে শুরু করবেন তখনই তারা শোরগোল করবে এবং কেউ তাঁর কথা শুনতে পাবে না । এটা এমনই একটা নিরুৎসাহ ব্যঞ্জক পরিস্থিতি ছিল যে, বাহ্যিকভাবে আন্দোলনের সকল পথ রুদ্ধ বলে মনে হচ্ছিলো । বিরোধিতা নস্যাত করার জন্য সেই সময় নবীকে সা . এসব পন্থা বলে দেয়া হয়েছিলো । 
প্রথম কথা বলা হয়েছে, সৎকর্ম ও দুষ্কর্ম সমান নয় । অর্থাৎ তোমাদের বিরোধীরা যত ভয়ানক তুফানই সৃষ্টি করুক না কেন এবং তার মোকাবিলায় নেকীকে যত অক্ষম ও অসহায়ই মনে হোক না কেন দুষ্কর্মের নিজের মধ্যেই এমন দুর্বলতা আছে যা শেষ পর্যন্ত তাকে ব্যর্থ করে দেয় । কারণ, মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত তার স্বভাব প্রকৃতি দুষ্কর্মকে ঘৃণা না করে পারে না । দুষ্কর্মের সহযোগীই শুধু নয় তার ধ্বজাধারী পর্যন্ত মনে মনে জানে যে, সে মিথ্যাবাদী ও অত্যাচারী এবং সে তার উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য হঠকারিতা করছে । এ জিনিসটি অন্যদের মনে তার প্রতি সম্মানবোধ সৃষ্টি করা তো দূরের কথা নিজের কাছেই তাকে খাটো করে দেয়। এভাবে তার নিজের মনের মধ্যেই এক চোর জন্ম নেয়। শত্রুতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের সময় এই চোর ভেতর থেকেই তার সংকল্প ও মনোবলের ওপর সংগোপনে হানা দিতে থাকে। এই দুষ্কর্মের মোকাবিলায় যে সৎ কর্মকে সম্পূর্ণ অক্ষম ও অসহায় বলে মনে হয় তা যদি ত্রুমাগত তৎপরতা চালিয়ে যেতে থাকে তাহলে শেষ পর্যন্ত সে-ই বিজয়ী হয় । কারণ, প্রথমত সৎ কর্ম নিজেই একটি শক্তি যা হৃদয় - মনকে জয় করে এবং ব্যক্তি যতই শত্রুতাভাবাপন্ন হোক না কেন সে নিজের মনে তার জন্য সম্মানবোধ না করে পারে না । তাছাড়া নেকী ও দুষ্কর্ম যখন সামনা সামনি সংঘাতে লিপ্ত হয় এবং উভয়ের গুণাবলী ও বৈশিষ্ট পুরোপুরি উন্মেচিত হয় এমন পরিস্থিতিতে কিছুকাল সংঘাতে লিপ্ত থাকার পর এমন খুব কম লোকই থাকতে পারে যারা দুষ্কর্মের প্রতি ঘৃণা পোষণ করবে না এবং সৎ কর্মের প্রতি আকৃষ্ট হবে না ।
দ্বিতীয় কথাটি বলা হয়েছে এই যে, দুষ্কর্মের মোকাবিলা শুধুমাত্র সৎ কর্ম দিয়ে নয়, অনেক উচ্চমানের সৎকর্ম দিয়ে করো । অর্থাৎ কেউ যদি তোমাদের সাথে খারাপ আচরণ করে আর তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও তাহলে শুধু সৎকর্ম । উন্নত পর্যায়ের সৎকর্ম হচ্ছে, যে তোমার সাথে খারাপ আচরণ করবে সুযোগ পেলে তুমি তাঁর প্রতি অনুগ্রহ করো । 
এর সুফল বলা হয়েছে এই যে, জঘন্যতম শত্রুও এভাবে অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে । কারণ, এটিই মানুষের প্রকৃতি । আপনি যদি গালির জবাব না দিয়ে চুপ থাকেন তাহলে নিসন্দেহে তা হবে একটি নেকী বা সৎকর্ম। অবশ্য তা গালিদাতার মুখ বন্ধ করতে পারবে না । কিন্তু গালির জবাবে আপনি যদি তার কল্যাণ কামনা করেন তাহলে চরম নির্লজ্জ শত্রুও লজ্জিত হবে এবং আর কখনো আপনার বিরুদ্ধে অশালীন কথা বলার জন্য মুখ খোলা তার জন্য কঠিন হবে । একজন লোক আপনার ক্ষতি করার কোন সুযোগই হাত ছাড়া হতে দেয় না । আপনি যদি তার অত্যাচার বরদাশ করে যেতে থাকেন তাহলে সে হয়তো তার দুস্কর্মের ব্যাপারে আরো সাহসী হয়ে উঠবে।কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে সে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তখন যদি আপনি তাকে রক্ষা করেন তাহলে আপনার একান্ত অনুগত হয়ে যাবে । কারণ , ঐ সুকৃতির মোকাবিলায় কোন দুস্কৃতিই টিকে থাকতে পারে না । তা সত্ত্বেও এই সাধারন নিয়মকে এ অর্থে গ্রহণ করা ঠিক নয় যে, উন্নত পর্যায়ের সৎকর্মের মাধ্যমে সব রকমের শত্রুর অনিবার্যরূপে অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে। পৃথিবীতে এমন জঘন্য মনের মানুষও আছে যে, তার অত্যাচার ক্ষমা করা ও দুষ্কৃতির জবাব অনুকম্পা ও সুকৃতির মাধ্যমে দেয়ার ব্যাপারে আপনি যতই তৎপর হোন না কেন তার বিচ্ছুর ন্যায় বিষাক্ত হুলের দংশনে কখনো ভাটা পড়বে না । তবে এ ধরনের মূর্তিমান খারাপ মানুষ প্রায় ততটাই বিরল যতটা বিরল মূর্তিমান ভাল মানুষ ।
ধৈর্যশীল ছাড়া এ গুণ আর কারো ভাগ্যে জোটে না ৷ এবং অতি ভাগ্যবান ছাড়া এ মর্যাদা আর কেউ লাভ করতে পারে না ৷ হা - মীম আস সাজদাহ : ৩৫
অর্থাৎ এটা অত্যন্ত কার্যকর ব্যবস্থা হলেও তা কাজে লাগানো কোন ছেলেখেলা নয় । এ জন্য দরকার সাহসী লোকের । এ জন্য দরকার দৃঢ় সংকল্প, সাহস, অপরিসীম সহনশীলতা এবং চরম আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা । সাময়িকভাবে কেউ কোন দুষ্কর্মের মোকাবিলায় সৎকর্ম করতে পারে । এটা কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার নয় । কিন্তু যে ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তিকে এমন সব বাতিলপন্থী দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে ন্যায় সত্যের জন্য লড়াই করতে হয় যারা নৈতিকতার যে কোন সীমালংঘন করতে দ্বিধা করে না এবং শক্তি ও ক্ষমতার নেশায় চূর হয়ে আছে সেখানে দুষ্কর্মের মোকাবিলা সৎকর্ম দিয়ে করে যাওয়া তাও আবার উচ্চ মাত্রার সৎকর্ম দিয়ে এবং একবারও নিয়ন্ত্রণের বাগডোর হাত ছাড়া হতে না দেয়া কোন সাধারণ মানুষের কাজ নয় । কেবল সেই ব্যক্তিই এ কাজ করতে পারে যে বুঝে শুনে ন্যায় ও সত্যকে সমুন্নত করার জন্য কাজ করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেছে, যে তার প্রবৃত্তিকে সম্পূর্ণরূপে জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিচার শক্তির অনুগত করে নিয়েছে এবং যার মধ্যে নেকী ও সততা এমন গভীরভাবে শিকড় গেড়ে বসেছে যে, বিরোধীদের কোন অপকর্ম ও নোংরামি তাকে তার উচ্চাসন থেকে নামিয়ে আনতে সফল হতে পারে না ।
এটা প্রকৃতির বিধান । অত্যন্ত উচু মর্যাদার মানুষই কেবল এসব গুণাবলীর অধিকারী হয়ে তাকে । আর যে ব্যক্তি এসব গুণাবলীর অধিকারী হয় দুনিয়ার কোন শক্তিই তাকে সাফল্যের মনযিলে মকসুদে পৌঁছা থেকে বিরত রাখতে পারে না । নীচ প্রকুতির মানুষ তাদের হীন চক্রান্ত, জঘন্য কৌশল এবং কুৎসিত আচরণ দ্বারা তাকে পরাস্ত করবে তা কোনভাবেই সম্ভব নয় ।
বুদ্ধিমত্তা, হেকমত, নরম ভাষা, ভালবাসা, পরম নিষ্ঠা এবং চরম ধৈর্য সহকারে মানুষকে ইসলামের পথে আহবান করুন । তার আগে নিজেকে সবোর্ত্তম আদর্শ হিসেবে পেশ করুন । এমন হওয়ার চেষ্টা করুন, যেন আপনার কথা - বার্তা, চলাফেরা, আচার - আচরণে আদর্শ ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠে । ভাল আমলগুলো করার ক্ষেত্রে আপনি থাকবেন সবার আগে । মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন ।
এভাবে কথা ও কাজের মাধ্যমে আপনার দাওয়াতকে ছড়িয়ে দিন । তাহলেই আপনার বন্ধুরা আপনার দাওয়াত কবুল করবে । এর মাধ্যমে তারা বুঝতে সক্ষম হবে যে, আপনি যা বলছেন, সেটাই সঠিক । ফলে তারা ইসলামের আদর্শকে মনে - প্রাণে গ্রহণ করবে । এবং হৃদয় দিয়ে ভালবাসবে ইসলামকে এবং সেই সাথে আপনাকেও ।
অতএব, জানতে হবে মানুষকে ইসলামের পথে আহবান করার সঠিক পদ্ধতি কি ? নির্ধারণ করতে হবে কোন উপলক্ষে, কোন পরিস্থিতিতে, কোন কথাটি বলতে হবে । এ জন্য মহান আল্লাহ বলেন :
“হেকমত ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে তোমার রবের পথে আহবান কর । আর সর্বোত্তম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর । আপনার রব তো সবচেয়ে বেশি জানেন কে তার পথ থেকে বিচ্যুত এবং তিনিই ভাল জানেন কে হেদায়েত প্রাপ্ত । সূরা নাহলঃ ১২৫
আরবদের মাঝে একটি নীতি বাক্য আছে তা হল, “পরিস্থিতির আলোকে কথা বল” । পরিস্থিতি অনুযায়ী যথোপযুক্ত কথা বললে তাতে বেশি প্রভাব সৃষ্টি হয় । এ বিষয়টি দাওয়াত দান কারীর মাথায় রাখা জরুরী ।
আপনি যদি আরবী ভাষা না জানেন তবে আপনাকে পরামর্শ দিব, আরবী ভাষাকে রপ্ত করার চেষ্টা করুন । কারণ, যে ভাষায় আল্লাহ তায়ালা ইসলামকে অবতীর্ণ করেছেন সরাসরি সে ভাষায় ইসলামকে বুঝতে পারবেন এবং পরম আস্থা আর নিশ্চিন্ত মনে ইসলাম সম্পর্কে কথা বলতে পারবেন । কারণ আপনি সরাসরি কুরআনের ভাষায় কথা বলছেন, যে ভাষায় স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা কথা বলেছেন । যে ভাষা ছিল নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর । যে ভাষা ছিল যুগে যুগে অসংখ্য মুসলিম মনিষীদের ।
আপনি যদি আপনার উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন বই - পুস্তক দিতে পারেন তবে তা ইসলাম প্রচারে আপনার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে আপনাকে দারুণভাবে সাহায্য করবে ।

মুহাম্মদ হামিদুল ইসলাম আজাদ
দা’ঈ , লেখক , গবেষক  
বাংলাদেশ ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার 
বাংলাদেশ , ঢাকা