কুরআন ও হাদীছের পথ-নির্দেশিকা
আল-কুরআনুল কারীম:
1 -قُلْ
إِنْ كانَتْ لَكُمُ الدَّارُ الْآخِرَةُ عِنْدَ اللَّهِ خالِصَةً مِنْ
دُونِ النَّاسِ فَتَمَنَّوُا الْمَوْتَ إِنْ كُنْتُمْ صادِقِينَ .
‘তুমি বল, যদি অপর ব্যক্তিগণ অপেক্ষা বিশেষভাবে শুধু
তোমাদের জন্যে আল্লাহর নিকট বাসস্থান থাকে, তবে তোমারা মৃত্যু কামনা কর,
যদি তোমরা সত্যবাদী হও’ (বাক্বারাহ ২/৯৪)।
২ -وَقالُوا
لَنْ يَدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ كانَ هُوداً أَوْ نَصارى تِلْكَ
أَمانِيُّهُمْ قُلْ هاتُوا بُرْهانَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ صادِقِينَ .
‘এবং
তারা বলে, যারা ইহুদী ও খ্রীষ্টান তারা ছাড়া আর কেউই জান্নাতে প্রবেশ করবে
না, এটাই তাদের বাসনা। তুমি বল, যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে তোমাদের
প্রমাণ উপস্থিত কর’ (বাক্বারাহ ২/১১১)।
৩-الَّذِينَ
قالُوا لِإِخْوانِهِمْ وَقَعَدُوا لَوْ أَطاعُونا ما قُتِلُوا قُلْ
فَادْرَؤُا عَنْ أَنْفُسِكُمُ الْمَوْتَ إِنْ كُنْتُمْ صادِقِينَ .
‘যারা গৃহে বসে স্বীয় ভ্রাতৃগণের সম্বন্ধে বলেছিল, যদি
তারা আমাদের কথা মান্য করতো, তবে নিহত হতো না; তুমি বল, যদি তোমরা
সত্যবাদী হও তবে নিজেদেরকে মৃত্যু হতে রক্ষা কর’ (আলে-ইমরান ৩/১৬৮)।
4- قُلْ أَرَأَيْتَكُمْ إِنْ أَتاكُمْ عَذابُ اللَّهِ أَوْ أَتَتْكُمُ السَّاعَةُ أَغَيْرَ اللَّهِ تَدْعُونَ إِنْ كُنْتُمْ صادِقِينَ .
‘তুমি (হে মুহাম্মাদ ছাঃ) তাদেরকে বল, তোমরা চিন্তা করে
দেখ যে, যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর শাস্তি এসে পড়ে অথবা তোমাদের নিকট
ক্বিয়ামত এসে উপস্থিত হয় তখনও কি তোমরা আল্লাহকে ব্যতীত অন্য কাউকে
ডাকবে’ (আন‘আম ৬/৪০)।
৫- قالُوا
أَجِئْتَنا لِنَعْبُدَ اللَّهَ وَحْدَهُ وَنَذَرَ ما كانَ يَعْبُدُ
آباؤُنا فَأْتِنا بِما تَعِدُنا إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ .
‘তারা
বলল, তুমি কি আমাদের নিকট শুধু এই উদ্দেশ্যে এসেছ, যেন আমরা একমাত্র
আল্লাহরই ইবাদত করি এবং আমাদের পূর্বপুরুষগণ যাদের ইবাদত করতো তাদেরকে
বর্জন করি? তাহলে তুমি তোমার কথা ও দাবীতে সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যে
শাস্তির ভয় দেখাচ্ছ তা আনয়ন কর’ (আ‘রাফ ৭/৭০)।
৬- وَيَقُولُونَ مَتى هذَا الْوَعْدُ إِنْ كُنْتُمْ صادِقِينَ -
قُلْ لا أَمْلِكُ لِنَفْسِي ضَرًّا وَلا نَفْعاً إِلَّا ما شاءَ اللَّهُ
لِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ إِذا جاءَ أَجَلُهُمْ فَلا يَسْتَأْخِرُونَ ساعَةً
وَلا يَسْتَقْدِمُونَ .
‘আর তারা বলে, আমাদের এই অঙ্গীকার কখন সংঘটিত হবে? যদি
তোমরা সত্যবাদী হও’। ‘তুমি বলে দাও, আমি তো আমার নিজের জন্যে কোন উপকার বা
ক্ষতির অধিকারী নই; তবে যতটুকু আল্লাহ চান। প্রত্যেক উম্মতের জন্যে একটি
নির্দিষ্ট সময় আছে, যখন তাদের সেই নির্দিষ্ট সময় এসে পৌঁছে, তখন তারা
মুহূর্তকাল না পশ্চাদপদ হতে পারবে, আর না অগ্রসর হতে পারবে’ (ইউনুস ১০/৪৮-৪৯)।
৭- أَمْ
يَقُولُونَ افْتَراهُ قُلْ فَأْتُوا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِثْلِهِ
مُفْتَرَياتٍ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ
كُنْتُمْ صادِقِينَ .
‘তবে কি
তারা বলে যে, ওটা (কুরআন) সে নিজেই রচনা করেছে? তুমি বলে দাও, তাহলে
তোমরাও ওর অনুরূপ রচিত দশটি সূরা আনয়ন কর এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে যাকে পার
ডাক যদি তোমরা সত্যবাদী হও’ (হূদ ১১/১৩)।
8- خُلِقَ الْإِنْسانُ مِنْ عَجَلٍ سَأُرِيكُمْ آياَتِي فَلا تَسْتَعْجِلُونِ, , وَيَقُولُونَ مَتى هذَا الْوَعْدُ إِنْ كُنْتُمْ صادِقِينَ .
‘মানুষ সৃষ্টিগতভাবে ত্বরাপ্রবণ, আর শীঘ্রই আমি
তোমাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাব; সুতরাং তোমরা আমাকে তাড়াতাড়ি করতে বলো
না’। আর তারা বলে, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে বল, এই প্রতিশ্রুতি কখন
পূর্ণ হবে?’ (আম্বিয়া ২১/৩৭-৩৮)।
9-
أَمَّنْ يَبْدَؤُا الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ وَمَنْ يَرْزُقُكُمْ مِنَ
السَّماءِ وَالْأَرْضِ أَإِلهٌ مَعَ اللَّهِ قُلْ هاتُوا بُرْهانَكُمْ
إِنْ كُنْتُمْ صادِقِينَ .
‘কে তিনি, যিনি সৃষ্টির সূচনা করেন, অতঃপর ওর
পুনরাবৃত্তি করেন এবং যিনি তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী হতে রূযী দান করেন?
আল্লাহর সাথে অন্য কোন মা‘বূদ আছে কি? বল, তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে
তোমাদের প্রমাণ পেশ কর’ (নামল ২৭/৬৪)।
10- قُلْ
أَرَأَيْتُمْ ما تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَرُونِي ماذا خَلَقُوا
مِنَ الْأَرْضِ أَمْ لَهُمْ شِرْكٌ فِي السَّماواتِ ائْتُونِي بِكِتابٍ
مِنْ قَبْلِ هذا أَوْ أَثارَةٍ مِنْ عِلْمٍ إِنْ كُنْتُمْ صادِقِينَ .
‘বল, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তাদেরকে দেখছ
কি? তারা পৃথিবীতে কি সৃষ্টি করেছে আমাকে দেখাও অথবা আকাশ-মন্ডলীতে তাদের
কোন অংশীদারিত্ব আছে কি? এর পূর্বে আসা কোন কিতাব অথবা জ্ঞানের কোন
অবশিষ্ট থাকলে তা তোমরা আমার নিকট নিয়ে আস, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’ (আহক্বাফ ৪৬/৪)।
11- قُلْ
يا أَيُّهَا الَّذِينَ هادُوا إِنْ زَعَمْتُمْ أَنَّكُمْ أَوْلِياءُ
لِلَّهِ مِنْ دُونِ النَّاسِ فَتَمَنَّوُا الْمَوْتَ إِنْ كُنْتُمْ
صادِقِينَ -
‘হে নবী
আপনি বলুন! হে ইহুদীগণ! যদি তোমরা মনে কর যে, তোমরাই আল্লাহর বন্ধু,
অন্য কোন মানুষ নয়, তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর যদি তোমরা সত্যবাদী হও’ (জুম‘আ ৬২/৬-৭)।
12- يا
أَيُّهَا الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتابَ آمِنُوا بِمَا نَزَّلْنا
مُصَدِّقاً لِما مَعَكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَطْمِسَ وُجُوهاً فَنَرُدَّها
عَلى أَدْبارِها أَوْ نَلْعَنَهُمْ كَما لَعَنَّا أَصْحابَ السَّبْتِ
وَكانَ أَمْرُ اللَّهِ مَفْعُولًا .
‘হে
আহলে কিতাবগণ! তোমাদের সঙ্গে যা আছে তার সত্যতা প্রমাণকারী যা অবতীর্ণ
করেছি তৎপ্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এর পূর্বে যে, আমি বহু মুখমন্ডল বিকৃত
করে দেব, তৎপর তাদেরকে পৃষ্ঠের দিকে উল্টিয়ে দেব অথবা শনিবারওয়ালাদের মতো
তাদের উপর অভিসস্পাত করব এবং আল্লাহর আদেশ সুসম্পন্ন হয়ে থাকে’ (নিসা ৪/৪৭)।
হাদীছে নববী থেকে :
13- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ
أَرْبَعٌ إِذَا كُنَّ فِيكَ فَلاَ عَلَيْكَ مَا فَاتَكَ مِنَ الدُّنْيَا
حِفْظُ أَمَانَةٍ وَصِدْقُ حَدِيثٍ وَحُسْنُ خَلِيقَةٍ وَعِفَّةٌ فِى
طُعْمَةٍ-
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন যে, ‘যদি তোমার মধ্য চারটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে তাহলে
দুনিয়াবী যা কিছু হারাও তাতে তোমার কিছু যায় আসে না। ১. আমানত সংরক্ষণ করা
২. সত্য কথা বলা ৩. উত্তম চরিত্র ৪. হালাল খাবার (মুসনাদে আহমাদ হা/৬৬৫২; মিশকাত হা/৫২২২। হাদীছ ছহীহ)।
14- عَنِ
الْمُخْتَارِ بْنِ فُلْفُلٍ قَالَ قَالَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ قَالَ
النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم أَنَا أَوَّلُ شَفِيعٍ فِى الْجَنَّةِ لَمْ
يُصَدَّقْ نَبِىٌّ مِنَ الأَنْبِيَاءِ مَا صُدِّقْتُ وَإِنَّ مِنَ
الأَنْبِيَاءِ نَبِيًّا مَا يُصَدِّقُهُ مِنْ أُمَّتِهِ إِلاَّ رَجُلٌ
وَاحِدٌ .
মুখতার ইবনু ফুলফুল (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনাস
(রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, জান্নাতী লোকদের সম্পর্কে আমিই হব
সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং এত অধিক সংখ্যক মানুষ আমার প্রতি ঈমান এনেছে
যা অন্য কোন নবীর বেলায় হবে না। নবীদের কেউ কেউ তো এমতাবস্থায় আসবেন যার
প্রতি মাত্র একজন ব্যক্তিই ঈমান এনেছে’ (ছহীহ মুসলিম হা/৫০৬; মুসনাদে আহমাদ হা/১২৪৪২; মিশকাত হা/৫৭৪৪)।
15- عَنْ
عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ
اضْمَنُوا لِى سِتًّا مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَضْمَنْ لَكُمُ الْجَنَّةَ
اصْدُقُوا إِذَا حَدَّثْتُمْ وَأَوْفُوا إِذَا وَعَدْتُمْ وَأَدُّوا إِذَا
ائْتُمِنْتُمْ وَاحْفَظُوا فُرُوجَكُمْ وَغُضُّوا أَبْصَارَكُمْ
وَكُفُّوا أَيْدِيَكُمْ
উবাদাহ ইবনু ছামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ)
বলেছেন, ‘তোমরা ছয়টি ব্যাপারে যিম্মাদারী গ্রহণ কর, আমি তোমাদের জান্নাতের
যিম্মাদার হব। সেগুলো হ’ল, যখন কথা বলবে সত্য কথা বলবে, অঙ্গীকার পূরণ
করবে, আমানতের খেয়ানত করবে না, লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে, চক্ষু অবনত
রাখবে এবং হাতকে সংযত রাখবে’ (হাকিম হা/৮০৬৬; মিশকাত হা/৪৮৭০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪৭০।)
16- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَيْكُمْ
بِالصِّدْقِ فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِى إِلَى الْبِرِّ وَإِنَّ الْبِرَّ
يَهْدِى إِلَى الْجَنَّةِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَصْدُقُ وَيَتَحَرَّى
الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ صِدِّيقًا وَإِيَّاكُمْ
وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِى إِلَى الْفُجُورِ وَإِنَّ
الْفُجُورَ يَهْدِى إِلَى النَّارِ وَمَا يَزَالُ الْعَبْدُ يَكْذِبُ
وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ كَذَّابًا.
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম
(ছাঃ) বলেছেন, নিশ্চয়ই সত্যবাদিতা কল্যাণের দিকে ধাবিত করে। আর কল্যাণ
জান্নাতের দিকে ধাবিত করে। কোন লোক যদি সত্য কথা বলে ও সত্য অনুসন্ধান করে
তাহলে সে আল্লাহর নিকট সত্যবাদী হিসাবে গণ্য হয়। আর তোমরা মিথ্যা থেকে
বিরত থাক। কারণ মিথ্যা পাপাচারের দিকে নিয়ে যায়। আর পাপাচার জাহান্নামের
দিকে নিয়ে যায়। কোন লোক যখন মিথ্যা কথা বলে ও মিথ্যা অনুসন্ধান করে তখন সে
আল্লাহর নিকট মিথ্যাবাদী বলে লিখিত হয়ে যায়’ (তিরমিযী হা/১৯৭১; মিশকাত হা/৪৮২৪।)
17- عَنْ
حَكِيمِ بْنِ حِزَامٍ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله
عليه وسلم الْبَيِّعَانِ بِالْخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا أَوْ قَالَ
حَتَّى يَتَفَرَّقَا فَإِنْ صَدَقَا وَبَيَّنَا بُورِكَ لَهُمَا فِى
بَيْعِهِمَا وَإِنْ كَتَمَا وَكَذَبَا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا.
হাকিম ইবনু হিযাম (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে পৃথক না হওয়া পর্যন্ত পুনরায় বিক্রয়ের
সুযোগ থাকে। অথবা তিনি বলেছেন, এমনকি পৃথক হওয়া পর্যন্ত। যদি ক্রেতা ও
বিক্রেতা সত্য কথা বলে তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত দেয়া হবে আর যদি
তারা পণ্যের কোন দোষ গোপন করে কিংবা মিথ্যা বলে তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে
বরকত হবে না’ (ছহীহ বুখারী হা/২০৭৯ ছহীহ মুসলিম হা/৩৯৩৭; মিশকাত হা/২৮০২।)
18- عَنْ الْحَسَنِ بْنِ عَلِىٍّ رضي اللّه عنهما قَالَ حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لاَ يَرِيبُكَ فَإِنَّ الصِّدْقَ طُمَأْنِينَةٌ وَإِنَّ الْكَذِبَ رِيبَةٌ .
হাসান ইবনু আলী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
নিকট থেকে মুখস্থ করেছি যে, তুমি যে বিষয়ে সন্দেহ কর তাকে ছেড়ে দাও এবং
তার দিকে ধাবিত হও যা তুমি সন্দেহ করো না। নিশ্চয়ই সত্যবাদিতা নিরাপত্তা
আর মিথ্যা সন্দেহপ্রবণ’ (তিরমিযী হা/২৫১৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪১৬। হাদীছ ছহীহ)।
19-
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
لاَ تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ وَلاَ بِأُمَّهَاتِكُمْ وَلاَ بِالأَنْدَادِ
وَلاَ تَحْلِفُوا إِلاَّ بِاللَّهِ وَلاَ تَحْلِفُوا بِاللَّهِ إِلاَّ
وَأَنْتُمْ صَادِقُونَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
‘তোমরা তোমাদের পিতা, মাতা কিংবা কোন দেবদেবীর নামে শপথ করো না। বরং তোমরা
শুধুমাত্র শপথ কর আল্লাহর নামে। তোমরা শপথ করো আল্লাহর নামে কেবল সে
বিষয়ে যে বিষয়ে তোমরা সত্যবাদী’ (আবুদাউদ হা/৩২৫০; নাসাঈ হা/৩৭৬৯; মিশকাত হা/৩৪১৮।)
২০- عَنْ
أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
مَنْ طَلَبَ الشَّهَادَةَ صَادِقًا أُعْطِيَهَا وَلَوْ لَمْ تُصِبْهُ-
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি
প্রকৃতার্থে শাহাদত কামনা করে তবে তাকে সে মর্যাদা প্রদান করা হবে যদিও
সে তা লাভ করতে না পারে’ (ছহীহ মুসলিম হা/৫০৩৮।)
21- عَنْ
سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ حَدَّثَهُ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ
النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ سَأَلَ اللَّهَ الشَّهَادَةَ
بِصِدْقٍ بَلَّغَهُ اللَّهُ مَنَازِلَ الشُّهَدَاءِ وَإِنْ مَاتَ عَلَى
فِرَاشِهِ-
সাহল ইবনু হানীফ তার পিতা এবং তার পিতা তার দাদা থেকে
বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে
আল্লাহর নিকটে শহীদ হওয়ার আকাঙ্খা পোষণ করে, আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদায়
পৌঁছিয়ে দিবেন যদিও সে বিছানায় মৃত্যুবরণ করে’ (মুসলিম হা/৫০৩৯; মিশকাত হা/৩৮০৮।)
22- عَنْ
سُوَيْدِ بْنِ حَنْظَلَةَ قَالَ خَرَجْنَا نُرِيدُ رَسُولَ اللَّهِ
وَمَعَنَا وَائِلُ بْنُ حُجْرٍ فَأَخَذَهُ عَدُوٌّ لَهُ فَتَحَرَّجَ
الْقَوْمُ أَنْ يَحْلِفُوا وَحَلَفْتُ أَنَّهُ أَخِى فَخَلَّى سَبِيلَهُ
فَأَتَيْنَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرْتُهُ أَنَّ
الْقَوْمَ تَحَرَّجُوا أَنْ يَحْلِفُوا وَحَلَفْتُ أَنَّهُ أَخِى قَالَ
صَدَقْتَ الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ-
সুওয়াইদ ইবনু হানাযালা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‘একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে দেখা করার জন্য রওয়ানা হলাম। তখন
আমাদের সাথে ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ)ও ছিলেন। এমন সময় তার এক শত্রু তাকে ধরে
ফেলল। দলের লোকেরা এ ব্যাপারে শপথ করত সংকোচবোধ করলে আমি শপথ করে বললাম,
সে আমার ভাই। ফলে শত্রু তার পথ ছেড়ে দিল। আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট
এসে তাকে ঘটনাটি জানালাম এবং বললাম, দলের লোকেরা এভাবে শপথ করাকে ভাল মনে
করেনি। আমি শপথ করে বলেছি, সে আমার ভাই। তিনি বললেন, তুমি সত্য বলেছ।
কেননা এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই’ (আবুদাঊদ হা/৩২৫৬; ইবনু মাজাহ হা/২১১৯।)
মনীষীদের বক্তব্য থেকে :
১. আলী ইবনু আবী ত্বালেব (রাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তির নিকট
যদি তিনটি গুণ থাকে তাহলে তার জন্য মানুষের উপর তিনটি জিনিস ওয়াজিব হয়ে
যায়। গুণগুলো হ’ল- যথা : (১) সে তাদের নিকট কথা বললে তারা তাকে বিশ্বাস
করবে (২) লোকেরা তার নিকট আমানত রাখলে সে খেয়ানত করে না (৩) তাদের সাথে
ওয়াদা করলে তা পালন করে। তাদের উপর ওয়াজিব হওয়া জিনিস হ’ল : তারা মন
থেকে তাকে ভালবাসবে, তার প্রশংসা করবে এবং তাকে সহযোগিতা করবে।
২. আব্দুল ওয়াহেদ ইবনু যায়েদ (রহঃ) বলেন, সত্যবাদিতা হ’ল আল্লাহর জন্য সঠিকভাবে কাজ সম্পাদন করা।
৩. ইবরাহীম আল-খাউওয়াছ (রহঃ) বলেন, সত্যবাদীকে তুমি ফরয আদায় করতে বা কোন ফযীলতপূর্ণ আমল করা ব্যতীত (অন্য কোন অবস্থায়) দেখবে না।
৪. জুনাইদ (রহঃ) বলেন, সত্যবাদিতার প্রকৃতি হ’ল, তুমি এমন স্থানে সত্য বলবে মিথ্যা বলা ছাড়া যেখান থেকে তুমি মুক্তি পাবে না।
সারবস্ত্ত
১. সত্যবাদিতা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
২. সত্যবাদীরা আল্লাহর নিকটতম বান্দা।
৩. সত্যবাদিতা আমলকে বৃদ্ধি করে এবং মর্যাদাকে সমুন্নত করে।
৪. সত্যবাদিতা আত্মিক প্রশান্তির নিয়ামক ।
৫. সত্য মুক্তি দেয় আর মিথ্যা ধ্বংস ডেকে আনে।
৬. সত্যকে মিথ্যা দিয়ে কখনো আড়াল করা যায় না।
৭. সত্যবাদিতা জান্নাতের পাথেয়।