নেশাকারী আল্লাহর অপছন্দ

এহসান বিন মুজাহির
মদ ও নেশায় আসক্ত হওয়া জঘন্যতম একটি পাপ। বর্তমান সমাজে মদ ও নেশা জন্ম দিচ্ছে একের পর এক অপরাধ। নেশার ছোঁয়ায় সম্ভাবনাময় তারুণ্য অধঃপতনের চরম শিখরে উপনীত হচ্ছে। নেশাজাতীয় দ্রব্যের প্রতি আসক্তি সারা বিশ্বের তারুণ্যের মধ্যে এক ভয়াবহ মহামারী রূপে দেখা দিয়েছে। মাদক এখন সহজলভ্য। শহর-নগর, গ্রামসহ মফস্বল এলাকায়ও হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়।
আশির দশকের শেষ দিকে ফেনসিডিলের আবির্ভাব হয়। পর্যায়ক্রমে এটার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। নব্বইয়ের দশকে মাদকের জগতে সংযোজন হয় ইয়াবা।
এ ছাড়া গাঁজা, আফিম, চরশ, বাংলা মদ, গুল, মরফিন, কোকেন, বিয়ার, ওয়াইন, হেরোইন প্যাথেলিন, মারিজুয়ানা, ডেক্রপরটেন, প্যাথেডিন, ইকসটামি, এলএসডি, ইলিকসার, চোলাইমদসহ রকমারি মাদকের সাথে তরুণদের সংশ্লিষ্টতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বিধ্বংসকারী মাদকের বিস্তার সমাজে যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে সচেতন অভিভাবকমহল উদ্বিগ্ন। দেশের আগামী ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় তারুণ্যশক্তি বিপর্যয়ের মুখে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৮ বছরের ওপরে শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ মানুষ মাদকাসক্ত।
মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮৫ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
ইদানীং শিশু-কিশোরদের মধ্যে নানা ধরনের মাদক সেবনের প্রবণতা বাড়ছে। সমাজসেবা অধিদফতরের এক গবেষণায় দেখা যায়, শহর-গ্রাম থেকে নিয়ে স্কুল-কলেজ এবং ভার্সিটির শিার্থীরাও মাদকাসক্ত। নামীদামি অনেক কলেজ ও ইউনিভার্সিটগুলোতে চলছে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। প্রতিনিয়িত বসছে নেশার আড্ডা। অনেকে নেশার টাকা জোগাড় করতে নেমে পড়ছে অপরাধ জগতে। আবার কোনো কোনো ভার্সিটির ছাত্রীরা মাদকের টাকা সংগ্রহের জন্য ঘৃণিত দেহব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকের চাহিদা মেটাতে তরুণ-তরুণীরা ক্রমেই অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। অনেক শিার্থী নেশার মোহে পড়ে সম্ভাবনাময় জীবনকে অনিশ্চিয়তার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।
আজ পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে এসেছে যে, মরণনেশা মাদকের ছোবলে দেশ ও জাতির আশা-ভরসার স্থল তারুণ্য অন্ধকারের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে। আর তাদের চলার পথে ঘোর আঁধার নেমে আসছে।
কাজেই সমাজ থেকে মাদক প্রতিরোধ করতেই হবে। এটা সামাজিকভাকে যেভাবে অন্যায়, তেমনি ইসলামের দৃষ্টিতেও গুরুতর অপরাধ।
ইসলামের দৃষ্টিতে মদ ও নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করা হারাম। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাজের কাছেও যেও না, যতণ না তোমরা যা বলছ তা বুঝতে পার’। (সূরা নিসা : ৪৩)
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা আপনাকে (মহানবী সা:) মাদকদ্রব্য ও জুয়া খেলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আপনি বলুন, এতদ উভয়ের মধ্যে গুরুতর পাপ এবং মানবের জন্য সামান্য উপকারিতা রয়েছে, তবে লাভ অপো পাপই গুরুতর’। (সূরা বাকারা : ২১৯)
কুরআন কারিমে আরো ইরশাদ হয়েছে,‘ হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই. মদ, জুয়া, মূর্তিপূজা এবং লটারি অপবিত্র ও শয়তানের কাজ। অতএব তোমরা তা থেকে দূরে থাকবে, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সূরা মায়িদা: ৯০)
রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন,‘যাবতীয় নেশার বস্তু হারাম’। (মুসলিম শরিফ- দ্বিতীয় খণ্ড)
মাদকাসক্তি ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন ১০ ব্যক্তির ওপর রাসূলুল্লাহ অভিশম্পাত করেছেন। তারা হলো :
১. যে নির্যাস বের করে। ২. প্রস্তুতকারী । ৩. পানকারী বা ব্যবহারকারী । ৪. যে পান করায়। ৫. আমদানিকারক। ৬. যার জন্য আমদানি করা হয়। ৭. বিক্রেতা। ৮. ক্রেতা। ৯. সরবরাহকারী। ১০. লভ্যাংশ ভোগকারী । (তিরমিজি শরিফ)
হজরত ওমর রা: থেকে বর্ণিত, তিন শ্রেণীর লোকের জন্য জান্নাত হারাম করা হয়েছে। তারা হলো: ১. মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি। ২. পিতামাতার অবাধ্য সন্তান, ৩. সেই বেহায়া ব্যক্তি, যে নিজ পরিবারে অশ্লীলতাকে স্বীকৃতি দিয়ে জিইয়ে রাখে। (মিশকাত শরিফ)
লেখক: প্রবন্ধকার