প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন  : শূকরের নাম উচ্চারণ করলে ৪০ দিনের ইবাদত কবুল হয় না। এর কোন সত্যতা আছে কি ?  

উত্তর : এগুলি ভিত্তিহীন ও বানাওয়াট বক্তব্য মাত্র। স্মর্তব্য যে, শূকর আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহ মুসলমানদের জন্য এর গোশত খাওয়া হারাম করায় তা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে মাত্র।

প্রশ্ন : হজ্জ বা ওমরাহ ব্যতীত ত্বাওয়াফ করার বিশেষ কোন ফযীলত আছে কি ?

উত্তর : ত্বাওয়াফ যত খুশী করা যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কা‘বাগৃহে ত্বাওয়াফ করা ছালাতের ন্যায় (তিরমিযী হা/৯৭৭, নাসাঈ হা/২৯২২)। আর বায়তুল্লাহর ছালাতে অন্য স্থানের চাইতে এক লক্ষ গুণ বেশী নেকী রয়েছে (আহমাদ, ইবনু মাজাহ হা/১৪০৬; সনদ ছহীহ)। অন্যত্র তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর চার দিকে সাত বার ঘুরবে এবং তা পূর্ণ করবে তার জন্য গোলাম আযাদের সমপরিমাণ নেকী হবে। আর বায়তুল্লাহর ত্বাওয়াফে প্রতি পদক্ষেপে একটি করে গুনাহ ঝরে পড়ে ও একটি করে নেকী লেখা হবে (তিরমিযী হা/৯৫৯, মিশকাত হা/২৫৮০)।

প্রশ্ন  : রবিবর হামহুমা... এই দো‘আটি কি পিতা-মাতা জীবিত হৌন বা মৃত হৌন উভয় অবস্থাতেই করা যাবে ? 

উত্তর : পিতা-মাতা জীবিত হৌন অথবা মৃত হৌন সর্বাবস্থায় উক্ত দো‘আ করা যাবে। আল্লাহ তা‘আলা এ দো‘আটি জীবিত অথবা মৃত কোন অবস্থার জন্য খাছ করেননি। 

প্রশ্ন  : কুরআনের আরবী শব্দাবলী বুঝার জন্য বাংলা অক্ষরে উচ্চারণ করে লেখা যাবে কি ?

উত্তর : যরূরী প্রয়োজন ব্যতীত কুরআনের আরবী শব্দাবলী বাংলায় উচ্চারণ করে না লেখাই উচিৎ। কেননা বাংলায় উচ্চারিত কুরআনের শব্দাবলী মাখরাজ সহকারে পড়া সম্ভব হয় না। এর ফলে অর্থও পরিবর্তন হয়ে যায়। অতএব যোগ্য শিক্ষকের মাধ্যমে বিশুদ্ধ উচ্চারণ শিখার পর কুরআন পড়তে হবে। 

প্রশ : ছালাতরত অবস্থায় মোবাইলে রিং বেজে উঠলে তা সাথে সাথে বন্ধ করা যাবে কি ?

উত্তর : মোবাইল বন্ধ করেই ছালাতে আসবে। ভুলবশতঃ মোবাইল বন্ধ না করে ছালাত শুরু করলে এবং ছালাতরত অবস্থায় মোবাইল বেজে উঠলে তা বন্ধ করা যাবে। কেননা ছালাতে বিঘ্ন ঘটায় এমন কাজ ছালাত অবস্থায় প্রতিহত করা যায়। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দরজা বন্ধ করে নফল ছালাত আদায় করছিলেন। এমতাবস্থায় আমি এসে দরজায় শব্দ করলে তিনি আমাকে দরজা খুলে দিয়ে পুনরায় ছালাতে ফিরে গেলেন। দরজা ছিল ক্বিবলার দিকে (আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১০০৫)। 

প্রশ্ন  : একই মসজিদে একই ছালাতের একাধিক জামা‘আত করা যাবে কি ?

উত্তর : নির্ধারিত সময়ে জামা‘আতের পরে ঐ মসজিদে একাধিক জামা‘আত করা যাবে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি (মসজিদে) আগমন করল এমতাবস্থায় যে, রাসূল (ছাঃ) ছালাত শেষ করেছেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘কেউ এই লোকটিকে ছাদাক্বা করবে কি?’ অর্থাৎ তার সাথে ছালাত আদায় করবে কি?’ তখন এক ব্যক্তি দাঁড়াল এবং ঐ লোকটির সাথে ছালাত আদায় করল’ (তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১১৪৬ ‘মুক্তাদীর উপর দায়িত্ব ও মাসবূক-এর হুকুম’ অনুচ্ছেদ, সনদ ছহীহ)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এক মসজিদে একাধিক জামা‘আত হ’তে পারে এবং জামা‘আতে ছালাত আদায়কারী ব্যক্তিও অন্যের সাথে পুনরায় জামা‘আত করতে পারেন (আলবানী, তাহকীক মিশকাত ১/৩৬০ পৃঃ উক্ত হাদীছের টীকা নং ৩)। যেটি তার জন্য নফল হবে। তবে মুসাফিরের জন্য মসজিদে জামা‘আতের আগে বা পরে জামা‘আত করে ছালাত আদায় করা জায়েয। 

প্রশ্ন  : জামা‘আতে তারাবীহর ছালাত আদায় করা অবস্থায় ২/১ রাক‘আত ছুটে গেলে তা পূর্ণ করতে হবে কি ?

উত্তর : তারাবীহ ছালাতের কোন রাক‘আত ছুটে গেলে ইমামের সালাম ফিরানোর পরে তা পূর্ণ করবে। জামা‘আতবদ্ধ ছালাতের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যখন তোমরা ছালাত আদায় করতে আস, তখন ধীরস্থিরভাবে এসো। অতঃপর যে অংশটুকু পাও তা পড়। আর যে অংশ ছুটে যায় তা পূর্ণ কর’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬৮৬)। 


প্রশ্ন : কাঁধ খোলা থাকে এরূপ পোষাক পরে ছালাত আদায় করা যাবে কি ?

 উত্তর : কাঁধ খোলা থাকে এমন পোষাক পরিধান করে ছালাত আদায় করা যাবে না। আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন এক কাপড়ে এমনভাবে ছালাত আদায় না করে যাতে তার দুই কাঁধে ঐ কাপড়ের কোন অংশ থাকে না’ (বুখারী হা/৩৫৯; মুসলিম হা/৫১৬; মিশকাত হা/৭৫৫)। ওমর ইবনু আবী সালামাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে উম্মে সালামাহর ঘরে দুই কাঁধ ঢেকে এক কাপড়ে ছালাত আদায় করতে দেখেছি’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৭৫৪)। অতএব কেবল স্যান্ডো গেঞ্জি ইত্যাদি পরে ছালাত আদায় করা যাবে না। 

প্রশ্ন : সঊদী আরবে এক ধরনের অফিস রয়েছে, যেখানে ২০ হাযার টাকা মূল্যের মোবাইলের স্ক্র্যাচ কার্ড ৬ মাসের কিস্তিতে ৩০ হাযার টাকা পরিশোধ করার শর্তে বিক্রি করা হয়। অতঃপর ক্রেতা তা অন্যের নিকটে বিক্রি করে স্ক্র্যাচ কার্ডের টাকা ব্যবহার করে। শরী‘আতে এরূপ ব্যবসার বিধান কি ?

উত্তর : উক্ত ব্যবসা হালাল নয়। কারণ উক্ত ব্যবসা রিবা আন-নাসিআহ বা বাকীতে ঋণের সূদ-এর উপর প্রতিষ্ঠিত। কেননা প্রতিষ্ঠানটি স্ক্র্যাচ কার্ড কিস্তিতে বিক্রয়ের মাধ্যমে মূলতঃ বাকীতে ঋণ প্রদানের উপর অতিরিক্ত অর্থ নিচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি কেবল অর্থলগ্নিকারী, পণ্যের বিক্রেতা নয়। ঋণগ্রহীতার সাথে ঋণদাতার সম্পর্ক এখানে ঋণের, পণ্যের নয়। আর স্ক্র্যাচ কার্ড কোন ভোগ্যপণ্য নয়। বরং অর্থ লগ্নির একটা প্রতীকী বস্ত্ত মাত্র। এতে অর্থের বিনিময়ে অধিক অর্থ উপার্জন করা হয়। যা স্পষ্ট সূদ। অতএব এরূপ ব্যবসা করা এবং এরূপ প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ লেনদেন করা উভয়টিই হারাম। 

প্রশ্ন  : হজ্জ বা ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রে মাথা ন্যাড়া করা বা ছাটার ক্ষেত্রে শরী‘আতের বিধান কি ?

উত্তর : হজ্জ ও ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রে মাথা মুন্ডন করা অথবা সমস্ত চুল খাটো করা ওয়াজিব (বুখারী হা/১৭২৯; মুসলিম হা/১৩০১; মিশকাত হা/২৬৩৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিদায় হজ্জের দিন হালাল হওয়ার সময় মাথা মুন্ডনকারীদের জন্য দু’বার, অন্য বর্ণনায় তিনবার এবং চুল খাটোকারীদের জন্য একবার দো‘আ করেছিলেন (বুখারী হা/১৭২৭, মুসলিম হা/১৩০৩, মিশকাত হা/২৬৪৮-৪৯)। বিদায় হজ্জের সময় জনৈক ব্যক্তি এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি মাথা মুন্ডনের আগেই ত্বাওয়াফে এফাযাহ করেছি। জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি মাথা মুন্ডাও অথবা চুল খাটো কর, কোন দোষ নেই’ (তিরমিযী হা/৮৮৫, মিশকাত হা/৮৮৫)। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, বিদায় হজ্জের সময় রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর কিছু সাথী মাথা মুন্ডন করেছিলেন এবং কিছু সাথী চুল খাটো করেছিলেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৬৪৬)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, মু‘আবিয়া (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, আমি মারওয়াতে কাঁচি দ্বারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চুল ছেটেছি’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৬৪৭)। এ ঘটনা ছিল ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের পরে হোনায়েন যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে ওমরাহ কালে (ফাৎহুলবারী হা/১৭৩০-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর রাসূল-এর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। তোমরা অবশ্যই মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে আল্লাহর ইচ্ছায় নিরাপদে। তোমাদের কেউ মস্তক মুন্ডনকারী হিসাবে ও কেউ চুল খাটোকারী হিসাবে...’ (ফাৎহ ২৭)। অতএব যে কোন একটি করা ওয়াজিব। 

প্রশ্ন : কুরআন-হাদীছ ও ইসলামিক বইপত্র যেসব মোবাইলে থাকে সেগুলি পকেটে নিয়ে টয়লেটে যাওয়া যাবে কি ?

উত্তর : এতে কোন বাধা নেই। কেননা মোবাইলের মধ্যে তা নির্দিষ্ট মেমোরিতে সংরক্ষিত থাকে। এটা মানুষের মস্তিষ্কের ন্যায়। মানুষের মস্তিষ্ক যেমন কুরআন ধারণ করে থাকে। মোবাইলের মেমোরী তেমনি কুরআন ধারণ করে থাকে। তবে টয়লেটে কুরআন পাঠ করা হ’তে বিরত থাকা আবশ্যক। 

প্রশ্ন : অমুসলিমের অর্থ দিয়ে হজ্জ পালন করা যাবে কি ?

উত্তর: অমুসলিমের প্রদত্ত হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েয। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এক মুশরিক ইহূদী মহিলার প্রদত্ত হাদিয়া ভক্ষণ করেছিলেন (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫৯৩১ ‘রাসূলুল্লাহর চরিত্র ও গুণাবলী’ অধ্যায়, ‘মু‘জেযা’ অনুচ্ছেদ)। তিনি একজন মুশরিক ব্যক্তির নিকট একটি ছাগল হাদিয়া চেয়েছিলেন (বুখারী ১/৩৫৬ পৃঃ)। অমুসলিমের হাদিয়া গ্রহণ করা যেহেতু বৈধ, সেহেতু উক্ত হাদিয়া দিয়ে হজ্জসহ যে কোন বৈধ কাজ করায় কোন বাধা নেই। 

প্রশ্ন : ভ্রূ-এর কিছু কিছু চুল বেশী বড় হয়ে গেলে তা কেটে ফেলায় কোন বাধা আছে কি ? 

উত্তর : অসুখ ব্যতীত কেবল সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ভ্রূ উপড়িয়ে ফেলা বা কেটে ফেলা যাবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার উপর লা‘নত করেছেন (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৪৬৮)। তবে ভ্রূ লম্বা হওয়ায় দেখতে সমস্যা হ’লে বর্ধিত অংশটুকু কেটে ফেলা জায়েয। হাদীছে যে লা‘নত করা হয়েছে তা মহিলাদের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু ভ্রূ বেশী হ’লে ও চোখ পর্যন্ত নেমে আসলে এবং তা দৃষ্টির উপর প্রভাব ফেললে যে পরিমাণ সমস্যা সৃষ্টি করে ঐ পরিমাণ কেটে ফেলাতে কোন অসুবিধা নেই (ফাতাওয়া উছায়মীন ১১তম খন্ড, পৃঃ ১৩৩, প্রশ্ন নং ৬২)। প্রশ্ন (১৫/৪১৫) : জনৈক আলেম বলেন, বিবাহ না করলে মানুষ অর্ধেক দ্বীন থেকে খালি থাকে। একথার সত্যতা ও ব্যাখ্যা জানতে চাই। -হারূণুর রশীদ, গাইবান্ধা। উত্তর : উল্লিখিত বক্তব্য সঠিক। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন কোন ব্যক্তি বিবাহ করল, তখন সে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করল, বাকী অর্ধাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে’ (বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৩০৯৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৩০, ৬১৪৮, সনদ হাসান)। মানুষ দ্বীনের ক্ষেত্রে ফিৎনায় পতিত হয় মূলতঃ লজ্জাস্থান ও পেটের কারণে। বিবাহের মাধ্যমে তার একটা নিয়ন্ত্রিত হয়। কেননা এর দ্বারা শয়তান থেকে নিরাপদে থাকা যায়, কামনা-বাসনা ও প্রবৃত্তিকে দমন করা যায়, দৃষ্টি অবনমিত হয় এবং লজ্জাস্থান হেফাযত করা যায় (মিরক্বাত হা/৩০৯৬-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)। 

প্রশ্ন : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যগতভাবে পিটি করতে হয়। যেখানে ইসলাম বিরোধী বাক্যসম্বলিত জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হয়। এক্ষণে আমাদের করণীয় কি ?  

উত্তর : বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত শিরক মিশ্রিত। যা মুখে বলা ও হৃদয়ে বিশ্বাস করা অমার্জনীয় গোনাহের কাজ। নিষ্পাপ বাচ্চাদের হৃদয়ে যারা এই বিশ্বাস প্রোথিত করে দিচ্ছেন, তারা আরও বেশি গোনাহগার হচ্ছেন। এমতাবস্থায় সম্মিলিতভাবে তা পাঠ করানো হ’লে সেক্ষেত্রে চুপ থাকতে হবে। আর বাধ্য করা হ’লে প্রয়োজনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির প্রতি কোন আনুগত্য নেই’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৬৪ ও ৩৬৯৬ ‘নেতৃত্ব ও পদমর্যাদা’ অধ্যায়)। 

প্রশ্ন  : পবিত্র কুরআনে স্বামী ও স্ত্রীকে পরস্পরের পোষাক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এর ব্যাখ্যা কি ?

উত্তর : অত্র আয়াতে স্বামী-স্ত্রীকে একে অপরের জন্য পোষাক দ্বারা একে অপরের ইয্যতের হেফাযতকারী, পরস্পরের আশ্রয়স্থল এবং পরস্পরের হৃদয়ের প্রশান্তি বুঝানো হয়েছে। যেমন পোষাক পরিধানে দেহে স্বস্তি ও প্রশান্তি আসে। ‘পোষাক’ শব্দ ব্যবহারে এ বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে যে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হবে অতীব নিবিড় ও দৃঢ় বন্ধনযুক্ত, যা ছিন্ন করার নয়। যেমন পোষাক মানুষের অতীব প্রিয় যা থেকে সে কখনোই বিচ্ছিন্ন হ’তে চায় না। অতএব স্বামী-স্ত্রী যদি পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ভঙ্গ করে এবং পরস্পরকে ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করে, তাহ’লে উভয়ে আল্লাহর কঠিন লা‘নতের শিকার হবে। কারণ উভয়ের মাধ্যমেই আল্লাহ মানুষের বংশ রক্ষা করে থাকেন। ফলে উভয়ের বিচ্ছিন্নতা কিংবা বিরূপ সম্পর্ক সন্তানদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। যা সার্বিকভাবে মানব সমাজে অশান্তির কারণ ঘটায়। যা আল্লাহ কখনোই কামনা করেন না। এছাড়া পোষাক যেমন মানুষকে নানাবিধ ক্ষতি থেকে বাঁচায়, স্বামী-স্ত্রীর এই পবিত্র বন্ধনও তেমনি উভয়কে বহুবিধ গুনাহ থেকে রক্ষা করে। 

প্রশ্ন  : ঝড়-তুফানের সময় আযান দেওয়া যাবে কি ?

উত্তর : ঝড়-তুফান বা কোন বালা-মুছীবতের সময় আযান দেওয়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। ঝড়-তুফানের সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মুখের আকৃতি পরিবর্তন হয়ে যেত এবং তিনি বিভিন্ন দো‘আ পড়তেন। যেমন,اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا فِيهَا وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا فِيهَا وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ- অর্থ : ‘হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট এ ঝড়ের কল্যাণ কামনা করছি। যে কল্যাণ রয়েছে এর মধ্যে এবং যে কল্যাণ পাঠানো হয়েছে এর সাথে। আর তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি এ ঝড়ের অকল্যাণ হ’তে। যে অকল্যাণ এর মধ্যে রয়েছে এবং যে অকল্যাণ দ্বারা একে পাঠানো হয়েছে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৫১৩)। উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, বায়ুপ্রবাহকে গালি দিয়োনা, বরং তোমরা অপসন্দনীয় কিছু দেখলে বল-اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ هَذِهِ الرِّيْحِ وَخَيْرِ مَا فِيْهَا وَخَيْرِ مَا أُمِرَتْ بِهِ وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هَذِهِ الرِّيْحِ وَشَرِّ مَا فِيْهَا وَشَرِّ مَا أُمِرَتْ بِهِ- (তিরমিযী, মিশকাত হা/১৫১৮)। 

প্রশ্ন : পিতৃ-পরিচয়হীন ও অভিভাবকহীন কোন মেয়েকে বিবাহ করা যাবে কি ?

উত্তর : এ ব্যাপারে শরী‘আতে কোন বাধা নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যার দ্বীনদারী এবং উত্তম আচরণে তোমরা সন্তুষ্ট, তার সাথে বিবাহ দাও’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৩০৯০)। কারণ সে এজন্য দোষী নয়; বরং দোষী তার পিতা-মাতা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জনৈকা গামেদী মহিলার অবৈধ সন্তানের ভরণ-পোষণের সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫৬২ ‘হুদুদ’ অধ্যায়)। আয়েশা (রাঃ) বলেন রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘পিতা-মাতার গোনাহের কারণে জারজ সন্তান গোনাহগার হবে না’। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না’ (হাকেম, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২১৮৬, আন‘আম ১৬৪)। এমন মহিলার অলী হবেন দেশের নেতা বা সমাজের নেতা। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যার কোন অভিভাবক নেই, শাসক তার অভিভাবক হবেন’ (আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১৩১)। 

প্রশ্ন : পিতা-মাতার অবাধ্যতায় দ্বীনি শিক্ষা অর্জনের জন্য মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়া যাবে কি ?

উত্তর : প্রত্যেক মুসলিমের উপর দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করা ফরয (ইবনু মাজাহ হা/২২৪; মিশকাত হা/২১৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৯১৩)। অতএব পিতা-মাতার অবশ্য কর্তব্য হ’ল, সন্তানের দ্বীনী জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা করা। পিতা-মাতা ব্যবস্থা না করলে সন্তান নিজ ইচ্ছায় তা অর্জন করতে পারে। তবে পিতা-মাতার অবাধ্য হয়ে নয়; বরং তাদেরকে বুঝিয়ে সম্মতি গ্রহণ করা যরূরী। 

প্রশ্ন  : জনৈক ব্যক্তি বলেন, হযরত নূহ (আঃ) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ব্যতীত সারা বছর ছিয়াম পালন করতেন। এক্ষণে এভাবে ছিয়াম পালন করা যাবে কি ?  

উত্তর : হযরত নূহ (আঃ) সম্পর্কে বর্ণিত এ হাদীছটি দুর্বল (ইবনু মাজাহ হা/১৭২৪)। হাদীছটির বর্ণনাসূত্রে প্রসিদ্ধ দুর্বল রাবী ইবনু লেহিয়াহ রয়েছেন (বিঃদ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৫৯)। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, এ হাদীছটি যদি ছহীহও হয়, তবুও তা পূর্ববর্তী শরী‘আতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তার উপর আমল করা আমাদের জন্য জায়েয নয়। বরং রাসূল (ছাঃ) থেকে এরূপ নিরবচ্ছিন্ন ছিয়ামের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যেমন একদা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে সারা বছর ছিয়াম পালনকারী জনৈক ব্যক্তির সম্পর্কে বলা হ’লে তিনি বললেন, আমি কামনা করি সে যেন কখনোই খেতে না পায়। তখন ছাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমরা কি তাহ’লে বছরের তিনভাগের একভাগ ছিয়াম রাখব? তিনি বললেন, এটা অধিক হয়ে যায়। তারা বললেন, তবে বছরের অর্ধেক ? তিনি বললেন, এটাও বেশী। অতঃপর বললেন, আমি কি তোমাদেরকে অন্তরের রোগ দূরীভূতকারী আমল সম্পর্কে সংবাদ দিব না? আর তা হ’ল মাসে তিনদিন ছিয়াম পালন করা (নাসাঈ হা/২৩৮৫)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, মাসে তিনদিন ছিয়াম পালন কর। নিশ্চয়ই যে কোন সৎকর্মের ১০ গুণ পরিমাণ নেকী রয়েছে। ফলে এটাই তোমার জন্য সারা বছর ছিয়াম রাখার ন্যায় হয়ে যাবে (বুখারী হা/১৯৭৬)। 

প্রশ্ন : ছালাতে লোকমা দেওয়ার পরও ইমাম পুরোপুরি দাঁড়িয়ে গেছেন। কিন্তু মুক্তাদী বসে থাকায় ইমাম দাঁড়ানো থেকে পুনরায় বসে ছালাত শেষ করেছেন। এভাবে দাঁড়িয়ে গেলে পুনরায় বসা শরী‘আতসম্মত হবে কি ? 

উত্তর: ইমাম সম্পূর্ণ দাঁড়িয়ে গেলে বসবেন না। বরং মুক্তাদীগণ ইমামের অনুসরণে দাঁড়িয়ে যাবে। কেননা ইমাম নিযুক্ত করা হয় তাকে অনুসরণ করার জন্য (বুখারী হা/৩৭৮; মিশকাত হা/৮৫৭)। ভুলের জন্য ইমাম সালাম ফিরানোর পূর্বে সহো সিজদা করবেন। আর সম্পূর্ণ না দাঁড়ালে বসে যাবেন। এক্ষেত্রে সহো সিজদা লাগবে না। মুগীরাহ বিন শো‘বাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যদি ইমাম দ্বিতীয় রাক‘আতে (ভুলবশত বৈঠক না করে) দাঁড়িয়ে যায় এবং সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পূর্বেই স্মরণে আসে, তাহ’লে সে বসে যাবে। আর যদি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায় তাহ’লে বসবে না। বরং শেষে দু’টি সহো সিজদা দিবে’ (আবুদাউদ হা/১০৩৬; মিশকাত হা/১০২০; ছহীহাহ হা/৩২১)। অবশ্য সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার পরে বসে পড়লে ছালাত বাতিল হবে না। কেননা সেটি ভুলবশতঃ হয়েছে। 

প্রশ্ন  : পুরুষ-মহিলা পরস্পরে সালাম বিনিময় করা যরূরী কি ?

উত্তর : পুরুষ-মহিলা পরস্পরকে সালাম দেওয়া যরূরী নয়। তবে ফিৎনার আশংকা না থাকলে সালাম দেওয়া যাবে। আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন, ‘নবী করীম (ছাঃ) আমাদের পাশ দিয়ে যেতেন এবং আমাদেরকে সালাম দিতেন’ (আহমাদ, ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/৩০০১; মিশকাত হা/৪৬৪৭ হাদীছ ছহীহ ‘সালাম’ অনুচ্ছেদ)। ফিৎনার আশংকা থাকলে সালাম দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘পরপুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বল না, যাতে অন্তরে যার ব্যাধি আছে, সে প্রলুব্ধ হয়’ (আহযাব ৩৩/৩২)। 

প্রশ্ন  : জমি বর্গা চাষ বা ইজারা দেওয়ার শরী‘আতসম্মত পন্থা কি কি ? 

 উত্তর : জমি ইজারা বা ভাড়া দেওয়ার শরী‘আত সম্মত পন্থা হ’ল, (১) পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে জমি লিজ বা ভাড়া দেওয়া। রাফে‘ বিন খাদীজ (রাঃ) বলেন, আমার দুই চাচা নবী করীম (ছাঃ)-এর যুগে জমি বর্গা দিতেন এভাবে যে, নালার পাশে যে শস্য হবে তা তাদের অথবা জমির মালিক (শস্য নেয়ার জন্য) কিছু জমি পৃথক করে দিতেন। নবী করীম (ছাঃ) এরূপ করতে নিষেধ করলেন। হানযালা (রহঃ) বলেন, আমি রাফে‘ বিন খাদীজ (রাঃ)-কে বললাম, স্বর্ণমুদ্রা ও রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে জমির ভাড়া দেয়া যাবে কি ? তিনি বললেন, এতে কোন বাধা নেই (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৯৭৪)। (২) জমি বর্গা দেওয়া অর্থাৎ জমিতে উৎপাদিত শস্য পারস্পরিক ভাগাভাগির চুক্তিতে বর্গা দেওয়া শরী‘আত সম্মত। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) খায়বারের জমিতে উৎপাদিত ফল-ফসল অর্ধেক প্রদানের শর্তে বর্গা দিয়েছিলেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৯৭২)। অতএব ফসলে বর্গা হবে, জমিতে নয়। অর্থাৎ জমি ভাগাভাগি করলে তা জায়েয হবে না। উল্লেখ্য যে, কট-কবলা বা বন্ধকী প্রথা, যা বর্তমানে ব্যাপকভাবে চালু রয়েছে তা শরী‘আত সম্মত নয়। কেননা তাতে বন্ধকী বস্ত্ত থেকে উপকার গ্রহণ করা হয়, যা সূদ।  

প্রশ্ন  : চাকুরী পাওয়ার শর্তে কোন মেয়েকে বিবাহ করা যাবে কি ?  

উত্তর : উপরোক্ত শর্তানুযায়ী বিবাহ করা শরী‘আত সম্মত নয়। কারণ এটি যৌতুক হিসাবে গণ্য হবে। অথচ আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদেরকে ফরয মোহরানা প্রদান কর’ (নিসা ৪/৪, ২৪-২৫)। এর সরাসরি বিপরীত হ’ল স্ত্রীর নিকট হ’তে যৌতুক নেওয়া। যা আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। 

প্রশ্ন : কুরবানীর দিন ছিয়াম রাখার ব্যাপারে শরী‘আতের কোন বিধান আছে কি ? 

উত্তর : কুরবানীদাতার জন্য ঈদের দিন কুরবানীর গোশত খাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত না খেয়ে থাকা সুন্নাত। এটাকে ছিয়াম বলা হবে না। বুরায়দা (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদুল ফিৎর-এর দিন না খেয়ে ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হ’তেন না। আর ঈদুল আযহার দিন ছালাত শেষ না করে খেতেন না’ (তিরমিযী হা/৫৪২, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৪৪০, সনদ ছহীহ)। মুসনাদে আহমাদ-এর বর্ণনায় এসেছে যে, ‘তিনি স্বীয় কুরবানীর গোশত হ’তে খেতেন’ (আহমাদ হা/২৩০৩৪, সনদ হাসান; নায়লুল আওত্বার ৪/২৪১)। অতএব কুরবানীর গোশত দ্বারা ইফতার করা সুন্নাত। এছাড়া বায়হাক্বীর এক বর্ণনায় এসেছে, ‘প্রথমে তিনি কলিজা হ’তে খেতেন’ (বায়হাক্বী হা/৫৯৫৬; মির‘আতুল মাফাতীহ ৪/৪৫ পৃঃ, ‘ঈদায়নের ছালাত’ অনুচ্ছেদ)। তবে এ বর্ধিতাংশটির বর্ণনাসূত্রে একজন দুর্বল রাবী থাকায় বর্ণনাটি যঈফ (সুবুলুস সালাম, তা‘লীক : আলবানী ২/২০০)। 

প্রশ্ন : দাজ্জালের আকৃতি ও চেহারা কেমন ? বিস্তারিত জানতে চাই।  

উত্তর : দাজ্জাল শেষ যামানার কোন আদম সন্তানের ঔরসজাত হবে। সে খোরাসান থেকে বের হবে (তিরমিযী হা/২২৩৭; ইবনু মাজাহ হা/৪০৭২)। ‘দাজ্জাল মানুষের মত কথা বলবে’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৪৭৯)। দাজ্জালের আকৃতি মানুষের মতই হবে। তবে তা হবে বৃহদাকৃতির (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৮২)। দাজ্জালের ডান চক্ষু কানা হবে এবং ফোলা আঙ্গুরের মত হবে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৭০)। দাজ্জালের দুই চোখের মাঝে লেখা থাকবে ك ف ر (কাফের) (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৪৭১)। দাজ্জালের বাম চোখ হবে কানা, মাথার চুল ঝাকড়া হবে (অর্থাৎ দাজ্জালের দু’টি চোখই হবে কানা এবং দোষযুক্ত)। তবে তার সঙ্গে তার জান্নাত ও জাহান্নাম থাকবে। তার জান্নাত হবে জাহান্নাম এবং জাহান্নাম হবে জান্নাত (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৭৪)। তার আকার হবে আবুল উযযা ইবনু কাতান নামক জনৈক ইহূদীর মত (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৭৫)। সে ৪০ দিনে সারা দুনিয়া প্রদক্ষিণ করবে। প্রথম দিন হবে এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাস ও তৃতীয় দিন হবে এক সপ্তাহের সমান। বাকী দিনগুলো হবে সাধারণ দিনের ন্যায় (তিরমিযী হা/৫৪৭৫; আবুদাঊদ হা/৪৩২১; ইবনু মাজাহ হা/৪০৭৫)। তার নির্দেশে আসমান বৃষ্টি বর্ষাবে আর যমীন ফসল ফলাবে (তিরমিযী হা/২২৪০; মিশকাত হা/৫৪৭৫)। সে হবে কাফের। তার কোন সন্তান থাকবে না। সে মক্কা ও মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না (তিরমিযী হা/২২৪৬; ছহীহ জামে‘উছ ছাগীর হা/৩৪০৩)। দাজ্জালকে ঈসা (আঃ) বায়তুল মুক্বাদ্দাসের নিকটবর্তী ‘লুদ্দ’ নামক শহরের প্রধান ফটকে হত্যা করবেন (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৭৫)। 

প্রশ্ন : ঈদায়নের খুৎবা একটি না দু’টি? ছহীহ দলীল ভিত্তিক জওয়াব দানে বাধিত করবেন।

উত্তর : ঈদায়নের খুৎবা ১টি। দুই খুৎবার পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ নেই, বরং যা আছে তা যঈফ ও মুনকার (ইবনু মাজাহ হা/১২৮৯, মাজমূ‘ যাওয়ায়েদ হা/৩২৩৯, বিঃদ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৭৮৯)। এ সম্পর্কে ছহীহ বর্ণনা হ’ল, ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদগাহে বের হ’লেন এবং সর্বপ্রথম ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর খুৎবা দিলেন। তারপর তিনি মহিলাদের কাছে আসলেন, তাদেরকে ওয়ায-নছীহত করলেন এবং দান-খয়রাত করার নির্দেশ দিলেন... (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৪২৯, ‘ঈদায়নের ছালাত’ অনুচ্ছেদ)। জাবির (রাঃ) বলেন, আমি ঈদের দিনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে ছালাতে উপস্থিত ছিলাম। আমি দেখলাম যে, তিনি আযান ও ইক্বামত ছাড়াই খুৎবার পূর্বে ছালাত আরম্ভ করলেন। যখন তিনি ছালাত শেষ করলেন তখন বেলালের গায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ালেন। অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করলেন এবং লোকদের উপদেশ দিলেন, পরকালের কথা স্মরণ করালেন এবং আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি উদ্বুদ্ধ করলেন। অতঃপর মহিলাদের দিকে অগ্রসর হ’লেন। এমতাবস্থায় তাঁর সাথে বেলাল ছিলেন। তাদেরকে আল্লাহভীতির উপদেশ দিলেন এবং আখেরাতের কথা স্মরণ করালেন(নাসাঈ, মিশকাত হা/১৪৪৬ ‘ঈদায়নের ছালাত’ অনুচ্ছেদ)। উক্ত হাদীছ দু’টি থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদের খুৎবার মাঝে বসতেন না। ইমাম বায়হাক্বী ও ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, প্রচলিত দুই খুৎবার নিয়মটি মূলতঃ জুম‘আর দুই খুৎবার উপরে ক্বিয়াস করেই চালু হয়েছে। খুৎবা শেষে বসে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার রেওয়াজটিও হাদীছ সম্মত নয়। বরং এটাই প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদায়নের ছালাত শেষে দাঁড়িয়ে কেবলমাত্র একটি খুৎবা দিয়েছেন। যার মধ্যে আদেশ-নিষেধ, উপদেশ, দো‘আ সবই ছিল (বায়হাক্বী ৩/২৯৯ পৃঃ মির‘আত ২/৩৩০-৩৩১; ৫/৩১)। উল্লেখ্য, যারা ঈদায়নের দু’টি খুৎবা সমর্থন করেন, তারা মূলত জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীছকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করেন। যেমন সিমাক (রাঃ) বলেন, আমি জাবির (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কি দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন? তিনি বলেন, তিনি দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন। তারপর অল্প বসতেন, অতঃপর পুনরায় দাঁড়াতেন (নাসাঈ হা/১৫৮৩-৮৪, ১৪১৮)। অত্র হাদীছে দু’খুৎবার মাঝে বসা প্রমাণিত হয়। কিন্তু সেটি জুম‘আর খুৎবা না ঈদের খুৎবা তা প্রমাণিত হয় না। উপরন্তু জাবির (রাঃ) বর্ণিত অন্য হাদীছে সরাসরি জুম‘আর কথা উল্লিখিত হয়েছে (নাসাঈ হা/১৪১৭; আবুদাঊদ হা/১০০৩)। সুতরাং এটি জুম‘আর খুৎবার সাথে সংশ্লিষ্ট। আলবানী (রহঃ) বলেন, দু’খুৎবার মাঝে বসার বিষয়টি জুম‘আর সাথে সংশ্লিষ্ট, ঈদের খুৎবায় নয়। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, দু’খুৎবার মাঝে বসার বিষয়টি জুম‘আর সাথে সংশ্লিষ্ট। উল্লেখ্য যে, ঈদের দু’খুৎবার মাঝে বসার প্রমাণে যত হাদীছ আছে সবই যঈফ (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩৮২ পৃঃ)। অতএব ঈদায়নের জন্য একটি খুৎবাই সুন্নাত। 

প্রশ্ন : ওযূ ভেঙ্গে গেছে বলে ধারণা হ’লেও অলসতাবশতঃ একই ওযূতে একাধিক ছালাত আদায় করা শরী‘আতসম্মত হবে কি ? 
উত্তর : সন্দেহ হ’লে পুনরায় ওযূ করতে হবে। তাছাড়া ওযূ ভেঙ্গে যাওয়ার উপর দৃঢ় বিশ্বাসী হ’লে অলসতাবশতঃ ঐ ওযূতে ছালাত আদায় করা শরী‘আত সম্মত নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘পবিত্রতা ব্যতীত ছালাত কবুল হয় না’ (মুসলিম হা/২২৪, ‘ছালাতের জন্য পবিত্রতা ওয়াজিব’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/৩০১)। তিনি অন্যত্র বলেন, ‘যে ব্যক্তির ওযূ ভঙ্গ হয়েছে তার ছালাত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে ওযূ না করে’ (বুখারী হা/১৩৫; মুসলিম হা/২২৫; মিশকাত হা/৩০০)। 

প্রশ্ন  : অভিভাবকের অনুমতি না নিয়ে প্রচলিত কোর্ট ম্যারেজ কি শরী‘আতসম্মত ? যদি শরী‘আতসম্মত না হয় তবে পরবর্তীতে করণীয় কি ? 
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন,‘অলী ছাড়া বিবাহ সিদ্ধ নয়’(আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩১৩০)। তিনি বলেন, ‘কোন নারী অলী ছাড়া বিবাহ করলে তা বাতিল, বাতিল, বাতিল’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩১৩১)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘কোন নারী অপর নারীকে বিবাহ দিতে পারে না এবং কোন নারী নিজে নিজে বিবাহও করতে পারে না’ (ইবনু মাজাহ হা/১৮৮২, মিশকাত হা/৩১৩৭)। অতএব এভাবে বিবাহ করলে তা বাতিল বলে গণ্য হবেএবং তাদেরকে পুনরায় বৈধভাবে বিয়ে করতে হবে। দ্বিতীয় বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত বর-কনের একত্রে বসবাস অবৈধ ও ব্যভিচারের অন্তর্ভুক্ত হবে। সঠিক পন্থায় বিবাহ সম্পাদনের পর তাদের এই ঘৃণ্য অপকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দরবারে খালেছ অন্তরে তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। বৈধ বিবাহের জন্য মেয়ে ও অলী উভয়ের সম্মতি আবশ্যক। সাবালিকা ও বিধবা নারীগণ বিবাহের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অলীর চাইতে বেশী হকদার (মুসলিম, মিশকাত হা/৩১২৭)। কিন্তু তারা অলীকে বাদ দিয়ে বিবাহ করবে না। যা উপরের হাদীছে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, কোন নারী ও পুরুষ স্বামী-স্ত্রী হিসাবে একত্রে বসবাস করার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে যে হলফনামা সম্পাদন করে, তাই-ই এদেশে কোর্ট ম্যারেজ নামে পরিচিত। এরূপ কোন বিবাহের একমাসের মধ্যে যদি তা কাজী অফিসে রেজিস্ট্রী করা না হয়, তাহ’লে তার কোন আইনগত ভিত্তি থাকে না। এছাড়া এরূপ কোর্ট ম্যারেজের পর রেজিস্ট্রীর ক্ষেত্রে সাধারণতঃ পসন্দমত সাক্ষী মানা হয়। সুতরাং প্রচলিত এরূপ প্রতারণাপূর্ণ বিবাহ কখনোই বৈধ নয়।  

প্রশ্ন  : মহিলাদের গার্মেন্টসে চাকুরী করা শরী‘আতসম্মত হবে কি ?

উত্তর : গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীগুলোতে নারী-পুরুষ একত্রে মিলে-মিশে কাজ করে থাকে। যা নিতান্তই গর্হিত কাজ। কারণ তা সর্বদা পাপের দিকেই আহবান জানায়। নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা চোখের যেনা, হাত দিয়ে স্পর্শ করা হাতের যেনা, কথা শ্রবণ করা কানের যেনা এবং পা দিয়ে হেঁটে যাওয়া পায়ের যেনা বলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উল্লেখ করেছেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৮৬ ‘ঈমান’ অধ্যায়)। বর্তমানে অধিকাংশ গার্মেন্টসেই একই পরিবেশ বিরাজমান। অতএব মহিলাদের গার্মেন্টসে চাকুরী করা হ’তে বিরত থাকা অবশ্যক। মূলতঃ বাড়ীতে অবস্থান করাই মহিলাদের কর্তব্য (আহযাব ৩৩)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নারী হ’ল গোপন বস্ত্ত। যখন সে বের হয়, শয়তান তার পিছু নেয়’ (তিরমিযী হা/১১৭৩; মিশকাত হা/৩১০৯)। আর নারীর দায়িত্ব সন্তান পালন ও পুরুষের দায়িত্ব পরিবারের ভরণ-পোষণ। অথচ গার্মেন্টসে স্বল্প বেতনে নারীদের চাকুরী দিয়ে ও পুরুষদের বেকার রেখে প্রবল সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। সেই সাথে সন্তান ও পরিবার ধ্বংস হচ্ছে এবং শেষ হচ্ছে নারীদের ঈমান ও স্বাস্থ্য। অতএব সংশ্লিষ্টগণ সাবধান! 

প্রশ্ন  : বজ্রপাতে মৃত ব্যক্তির লাশ চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে সম্পূর্ণ কবর পাকা করা যাবে কি ?  

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) কবর উঁচু করতে, পাকা করতে, তার উপর সৌধ নির্মাণ করতে ও বসতে নিষেধ করেছেন (মুসলিম, মিশকাত হা/১৬৯৬-৯৭)। সুতরাং এক্ষেত্রে অন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। যেমন মাটির নীচে ঢালাই দিয়ে কবর ঢেকে দেওয়া এবং উঁচু না করা। প্রশ্ন (৩৩/৪৩৩) : পিস টিভি সহ কোন কোন ইসলামিক টিভিতে বালক-বালিকাদের ইসলামী গানের তালে তালে নৃত্য ও অভিনয় উপস্থাপিত হয়। এগুলি কতটুকু শরী‘আতসম্মত? -ডা. আমীরুল ইসলাম, আমতলী সদর, জয়পুরহাট। উত্তর : বালিকাদের এভাবে উপস্থাপন করা ইসলামী পর্দার খেলাফ। এতে ফেতনা সৃষ্টির আশংকা থাকে। বস্ত্ততঃ নৃত্য ও অভিনয় কখনোই তাক্বওয়াপূর্ণ কর্মকান্ডের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং এসব কাজে অংশগ্রহণ করা বা দেখা হ’তে বিরত থাকা আবশ্যক। 

প্রশ্ন : খারেজীদের বৈশিষ্ট্য কি কি ? 

উত্তর : খারেজীদের বৈশিষ্ট্য হ’ল, (১) তারা কবীরা গোনাহগার শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ওয়াজিব মনে করে এবং কবীরা গোনাহগার মুমিনকে ঈমানশূন্য কাফের, হত্যাযোগ্য অপরাধী এবং তওবা না করে মারা গেলে তাদেরকে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হিসাবে গণ্য করে (শাহরস্তানী, আল-মিলাল ওয়ান নিহাল, ১/১১৪ পৃঃ, ইবনু হাযম, আল-ফিছাল ফিল মিলাল ২/১১৩)। (২) তারা কুরআন-হাদীছের মনগড়া ব্যাখ্যা করে। রাসূল (ছাঃ), ছাহাবায়ে কেরাম সহ সালাফে ছালেহীনের ব্যাখ্যার প্রতি মোটেই ভ্রূক্ষেপ করে না। ইবনু আববাস (রাঃ), ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) প্রমুখ বিদ্বানগণ উক্ত মত ব্যক্ত করেছেন (ফিরাক্ব মু‘আছিরাহ ১/২৭৮-২৭৯)। (৩) তারা হবে কম বয়সী, নির্বোধ ও বিচার-বুদ্ধিহীন। তারা সবচেয়ে সুন্দর সুন্দর কথা বলবে। কিন্তু তাদের ঈমান তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না (মুসলিম হা/১০৬৬, মিশকাত হা/৩৫৩৫) (৪) অন্যদের ছালাত, ছিয়াম ও আমলসমূহকে তাদের ছালাত, ছিয়াম ও আমলের তুলনায় তুচ্ছ মনে হবে (বুখারী হা/৫০৫৮)। (৫) তারা মুসলমানদেরকে হত্যা করবে ও মূর্তিপূজারীদের আপন অবস্থায় ছেড়ে দিবে (অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে না) (বুখারী হা/৩৩৪৪, মুসলিম হা/১০৬৪, মিশকাত হা/৫৮৯৪)। (৬) তারা সাধারণতঃ সম্পূর্ণ মাথার চুল ন্যাড়া করে রাখবে (আবুদাউদ হা/৪৭৬৬; ইবনু মাজাহ হা/১৭৫)। এদের লোকেরাই হযরত আলী ও মু‘আবিয়া (রাঃ)-কে ‘কাফের’ অভিহিত করে আলী (রাঃ)-কে হত্যা করেছিল এবং মু‘আবিয়া (রাঃ) ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন।  

প্রশ্ন  : রাসূল (ছাঃ) একজনের উপর আরেকজনের দর-দাম করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে পণ্য নিলামে বা ডাকে বিক্রয়ের সময় একাধিক লোক দাম বলতে থাকে এবং যে সবচেয়ে বেশী বলে তার নিকটে পণ্যটি বিক্রিত হয়ে থাকে। এক্ষণে এ পদ্ধতি কি জায়েয হবে ? 

উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উক্ত নিষেধাজ্ঞাটি নিলামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, বরং সাধারণ ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সাধারণ ক্রয়-বিক্রয়ের সময় একজনের উপরে অন্য জনের দর-দাম করা নিষিদ্ধ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৫০ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়)। কিন্তু নিলাম-এর উদ্দেশ্যই হ’ল দর বৃদ্ধি করা এবং সেখানে একজনের উপরে অন্যজনের দর-দাম করার মাধ্যমেই নিলামের উদ্দেশ্য হাছিল হয়ে থাকে। আর নিলামে বেচাকেনা ইসলামে জায়েয রয়েছে। তবে শর্ত হ’ল, প্রত্যেকে ক্রয় করার উদ্দেশ্যে দাম বলবে। দাম বাড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য থাকলে তা হারাম হবে। তাবেঈ বিদ্বান আত্বা (রহঃ) বলেন, আমি ছাহাবায়ে কেরামকে দেখেছি যে, তারা গণীমতের মাল অধিক মূল্য প্রদানকারীর নিকটে বিক্রি করাকে দোষণীয় মনে করতেন না (বুখারী ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়, ‘নিলামে বিক্রয়’ অনুচ্ছেদ-৫৯)। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি তার মৃত্যুর পরে তার গোলাম আযাদ হবে বলে ঘোষণা দিল। তারপর সে অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ল। তখন নবী করীম (ছাঃ) সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, একে কে আমার নিকট হ’তে ক্রয় করবে? নু‘আঈম ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) তাঁর কাছ হ’তে সেটি এত এত মূল্যে ক্রয় করলেন এবং তিনি গোলামটিকে তার নিকটে হস্তান্তর করে দিলেন (বুখারী হা/২১৪১, আলোচনা দ্রঃ ফাৎহুলবারী)।

প্রশ্ন  : যৌথ পরিবারে কোন ভাই উপার্জন করে, কোন ভাই করে না। যারা উপার্জন করে তারা মা-বাবা, ভাই-বোনসহ সবার ভরণ-পোষণ দেয়। এক্ষণে উপার্জনকারী কোন ভাইয়ের ক্রয়কৃত সম্পদে কি অন্যরা ভাগ পাবে ?

উত্তর : যৌথ পরিবারে মাতা-পিতার বর্তমানে তাদের সম্পত্তি ও সম্পদ দ্বারা কেউ উপার্জন করে ভরণ-পোষণ বাদে জমি ক্রয় করলে তাতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও ভাগ পাবে। তবে মাতা-পিতার সম্পত্তি ও সম্পদ ব্যতিরেকে কেউ নিজে পৃথকভাবে উপার্জন করে তা দ্বারা পরিবারের ভরণ-পোষণের পর জমি ক্রয় করলে তাতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ভাগ পাবে না। কেননা পরিবারের সদস্যরা মাতা-পিতার সম্পত্তি ও সম্পদের অধিকারী। ভাইয়ের উপার্জিত সম্পত্তি ও সম্পদের অধিকারী নয়।

প্রশ্ন  : ব্যবসায় কত শতাংশ লাভ করা যায়? এক্ষেত্রে শরী‘আত নির্ধারিত কোন সীমারেখা আছে কি ?

উত্তর : শরী‘আতে লাভের নির্দিষ্ট কোন পরিমাণ নির্ধারিত নেই। বরং তা সাধারণ বাজারদরের উপর নির্ভরশীল। মূলতঃ ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় বিষয় হ’ল, তাতে যুলুম না থাকা। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা যুলুম থেকে বেঁচে থাক। কেননা যুলুম ক্বিয়ামতের দিন ঘন অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৮৬৫)। অপরটি হ’ল, উভয়ের সন্তুষ্টি। আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা একে অপরের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না, তোমাদের পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা ব্যতীত’ (নিসা ৪/২৯)।

প্রশ্ন  : ফিতরা সম্পর্কে সঠিক মাসআলা না জানার কারণে জনৈক ব্যক্তি ফিতরা আদায় করেনি। এক্ষণে রামাযানের পর তা আদায় করা যাবে কি ? এর জন্য কোন কাফফারা দিতে হবে কি ?

উত্তর : অজ্ঞতার কারণে ফিতরা আদায় না করলে তার জন্য তওবা-ইস্তেগফার করতে হবে। এর জন্য কোন কাফফারা নেই।