চামড়া ও কাপড়ের মোজার উপর মাসাহ করার পদ্ধতি নিয়ে বিভ্রান্তির সমাধান !
মুহাম্মদ হামিদুল ইসলাম আজাদ
ইসলামী জীবন ব্যবস্থা মূলত বাস্তব সম্মত, যা পালন করা কষ্টকর তো নয়ই, বরং তা সহজেই পালনযোগ্য। অজু করার সময় বারবার মোজা খুলে পা ধোয়া বেশ কষ্টসাধ্য। সে জন্য পা থেকে মোজা না খুলে, তার উপর মাসাহ করাকে ইসলামী শারী‘আহ অনুমোদন দিয়েছে। মুহাম্মদ হামিদুল ইসলাম আজাদ
মোজার পরিচয়ঃ
শাব্দিক অর্থঃ মোজা শব্দটি বাংলা । মোজা বুঝাতে আরবীতে দুটি শব্দ রয়েছে: খুফ্ফ (الخُفّ) অর্থাৎ চামড়ার মোজা এবং জাওরাব الجورب বা (جَوْرَبْ) অর্থাৎ কাপড়, পশম ইত্যাদির মোজা। প্রথম প্রকারের মোজার উপর মাসাহ করার বিষয়টি রাসূল সাঃ থেকে সন্দেহাতীত ভাবে মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন: একদল হাফেজে হাদীসের স্পষ্ট বক্তব্য হল খুফ্ফাইনের [ চামড়ার মোজার উপর ] মাসাহ করার বিষয়টি রাসূল সাঃ থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণীত।১
পারিভাষিক অর্থঃ
সাধারণ ভাবে যে মোজা হাঁটুর নীচ পর্যন্ত হয়, তাকে বলা হয় খুফ্ফ [খোপ] (الخُفّ) অর্থাৎ চামড়ার মোজা । আর কাপড়ের শক্ত মোজাকে বলা হয় জাওরাব الجورب বা (جَوْرَبْ) । আর খুফ্ফ [খোপ] (الخُفّ) ও জাওরাব الجورب বা (جَوْرَبْ) মোজার হেফাজতের জন্য কাপড়ের তৈরি মোজার উপের যাহা পরা হয় উহাকে বলা হয় জারমুক ।২
জুতা ব্যতীত যে বস্ত্ত দ্বারা পুরা পায়ের পাতা টাখনুর উপর পর্যন্ত ঢেকে রাখা হয়, তাকে ‘মোযা’ বলা হয়। চাই সেটা চামড়ার হৌক বা সুতী হৌক বা পশমী হৌক, পাতলা হৌক বা মোটা হউক’।৩
خُفٌّ খুফ বলা হয় চামড়ার তৈরি পাদুকা যা পায়ের গ্রন্থীদ্বয় আবৃত রাখে। আর جَوْرَبٌ হলো ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার জন্য চুল, পশম বা মোটা চিকন চামড়া দ্বারা তৈরি মোজা যা টাকনুর উপরিভাগ পর্যন্ত আবৃত রাখে।
অনেকেই মনে করেন আমরা যে মোজা ব্যবহার করি তা ও এখানে হাদীছে বর্ণিত الخف এক নয়। আসলে এ ধারণাটি ঠিক নয়। মোজাকেই আরবিতে الخُفّ বলে। অভিধানে বলা হয়েছে- الخُفّ بالفارسية مُوزَه । ফারসি ভাষায় الخُفّ হচ্ছে মোজা।৪
বাংলা ভাষাতেও ফার্সি ভাষার অনেক শব্দের মতই ফার্সি ‘মোজা’ শব্দটিও ব্যবহার হয়। সুতরাং বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত মোজা ও হাদীছগুলোতে বর্ণিত খুফ্ফ যে একই, তা সন্দেহাতিতভাবেই প্রমাণিত। অতএব খুফ্ফ সম্পর্কিত সকল হাদীছই মোজার ব্যাপারে প্রযোজ্য।
মাসাহ এর পরিচয়ঃ
মাসাহ শব্দটি আরবি । ‘মাসাহ’ অর্থ স্পর্শ করা। পারিভাষিক অর্থ, ‘ওযূর অঙ্গে ভিজা হাত নরমভাবে বুলানো, যা মাথা বা মোযার উপরে করা হয়’।
মিশকাতুল মাসাহবী গ্রন্থে বলা হয়েছে, মাসাহ বলা হয় ভিজানো হাত কোন অঙ্গের উপর বুলানো।৫
চামড়া ও কাপড়ের মোজার উপর মাসাহ করার দলিলঃ
আশারায়ে মুবাশশারাহ সহ ৮০ জন ছাহাবী মোযার উপর মাসাহ এর হাদীছ বর্ণনা করেছেন। মোজার উপর মাসাহ করার বিষয়টি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে প্রমাণিত। এ হাদীছ গুলো মুতাওয়াতির পর্যায়ভুক্ত’। নববী বলেন, সফরে বা বাড়ীতে প্রয়োজনে বা অন্য কারণে মোযার উপর মাসাহ করা বিষয়ে বিদ্বানগণের ঐক্যমত রয়েছে।৬
হাসান আল্ বসরী রহঃ বলেন, আমার নিকট এ মর্মে হাদীস পৌঁছেছে যে, সত্তরজন সাহাবী বলেছেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোজার উপর মাসাহ করতেন।
রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে এ বিষয়ে স্পষ্ট হাদীছও বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হাদীছ হচ্ছে-
عن عروة بن المغيرة بن شعبة ، عن أبيه قال : قلت : يا رسول الله ، أتمسح على خفيك ؟ قال : نعم ، إني أدخلتهما وهما طاهرتان.
‘উরওয়াতুবনুল মুগীরাতুবনি শূ‘বাহ তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল আপনি কি আপনার মোজার উপর মাসাহ করলেন? তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, আমি পবিত্র অবস্থায় পা দুটিকে তন্মধ্যে প্রবেশ করিয়ে ছিলাম ।’৭অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে-
عن همام بن الحارث قال : رأيت جرير بن عبد الله بال ثم توضأ ومسح على خفيه ثم قام فصلى فسئل فقال رأيت النبي صلى الله عليه و سلم صنع مثل هذا.
‘হাম্মাম ইবনুল হারিছ বলেন, আমি জারির ইবন আবদুল্লাহ রাদি আল্লাহু ‘আনহুকে পেশাব করে অজু করার সময় তাঁর দুই মোজার উপর মাসাহ করে ছালাত আদায় করতে দেখলাম। তাঁকে [এ বিষয়ে] প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ ভাবেই করতে দেখেছি।’৮আরো বর্ণিত হয়েছে -
وَعَنْهُ اَنَّه قَالَ رَاَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ يَمْسَحُ عَلَى الْخُفَّيْنِ عَلى ظَاهِرِهِمَا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وأَبُوْ دَاوٗدَ
মুগীরাহ্ রাঃ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি তিনি তাঁর দু’টো মোজার উপরের দিকে মাসাহ করেছেন।৯হাদীছটি ব্যাখ্যা: এ হাদীছ প্রমাণ করে যে, মোজার উপরে মাসাহ করতে হবে। হাদীছটি ইমাম তিরমিযী রহঃ হাসান বলেছেন এবং হাকিম, ইবনু হাজার ছহীহ বলেছেন। আর ইমাম বুখারী হাদীছটি তার তারীখে আওসাত-এর মধ্যে উল্লেখ করেছেন।
আরো বর্ণিত হয়েছে -
عن صفوان بن عسال قال : كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يأمرنا إذا كنا على سفر أن لا ننزع خفافنا ثلاثة أيام ولياليهن إلا من جنابة ولكن من غائط وبول ونوم.
‘ছাফওয়ান ইবন আসসাল বলেন, আমরা সফর অবস্থায় থাকলে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিতেন, যাতে আমরা জানাবাত অবস্থা [যা গোসলকে অনিবার্য করে] ব্যতীত পায়খানা, পেশাব ও ঘুমের জন্যও তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত মোজা না খুলি ।’ [তিরমিযী হাদীছটিকে ছাহীহ বলেছেন।]১০অন্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-
عن خزيمة بن ثابت عن النبي صلى الله عليه و سلم إنه قال : في المسح على الخفين يوم وليلة للمقيم وثلاثة أيام ولياليهن للمسافر.
‘খুযাইমা ইবন ছাবিত রাদি আল্লাহু ‘আনহু মোজার উপর মাসাহ সম্পর্কে বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুসাফির অবস্থায় তিন দিন ও মুকিম [মুসাফির নয় এ] অবস্থায় একদিন ও একরাত।’১১
عَنْ أبى هريرة قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إذا أدخل أحدكم رجليه في خفيه وهما طاهرتان فليمسح عليهما ثلاث للمسافر ويوم للمقيم .
আবূ হুরাইরাহ রাদিআল্লাহু ‘আনহু সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ পবিত্র অবস্থায় তার দুই পা দুই মোজায় প্রবেশ করালে, সে তার উপর মুসাফির অবস্থায় তিন দিন ও মুকীম অবস্থায় একদিন মাসাহ করতে পারবে।’১২ আল-আলবানী এ হাদীছটিকে ছাহীহ বলেছেন।কাপড় ও অন্যান্য মোজার উপর মাসাহ করার দলিলঃ
وَعَنْهُ قَالَ تَوَضَّاَ النَّبِىِّ ﷺ وَمَسَحَ عَلَى الْجَوْرَبَيْنِ وَالنَّعْلَيْنِ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وأَبُوْ دَاوٗدَ وَابْنُ مَاجَةَ
মুগীরাহ্ রাঃ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করলেন এবং জুতার সাথে ‘জাওরাব’ ও পা’ দু’টোর উপরের দিকও মাসাহ করলেন।১৩হাদীছটির ব্যাখ্যা: جَوْرَبَيْنِ ‘জাওরাবায়ন’ শব্দটি جَوْرَبْ ‘জাওরাব’-এর দ্বিবচন। এর অর্থ কাপড়ের মোজা। বর্ণিত হাদীসে প্রমাণ হয় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাওরাবায়ন বা পায়ের ঢাকনীর উপর মাসাহ করেছেন। সেটা চাই পশমী হোক বা চুলের হোক। আর চামড়ার হোক বা পস্নাস্টিকের হোক। মোটা হোক বা পাতলা হোক সেটার উপর মাসাহ করা জায়িয আছে। জাওরাবায়ন জুতার ন্যায় যা জমিন হতে পাকে রক্ষা করে। সেটার উপর মাসাহ করা উত্তম। ইমাম ইবনু হাযম সেটা মোটা হওয়ার জন্য শর্ত করেছেন। অনেক সাহাবায়ি কিরাম এর ওপর ‘আমাল করেছেন। হাদীছটিকে ইমাম তিরমিযী রহঃ ছহীহ বলেছেন।
মূলত এ প্রসংগে বর্ণিত হাদীছগুলো একত্রিত করলে স্পষ্ট যে কথাটি বুঝা যায় তা হচ্ছে, অজু অবস্থায় কেউ মোজা পরিধান করলে তার উপর গোসল ফারদ বা (ফারজ) হওয়ার মত কোন কিছু না ঘটলে, সে ব্যক্তি মুকীম হলে একদিন এক রাত, আর মুসাফির হলে তিন দিন তিন রাত, মোজা না খুলে তার উপর মাসাহ করে পবিত্রতা অর্জন করতে পারবে। এ পর্যায়ে মোজা কি দ্বারা তৈরি, তা কতটুকু শক্ত, এ দ্বারা কত পথ অতিক্রম করা সম্ভব ইত্যাদি কোন শর্ত আমরা হাদীছে দেখতে পাই না।
আমাদের পূর্ববর্তী অনেক বিচক্ষণ আলিমও কিন্তু একই বিষয়ে একাধিক মতের পক্ষে গ্রহণযোগ্য বিভিন্ন ছাহীহ হাছীসে পাওয়া গেলে তার উপর আমলের আহবান জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহর বক্তব্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি ছালাতুল ফাজরে কুনূত পড়ার বৈধতার হাদীছ বিষয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে বলেন-
ومن هذا أيضا جهر الإمام بالتأمين وهذا من الاختلاف المباح الذي لا يعنف فيه من فعله ولا من تركه وهذا كرفع اليدين في الصلاة وتركه وكالخلاف في أنواع التشهدات وأنواع الأذان والإقامة وأنواع النسك من الإفراد والقران والتمتع وليس مقصودنا إلا ذكر هديه صلى الله عليه و سلم الذي كان يفعله هو.
‘উচ্চস্বরে ইমামের আমীন বলাও এইরূপ। এটি ঐ ধরনের মুবাহ বিষয়ক মতভেদ, যা করা অথবা বর্জন করা সম্পর্কে কঠোর মন্তব্য করা যাবে না। এটি ছালাতের মধ্যে হাত উঠানো না উঠানো, বিভিন্ন প্রকার তাশাহ্হুদ পাঠ, আযান দেয়া, ইকামত দেয়া, ইফরাদ, কিরান ও তামাত্তু‘ হাজ্জে কুরবানী দেয়ার ভিন্নতার মতই। আমাদের উদ্দেশ্য রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের পথ যা তিনি করতেন তা স্মরণ করিয়ে দেয়া।’১৪অর্থাৎ যে কোন একটিকে ‘আমল করলেই চলবে, কোন একটির উপর শক্ত অবস্থান ঠিক নয়। তিনি কাফিরদের সন্তানদের জান্নাতে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে, বিভিন্ন পক্ষের দলীল উপস্থাপনের এক পর্যায়ে আরো বলেছেন যে-
أن عادتنا في مسائل الدين كلها دقها وجلها أن نقول بموجبها ولا نضرب بعضها ببعض ولا نتعصب لطائفة على طائفة بل نوافق كل طائفة على ما معها من الحق ونخالفها فيما معها من خلاف الحق.
‘দীনের ছোট বড় সকল মাসআলার বিষয়ে আমাদের নীতি হচ্ছে, এর দাবী অনুযায়ী কথা বলা, একে অপরকে ঘায়েল করব না এবং এক দলকে বাদ দিয়ে অন্য দলের প্রতি গোঁড়ামীও করব না। বরং যে দলের পক্ষে সত্য রয়েছে, আমরা তার সাথে একাত্ম হবো আর যাদের সাথে সত্য পরিপন্থী কিছু থাকবে আমরা তার বিরোধী হবো।’১৫সুতরাং আমাদেরও এ সব মনীষীদের মতই প্রতিটি বিষয়ে গ্রহণ ও বর্জনের ক্ষেত্রে দলীলকে বিবেচনায় আনা ও বিরোধী পক্ষের প্রতি উদার হওয়া বাঞ্ছনীয়।
আমরা অনেক সময় হাদীছের অনুমোদিত অনেক বিষয়কে সতর্কতা অবলম্বনের অজুহাতে বর্জন করে থাকি। ইবন কায়য়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন-
والاحتياط حسن، ما لم يفض بصاحبه إلى مخالفة السنة، فإذا أفضى إلى ذلك فالاحتياط ترك هذا الاحتياط.
‘সতর্কতা অবলম্বন করা উত্তম, যদি তা সতর্কতা অবলম্বনকারীকে হাদীছের বিরুদ্ধে না নিয়ে যায়। যদি হাদীছের বিরুদ্ধে নিয়ে যায়, তা হলে উক্ত সতর্কতাকে বর্জন করাই সতর্কতা।’১৬সুতরাং সতর্কতা অবলম্বন করার ক্ষেত্রেও এ বিষয়ে হাদীছের অনুমোদন রয়েছে কি না, তা বিবেচনায় আনা প্রয়োজন।
ইমাম আহমাদ রহঃ বলেছেন : যদি তার উপর হাটাচলা যায় এবং তা পায়ের সাথে লেগে থাকে তাহলে তার উপর মাসাহ করতে কোন সমস্যা নেই ।১৭
হানাফী মাযহাবের উলামায়ে কেরামের মধ্য হতে ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ ও মুহাম্মাদ রহঃ এর মতে মোজা যদি মোটা হয় তাহলে তার উপর মাসাহ করা জায়েয। ইমাম আবু হানীফা রহঃ ভিন্নমত পোষণ করলেও শেষ জীবনে ছাহেবাইনের মত গ্রহন করেন। যেমন আল্লামা কাসানী রহঃ বলেন:
وَإِنْ كَانَا ثَخِينَيْنِ لَا يَجُوزُ عِنْدَ أَبِي حَنِيفَةَ وَعِنْدَ أَبِي يُوسُفَ ، وَمُحَمَّدٍ يَجُوزُ . وَرُوِيَ عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ أَنَّهُ رَجَعَ إلَى قَوْلِهِمَا فِي آخِرِ عُمُرِهِ
তবে যদি পুরু এবং মোটা হয় সে ক্ষেত্রে আবু হানীফার মতে জায়েজ নেই । আর ছাহেবাইন রহঃ এর নিকট তার উপর মাসাহ করা বৈধ। বর্ণীত আছে যে, আবু হানীফা রহঃ জীবনের শেষ দিকে ছাহেবাইনের মত গ্রহন করেছেন। ১৮আবু হানীফা রহঃ ছাহেবাইনের মত গ্রহন করার বিষয়টি তিরমিযী রহঃ উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন:
سمعت صالح بن محمد الترمذي قال سمعت أبا مقاتل السمرقندي يقول دخلت على أبي حنيفة في مرضه الذي مات فيه فدعا بماء فتوضأ وعليه جوربان فمسح عليهما ثم قال فعلت اليوم شيئا لم أكن أفعله مسحت على الجوربين وهما غير منعلين .
অর্থঃ [ইমাম তিরমিযী রহঃ বলেন:] আমি সালেহ ইবনে মুহাম্মাদ কে বলতে শুনেছি, আমি আবু মুকাতিলকে বলতে শুনেছি যে, আমি আবু হানিফার নিকটে তার মৃত্যু পূর্ব অবস্থায় গমন করলাম। তিনি ওজু করার জন্য পানি আনতে বললেন অতপর ওজু করলেন । আর তিনি তার পায়ে থাকা জাওরাবের উপর মাসাহ করলেন। এরপর বললেন : আমি আজ যেটা করলাম তা ইতিপূর্ব কখন করিনি। আমি শুধু জাওরাবের উপর মাসাহ করলাম ।১৯মোটকথাঃ জাওরাব বাকাপড়ের মোজার উপর মাসাহ করার ব্যাপারে ইমামদের মাঝে মতবিরোধ আছে, তবে গ্রহনযগ্য মত হল,যদি তা মোটা হয়,মজবুত হয়, পায়ের সাথে এটে থাকে তাহলে মাসাহ করা যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বিষয়ের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
মোজার উপর মাসাহ করার শর্ত:
মাসাহ এর জন্য ৪টি শর্ত রয়েছে:১- পা ধুয়ে পূর্ণরুপে ওযু করার পর মোজা পরতে হবে। পূর্বে ওযু না করে মোজা পরে, তারপর তার উপর মাসাহ্ চলবে না।
সাহাবী মুগীরাহ্ রাঃ বলেন, আমি নবী সাঃ এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। তিনি ওযু করছিলেন। আমি তাঁর মোজা দু’টি খুলে নিতে ঝুঁকলাম। তিনি বললেন, “ছাড়ো, আমি ও দু’টিকে ওযু অবস্থায় পরেছি।” ২০
২- মোজা দু’টি যেন পবিত্র হয়। অর্থাৎ, তাতে যেন কোন প্রকারের নাপাকী লেগে না থাকে।
৩- এই মাসাহ যেন সেই পবিত্রতা অর্জনের সময় হয়, যার জন্য কেবল ওযু জরুরী হয়। কারণ, যার জন্য গোসল জরুরী হয়, সেই পবিত্রতা অর্জনের সময় মোজা খুলে দিয়ে পা ধোওয়া জরুরী। ২১
৪- মাসাহ যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হয়। ২২
মোজার উপর মাসাহ করার সময়সীমা:
আলী রাঃ কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাঃ মুসাফিরের জন্য ৩ দিন এবং গৃহ্বাসীর জন্য ১ দিন মোজার উপর মাসাহ্র সময়-সীমা নির্ধারিত করেছেন।২৩এই নির্দিষ্ট সময় শুরু হবে, ওযু করে মোজা পরে ঐ ওযু ভাঙ্গলে তার পরের ওযু করার সময় তার উপর মাসাহ করার পর থেকে। অতএব প্রথম মাসাহ থেকে ২৪ ঘন্টা গৃহ্বাসীর জন্য এবং ৭২ ঘন্টা মুসাফিরের জন্য মাসাহ্ করা বৈধ হবে। সুতরাং যদি কেউ মঙ্গলবারের ফজরের নামাযের জন্য ওযু করার সময় মোজা পরে, তারপর ঐ ওযুতে চার ওয়াক্ত নামায পড়ে যদি তার ওযু এশার পর ভাঙ্গে এবং বুধবার ফজরের পূর্বে ওযু করার সময় মাসাহ্ করে, তাহলে সে গৃহ্বাসী হলে পর দিন বৃহ্স্পতিবারের ফজর পর্যন্ত ওযু করার সময় মোজার উপর মাসাহ্ করতে পারে। অনুরুপ মুসাফির হলে শনিবার ফজর পর্যন্ত মাসাহ করতে পারবে।২৪
মোজার উপর মাসাহ করার পদ্ধতি:
দু’টি হাতকে ভিজিয়ে ডানহাতের আঙ্গুলগুলিকে ডান পায়ের আঙ্গুলের উপর থেকে শুরু করে পায়ের পাতার উপর দিকে বুলিয়ে নিয়ে গিয়ে পায়ের রলার শুরু পর্যন্ত মাসাহ্ করতে হবে। আর ঐ একই সাথে একই নিয়মে বামহাতের আঙ্গুল দিয়ে বাম পায়ের পাতার উপর মাসাহ্ করবে। উভয় কানের মাসাহ যেমন একই সঙ্গে হয়, ঠিক তেমনিই উভয় পায়ের মাসাহ একই সঙ্গে হবে। দুই হাত জুড়ে প্রথমে ডান পা, তারপর বাম পা পৃথক করে মাসাহ্ করা ঠিক নয়।২৫পায়ের তেলোতে ধুলো-বালি থাকলেও তার নিচে মাসাহ্ করা বিধেয় নয়।
وَعَنْ عَلِيٍّ اَنَّه قَالَ لَوْ كَانَ الدِّيْنُ بِالرَّاْىِ لَكَانَ اَسْفَلَ الْخُفِّ اَوْلى بِالْمَسْحِ مِنْ اَعْلَاهُ وَقَدْ رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَمْسَحُ عَلى ظَاهِرِ خُفَّيْهِ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالدَّارِمِيُّ معناه
হযরত আলী রাঃ বলেন, ‘দ্বীনে যদি রায় ও বিবেকের স্থান থাকত, তাহলে মোজার উপরের অংশ অপেক্ষা নিচের অংশই অধিক মাসাহ যোগ্য হত। কিন্তু আমি আল্লাহর রসূল সাঃ কে তাঁর মোজার উপরের অংশে মাসাহ করতে দেখেছি।’২৬যে ব্যক্তি মুসাফির অবস্থায় মাসেহ শুরু করে একদিন অতিবাহিত হওয়ার পর আপন শহরে প্রবেশ করবে, সে একদিন ও একরাতেই মাসেহ পূর্ণ করে শেষ করবে। অনুরূপ স্বীয় স্থানে অবস্থানরত অবস্থায় যদি মাসেহ শুরু করে সফর করে তবে সে মুসাফিরের হুকুমে তিনদিন ও তিনরাত মাসেহ পূর্ণ করবে।
মোজার উপর মাসাহের হুকুম যে কারণে বাতিল হয়:
১- মাসাহর নির্দিষ্ট সময়-সীমা অতিবাহিত হয়ে গেলে।২. যদি গোসল ফরজ হয়ে যায়।
৩- মাসাহ করার পর মোজা খুলে ফেললে।২৭
আর মোজার মাসেহ করার সময়-সীমা শেষ হয়ে গেলেই যে ওযু নষ্ট হয়ে যাবে তা নয় বরং ওযু ভঙ্গের কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত সংঘটিত না হবে ততক্ষণ ওযু থাকবে।
মোজার উপর মাসাহ এর আনুষঙ্গিক মাসায়েল:
১. শীত-গ্রীষ্ম যে কোন সময়ে মোজা পরে থাকলে তার উপর মাসাহ বৈধ। মোজা পরা শীতের জন্যই হতে হবে, এমন কোন শর্ত নেই।২৮২. একেবারে পাতলা (যাতে পা দেখা যায় এমন) মোজা হলে তাতে মাসাহ্ চলবে না।২৯
৩. উত্তম ও সতর্কতামূলক আমল এই যে, উভয় পা ধোয়া শেষ হলে তবেই মোজা পরা হবে। নচেৎ ডান পা ধুয়ে মোজা পরে নিয়ে তারপর বাম পা ধোয়া ও মোজা পরা উত্তম নয়। ৩০
৪. মোজা পরার সময় ‘এর উপর মাসাহ করব’ বা ‘এতদিন মাসাহ করব’ এমন কোন নিয়ত শর্ত বা জরুরী নয়।৩১
৫. ওযু করার পরই মোজা পরলে তার উপর মাসাহ করা যায়। তায়াম্মুম করার পর মোজা পরলে (পুনরায় পানি পেলে ও ওযু করলে সেই সময়) মাসাহ্ করা যায় না। পক্ষান্তরে পানি না পেলে এবং ওযু না করলে যতদিন তায়াম্মুম করবে ততদিন পায়ে মোজা থাকবে। এ সময় মোজার উপর মাসাহ্ করা বা মোজা খুলে ফেলা জরুরী নয়। যেহেতু তায়াম্মুমের সাথে পায়ের কোন সম্পর্ক নেই। ৩২
৬. যে সফরে নামাযের কসর বৈধ, সেই সফরে ৩ দিন ৩ রাত মাসাহ বৈধ।৩৩
ঘরে থেকে মাসাহ্ শুরু করার পর সফর করলে মুসাফিরের মত ৭২ ঘন্টাই মাসাহ করতে পারা যাবে। অনুরুপ সফরে মাসাহ শুরু করে ঘরে ফিরে এলে গৃহ্বাসীর মত কেবল ২৪ ঘন্টাই মাসাহ করা যাবে। ৩৪
৭. মাসাহর নির্ধারিত সময়কাল শেষ হয়ে যাওয়ার পর মাসাহ করে নামায পড়লে নামায হয় না। ৩৫
৮. ওযু করার পর মোজা পরে ওযু না ভাঙ্গার পূর্বেই যদি খুলে পুনরায় পরে নেওয়া হয়, তাহলে তাতেও মাসাহ্ করা চলবে। কিন্তু একবার মাসাহ্ করার পর মোজা খুলে ফেললে তারপর পুনরায় (ওযু থাকলেও) পরার পর আর মাসাহ চলবে না। কারণ, যে ওযুতে পা ধোওয়া হয় কেবল সেই ওযুর পরই মোজা পরলে তার উপর মাসাহ করা যাবে।৩৬
৯. মোজার উপর মাসাহ্ করার পর জুতো পরলে বা ডবল মোজা পরলে অথবা ডবল মোজা বা জুতোর উপর মাসাহ করার পর একটি মোজা বা জুতো খুলে ফেললে উভয় অবস্থাতেই মাসাহ বৈধ। তবে মাসাহ্র সময়কাল ধরতে হবে প্রথম অবস্থা থেকে। ৩৭
১০. মহিলারাও পুরুষদের মতই মাসাহ করবে।৩৮
১১. মোজা নামিয়ে পা চুলকালে বা পাথর আদি বের করলে যদি অধিকাংশ পা বের হয়ে যায়, তাহলে তার উপর আর মাসাহ বৈধ হবে না। মোজার তলায় হাত ভরলে বা সামান্য পা বের হয়ে গেলে মাসাহতে কোন প্রভাব পড়বে না। ৩৯
১২. মোজার উপর মাসাহ করার পর মোজা খুলে ফেললে ঐ ওযু নষ্ট হয়ে যায় না। তবে পুনরায় (পা না ধুয়ে ওযু করে) মোজা পরলে তার উপর মাসাহ চলে না। ৪০
১৩. ওযুর মধ্যে যতটা পা ধোয়া ফরয মোজাতে ততটা পা-ই ঢাকতে হবে; নচেৎ মাসাহ হবে না -এ কথার কোন দলীল নেই। অতএব ফাটা, কাটা ও ছেঁড়া মোজার উপরেও মাসাহ চলবে।৪১ তবে যদি অধিকাংশ পা বেরিয়ে থাকে, তাহলে সে কথা ভিন্ন।
১৪. ওযু না করে মোজা পরে তাতে মাসাহ করে ওযু করলে নামায হয় না। যেমন ক্ষতস্থানে মাসাহ ভুলে গিয়ে ওযু করে নামায পড়লেও নামায হয় না।৪২
১৫. ওযূর অঙ্গে যখমপট্টি বাঁধা থাকলে এবং তাতে পানি লাগলে রোগ বৃদ্ধির আশংকা থাকলে তার উপর দিয়ে ভিজা হাতে মাসাহ করবে।৪৩
পাগড়ি ও মেয়েদের উড়নার উপর মাসেহ করার বর্ণনা:
পুরুষের জন্য পাগড়িতে মাসেহ করা জায়েজ। অনুরূপ প্রয়োজনে সময় নির্ধারিত না করেই মেয়েদের উড়নার উপর মাসেহ করা জায়েজ। অধিকাংশ পাগড়ি ও উড়নার উপর মাসেহ করা যায় তবে তা ওযু অবস্থায় পরা উত্তম।আমর ইবনে উমাইয়্যা রা: হতে বর্ণিত, তিনি তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন তিন বলেন: আমি নবী সা: কে তাঁর পাগড়ি ও মোজার উপর মাসেহ করতে দেখেছি।৪৪
কাপড়ের মোজা, চামড়ার মোজা, পাগড়ি, মেয়েদের উড়নার উপর ছোট নাপাকি হতে ওযু করার সময় মাসেহ করা জায়েজ। ছোট নাপাকি ঘটার কারণ যেমন: পেশাব-পায়খানা করা, নিদ্রা যাওয়া ইত্যাদি। পক্ষান্তরে বড় নাপাকিতে পতিত হলে মাসেহ করার হুকুম নষ্ট হয়ে যায়, তখন সম্পণূর্ শরীর ধৌত করা জরুরী হয়ে পড়ে।
ব্যান্ডেজ-প্লাস্টার ইত্যাদির উপর মাসেহ করার বর্ণনা: ব্যান্ডেজ, প্লাস্টার ও পট্টি যতক্ষণ থাকবে তার উপর মাসেহ করা ওয়াজিব। যদিও সময় দীর্ঘায়িত হয় বা শরীর নাপাক হয়ে যায় বা তা ওযু ছাড়াই পরিধান করে।
শরীরের ক্ষত বা যখম যদি উম্মক্ত থাকে তবে তা পানি দ্বারা ধৌত করা ওয়াজিব। আর যদি ক্ষত স্থান পানি দ্বারা মাসেহ করায় ক্ষতি সাধিত হয় এবং পানি দ্বারা মাসেহ করতে অপারগ হয় তবে পানির পরিবর্তে তায়াম্মুম করবে। আর যদি ক্ষতস্থান ঢাকা থাকে তবে তা পানি দ্বারা মাসেহ করবে।
যে মুসাফিরের জন্যে খোলতে ও পরতে কষ্ট হয় তার জন্য মাসেহ করার কোন সময় সীমা নির্ধারিত নেই। যেমন: দমকল বাহিনী, দুর্ঘটনা ও দুর্যোগ হতে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা এবং মুসলমানদের কল্যাণ ইত্যাদিতে নিয়োজিত ডাক পিয়ন।৪৫
মোজার উপর মাসাহ করা নিয়ে বিদআতঃ
রাসূলুলাহ সাঃ ওযুর সময় কখনো কখনো খুফফাইন বা চামড়ার মোজার উপর মাসাহ করেছেন। এছাড়া তিনি কখনো মোজাবিহীন খালি পা মাসাহ করেননি। ওযু অবস্থায় মোজা পরা না থাকলে তিনি সর্বদা মুখমণ্ডল, দুই হাতের সাথে দুই পা ধৌত করতেন। কোনো কোনো সাহাবী চামড়ার মোজা পরিহিত অবস্থায় মোজার উপর মাসাহ করাকে কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন। তাঁদের মতে মোজা খুলে পদযুগল পুরোপুরি ধৌত করতে হবে, কোনো অবস্থাতেই মোজার উপর মাসাহ জায়েয নয়। যেহেতু রাসূলুলাহ সাঃ নিজে মোজার উপর মাসাহ করেছেন, সেহেতু তাঁর সুন্নাতের মোকাবিলায় এদের মতামতকে কেউ গ্রহণ করেননি।তাঁদের মতামাত বর্জন করাতে তাঁদের কোনো অসম্মান হয়েছে বলে কোনো ইমাম ও আলেম মনে করেননি। অপরদিকে তাকওয়া হিসাবে এটাকে গ্রহণ করার চেষ্টাও কেউ করেননি। কেউ বলেননি রাসূলুলাহ তো বলেননি যে, মোজার উপর মাসাহ করতেই হবে। মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয, তবে মোজা খুলে পা ধুয়ে ফেলা উত্তম ও বেশি তাকওয়া হবে। কাজেই সেই অর্থে আমরা এ সকল সাহাবীগণের মত গ্রহণ করি। কখনই কোনো মুসলমান মনে করতে পারে না যে, কেউ রাসূলুলাহ -এর চেয়ে বেশি তাকওয়া অবলম্বনকারী হতে পারে। তিনি যা করেছেন তা বর্জন করে কোনো তাকওয়া হয়, অথবা তিনি যা বর্জন করেছেন তা করলে তাকওয়া হয় এ কথা কোনো মুমিনের মনে ঘুণাক্ষরেও আসতে পারে না।৪৬
ইমাম আবু হানীফা মোজার উপর মাসাহ করা সুন্নাত ও ওয়াজিব বলেন: প্রখ্যাত তাবেয়ী ইমাম আবু হানীফা রাহ. [১৫০ হি:] বলেন: “খুফ্ফ বা চামড়ার মোজার উপর মাসাহ করা সুন্নাত।”৪৭
এই অর্থে তিনি একে ওয়াজিবও বলেছেন : “নিজ গৃহে অবস্থানকারী বা মুকীমের জন্য এক দিন এক রাত ও মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত্রি মোজার উপর মাসাহ করা ওয়াজিব বলে আমরা স্বীকার করি।”৪৮
অর্থাৎ, মোজার উপর মাসাহ করা একটি সুন্নাত সম্মত জায়েয কাজ। একে জায়েয বলে গ্রহণ করা ওয়াজিব। মাসাহ না করে মোজা খুলে পা ধোয়াকে বেশি তাকওয়া মনে করা বা মাসাহ করাকে না-জায়েয মনে করা খেলাফে সুন্নাত।
গবেষণা ও প্রচারেঃ
বাংলাদেশ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ও বাংলাদেশ ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার,
যোগাযোগঃ ০১৭৪২৩৪৪১০৭
উৎসঃ১. ফাতহুল বারী: খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৮৫।
২. মিশকাতুল মাসাহবী/তানবীরুল মেশকাত: পৃ: ৬৫৬, হা: ৪৮০ এর ব্যাখ্যা
৩. মির‘আতুল মাফাতীহ ২/২১২।
৪. ইবন দুরাইদ, জামহারাতুল লুগাহ, তাবি., ২খ. ২৫৮ পৃ:
৫. মিশকাতুল মাসাহবী/তানবীরুল মেশকাত: পৃ: , হা: এর ব্যাখ্যা
৬. মির‘আতুল মাফাতীহ ২/২১২।
৭. ছাহীহ আল বুখারী ১ খ., ৮৫ পৃ:,ইবন খুযায়মাহ, ১ খ., ৯৫ পৃ:, , ইবন হিববান ৪ খ., ১৫, পৃ:, সালিক ,১ খ., ৩৩ পৃ:
৮. ছাহীহ আল-বুখারী, ১ খ., ১৫১ পৃ:
৯. ছহীহ: আবূ দাঊদ ১৬৪, তিরমিযী ৯৮, গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) অধ্যায়ঃ পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة),হাদীছ নম্বরঃ ৫২২। হাদিছের মানঃ ছহীহ (Sahih)
১০. আত-তিরমিযী, ১ খ., ১৫৯ পৃ:, নাসায়ী ১২৭, ইরওয়া ১০৬।
১১. ইবন হিববান, ৪ খ. ১৫৮পৃ., আহমাদ, ৫ খ. ২১৫পৃ:
১২. ইবন আবী শায়বাহ , ১ খ. ১৬৭ পৃ:
১৩. (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্) ছাহীহ: আবূ দাঊদ ১৫৯, তিরমিযী ৯৯, ইবনু মাজাহ্ ৫৫৯, ইরওয়া ১০১, মিশকাতুল মাসাবীহ/মিশকাত: ৫২৩ । হাদিসের মানঃ ছাহীহ (Sahih)
১৪. আল-জাওযী, ইবনুল কাইয়্যিম, যাদুল মা‘আদ, কুয়িত, ১৪০৭ হি:, ১খ., ২৫৬ পৃ:
১৫. আল-জাওযী, ইবনুল কায়য়্যিম, তরীকুল হিজরাতায়িন ওয়া বাবুস সা‘আদাতায়িন, আদ-দাম্মাম, ১৪১৪ হি: ১খ. ১২৫পৃ:
১৬. ইগাছাতিল লুহফান, বায়রূত, ১৩৯৫ হি:, ১খ. ১৬৩ পৃ:
১৭. ইবনে কুদামা, আল মুগনি ,খন্ড ১ , পৃষ্ঠা ৩৭৬।
১৮. বাদাইউস সানাইয়ী , খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১০।
১৯. তিরমিযী ,আস-সুনান, খন্ড ১,পৃষ্ঠা ১৬৯ ,তাহকীক ,আহমাদ শাকের । (প্রকাশক ,দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বইরুত, লেবানন।
২০. বুখারী ২০৬, মুসলিম, সহীহ ২৭৪নং
২১. তিরমিযী, নাসাঈ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, মিশকাত ৫২০নং
২২. ফাতাওয়া ফিল মাসহি আলাল খুফফাইন, ইবনে উসাইমীন ৩নং
২৩. মুসলিম, সহীহ ২৭৬, নাসাঈ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫১৭, ৫২০।
২৪. ফাতাওয়া ফিল মাসহি আলাল খুফফাইন, ইবনে উসাইমীন, ইবনে উসাইমীন ৮-৯পৃ:, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১/২৩৬
২৫. ফাতাওয়া ফিল মাসহি আলাল খুফফাইন, ইবনে উসাইমীন ১৩নং
২৬. ছহীহ: আবূ দাঊদ ১৬২, দারাকুত্বনী ৭৮৩। দারেমী, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ, মিশকাত ৫২৫নং মিশকাত হা/৫২২, ৫২৫ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘মোযার উপরে মাসাহ’ অনুচ্ছেদ-৯, মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৮।
২৭. মুসলিম, নাসাঈ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫১৭, ৫২০।
২৮. ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৩৫
২৯. ঐ ১/২৩৪
৩০. ঐ ১/২৩৩-২৩৪
৩১. ফাতাওয়া ফিল মাসহি আলাল খুফফাইন, ইবনে উসাইমীন ৬নং
৩২. ফাতাওয়া ফিল মাসহি আলাল খুফফাইন, ইবনে উসাইমীন ৫নং
৩৩. ঐ ৭নং
৩৪. ঐ ৮নং
৩৫. ঐ ১০নং
৩৬. ঐ ১১নং
৩৭. ঐ ১২নং
৩৮. ঐ ১৬নং
৩৯. ঐ ১৭নং
৪০. ঐ ১৯নং
৪১. ঐ ৪নং
৪২. ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৩২, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৫/২৯৮
৪৩. ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/২৭৩; ইবনু মাজাহ, নায়লুল আওত্বার ১/৩৮৬, ‘তায়াম্মুম’ অধ্যায়।
৪৪. ছহীহ বুখারী হা: নং ২০৫
৪৫. ইসলামী ফিকাহ প্রথম খণ্ড.পৃ: ৮৬৫
৪৬. ইবনু হাজার , ফাতহুল বারী২/৩০৫-৩০৯, আব্দুর রাজ্জাক সানআনী, আল-মুসান্নাফ ১/১৮-২৮, ইবনু আবী শাইবা, আল-কিতাবুল মুসান্নাফ ১/১৬৯-১৭০, মুল্লা আলী কারী, শারহু আল-ফিকহুল আকবার, পৃ: ১০৬, ৩০৪
৪৭. মুল্লা আলী কারী, শারহু আল-ফিকহুল আকবার, পৃ: ৩০৪
৪৮. মুল্লা হুসইন ইবনু ইসকান্দার হানাফী, আল-জাউহারুল মুনীর ফী শারহি ওয়াসিয়্যাতি আবী হানীফ, পৃ: ২০