
বর্তমান শহুরে জীবনে নাগরিকদের নানা শারীরিক সমস্যা লেগেই থাকে। আর এসব সমস্যার অন্যতম কারণ শারীরিক পরিশ্রমহীনতা ও বাজে খাদ্যাভাস। এসব বিষয় বিবেচনা করে ১৫টি পয়েন্ট থাকছে এ লেখায়। যেগুলো মেনে চললে তাৎক্ষণিকভাবেই সুস্বাস্থ্যের দিকে একধাপ অগ্রসর হবেন আপনি। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে রিফাইনারি২৯। চিনি/কৃত্রিম চিনি বর্জন করুন : চিনির ক্ষতিকর দিক আমরা অনেকেই জানি। আর তাই অনেকেই চিনির বদলে কৃত্রিম চিনি খাওয়া শুরু করেছেন। কিন্তু এসব কৃত্রিম জিনিস খাওয়ার বদলে মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাস কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করাই ভালো। একবারে সম্ভব না হলে ধীরে ধীরে চেষ্টা করা যেতে পারে। পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ঘুমান : ঘুমের গুরুত্ব অপরিসীম। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে তা নানা মানসিক ও শারীরিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ঘুম সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন : নানা কাজের ফলে আপনার হাত ময়লা হয়ে যেতে পারে। আর তাই এসব কাজ শেষ হলে আপনার হাত ধোয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপাতদৃষ্টিতে নির্দোষ কাজ যেমন, টাকা-পয়সা গোনার পরও হাত ধোয়া উচিত। এ ছাড়া ঘরের বা বাইরের কোনো জিনিস ধরার পরে হাত ধোয়া উচিত। উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন : খাবার আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে তা আদতে আপনার উপকারেই আসবে। খাবারের তালিকায় রাখুন ফলমূল ও সবজিসহ নানা বৈচিত্র্যময় খাবার। ভালো থাকার জন্য ১৫টি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন। পিপাসার্ত থাকবেন না : প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা আপনার সুস্বাস্থ্যের অন্যতম চাবিকাঠি। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন। জগিং করুন : দৌড়ানোর মতো ভালো ব্যায়াম আর হয় না। দৌড়ের প্রভাব সারা দেহেই পড়ে। আর বহু রোগের খপ্পর থেকে দূরে থাকার জন্যও এটা কাজ করে। হৃদরোগ দূরে রাখতে এর তুলনা হয় না। এ ছাড়া মাত্র পাঁচ মিনিটের দৌড়ে আপনার আয়ু বেড়ে যাবে বলে জানা গেছে এক গবেষণা থেকে। দইজাতীয় খাবার খান : দইয়ের মতো যেসব খাবারে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া রয়েছে, এসব খাবার বেশি করে খান। এতে আপনার দেহ যেমন প্রাকৃতিকভাবে পরিষ্কার হবে তেমন দেহের বিষও দূর হবে। খাদ্যতালিকায় রাখুন ভিটামিন বি : ভিটামিন বি-এর বহু উপকারিতা রয়েছে। এটি বহু খাবারেই পাওয়া যায়। ভিটামিন বি-সমৃদ্ধ এসব খাবার রাখুন আপনার খাদ্যতালিকায়। অ্যালকোহল বর্জন করুন : অ্যালকোহল আপনার দৈনন্দিন ক্যালরির সঙ্গে যোগ করে বাড়তি ক্যালরি। আর এর বাজে প্রভাব পড়ে হরমোনের ওপরেও। তাই নানা শারীরিক প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে বর্জন করতে হবে এ অ্যালকোহল। ননফ্যাট দই আবশ্যক নয় : অনেকেই দইয়ের ফ্যাটের জন্য চিন্তিত থাকেন। ফলে বাজার থেকে ননফ্যাট দই খাওয়ায় আগ্রহী হন। কিন্তু বাস্তবে এসব ননফ্যাট দইয়ের উপকারিতা প্রমাণিত হয়নি। জানা গেছে, স্বাভাবিক দই দেহের জন্য উপকারী। খাবারের পাত্রের দিকে নজর দিন : খাবারের পাত্রের আকার ও রং আপনার খাবারের মাত্রা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে। গবেষণায় দেখা গেছে, খাবারের পাত্র ছোট রাখলে মানুষ কম খেতে আগ্রহী হয়। অন্যদিকে বড় পাত্রে বা থালায় খাবার খাওয়া হলে বেশি খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। খাবার দূরে রাখুন : হাতের কাছে খাবার রাখলে তা আপনার খাদ্যাভাসে প্রভাব বিস্তার করে। এতে মানুষ বেশি খাবার খেতে আগ্রহী হয়। অন্যদিকে খাবার সহজলভ্য না হলে তা খেতে মানুষ কম আগ্রহী হয়। তাই খাবার যথাসম্ভব দূরে রাখলে আপনার খাওয়ার পরিমাণ কমে যেতে পারে। লক্ষ্য নির্ধারণ করুন : আপনার দেহের ওজন কম বা বেশি-যাই হোক না কেন, তা স্বাভাবিক পর্যায়ে আনার জন্য একটি মাত্রা নির্ধারণ করুন। খাবারের মাত্রা নির্ধারণ করুন এবং বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখুন। ভিনেগারের বন্ধু হোন : ভিনেগার নানা বিকল্প চিকিৎসার কাজে লাগে। রক্তের চিনি নিয়ন্ত্রণে এটি ভূমিকা রাখে। নানা খাবারের সঙ্গে ভিনেগার ব্যবহার করা যায়। ডেসার্ট নিয়ে নতুন করে চিন্তা করুন : খাবার শেষে মিষ্টি কিছু খেতে অনেকেই পছন্দ করেন। খেয়াল রাখতে হবে, এটি যেন হয় স্বাস্থ্যকর খাবার। প্যাকেটজাত অস্বাস্থ্যকর খাবারের বদলে মিষ্টি ফল বা অনুরূপ পুষ্টিকর খাবার, জুস ইত্যাদি রাখতে পারেন আপনার খাদ্যতালিকায়। প্রচুর আয়রণ থাকে যা হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে, ফলস্বরূপ রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া প্রতিরোধ হয়। উচ্চ রক্তচাপ : কলাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে এবং লবণ কম থাকে যা উচ্চরক্তচাপ ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা প্রায় ৪০% কমিয়ে দেয়। কোষ্ঠকাঠিন্য : কলাতে যথেষ্ট ফাইবার থাকে তাই রেগুলার কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাবেন। হ্যাংওভার : যারা মাদকাসক্ত তাদের জন্য কলার সাথে মধু এবং দুধ মিশিয়ে খেলে আসক্তি পরবর্তি ইফেক্ট কমে যাবে। কলা আমাদের পাকস্থলিকে কার্যক্ষম করতে সহায়তা করে, মধু রক্ত সুগার বৃদ্ধি করে শক্তি যোগায় আর দুধ পুরা শারীরিক ব্যবস্থাপনাকে সচল রাখতে সাহায্য করে। বুকে জ্বালা-পোড়া : যাদের গ্যাস্ট্রিক বা আলসার রয়েছে, যারা বুকে জ্বালা পোড়া অনুভব করেন তাদের জন্য কলা প্রাকৃতিক এন্টাসিড হিসাবে কাজ করে। তাই গ্যাস্ট্রিকের রোগীদের নিয়মিত কলা খাওয়া উচিত। পোকামাকড়ের কামড় : কোথাও পোকামাকড় কামড় দিলে কোনো মলম দেবার আগেই যদি কলা সেই জায়গাতে দেয়া যায়, তাহলে লাল হয়ে ফুলে যাওয়া ভাবটা কমে যায়। অতিরিক্ত ওজন : কলা অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। কলাতে পর্যাপ্ত শক্তি বর্ধনকারী সুগার রয়েছে যা একই সাথে ক্ষুধা নিবারণ করে এবং অতিরিক্ত ওজন থেকে রক্ষা করে। তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফাস্ট ফুড না খেয়ে কলা খান। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ : গর্ভবতী মহিলাদের শারীরিক ও মানসিক যে চাপের জন্য উচ্চতাপমাত্রা হয়ে থাকে সেটা কলা খেলে ঠাণ্ডা এবং নিয়ন্ত্রণে আসে। ধূমপান ও টোব্যাকো আসক্তি : যারা ধূমপায়ী তাদের ধূমপান ত্যাগ করার জন্য কলা অন্যতম উপকারী ফল। কলাতে ভিটামিন বি-৬, বি-১২, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম থাকে যা নিকোটিনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীরকে রক্ষা করে এবং ধূমপান ত্যাগের জন্য শরীরকে তৈরি করে। অতিরিক্ত চাপ : কলাতে পটাশিয়াম রয়েছে যা আমাদের ব্রেইনে অক্সিজেন সরবরাহতে সাহায্য করে, পানির সাম্যতা নিয়ন্ত্রণ করে। যখন আমরা কাজের জন্য অতিরিক্ত চাপের মধ্যে থাকি তখন পটাশিয়াম লেভেল কমে যায় তাই কলা খেলে অতিরিক্ত চাপের সময়ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা যায়। কলাকে বিভিন্ন রোগের প্রাকৃতিক ঔষধ বলা হয়। একটি আপেলের সাথে তুলনা করে দেখা গেছে যে, কলাতে প্রায় চারগুণ বেশি আমিষ, দুইগুণ বেশি শর্করা, তিনগুণ বেশি ফসফরাস, পাঁচ গুণ বেশি ভিটামিন-এ, আয়রণ, ভিটামিন ও অন্যান্য খনিজ উপাদান রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম।