ঈদুল আজহার ত্যাগের মহিমা সর্বস্তরে প্রতিফলন প্রয়োজন

পবিত্র জিলহজ্ব মাস চলছে। এ মাসের ১০ তারিখ পবিত্র ঈদুল আজহা। এদিনে বাংলাদেশের মুসলমানরা মহাসমারোহে পশু কুরবানি করবেন। শুধু বাংলাদেশই নয় সারাবিশ্বের মুসলমানরা জিলহজ্ব মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে হজরত ইবরাহিমের সুন্নত হিসেবে প্রিয়বস্তু তথা পশু কুরবানি করে তাদের ত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে থাকেন। হাজার হাজার বছর ধরে এ ধরনের কুরবানি চলে আসছে। কুরবানি অর্থ হচ্ছে ত্যাগ, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে স্যাক্রিফাইজ, ‘Sacrifice’. কুরবানির আর একটি অর্থ ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ। আর যে কোনো কাজেই কুরবানি তথা ত্যাগের মাধ্যমে কোনো কিছু অর্জন করা যায়। তেমনিভাবে কুরবানি ও ত্যাগের মাধ্যমেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে হবে। এটাই ইসলামের শিক্ষা। ইসলাম ত্যাগ ও কুরবানির শিক্ষাই দিচ্ছে মুসলমান তথা মানবজাতিকে।


পবিত্র ঈদুল আজহার সময় পশু কুরবানির যে সুন্নত তা হচ্ছে মূলত প্রতীকি। হজরত ইবরাহিম (আ.) কুরবানির ব্যাপারে আল্লাহর পথে যে ত্যাগ ও কুরবানির নজির স্থাপন করেছিলেন তার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেই আমাদেরকে পশু কুরবানি করতে হয়। কারণ আমরা যে পশু কুরবানি করি তার রক্ত বা গোশত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। আল্লাহ তাঁর কুরআনে বলেছেন ‘আল্লাহর কাছে কুরবানির গোশত ও রক্ত পৌঁছায় না। বরং তার কাছে পৌঁছায় তাকওয়া। আর তাকওয়ার মূল অর্থ হলো খোদাভীতি। আমরা কতটুকু খোদাভীতি অর্জন করতে পারলাম তাই আল্লাহ অবহিত হতে চায়। তাকওয়ার অধিকারী তথা তাকওয়াবান ব্যক্তিকে মুত্তাকী বলা হয়। খোদার ভয় যার মধ্যে পয়দা হয় তাকেই মুত্তাকী বলা হয়। এককথায় বলা যায় মুত্তাকী ব্যক্তি সর্বদা আল্লাহকে ভয় করে জীবন যাপন করবে। একজন মুত্তাকী যে কোনো কাজ আল্লাহকে ভয় ও চিন্তা ভাবনা করে সম্পাদন করবে। মুত্তাকী ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজনীতি সবকিছুই করবে আল্লাহকে হাজির-নাজির জেনে। প্রতিটি কাজ করার সময় সে চিন্তা করবে আল্লাহ তাকে দেখছেন। সে যদি কোনো অনৈতিক ও অনিয়ম করেন তা আল্লাহ দেখছেন এবং তার জন্য আল্লাহর কাছে জওয়াবদিহী করতে হবে। এ ভীতি একজন তাকওয়াবান তথা মুত্তাকী ব্যক্তির মধ্যে কাজ করবে। আর এধরনের মুত্তাকী কোনো মুসলমান ব্যক্তির পক্ষে অনৈতিক ও অনিয়ম করা সম্ভব নয়। আর এ কুরবানির মাধ্যমেই আল্লাহতায়ালা মুত্তাকী তথা খোদাভীতিসম্পন্ন লোক তৈরি করতে চান। আর এ ধরনের মুত্তাকী তথা খোদাভীতিসম্পন্ন মানুষদের মাধ্যমেই একটি আদর্শ ও নৈতিকতাসম্পন্ন সমাজ ও রাষ্ট্র তৈরি হতে পারে। মুত্তাকীদের দ্বারা গঠিত একটি সমাজ ও রাষ্ট্রে অনিয়ম ও অনৈতিক কাজ চলতে পারে না। এ ধরনের সমাজ ও রাষ্ট্র সঠিক নিয়ম ও আইন-কানুন দ্বারা স্বেচ্ছায় পরিচালিত হয়। আর এভাবে মুত্তাকীদের দ্বারা পরিচালিত সমাজ ও রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা পাওয়া স্বাভাবিক। আজ সারা বিশ্বে দুর্নীতি বন্ধ ও রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন সংগ্রাম চলছে তার সঠিক সমাধান হতে পারে একটি মুত্তাকীদের দ্বারা গঠিত তাকওয়াভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। মুসলমানরা যদি ঈদুল আজহার ত্যাগ ও কুরবানি থেকে শিক্ষা নিয়ে তাকওয়া অর্জন করে মুত্তাকী হয়ে এই ত্যাগের আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে পারে তাহলেই তা ঈদুল আজহা ও পশু কুরবানির সকল কর্মকাণ্ড স্বার্থক ও ফলপ্রসূ হতে পারে। আমাদেরকে ঈদুল আজহা ও কুরবানির ত্যাগ ও শিক্ষাকে পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করার তওফিক কামনা আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করা উচিত। আল্লাহ আমাদের কুরবানিকে কবুল করে একটি তাকওয়াভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করার পথে অগ্রসর হওয়ার তওফিক দিক।