গুম ও খুন প্রসঙ্গে ইসলাম

দেশব্যাপী আতঙ্কের নাম গুম ও খুন। চার পাশের হত্যা-গুম-অপহরণ এ যেন প্রতিদিনের উৎকণ্ঠার নতুন রসদ। সম্প্রতি অপহরণের ভয়ে গাজীপুর ময়মনসিংহের দিকে স্কুলে যাচ্ছে না শিার্থীরা। ২৭ এপ্রিলের পর থেকে নারায়ণগঞ্জ টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। টিভি, রেডিও কিংবা পত্রিকার প্রায় প্রতিদিনের শিরোনাম গুম ও খুন।
এ বিষয়ে আল কুরআনের সূরা বনি ইসরাইলে ৩৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তোমরা তাকে হত্যা করো না।’
সাম্প্রতিক সময়ে গুম, খুন এবং অপহরণ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সঙ্গত কারণেই জনমনে সৃষ্টি হয়েছে গভীর উদ্বেগ, অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার বোধ। গুম ও অপহরণ নিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা কোনোভাবেই স্বস্তিকর নয়।


গুম ও অপহরণের ঘটনাগুলোর প্রতিকারহীনতা বিরাজমান পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অসহিষ্ণুতাকে আরো নাজুক করে তুলেছে। অপহৃত মানুষের তালিকার দিকে তাকালে দেখা যায়, দলীয় পরিচয়ের বাইরেও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ এর শিকার হয়েছেন। বেশির ভাগ েেত্র দেখা যাচ্ছে অপহরণের পেছনে জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধ, পারিবারিক শত্রুতা, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব, নেতৃত্বের কোন্দল, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও মুক্তিপণ আদায়সহ নানাবিধ কারণ হয়েছে। এই দুঃসহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি ধর্মীয় নেতা, সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীসহ সংশ্লিষ্টদের বিশেষ মনোনিবেশ প্রয়োজন। ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়। পরস্পরে ঝগড়াবিবাদ কিংবা মতানৈক্য থাকলেও যুগ যুগ ধরে নানা মতাদর্শের মানুষ এ দেশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। কিন্তু হঠাৎ তারা কেন এভাবে অসহিষ্ণু ও হিংস্র হয়ে উঠল তা অবশ্যই গভীর পর্যবেণ ও বিচার-বিবেচনার দাবি রাখে। অভিজ্ঞতা বলে, এসব েেত্র মানুষের মাঝে ধর্মীয় বাণীর ব্যাপক প্রচার, ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রতকরণ ও অপরাধ দমনে দ্রুত আইনের কঠোর প্রয়োগই পারে এ অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে।
গুম ও হত্যা প্রসঙ্গে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে বিচারের ফয়সালা হবে, তা হলো হত্যা সম্পর্কিত।’ (বোখারি শরিফ)
ইসলাম সব ধরনের গুম, খুন, অপহরণ ও বিনা বিচারে মানুষ হত্যা কোনোভাবেই সমর্থন করে না। কোনো মুসলমানের জন্য বৈধ নয় সাময়িক উত্তেজনা কিংবা পার্থিব কোনো মোহের বশবর্তী হয়ে গুম, অপহরণ, খুন, গুপ্তহত্যার মতো কাজ। একটি অবৈধ হত্যাকাণ্ড গোটা মানবজাতিকে হত্যার শামিল। কুরআন ও হাদিসে এ কাজকে জঘন্য অপরাধ বলে সাব্যস্ত করার পাশাপাশি তা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
ইসলামে সব ধরনের ফেতনা-ফ্যাসাদ, মানবিক বিপর্যয় ও সমাজে ত্রাস সৃষ্টিকারী কাজকে হত্যার চেয়ে জঘন্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তাই আজ সময় এসেছে সামাজিকভাবে এ ধরনের জঘন্যতম কাজের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার। কারণ, এসব কাজ সমাজে ধ্বংস ডেকে আনে।

আলম শামস
লেখক : সাংবাদিক