মুহাম্মদ হামিদুল ইসলাম আজাদ
প্রিয় মুসলিম ভাই, অনেক মানুষ ঈদে নানা ধরণের ভুল-ভ্রান্তিতে পতিত হয় । এগুলো থেকে আমাদেরকে সতর্ক থাকা আবশ্যক । তন্মধ্যে :
১. সম্মিলিত তাকবীর : একজন তাকবীর পাঠ করবে আর অন্যরাও সমস্বরে তাকবীর পাঠ করবে - এটা ঠিক নয় । (বরং প্রত্যেকেই নিজে নিজে উঁচু আওয়াজে তাকবীর পাঠ করবে - এটাই সুন্নত)
২. ঈদের দিন হারাম - নিষিদ্ধ কর্মে লিপ্ত হওয়া : গান শোনা, ফিল্ম দেখা, বেগানা নারী - পুরুষের সাথে মেলামেশা করা ইত্যাদি পরিত্যাগ করা ।
৩. কোরবানির পশু জবেহ করার পূর্বে চুল , নখ ইত্যাদি কর্তন করা : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানি দাতাকে জিলহজ মাসের আরম্ভ থেকে কোরবানি করা পর্যন্ত তা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন ।
৪. ঈদের দিনে কবর যিয়ারত করা : কবর যিয়ারত করা শরিয়ত সমর্থিত একটি নেক আমল । কিন্তু ঈদের দিনে কবর জিয়ারত করার কোনো বিশেষত্ব নেই । ঈদের দিন কবর যিয়ারত করাতে বিশেষ সাওয়াব আছে বলে বিশ্বাস করা বা ঈদের দিনে কবর যিয়ারতকে অভ্যাসে পরিণত করা বা একটা প্রথা বানিয়ে নেয়া শরিয়তসম্মত নয় । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : لا تجعلوا قبري عيداً
“তোমরা আমার কবরে ঈদ উদযাপন করবে না বা ঈদের স্থান বানাবে না...” । আবু দাউদ: ২০৪২
৫. গান - বাদ্য : ঈদের দিনে এ গুনাহের কাজটাও বেশি হতে দেখা যায় । গান ও বাদ্যযন্ত্র যে শরিয়তে নিষিদ্ধ এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই । আবার যদি হয় অশ্লীল গান তাহলে তো তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোনো ভিন্নমত নেই । হাদিসে এসেছে
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ليكون أقواما من أمتي يستحلون الحر والحرير والخمر والمعازف ». رواه البخاري تعليقا بصورة الجزم
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমার উম্মতের মাঝে এমন একটা দল পাওয়া যাবে যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল (বৈধ) মনে করবে । বুখারি: ৫৫৯০
৬. পুরুষ কর্তৃক মহিলার বেশ - ধারণ করা ও মহিলা কর্তৃক পুরুষের বেশ ধারণ : পোশাক - পরিচ্ছদ, চাল - চলন ও সাজ - সজ্জার ক্ষেত্রে পুরুষের মহিলার বেশ ধারণ ও মহিলা পুরুষের বেশ ধারণ করা হারাম । ঈদের দিনে এ কাজটি অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় । হাদিসে এসেছে
عن ابن عباس رضى الله عنهما عن النبي صلى الله عليه وسلم: « أنه لعن المتشبهات من النساء بالرجال والمتشبهين من الرجال بالنساء » .رواه أبو داود وصححه الألباني في صحيح أبي داود
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সকল মহিলাকে অভিসম্পাত করেছেন যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে এবং ঐ সকল পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন যারা মহিলার বেশ ধারণ করে । আবু দাউদ: ৪০৯৭
৭. অপচয় ও সীমালঙ্ঘন করা : এমন খরচ করা, যার পিছনে কোনো উদ্দেশ্য নেই, যার কোনো ফায়দা নেই, আর না আছে যার কোনো উপকার ।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন : وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ
“আর তোমরা অপচয় করো না । নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের ভালবাসেন না । সূরা আনআম, আয়াত: ১৪১
৮. কোরবানির শিক্ষাকে ব্যক্তি ,সমাজ ,ও রাষ্ট্রিয় জীবনে বাস্তবায়নকরা ।
৯. ঈদের সম্ভাষণ হিসাবে " ঈদ মোবারাক" না বলা সহিহ হাদিসের আলোকে নিচে দেয়া হলো
ঈদের দিনে সম্ভাষণ জানানোর জন্য একটি বহুল প্রচলিত শব্দ হচ্ছে "ঈদ মোবারক"। এটি বলা যাবে কি যাবেনা এ প্রসঙ্গে না এসে আমরা দেখব ঈদের সম্ভাষণের জন্য মুহাম্মদ (সঃ) ও তাঁর সাহাবীরা কি বলতেন ?
ঈদের দিনে সম্ভাষণ জানানোর জন্য একটি বহুল প্রচলিত শব্দ হচ্ছে "ঈদ মোবারক"। এটি বলা যাবে কি যাবেনা এ প্রসঙ্গে না এসে আমরা দেখব ঈদের সম্ভাষণের জন্য মুহাম্মদ (সঃ) ও তাঁর সাহাবীরা কি বলতেন ?
এ বিষয়ে ফিক হুস সুন্নাহ তে একটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে যাকে হাফেজুল হাদীস ও হাফিজুদ দুনিয়া ইবনু হাজার আস্কালানী (রাহঃ) হাসান বলেছেন এবং আলবানী রাহঃ সহীহ বলেছেন। রেওয়ায়েত টি হল রাসুল ছাঃ এর সাহাবীরা যখন ঈদের দিন পরস্পর মিলিত হতেন তখন বলতেন " تقبل الله منا ومنك " (তাকাব্বালা ল্লাহু মিন্না ও মিন কা) অর্থাৎ "আল্লাহ আমাদের এবং তোমার পক্ষ থেকে আজকের আনন্দকে কবুল করুন"! [তামামুল মিন্নাহ,আল বানী, ১/৩৫৪]
রাসুলের পক্ষ থেকে সুন্নাত পাওয়ার পরেও ঈদ মোবারক বলা কতটা যুক্তিসঙ্গত ? আল্লাহ আমাদের তাঁর রাসুলের সুন্নাতকে জীবিত করার তাওফিক দিন !
মনে রাখবেন, রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন,
"কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে, যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে, তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির চেহারা উজ্জ্বল করে দিন, যে আমার কোনো হাদীস শুনেছে। অতঃপর অন্যের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।’[-সুনানে আবু দাউদ ২/৫১৫]
ইসলামের শাশ্বত বাণী সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া সকল মুসলিমের দায়িত্ব। সুতরাং শেয়ার ও ট্যাগ করতে ভুলবেন না। ☛
নিয়মিত অর্থসহ কুরআন এবং সহিহ হাদিস পড়ুন আর ইসলাম প্রচারে আমদেরকে সাহায্য করুন।
আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন.....{ আমিন }
মুসলিম ভাইদের প্রতি আহ্বান : আপনারা উপরে বর্ণিত নেক আমল ছাড়াও অন্যান্য নেক আমলের প্রতি যত্নশীল হোন । যেমন, আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা - সাক্ষাত করা, হিংসা - বিদ্বেষ পরিহার করা, একে অপরকে মহব্বত করা এবং গরীব ও ফকীরদের উপর মেহেরবান হওয়া এবং আনন্দ উৎসবকে তাদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়া ইত্যাদি । আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি আমাদেরকে তাঁর পছন্দনীয় কথা, কাজ ও আমল করার তাওফিক দান করুন । আমীন ।
বাংলাদেশ ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার
http://bangladeshislamidawahcenter.blogspot.com