অধঃপতনের যুগে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা নিয়ে যে সকল মনীষী পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন, পার্থিব লোভ-লালসা ও মতার মোহ যাদের ন্যায় ও সত্যের আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র পদস্খলন ঘটাতে পারেনি; যারা অন্যায় ও অসত্যের নিকট কোনো দিন মাথা নত করেননি, ইসলাম ও মানুষের কল্যাণে সারাটা জীবন যারা পরিশ্রম করে গিয়েছেন, সত্যকে আঁকড়ে থাকার কারণে যারা জালেম সরকার কর্তৃক অত্যাচারিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত; এমনকি কারাগারে নির্মমভাবে প্রহৃত হয়েছেন, ইমাম আবু হানিফা (র.) তাঁদের অন্যতম। দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জিহাদি জীবন তিনি কখনো সরকারি কোনো অনুদান গ্রহণ করেননি। নিজের ব্যক্তিত্ব ও স্বাধীনতাকে ঊর্ধ্বে স্থান দিতেন তিনি। উমাইয়া বংশীয় খলিফাদের অত্যাচার, নিষ্ঠুরতা ও অমানবিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আস্তে আস্তে সারা দেশে তীব্র আন্দোলনের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে মারওয়ানের শাসনামলে আব্বাসীয় খিলাফতের দাবিদারদের আন্দোলন ছিল তুঙ্গে।
এ আন্দোলন সমগ্র ইরাক ও কুফায় উমাইয়া বংশীয় খলিফা মারওয়ানের সিংহাসন কাঁপিয়ে তুলেছিল। ১২৯ হিজরি মারওয়ান তাঁর বিচণ আমলা ইয়াজিদ ইবনে ওমর ইবনে হুরায়রাকে কুফার গভর্নর নিযুক্ত করেন। ইয়াজিদ ইবনে হুরায়রা শাসনকার্যে ধর্মীয় নেতাদের উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন। তাই তিনি মতা ও অর্থের লোভ দেখিয়ে ধর্মীয় নেতাদের শাসনকার্যে জড়িত করার চেষ্টা চালান এবং ইতোমধ্যে কয়েকজনকে বড় বড় রাজকীয় পদও দান করেন। তখন সমগ্র ইরাক ও কুফায় ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর সুনাম, সততা ও জনপ্রিয়তা ছিল সর্বাধিক। ইয়াজিদ ইবনে হুরায়রা ইমাম আবু হানিফা (র.) কে প্রধান বিচারপতির (কাজী) পদ গ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানান। ইমাম আবু হানিফা (র.) বুঝতে পেরেছিলেন যে, এটা হলো উমাইয়া খিলাফতকে দীর্ঘায়িত করার একটি গভীর ষড়যন্ত্র। তিনি এটাও বুঝতে পেরেছিলেন যে, প্রাদেশিক জালিম গভর্নরদের অধীনে কাজীর পদ গ্রহণ করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। বিচারকার্যে উমাইয়া শাসকগণ প্রভাব ফেলতে পারে। তাদের অধীনে কাজীর পদ গ্রহণ করার অর্থ হবে সত্য ও ন্যায়কে জলাঞ্জলি দিয়ে মতা ও অর্থের মোহে উমাইয়া জালিম শাসকগোষ্ঠীর গোলামি করা। পূর্বেই বলা হয়েছে যে, তিনি সরকারি কোনো সাহায্য গ্রহণ করতেন না এবং অবৈধ মতা ও অর্থের লোভ-লালসা তাঁকে কোনো দিন স্পর্শ করতে পারেনি। তাই সত্যকে প্রকাশ করতে তিনি কাউকে কখনো ভয় করতেন না। ইয়াজিদ ইবনে হুরায়রার আমন্ত্রণ পেয়ে শুধু প্রত্যাখ্যানই করলেন না বরং সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, ‘প্রধান বিচারপতির পদ গ্রহণ করা তো দূরের কথা মোটা অঙ্কের বেতন দিয়ে ইয়াজিদ ইবনে হুরায়রা যদি মসজিদের দরজা জানালাগুলো গোনার মতো হালকা দায়িত্বও দেয় তথাপি এ জালেম সরকারের অধীনে আমি তা গ্রহণ করব না।’ এতে ইয়াজিদ ইবনে হুরায়রা প্তি হয়ে ইমাম আবু হানিফা (র.)-কে গ্রেফতার করে কারাগারে বন্দী করেন। এরপর কারাগারে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু এতেও তিনি রাজি না হওয়ায় কারাগারে প্রতিদিন তাঁকে বেত্রাঘাত করা হতো। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (র.) নির্যাতনের ভয়ে জালিম সরকারের নিকট মাথা নত করেননি। অবশষে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি মক্কায় চলে আসেন। ১৩১ হিজরিতে উমাইয়া শাসনের অবসান ঘটলে আব্বাসীয় খিলাফতের সূচনা হয়। ইমাম আবু হানিফা (র.) মক্কা থেকে কুফায় ফিরে আসেন। আব্বাসীয়গণ ইতঃপূর্বে আহলে বাইয়াতদের পে আন্দোলন করলেও, মতা লাভের পর আহলে বাইয়াতদের প্রতি খড়গহস্ত হয়ে ওঠেন এবং ধর্মীয় নেতাদের প্রতি নিষ্ঠুর ও অমানবিক নির্যাতন চালাতে শুরু করেন। আব্বাসীয়গণ তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী উমাইয়া বংশীয়দের প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছিল। এমন কি উমাইয়া খলিফাদের কবর খুঁড়ে তাঁদের অস্থি পাঁজর তুলে এনে জ্বালিয়ে ফেলেছিল। আব্বাসীয় বংশীয় খলিফা মনসুর সিংহাসনে বসে আহলে বাইয়াত ও আলেম সমাজের প্রতি অত্যাচারের স্টিম রোলার চালান। ১৪৫ হিজরিতে মুহাম্মদ নাফসে জাকিয়া খলিফা মনসুরের অনৈসলামিক ও অমানবিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং যুদ্ধে শহীদ হন। ইমাম মালেক (র.) ও ইমাম আবু হানিফা (র.)সহ প্রায় সকল ধর্মীয় নেতা মুহাম্মদ নাফসে জাকিয়ার পে ছিলেন। নাফসে জাকিয়া শহীদ হওয়ার পর তাঁর ভ্রাতা ইব্রাহীম বিদ্রোহের পতাকা স্বহস্তে তুলে নেন এবং তৎকালীন দীনদার মুসলমান ও আলেম সমাজ ইব্রাহীমের পতাকাতলে সমবেত হতে লাগলেন। জানা যায়, একমাত্র কুফা নগরেই বিশ ল মুসলমান মনসুরের বিরুদ্ধে মুহম্মদ ইব্রাহীমের পে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। ইমাম আবু হানিফা (র.) মুহাম্মদ ইব্রাহীমকে গোপনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিলেন এবং সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচুর অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন। যুগের নিষ্ঠুর ও জালেম মনসুর গোপনে বহু উপঢৌকন পাঠিয়ে ইমাম আবু হানিফা (র.) কে হাত করতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (র.) এগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। অবশেষে ১৪৬ হিজরিতে খলিফা মনসুর ইমাম আবু হানিফা (র.) কে বাগদাদে খলিফার দরবারে তলব করেন। তিনি খলিফার দরবারে উপস্থিত হলে তাঁকে প্রধান বিচারপতির পদ গ্রহণ করার অনুরোধ জানান। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (র.) জালেম সরকারের অধীনে এ পদ গ্রহণ করতে রাজি হলেন না। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এটা মনসুরের গভীর ষড়যন্ত্র। এছাড়া এ পদ গ্রহণ করার অর্থ হবে ন্যায়, ইনসাফ ও ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন দিয়ে জালেমের পূজারি করা। তাই ইমাম আবু হানিফা (র.) খলিফা মনসুরকে বললেন, ‘আমি প্রধান বিচারপতির পদ গ্রহণ করার যোগ্য নই।’ এতে খলিফা রাগান্বিত স্বরে বললেন, আপনি মিথ্যাবাদী। প্রত্যুত্তরে ইমাম সাহেব বললেন, ‘আপনার কথা যদি সত্যি হয় (অর্থাৎ আপনার কথানুযায়ী আমি যদি মিথ্যাবাদী হই) তাহলে আমার কথাই সঠিক। কারণ একজন মিথ্যাবাদী রাষ্ট্রের ‘প্রধান বিচারপতি’ পদের যোগ্য নয়।’ অতঃপর খলিফা মনসুর কোনো উত্তর দিতে না পেরে ক্রুদ্ধ হয়ে ইমাম আবু হানিফা (র.)কে গ্রেফতার করে কারাগারে বন্দী করার নির্দেশ দেন। কারাগারে বসেও ইমাম আবু হানিফা (র.) ফিকাহশাস্ত্রে তাঁর কঠোর সাধনা চালিয়েছিলেন। কারাগারে বসেই তিনি বিভিন্ন কঠিন মাসআলার জবাব দিতেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে শত শত মানুষ এসে কারাগারেই মাসআলা শিা লাভ করে যেতেন। ইমাম আবু ইউসুফ (র.) লিখেছেন, ইমাম আবু হানিফা (র.) কেবল কারাগারে বসেই ১২ লাখ ৯০ হাজারের অধিক মাসআলা লিপিবদ্ধ করেছিলেন। এরপর খলিফা মনসুর একদিন খাদ্যের সাথে বিষ মিশিয়ে দেন। ইমাম আবু হানিফা (র.) বিষক্রিয়া বুঝতে পেরে সিজদায় পড়ে যান এবং সিজদা অবস্থায়ই তিনি ১৫০ হিজরিতে এ নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করেন। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর মৃত্যুর সংবাদ বিদ্যুতের গতিতে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশের সর্বস্তরের লোকজন মৃত্যুর সংবাদ শুনে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে। কথিত আছে, তাঁর জানাজায় পঞ্চাশ হাজারের অধিক লোক অংশগ্রহণ করেছিল; কিন্তু লোকজন আসতে থাকায় ৬ বার তাঁর জানাজা পড়া হয়েছিল। তাঁর অসিয়ত অনুযায়ী বিজরান কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। শিক্ষা সাধনা ইমাম আবু হানিফা (র.) ৮০ হিজরি মোতাবেক ৭০২ খ্রিস্টাব্দে কুফা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আসল নাম হলো নু’মান। পিতার নাম ছাবিত এবং পিতামহের নাম জওতা। তাঁর বাল্যকালের ডাক নাম ছিল আবু হানিফা। তিনি ইমাম আজম নামেও সর্বাধিক পরিচিত। তাঁর পূর্বপুরুষগণ ইরানের অধিবাসী ছিলেন। পিতামহ জওতা জন্মভূমি পরিত্যাগ করে তৎকালীন আরবের সমৃদ্ধশালী নগর কুফায় এসে বাসস্থান নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ইমাম আবু হানিফা (র.) বাল্যকালে লেখাপড়ার কোনো সুযোগ পাননি। কারণ তখন কুফায় মারওয়ানী খিলাফতের যুগ। আবদুল মালেক ইবনে মারওয়ান ছিলেন খিলাফতের প্রধান এবং হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ ছিলেন ইরাকের শাসনকর্তা। দেশের ধর্মীয় শিাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ইমাম আবু হানিফা (র.) ১৪-১৫ বছর বয়সে একদিন যখন বাজারে যাচ্ছিলেন, পথিমধ্যে তৎকালীন বিখ্যাত ইমাম হজরত শা’বী (র.) তাঁকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, হে বালক, তুমি কি কোথাও লেখাপড়া শিখতে যাচ্ছ? উত্তরে তিনি অতি দুঃখিত স্বরে বললেন, ‘আমি কোথাও লেখাপড়া শিখি না।’ ইমাম শা’বী (র.) বললেন, ‘আমি যেন তোমার মধ্যে প্রতিভার চিহ্ন দেখতে পাচ্ছি। ভালো আলেমের নিকট তোমার লেখাপড়া শেখা উচিত।’ ইমাম শা’বী (র.)-এর উপদেশ ও অনুপ্রেরণায় ইমাম আবু হানিফা (র.) ইমাম হামমাদ (র.) ইমাম আতা ইবনে রবিয়া (র.) ও ইমাম জাফর সাদিক (র.)-এর মতো তৎকালীন বিখ্যাত আলেমগণের নিকট শিা লাভ করেন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কুরআন, হাদিস, ফিকাহ, ইলমে কালাম, আদব প্রভৃতি বিষয়ে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। জ্ঞান লাভের জন্য তিনি মক্কা, মদীনা, বসরা এবং কুফার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থানরত আলেমগণের নিকট পাগলের ন্যায় ছুটে গিয়েছিলেন। বিভিন্ন স্থান থেকে হাদিসের অমূল্য রতœ সংগ্রহ করে স্বীয় জ্ঞানভাণ্ডার পূর্ণ করেন। উল্লেখ্য যে, তিনি চার সহস্রাধিক আলেমের নিকট শিা লাভ করেছিলেন। ইমাম মালেক (র.)-এর নিকটও তিনি হাদিস শিা লাভ করেন। ইমাম মালেক (র.) যদিও বয়সের দিক থেকে তাঁর চেয়ে ১৩ বছরের ছোট ছিলেন; তথাপি ইমাম আবু হানিফা (র.) তাঁকে অশেষ সম্মান করতেন এবং ইমাম মালেক (র.) ও ইমাম আবু হানিফা (র.) কে শিকের ন্যায় সমমান দেখাতেন। আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের আদব-কায়দা এমনই হয়ে থাকে। শিকগণের প্রতি ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর এত ভক্তি শ্রদ্ধা ছিল যে তিনি নিজেই বর্ণনা করেছেন, ‘আমার শিক ইমাম হামমাদ (র.) যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন আমি তাঁর বাড়ির দিকে পা মেলে বসিনি। তার কারণ, আমার ভয় হতো শিকের প্রতি আমার বেয়াদবি হয়ে যায় কি না।’ কারো কারো মতে, ইমাম আবু হানিফা (র.) তাবেয়ী ছিলেন। সাহাবাগণের যুগ তখন প্রায় শেষ হলেও কয়েকজন সাহাবি জীবিত ছিলেন। ১০২ হিজরিতে তিনি যখন মদীনা গমন করেন তখন মদীনায় দুজন সাহাবি হজরত সোলাইমান (রা.) ও হজরত সালেম ইবনে সুলাইমান (রা.) জীবিত ছিলেন এবং ইমাম আবু হানিফা (র.) তাঁদের সাক্ষাৎ লাভ করেন। কিন্তু অনেকের মতে, তিনি কোনো সাহাবির দেখা পাননি। তবে তাবে, তাবেয়ী হওয়ার ব্যাপারে কোনো মতবিরোধ নেই। ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর শিকগণ প্রায় সবাই ছিলেন তাবেয়ী। ফলে হাদিস সংগ্রহের ব্যাপারে তাঁদের মাত্র একটি মধ্যস্থতা অবলম্বন করতে হতো। তাই তাঁর সংগৃহীত হাদিসসমূহ সম্পূর্ণ ছহীহ বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাফসির ও হাদিসশাস্ত্রে তাঁর অসাধারণ অভিজ্ঞতা ও পাণ্ডিত্য থাকা সত্ত্বেও ফিকাহশাস্ত্রেই তিনি সর্বাধিক খ্যাতি লাভ করেছেন। তিনি কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের ভিত্তিতে বিবিধ বিষয়ে ইসলামী আইনগুলোকে ব্যাপক ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করেছেন। বর্তমান বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মুসলমান হানাফি মাজহাবের অনুসারী। ফিকাহশাস্ত্রে তাঁর অকান্ত পরিশ্রম ও অবদানের জন্যই মুসলিম জাতি সত্যের সন্ধান অনায়াসে লাভ করতে পেরেছে। ফিকাহশাস্ত্রের উন্নতির জন্য তিনি ৪০ সদস্যবিশিষ্ট একটি সমিতি গঠন করেন। ইমাম আবু হানিফা (র.) ছিলেন সমিতির প্রধান। সমিতির সদস্যদের মধ্যে ইমাম জাফর সাদিক, হাব্বান, ইমাম মুহাম্মদ ইউসুফ, ইয়াহ ইয়া ইবনে আবি জায়েদা, ইমাম মুহাম্মদ, ইউসুফ ইবনে খালেদের নাম উল্লেখযোগ্য। ইসলামের বিভিন্ন আইন নিয়ে সমিতিতে স্বাধীনভাবে আলোচনা হতো। প্রত্যেকেই কুরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে নিজ নিজ মতামত ব্যক্ত করতেন। অতঃপর সর্বসম্মতিক্রমে সঠিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হতো এবং তা লিপিবদ্ধ করা হতো। সুদীর্ঘ ৩০ বছর কাল ইমাম আবু হানিফা (র.) ও অন্যদের আপ্রাণ চেষ্টা ও সাধনার ফলে ফিকাহশাস্ত্রের উন্নতি সাধিত হয়। তিনি তাঁর শিকতা জীবনে পৃথিবীতে হাজার হাজার মুফাচ্ছির, মুহাদ্দিস ও ফকীহ তৈরি করে গিয়েছেন। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে যারা ইসলামের ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন তাঁদের মধ্যে ইমাম মুহাম্মদ (র.), ইমাম আবু ইউসুফ (র.) ও ইমাম যুফার (র.) অন্যতম। ইমাম আবু হানিফার (র.) চরিত্র ছিল বহু গুণে গুণান্বিত। তিনি ছিলেন আত্মসংযমী, মহান চরিত্রবান, পরহেজগার, উদার, দানশীল, অতিশয় বিচণ এবং মুত্তাক্বিন। তিনি ছিলেন হিংসা, লোভ, ক্রোধ, পরনিন্দা ইত্যাদি থেকে পবিত্র। বিনা প্রয়োজনে কোনো কথা বলতেন না। তিনি সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর পর্যন্ত এশার নামাজের ওজু দিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করেছেন। এতে এটাই বোঝা যায় যে, তিনি সারারাত আল্লাহর ইবাদত, ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণায় মগ্ন থাকতেন। কতিপয় কর্মচারীর দ্বারা ব্যবসা পরিচালনা করতেন। ব্যবসায় যাতে হারাম অর্থ উপার্জিত না হয় সে জন্য তিনি কর্মচারীদের সব সময় সতর্ক করতেন। একবার তিনি দোকানে কর্মচারীদের কিছু কাপড়ের দোষ-ত্রুটি দেখিয়ে বললেন, ‘ক্রেতার নিকট যখন এগুলো বিক্রি করবে তখন কাপড়ের এ দোষগুলো দেখিয়ে দেবে এবং এর মূল্য কম রাখবে।’ কিন্তু পরবর্তী কর্মচারীগণ ভুলক্রমে ক্রেতাকে কাপড়ের দোষত্রুটি না দেখিয়েই বিক্রি করে দেন। এ কথা তিনি শুনতে পেরে খুব ব্যথিত হয়ে কর্মচারীদের তিরস্কার করেন এবং বিক্রীত কাপড়ের সমুদয় অর্থ সদকা করে দেন। তাঁর সততার এ রকম শত শত ঘটনা রয়েছে। (ইন্টারনেট অবলম্বনে সোনার বাংলা ফিচার ডেস্ক ফিচার)