ধারাবাহিক উপন্যাসঃ
মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ
মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ
ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং ........................
সন্ধ্যা সাতটা। মাগরিবের পর মনের অবসন্নতা দূর করতে একটু ঘুমানোর চিন্তা করছিলো সে।
টেবিলের উপর ফোন টা বাজছে।
চমকে উঠে লাফ দিয়ে খাট থেকে নামলো ফাতিমা ফারহানা। ছো মেরে ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো অপর প্রান্তের ব্যক্তিটি কে। মূহুর্তে চোখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো তার। অজান্তেই আঙ্গুল চলে গেলো রিসিভ বাটনে।
-আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছো, কোথায় আছো তুমি ?
-(অপর প্রান্তে মৃদু হাসির শব্দ) তুমি যে প্রশ্নের ট্রেন চালাচ্ছো, আমি কোনটার উত্তর দেবো ?
-(কপট অভিমানে) সব গুলোর উত্তর দেবে। একটার পর একটা। এটা আমার হুকুম।
-জো হুকুম মহারানী। ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি। কিন্তু কোথায় আছি বলা যাবে না।
মূহুর্তের জন্য মুখটা ভার হয়ে গেলো ফারহানার, কিন্তু বাস্তবতা বুঝে পরক্ষনে সামলে নিলো নিজেকে। বললো,
-কোথায় তো বলবে না জানি। অন্তত এতটুকু বলো দুপুরে কি খেয়েছো ?
-আলহামদুলিল্লাহ, চিন্তার কোন কারন নেই। আল্লাহ তার বান্দা কে উত্তম ভাবেই মেহমানদারী করিয়েছেন। কিন্তু তুমি কেমন আছো তাতো বললে না ?
-সেটা জানার কি সময় তোমার আছে? যাই হোক, তোমার পেরেশানী বাড়াতে চাইনা। আমি ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ।
মনটা খারাপ হয়ে গেল অপর প্রান্তে থাকা মানুষটার। আসলেই বর্তমান পরিস্থিতি তাদের স্বাভাবিক সময়টুকু কেড়ে নিয়েছে। ইচ্ছা থাকলেও আপনজনের খোজ খবর নেয়া হচ্ছেনা ঠিক মত। যখন থাকারই জায়গা নেই তখন অন্য সব কিছু গৌন হয়ে যায় সময়ের কাছে। চমকে উঠলো সে। কি সব চিন্তা করছে? অপর প্রান্তে একজন মানবী তার কথা শোনার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তার মুখটা মনে করার চেষ্টা করলো। ব্যর্থ হলো। কোন এক বিখ্যাত ব্যক্তি বলেছিলেন, কোন মানুষ তার পরিচিত সব মানুষের চেহারা মনে করতে পারলেও প্রিয়জনের চেহারা মনের পর্দায় আনতে পারে না। তার ক্ষেত্রে হয়তো সেরকম হচ্ছে। কিছু বলা দরকার। কিন্তু তার চিন্তার জাল ছিড়ে অপর প্রান্ত থেকে ফারহানার গলা শোনা গেলো আবার,
-কি হল কথা বলছোনা কেনো? তুমি কবে আসবে? (একটা করুন মিনতি ঝরে পড়লো সে কথায়)
চিন্তা করলো একটা কিছু বলা দরকার যাতে তার মন ভালো হয়। কোন চিন্তা ভাবনা না করেই দুম করে বলে ফেললো,
-তোমার জন্য একটা সুখবর আছে, শুনবে?
-(আগ্রহ ও আশার আলোয় মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো ফারহানার) শুনবো না মানে, একশো বার শুনবো। বল প্লিজ, কি সুখবর ?
মুখে শোনার ইচ্ছা ব্যক্ত করলেও মনটা দুরু দুরু করতে লাগলো তার। তার আশা পুরন হবে তো? সে যা আশা করছে তাই হবে তো, নাকি অন্য কিছু? অন্য যাই হোক না কেনো তাকে এখন খুশি করতে পারবে না।
-রাতে আসবো ইনশাআল্লাহ।
-সত্যিইইইইই, আলহামদুলিল্লাহ। কখন আসবে ?
-আসবো, দেখো আবার বেশি রান্না বান্না করতে যেও না। তোমার কষ্ট হবে।
-মেয়েরা রান্না ঘরে কি করবে না করবে তা কি তোমার ঠিক করে দিতে হবে ? (কৃত্রিম রাগের সাথে ধমকালো তাকে)
হাসলো সে। মনটা অনাবিল প্রশান্তিতে ভরে গেলো। এমন ভালবাসা মাখা শাসন তার ভালোই লাগে।
-আচ্ছা ঠিক আচ্ছে, গোস্তাখি মাফ হয় মহারানী।
-সাবধানে এসো, রাস্তা ঘাটের দিকে খেয়াল রেখো।
-ঠিক আছে, রাখি তাহলে। আল্লাহ হাফেজ।
-ফি আমানিল্লাহ।
(২)
তিনটা ঘন্টা কিভাবে কেটে গেলো বুঝতেই পারলোনা ফারহানা। সে আসছে। কত দিন পর, কত দীর্ঘ প্রতীক্ষা, কত আয়োজন তার মনের অলিতে গলিতে। চুলার আচে তার ফর্সা মুখটা রক্ত বর্ণ ধারন করেছে। সে যদি এখন পাশে থাকতো কি করতো তাহলে ? মনে করার চেষ্টা করলো ডিমের টকের পাত্রে পেয়াজ ভাজি ছড়াতে ছড়াতে। হয়তো রাগ দেখাতো, “এতো কি রান্নার আছে ? তোমাকে না বলেছি রান্না ঘরে এতো পরিশ্রম দেবে না? আমি কি রাক্ষস, এতো খাবার কে খাবে ?”
অথবা বলতো, “তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে, আমার লাল সুন্দরী!”
কিন্তু সেই দিন গুলি কোথায় ? চরম বাস্তবতা কেড়ে নিয়েছে তার সোনালী মূহুর্ত গুলো। ছিনিয়ে নিয়েছে জীবনের সুখ আহ্লাদ কে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচচ ডিগ্রী নেয়ার পর তার অনুমতি থাকা সত্ত্বেও কোন চাকরীতে যোগদান করেনি সে। অনেক অফার এসেছিলো। ছিল বিলাসী জীবনের হাতছানী। কিন্তু সব কিছুকে পিছনে ঠেলে সে প্রাধান্য দিয়েছে তার সংসার কে, তার ছোট্ট পৃথিবীকে। সে বিশ্বাস করে নারীর সার্থকতা ঘরের বাইরে যেয়ে পুরুষের সাথে ঢলাঢলি করে সমান থাকার কৃত্রিম চেষ্টার মধ্যে নয়। কেননা সে বিশ্বাস করে এই ঘর থেকেই এক সময় জন্ম হয়েছিল স্পেন জয়ী তারিক বিন জিয়াদের অথবা সিন্ধু জয়ী মুহাম্মাদ ইবনে কাসিমের। যদি তাদের মহীয়সী মায়েরা সন্তান কে সুশিক্ষায় মানুষ করার দিকে খেয়াল না রেখে সম অধিকারের দাবীতে রাস্তায় মিছিল করতেন তাহলে আজকে এই বাংলাদেশে হয়তো মুসলমান পরিচয়ে না থেকে তার অন্য কোন পরিচয় হতে পারতো।
টিং টং টিং টং
কলিং বেলের শব্দে স্মৃতি আচ্ছন্নতা থেকে বাস্তবে ফিরে এলো ফারহানা। বুকটা ধড়াস করে উঠলো তার। বেল দেয়ার ধরন শুনে সে বুঝে নিয়েছে কে এসেছে।
সে এসেছে,তার বহুল প্রতিক্ষীত আপনার জন। দ্রুত পা চালালো দরজার দিকে, থামলো আবার। অদৃশ্য জড়তা ঘিরে ধরেছে তাকে। আবার পা চালালো। কাপা কাপা হাতে খুললো ছিটকিনি।
“আসসালামু আলাইকুম। আমি তারিক ওমায়ের, ভিতরে আসতে পারি?” কৌতুক মাখা হাসি মুখে বললো সে, তার স্বামী। সালামের উত্তর দেয়া প্রয়োজন, কিন্তু কেউ যেনো কন্ঠ রোধ করেছে তার। পল পল করে বয়ে চলেছে সময়। অজান্তেই সালামের জবাব হিসেবে দু ফোটা অশ্রু ঝরে পড়লো তার শুভ্র গন্ড থেকে। কোন রকম বললো, “এসো”।
ভিতরে প্রবেশ করলেন তারিক ওমায়ের। ফারহানার ইচ্ছা করছিল তার বুকে ঝাপিয়ে পড়তে, দীর্ঘ দিনের জমানো অভিযোগ গুলো এক নিমিষে জানিয়ে দিতে। কিন্তু তা কি হয়? না জানি কত দূর থেকে এসেছে, কত ক্লান্ত। কিছু করতে না পেরে এক পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রু ঝরাচ্ছিলো সে। ওমায়ের এগিয়ে গেলেন তার দিকে, কাছে টেনে অশ্রু মুছে দিয়ে বললেন, “পাগলী, কান্না কিসের? এইতো আমি ভালো আছি”।
ওমনি কান্না বাধ ভাংলো তার। ফুপিয়ে কেদে উঠলো তাকে জড়িয়ে ধরে। ওমায়ের ভাবলো তাকে সময় দেয়া উচিত, কষ্ট গুলো কেদে কেদে ঝরিয়ে ফেলার জন্য। তাই চুপ করে থাকলো। কিছুক্ষন পর হুশে আসলো ফারহানা। কি করছে সে ? এমনিতেই তার স্বামী অনেক দূর থেকে এসেছে অনেক চড়াই উতরাই পার হয়ে। সে বললো, “তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি”। বলে তার হাত থেকে হ্যান্ড ব্যাগটি নিয়ে টাওয়েল এগিয়ে দিলো। টাওয়েল টি নিয়ে ওমায়ের এগিয়ে গেলো ওয়াশ রুমের দিকে।
(৩)
ওমায়ের বেডে আধাশোয়া হয়ে সেদিনকার বাসি পত্রিকাটি পড়ছিল। রান্নাঘর থেকে টুং টাং শব্দ ভেসে আসছে। রাতে খাওয়ার পর এটো প্লেট বাসন গুলো ধুয়ে রাখছে ফারহানা।
খাওয়ার পর ওমায়ের তার প্লেটটি নিয়ে সিঙ্কের দিকে যেতে উদ্যত হতেই তার হাত থেকে প্লেটটি কেড়ে নিয়েছে সে। ঘরকন্নার কাজ গুলোকে সে একান্ত নিজের করে নিয়েছে। অন্য কারো হস্তক্ষেপ ফারহানা পছন্দ করে না। তাই বৌ এর সাথে না পেরে বাধ্য ছেলের মত খাওয়া শেষে বই এর আশ্রয় নিয়েছে সে।
“বিপ বিপ” শব্দ হল বেড সাইড টেবিলে। মুঠোফোনের মেসেজ টোন। হাত বাড়িয়ে মোবাইলটি নিল ওমায়ের। ‘Read’ বাটনে ক্লিক করে মোবাইলটি সামনে ধরলো।
“রেড জোন, নিরাপদ থাকুন”
ছোট্ট মেসেজ, কিন্তু এর অর্থ অত্যন্ত পরিষ্কার তার কাছে। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। নিজের জন্য নয়, ফারহানার জন্য। এই পথে কেউ তাকে জোর করে নিয়ে আসেনি। স্বেচ্ছায় জেনে বুঝে এসেছে। সে জানে, যে পথে সে পা বাড়িয়েছে তাতে তার অনেক ক্ষতি হতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত। তাই সে নিজের জন্য কখনো চিন্তা করে না। তার হারাবার কি আছে? নিজের কাছে সে তো কিছুই রাখেনি। সব কিছু তার প্রতিপালকের সাথে সওদা করে ফেলেছে জান্নাতের বিনিময়ে।
কিন্তু ফারহানা? হ্যা, সেও একই পথের পথিক। দুজন লক্ষ্য অভিন্ন। কিন্তু সে তো নারী। নারীর সহজাত বৈশিষ্টই হল নমনীয়তা। যদিও ওমায়ের জানে ফারহানা তাকে হাসি মুখে বিদায় দেবে। কিন্তু সেই বিদায়ের পিছনে তার হৃদয়ের রক্ত ক্ষরন ওমায়ের ছাড়া আর কে জানে? কান্নার চেয়ে করুন সে হাসি। যাই হোক, “আল্লাহ ভরসা” বলে উঠে পড়লো সে। পাশে রাইটিং টেবিলে বসে ডাইরিটা টেনে নিল। অনেক দিন ডাইরী লেখা হয়না। আজ খুব লিখতে ইচ্ছা করছে তার। খস খস শব্দে সাদা ডাইরীর বুকে অগ্রাসন শুরু করলো তার কলম,
“আজ ১৫ই মার্চ ২০১৫। ফেরারী জীবনের ৭৪৫তম দিন। ২০১৩ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারীর এক নিশুতী রাতে ঘর ছেড়ে ছিলাম আমি। ছাড়তে চাইনি, বাধ্য করা হয়েছিল। ঘরে নব বিবাহিত স্ত্রী, অসুস্থ্য মা। সব কিছু ছেড়ে অজানার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে হয়েছিল সে রাতে।
তখন রাত একটা। ভেবেছিলাম কিছু হবে না। কিন্তু আমার ভাবনা কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে সেদিনও ঠিক একই রকম মেসেজ এসেছিল ফোনে। অর্থ পরিষ্কার। সুখের দিন শেষ, সামনে অনাগত অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিদায় নিতে হল আপন আলয় ছেড়ে। স্ত্রী কাদলো। মা কাদতে পারেনি। কেননা তিনি আগেই ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাকে ডাকা যাবে না, ডাক্তারের নিষেধ। শুধু মায়ের মুখটা একবার দেখে নিয়ে পা বাড়ালাম। কিন্তু ফারহানা? সে কোথায়? তাকে দেখছিনা যে? কিন্তু আমি অপারগ, হাতে একটুও সময় নেই। পা বাড়ালাম দরজার বাইরে। হটাত ফুপানোর শব্দে চমকে উঠে তাকালাম শব্দ উৎসের দিকে। দেখি করিডোরের দেয়ালে হেলান দিয়ে কোন রকম নিজের পতন ঠেকিয়ে রেখেছে ফারহানা। মন বলছে পালাও, সময় শেষ, জান হারিও না। বেচে থাকলে আবার দেখা হবে। কিন্তু মনের কথা পছন্দ হলনা আমার। দ্রুত এগিয়ে গেলাম তার দিকে। অশ্রু মুছে দিয়ে কপালে একটা ভালবাসার চিহ্ন একে বললাম, ‘বিদায়, নিজের ও মায়ের খেয়াল রেখো। আল্লাহ হাফেজ’ বলে হাটা শুরু করলাম। পিছনে তাকাবার সাহস আমার ছিল না। জানি না পিছনে কি ঘটছে। আল্লাহ নিগাহবান।
কিন্তু কোথায় যাব? চারিদিকে একই অবস্থা, তার উপর রাত। রাস্তায় উঠা যাবে না। সেখানে টহল দিচ্ছে সরকারী তল্পি বাহক বাহিনী। দেখা মাত্র গুলি। নির্দেশ আছে আপাতত এলাকা ছাড়তে হবে। কিন্তু হেটে আর কত দূর? সকাল হলে গ্রামের ভিতর দিয়ে হেটে বড় রাস্তায় উঠে না হয় বাস ধরা যাবে। ভাবছি আর হাটছি। রাত কাটানোর মত নূন্যতম একটা আশ্রয় দরকার। আশেপাশে কারো বাড়ি নিরাপদ নয়। সবার একই অবস্থা।
এক সময় ক্লান্ত হয়ে বসে পড়লাম সবুজ ঘাসের উপর ধান ক্ষেতের কোলে। হাত ঘড়িতে দেখলাম রাত তিনটা। ভাবলাম একটু বিশ্রাম নিই। আর কত! সে সকাল থেকে অনবরত দৌড়াদৌড়ি, হামলা হাঙ্গামা, অবরোধ মিছিল, গোলাগুলী চলছে। যদিও আমি মিছিলে ছিলাম না। একজন ডাক্তার হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল আহত ভাইদের চিকিতসা দেয়া। সকাল থেকে অনবরত আহত ভাইদের নিয়ে আসা হচ্ছে আমাদের অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পে। স্রোতের মত আসছে আহতদের ঢেউ। একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। সন্ধায় একটু বিশ্রাম নেয়ার চিন্তা করছি। ততক্ষনাত আর একজন আহত ভাই কে আনা হল। হাটুর নিচে পায়ে কমপক্ষে ৭-৮ টি গুলি লেগেছে তার। অনবরত ব্লিডিং হচ্ছে ক্ষতস্থান থেকে। এই দৃশ্য দেখে ঈমান আবার চাঙ্গা হয়ে উঠলো। ভাবলাম, আমিতো কর্তব্যে গাফেলতি করছি। যেখানে আমার ভাইয়েরা ময়দানে জীবন দিয়ে দিচ্ছে, রক্ত দিচ্ছে সেখানে আমি সুস্থ সবল একজন মানুষ কিনা বিশ্রামের কথা ভাবছি!
যত দ্রুত ভাবনা তার চেয়ে দ্রুত কাজ। গুলিতে আহত ভাইটির ম্যানেজমেন্টের জন্য পর্যাপ্ত সাপোর্ট আমাদের অস্থায়ী ক্যাম্পে নেই। কোন রকম চেষ্টা করলাম রক্তক্ষরন বন্ধ করতে। যত গুলি লেগেছে মনে হয় পায়ের কোন হাড়ই তার অক্ষত নেই। জরুরী অপারেশন করতে হবে। তার চেয়ে জরুরী রক্তক্ষরন বন্ধ করা। কারন রোগীই যদি না বাচে অপারেশন করবো কার? বেশ কিছুক্ষনের চেষ্টায় রক্তক্ষরন কমে আসলো। এবার অন্য চিন্তা আমাদের শঙ্কিত করে তুললো। রোগীর শরীরে রক্ত অনেক কমে গেছে। জরুরী ভাবে রক্ত দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু কোথায় পাব রক্ত? দ্রুত রক্তের গ্রুপ দেখা হল। তার পর ক্যাম্পের বাইরে অপেক্ষারত ভাইদের বললাম, ‘খুব দ্রুত রক্ত দরকার। নইলে রোগীকে বাচানো যাবেনা’।
চারিদিক থেকে শত কন্ঠ একসাথে বলে উঠলো, ‘আমি রক্ত দেব। রক্তের গ্রুপ বলুন’। চোখটা অজান্তেই ভিজে উঠলো। আমি জানি এরা শুধু রক্ত কেনো, নিজের জীবনও দিতে প্রস্তুত। কোন রকম নিজেকে সামলে নিয়ে জানালাম যে ‘এ’ পজেটিভ রক্ত দরকার। পাশ থেকে কয়েকজন এক সাথে বলে উঠলো, “আমার এ পজেটিভ, আমার টা নিন”। দেখলাম তাদের ভিতরে অলিখিত একটা প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে গেছে কে রক্ত দেবে তা নিয়ে। হস্তক্ষেপ করলাম আমি। একজন সবল মানুষ দেখে তাকে নিয়ে গেলাম ভিতরে। যাকে পছন্দ করলাম তার সেই আনন্দে উদ্ভাসিত চেহারা এখনো মনে পড়ে। যাবার বেলায় অন্যদের যে মলীন মুখ দেখেছিলাম তাও ভুলিনি আজো।
যাই হোক, রাত ১১টার পরে মোটামুটি কাজ কমে এলো। গ্রুপের সদ্য আগত একজনের উপর দায়িত্ব দিয়ে একটু বাড়িতে গিয়েছিলাম বিশ্রামের উদ্দেশ্যে। তাও হল না। ততক্ষনে আমাদের অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পের খবর পৌছে গেছে সরকারী উপর মহলে। হন্যে হয়ে খুজছে তারা আমাকে। দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ। অবশেষে এখন এই অন্ধকার রাতে সবুজ ঘাসের উপর আশ্রয় নেয়া। যদিও শীতের শেষ, তারপরও ঠান্ডা একটা আমেজ ছিল। আল্লাহ হয়তো চাইলেন তার বান্দাকে একটু বিশ্রাম দেবার। এক সময় ইচ্ছার বিরুদ্ধে চোখ দুটি বন্ধ হয়ে আসলো।
পরের দিন সকালে সূর্যের আলো চোখে লেগে ঘুম ভাংলো। ইশশ, ফজরের নামাজ কাজা হয়ে গেছে। দ্রুত আশেপাশে তাকালাম কোন পানির আশায়। ওজু করতে হবে। পাশে একটা ধান ক্ষেতে পানি ছিল। তাই দিয়ে কাজা আদায় করে আবার পা বাড়ালাম। এক সময় এ গ্রাম সে গ্রাম করে পৌছালাম বড় রাস্তায়। চারদিকে হরতাল অবরোধ। বাস ট্রাক সব বন্ধ। ইঞ্জিন চালিত ভ্যান গাড়িতে করে পৌছালাম আমার শ্বশুরালয়ে। সেখানে খবর আগেই পৌছে গিয়েছিল। আমাকে দেখে তাদের শঙ্কার মেঘ কাটলো। গোসল করে সকালের নাস্তা করে জানালাম আমাকে এবার বিদায় দিতে হবে, কেননা ওদের খবর পেতে দেরী হবে না যে আমি এখানে। আমাকে ধরার জন্য চারিদিকে লোক লেলিয়ে দিয়েছে। কারন খুবই সোজা। একজন ডাক্তার, পাশাপাশি বিরোধী জোটের একজন অন্যতম সংগঠক হিসেবে আমাকে শেষ করতে পারলেই আমাদের এলাকাটা তাদের হাতে এসে পড়বে। এ কথা শোনার পর তাদের মুখচ্ছবি কেমন হয়েছিল তা লিখে বোঝানো সম্ভব না। কোন রকম আব্বা আম্মা কে বুঝিয়ে আবার রাস্তায় নামলাম অজানার উদ্দেশ্যে।
এরপর কত দিন গেলো, কত আধার রাত পেরিয়ে আবার সূর্য উদয় হল..................কিন্তু বাড়িতে ফিরতে পারিনি। আমার মমতাময়ী মা মারা গেলেন, কিন্তু বাড়িতে ফিরতে পারিনি। আমার এলাকার চতুর্দিকে সর্বক্ষন লোক লাগিয়ে রাখা হয়েছে। কখন আমি বাড়িতে আসবো এটা জানার জন্য। মায়ের জানাজা নাকি ডিবি পুলিশের লোকেরাই পড়েছিল বেশি। একটাই উদ্দেশ্য আমাকে ধরা। এসেছিলাম ঠিকই, কিন্তু তারা আমাকে চিনতে পারেনি। চিনবে কিভাবে? ততদিনে ফেরারী জীবন যাপনে আমার চেহারাই বদলে গেছে। এসেছিলাম একজন ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে। যে মা তার ছেলে কে নিজের জানাজ পড়ার উপযোগী করে গড়ে তুলেছিলেন সেই মায়ের জানাজা দিলাম, কিন্তু এই অধম জানাজা পড়াতে পারিনি। কিভাবে পড়াবো? একজন ভিক্ষুককে কি কেউ জানাজা পড়াতে দেবে? দেবে না। দূর থেকে দেখলাম মাকে কবরে নামানো হচ্ছে। ধীরে ধীরে তাকে সমাধীস্ত করা হল। কান্নার প্রবল বেগ আগ্নেয়গিরীর জ্বালামুখের মত বাইরে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছিল, কিন্তু পারেনি। চারিদিকে শত শত রক্ষী বাহিনীর রক্ত চক্ষু তাকে দমিয়ে রেখেছিল।
কিন্তু ফারহানা? এতো কাছে এসে তাকে একবার না দেখে কিভাবে ফিরে যাব? কিন্তু না, সে ইচ্ছাও শক্ত হাতে দমন করতে হল। অবশ্য তাকে দূর থেকে মহিলাদের ভিড়ে একনজর দেখেছিলাম। সাথে সাথে মুখটা ফিরিয়ে নিয়েছিলাম। পুলিশের চোখকে ফাকি দেয়া যেতে পারে কিন্তু স্ত্রীর চোখ কি ফাকি দেয়া সম্ভব? সম্ভব নয় বলেই হয়তো সেদিন তাকে জানায়নি যে আমি আসবো। সে জানলে স্থির থকাটা তার জন্য কঠিন হত। জানলে হয়তোবা বুদ্ধিমতী ফারহানার চক্ষুদ্বয় শত শত পুলিশ বা সেই ভিক্ষুকের মাঝেও আমাকে খুজে বেড়াতো। আর খুজে পেলে পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় তার জন্য তেমন কিছু না হলেও বিপদ হত আমার। আমি তাকে সেই কঠিন পরীক্ষায় ফেলতে চাইনি। আর চাইনি বলেই হয়তো আবার অজানার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম..............................”
পিছনে হটাত ফুপিয়ে কান্নার শব্দ শুনে ওমায়েরের কলম থেমে গেলো। চমকে পিছনে তাকালো সে। পিছনে দন্ডায়মান ফারহানা তখন অপ্রতিরোদ্ধ্য কান্নার বেগ প্রতিরোধ করার নিষ্ফল চেষ্টায় রত। ওমায়েরের মাথা তখন জেট ফাইটারের চেয়ে দ্রুত গতিতে চিন্তা করে চলেছে। ফারহানা পিছনে দাঁড়িয়ে কখন থেকে তার লেখা পড়ে যাচ্ছে খেয়াল করেনি। ফারহানা সব জেনে ফেলেছে। সে যে এসেছিল কিন্তু ফারহানাকে দেখা দেয়নি সে কথা। এখন কিভাবে তাকে প্রবোধ দেবে সে চিন্তায় পেয়ে বসলো তাকে। কিন্তু না, সে প্রশান্তির হাসি হাসলো মনে মনে। ফারহানাকে সে চেনে। তার পরিস্থিতি সে অবশ্যয় বুঝবে। নানাবিধ চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে তার মাথায় এমন সময় ফারহানার কথায় চিন্তার জগত ছেড়ে বাস্তবে ফিরে আসলো ওমায়ের।
“(ধীর স্থির কন্ঠে) কিছু মনে নিও না, আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। কিন্তু জানালেও পারতে আমাকে”।
“পিপ...পিলিজ, ভুল বুঝোনা আমাকে। আমি তো...তোমার কথা চিন্তা করে জানাইনি। পিপ...প্লিজ।”
ওমায়েরের আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রানান্তকর চেষ্টা দেখে হেসে ফেললো ফারহানা।
“তুমি এমন করছো কেনো? আমি কিছু মনে করিনি। আমি কি তোমাকে বুঝিনা?” অনেকটা শান্তনার সুরে বললো ফারহানা। এতক্ষন নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল ওমায়ের। ফারহানার শেষ কথাটি শুনে তার দিকে তাকালো সে। দেখলো ফারহানাও তার দিকে এক নয়নে চেয়ে আছে। সে দৃষ্টিতে আছে স্ত্রীর নিঃসীম মমতা, ছিল সত্যিকারের বন্ধুর ভালবাসা আর জীবনসঙ্গিনীর অধিকার। ক্ষনিকের জন্য ওমায়ের হারিয়ে গেলো সেই অভাবনীয় মায়ার অসীম গহ্বরে। সম্বিত ফিরে পেলো ফারহানার ডাকে, “এই, কি দেখছো অমন করে? আমার লজ্জা করে না বুঝি?”
কিন্তু এ কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেলো ওমায়ের। আসলে সে ছোট বেলা থেকে খুবই লাজুক ছেলে। তাছাড়া বিয়ের পর থেকেই বলতে গেলে বাইরের ফেরারী জীবন। সুতরাং লাজুকতার লেভেল টা আগের মতই রয়ে গেছে। এখনো ঘুচেনি সেটা। অত্যাচারীর কঠিন নাগপাশ তা হতে দেয়নি।
ফারহানা বুঝতে পারলো সে লজ্জা পেয়েছে। তার অবশ্য ওমায়েরের লাজুক লাজুক মুখ দেখতে ভালোই লাগে। কিন্তু স্বামীকে এই মূহুর্তে লজ্জার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে, কেননা সে উদ্যোগ না নিলে ওমায়েরের পক্ষে সেটা সম্ভব হবে না। পরিবেশটা হালকা করার জন্য সে বললো, “তুমি ছাদে যাও, আমি কফি বানিয়ে আনি”।
চমকে উঠলো ওমায়ের। ফারহানা কে থামাতে হবে। কিন্তু তার হাতে যে সময় নেই তা সে কিভাবে বলবে তাকে? সুদীর্ঘ অপেক্ষার পর পেয়েও হারানোর বেদনা সে সহ্য করতে পারবে তো? মনে মনে বলে উঠলো, “ধরণী, দ্বিধা হও”।
আল্লাহ হয়তো তার ফরিয়াদ ইতিমধ্যে কবুল করে ফেলেছেন। বাইরে গাড়ির হুইসেল শোনা গেলো। ক্ষনকাল পরেই বুট জুতার দ্রুত পদক্ষেপের অস্পষ্ট আওয়াজ ভেসে আসলো নিচের সিড়ি থেকে। যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। তাদের ফ্লাটটা বিল্ডিং এর ৩য় তলায়। নিচে নামার সিড়ি একটায়। আশে পাশে আর কোন বাড়িও নেই। সুতরাং অসহায় আত্মসমর্পন ছাড়া আর কোন উপায় নেই। সমূহ বিপদের মাঝে পাশে ফিরে তাকালো, কিন্তু নেই। ফারহানা কেনো জানি নাই হয়ে গেছে তার পাশ থেকে। কোথায় গেলো এই সময়ে? ডাক দেবে কি একবার? কিন্তু না, তার ভাবনার অবসান ঘটিয়ে দরজায় অস্থির ভাবে কেউ কড়া নাড়তে শুরু করলো। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না সে। নিজের জন্য সে ভাবে না। কিন্তু তার স্ত্রী? যতদুর জানে এরা তার সাথে ভালো ব্যবহার করবে না। তাদের বর্তমান অনেক ইতিহাস তার সামনে জ্বল জ্বল করছে। ফারহানার কিছু হলে সে কিভাবে সহ্য......নাহ, সে আর ভাবতে পারছে না, বোধ হয় পারা উচিতও নয়।
ইতিমধ্যে দরজায় লাথি পড়তে শুরু করেছে। একাত্তরে যেমন বাড়িতে বাড়িতে পাক সেনারা মানুষদের কে উঠিয়ে নিয়ে যেতো তেমনি একটা পরিস্থিতি। দরজা খুলতেই হবে, না খুলে উপায় কি? এক সময় তো তারা দরজা ভাংবেই। তারচেয়ে দরজা খুলে দিলে হয়তো তারা মেজোবানের প্রতি কিছুটা সদয় হতে পারে। দুঃসময়েও তার হাসি পেলো। না, আর কয়েক সেকেন্ড দেরী করলে তারা হয়তো দরজা ভেঙ্গেই ফেলবে। নিজের জীবন বাচাতে না পারলেও দরজার জীবনটা সে বাচাতে পারে, এই চিন্তা থেকে অজান্তেই হাত উঠে গিয়েছিল ছিটকিনিতে, দরজা খোলার জন্য। হটাত পিছন থেকে কে যেন তার জামার কলার টা ক্ষামছে ধরে হেচকা টানে দরজার কাছ থেকে সরিয়ে নিলো তাকে।
“করছো কি? মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে তোমার?” ফারহানার উদ্বেগ উতকন্ঠা জড়িত কন্ঠে খানিকটা তিরোস্কারের ধ্বনি।
“কি করবো তাহলে? এ ছাড়া উপায় কি?” সহজ সরল স্বিকারোক্তী ওমায়েরের।
“আমার জিনিষের প্রতি তোমার তো কোন দরদ নেই। এসো আমার সাথে” বলে তাকে হিড় হিড় করে টানতে টানতে পিছনের ব্যলকনীতে নিয়ে গেলো ফারহানা।
কিন্তু ওমায়েরের সে দিকে কোন খেয়াল নেই। সে চিন্তা করছে ফারহানা এটা কি বললো? তার জিনিস, তার জিনিস, কি সেটা? সে আবার তার কোন জিনিসের প্রতি অবহেলা করলো? সহসা কথাটি তার কাছে পানির মতই পরিস্কার হয়ে গেলো। ফারহানা তার জিনিস বলতে যে ওমায়েরকেই বুঝিয়েছে সেটা আত্মস্থ করতে পেরেই কান দিয়ে ধোয়া বের হতে লাগলো তার। মেয়েটা কি সুন্দর কথা বললো এই পরিস্থিতিতে।
খানিকটা তন্ময় হয়ে পড়েছিল সে। কিন্তু সেটা ক্ষনিকের জন্য। ফারহানার ডাকে আবার তার চিন্তার জাল ছিড়লো। সহসা সে নিজেকে আবিষ্কার করলো তাদের ফ্লাটের পিছনের ব্যলকনীতে। তাদের ব্যলকনীতে কোন গ্রিল নেই খোলা আলো বাতাস পাবার জন্য। ব্যলকনীর কার্নিশ থেকে একটা শাড়ি ঝুলছে। না, একটা শাড়ি না। কয়েকটা শাড়ি একটার পর একটা বাধা। এতোক্ষনে ফারহানার অন্তর্ধানের বিষয়টি তার কাছে পরিষ্কার হল। এবার তার প্রচন্ড অবাক হবার পালা। ফারহানা কখন চিন্তা করলো আর কখন এই কাজ করলো? কই, তার মাথায়তো এরকম চিন্তা আসেনি। আসলে প্রতিকূল পরিবেশে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রকৃতিই মানুষকে এমন দক্ষ ও করিতকর্মা হতে ট্রেইনিং দেয়। নিজের অগোচরেই বিরুদ্ধ পরিবেশের বিরুদ্ধে একটা এন্টি শক্তি গড়ে উঠে যা তাকে পথ দেখায়।
কিন্তু চিন্তার সময় কোথায়? ওমায়ের কিছু বলার জন্য মুখ খোলার চেষ্টা করতেই ফারহানা তার ঠোটের উপর মধ্যমা আঙ্গুল চেপে ধরে নিচের দিকে নামতে ইশারা করলো। ওমায়ের আর কিছু বলতে পারলো না। কোন রকম “আল্লাহ হাফেজ” টুকু বলে শাড়ি বেয়ে নিচে নামতে শুরু করলো। নিচে জমাট বাধা অন্ধকার। যত সময় অন্ধকারে মিলিয়ে না যায় তত সময় ফারহানা তাকিয়ে থাকলো তার দিকে। এক সময় কালো অন্ধকার তাকে ঘিরে ফেললে অস্ফুট স্বরে মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো, “খোদা হাফেজ আমার স্বামী, আমার জীবন”। তার সে স্বরে যত টুকু না ছিল শঙ্কা তার চেয়ে ছিল অনাগত ঝড়ের মোকাবেলায় এক দৃপ্ত উচচারন।
লেখক - মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ
রংপুর মেডিকেল কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা