ইসলামি রাজনীতি কি ?
কুরআন ও সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে যে রাজনীতি পরিচালিত তাই ইসলামি রাজনীতি। জনগনের মাঝে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, তাদের সবধরনের চাহিদা পূরণ ও তাদের যাবতীয় অধিকার নিশ্চিত করা। আল্লাহ বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمْ بِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا
“নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে। আর যখন মানুষের মধ্যে ফয়সালা করবে তখন ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে কতইনা সুন্দর উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর”। [সূরা নিসা: ৫৮-৫৯]
কুরআন ও সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে যে রাজনীতি পরিচালিত তাই ইসলামি রাজনীতি। জনগনের মাঝে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, তাদের সবধরনের চাহিদা পূরণ ও তাদের যাবতীয় অধিকার নিশ্চিত করা। আল্লাহ বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمْ بِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا
“নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে। আর যখন মানুষের মধ্যে ফয়সালা করবে তখন ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে কতইনা সুন্দর উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর”। [সূরা নিসা: ৫৮-৫৯]
তাহলে যারা বলেন, ইসলামে কোন রাজনীতি নেই, দীনের সাথে রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই তাদের কথার কি কোন ভিত্তি আছে? নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, তাদের এসব কথার কোন ভিত্তি নেই। ইসলামি শরি‘য়াহ মুসলিম ও অমুসলিম রাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণ ও যুদ্ধাবস্থায় সর্বাবস্থায়ই সঠিক ও সফল রাজনীতি নিয়ে এসেছে। সব মুসলিম ও ইসলামি রাষ্ট্রের শাসকদেরকে এসব রাজনীতি চর্চা করা ফরয। মুসলমানদের দুনিয়া ও আখেরাতের সব কার্যাবলী এসব নীতিতে পরিচালনা করা ফরয।
অন্যদিকে মিথ্যাচার ধোকাবাজি, অঙ্গিকারভঙ্গ, গাদ্দারী, জনগণের সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ না করার ধোকার রাজনীতি ইসলাম সমর্থন করেনা এবং এধরনের নোংরা রাজনীতিও ইসলাম নিয়ে আসেনি। যে কেউ কুরআন, হাদীস, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামের জীবনী অনুসন্ধান করে দেখতে পাবে যে, ইসলাম সঠিক মাপকাঠীতে রাজনীতি নিয়ে এসেছে এবং এর মাধ্যমে মানুষের মাঝে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে।
তাহলে এখন প্রশ্ন হলো, যারা ধর্মহীন, ধর্মনিরপেক্ষ বা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনীতি করেন তাদেরকে কি ভোট দিয়ে নির্বাচিত করা যাবে? এধরনের লোকদেরকে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচন করার হুকুম কি? নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, দেশের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে এ ধরনের লোকদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করা জায়েয হবেনা। যেসব লোক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী বা ইসলামকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও উপহাস করে, বা সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, বা তারা ইসলামকে শুধু দীন হিসেবে মনে করেন তাদেরকে নির্বাচিত করা যাবেনা। কেননা এদেরকে নির্বাচিত করার অর্থই হলো আপনিও তার এসব কাজে সন্তুষ্ট ও তাদের এসব অন্যায় কাজে সহযোগী। এমন করাটা তাদের এসব ভ্রান্ত আক্বিদা-বিশ্বাসে সহযোগিতা করার নামান্তর। এর ফলে তারা তাদের বিরোধী ইসলামপন্থী বা ডানপন্থীদের উপর নানারকম উপহাস, নির্যাতন, নিপীড়ন ও অধিকারহরণ করে। তাছাড়া এটা একটা ভ্রান্ত মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য উৎসাহ ও সহযোগিতা। তাই এ ধরনের লোকদেরকে নির্বাচিত করা যাবেনা।
সমাজতন্ত্রীর মত কোন ইহুদী, খৃস্টান, কাদিয়ানি ইত্যাদি ভ্রান্ত আক্বিদার লোকদেরকে নির্বাচিত করা যাবেনা। এতে তাদের বাতিল আক্বিদা ও বিশ্বাস সাধারণ মানুষের মাঝে প্রভাব ফেলতে পারে বা তারা তাদের বিরোধীদের সাথে খারাপ আচরণ করতে পারে বা খারাপ কিছু করার আশঙ্কা থেকে এরা মুক্ত নয়। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَنْ أَبِي مُوسَى، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " إِنَّمَا مَثَلُ الْجَلِيسِ الصَّالِحِ، وَالْجَلِيسِ السَّوْءِ، كَحَامِلِ الْمِسْكِ، وَنَافِخِ الْكِيرِ، فَحَامِلُ الْمِسْكِ: إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحًا طَيِّبَةً، وَنَافِخُ الْكِيرِ: إِمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ رِيحًا خَبِيثَةً "
আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সৎ সাথী ও মন্দ সাথীর উপমা মিশকধারী ও অগ্নিকুণ্ডে ফুৎকার দানকারীর (কামারের) মত। মিশকধারী (বিক্রেতা) হয়ত তোমাকে কিছু দিবে (সুগন্ধি নেওয়ার জন্য হাতে কিছুটা লাগিয়ে দেবে) অথবা তুমি তার নিকট থেকে কিছুটা খরিদ করবে, কিংবা তুমি তার কাছ থেকে সুঘ্রাণ লাভ করবে। আর অগ্নিকুণ্ডে ফুকদানকারী হয়ত তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে অথবা তুমি তার দুর্গন্ধ পাবে”।
এছাড়া বাতিল কাজে সহযোগিতা করা জায়েয নেই। এটা অন্যায় ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সহযোগিতা করার নামান্তর। আল্লাহ বলেছেন,
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
“সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর”। [আল-মায়েদা : ২]
যারা তাদের এসব ভ্রান্ত মতবাদের সাথে একত্বতা পোষণ করবে বা সহযোগিতা করবে তারা অন্যায় ও যুল্ম করল। তাদের উচিত ঐ সব লোকদেরকে উপদেশ দেয়া, তাদেরকে সৎ পথের সন্ধান দেয়া। যদি তারা উপদেশ গ্রহণ করে ও ভ্রান্ত মতবাদ থেকে ফিরে আসে তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো, নতুবা তাদেরকে ত্যাগ করতে হবে।
এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, যেসব দেশে ইসলামি শাসন নেই, আল্লাহর কুরআন ও রাসূলের সুন্নাহ্ মোতাবেক দেশ পরিচালিত হয় না, সেখানে মুসলমানগণ কি নিজেরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বা কাউকে ভোট দিবে? এ প্রশ্নের উত্তরে সৌদি আরবের একাডেমিক গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি বলেছেন, এধরনের দেশে বাতিল ও ভ্রান্ত মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য কোন মুসলমানের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা জায়েয হবেনা এবং অন্যকেও ভোট দিয়ে নির্বাচিত করা যাবেনা। তবে কোন মুসলমান যদি কুফুরী সংবিধানকে পরিবর্তন করে ইসলামি শরি‘য়াহ বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা করে তবে সে নিজে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এবং অন্যরাও তাকে ভোট দিবে। এটা সে অনৈসলামিক আইনকে ইসলামি আইনে পরিবর্তনের চেষ্টার উসিলা হিসেবে গণ্য হবে, তবে সে নির্বাচিত হলে ইসলামি শরি‘আতের বিরোধী কোন পদ গ্রহণ করবে না বা সে সংক্রান্ত কোন আইন সমর্থন করবে না।
ধর্মনিরপেক্ষ বা ধর্মহীন দেশে প্রচলিত আইনের অধীনে ইসলামি সংগঠন তৈরী করা কি জায়েয? উল্লেখ্য, ইসলামি সংগঠনের উদ্দেশ্য ভিন্ন, তাদের মূল লক্ষ্য হলো দাওয়াতী কাজ পরিচালনা করা।
এ প্রশ্নের জবাবে সৌদি আরবের একাডেমিক গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি বলেছেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষায় নিপতিত অসহায় মুসলামনের জন্য অমুসলিম বা কাফির দেশে সংঘবদ্ধভাবে থাকা, পরস্পর সাহায্য সহযোগিতা ও সম্প্রীতির লক্ষ্যে এ ধরনের ইসলামি দল বা সংগঠন করা জায়েজ। এটা সৎ ও তাকওয়ার কাজে পরস্পর সহযোগিতার নামান্তর।
[1] বুখারী,
হাদীস নং ৫৫৩৪, মুসলিম, হাদীস নং ২৬২৮।
[1] লেখার
সূত্র: ইলমী গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি। ফতওয়া নং ১৫৬৩১, ৯৮৮০, ৩১০৫,
৪০২৯, ৫৬৫১ ও লেখক কর্তৃক সংকলিত। ফতোয়ার সদস্য: সালিহ ইবন ফাওযান, আবু যায়েদ বকর ইবন
আব্দুল্লাহ, আব্দুল আজিজ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ আলে আশ-শাইখ। প্রধান, আব্দুল আজিজ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বাজ।
বাংলাদেশ ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার , ঢাকা ।
একাডেমিক গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি
অনুবাদ : আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী
সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
অনুবাদ : আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী
সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী