ইসলামে সুন্নাহ’র অবস্থান

ইসলামে সুন্নাহ’র অবস্থান

নিশ্চয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দীনসহ সুসংবাদদানকারী, সতর্ককারী ও উজ্জ্বল প্রদীপ হিসেবে এমন সময় প্রেরণ করেছেন, যখন রাসূল প্রেরণের বিরতিকাল চলছিল এবং হেদায়াত পাওয়ার সকল পথ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল; অতঃপর তিনি তার মাধ্যমে অজ্ঞতার অন্ধকারকে আলোকিত করেছেন এবং ভ্রষ্টতা থেকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন; আর তিনি সবকিছু স্পষ্টভাবে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন, এমনকি শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর উম্মতকে সমুজ্জ্বল পথের উপর রেখে গেছেন, তার রাত্রি যেন দিনের আলোর মত; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :


« إنى تارك فيكم ما إن تمسكتم به لن تضلوا بعدى كتاب الله و سنتي .» ( أخرجه الإمام مالك )

“নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে এমন কিছু রেখে যাচ্ছি, তা যদি তোমরা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে পার, তবে আমার পরে তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট হবে না, তা হল আল্লাহর কিতাব এবং আমার সুন্নাহ বা জীবনপদ্ধতি।”[2] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:

« ... فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِى فَسَيَرَى اخْتِلاَفًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِى وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ.» (أخرجه أبو داود) .



“... কারণ, তোমাদের মধ্য থেকে যে আমার পরে জীবনযাপন করবে (বেঁচে থাকবে), সে অচিরেই বহু ধরনের মতবিরোধ দেখতে পাবে; সুতরাং তোমাদের উপর আমার সুন্নাত এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শের উপর অবিচল থাকা অপরিহার্য। তোমরা তা শক্তভাবে আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে। সাবধান! তোমরা নতুন উদ্ভাবিত জিনিস (বিদ‘আত) পরিহার করবে। কারণ, প্রত্যেক বিদ‘আতই গুমরাহী।”[3]

এই বরকতময় অধিবেশনে আপনাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ চায়তো আমরা যে বিষয়ে আলোচনা করব, তা হল: ‘সুন্নাতে নববী ও ইসলামে তার অবস্থান’।

আভিধানিক অর্থে সুন্নাত: সুন্নাত ( السنة ) শব্দটি আভিধানিক অর্থে তরিকা বা পদ্ধতি অর্থে ব্যবহৃত; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ فَهَلۡ يَنظُرُونَ إِلَّا سُنَّتَ ٱلۡأَوَّلِينَۚ فَلَن تَجِدَ لِسُنَّتِ ٱللَّهِ تَبۡدِيلٗاۖ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّتِ ٱللَّهِ تَحۡوِيلًا ٤٣ ﴾ [فاطر: ٤٣]


[তবে কি এরা প্রতীক্ষা করছে পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রযুক্ত পদ্ধতির? কিন্তু আপনি আল্লাহর পদ্ধতিতে কখনও কোন পরিবর্তন পাবেন না এবং আল্লাহর পদ্ধতির কোন ব্যতিক্রমও লক্ষ্য করবেন না। - (সূরা ফাতির: ৪৩)]; অর্থাৎ পদ্ধতি অথবা স্বভাব বা রীতি, যার উপর ভিত্তি করে রাসূলদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী বিরোধীদের ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার বিধান জারি হয়; সুতরাং তাদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার বিধান হল: তাদেরকে শাস্তি প্রদান করা এবং তাদের কর্তৃক রাসূলদের বিরুদ্ধাচরণ করার কারণে তাদেরকে শাস্তির মাধ্যমে পাকড়াও করা।

আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« لتتبعن سنن من كان قبلكم .» ( أخرجه البخاري و مسلم )

“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতির অনুসরণ করবে।”[4] অর্থাৎ তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহের রীতিনীতি; সুতরাং এটা প্রমাণ করে যে, আভিধানিক অর্থে সুন্নাত ( السنة ) শব্দটি পদ্ধতি বা রীতিনীতিকে বুঝায়।

আর শরীয়তের আলেম, মুহাদ্দিস, উসূলবীদ ও ফকীহগণের পরিভাষায় সুন্নাত ( السنة ) শব্দটি দ্বারা উদ্দেশ্য হল: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে স্বীকৃত ও প্রমাণিত কথা, অথবা কাজ, অথবা মৌনসম্মতি; তাঁদের কেউ কেউ আরও একটু বৃদ্ধি করে বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণাবলীকেও সুন্নাত ( السنة ) বলা হয়; সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এসব বিষয় থেকে যা প্রমাণিত হয়, তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত (سنة الرسول) বলা হয়; আর সুন্নাতের এই সংজ্ঞাটি শরী‘য়তের বিষয়ে প্রাজ্ঞ আলেমগণের পক্ষ থেকে প্রদত্ত।

ইসলামে সুন্নাতের গুরুত্ব ও অবস্থান: ইসলামে তার অবস্থান ও মর্যাদা খুবই মহান ও তাৎপর্যপূর্ণ; কারণ, আল-কুরআনের পরেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের (দ্বিতীয়) অবস্থান; কেননা, দীনের প্রথম মূলনীতি হল আল্লাহ তা‘আলার কিতাব, যা তিনি নাযিল করেছেন তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর হিদায়াত ও ব্যাখ্যাসহ।

দ্বিতীয় উৎস: শরী‘য়তের দ্বিতীয় উৎস হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ; আর কুরআন ও সুন্নাহ’র পরে যেসব দলিল-প্রমাণ মূলনীতি হিসেবে স্বীকৃত, সেগুলো এতদুভয়ের দিকেই প্রত্যাবর্তিত; সুতরাং ইসলামে দলিল-প্রমাণসমূহের মূলনীতির ভিত্তি হল এই দু’টি মহান উৎস: তন্মধ্যে একটি হল আল্লাহর কিতাব এবং অপরটি হল তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ; আর এই জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দু’টিকে অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন; সুতরাং তিনি বলেন:

« إنى تارك فيكم ما إن تمسكتم به لن تضلوا بعدى كتاب الله و سنتي .» ( أخرجه الإمام مالك )

“নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে এমন কিছু রেখে যাচ্ছি, তা যদি তোমরা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে পার, তবে আমার পরে তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট হবে না, তা হল আল্লাহর কিতাব এবং আমার সুন্নাহ বা জীবনপদ্ধতি।”[5] আর এটা এই জন্য যে, সুন্নাতে নববী হল আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত এক প্রকারের ওহী; যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤ ﴾ [النجم: ٣، ٤]

“আর তিনি মনগড়া কথা বলেন না। তা তো কেবল ওহী, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরিত হয়।” - (সূরা আন-নজম: ৩, ৪);

সুতরাং সুন্নাহ হল আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রেরীত এক ধরনের ওহী, যা তিনি তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি প্রত্যাদেশ করেন; আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও মানুষের নিকট বিভিন্ন কাজের আদেশ ও নিষেধ করার মাধ্যমে এই ওহী পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া সুন্নাহ আল-কুরআনকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে এবং তার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে; অতঃপর তার মোটামুটি ও সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণিত বিষয়গুলোকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে; তার সাধারণভাবে বর্ণিত বিষয়গুলোকে সুনির্দিষ্ট করে; তার ব্যাপক (‘আম) অর্থে বর্ণিত বিষয়গুলোকে নির্দিষ্ট (খাস) করে; আবার কখনও কখনও তার কোন কোন বিধানকে মানসূখ (রহিত) করে; আবার কখনও কখনও আল-কুরআনের মধ্যে যা বর্ণিত আছে, তার উপর বর্দ্ধিত হুকুম (বিধান) নিয়ে আসে।

আর এখান থেকেই আমাদের নিকট সুন্নাহ’র গুরুত্ব সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠে; যেমন তা (সুন্নাহ) হল আল-কুরআনের তাফসীর বা ব্যাখ্যা, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلذِّكۡرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيۡهِمۡ وَلَعَلَّهُمۡ يَتَفَكَّرُونَ ٤٤ ﴾ [النحل: ٤٤]

“আর তোমার প্রতি যিকির (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি, মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছিল, যাতে তারা চিন্তা করে।” - (সূরা আন-নাহল: ৪৪); সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআন নাযিল করেছেন এবং তা বয়ান (ব্যাখ্যা) করার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি; আর এই বয়ানই (ব্যাখ্যা) হল সুন্নাহ, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوۡمِهِۦ لِيُبَيِّنَ لَهُمۡۖ ﴾ [ابراهيم: ٤]

“আর আমরা প্রত্যেক রাসূলকে তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য।” - (সূরা ইবরাহীম: ৪); সুতরাং এই হল সেই উম্মত (জাতি), যার নিকট তার রাসূল এসেছে তাকে বর্ণনা করে শুনানোর জন্য; সুতরাং এই বয়ান (বর্ণনা)-র কিছু দৃষ্টান্ত হল: আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনের মধ্যে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু তিনি বর্ণনা করে দেন নি ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব ও এশা’র সালাতের রাকাতসমূহের সংখ্যা; বরং আল্লাহ তা‘আলা মোটামুটি সংক্ষিপ্তভাবে তার নির্দেশ দিয়েছেন, যেমন তিনি বলেন:

﴿وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَۖ إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ تَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِۗ ﴾ [العنكبوت: ٤٥]

“আর তুমি সালাত প্রতিষ্ঠা কর, নিশ্চয় সালাত বিরত রাখে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে।” - (সূরা আল-‘আনকাবুত: ৪৫); তিনি আরও বলেন:

﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ ﴾ [البينة: ٥]

“আর তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই প্রদান করা হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে এবং সালাত কায়েম করে।” - (সূরা আল-বায়্যিনাহ: ৫); তিনি আরও বলেন:

﴿ فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ ﴾ [التوبة: ٥]

“সুতরাং তারা যদি তাওবা করে এবং সালাত কায়েম করে ...।” - (সূরা আত-তাওবা: ৫); এই প্রসঙ্গে আয়াতের সংখ্যা অনেক; অনুরূপভাবে আল্লাহ্‌ তা‘আলা সালাত কায়েম করার নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু তিনি তার সময়সমূহ বর্ণনা করে দেন নি, যদিও তিনি সালাতের সময়সমূহ সাধারণভাবে উল্লেখ করেছেন, যেমন তিনি বলেন:

﴿أَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ لِدُلُوكِ ٱلشَّمۡسِ إِلَىٰ غَسَقِ ٱلَّيۡلِ وَقُرۡءَانَ ٱلۡفَجۡرِۖ إِنَّ قُرۡءَانَ ٱلۡفَجۡرِ كَانَ مَشۡهُودٗا ٧٨ ﴾ [الاسراء: ٧٨]

“সূর্য হেলে পরার পর থেকে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করবে এবং কায়েম করবে ফজরের সালাত। নিশ্চয়ই ফজরের সালাত (ফেরেশতাদের) উপস্থিতির সময়।” - (সূরা আল-ইসরা: ৭৮); তিনি আরও বলেন:

﴿ فَسُبۡحَٰنَ ٱللَّهِ حِينَ تُمۡسُونَ وَحِينَ تُصۡبِحُونَ ١٧ وَلَهُ ٱلۡحَمۡدُ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَعَشِيّٗا وَحِينَ تُظۡهِرُونَ ١٨ ﴾ [الروم: ١٧، ١٨]

“কাজেই তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর যখন তোমরা সন্ধ্যা কর এবং যখন তোমরা ভোর কর, আর বিকেলে এবং যখন তোমরা দুপুরে উপনীত হও। আর তাঁরই জন্য সমস্ত প্রশংসা আসমানে ও যমীনে।” - (সূরা আর-রূম: ১৭, ১৮); সুতরাং এই হল সালাতের সময়সমূহের উল্লেখকরণ, তবে তা হল সাধারণ উল্লেখ; আর এই ইজমালী বা সাধারণ বর্ণনাটিকে সুস্পষ্ট করে ব্যাখ্যামূলকভাবে বর্ণনা করেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ; কারণ, তিনি তাঁর সাহবীদেরকে সাথে করে সালাত আদায় করেছেন এবং বলেছেন:

«صلوا كما رأيتموني أصلي » ( أخرجه البخاري )

“তোমরা এমনভাবে সালাত আদায় কর, যেমনিভাবে তোমরা আমাকে সালাত আদায় করতে দেখ।”[6]

এভাবে এর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের রাকাত সমূহের সংখ্যা বর্ণনা করে দিয়েছেন; সুতরাং আমরা সালাত আদায় করি, যেমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত করেছেন; আমরা যোহরের সালাত আদায় করি চার রাকাত এবং সফরের মধ্যে কসর করে দুই রাকাত আদায় করি; আর আসরের সালাত আদায় করি চার রাকাত এবং সফরের মধ্যে কসর করে দুই রাকাত আদায় করি; আর মাগরিবের সালাত আদায় করি তিন রাকাত সফরের মধ্যে এবং বাসস্থানে অবস্থানকালীন সময়ে, তাতে কসর করা হয় না; আর এশা’র সালাত আদায় করি চার রাকাত এবং সফরের মধ্যে কসর করে দুই রাকাত আদায় করি; আর ফজরের সালাত আদায় করি দুই রাকাত সফরের মধ্যে এবং বাসস্থানে অবস্থানকালীন সময়ে। আর সালাতের ওয়াক্ত বা সময়সমূহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করে দিয়েছেন, যখন তিনি যোহরের সালাত আদায় করেছেন তার জন্য নির্ধারিত সময়ে, আসরের সালাত আদায় করেছেন তার জন্য নির্ধারিত সময়ে, মাগরিবে সালাত আদায় করেছেন তার জন্য নির্ধারিত সময়ে, এশা’র সালাত আদায় করেছেন তার জন্য নির্ধারিত সময়ে এবং ফজরের সালাত আদায় করেছেন তার জন্য নির্ধারিত সময়ে, যেমনটি সাব্যস্ত হয়েছে বিশুদ্ধ (সহীহ) হাদিসের মধ্যে: জিবরাঈল আ. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতের ইমামতি করেছেন (দুই দিন) সালাতের প্রথম সময়ে ও শেষ সময়ে এবং তিনি বলেছেন:

« الصلاة بين هذين الوقتين . » ( أخرجه أبو داود و الترمذي )

“সালাতের সময় হচ্ছে এই দুই সময়ের মাঝামাঝি।”[7] সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য সালাতের রাকাত সংখ্যা, পদ্ধতি ও সময় বর্ণনা করেছেন; আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ ব্যতীত আমরা সালাতের পদ্ধতি ও সময় সম্পর্কে জানতে পারব না, যদিও আমরা তার আবশ্যকতা সম্পর্কে আল-কুরআনুল কারীম থেকে জানতে পেরেছি; যা আমাদেরকে নির্দেশনা প্রদান করে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তা বয়ান (ব্যাখ্যা) করার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, তা হল কথা ও কাজের মাধ্যমে বয়ান বা ব্যাখ্যা করা; আর এ জন্যই যখন খারেজী সম্প্রদায়ের যারা সুন্নাহকে অস্বীকার করে, তাদের মধ্য থেকে এক দল ওমর ইবন আবদুল আজিজ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র নিকট আসল এবং তারা তাঁর সাথে সুন্নাহ’র মাধ্যমে প্রমাণ পেশের আবশ্যকতার প্রশ্নে বিতর্ক করল, তখন ওমর ইবন আব্দিল আযীয রাহেমাহুল্লাহ তাদের উদ্দেশ্যে বলেন:

" الله جل و علا أمرنا بالصلاة في القرآن فكيف نصلي؟ هاتوا لي آية من القرآن تبين كيفية الصلاة "

(আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে আল-কুরআনের মধ্যে সালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন, সুতরাং আমরা কিভাবে সালাত আদায় করব? তোমরা আমার নিকট আল-কুরআন থেকে একটি আয়াত নিয়ে আস তো, যা সালাত আদায়ের পদ্ধতি বর্ণনা করে।) অতঃপর তারা স্তম্ভিত হয়ে গেল এবং তাদের বিতর্ক থেমে গেল; আর তিনি তাদেরকে সুন্নাহ’র মাধ্যমে প্রমাণ পেশের আবশ্যকতাকে মেনে নিতে বাধ্য করলেন।

আর সালাতের দৃষ্টান্তের মত যাকাতের বিষয়টিও: আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনে যাকাত দানের নির্দেশ দিয়েছেন; অতঃপর আমরা কিভাবে ঐ সম্পদ সম্পর্কে জানতে পারব, যাতে যাকাত আবশ্যক হবে? সুন্নাহ ব্যতীত এই সম্পর্কে জানা সম্ভব হবে না; আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতের বিস্তারিত বিবরণ পেশ করেছেন; নিশ্চয়ই তা আবশ্যক হবে স্বর্ণ, রৌপ্য, শস্য, ফলমূল, চতুষ্পদ জন্তু এবং ব্যবসায়ীক পণ্যে এবং তা প্রত্যেক মাল-সম্পদে ওয়াজিব (আবশ্যক) হবে না; বরং তা ওয়াজিব হবে শস্য, ফলমূল, নগদ টাকাপয়সা ও মুক্তভাবে বিচরণশীল চতুষ্পদ জন্তুর মত বর্দ্ধনশীল সম্পদের মধ্যে, যেমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতের ক্ষেত্রে কি পরিমাণ গ্রহণ করা হবে, তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ: উৎপাদন উপকরণ সরবরাহ করা বা না করার বিবেচনায় শস্য, ফলমূল ও জমি থেকে উৎপন্ন ফসলের যাকাত হিসেবে উৎপাদিত ফসলের এক দশমাংশ (ওশর) অথবা বিশ ভাগের একভাগ ( نصف العشر ) গ্রহণ করা হবে।

আর স্বর্ণ ও রৌপ্য থেকে গ্রহণ করা হবে চল্লিশ ভাগের একভাগ বা শতকরা ২.৫%।

আর ছাগলের ক্ষেত্রে প্রতি চল্লিশটি ছাগলের জন্য একটি ছাগল যাকাত হিসেবে দিতে হবে এবং অনুরূপভাবে নেসাবের সাথে সংশ্লিষ্ট বাকি সংখ্যার মধ্যেও (প্রতি চল্লিশটির জন্য একটি হারে) এই বিধান প্রযোজ্য হবে।

আর উটের যাকাতের ক্ষেত্রেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নেসাব বর্ণনা করে দিয়েছেন; সুতরাং পাঁচটি উটের ক্ষেত্রে একটি ছাগল যাকাত হিসেবে দিতে হবে; আর দশটির ক্ষেত্রে দু’টি ছাগল যাকাত হিসেবে দিতে হবে; আর পনেরটির ক্ষেত্রে তিনটি ছাগল যাকাত হিসেবে দিতে হবে; আর বিশটির ক্ষেত্রে চারটি ছাগল যাকাত হিসেবে দিতে হবে; আর পঁচিশটির ক্ষেত্রে একটি এক বছর বয়সী উট যাকাত হিসেবে দিতে হবে; আর ছত্রিশটি উটের ক্ষেত্রে একটি দুই বছর বয়সী উট যাকাত হিসেবে দিতে হবে; আর অনুরূপভাবে উটের যাকাতের অবশিষ্ট নেসাবের মধ্যে যাকাত হিসেবে যা আবশ্যক হবে, তা দিতে হবে; যেমনিভাবে তিনি যাকাতের ক্ষেত্রে যাকাত হিসেবে আবশ্যকীয় উটের বয়স বর্ণনা করে দিয়েছেন; সুতরাং যদি হাদিসে নববী’র অস্তিত্ব না থাকত, তাহলে আমরা জানতে পারতাম না যে, কিভাবে আমরা যাকাত দেব, যদিও আমরা আল-কুরআন থেকে যাকাতের আবশ্যকতার বিষয়ে জানতে পেরেছি; কিন্তু সুন্নাহ যাকাতের পরিমাণ এবং যাকাতযোগ্য মালের ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছে, যেমনিভাবে সুন্নাহ সুস্পষ্টভাবে সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে, যাতে যাকাত ওয়াজিব (আবশ্যক) হবে; কারণ, কোন মালের উপর ততক্ষণ পর্যন্ত যাকাত আবশ্যক হবে না, যতক্ষণ না তার উপর এক বছর অতিবাহিত হবে; তবে জমিন থেকে উৎপাদিত ফসলের উশরের ব্যাপারটি ভিন্ন; সুতরাং তাতে যাকাত ওয়াজিব (আবশ্যক) হবে, যখন তার উপযুক্ততা প্রকাশ পায়; যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَءَاتُواْ حَقَّهُۥ يَوۡمَ حَصَادِهِۦۖ ﴾ [الانعام: ١٤١]

“আর ফসল তোলার দিন সে সবের হক প্রদান করে দাও।” - (সূরা আল-আন‘আম: ১৪১)।

অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা রমযান মাসে সিয়াম (রোযা) পালনের নির্দেশ দিয়েছেন, আর তা হচ্ছে ইসলামের অন্যতম একটি রুকন; কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা সিয়ামের সীমারেখা বর্ণনা করেন নি এবং আরও বর্ণনা করেন নি তা বিনষ্টকারী ও বাতিলকারক বিষয়সমূহ; আর ঐসব বিষয়গুলোও বর্ণনা করেন নি, যেগুলো সিয়াম পালনকারীকে (রোযাদারকে) বর্জন করে চলতে হবে; আর সুন্নাতে নববী এসব বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ নিয়ে এসেছে।

অনুরূপভাবে সম্মানিত ঘর বাইতুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে হজ্জের বিষয়টিও; আল্লাহ তা‘আলা তার আবশ্যকতার বিষয়টি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:

﴿ وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ ﴾ [ال عمران: ٩٧]

“আর মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ ঘরের হজ্জ করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য।” - (সূরা আলে ইমরান: ৯৭); সুতরাং এই আয়াতটি প্রমাণ করে যে, বাইতুল্লায় হজ্জ করাটা আবশ্যকীয় বিষয়, কিন্তু আয়াতটি তার সময় ও পদ্ধতি স্পষ্ট করে কিছুই বলে নি; আর এই হজ্জ আদায়ের পদ্ধতি সামগ্রিকভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করে দিয়েছেন, যখন তিনি জনসাধারণকে নিয়ে বিদায় হজ্জ পালন করেন এবং তিনি বলেছেন:

« خذوا عني مناسككم. » ( أخرجه مسلم )

“তোমরা আমার নিকট থেকে তোমাদের হজ্জ আদায়ের পদ্ধতি গ্রহণ কর।”[8] অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জ আদায়ের পদ্ধতিসমূহ একটি একটি করে বর্ণনা করে দিয়েছেন এবং তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে আমরা তাঁর নিকট থেকে পদ্ধতিসমূহ গ্রহণ করি, যেমনটি আমাদের জন্য বর্ণনা করেছেন এমন বর্ণনাকারী, যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাজের মধ্য থেকেই হজ্জ আদায়ের পদ্ধতিসমূহ প্রত্যক্ষ করেছেন।

অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা চোরের হাত কেটে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন; সুতরাং তিনি বলেন:

﴿ وَٱلسَّارِقُ وَٱلسَّارِقَةُ فَٱقۡطَعُوٓاْ أَيۡدِيَهُمَا جَزَآءَۢ بِمَا كَسَبَا نَكَٰلٗا مِّنَ ٱللَّهِۗ ﴾ [المائ‍دة: ٣٨]

“আর পুরুষ চোর ও নারী চোর, তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও; তাদের কৃতকর্মের ফল ও আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে।” - (সূরা আল-মায়িদা: ৩৮) ...; কিন্তু হাত কাটার জন্য অনেকগুলো শর্ত রয়েছে, যেগুলো আল-কুরআনের মধ্যে উল্লেখ করা হয় নি; আর সুন্নাহ সেগুলোর বিস্তারিত বিবরণ নিয়ে এসেছে, যেমন সুন্নাহ বর্ণনা করে দিয়েছে যে, চোরের হাত কাটা যাবে না, যতক্ষণ না সে নেসাব পরিমাণ সম্পদ চুরি করবে, আর তা হল এক দিনারের এক চতুর্থাংশ অথবা তিন দিরহাম অথবা তার সমমূল্য মানের সম্পদ; আর আয়াতটি হাতের[9] বিষয়টিও স্পষ্ট করে নি এবং চুরির ক্ষেত্রে হাতের কোন জায়গায় কাটা হবে, তাও স্পষ্ট করে বলা হয় নি; কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বিষয়টি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, আর তা হল, ডান হাতের তালুর গ্রন্থি থেকে কাটা হবে, আর তাকে কবজির হাঁড় বলা হয়।

এখানে অনুসন্ধান করার মাধ্যমে আল-কুরআনের ব্যাখ্যায় সুন্নাহ’র অনুসরণের সবকিছু লেখা আমাদের উদ্দেশ্য নয়; আমরা তো শুধু এর কয়েকটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেছি মাত্র; নতুবা আল-কুরআনের ব্যাখ্যায় সুন্নাহ’র অনুসরণের বহু বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে।

আর আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল, সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল; সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ ﴾ [النساء: ٨٠]

“কেউ রাসূলের আনুগত্য করলে, সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল।” - (সূরা আন-নিসা: ৮০); রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য মানে তাঁর নিকট থেকে সুন্নাহ হিসেবে যা প্রমাণিত, তা মেনে নেয়া এবং সে অনুযায়ী কাজ করা; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ ﴾ [الحشر: ٧]

“রাসূল তোমাদেরকে যা দেয়, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে, তা থেকে বিরত থাক” - (সূরা আল-হাশর: ৭); সুতরাং আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যেসব আদেশ, নিষেধ ও শরী‘য়ত দান করেছেন, তা যাতে আমরা যথাযথভাবে গ্রহণ করি এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যেসব বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে যেন আমরা বিরত থাকি।

আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশ এসেছে;

· কখনও আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যের সাথে তাঁর আনুগত্য করাকে সংযুক্ত করে দেন, যেমন তিনি বলেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ ﴾ [النساء: ٥٩]

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর, আরও আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যকার ক্ষমতাশীলদের।” - (সূরা আন-নিসা: ৫৯); তিনি আরও বলেন:

﴿ قُلۡ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَۖ ﴾ [ال عمران: ٣٢]

“বল, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর।” - (সূরা আলে ইমরান: ৯৭); সুতরাং তিনি তাঁর আনুগত্য করার আবশ্যকতার সাথে তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার আবশ্যকতাকে মিলিয়ে দিয়েছেন।

· আবার কখনও কখনও আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার বিষয়টি এককভাবে উল্লেখ করেছেন; যেমন তিনি বলেন:

﴿ مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ ﴾ [النساء: ٨٠]

“কেউ রাসূলের আনুগত্য করলে, সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল।” - (সূরা আন-নিসা: ৮০); আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ٥٦ ﴾ [النور: ٥٦]

“আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমাদের উপর রহমত করা যায়।” - (সূরা আন-নূর: ৫৬); আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ ﴾ [النساء: ٦٤]

“আল্লাহর অনুমতিক্রমে কেবলমাত্র আনুগত্য করার জন্যই আমরা রাসূলদের প্রেরণ করেছি।” - (সূরা আন-নিসা: ৬৪)।

· যেমনিভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সময় তাঁর কিতাব আল-কুরআন ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহ’র দিকে ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছেন; সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩ ﴾ [النساء: ٥٩]

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর, আরও আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যকার ক্ষমতাশীলদের, অতঃপর কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপন কর আল্লাহ ও রাসূলের নিকট, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতে ঈমান এনে থাক। এ পন্থাই উত্তম এবং পরিণামে প্রকৃষ্টতর।” - (সূরা আন-নিসা: ৫৯);

আর আয়াতে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দেয়ার মানে আল্লাহর কিতাবের দিকে ফিরিয়ে দেয়া; আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে ফিরিয়ে দেয়ার মানে তিনি জীবিত থাকাকালীন অবস্থায় স্বয়ং তাঁর দিকে ফিরিয়ে দেয়া, আর তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সুন্নাহ’র দিকে ফিরিয়ে দেয়া।

আর আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ’র দিকে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশটি সাধারণভাবে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী, তার প্রমাণ হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর তাঁর দিকে ফিরিয়ে দেয়ার মানে তাঁর সুন্নাহ’র দিকে ফিরিয়ে দেয়া; আর এটাই প্রমাণ করে যে, উম্মতের মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ফয়সালার উৎস হল সুন্নাহ, যখন তারা আহকাম তথা বিধানসমূহের কোনো একটি বিধান নিয়ে বিতর্ক করবে, চাই তারা ইবাদতসমূহের মধ্য থেকে কোনো একটি ইবাদত বিষয়ে দীনী বিধানের ব্যাপারে মতবিরোধ করুক, অথবা জনগণের অধিকার প্রশ্নে তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ সৃষ্টি হউক; আর এই ক্ষেত্রে সমাধানের জন্য আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ’র দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।

আর এটা প্রমাণ করে যে, সুন্নাহ হল আল-কুরআনের সঙ্গী; আর তা হল ইসলামী শরী‘য়তের মূলনীতিমালার অন্যতম উৎস, কোনো সময়ে বা কোনো অবস্থাতেই মুসলিমগণ তা থেকে অমনোযোগী হবে না।

আর যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ’র বিরুদ্ধাচারণ করবে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাদেরকে কঠিন শাস্তির হুমকি প্রদান করেছেন; সুতরাং তিনি বলেন:

﴿ وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٧ ﴾ [الحشر: ٧]

“রাসূল তোমাদেরকে যা দেয়, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে, তা থেকে বিরত থাক এবং তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।” - (সূরা আল-হাশর: ৭); সুতরাং এটা প্রমাণ করে যে, কোনো কাজের আদেশ অথবা কোনো কাজ থেকে নিষেধের ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ’র বিরোধিতা করবে, সেই ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার শাস্তির সম্মুখীন হবে। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ فَإِن لَّمۡ يَسۡتَجِيبُواْ لَكَ فَٱعۡلَمۡ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهۡوَآءَهُمۡۚ ﴾ [القصص: ٥٠]

“তারপর তারা যদি আপনার ডাকে সাড়া না দেয়, তাহলে জানবেন তারা তো শুধু নিজেদের খেয়াল-খুশীরই অনুসরণ করে।” - (সূরা আল-কাসাস: ৫০); আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«كل أمتي يدخلون الجنة إلا من أبى, قالوا: يا رسول الله ومن يأبى ؟ قال: من أطاعني دخل الجنة ومن عصاني فقد أبى. » ( أخرجه البخاري )

“যে ব্যক্তি অস্বীকার করে, সেই ব্যক্তি ব্যতীত আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে; সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! কোন ব্যক্তি অস্বীকার করে? তখন তিনি বললেন: যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্য, সে ব্যক্তিই অস্বীকার করে।”[10] সুতরাং যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবাধ্য হয় এবং তাঁর সুন্নাহ’র বিরুদ্ধাচরণ করে, সে ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করতে অস্বীকার করে; আর আবদ্ধ হয় জাহান্নামের প্রচণ্ড হুমকির জালে।

আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:

﴿ فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ ﴾ [النور: ٦٣]

“কাজেই যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে তাদের উপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” - (সূরা আন-নূর: ৬৩); সুতরাং যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করবে, সে ব্যক্তি এ‌ই দু’টি বিষয়ের কোন একটির দ্বারা কঠিন হুমকির সম্মুখীন হবে:

প্রথম বিষয়: মানসিকভাবে বিপর্যয়ের শিকার হওয়া; ফলে সে সত্য থেকে বিচ্যুত হবে, ঈমানের পর কুফরী করবে এবং ভ্রষ্টতা ও গোমরাহীর মাধ্যমে তার হৃদয় বিপর্যস্ত হবে; সুতরাং এর পরে সে সত্য পথের সন্ধান পাবে না; কারণ, সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করেছে; আর এটা পরবর্তীতে উল্লেখিত শাস্তির চেয়েও কাঠিন শাস্তি।

দ্বিতীয় বিষয়: আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ﴾ -এর মধ্যে " عذاب " (শাস্তি) শব্দটির দ্বারা উদ্দেশ্য হল হত্যা, রোগ-ব্যাধি ও ধ্বংসের মাধ্যমে দুনিয়ায় শাস্তি, যা ঐসব কাফিরদের বেলায় প্রযোজ্য হয়েছিল, যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। আর দ্বিতীয় শাস্তি হবে আখেরাতে।

যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করবে, তার জন্য এই দু’টি শাস্তি থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই; দু‘টির একটি শাস্তি হল মানসিক শাস্তি (না‘উযুবিল্লাহ); আর অপর শাস্তিটি হল শারীরিক অথবা আর্থিক শাস্তি; হয় তা হবে মৃত্যু ও ধ্বংসের মাধ্যমে, নতুবা ধন-সম্পদ বিনষ্ট ও জীবনহানির মাধ্যমে; আর এটা হল কঠিন সতর্কবাণী ঐ ব্যক্তির জন্য, যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে।

আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٖ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلٗا مُّبِينٗا ٣٦ ﴾ [الاحزاب: ٣٦]

“আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ের ফয়সালা দিলে কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য সে বিষয়ে তাদের কোন (ভিন্ন সিদ্ধান্তের) ইখতিয়ার সংগত নয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল, সে স্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট হল।” - (সূরা আল-আহযাব: ৭); এটা হল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার পক্ষ থেকে মুমিনের অবস্থার বিবরণ; অতএব সে যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিধান সম্পর্কে জানতে পারবে, তখন তার জন্য ঐ বিষয়ে কোন স্বাধীনতা থাকবে না, যার উপর আমল করা তার উপর ওয়াজিব (আবশ্যক) বলে সাব্যস্ত হয়েছে; বরং সে সন্তুষ্ট চিত্তে উদার মনে খুশি হয়ে তা গ্রহণ করবে; সুতরাং তার জন্য এমন স্বাধীনতা নেই যে, ইচ্ছা করলে সে কাজ করবে, আর ইচ্ছা করলে সে কাজ করবে না; কারণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সকল নির্দেশই হিদায়াত ও কল্যাণে ভরপুর। সুতরাং সে যদি এই নির্দেশটি কাজে পরিণত না করে এবং ধারণা পোষণ করে যে, এই নির্দেশ পালন করা বা না করার ব্যাপারে তার স্বাধীনতা রয়েছে, তবে সে সুস্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট হবে; আর ভ্রষ্টতা ( ضلال ) শব্দটি হিদায়াত ( الهدى ) শব্দের বিপরীত; আর এখানে ভ্রষ্টতা ( ضلال ) শব্দটিকে বিশেষিত করা হয়েছে ‘সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতা (ضلال مبين ) দ্বারা; অর্থাৎ স্পষ্ট বা পরিষ্কার (واضح); কারণ, সে সঠিক পথের বিরোধিতা করেছে; আর সঠিক পথ হল আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ এবং ভ্রষ্টতার পথ হল আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করা।

আর যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করবে, তার শাস্তির বর্ণনা করে এমন একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল: হাদিসে এসেছে কোনো এক ব্যক্তি তার বাম হাত দ্বারা খাবার গ্রহণ করত; অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তার ডান হাত দ্বারা খাবার গ্রহণ করতে নির্দেশ দিলেন; অতঃপর লোকটি এতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলল: আমি সক্ষম নই; বস্তুত তার অহঙ্কারই তাকে সুন্নাহ’র অনুসরণ করতে বাধা দিল; অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বদদোয়ার সূরে) বললেন:

« لاَ اسْتَطَعْتَ » (তুমি সক্ষম না হও); নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিরুদ্ধে বদদোয়া করলেন; সুতরাং সেই সময়ে তার হাত শুকিয়ে যায় এবং এর পর তার শাস্তিস্বরূপ সে তার হাতকে তার মুখ পর্যন্ত উত্তোলন করতে সক্ষম হয়নি।[11] সুতরাং এই হল তাৎক্ষণিক শাস্তি (না‘উযুবিল্লাহ); অতএব এটা প্রমাণ করে যে, যে ব্যক্তি অহঙ্কারবশত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ’র বিরুদ্ধাচরণ করবে, সেই ব্যক্তি নিশ্চিতভাবে শাস্তির সম্মুখীন হবে (না‘উযুবিল্লাহ)।

আর এর বিপরীত হল ঐ ব্যক্তির ঘটনা, যাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন এমন অবস্থায় যে, তার হাতে স্বর্ণের আংটি রয়েছে; অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

«يعمد احدكم إلى جمرة من نار فيجعلها في يده»

(তোমাদের কেউ জাহান্নামের জ্বলন্ত অঙ্গারের প্রতি মনোযোগ দেয়, অতঃপর সে তা তার হাতের মধ্যে রাখে); অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গ্রহণ করলেন এবং জমিনের মধ্যে ছুড়ে ফেললেন। তারপর যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মজলিস থেকে দাঁড়ালেন, আর আংটিটি মাটিতে পড়ে আছে এবং তার মালিক উপস্থিত, তখন উপস্থিত সাহাবীগণ বললেন: তুমি তোমার আংটিটি গ্রহণ করে উপকৃত হও, তখন এই মুমিন ব্যক্তিটি বলল: আল্লাহর কসম! আমি তা গ্রহণ করব না, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুড়ে ফেলেছেন।[12] সুতরাং আনুগত্যের ক্ষেত্রে উভয় ব্যক্তির মধ্যকার পার্থক্য লক্ষ্য করুন; কারণ, প্রথম ব্যক্তি অহঙ্কার করে বলে: আমি পারব না (না‘উযুবিল্লাহ); আর এই ব্যক্তি বলল: ‘আল্লাহর কসম! আমি তা গ্রহণ করব না, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুড়ে ফেলেছেন।’ সুতরাং এটাই হল ঈমান; আর এটাই হল মহান আনুগত্য।

আর আমরা সাহাবীগণ কর্তৃক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ’র প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের অপর আরেকটি দৃষ্টান্তের উল্লেখ করছি: মুসলিমগণ হিজরতের প্রথম দিকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার নির্দেশক্রমে বাইতুল মাকদাসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করত, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে কাবা শরীফের দিকে মুখ করে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিলেন; সুতরাং তিনি বললেন:

﴿ فَوَلِّ وَجۡهَكَ شَطۡرَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِۚ ﴾ [البقرة: ١٤٤]

“অতএব আপনি মসজিদুল হারামের দিকে চেহারা ফিরান।” - (সূরা আল-বাকারা: ১৪৪); অতএব বাইতুল মাকদাসের দিক থেকে কাবা শরীফের দিকে কিবলা পরিবর্তন হয়ে গেল এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার নির্দেশক্রমে মুসলিমগণ কাবার দিকে মুখ ফিরালেন; যদিও তারা আল্লাহর নির্দেশেই প্রথম দিকে বাইতুল মাকদাসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করত, আর সেই নির্দেশটি ছিল এমন:

﴿ قُل لِّلَّهِ ٱلۡمَشۡرِقُ وَٱلۡمَغۡرِبُۚ يَهۡدِي مَن يَشَآءُ إِلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٖ ١٤٢ ﴾ [البقرة: ١٤٢]

“বলুন, পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথের হিদায়াত করেন।” - (সূরা আল-বাকারা: ১৪২); অতএব তারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার নিকট কোন আপত্তি বা প্রতিবাদ করে নি; অতঃপর আসমান থেকে কাবা শরীফের দিকে কিবলা পরিবর্তনের বিধান অবতীর্ণ হল, তখনও সাহাবীগণের মধ্য থেকে কিছু লোকজন বাইতুল মাকদাসের দিকে মুখ করে আসরের সালাত আদায় করছিলেন, কেননা তারা কিবলা পরিবর্তনের কথা জানতে পারে নি; অতঃপর সাহাবীগণের মধ্য থেকে একজন তাদের নিকট আসলেন এমতাবস্থায় যে, তারা তখন সালাত আদায়ে ব্যস্ত এবং তিনি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন: নিশ্চয়ই কাবার দিকে কিবলা পরিবর্তন হয়ে গেছে; অতঃপর তারা কোন প্রকার প্রতিবাদ ও প্রশ্ন (?) করা ছাড়াই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার নির্দেশের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে সকলেই সালাত আদায়রত অবস্থায় বাইতুল মাকদাসের দিক থেকে কাবা শরীফের দিকে ঘুরে গেলেন; আর এটাই হল ঈমান; সুতরাং মুমিন ততক্ষণ পর্যন্ত আনুগত্য স্বীকার করবে, যতক্ষণ প্রমাণিত হবে যে, আল্লাহ এই নির্দেশ দিয়েছেন অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই নির্দেশ দিয়েছেন; আর এটাই হল ওয়াজিব (আবশ্যক): ‘কোন প্রকার প্রতিবাদ করা ছাড়াই আনুগত্য স্বীকার করা’।

আর যাদের অন্তরে রোগ আছে, অথবা যাদের অন্তরে নিফাক বা কুটিলতা আছে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের অবস্থা আলোচনা করেছেন, সুতরাং তিনি বলেন:

﴿ ۞سَيَقُولُ ٱلسُّفَهَآءُ مِنَ ٱلنَّاسِ مَا وَلَّىٰهُمۡ عَن قِبۡلَتِهِمُ ٱلَّتِي كَانُواْ عَلَيۡهَاۚ ﴾ [البقرة: ١٤٢]

“মানুষের মধ্য হতে নির্বোধরা অচিরেই বলবে যে, এ যাবত তারা যে কেবলা অনুসরণ করে আসছিল তা থেকে কিসে তাদেরকে ফিরালো? ” - (সূরা আল-বাকারা: ১৪২); সুতরাং তারা আনুগত্যের উদ্যোগ গ্রহণ করে না, বরং তারা বেশি বেশি প্রশ্ন ও আপত্তি উত্থাপন করে; আর ঈমানদারগণ আনুগত্য করে এবং তারা কোন প্রকার প্রতিবাদ ও আপত্তি করে না।

আর এগুলো হল মুসলিমদের সামনে সুন্নাতে নববীর মর্যাদা বা অবস্থান, তার প্রতি তাদের কর্মতৎপরতা এবং পরিতৃপ্ত হওয়ার কিছু নমুনা; কেননা সুন্নাতে নববী হচ্ছে ইসলামের দলিল-প্রমাণের মূলনীতিমালার দ্বিতীয় উৎস, তারা তাকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দান করে; কারণ, তা হল তাদের ঐ নবীর বাণী, যিনি মনগড়া কথা বলেন না; আর তা মেনে নেয়ার মধ্যে উম্মতের (জাতির) জন্য কল্যাণ, বরকত ও পুণ্য রয়েছে; আর এটাই হল মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের অবস্থান, যদিও তাদের যুগ-যামানা অনেক দূর পেরিয়ে এসেছে, তবুও তারা তাকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দান করে এবং তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে, মনে হচ্ছে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সেই ব্যাপারে কথা বলতে শুনতে পাচ্ছে; কারণ, তাদের নিকট তা (সুন্নাহ) বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে পৌঁছেছে; সুতরাং তার ব্যাপারে অথবা তার নির্দেশিত ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই; অতএব মুমিন ব্যক্তি তার অনুসরণ করবে এবং তার নিজের উপর ও অন্যের উপর তা প্রয়োগ করবে; আর এ জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«نضر الله امرأ سمع منا شيئا فبلغه كما سمع فرب مبلغ أوعى من سامع. » (أخرجه الترمذي )

“যে ব্যক্তি আমার নিকট থেকে একটি হাদিস শুনে তা অন্যের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়, আল্লাহ তাকে হাস্যোজ্জ্ব ও পরিতৃপ্ত করবেন। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে শ্রোতার চেয়ে যার নিকট প্রচার করা হয়, সে বেশি সংরক্ষণকারী হয়ে থাকে।”[13] সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সুন্নাহকে কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর পরবর্তী উম্মতের নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে উৎসাহিত করেছেন; আর তিনি বিদায় হাজ্জে যখন আরাফাতের ময়দানে তাঁর মহান ভাষণ পেশ করেন, তখন বলেন:

« ليبلغ الشاهد منكم الغائب فإن الشاهد عسى أن يبلغ من هو أوعى له منه » ( أخرجه البخاري و مسلم )

“তোমাদের মধ্যকার উপস্থিত ব্যক্তির উচিত অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া; কারণ, উপস্থিত ব্যক্তি অচিরেই এমন ব্যক্তির নিকট পৌঁছিয়ে দেবে, যে ব্যক্তি তার চেয়ে অধিক সংরক্ষণকারীর ভূমিকা পালন করবে।”[14] সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে যারা উপস্থিত ছিলেন, তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা যাতে তাঁর অনুপস্থিত উম্মতের নিকট তাঁর বাণী পৌঁছিয়ে দেয়; আর এ জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ’র প্রতি মনোযোগ, তার শিক্ষা, সংরক্ষণ ও সুবিন্যস্তকরণে মুসলিমগণের ভূমিকা ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, অন্য সকল জাতির চেষ্টা-প্রচেষ্টার উপরে; কারণ, পৃথিবীর জাতিসমূহের মধ্য থেকে এমন একটি জাতিও নেই, যারা তাদের নবী ও রাসূলের সুন্নাহ বা আসারসমূহকে (নিদর্শনসমূহকে) এই উম্মতে মুহাম্মদী’র মত যত্ন করতে পেরেছে; কেননা তারা আন্তরিকতার সাথে সুন্নাহকে তাদের হৃদয়ে সংরক্ষণ করতেন, তার প্রশিক্ষণ দিতেন এবং অন্যদের নিকট তা প্রচার করতেন; পূর্ববর্তী ব্যক্তি তার পরবর্তী ব্যক্তির নিকট প্রচার করত প্রজন্মের পর প্রজন্ম; আর তারা তা সংরক্ষণ ও আয়ত্তে রাখার জন্য হাদিসসমূহ লিপিবদ্ধ করতেন; সুতরাং তারা তা সংরক্ষণ করতেন মুখস্থকরণ ও লিপিবদ্ধ করার মাধ্যমে। তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে তিনি হাদিস লিপিবদ্ধ করতে নিষেধ করতেন; তিনি বলেছিলেন:

« من كتب عني شيئا فليمحه » ( أخرجه مسلم )

“যে ব্যক্তি আমার পক্ষ থেকে কিছু লিপিবদ্ধ করেছে, সে যেন তা মুছে ফেলে।”[15] আর এর উদ্দেশ্য ছিল, যাতে আল-কুরআনের সাথে হাদিসের মিশ্রণ না ঘটে; ফলে তিনি হাদিস লিপিবদ্ধ করতে নিষেধ করতেন, যাতে কেউ তাকে (হাদিসকে) কুরআনের অংশ মনে না করে; অতঃপর তিনি তাঁর সাহাবীদের মধ্য থেকে কোনো কোনো সাহাবীকে লেখার অনুমতিও প্রদান করেছেন, যেমন আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনুল ‘আস রা., কেননা তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শ্রবণ করতেন, তা লিপিবদ্ধ করে রাখতেন; আর এ জন্যই আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনুল ‘আস রা. ছিলেন সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবীদের মধ্যে অন্যতম; কারণ, তিনি ঐসব হাদিস লিপিবদ্ধ করে রাখতেন, যা তিনি শুনতেন; কিন্তু মুসলিমগণের লেখার চেয়ে মুখস্থ করার প্রতি মনোযোগ ছিল খুব বেশি; সুতরাং তারা সুন্নাহকে সংরক্ষণ করতেন, বহন করতেন তাদের হৃদয়ে, তার প্রশিক্ষণ দিতেন এবং তা প্রচার করতেন; এমনকি তাঁদের কেউ কেউ অনেক কষ্ট সত্ত্বেও হেজায থেকে মিসর পর্যন্ত ভ্রমণ করতেন একটি মাত্র হাদিসের সন্ধানে, যা সাহাবীদের কারও কারও নিকট পৌঁছেছে; আর এটাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসের প্রতি তাঁদের মনোযোগ, সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ প্রমাণ করে।

আর এর পরে খলিফা রাশেদ ওমর ইবন আবদুল আযীযের আমলে হাদিস লেখা ও গ্রন্থবদ্ধের কাজ শুরু হয়; অতঃপর হাদিস লেখার ক্রমবিকাশ ঘটতে থাকে; তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ’র উপর সহীহ, মুসনাদ, জামে‘ ও মু‘জাম গ্রন্থসমূহ লিপিবদ্ধ হয় এবং বর্তমান সময়ে আল-হামদুলিল্লাহ (আল্লাহর শুকরিয়া) আজকের মুসলিমদের হাতে সুন্নাহ লিপিবদ্ধ অবস্থায় বিদ্যমান আছে; আর এই মওজুদ গড়ে তুলেছেন উম্মতের (জাতির) হাফেযগণ; সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের মাধ্যমে সুন্নাতে নববীকে ত্রুটি-বিচ্যূতি ও বৃদ্ধি-ঘাটতির হাত থেকে রক্ষা করেছেন; আর তাঁরাই তাকে জালিয়াত ও মিথ্যাবাদীদের হাত থেকে হেফাজত করেছেন এবং তাঁরাই সুন্নাহ’র উপর অনেক মূল্যবান গ্রন্থ লিপিবদ্ধ করেছেন, যা মুসলিমগণ ব্যতীত অন্য কোন জাতির নিকট পাওয়া যায় না। আর তাঁরা রিওয়ায়াত বা বর্ণনাকে গ্রহণ করার জন্য সূক্ষ্ম নীতিমালা তৈরি করেছেন এবং মিথ্যাবাদী, জালিয়াত, দূর্বল ও বর্ণনার ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত বর্ণনাকারীদের অবস্থা বর্ণনা করে দিয়েছেন; আর সুন্নাহ’র এই সংরক্ষণটি আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণেরই অন্তর্ভুক্ত, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩ ﴾ [الحجر: ٩]

“নিশ্চয় আমরাই কুরআন নাযিল করেছি এবং আমরা অবশ্যই তার সংরক্ষক।” - (সূরা আল-হিজর: ৯); সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা যেমনিভাবে আল-কুরআনকে তার মধ্যে বৃদ্ধি অথবা কমতি করা থেকে হেফাজত করেছেন, ঠিক তেমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহকেও তার রিওয়ায়াত বা বর্ণনার মাধ্যমে হেফাজত করেছেন, কেননা তা আল-কুরআনকে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও তাফসির করে; আর এটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে এই জাতির প্রতি রহমতস্বরূপ, কেননা তিনি তাদের জন্য আল-কুরআন ও সুন্নাতে নববীর মত এই দু’টি মহান উৎসকে হেফাজত করেছেন।

আর এখানে পথভ্রষ্ট সম্প্রদায় থেকে সতর্ক করা আবশ্যক, যারা এই যুগে তাদের কর্মকাণ্ড ও অন্যায়-অপকর্ম প্রকাশ করে— তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহকে সন্দিহান করে তুলে এবং বলে: নিশ্চয়ই আল-কুরআনই আমাদের জন্য যথেষ্ট, সুন্নাহ’র কোনো প্রয়োজন নেই; আর তারা আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

﴿ مَّا فَرَّطۡنَا فِي ٱلۡكِتَٰبِ مِن شَيۡءٖۚ ٣٨ ﴾ [الانعام: ٣٨]

[“এ কিতাবে আমরা কোন কিছুই বাদ দেই নি ...।” - (সূরা আল-আন‘আম: ৩৮)] এবং তাঁর বাণী:

﴿ تِبۡيَٰنٗا لِّكُلِّ شَيۡءٖ ﴾ [النحل: ٨٩]

[“প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যাস্বরূপ ...।” - (সূরা আন-নাহল: ৮৯)]- এর দ্বারা প্রমাণ পেশ করে; কারণ, তাদের ধারণা অনুযায়ী সুন্নাহ মুতাওয়াতির[16] পদ্ধতিতে বর্ণিত নয়, বরং তা আহাদ[17] পদ্ধতিতে বর্ণিত এবং বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে ভুল-ত্রুটি ও মিথ্যার আশঙ্কা করা হয়; আর আল-কুরআন হল নির্ভরযোগ্য, যেমন তারা বলে: নির্ভরযোগ্য, অকাট্যভাবে প্রমাণিত ও বিশ্বস্ত বস্তুই যথেষ্ট এবং আমরা এমন বস্তু পরিত্যাগ করি, যাতে সন্দেহ রয়েছে।

ঐসব ব্যক্তিবর্গ (আল্লাহ তাদেরকে ভাল কাজ থেকে বঞ্চিত রাখুন) এরকমই বলে থাকে, বাস্তবে তারা শরী‘য়তকেই বাতিল করতে চায়, তবে পদ্ধতিটি হল অত্যন্ত ঘৃণিত ও ষড়যন্ত্রমূলক; কারণ, তারা মানুষকে এই কথা বলার ক্ষমতা রাখে না যে, তোমরা শরী‘য়তকে পরিত্যাগ কর অথবা ইসলাম ছেড়ে দাও; তারা শুধু কুৎসিত ও শয়তানী পদ্ধতি নিয়ে এসে বলে: তোমরা আল-কুরআনের উপর আমল কর এবং এটাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট হবে, সুন্নাহ’র প্রয়োজন নেই; কারণ, তারা জানে যে, যখন সুন্নাহকে অকার্যকর করা হবে (আল্লাহ সক্ষম না করুক), তখন আল-কুরআন অকার্যকর হয়ে যাবে; আর এক পর্যায়ে গোটা শরী‘য়তই অকার্যকর হয়ে যাবে; কারণ, আমরা যা জানতে পারলাম, সুন্নাহ আল-কুরআনকে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে; সুতরাং যখন আমরা ঐসব ব্যক্তিবর্গের অনুসরণ করব (আল্লাহ তাদের তাওফিক না দিন) এবং সুন্নাহ’র উপর আমল না করব, তখন আমরা কিভাবে সালাত আদায় করব, কিভাবে সাওম (রোযা) পালন করব, কিভাবে যাকাত দান করব, কিভাবে হাজ্জ পালন করব এবং কিভাবে লেনদেন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে হারাম থেকে হালালকে চিনতে পারব, আর কিভাবেই বা চিনতে পারব বিবাহ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে মুহাররামা[18] নারীদেরকে; আর এসব বিষয়ের জন্য সুন্নাহর কোনো বিকল্প নেই; সুতরাং সুন্নাহ’র অনুপস্থিতিতে ইসলামী শরী‘য়ত অকার্যকর হয়ে পড়বে।

আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চৌদ্দশত বছর পূর্বে ঐসব দুষ্কৃতকারীদের ব্যাপারে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« ألا هل عسى رجل يبلغه الحديث عني وهو متكئ على أريكته فيقول بيننا وبينكم كتاب الله فما وجدنا فيه حلالا استحللناه وما وجدنا فيه حراما حرمناه وإن ماحرم رسول الله صلى الله عليه و سلم كما حرم الله. » ( أخرجه الترمذي )

“জেনে রাখ, অচিরেই কোন কোন ব্যক্তির কাছে আমার পক্ষ থেকে হাদিস পৌঁছবে এমতাবস্থায় যে, সে তার খাটের উপর হেলান দিয়ে বসে আছে, অতঃপর সে বলবে: আমাদের এবং তোমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব বিদ্যমান রয়েছে; সুতরাং আমরা তাতে যা হালাল হিসেবে পাব, তাকে হালাল বলে গ্রহণ করব, আর তাতে যা হারাম হিসেবে পাব, তাকে হারাম বলে গ্রহণ করব; অথচ (তাদের জেনে রাখা উচিত) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা হারাম করেছেন, তা আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তার মতই।”[19]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:

«ألا إني أوتيتُ هذا الكتاب ، ومثلَهُ معهُ ، ألا يُوشِكُ رَجُلٌ شَبْعان على أريكته ، يقولُ : عليكم بِهذَا القُرآن ، فيما وَجدْتُم فيه من حلالٍ فأحِلُّوهُ ، وما وجدْتُم فيه من حرام فَحَرِّموهُ ».

“জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আমাকে এই কিতাব দেয়া হয়েছে এবং তার সাথে তার বাস্তব উদাহরণ তথা সুন্নাহ দেয়া হয়েছে। সাবধান! অচিরেই কোন কোন যুবক ব্যক্তি তার খাটের উপর বসে বসে বলবে: তোমাদের উপর আবশ্যক হল এই কুরআনকে গ্রহণ করা; সুতরাং তোমরা তাতে যা হালাল হিসেবে পাবে, তাকে হালাল বলে মেনে নেবে, আর তাতে যা হারাম হিসেবে পাবে, তাকে হারাম বলে ঘোষণা করবে।[20]” আর এই হাদিসটির মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মু‘জেযাসমূহের মধ্য থেকে অন্যতম একটি মহান মু‘জেযা নিহিত রয়েছে, কেননা যে বিষয়ে জানিয়ে গিয়েছিলেন, তা বাস্তবে প্রতিফলিত হয়েছে; সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ঐসব (অসৎ) ব্যক্তিদের থেকে সতর্ক করেছেন এবং তিনি আমাদের নিকট সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে আল-কুরআন ও সুন্নাহ উভয়টিই প্রদান করেছেন, যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿ وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤ ﴾ [النجم: ٣، ٤]

“আর তিনি মনগড়া কথা বলেন না। তা তো কেবল ওহী, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরিত হয়।” - (সূরা আন-নজম: ৩, ৪);

আর তারা যা বলে যে, আল-কুরআন মুতাওয়াতির পদ্ধতিতে সংকলিত হয়েছে এবং তা অকাট্যভাবে প্রমাণিত, আর সুন্নাহ আহাদ পর্যায়ের বর্ণনাকারীদের বর্ণনা দ্বারা সাব্যস্ত এবং তার ভিতরে ত্রুটি-বিচ্যুতি বা অন্য কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটেছে, সুতরাং এটা আল-কুরআনের মত নয়, তবে এই কথাটি বাতিল পর্যায়ের এবং এটি একটি খোঁড়া যুক্তি; কারণ, সুন্নাহ’র বিষয়টি আমরা যেমন বর্ণনা করেছি, তা নিঁখুতভাবে এসেছে; আর এটা কবি-সাহিত্যক, গল্পকার ও অন্যান্যদের গল্প ও কল্পকাহিনীর মত কিছু নয়, বরং তা বর্ণনা করার জন্য কিছু স্বতসিদ্ধ নিয়ম-পদ্ধতি ও নীতিমালা রয়েছে; আর তার জন্য রয়েছে এমন কিছু ব্যক্তিবর্গ, যারা তার হেফাজত ও যথযথ সংরক্ষণ করছেন এবং করবেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে আমাদের যুগ পর্যন্ত এবং আল্লাহ তা‘আলা যে সময়কাল পর্যন্ত চাইবেন, সে সময় পর্যন্ত; আর এই সুন্নাহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ করার মাধ্যমেই সংরক্ষিত; সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ নিয়ে কোনো প্রকার ছিনিমিনি খেলা ও কারচুপি করার অবকাশ নেই।

আর পূর্বেই বলা হয়েছে সুন্নাহ’র হাফেযগণ প্রত্যেক মিথ্যাবাদী ও দুর্বল বর্ণনাকারীর অবস্থা বর্ণনা করে দিয়েছেন; আরও বর্ণনা করে দিয়েছেন ঐসব বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীদের অবস্থা, যাদের বর্ণনার মধ্যে কিছু কিছু সংশয়ের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, অথবা যাদের মধ্যে এমন কোনো দোষ প্রবেশ করেছে, যা তাদের বর্ণনাকে দুর্বল করে দিয়েছে, যেমন হাদিসের মধ্যে তাদলীস[21]কারী ও সংমিশ্রণকারী ব্যক্তিগণ। সুতরাং অপরাধীদের হাতে সুন্নাহ বিনষ্ট হওয়া অথবা মিথ্যাবাদী ও জালিয়াতগণ কর্তৃক তার ক্ষতি সাধিত হওয়ার কোনো সুযোগ তাতে নেই, মুসলিমগণের জীবনে এর মর্যাদা ও গুরুত্ব অনেক বেশী। অতএব, সব সময় সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, এ সুন্নাতগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে যেভাবে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, তা বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীগণ থেকে বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীগণ বর্ণনা করেছেন, আর তা সংকলিত অবস্থায় সুন্নাহ’র কিতাবসমূহের মধ্যে বিদ্যমান আছে; সুতরাং এর মাধ্যমে ঐসব সংশয় সৃষ্টিকারী ও মিথ্যাবাদীদের সন্দেহ-সংশয় দূর হয়ে যাবে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ বিশুদ্ধ অবস্থায় অবশিষ্ট থাকবে, যা তাঁর নিকট থেকে সাব্যস্ত ও প্রমাণিত, যে ব্যাপারে কোন প্রকার ত্রুটিপূর্ণ অথবা সন্দেহজনক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় নি; আর এটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাঁর সৃষ্ট মানব জাতির উপর একান্ত অনুগ্রহ ও দয়া।

আর যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহকে অপবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত করবে, আর ধারণা করবে তার উপর আমল করা অবৈধ এবং শুধু এককভাবে আল-কুরআনের উপর আমল করবে বলে মনে করে, তবে সেই ব্যক্তি কাফির বলে গণ্য হবে; কারণ, সে শরী‘য়তের মূলনীতিমালার দ্বিতীয় উৎসকে অস্বীকার করেছে, আর তা হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ; তার অবস্থা যেন বলে: তোমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করো না, বরং শুধু আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য কর; আর সেই ধারাবাহিকতায় ঐ ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করে নি, কেননা আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন; সুতরাং সে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যও করে নি এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যও করে নি; অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٧ ﴾ [الحشر: ٧]

“রাসূল তোমাদেরকে যা দেয়, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে, তা থেকে বিরত থাক এবং তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।” - (সূরা আল-হাশর: ৭); আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤ ﴾ [النجم: ٣، ٤]

“আর তিনি মনগড়া কথা বলেন না। তা তো কেবল ওহী, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরিত হয়।” - (সূরা আন-নজম: ৩, ৪)।

আর বর্তমানে নিজেদেরেকে আলেম বলে যাহির করা ব্যক্তিবর্গের মধ্য থেকে একটি দল আমাদের মধ্যে প্রকাশ লাভ করেছে, যারা আলেমদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নি, তারা শিক্ষা লাভ করেছে শুধু বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে এবং তারা কাগজ বা পাতার নিকট শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছে; তারপরও তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহকে বিশুদ্ধ, দুর্বল ও সনদ (সার্টিফিকেট) দানের ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে, অথচ তাদের নিকট ইলমে হাদিস (হাদিস শাস্ত্র) ও তার আনুসাঙ্গিক নীতিমালা সংক্রান্ত কোনো জ্ঞান নেই; সুতরাং সুন্নাহ’র ব্যাপারে (ক্ষতির দিক বিবেচনায়) প্রথম দলের পক্ষ থেকে আশাঙ্কার চেয়ে এসবের পক্ষ থেকে আশঙ্কার দিকটি অত্যন্ত প্রবল; কারণ, প্রথম দলের অজ্ঞতা ও মূর্খতা স্পষ্ট; আর এরা শিক্ষা ও অধ্যয়নের ঢাল ব্যবহার করে চলেছ, অতএব, لا حول و لا قوة إلا بالله (আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোন ক্ষমতা নেই এবং কোন শক্তি নেই)।

আমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে আবেদন করছি, তিনি যেন সকলকে উপকারী জ্ঞান অর্জন ও সৎ আমল করার তাওফীক (যোগ্যতা) দান করেন; আর আমাদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দান করেন; আর আমাদেরকে সত্যকে যথাযথভাবে দেখিয়ে দেন এবং তা অনুসরণ করার ভাগ্য সুপ্রসন্ন করেন; আর আমাদের সামনে বাতিলকে বাতিল হিসেবে পেশ করেন এবং তার থেকে দূরে থাকার তাওফীক দান করেন; আর তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতবান।

و صلى الله و سلم على نبينا محمد .

* * *

[1] ইমাম আহমদ র, মুসনাদ: ৪ / ১৩০

[2] ইমাম মালেক, মুয়াত্তা: ২ / ৮৯৯ / হাদিস নং- ১৫৯৪

[3] আবূ দাউদ, আস-সুনান: ৪ / ২০ / হাদিস নং- ৪৬০৭; তিরমিযী, আল-জামে‘: ৫ / ৪৪ / হাদিস নং-২৬৭৬; ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ১ / ১৫ / হাদিস নং- ৪২; আহমদ, মুসনাদ: ৪ / ১২৬

[4] বুখারী, আস-সহীহ: ৩ / ১২৭৪ / হাদিস নং- ৩২৬৯; মুসলিম, আস-সহীহ: ৪ / ২০৫৪ / হাদিস নং- ২৬৬৯

[5] ইমাম মালেক, মুয়াত্তা: ২ / ৮৯৯ / হাদিস নং- ১৫৯৪

[6] বুখারী, আস-সহীহ: ১ / ২২৬ / হাদিস নং- ৬০৫

[7] আবূ দাউদ, আস-সুনান: ১ / ১০৭ / হাদিস নং- ৩৯৩; তিরমিযী, আল-জামে‘: ১ / ২৭৮ / হাদিস নং- ১৪৯

[8] মুসলিম, আস-সহীহ: ২ / ৩৪৯ / হাদিস নং- ১২৯৭

[9] অর্থাৎ কয় হাত কাটা হবে, এক হাত, নাকি উভয় হাত, আল-কুরআনে তাও স্পষ্ট করে বলা হয় নি। - অনুবাদক।

[10] বুখারী, আস-সহীহ: ৬ / ২৬৫৫ / হাদিস নং- ৬৮৫১

[11] মুসলিম, আস-সহীহ: ৩ / ৫৯৯ / হাদিস নং- ২০২১

[12] মুসলিম, আস-সহীহ: ৩ / ১৬৫৫ / হাদিস নং- ২০৯০

[13] তিরমিযী, আল-জামে‘: ৫ / ৩৪ / হাদিস নং- ২৬৫৭

[14] বুখারী, আস-সহীহ: ১ / ৩৭ / হাদিস নং- ৬৭; মুসলিম, আস-সহীহ: ৩ / ১৩০৫ / হাদিস নং- ১৬৭৯

[15] মুসলিম, আস-সহীহ: ৪ / ২২৯৮ / হাদিস নং- ৩০০৪

[16] মুতাওয়াতির ঐ বর্ণনা বা হাদিসকে বলে, যার বর্ণনাকারীর সংখ্যা এত অধিক যে, তাদের স্থান ও অঞ্চেলের ভিন্নতার কারণে তারা মিথ্যার উপর ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন বলে ধারণা করা অসম্ভব। - অনুবাদক।

[17] আহাদ ঐ বর্ণনা বা হাদিসকে বলে, যার বর্ণনাকারীর সংখ্যা কোনো যুগে এক থেকে তিন পর্যন্ত, যদিও অন্য যুগে তার চেয়েও বেশী থাকুক না কেন। - অনুবাদক।

[18] যাদের সাথে বিয়ে নিষিদ্ধ, এমন নারীকে মুহাররামা বলা হয়। - অনুবাদক।

[19] তিরমিযী, আস-সুনান, ইলম অধ্যায়, বাব নং- ১০, হাদিস নং- ২৬৬৪

[20] মুসনাদ আহমাদ ৪/১৩০।

[21] বর্ণনাকারী যে শায়খ (বর্ণনাকারী) থেকে হাদিস শুনেছেন, তার নাম উল্লেখ না করে ঊর্ধ্বতন কোন শায়খের নাম উল্লেখ করে এমন ভাষায় হাদিস বর্ণনা করা, যাতে হাদিস শোনার ধারণা সৃষ্টি হয়, তবে মিথ্যার ধারণা হয় না, এরূপ করাই তাদলীস ( تدليس )। - অনুবাদক।

সংকলন : শাইখ সালেহ ইবন ফাওযান আল-ফাওযান

অনুবাদ : মোঃ আমিনুল ইসলাম

সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া