জানুয়ারী মাসের প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন : ইসলামী নেতা নির্বাচনের পদ্ধতি কি? হযরত উমর (রা) , হযরত ওসমান(রা), হযরত অালী (রা) কোন পদ্ধতিতে খলিফা নির্বাচিত হয়ে ছিল? দুটি প্রশ্নের উত্তর কামনা করছি ?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ সা.-এর আগমনের সময় সমগ্র বিশ্বের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ছিল মূলত বংশতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মালিক রাজাতার অন্যান্য সম্পদের মতই রাষ্ট্রের মালিকানাও লাভ করবে তার বংশধরেরারাজ্যের সকল সম্পদ-এর মত জনগণও রাজার মালিকানাধীনরাজা নির্বাচন বা রাজ্যপরিচালনা বিষয়ে তাদের কোনো মতামত প্রকাশের সুযোগ বা অধিকার নেইাসূলুল্লাহ সা. সর্বপ্রথম একটি আধুনিক জনগণতান্ত্রিক পরামর্শ-ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেনএ ব্যবস্থার দুটি বিশেষ দিক ছিল: (১) রাজা ও প্রজার সম্পর্ক মালিক ও অধীনস্থের নয়, বরং মালিক ও ম্যানেজারেরতবে মালিক রাজা ননরাষ্ট্রের মালিক জনগণরাজা তাদের খলীফা বা প্রতিনিধি বা ম্যানেজার হিসেবে তা পরিচালনা করবেনজনগণই তাকে মনোনিত করবেন এবং জনগণ তাকে সংশোধন বা অপসারন করবেন। (২) রাষ্ট্রপ্রধান নির্ধারণ করা একটি জাগতিক কর্ম এবং তা জনগণের কর্মজনগণের পরামর্শের ভিত্তিতে তা সম্পন্ন হবেপরামর্শের ধরন নির্ধারিত নয়যুগ, দেশ ও জাতির অবস্থা অনুসারে তা পরিবর্তিত হতে পারে

ইসলামী ব্যবস্থায় পূর্ববর্তী শাসক কাউকে মনোনয়ন না দিয়ে বিষয়টি জনগণের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিতে পারেনঅথবা জনগণের পরামর্শ ও স্বীকৃতির ভিত্তিতে যোগ্য কাউকে মনোনয়ন দিতে পারেনসবচেয়ে বেশি যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয় নি; কারণ সবচেয়ে যোগ্য নির্ণয়ে সমাজে অকারণ সংঘাত তৈরি করেইসলামে জনগণের পরামর্শ ও স্বীকৃতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছেপরামর্শ ও স্বীকৃতি থাকলে নিজ পুত্র বা বংশের কাউকে পরবর্তী শাসক হিসেবে মনোনয়ন দিতে কোনোভাবে নিষেধ করা হয় নিমূলত বিষয়টি দেশ, কাল ও সমাজের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে
এ ব্যবস্থার আওতায় রাসূলুল্লাহ সা. কাউকে মনোনিত না করে উম্মাতকে সরাসরি নির্বাচনের মুখোমুখি রেখে যানআবূ বকর (রা) নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শক্রমে উমারকে (রা) পরবর্তী শাসক হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে যানউমার (রা) ৬ জনের একটি কমিটিকে মনোনয়ন দেন, যারা জনগণের পরামর্শের ভিত্তিতে তাঁদের মধ্য থেকে উসমানকে (রা) মনোনয়ন দেনউসমান (রা)-এর শাহাদতের পরে মদীনার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ পরামর্শের মাধ্যমে আলী (রা)-কে শাসক মনোনিত করেনআলী (রা) তাঁর ইন্তেকালের পূর্বে তাঁর পুত্র হাসান (রা)-কে পরবর্তী শাসক হিসেবে মনোনয়ন দেন
প্রশ্নঃ ইসলামের অর্থ ও সংজ্ঞা জানতে চাই ?
আঃ রহমান ( ঢাকা )
উত্তরঃ ইসলামের অর্থ সংজ্ঞা-: ইসলাম শব্দের অর্থ আনুগ্যত করা, কোন কিছু মাথা পেতে নেয়াইসলাম শব্দের মূল ধাতু سلم এর অর্থ আবার শাান্তি এবং সন্ধিপারিভাষিক অর্থে একমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সাঃ) প্রদর্শিত জীবন-যাপন অনুসরণ করা এবং এর বিপরীত সমস্ত মত ও পথ পরিহার করে চলাকেই বলা হয় ইসলামমানুষের ইহকালীন শান্তি এবং পরকালীন মুক্তির এটাই একমাত্র সনদমূলত মানুষ ইসলামী আদর্শ কবুলের মহান আল্লাহর সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়
কোরআনের ভাষায়: সন্দেহ নেই আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের জান ও মাল বেহেশতের বিনিময়ে খরিদ করে নিয়েছেন, এখন তাদের একমাত্র কাজ হলো আল্লাহর পথে লড়াই করা, সংগ্রাম করাপরিণামে জীবন দেয়া বা জীবন নেয়া।(সূরা আত তাওবা ১১১)
সিলমুন অর্থ শান্তিকিন্তু সে শান্তি নিছক নীতিকথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়কিংবা নয় নিছক কিছু শান্তিমূলক উপদেশবাণীর মধ্যেও সীমাবদ্ধ ইসলম-শান্তি এই অর্থে যে, মানুষের জীবন ও সমাজের সর্বত্র অশান্তি বিরাজ করছে ইসলাম না থাকার কারণেঅন্য কথায় আল্লাহর দাসত্ব ও গোলমির পরিবর্তে মানুষ মানুষের দাসত্ব ও গোলামিতে নিমজ্জিত আছে বলেই মানুষের সমাজে অশান্তির আগুনে জ্বলছেসর্বশক্তি নিয়োগ করে, সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে মানুষের সমাজকে এই অশান্তির কবল থেকে মুক্ত করার জোর তাকিদ ইসলামে রয়েছে বলেই ইসলাম শান্তির বাহকএই শান্তি প্রতিষ্টার স্বাভাবিক দাবী অনুসারে ইসলামকে শক্তির অধিকারী হওয়া এতন্তই অপরিহার্যএভাবে ইসলামের নিজস্ব পরিচয়ের মাঝে মানুষের সমাজে একটা আমূল পরিবর্তন ঘটানোর ও উলট পালট করার উপাদান নিহিত রয়েছে
ইসলাম মানুষের জন্য একমাত্র র্পূণাঙ্গ জীবন বিধান মানুষের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের সর্বত্র প্রতিষ্টা লাভই তার অন্তর্নিহিত দাবীসুতরাং ইসলাম একটা র্পূণাঙ্গ আন্দোলন ও বটেমানব সমাজকে মানুষের প্রভুত্বের যাঁতাকল থেকে মুক্ত করে আল্লাহর প্রভুত্ব ও সার্বভৌমত্বের ভিাত্ততে মানুষকে সুখী সুন্দর জীবন যাপনের সুযোগ করে দেয়াই ইসলামকাজেই মানুষের প্রকৃত শান্তি, মুক্তি ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনই ইসলামএই শাশ্বত সত্যটি বাস্তবে উপলব্ধি করতে পারলে যে কোন ব্যক্তিই বলবে ইসলাম মূলতই একটি আন্দোলনবরং আন্দোলনের সঠিক সংজ্ঞার আলোকে ইসলামই একমাত্র সার্থক ও সর্বাত্মক আন্দোলন
প্রশ্ন : বিয়ের সময় বর-কনের গায়ে গলুদ লাগানো হয় এবং গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা হয়এগুলো করা কি ইসলামসম্মত ?
উত্তর : গায়ে হলুদ শুধু আমাদের কালচার, তা ঠিক নয়ইসলামী কালচারের মধ্যে এটা আসেনিকিন্তু এটা কোনো গুনাহের কাজ নয়এটা যদি ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করে, তাহলে ভুল হবেএটা ইবাদতের বিষয় নয়এটা হচ্ছে এলাকার প্রচলন হিসেবেসৌন্দর্যের জন্য এটা করা যেতে পারেএখন ছেলেরা মেয়েদের আবার মেয়েরা ছেলেদের আনুষ্ঠানিকভাবে গায়ে হলুদ দেয়, তা ঠিক নয়এগুলো পুরোটাই শরিয়াহ অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়এই আনুষ্ঠানিকতা ইসলামে কোথাও আসেনিতবে ব্যক্তিগতভাবে যদি কেউ গায়ে হলুদ মাখে, তাহলে সেটা জায়েজ অনানুষ্ঠানিকভাবে যদি কেউ সৌন্দর্যের জন্য মেহেদি দিয়ে কাউকে সাজায়, সেটা জায়েজ আছে
প্রশ্ন : আযানের সময় মহিলারা মাথায় কাপড় দেয়শরীআতে এরূপ কোন বিধান আছে কি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর : এরূপ কোন বিধান নেইএর দ্বারা যদি কোন মহিলা বিশেষ ছওয়াব কামনা করে কিংবা ফেরেশতা দেখবে বলে মনে করে, তাহলে তা নিঃসন্দেহে বিদআত হবে এসময় আযানের জওয়াব প্রদান করা ও শেষে আযানের দোআ পাঠ করাই সুন্নাত
প্রশ্ন : মহিলাগণ চিকিসার ক্ষেত্রে মহিলা ডাক্তার না পাওয়ায় পুরুষ ডাক্তারের নিকটে যাওয়ায় শরীআতে কোন বাধা আছে কি?
উত্তর : মহিলা ডাক্তার না পাওয়া গেলে বাধ্যগত অবস্থায় পুরুষ ডাক্তারের নিকটে যাওয়া যাবে বদর, ওহোদ প্রভৃতি যুদ্ধে মহিলা ছাহাবীগণ আহত মুসলিম সৈন্যদের সেবা-শুশ্রূষা করতেন (বুখারী হা/৫৬৭৯, মুসলিম হা/১৮১০, মিশকাত হা/৩৯৪০) এছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী মহিলাদের সতরের প্রতি দৃষ্টিপাত করা চিকিসকের জন্য জায়েয  (বুখারী হা/৩০০৭; ইবনু কুদামা, মুগনী ৬/৫৫৬) তবে সম্ভব হলে একজন মাহরাম পুরুষ সাথে নিবে (বুখারী হা/৩০০৬, মিশকাত হা/৩১১৮)
প্রশ্নঃ আমরা মাযহাব কিভাবে মানবো?
মাযহাব নিয়ে প্রশ্নের উত্তরঃ শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ এর কাছে একবার এক লোক এসে বললোঃ শায়খ আমি আমার অমুক মাযহাব চেঞ্জ করতে চাইকারণ আমি দেখলাম আমার মাযহাবের অনেক ফতোয়াই আসলে সহীহ হাদীসের বিপরীত
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ তাকে বললেনঃ
দেখুন আপনি যদি আপনার অমুক মাযহাব পরিবর্তন করে অন্য মাযহাবে যান তাতে কি ফায়দা? কারণ কিছুদিন পরে আপনি দেখবেন ঐ মাযহাবেও কম বেশি কিছু ভুল ফতোয়া আছে
(এডমিনের নোটঃ কারণ, ৪টা মাযহাবেই আসলে কিছুনা কিছু ভুল ফতোয়া আছে, যা কুরান অথবা সহীহ হাদীসের বিপরীতএই ভুল ফতোয়া আছে বলেইতো ৪টা ভাগ হয়েছেসবাই যদি ১০০% ঠিক থাকতো, তাহলেতো আর কোন ভাগাভাগিই হতোনা, তাইনা?)
এইরকম নতুন মাযহাবে গিয়ে যখন ভুল দেখবেন, তখন বলবেন, আমি মাযহাব পরিবর্তন করবোবা তখন আফসোস করে বলবেন, আগের মাযহাবইতো ভালো ছিলো! তাই আপনি মাযহাব পরিবর্তন না করে বরং এক কাজ করুন, আপনি যেই মাযহাবে আছেন সেই মাযহাবটাতেই থাকুন, কিন্তু সেটাকে ৩টি ভাগে ভাগ করুন
১. প্রথম ভাগ হচ্ছে আপনি যেই মাযহাবে আছেন সেই মাযহাবের যেই ফতোয়াগুলো কুরান ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত, দলীল-প্রমান অনুযায়ী যেই ফতোয়াগুলি সঠিক, আপনি সেইগুলো মেনে চলুন, সেইগুলোর উপর আমল করুনএতেতো আপনি আসলে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই অনুসরণ করছেন
২. দ্বিতীয় ভাগ হচ্ছে, আপনার মাযহাবের যেই ফতোয়াগুলি কুরান ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী ভুল, আপনার মাযহাবের যেই ফতোয়াগুলো হক্কপন্থী নির্ভরযোগ্য মুহাক্কিক ওলামারা ভুল বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন, আপনি সেইগুলো ছেড়ে দিয়ে কুরান ও সুন্নাহকেই মেনে নেনমাযহাবের ভুল ফতোয়া বা আমল ছেড়ে দিয়ে সুন্নতের উপর আমল করুন
৩. আর যেই ব্যাপারে সরাসরি কুরান ও হাদীসের কোন প্রমান নেই, যেই ব্যপারে আসলে আমরা কোন না কোন ইমাম বা আলেমের কথা মানছি, অর্থা ফকীহগণের ইজতিহাদবা কিয়াসেরঅনুসরণ করছি, সেই ব্যপারে আসলে এই সবগুলো হচ্ছে আলেমদের অনুমান বা যুক্তিকেউই চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত না, কারণ কুরান ও হাদীসে এই ব্যপারে সরাসরি কিছু আসেনাইএইরকম ব্যাপারে আসলে আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে, ইমাম ও আলেমদের অনুসরণ করতেসুতরাং, এই ব্যপারে আপনার কাছে যেটা সহজ যেটা মনে হয় সেটা করুন
এখন এতো গেলো যার পক্ষে সম্ভব যাচাই বাছাই করা, আসলে কোনো ব্যপারে দলীল আছে কি নাইএখন অনেকে আছে, যার পক্ষে আসলে কুরান ও হাদীসের দলীল যাচাই করা সম্ভব নাধরুন কেউ আরবীই জানেনা, পড়তে জানেনা, আলেমদের কাছ থেকে শেখার কোনো সুযোগ নাই যে আসলে কোনটা সঠিক কোনটা ভুল, বা ধরেন আমার দাদু যার বয়স ৭০ এর উপরে, তার পক্ষেতো কোনদিনই সম্ভব নাই এইগুলো ঘেটে দেখাতাহলে তারা কি করবেন?
সাধারণ মানুষ যারা কুরআন ও হাদীস থেকে গবেষণা করে কোনো মাসয়ালা-মাসায়েলের উত্তর বের করার যোগ্যতা রাখেন না তারা নির্ভরযোগ্য কোনো আলেমকে জিজ্ঞাসা করে সেটার উত্তর জেনে নেবেন
যেমনটা আল্লাহ তাআলা কুরানুল কারীমে উল্লেখ করেছেনঃ
ফাস-আলু আহলায-যিকরি ইন কুনতুম লা তাআ'লামুন
অর্থঃ যদি তুমি না জানো তাহলে যারা জ্ঞানী তাদের কাছ থেকে জিজ্ঞাস করে জেনে নাও। [সুরা আল-আম্বিয়াঃ ৭]
কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, যাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে তিনি একজন আলিম, বিদাতী বা মূর্খ কেউ না যে আলিমের বেশ ধরে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছেআজকাল অনেক বের হয়েছে, বড় বড় টাইটেল আর ডিগ্রী দেখিয়ে বেড়ায়, কিন্তু মূলত তারা বিদাতপন্থী - তাই ...সাবধান

প্রশ্নঃ রসূলুল্লাহ সা.এর তাই য়াম্মুম পদ্ধতি কি? উত্তরঃ রসূলুল্লাহ সা. যখন তাইয়াম্মুম করতেন, এভাবে করতেন, দুই হাতের তালু শুধুমাত্র একবার মেরে তা দিয়ে দুই হাত এবং মুখমণ্ডল মাসেহ করে নিতেনএর জন্যে দুবার হাত মারতেন বলে সহীহ হাদিসে কোনো প্রমাণ নেইতাছাড়া তিনি হাত কুনুই পর্যন্ত মাসেহ করতেন বলেও কোনো প্রমাণ নেইইমাম আহমদ আম্বল বলেছেন, যারা এর বিপরীত বলেন, সেটা তাদের নিজস্ব মত, তা রসূলুল্লাহ সা. থেকে প্রমাণিত নয়
রসূলুল্লাহ সা. সে মাটি দিয়েই তাইয়াম্মুম করতেন, যে মাটিতে নামায পড়া জায়েযতাইয়াম্মুম করার জন্যে শক্ত মাটি, বালু এবং লোনা মাটিতে হাত মারতেনতিনি বলেছেন, “আমার উম্মতের কোনো ব্যক্তি যেখানেই নামায পড়বে, সেখানেই তার জন্যে মসজিদ এবং পবিত্রতা অর্জনের ব্যবস্থা রয়েছে,-
-এ হাদিস থেকে পরিস্কার হয়ে যায়, কেউ যদি বালুময় স্থানে নামায পড়ে তাবে তার তাইয়াম্মুমের জন্যে বালুই যথেষ্ট
রসূলুল্লাহ সা. যখন তাবুকের যুদ্ধে গেলেন, সেখানে পানির দুষ্প্রাপ্যতার কারণে বালু দিয়েই তাইয়াম্মুম করেছিলেনতাবুকে যাবার সময় তিনি মাটির চাকা বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, কিংবা তাঁর সাহাবিগণের কাউকেও নিতে বলেছিলেন- এমন কোনো প্রমাণ নেইআসলে বালুকার অধিকাংশই তো মাটিহিজাজের ভূমিকা অবস্থাও অনরূপ
রসূলুল্লাহ সা. থেকে তাইয়াম্মুমে হাত মোছার কোনো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি জানা যায় নাএকটি পদ্ধতির কথা বলা হয়ে থাকে যে, বাম হাতের তালুডান হতের পিঠের মাথা থেকে শুরু করে কুনুই পর্যন্ত নিয়ে আবার ঘুরিয়ে হাতের নিচের অংশ মুছে নিতে হবে এবং একইভাবে বাম হাতও মুছতে হবে পদ্ধতির পক্ষে রসূল সা. থেকে কোনো প্রমাণ নেই, সাহাবাগণ থেকেও নয়তিনি এমনটি করার নির্দেশও দেননি এবং পছন্দ করেছেন বলেও প্রমাণ নেই
রসূলুল্লাহ সা. তাইয়াম্মুমকে অযুর মর্যাদা প্রদান করেছেনতিনি প্রত্যেক নামাযের জন্যে আলাদা আলাদা তাইয়াম্মুম করেছেন বলে কোনো প্রমাণ নেইএমনটি করার নির্দেশও তিনি দেননিএটাই সঠিক কতা যদি এর বিপরীত কোনো দলিল পাওয়া না যায়
প্রশ্ন : কিছু লোক বলে শরীআত এবং মারেফাত আলাদামারেফাত বলে কিছু আছে কি?
উত্তর : মারেফাতঅর্থ চেনা বা বিশেষভাবে জানাপারিভাষিক অর্থে আল্লাহকে জানাঅন্য সৃষ্টির সাথে মানুষের পার্থক্য এই যে, তাকে জ্ঞান দান করা হয়েছে এজন্য যে, তার দ্বারা সে তার প্রতিপালককে চিনতে পারবে ও তার লাভ ও ক্ষতির তারতম্য করতে পারবেকিন্তু মানুষের জ্ঞান সসীম, যা দিয়ে সে তার ভবিষ্য ভাল ও মন্দ যথার্থভাবে তারতম্য করতে পারে নাসেকারণ আল্লাহ অনুগ্রহ করে আদেশ ও নিষেধ সম্বলিত শরীআত নাযিল করেছেনযা মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের পথ দেখায়
অতএব পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শরীআত নাযিল হওয়ার পর আল্লাহকে পাওয়ার জন্য অন্য কোন কল্যাণের পথ বা তরীকা তালাশ করার আবশ্যকতা নেইসেটা করতে গেলে মানুষ আল্লাহ্র পথ থেকে বিচ্যুত হবে ও শয়তানের খপ্পরে পড়বে (নিসা ১৬৫)রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীগণের যুগে মারেফাত বলে পৃথক কোন পদ্ধতি ছিল নাএগুলি পরবর্তী যুগে কিছু কথিত দুনিয়াত্যাগী মানুষের দ্বারা সৃষ্টযা মুমিনকে শরীআত মান্য করা থেকে দূরে সরানোর অপকৌশল মাত্রএগুলি স্রেফ বিদআতী প্রথাএসব থেকে দূরে থাকা কর্তব্য

প্রশ্ন : সূরা ইউসুফের ১০০ আয়াতে পিতা- মাতাকে সিজদা করা যায় বলে প্রমাণ মেলেএক্ষণে কাউকে সম্মান ও শ্রদ্ধাবশতঃ সিজদা করায় শরীআতে কোন বাধা আছে কি ?
উত্তর : ইয়াকূবী শরীআতে সম্মানের সিজদা করা জায়েয ছিল (ইবনু কাছীর, ঐ আয়াতের তাফসীর দ্রঃ)
কিন্তু মুহাম্মাদী শরীআতে এটি হারাম করা হয়েছে এবং এভাবে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের প্রতি সিজদা করার দূরতম সম্ভাবনাকে ও মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে
মুআয (রাঃ) শাম থেকে ফেরার পর রাসূল (ছাঃ)- কে সিজদা করলে তিনি বললেন,
কি ব্যাপার হে মুআয!
তিনি বললেন,
আমি শামে গিয়ে দেখলাম, সেখানকার অধিবাসীরা তাদের পোপ ও পাদ্রীদেরকে সিজদা করে
তাই আমি আপনার ক্ষেত্রেও তাদের মত করার ইচ্ছা করেছি
রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা এটা করো নাআল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে যদি সিজদা করার
নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে তার স্বামীর প্রতি সিজদা করার নির্দেশ দিতাম
যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন তাঁর কসম করে বলছি, কোন নারী ততক্ষণ পর্যন্ত তার প্রভুর হক পূরণ করতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার স্বামীর হক পূরণ না করবে.... (আহমাদ, ইবনু মাজাহ হা/১৮৫৩, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১২০৩)
একইভাবে রাসূল (ছাঃ) ক্বায়েস বিন সাদ (রাঃ)-কেও এ থেকে নিষেধ করেছিলেন
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, আল্লাহ ব্যতীত কাউকে সিজদা করা মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমতে হারাম(মাজমূফাতাওয়া ৪/৩৫৮)

প্রশ্নঃ আল্লাহ্‌র অলী হওয়ার বিষয়টি কি শুধু কতিপয় মুমিনের সাথে নির্দিষ্ট নাকি সকল মুমিনের ক্ষেত্রেই তা সম্ভব?
উত্তরঃ প্রত্যেক প্রকৃত মুমিন-মুত্তাক্বী ব্যক্তিই আল্লাহ্‌র অলী
মহান আল্লাহ বলেন,
মনে রেখো, যারা আল্লাহ্‌র অলী, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে নাতারা হচ্ছে, যারা ঈমান এনেছে এবং তাক্বওয়া অর্জন করেছে” (ইউনুস ৬২-৬৩)
আর তাক্বওয়া হচ্ছে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে চলাঅতএব, আল্লাহ্‌র অলী হওয়ার বিষয়টি সকল মুমিন নর-নারীর জন্য উন্মুক্ত; বিশেষ কারো জন্য তা নির্দিষ্ট নয়


প্রশ্ন: বিভিন্ন ইসলামী সোল্গান অথবা ইসলামিক পোষ্টারে নারায়ে তাকবির বলে, এর মানে কি?
উত্তরঃ এটা ইসলামে (কুরআন ও সুন্নাহ) ব্যবহৃত কোন নির্দেশিত শব্দ নয় পরবর্তী লোকেদের ব্যবহৃত পারিভাষিক অর্থের একটি শ্লোগানসরাসরি এই শব্দ কুরআন ও সুন্নাহতে ব্যবহৃত হয় নিহাদিসে নববীতে (সঃ) সাহাবাগণ (রাঃ) কর্তৃক তাকবীরের বর্ণনা আছেযেমনঃ আইয়ামে তাশরীকে, ঈদের দিনে, জিহাদের ময়দানে, সলাতে, কোন উঁচু স্থানে উঠতে ও যে কোন সময়ে আল্লাহ্‌র বড়ত্ব ঘোষণা করতেআমি নিম্নে এই শব্দটি নিয়ে সামান্য আলোচনা করবোএ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠবেআশা করি বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে, ইনশা~আল্লাহএই শব্দটি কয়েকটি ভাষায় ব্যবহৃত হয় এবং তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থেআর এখানে আলোচ্য বিষয়ের ব্যবহৃত শব্দটি আরবি শব্দ- نري تكبيرআমি এখানে এই শব্দটির বিভিন্ন ভাষায় ব্যবহৃত অর্থগুলি তুলে ধরলাম
আরবিতেঃ نرىদেখা, نار-আগুন, ناريআগ্নেয়াস্ত্র
ফার্সিতেঃ نریপুরুষ, ناریনারী
উর্দুতেঃ نر- (প্রথম প্রবর্তক) পুরুষ, ناری- নারী এবং نریনিছক, সামান্য বা সাধারণ
نري تكبير / نري التكبير- এর অর্থ দাঁড়ায় বৃহত্তরীকরণ /বড় করে দেখা/ বড় করে বলাআর পারিভাষিক অর্থে উচ্চ স্বরে বলাকিন্তু আরবি ভাষা-ভাষী মানুষেরা শুধুমাত্র তাকবীর
التكبير/ تكبير (মূল- كبر/كبير , আল্লাহ্‌র ক্ষেত্রে- أكبر / الكبير) দ্বারাই বড়ত্ব প্রকাশ করে থাকেন
الله أكبر كبيرة/ الله أكبر - যেমন তারা বলে থাকেন
বলাই ভালتكبير তাই, আমি মনে করি বড়ত্ব প্রকাশ করার জন্য
نرى التكبير এর نرى
শব্দটি এখানে দ্বিরুক্তি বা অতিরিক্তআর আতিরিক্ত কোন জিনিষ পরিহার করাই ভাল
তবে, আরেকটি সোর্স থেকে জানতে পেরেছি যে, Nara মানে হচ্ছে উচ্চস্বরে চিকার করা ও Takbir এর অ্যারাবিক নাম হচ্ছে Allah hu Akbar. এখন নারায়ে তাকবীর অর্থঃ আল্লাহু আকবার বলে চিকার করা

প্রশ্ন : কোরআন শরিফ খতম করার নিয়ম কী? মা-বাবার উদ্দেশে কোরআন শরিফ খতম করা যাবে কি?
উত্তর : কোরআন শরিফ খতম তো আল্লাহর উদ্দেশে হতে পারেআল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হতে পারেমা-বাবার জন্য কোরআন শরিফ খতম করবেন নাএটা শুদ্ধ নয় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরআন খতম করবেনতার পর আপনি মা-বাবার জন্য দোয়া করবেন
কোরআন শরিফ খতম করার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেইকোরআনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তেলাওয়াত করাই হলো কোরআন শরিফ খতম করাএর মধ্যে সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই যে সেই নিয়ম অনুযায়ী আপনি তেলাওয়াত করবেনকিন্তু কোরআন শরিফ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তেলাওয়াত না করলে খতম হবে না এবং সেটা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য খতম করতে হবেমা-বাবার সন্তুষ্টির জন্য নয়
আপনি খতম করার পর মা-বাবার জন্য দোয়া করবেনএকমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কোরআন খতম করবেনতাহলেই সেটা কোরআন খতম হবেঅন্য কোনো উদ্দেশ্যে খতম করলে আপনি গুনাহগার হবেন, যদি সেটা আপনি মা-বাবার উদ্দেশে খতম করেনকোরআন শুধু খতম করলেই হবে না, তার অর্থ বুঝতে হবেকোরআন শরিফ খতম করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কোরআন উপলব্ধি করাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
প্রশ্ন : ছেলেরা কি হাতে মেহেদি দিতে পারবে ?
উত্তর : হাতে মেহেদি দেওয়া নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছেতবে দিতে চাইলে দিতে পারবে কিন্তু ওলামায়েকেরামদের কেউ কেউ বলেছেন, যেহেতু মহিলারাই মেহেদি বেশি ব্যবহার করে, এটা নির্ভর করছে এলাকার প্রচলনের ওপরআবু বক্কর (রা.) দাড়িতে মেহেদি ব্যবহার করেছেনযদি শুধু মহিলাদের জন্য জায়েজ হতো, তাহলে পুরুষদের দাড়িতে নেওয়া জায়েজ হতো নাসুতরাং যাঁরা বলেছেন, মেহেদি শুধু মহিলারা ব্যবহার করবে, তা ঠিক নয়পুরোটাই নির্ভর করছে এলাকার প্রচলনের ওপর
প্রশ্নঃ উমরী ক্বাযাআদায় করা যায় কি ?
উত্তরঃ যারা পূর্বে ছালাত আদায় করত না তারা ছালাত শুরু করার পর অতীতের বকেয়া ছালাত সমূহ ফরয ছালাতের পর আদায় করে থাকেঅথচ উক্ত আমলের পক্ষে কোন দলীল নেই মূলতঃ এটি একটি বিদআতী প্রথা [1] রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের স্বর্ণযুগে উক্ত প্রথার অস্তিত্ব ছিল নাসুতরাং পূর্বের ছুটে যাওয়া ছালাতের জন্য আল্লাহর কাছে বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করবেআল্লাহ চাইলে পূর্বের পাপ সমূহ ক্ষমা করে দিতে পারেন এবং তা নেকীতে পরিণত করতে পারেন (ফুরক্বান ৭০-৭১; যুমার ৫৩)তাছাড়া ইসলাম তার পূর্বেকার সবকিছুকে ধসিয়ে দেয়।[2] সম্ভবতঃ একাধিক ছালাত ক্বাযা হওয়ার কারণেই মহিলাদের মাসিক অবস্থার ছালাত পূরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়নি; বরং ছিয়াম ক্বাযা করার কথা বলা হয়েছে।[3] উল্লেখ্য যে, রামাযানের শেষ জুমআয় পূর্বের ক্বাযা হওয়া ছালাত আদায় করার যে ফযীলত বর্ণনা করা হয়, তা মিথ্যা
[1]. আলোচনা দ্রষ্টব্য : আলবানী-মিশকাত হা/৬০৩, টীকা-২। [2]. মুসলিম হা/৩৩৬, ১/৭৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/২২১), ‘ঈমানঅধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৬; মিশকাত হা/২৮, ‘ঈমানঅধ্যায়। [3]. ছহীহ মুসলিম হা/৭৮৯, ১/১৫৩ পৃঃ, (ইফাবা হা/৬৫৪), ‘ঋতুঅধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৫; মিশকাত হা/২০৩২, ছিয়ামঅধ্যায়, ‘ক্বাযা ছিয়ামঅনুচ্ছেদ নিজে জানুন আমল করুন.শেয়ার করে ঈমানী দায়িত্ব পালন করুন.
প্রশ্নঃ আমরা যে কাপড়ের মোজা পরি তার মাসাহ করা বৈধ হবে কি ? দলীল সহজানালে উপকৃত হব
উত্তরঃ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে মুবারকবাদনিচে এব্যাপারে আলোচনা করা হল আশা করি আপনি তাতে উত্তর খুজে পাবেন ইনশা আল্লাহ মোজা বুঝাতে আরবীতে দুটি শব্দ রয়েছে: খুফ্ফ ( ﺍﻟﺨﻒ ) অর্থা চামড়ার মোজা এবং জাওরাব ( ﺍﻟﺠﻮﺭﺏ) অর্থা কাপড়, পশম ইত্যাদির মোজা প্রথম প্রকারের মোজার উপর মাসাহ করার বিষয়টি রাসূল সাঃ থেকে সন্দেহাতীত ভাবে মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন: একদল হাফেজে হাদীসের স্পষ্ট বক্তব্য হল খুফ্ফাইনের (চামড়ার মোজার উপর) মাসাহ করার বিষয়টি রাসূল সাঃ থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণীতফাতহুল বারী ” (খন্ড১, পৃষ্ঠা ৩৮৫)
এব্যাপারে হযরত মুগীরা ইবরে শুবা রাঃ থেকে বর্ণীত আছে তিনি বলেন:
ﻭَﻣَﺴَﺢَ ﺑِﺮَﺃْﺳِﻪِ ﻭَﻣَﺴَﺢَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺨُﻔَّﻴْﻦِ
অর্থঃ আর তিনি তাঁর মাথা মাসাহ করলেন এবং চামড়ার মোজার উপর মাসাহ করলেনবুখারী ,আস-সহীহ, হাদীস নং(২০৪)মুসলিম , আস সহীহ, হাদীস নং (৬৪৯) বুখারী এবং মুসলিম
দ্বিতীয় প্রাকারের মোজা তথা জাওরাব বা কাপড়ের মোজার উপর রাসূল সা. মাসাহ করেছেন কিনা তা সহীসূত্রে পাওয়া যায় নাফলে এবিষয়ে ইমামদের মাঝে মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়তবে গ্রহনযোগ্য মত হল, যদি মোটা হয়,মজবুত হয়, পায়ের সাথে এটে থাকে, চলাচল করার মত হয় তাহলে আশা করা যায় মাসাহ করা যাবেযেমন ইমাম আহমাদ রহঃ বলেছেন : যদি তার উপর হাটাচলা যায় এবং তা পায়ের সাথে লেগে থাকে তাহলে তার উপর মাসাহ করতে কোন সমস্যা নেই ” (ইবনে কুদামা, “ আল মুগনি ” ,খন্ড ১ , পৃষ্ঠা ৩৭৬।)
হানাফী মাযহাবের উলামায়ে কেরামের মধ্য হতে ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ ও মুহাম্মাদ রহঃ এর মতে মোজা যদি মোটা হয় তাহলে তার উপর মাসাহ করা জায়েযইমাম আবু হানীফা রহঃ ভিন্নমত পোষণ করলেও শেষ জীবনে ছাহেবাইনের মত গ্রহন করেনযেমন আল্লামা কাসানী রহঃ বলেন: তবে যদি পুরু এবং মোটা হয় সে ক্ষেত্রে আবু হানীফার মতে জায়েজ নেই আর ছাহেবাইন রহঃ এর নিকট তার উপর মাসাহ করা বৈধ বর্ণীত আছে যে, আবু হানীফা রহঃ জীবনের শেষ দিকে ছাহেবাইনের মত গ্রহন করেছেনবাদাইউস সানাইয়ী , খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১০
আবু হানীফা রহঃ ছাহেবাইনের মত গ্রহন করার বিষয়টি তিরমিযী রহঃ উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন:
অর্থঃ (ইমাম তিরমিযী রহঃ বলেন:)আমি সালেহ ইবনে মুহাম্মাদ কে বলতে শুনেছি, আমি আবু মুকাতিলকে বলতে শুনেছি যে, আমি আবু হানিফার নিকটে তার মৃত্যু পূর্ব অবস্থায় গমন করলামতিনি ওজু করার জন্য পানি আনতে বললেন অতপর ওজু করলেন আর তিনি তার পায়ে থাকা জাওরাবের উপর মাসাহ করলেনএরপর বললেন : আমি আজ যেটা করলাম তা ইতিপূর্ব কখন করিনিআমি শুধু জাওরাবের উপর মাসাহ করলাম তিরমিযী ,আস- সুনান, খন্ড ১,পৃষ্ঠা ১৬৯ ,তাহকীক ,আহমাদ শাকের । (প্রকাশক ,দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বইরুত, লেবানন)
মোটকথাঃ জাওরাব বা কাপড়ের মোজার উপর মাসাহ করার ব্যাপারে ইমামদের মাঝে মতবিরোধ আছে, তবে গ্রহনযগ্য মত হল,যদি তা মোটা হয়,মজবুত হয়, পায়ের সাথে এটে থাকে, চলাচল করার মত হয় তাহলে আশা করা যায় মাসাহ করা যাবেসুতরাং আমাদের মুজা যদি মজবুত হয়, পায়ের সাথে এটে থাকে, চলাচল করার মত হয় তাহলে তার উপর মাসেহ করা যাবে আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বিষয়ের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন আমীন