ফলের পুষ্টিগুণ (কমলা, আপেল, পেঁপে, পেয়ারা, কলা ও আনারস)
কত খাবারই তো আমরা খাচ্ছি কিন্ত আমরা শুধু আমাদের প্রয়োজন টুকু মিটাচ্ছি তাই জানতে পারি না এর গুণাগুণ ।
তাই একটু অসুস্থ হলেই ডাক্তারের কাছে ছুটু- ছুটি করি । আল্লাহ্ তায়ালার দেয়া প্রতিটা খাবারের মধ্যেই রয়েছে
অসংখ্য পুষ্টি গুণ ,আমরা যদি এ পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি তাহলে দেখব এসব খাবারের মধ্যেই রয়েছে সুস্থ
থাকার অসংখ্য টিপস ।আসুন, আমরা সংক্ষেপে কিছু কিছু খাবারের পুষ্টি গুণ সম্পর্কে জানি:
- কমলার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
- ০ দৈনিক আমাদের যতটুকু ভিটামিন ‘সি’ প্রয়োজন তার প্রায় সবটাই ১টি কমলা থেকে সরবরাহ হতে পারে।
- ০ কমলাতে উপস্থিত এন্টি অক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিকেল ড্যামেজ করে ফলে ত্বকে সজীবতা বজায় থাকে।
- এতে উপস্থিত এন্টি অক্সিডেন্ট বিভিন্ন ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- ০ কমলাতে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন সেল ড্যামেজ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- ০ এতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম, যা দাঁত ও হাঁড়ের গঠনে সাহায্য করে।
- ০ এতে ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে বস্নাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- ০ এতে উপস্থিত পটাশিয়াম ইকেট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখে এবং কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম ভালো রাখতে সহায়তা করে।
- ০ গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, কমলাতে উপস্থিত লিমিণয়েড, মুখ,ত্বক, ফুসফুস, পাকস্থলী কোমল ও স্তন ক্যান্সার
- প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।
- ০ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- ০ এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে ওজন কমাতেও সহায়তা করে।
- ০ ১০০ গ্রাম কমলাতে আছে: ভিটামিনি বি-০.৮ মি.গ্রাম, ভিটামিন সি-৪৯ মি:গ্রাম, ক্যালসিয়াম-৩৩ মি:গ্রাম, পটাসিয়াম-৩০০ মি:গ্রাম, ফসফরাস-২৩ মি:গ্রাম।
—————————***———————-
আপেলর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানুন- * আপেলে পর্যাপ্ত boron আছে, যা হাড়কে শক্ত রাখতে সাহায্য করে ও ব্রেইনের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে
- * আপেলে আছে flavonoid, যা antioxidant, এটি রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে, হার্টের অসুখ
- ও ক্যান্সার হতে রক্ষা করে
- * অন্যান্য ফলের মত আপেলের চিনি রক্তের চিনির মাত্র বাড়িয়ে দেয় না| ফলে diabetes এর রোগীরা নিশ্চিন্তে
- পরিমানমত আপেল খেতে পারেন |
- * আপেলে কোনো লবন নেই, তাই আপেল থেকে অতিরিক্ত লবন খাবার কোনো সম্ভাবনা নেই|
- * আপেলে সামান্য ভিটামিন সিও আছে| তাই আপেল রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে | তাছাড়া ভিটামিন সি
- তাড়াতাড়ি রোগ সারাতে সাহায্য করে|
- * আপেলের প্রচুর পানি আছে, তাই এটি পানিশুন্যতা দূর করে, তৃষ্ণা মেটায় ও শরীর ঠান্ডা করে|
- * জ্বর হলে তা কমাতে সাহায্য করে, তাই জ্বর এর রোগীরা আপেল খেলে ভালো বোধ করেন|
- * আপেলের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে তা কফ দুর করে|
- * ডায়রিয়া হলে তা সারাতে সাহায্য করে|
- * মাসেল টোন করতে সাহায্য করে ও ওজন কমায়
- * Gastric এর সমস্যা কমায়
- ——————***———————-
- -একটি ফল পেঁপে, যা মিষ্টি হলেও ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারেন।
- -যাদের পেটে গোলমাল দেখা দেয়, তারা পেঁপে খেতে পারেন।
- -ক্যালরির পরিমাণ বেশ কম থাকায় যারা মেদ সমস্যায় ভুগছেন তারা পেঁপে খেতে পারেন অনায়াসে।
- -এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও সি আছে।
- -চোখের সমস্যা বা সর্দিকাশির সমস্যা থাকলে পেঁপে খেতে পারেন, কাজে দেবে।
- -যারা হজমের সমস্যায় ভোগেন তারা পেঁপে খেলে উপকার পাবেন। এই ফলে কোনো ক্ষতিকর উপাদান নেই।
- -পেঁপেতে আছে পটাশিয়াম। তাই এই ফল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- -পাশাপাশি হাইপারটেনশন কমায় অনেকখানি। শরীরে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় পেঁপে।
- -নিয়মিত পেঁপে খেলে হূদযন্ত্রের নানা সমস্যা যেমন হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- -যাদের কানে ঘন ঘন ইনফেকশন হয় তারা পেঁপে খেয়ে দেখতে পারেন, উপকার পাবেন।
- -পেঁপে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ফল, তাই ত্বকের লাবণ্য ও উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে।
- -অজীর্ণ, কৃমি সংক্রমণ, আলসার, ত্বকে ঘা, একজিমা, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা, ডিপথেরিয়া, আন্ত্রিক ও পাকস্থলীর
- ক্যান্সার প্রভৃতি রোগ নিরাময়ে কাঁচা পেঁপের পেপেইন ব্যবহার করা হয়। পেঁপের আঠা ও বীজ ক্রিমি নাশক ও প্লীহা, যকৃতের জন্য উপকারী।
- -এ ছাড়া পেঁপে আরো নানা গুণের অধিকারী।
———————***———————–
পেয়ারা রয়েছে নানা গুণ।
- কাঁচা পেয়ারা হৃদ রোগের উপকার করে|
- কাঁচা পেয়ারা লবন দিয়ে খান কাশের ভাল উপকার হবে|
- কাঁচা পেয়ারা রক্ত বর্ধক|
- পেয়ারা বাত পিত্ত কফ নাশক|
- রীর ঠান্ডা রাখার জন্য কাঁচা পেয়ারা অত্যন্ত উপকারী
- যাদের হাতে পায়ে জ্বালা কাঁচা পেয়ারায় উপকার পাবেন|
- পেয়ারা পাতা দাঁতের মাড়ি ব্যথায় উপকার|
- তুলশি গিলই এবং পেয়ারা পাতা সেদ্ধজল জ্বরের জন্য অত্যন্ত উপকারী
- কাঁচা পেয়ারা আনন্দ দায়ক|
- নেশা মুক্তির জন্য কাঁচা পেয়ারার পাতা সেদ্ধ জল খাওয়ান|
- শিকড়, গাছের বাকল, পাতা এবং অপরিপক্ক ফল কলেরা, আমাশয় ও অন্যান্য পেটের পীড়া নিরাময়ে ভাল কাজ করে।
- ক্ষত বা ঘা-এ থেঁতলানো পাতার প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়। পেয়ারার কচি পাতা চিবালে দাঁতের ব্যথা উপশম হয়।
——————–***——————
কলার পুষ্টিগুণ
- ১. কলা পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল।
- ২. এতে শর্করা, আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ লবণের সমন্বয় রয়েছে।
- ৩. কলায় শর্করা, সামান্য আমিষ, কিঞ্চিত ফ্যাট, পর্যাপ্ত খনিজ লবণ ও যথেষ্ট আঁশ আছে। খনিজ লবনের মধ্য আছে
- পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লৌহ।
- ৪. কলায় ভিটামিন এ, বি ও কিছু ভিটামিন-সি আছে।
- ৫. একটি কলা প্রায় ১০০ক্যালরি শক্তির জোগান দেয়।
- ৬. কলায় আছে সহজে হজমযোগ্য শর্করা, যা শরীরে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে ক্লান্তি দুর করতে সহায়ক।
- ৭. কলা হজমে সাহায্য করে।
- ৮.অ্যাসিডিটি বা গ্রাস্টিক আলসারের রোগীরা কলা খেতে পারেন উপকারী ভেবে।
- ৯. পাকা নরম কলা অ্যাসিডিটি নিরাময়ে সক্ষম।
- ১০. পাকস্থলীর আবরনীতে নরম কলার প্রলেপ আলসারের অস্বস্তি ওকমায়।
- ১১. অ্যাসিডিটির জন্য বুক জ্বালা কমাতেও কলা সহায়ক।
- ১২. কলা যেমন কোষ্টকাঠিন্য দুর করে,তেমনি পাতলা পায়খানাও
- উপকারী।
- ১৩. বাতের ব্যথার জন্য কলা উপকারী।
- ১৪. কলা লৌহ রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরীতে কাজে লাগে। কলা তাই রক্তশূন্যতায় ও উপকারী।
- ১৫. সবশেষে কলা রক্তচাপ কমাতে সহায়ক এবং স্ট্রোক প্রতিরোধে ও কার্যকরী
- ১৬. কলার থোড় বা মোচা এবং শিকড় ডায়াবেটিস, আমাশয়, আলসার, পেটের পীড়া নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।
- আনাজী কলা পেটের পীড়ায় আক্রান্ত রোগীর পথ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। পাকা বীচিকলার বীজ কৃমিনাশক।
আনারসের পুষ্টিগুণ
আনারস বিশ্বের অন্যতম সেরা ফল। সাধারণত: আনারস খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায় তা হল:
আনারস বিশ্বের অন্যতম সেরা ফল। সাধারণত: আনারস খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায় তা হল:
- ১. গরম-ঠাণ্ডার জ্বর, জ্বর-জ্বর ভাব দূর করে এই ফল। এতে রয়েছে ব্যথা দূরকারী উপাদান। তাই শরীরের ব্যথা দূর করার জন্য এর অবদান গুরুত্বপূর্ণ।
- ২. আনারস কৃমিনাশক। কৃমি দূর করার জন্য খালি পেটে (সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে) আনারস খাওয়া উচিত।
- ৩. দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এই ফল। ফলে শিরা-ধমনির (রক্ত বাহী নালি) দেয়ালে রক্ত না জমার জন্য সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত যেতে পারে। হৃদপিন্ড আমাদের শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। আনারস রক্ত পরিষ্কার করে হৃদপিণ্ডকে কাজ করতে সাহায্য করে।
- ৪. এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। জিহ্বা, তালু, দাঁত, মাড়ির যে কোনো অসুখের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আনারস।
- ৫. এতে রয়েছে খনিজ লবণ ম্যাঙ্গানিজ, যা দাঁত, হাড়, চুলকে করে শক্তিশালী। গবেষণা করে দেখা গেছে, নিয়মিত আনারস খান এমন ব্যক্তিদের ঠাণ্ডা লাগা, গলা ব্যথা, সাইনোসাইটিসজাতীয় অসুখগুলো কম হয়।
- ৬. এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি, যা আমাদের শক্তি জোগায়। প্রোটিন খাবার এ ফলটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে, ত্বককে কুঁচকে যাওয়া থেকে বাঁচায়। আনারস টাটকা খাওয়াই ভালো।
- ৭. আনারস জ্বরের ও জন্ডিস রোগের জন্য বেশ উপকারী।
- ৮. দেহের তৈলাক্ত ত্বক, ব্রণসহ সব রূপলাবণ্যে আনারসের যথেষ্ট কদর রয়েছে।
মোট কথা, দেহের পুষ্টি
সাধন এবং দেহকে সুস্থ-সবল ও নিরাময় রাখার জন্য আনারসকে একটি অতুলনীয় এবং
কার্যকরী ফল বলা চলে। সব শেষে একটু ভিন্ন মাত্রায় এনে শেষ করি তা হচ্ছে
খাবারে রঙের ভুমিকা যেমন:
হলুদ ও কমলা ফলমূল ও শাকসবজিতে থাকে বিটা ক্যারোটিন নামক রঞ্জক পদার্থ যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়।
চামড়ায় বলিরেখা পড়া রোধ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
চামড়ায় বলিরেখা পড়া রোধ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যারা ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ ফলমূল ও শাকসবজি
খেয়ে থাকেন তাদের বয়স সমন্ধীয় ও চোখের সমস্যা ৪৩% কমে যায় এবং
ক্যান্সারের ঝুঁকি ৩৬% কমে যায়। কমলা রঙ হলো আনন্দ ও সুখের প্রতীক । কমলা
রঙের ফলমূল ও শাকসবজি মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রবাব ফেলে যেমন মানসিক
প্রশান্তি আনে। অন্যদিকে হলুদ হলো মনের ও বুদ্ধির রঙ। হলুদ ফলমূল ও শাকসবজি
এর মাধ্যমে আমরা বিষন্নতা, বাজে চিন্তা ও অভ্যাস থেকে মুক্তি পেতে
পারি। নিজেকে নিয়ন্ত্রণেও হলুদ ফলমূল ও শাকসবজি ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
Collected from “সবার জানা উচিত”(স্বাস্থ্য সম্পর্কিত) ফেসবুক পেজ ও অন্যান্য ওয়েবসাইট