ইসলামী অভিবাদন

ইসলামে আসলে সালামের গুরুত্বটা কি?

মানুষ একে অন্যের কল্যাণ কামনা করে সে মুসলিম কিংবা অমুসলিম হোক। সালাম কল্যাণেরই একটি নমুনা। পবিত্র কুরআনে কয়েকটি আয়াতের বলা হয়েছে-
وَإِذَا جَاءَكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِآيَاتِنَا فَقُلْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ অর্থ: আর যখন তারা আপনার কাছে আসবে যারা আমার নিদর্শন সমূহে বিশ্বাস করে, তখন আপনি বলে দিনঃ তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। (সূরা-আল আনআম, অধ্যায়-৬, আয়াত-৫৪)
وَإِذَا حُيِّيتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا অর্থ: আর তোমাদের যদি কেউ দোয়া করে, তাহলে তোমরাও তার জন্য দোয়া কর, তার চেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই মত ফিরিয়ে বল। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব-নিকাষ গ্রহণকারী। (সূরা-আন নিসা, অধ্যায়-৪, আয়াত-৮৬)

উপরোক্ত আয়াতসমূহ থেকে স্পষ্টত বোঝা যায় অভিবাদন বা সালাম-এর ক্ষেত্রে একজন মুসলমান যদি অপর মুসলমানকে বলে ‘আসসালামু আলাইকুম’, তাহলে অপরজন এর উত্তরে বলবে, ‘ওয়ালাইকুম আসসালাম ওরাহমাতু্ল্লাহ’ কিংবা কেউ যদি বলে, ‘আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ’ তাহলে অপরজন এর উত্তরে বলবে, ‘ওয়ালাইকুম আসসালাম ওরাহমাতুল্লাহে ওয়াবারাকাতুহু’। অর্থাৎ আল্লাহর দয়া, শান্তি, রহমত আপনার ওপর বর্ষিত হোক। কিংবা কেউ যদি আসসালামু আলাইকুম-এর উত্তরে শুধু ওয়ালাইকুম আসসালাম বলে তবে উত্তরটা বলা উচিত একটু বেশি আবেগ দিয়ে, হৃদয়ের গভীর থেকে। অতএব সালাম-এর উত্তর দিতে হবে অধিকতর উত্তম পন্থায় কিংবা অন্ততপক্ষে সমানভাবে।
তবে মুসলিমদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা কোন প্রতিষ্ঠানের মালিক বিংবা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, তাদেরকে যখন তাদের অধীনস্থরা সালাম দেয় তখন তারা ওয়ালাইকুম সালাম বলে, কিংবা মাথা নাড়ায়, সালামের কোন উত্তরই এরা দেয় না। এই মুসলিমরা মূলত আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার আদেশ অমান্য করছে।
অন্যান্য অভিবাদন এবার দেখা যাক বিভিন্ন সমাজে কোন ধরনের অভিবাদন প্রচলিত আছে। এসব অভিবাদনের মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত যেটা ইংরেজিতে “Good morning”,  আফ্রিকান ভাষায় এটা বলা হয়, ‘খাইয়েমোরা আসাকাবানা’, চীনা ভাষায় ‘চাও সুং’।
এখন ধরা যাক আজকে বৃষ্টি হচ্ছে, একদম মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। এই অবস্থায় একজন লোক আরেকজনকে বললো, “Good Morning”, বৃষ্টি হচ্ছে, রাস্তায় পানি জমে গিয়েছে আর লোকটি বলছে ‘শুভ সকাল’। এখানে সকালটা শুব বলার অর্থ কী?
আবার ধরা যাক একটি ইংরেজি স্কুলের শিক্ষক সকালে স্কুলে আসার আগে স্ত্রীর সাথে বাসা থেকে ঝগড়া করে বেরিয়েছেন। হয়তো স্কুলে আসতে আসতে স্ত্রীকে অভিশাপ দিচ্ছেন আর চিন্তা করছেন স্ত্রীর সাথে আর জীবনেও কথা বলবো না। কিন্তু তিনি স্কুলে এলে ক্লাসে ঢুকার সাথে সাথেই ছাত্রছাত্রী সবাই মিলে বলে উঠবে “Good Morning Sir.” এই লোকটার সকাল কি আসলেই শুভ ছিল?
অভিবাদনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অভিবাদন হল ইসলামি রীতিতে অভিবাদন, আসসালামু আলাইকুম। হতে পারে সেদিন বৃষ্টি হচ্ছে কিংবা স্ত্রীর সাথে বা বন্ধুর সাথে ঝগড়া হয়েছে। এরপরও ‘আসসালামু আলাইকুম’ অর্থ ‘আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’- এটাই একমাত্র সঠিক অভিবাদন। আমাদের তরুণ সমাজের মাধে আরেক ধরনের অভিবাদন প্রচলিত আছে। দুই বন্ধুর যখন দেখা হয় তখন তারা একজন আরেকজনকে বলে “Hi.” উত্তরে অপর বন্ধুও বলে “Hi” এদেরকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় এই “Hi” শব্দের অর্থ কি? তাহলে কেউ বলতে পারবে না। স্থানীয় হিন্দী ভাষায় এই “হাই” শব্দটার অর্থ আফসোস করা। ইংরেজি “High” অর্থ উপরের অবস্থান। এছাড়া এই “হাই” এর আরেক অর্থ মাদকে আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়া। তাহলে এই “Hi” শব্দটা অভিবাদন হিসেবে গণ্য করা যায় কি?
আরেকটি অভিবাদন প্রচলিত আছে ‘Hello’। Oxford Dictionary-তে এই Hello শব্দটার অর্থ দেয়া হয়েছে অনানুষ্ঠানিক অভিবাদন (Informal Greetings)। আরেকটা অর্থ বলা হয়েছে টেলিফোনে যেটা দিয়ে কথা শুরু করা হয়। এই শব্দটা প্রথম প্রচলন শুরু হয় বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল থেকে, যিনি টেলিফোন আবিষ্কার করেছিলেন। ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায় একবার গ্রাহাম বেল ঘর থেকে বের হচ্ছিলেন, আর তখনই টেলিফোনটা বেজে উঠল। তখন কথাবার্তা শুরু করার জন্য তিনি বলেছিলেন ‘Hello’, যাতে অন্যপাশের লোক তার কথা বলতে পারে আর তিনিও তাড়াতাড়ি বের হতে পারেন। এই Hello বলার প্রচলনটা শুরু হয়েছে তখন থেকে, আর এখন এটি প্রচলিত, যদিও এর সঠিক অর্থ নেই।
খুব অবাক হতে হয় যখন দেখা যায় পশ্চিমা বিশ্বের লোকেরা যীশুখ্রিস্টের অভিবাদন ব্যবহার না করে এই Hello শব্দটা ব্যবহার করেন। বাইবেলের নিউটেস্টামেন্টে গসপেল অব লুক-এর ২৪ নং অধ্যায়ের ৩৬নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- সেই তথাকথিত ক্রুসিফিকশান-এর পর যীশুখ্রিস্ট উপরের ঘরে গেলেন শিষ্যদের সাথে দেখা করতে। তিনি তখন তাদেরকে অভিবাদন জানালেন, ‘সালামালাইকুম।’ যদি হিব্রু থেকে আরবি করা হয় এর অর্থ দাঁড়ায় ‘আসসালামু আলাইকুম’ অর্থাৎ আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ(সাঃ) সবসময় লোকজনকে আগে অভিবাদন জানাতেন। সেই সময় নবীজির অনেক সাহাবী চেষ্টা করেছেন নবীজিকে আগে সালাম দিতে কিন্তু কখনই পারেন নি। নবীজি সবসময় আগে সালাম দিতেন, আলহামদুলিল্লাহ।
হযরত আবু হুরায়রা (রা) উল্লেখ করেছেন যে, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন- “আরোহী আগে অভিবাদন জানাবে পথচারীকে আর পথচারী অভিবাদন জানাবে তাকে, যে লোকটা দাড়িয়ে আছে। ছোট দল অভিবাদন জানাবে তার চেয়ে বড় দলকে।” (সহীহ মুসলিমঃ খণ্ড-৩, বুক অব সালাম অধ্যায়, হাদীস-৫৩৭৪) আরো বলা হয়েছে- “এটা প্রত্যেক মুসলিমের অধিকার তার ভাইদের কাছে যে অভিবাদনের উত্তর পাবেন।” (সহীহ মুসলিম, খণ্ড-৩, বুক অব সালাম অধ্যায়, হাদীস-৫৩৭৮) মুমিনের যে কয়টি অধিকার আছে তার ভাইয়ের কাছে তার মধ্যে অন্যতম হল- * সালামের উত্তর দেয়া। * হাঁচির উত্তরে বলা- ‘ইয়ারহাকুমুল্লাহ’। * অসুস্থ কোন মানুষকে দেখতে যাওয়া। * অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া/ জানাযা করা। অর্থাৎ একজন মুসলিম আরেকজন মুসলিমের সাথে দেখা হলে সালাম দিবে এবং সালাম-এর প্রতিউত্তর পাবে- এটা নবীজির নির্দেশ এবং কুরআনেরও স্পষ্ট নির্দেশনা (সূরা আনআমঃ ৫৪)
(সূত্রঃ পোশাকের নিয়মাবলি/ডাঃ জাকির নায়েক)