ইসলাম বিনষ্টকারী কারণসমূহ
ইসলাম বিনষ্টকারী কারণসমূহ
ইসলামে
এমন কিছু আমল আছে, তার কোনো একটিও যদি কোনো মুসলিম সম্পাদন করে তবে সে
শিরক করল বলে বিবেচিত হবে। ফলে তার সমস্ত আমল নষ্ট হয়ে যাবে এবং
চিরস্থায়ীভাবে (জাহান্নামের) আগুনে প্রবেশ করবে। সেসব গুনাহ মহান আল্লাহ
তওবা ব্যতীত ক্ষমা করেন না । নিম্নে সেগুলি বর্ণিত হল:
১। গাইরুল্লাহর নিকট দোআ করা।
এ সম্বন্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ ﴿يونس106﴾
আর
তাঁকে ছেড়ে এমন কাউকে ডেকো না, যে না তোমার উপকার করতে পারে, আর না কোনো
ক্ষতি করতে পারে। আর যদি তা কর, তবে অবশ্যই তুমি যালেমদের (মুশরিকদের)
অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা ইউনুস: ১০৬)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে বলেছেন:
منْ مَاتَ وَهُوَ يَدْعُو مِنْ دُوْنِ اللهِ نِدًّا دخَلَ النَّارَ (رواه البخاري)
যে ব্যক্তি আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার কোনো সমকক্ষকে ডাকা অবস্থায় মারা যাবে তাহলে সে (জাহান্নামের) আগুনে প্রবেশ করবে। (বোখারি)
২।
তাওহীদের কথা শুনলে যাদের অন্তর ঘৃণায় রি রি করে উঠে, তারাই একমাত্র তাঁর
নিকট দুআ করা কিংবা বিপদে সাহায্য চাওয়াকে অপছন্দ করে। আর রাসূলুল্লাহ,
মৃত আউলিয়া কিংবা অদৃশ্য কারো নিকট দুআ করার সময় অন্তর খুশিতে ভরে উঠে।
তাদের নিকট সাহায্য চাওয়া ফলপ্রসূ মনে করে। এগুলো সবই মুশরিকদের নিদর্শন।
এদের সম্বন্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَإِذَا
ذُكِرَ اللَّهُ وَحْدَهُ اشْمَأَزَّتْ قُلُوبُ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ
بِالْآَخِرَةِ وَإِذَا ذُكِرَ الَّذِينَ مِنْ دُونِهِ إِذَا هُمْ
يَسْتَبْشِرُونَ ﴿الزمر45﴾
যারা
আখিরাতে বিশ্বাস করে না, এক আল্লাহর কথা বলা হলে তাদের অন্তর সঙ্কুচিত
হয়ে যায়। আর আল্লাহ ছাড়া অন্য উপাস্যগুলোর কথা বলা হলে তখনই তারা আনন্দে
উৎফুল্ল হয়। (সূরা যুমার: ৪৫)
এই
আয়াত সেসব লোকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যারা একমাত্র আল্লাহর নিকট সাহায্য
প্রার্থনা কারীদের সাথে শত্রুতায় লিপ্ত হয়। তাদেরকে তারা ওহাবি বলে
সম্বোধন করে। কারণ ওহিবিরাই মানুষদেরকে তাওহিদের দিকে ডাকে।
৩। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংবা কোনো ওলীর নামে পশু জবাই করা।
কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ﴿الكوثر:2﴾
তুমি তোমার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও জবাই কর। (সূরা কাওসার: ২)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
لَعَنَ اللهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِاللهِ (رواه مسلم)
যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর নামে জবাই করে, আল্লাহ তার উপর লানত করেন। (মুসলিম)
৪।
নৈকট্য হাসিল ও ইবাদতের নিয়তে কোনো সৃষ্টিকে নজর-নেয়াজ দেয়া। কারণ, নজর
অথবা কিছু উৎসর্গ করা যাবে কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে ।
যেমন আল কোরআনে বলা হয়েছে:
رَبِّ إِنِّي نَذَرْتُ لَكَ مَا فِي بَطْنِي مُحَرَّرًا(آل عمران:35)
হে আমার রব আমার গর্ভে যা আছে, নিশ্চয় আমি তা খাসভাবে আপনার জন্য মানত করলাম। (সূরা আলে ইমরান : ৩৫)।
৫। নৈকট্য হাসিল বা ইবাদতের নিয়তে কবরের চতুর্পাশ্বে তওয়াফ করা। কারণ তাওয়াফ শুধু কাবা শরীফের সাথেই নির্দিষ্ট।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلْيَطَّوَّفُوا بِالْبَيْتِ الْعَتِيقِ (الحج 29)
আর তারা যেন তওয়াফ করে প্রাচীন গৃহের। (সূরা হাজ্জ: ২৯)।
৬। গাইরুল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা।
কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوا إِنْ كُنْتُمْ مُسْلِمِينَ ﴿84يونس﴾ِ
একমাত্র তাঁরই উপর তায়াক্কুল কর যদি তোমরা মুসলিম হয়ে থাক। (সূরা ইউনুস ১০: ৮৪ আয়াত)।
৭।
কোনো রাজা বাদশাহ বা জীবিত বা মৃত সম্মানিত কোনো ব্যক্তিকে জেনে বুঝে
ইবাদতের নিয়তে রুকু বা সিজদা করা। কারণ রুকু সিজদা হচ্ছে ইবাদত আর ইবাদত
একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট।
৮।
দলিল দ্বারা সমর্থিত ইসলামের পরিচিত কোনো রুকন অস্বীকার করা। যেমন সালাত,
যাকাত, সওম ও হজ। অথবা ঈমানের ভিত্তিসমূহ যেমন আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, তাঁর
ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ, নবী-রাসূল, কিয়ামত দিবস ও তাকদিরের ভাল মন্দের
প্রতি বিশ্বাস স্থাপন- এর যে কোনো একটিকে অস্বীকার করা। এমনিভাবে দীনের
অবিচ্ছেদ্য বিষয়াদির কোনোটিকে অস্বীকার করা।
৯- ইসলাম বা ইসলামি অর্থনৈতিক বা চারিত্রিক কোনো রীতি অনুরূপভাবে ইবাদত, মুআমালাত মোট কথা ইসলাম প্রতিষ্ঠিত কোনো বিষয়কে অপছন্দ করা।
কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন:
ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَرِهُوا مَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ ﴿محمد:9﴾
তা এজন্য যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তারা তা অপছন্দ করে। অতএব তিনি তাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ : ৯)।
১০। কোরআন কিংবা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত ইসলামের কোনো হুকুম-আহকামকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করা।
কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন:
قُلْ
أَبِاللَّهِ وَآَيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ ﴿65﴾ لَا
تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ(التوبة 65-66)
বল,
‘আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে’?
তোমরা ওযর পেশ করো না। তোমরা তোমাদের ঈমানের পর অবশ্যই কুফরী করেছ। (সূরা
তাওবা : ৬৫-৬৬)।
১১- কোরআনুল কারীম কিংবা সহিহ হাদিসের কোনো হুকুম জেনে বুঝে ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করা।
১২-
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতকে তিরষ্কার-র্ভৎসনা করা, দ্বীনকে অভিশাপ দেয়া,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দেয়া কিংবা তাঁর কোনো কাজকে
বিদ্রুপ করা, অথবা তিনি যে আহকাম দিয়েছেন তার কোনো সমালোচনা করা। এর যে
কোনো একটির সাথে জড়িত হলেই ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
১৩-
কোরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত আল্লাহ তাআলার সুন্দর সুন্দর নাম ও
সিফাতসমূহ, তাঁর কার্যাদির যে কোনো একটি অজ্ঞতা বা ব্যাখ্যা ব্যতীত
অস্বীকার করা।
১৪-
মানুষের হিদায়েতের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক প্রেরিত নবী-রাসূল
সকলের প্রতি ঈমান আনয়ন না করা। অথবা তাদের কারো প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ
করা।
কারণ আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন:
لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ (البقرة 285)
আমরা তাঁর রাসূলদের কারো মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না। (সূরা বাকারা : ২৮৫)
১৫-
আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত বিধান মত বিচার না করা, এই ধারণার বশবর্তী হয়ে যে
এই যুগে ইসলামের সেসব নীতি সঙ্গত ও উপযোগী নয়, অথবা অন্য যে সব (কুফরি)
আইন চালু আছে তা সঠিক।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ ﴿المائدة44﴾
আর যারা আল্লাহ প্রদত্ত আইনে বিচার করে না তারাই কাফের। (সূরা মায়িদা: ৪৪)
১৬- ইসলাম বহির্ভূত আইনে বিচার করা, কিংবা ইসলামি বিচারকে অপছন্দ করা।
কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَلَا
وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ
ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ
وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا ﴿النساء65﴾
অতএব
তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের
ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে
ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে
নেয়। (সূরা নিসা: ৬৫ )
১৭-
গাইরুল্লাহকে আইন প্রণয়নের অধিকার দেয়া। যেমন একনায়কত্ব, গণতন্ত্র
কিংবা ইসলামের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক অন্য কোনো মতবাদপুষ্ট যারা আল্লাহর শরিয়ত
বিরোধী আইন প্রণয়ন করে।
কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন:
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ (الشوري :21(
তাদের জন্য কি এমন কিছু শরীক আছে, যারা তাদের জন্য দীনের বিধান দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? (সূরা শুরা : ২১)
১৮-
আল্লাহ কতৃক হালালকৃত বিষয়াদিকে হারাম করা বা হারামকৃত বিষয়াদিকে হালাল
করা। যেমন কিছু সংখ্যক আলেম তাবীল (বিকৃত ব্যাখ্যা) দ্বারা সুদকে হালাল
বলেন।
অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَاُ(البقرة 275)
আর আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম । (সূরা বাকারা: ২৭৫)
১৯-
ধ্বংসকারী চিন্তা ও মতবাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা, যেমন নাস্তিক্যবাদ,
মাসুনিয়া- ইয়াহুদিবাদ, মার্কসবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ যা আরব
দেশীয় অমুসলিমদেরকে অনারব মুসলিমদের উপর প্রাধান্য দেয় ইত্যাদি।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ ﴿آل عمران85﴾
আর
যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে
না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান: ৮৫)
২০- দ্বীনের মধ্যে পরিবর্তন সাধন করা বা ইসলামকে পরিত্যাগ করে অন্য ধর্মকে গ্রহণ করা।
কারণ আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে বলেন:
وَمَنْ يَرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَأُولَئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالْآَخِرَةِ
(البقرة 217)
আর
যে তোমাদের মধ্য থেকে তাঁর দীন থেকে ফিরে যাবে, অতঃপর কাফির অবস্থায়
মৃত্যু বরণ করবে, বস্তুত এদের আমলসমূহ দুনিয়া ও আখিরাতে বিনষ্ট হয়ে যাবে
এবং তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে। (সূরা বাকারা : ২১৭)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্বন্ধে বলেন:
مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فاقْتُلُوهُ (رواه البخاري)
যে নিজ দ্বীনকে পরিত্যাগ করবে, তাকে হত্যা করে ফেল। (বোখারি)
২১- ইসলাম বিরোধী ইহুদি খৃষ্টান অথবা নাস্তিকদেরকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সাহায্য সহযোগিতা করা।
কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
لَا
يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ
الْمُؤْمِنِينَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ
إِلَّا أَنْ تَتَّقُوا مِنْهُمْ تُقَاةً (آل عمران 28)
মুমিনরা
যেন মুমিনদের ছাড়া কাফিরদেরকে বন্ধু না বানায়। আর যে কেউ এরূপ করবে,
আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে যদি তাদের পক্ষ থেকে তোমাদের কোন
ভয়ের আশঙ্কা থাকে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর নিজের ব্যাপারে সতর্ক করছেন
এবং আল্লাহর নিকটই প্রত্যাবর্তন। (সূরা আলে ইমরান: ২৮)
২২-
নাস্তিক যারা আল্লাহর অস্তত্বকেই স্বীকার করে না অনুরূপভাবে ইহুদি কিংবা
খৃষ্টান, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ঈমান আনে
না, তাদেরকে কাফের মনে না করা।
কারণ আল্লাহ তাআলা তাদের কাফের বলে সম্বোধন করে বলেন:
إِنَّ
الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ فِي نَارِ
جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أُولَئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّةِ﴿البينة6﴾
নিশ্চয়
কিতাবীদের মাধ্যে যারা কুফরী করেছে ও মুশরিকরা, জাহান্নামের আগুনে থাকবে
স্থায়ীভাবে। ওরাই হল নিকৃষ্ট সৃষ্টি। (সূরা বাইয়েনাহ : ৬ )
২৩-
সূফী বা পীর নামে খ্যাত কিছু লোক আছে যারা অদ্বৈতবাদের কথা বলে। তারা বলে
জগতে আল্লাহ ছাড়া কিছুই নেই। তাদের প্রশিদ্ধ একজন এমন কথাও বলে, কুকুর
শুকর সবই আমাদের মাবুদ। সে আরও বলে, আল্লাহতো গির্জার পাদ্রি ছাড়া কেউ নন!
এদের নেতা মনসুর হাল্লাজ বলত: আমিই তিনি, তিনিই আমি। ফলে আলেমরা তাকে
হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তাকে কতল করা হয়েছিল। এ ধরনের আকিদা পোষণ
করাও ইসলাম থেকে বিচ্যুতির কারণ।
২৪-
দ্বীনকে রাষ্ট্রীয় কার্য হতে, অনুরূপ রাষ্ট্রকে দ্বীন হতে আলাদা করে
ফেলা, আর বলা যে ইসলামে রাজনীতি নেই। কারণ, এসব মতবাদ কোরআন হাদিস অথবা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনীকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে।
২৫-
কোনো কোনো সূফী বলে যে, মহান আল্লাহ দুনিয়া নির্বাহের জন্য তার কার্যসমূহ
কিছু কিছু আউলিয়ার হাতে অর্পণ করেছেন। তাদের কুতুব বলা হয়। এমনসব ধারণা
আল্লাহর কার্যাবলির মধ্যে শিরক বলে পরিগণিত।
কারণ আল্লাহ বলেন:
لَهُ مَقَالِيدُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ (الزمر 63)
তাঁর হাতেই রয়েছে আসমান ও যমিন পরিচালনার ক্ষমতা। (সূরা যুমার: ৬৩)
২৬-
এসব বাতিল আকিদা ও আমল অযু নষ্টকারী আমল সমূহের মত। এর কোনো একটাও যদি
কোনো মুসলিম বিশ্বাস করে কিংবা আমল করে তবে তার ইসলাম বিনষ্ট হয়ে যাবে।
জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া ও নিজ সম্পাদিত আমল নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে
রক্ষ পেতে হলে তাকে তাওবা করে আবারো ইসলাম গ্রহণ করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ ﴿65الزمر﴾
যদি তুমি শিরক কর তবে তোমার আমলসমূহ নষ্ট হয়ে যাবে এবং তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অর্ন্তভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা যুমার: ৬৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে এই দোয়া শিখিয়েছেন।
اللّهمَّ انّا نَعُوذُبِكَ مِنْ اَنْ نُشْرِكَ بِكَ شيئاً نَعْلَمُهُ وَنَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لا نَعْلَمُ (رواه أحمد بسند حسن)
হে
আল্লাহ! আমরা আপনার নিকট জেনে বুঝে আপনার সাথে কোনো কিছুকে শরিক করা হতে
পানাহ চাই আর যা আমাদের জানা নাই তা হতে ক্ষমা চাই। (মুসনাদে আহমাদ হাসান
সনদ)
সমাপ্ত
লেখক : আখতারুজ্জামান মুহাম্মদ সুলাইমান
সম্পাদক : ইকবাল হোছাইন মাছুম
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব