যিকরের মাজলিসের বিদ‘আত ও পাপ !


যিকরের মাজলিসের বিদ‘আত ও পাপ !
যিকরের মাজলিসের প্রকার, প্রকৃতি, পদ্ধতি, বাক্য, শব্দ সবকিছু সুন্নাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। সুন্নাতের ব্যতিক্রম সকল কর্ম সযত্নে বর্জন করতে হবে।
আমাদের দেশে ‘যিকর’ মাহফিল’ বা ‘হালকায়ে যিকর’ নামের অনুষ্ঠানের মধ্যে বিদ্যমান খেলাফে সুন্নাত কর্মের মধ্যে রয়েছে: সমবেতভাবে ঐক্যতানে যিকরের, উচ্চৈঃস্বরে যিকর, বিশেষ পদ্ধতিতে শব্দ করে যিকর, যিক্রের নিয়্যাত, ‘ইল্লাল্লাহ’ বা ‘আল্লাহ-আল্লাহ’ যিক্র, ‘ইয়া রাহমাতুল্লিল আলামীন’ ইত্যাদি বাক্যের যিক্র, গজল গেয়ে যিকর, গানের তালে যিক্র, শরীর দুলিয়ে, হেলেদুলে, লাফালাফি বা নাচানাচি করে যিকর’ ইত্যাদি অগণিত খেলাফে সুন্নাত, বিদ’আত বা শিরকমূলক শব্দ, বাক্য ও পদ্ধতি আমাদের দেশে “যিকর” নামে পরিচিত।
আমারা যিকর বলতে এসকল খেলাফে সুন্নাত বা বিদ‘আত কর্মগুলোই বুঝি। যে যত বেশি খেলাফে সুন্নাত বা বিদ‘আতভাবে যিকর করছে সে ততবড় যাকির ও তত বেশি মারেফাতের অধিকারী। আর যে সুন্নাত অনুসারে সাহাবীগণের মতো যিকর করছে সে ‘ওহাবী’ অথবা নীরস আলিম; কোনো মারেফাত তার নেই। যত মারেফাতের উৎস মনে হয় বিদ‘আত। তাঁদের দাবি অনুসারে মনে হয় রাসূলুল্লাহ সাঃ ও তাঁর সাহাবীগণের কোনো মারেফাতই ছিল না! বিদ‘আত উদ্ভাবনের পরেই মারেফাতের শুভ সূচনা এবং বিদ‘আতেই সকল মারিফাত! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন !!
মুহতারাম পাঠক, এ সকল বড় বড় ফাঁকা বুলিতে ধোঁকাগ্রস্ত হবেন না। আমরা দেখেছি যে, ‘ইত্তেবায়ে সুন্নাত’ বা সুন্নাতের অনুসরণ ছাড়া কোনো ইবাদত, বেলায়েত বা মারিফাত হয় না। সুন্নাতের বাইরে ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই নেই, তা যতই চকচক করুক বা চমকদার হোক।
যিকর’ সংক্রান্ত খেলাফে সুন্নাত কর্ম দু প্রকারের: যিকরের শব্দের মধ্যে উদ্ভাবন ও যিকরের পদ্ধতিতে উদ্ভাবন। পদ্ধতিগত খেলাফে সুন্নাত কর্মের মধ্যে রয়েছে- বিশেষ পদ্ধতিতে বসে, মাথা বা শরীর ঝাঁকিয়ে, শরীরের বিভিন্ন স্থানে যিকরের শব্দ দ্বারা ধাক্কা বা আঘাতের কল্পনা করে, বিশেষ পদ্ধতিতে উচ্চারণ করে, গান বা গজলের তালে তালে, সমস্বরে ঐক্যতানে, উচ্চৈঃস্বরে, চিৎকার করে, লাফালাফি করে বা নেচে নেচে যিকর করা।
এগুলো সবই খেলাফে সুন্নাত। কেউ কোনোভাবে একটি হাদীসও খুঁজে পাবেন না যে, রাসূলুল্লাহ সাঃ বা তাঁর সাহাবীগণ এভাবে যিকর করেছেন। বিভিন্ন সাধারণ যুক্তি ও বিশেষভাবে মনোযোগ সৃষ্টির যুক্তিতে এগুলো করা হয়। আমরা ইতোপূর্বে এ সকল বিষয়ে কিছু আলোচনা করেছি। আমরা দেখেছি যে, শিক্ষা, অনুশীলন বা মনোযোগের জন্য কোনো জায়েয পদ্ধতি ব্যক্তিগতভাবে কিছু সময়, প্রয়োজনমতো বা মাঝে মাঝে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এগুলোকে নিয়মিত রীতিতে পরিণত করলে বা ইবাদতের অংশ হিসেবে গ্রহণ করলে তা সুন্নাতের বিপরীতে বিদ‘আতে পরিণত হয় এবং এর ফলে মূল সুন্নাত পদ্ধতি ‘মৃত্যুবরণ করে’ বা সমাজ থেকে উঠে যায়।
পদ্ধতিগত খেলাফে সুন্নাতের চেয়েও মারাত্মক শব্দগত খেলাফে সুন্নাত যিকর। একজন যাকির মাসনূন শব্দে যিকর করতে করতে আবেগে হয়ত মাথা নাড়াতে পারে বা যিকরের আবেগ তার নড়াচড়ায় প্রকাশ পেতে পারে। ব্যক্তিগত ও সাময়িকভাবে তা অনেক সময় জায়েয, যদিও সুন্নাত নয়। কিন্তু একজন মুমিন কেন এমন শব্দ ব্যবহার করে যিকর করবেন যা রাসূলুল্লাহ সাঃ ব্যবহার করেননি? এ ক্ষেত্রে ওযর খুঁজে বের করা আরো কষ্টকর। কী প্রয়োজন আমার বিভিন্ন যুক্তি ও ‘অকাট্য দলিল’ দিয়ে কষ্ট করে এমন একটি যিকর পালন করা এবং প্রচলন করা যা রাসূলুল্লাহ সাঃ ও তাঁর সাহাবীগণ করেননি এবং যা করলে কী পরিমাণ সাওয়াব হবে তা আমাদের মোটেও জানা নেই ?
উৎসঃ রাহে বেলায়াত ও রাসূলুলাহ সাঃ এর যিকর-ওযীফা পৃঃ ২৫৬ ।