الحقوق الزوجين স্বামী স্ত্রীর অধিকার

الحقوق الزوجين স্বামী স্ত্রীর অধিকার
সমস্ত প্রশংসার মালিক আল্লাহ তা’আলা। আমরা তার প্রশংসা করি, আর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। তার নিকট ক্ষমা ও মাগফিরাত প্রার্থনা করি। আমরা আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রবৃত্তিজাত অনিষ্ট ও কর্মের কুপ্রভাব হতে আশ্রয় চাই। আল্লাহ তা’আলা যাকে হেদায়েত দান করেন, তার কোন ভ্রষ্টকারী নেই। আর যাকে তিনি ভ্রষ্ট করেন, তার কোন হেদায়েতকারী নেই।

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি এক, ও একক, তার কোন শরীক নেই। আর সাক্ষ্য দিচ্ছি, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম তার বান্দা ও রাসূল। প্রকৃত বন্ধু ও সৃষ্টিকুলের সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি তাকে কিয়ামতের পূর্বে সুসংবাদদাতা, সতর্ককারী এবং তারই আদেশক্রমে তার প্রতি আহ্বানকারী ও আলো প্রদানকারী প্রদীপ রূপে প্রেরণ করেছেন। কল্যাণের আধার তিনি, স্বীয় উম্মতকে কল্যাণের দিক-নিদর্শনা দিয়েছেন ও সতর্ক করেছেন অনিষ্ট হতে। হে আল্লাহ ! সালাত, সালাম ও বরকত অবতীর্ণ করুন তার উপর, তার বংশধর ও সাহাবাদের উপর, এবং কেয়ামত পর্যন্ত যারা তার পথে ধাবিত হবে ও তার আদর্শের অনুসরণ করবে তাদের উপর।
মুসলিম ভাইয়েরা !
আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের কুদরাতের নিদর্শনের মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, মানুষের মধ্য থেকে আল্ল¬াহ তা’আলা নারী জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। তারা পুরুষের সংঙ্গিনী হয়েছে।
আল্ল¬াহ তা’আলা ইরশাদ করেন :-
হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞ্ঝা করে থাক এবং আতœীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবল¤¦ন কর। নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন। (সুরা নিসা ১)
আল্ল¬াহ তা’আলা আরও ইরশাদ করেন :- আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পার¯পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা রূম-২১)
আলোচ্য আয়াত পুরুষ ও নারীর দাম্পত্য জীবনের লক্ষ্য মনের শান্তিকে স্থির করেছে। বৈবাহিক জীবনের যাবতীয় কাজ-কারবারের সারর্মম হচ্ছে মনের শান্তি ও সুখ। যে পরিবারে এটা বর্তমান আছে, সেই পরিবারে সৃষ্টির উদ্দেশ্য সফল। ইসলামে অবশ্যই চিরস্থায়ী বিবাহবন্ধনকে আদর্শ হিসেবে ধরা হয়।
আল্ল¬াহ তা’আলা আরও ইরশাদ করেন :-
হে ঈমাণদারগণ! বল্পূর্বক নারীদেরকে উত্তরাধিকারে গ্রহন করা তোমাদের জন্যে হালাল নয় এবং তাদেরকে আটক রেখো না যাতে তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ তার কিয়দংশ নিয়ে নাও; কিন্তূ তারা যদি কোন প্রকাশ্য অশ্লীলতা করে! নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অত:পর যদি তাদেরকে অপছšদ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছšদ করছ, যাতে আল্লাহ্, অনেক কল্যাণ রেখেছেন। (সুরা নিসা ১৯)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদিগকে সম্বোধন করিয়া বলিয়াছেন : হে যুবক দল ! তোমাদের মধ্যে যে লোক স্ত্রী গ্রহণে সামর্থবান, তাহারা অবশ্যই বিবাহ করা কর্তব্য। কেননা বিবাহ দৃষ্টিকে নীচ ও নিয়ন্ত্রিত করিতে ও লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করিতে অধিক সক্ষম। আর যে লোক তাহাতে সামর্থবান নয়, তাহার উচিত রোযা রাখা। কেননা রোযা তাহার জন্য যৌন উত্তেজনা নিবারণকারী। (বুখারী ও মুসলিম)
হাদীসটিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুব সম্প্রদায়কে সম্বোধন করিয়া বিবাহ করার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও অপরিহার্য্যতা বুঝাইতে চাহিয়াছেন।
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন। একদিন তিন জন লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রীগণের নিকট উপস্থিত হইলেন। তাহারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিনরাতের ইবাদাত-বন্দেগী সম্পর্কে জানতে চাইলেন। তাহাদিগকে যখন এই বিষয়ে প্রকৃত অবস্থা জানানো হইল তখন তাহারা যেন উহাকে খুব কম ও সামান্য মনে করিলেন। পরে তাহারা বলিলেন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তুলনায় আমরা কোথায়? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তো পূর্বের ও পরের সব গুনাহ মাফ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। তাহাদের একজন বলিলেন : আমি তো চিরকাল সারা রাত্র জাগিয়া থাকিয়া নামায পড়িব। অপর একজন বলিলেন : আমি তো সমস্তকাল ধরিয়া রোযা রাখিব এবং কখনও রোযা ভাঙ্গিব না। তৃতীয় একজন বলিলেন : আমি স্ত্রীলোকদের সহিত সম্পর্ক বর্জন করিব। অতঃপর আমি কখনও বিবাহ করিব না। এই সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাদের নিকট উপস্থিত হইলেন এবং বলিলেন : তোমরাই তো এই সব কথা-বার্তা বলিয়াছ? কিন্তু আল্লাহর নামে শপথ ! তোমাদের মধ্যে সকলের তুলনায় আল্লাহ তা’আলাকে আমি-ই অধিক ভয় করি। আল্লাহর ব্যাপারে তোমাদের তুলনায় আমি-ই অধিক তাকওয়া অবলম্বন করিয়া থাকি। অথচ তাহা সত্ত্বেও আমি রোযা থাকি, রোযা ভাঙ্গিও। আমি রাত্রিকালে নামাযও পড়ি, আবার ঘুমাইও। আমি স্ত্রী গ্রহণও করি। ইহাই আমার সুন্নাত। অতএব যে লোক আমার সুন্নাতের প্রতি অনীহা পোষণ করিবে, সে আমার সহিত সম্পর্কিত নয়। (বুখারী ও মুসলিম)
হাদীসটি বিবাহ পর্যায়ে উদ্ধৃত হইলেও ইসলাম যে একটি বাস্তববাদী পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, তাহা এই হাদীস হইতে সঠিক রূপে স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনাদর্শ ও অনুসৃত নীতির বাস্তব ভূমিকা এই হাদীস হইতে স্পষ্ট ভাবে জানা যাইতেছে এবং প্রকৃতপক্ষে তাহাই ইসলাম।
মুসলিম ভাইয়েরা !
বিবাহ স্বামী-স্ত্রীর মাঝে একটি সুদৃঢ় বন্ধন। আল্লাহ তা’আলা এর চিরস্থায়িত্ব পছন্দ করেন।
আল্ল¬াহ তা’আলা ইরশাদ করেন :- তোমরা কীভাবে তা (মোহরানা) ফেরত নিবে? অথচ তোমরা পরস্পর শয়ন সঙ্গী হয়েছ। সাথে সাথে তারা তোমাদের থেকে চির বন্ধনের সুদৃঢ় অঙ্গিকারও নিয়েছে। (সূরা নিসা-২০)
এ চুক্তিপত্র ও মোহরানার কারণে ইসলাম স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে কতক দায়দায়িত্ব ও অধিকার নিশ্চিত করেছে। যা বাস্তবায়নের ফলে দাম্পত্য জীবন সুখী ও স্থায়ী হবে, সন্দেহ নেই।
সে সব অধিকারের প্রায় সবগুলোই সংক্ষেপ আকারে বর্ণিত হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের :- যেমন নারীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমন তাদের জন্যও অধিকার রয়েছে ন্যায্য-যুক্তিসংগত ও নীতি অনুসারে। তবে নারীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব পুরুষদের। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
এ ব্যাপারে কাইছ বিন সাইদ সাহাবী থেকে বর্ণিত, রাসুল (সঃ) বলেছেন , যদি আমি হুকুম করতাম কেও কাউকে ছেজদা করার , তা হলে স্ত্রী লোকদেরকে বলতাম তার স্বামীকে সেজদা করার জন্য। কেননা আল্লাহ তা’আলা নারীদের উপর পুরুষের অনেক মর্যাদা দিয়াছেন।(আবু দাউদ)
এ রুপ ভাবে স্ত্রী লোকদের উপর স্বামীর অনেক অধিকার রয়েছে, তবে কোন কোন ক্ষেত্রে নারী পরুষদের অধিকার সমান।
আল্লাহ তা’আলা উক্ত আয়াতে বর্ণনা করেছেন যে, প্রত্যেকের উপর প্রত্যেকের অধিকার রয়েছে। যদিও আনুগত্য এবং রক্ষনা-বেক্ষন ও অভিভাবকত্বের বিবেচনায় শ্রেষ্ঠত্ব পুরুষদের। এখানে আমরা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে বিরাজমান কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধিকার স্তর ও মানের ভিত্তিতে উল্লেখ করছি। যে সব অধিকারের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে সমান। দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক সততা, বিশ্বস্ততা ও সদ্ভাব প্রদর্শন করা। যাদের মাঝে নিবিড় বন্ধুত্ব, অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক, অধিক মেলামেশা, সবচেয়ে বেশি আদান-প্রদান তারাই স্বামী এবং স্ত্রী। এ সম্পর্কের চিরস্থায়ী রূপ দিতে হলে ভাল চরিত্র, পরস্পর সম্মান, নম্র-ভাব, হাসি-কৌতুক এবং অহরহ ঘটে যাওয়া ভূলচুক ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা অবশ্যম্ভাবী। এবং এমন সব কাজ, কথা ও ব্যবহার পরিত্যাগ করা, যা উভয়ের সম্পর্কে চির ধরে কিংবা মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়।
পরস্পর সদ্ভাবে জীবন যাপন একটি ব্যাপক শব্দ। এর মাঝে সমস্ত অধিকার বিদ্যমান
আল্ল¬াহ তা’আলা ইরশাদ করেন :- তাদের সাথে তোমরা সদ্ভাবে আচরণ কর। (সূরা নিসা-১৮)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : তোমাদের মাঝে যে নিজের পরিবারের কাছে ভাল, সেই সর্বোত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে ভাল। (ইবনে মাজাহ)
রাসুল (সঃ) বিবহের ব্যপারে উপদেশ দিয়েছেন , তিনি বলেন মানুষ সাধারনত বিবাহ শাদিতে চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ করে। যেমন ঃ (১) ধন সম্পদ (২) বংশ পরিচয় (৩) সোন্ধর্য্য (৪) দ্বীন ধর্ম। এ পর্যায়ে রাসুল (সঃ) এর মতামত হল দ্বীনকে অগ্রাধিকার দেওয়া তা নাহলে তার হাত ধুলায় মলিল হয়ে যাবে। অর্থাৎ স্ত্রীর মধ্যে দ্বীন না থাকার কারণে তার সংশার অশান্তিতে কাটবে। (বুখারী ও মুসলীম )
মুয়াবিয়া ( রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল (সঃ)কে জি¹াসা করলেন স্বামির উপর স্ত্রীর হক কি? রাসুল (সঃ) বললেন তুমি যা খাও তাই তাকে খাওয়াবে, তুমি যা পরিধান কর তাই তাকে পরিধান করাবে, তাকে কখনও মুখে আঘাত করবেনা এবং কখনও অশ্লিল গালি গালাজ করবেনা। কোন স্বাসন করতে হলে ঘরেই স্বাসন করবে । বাহিরে নিজেদেও কথা প্রকাশ করবেনা।
আবার মহিলাদের জন্য অনুমতি নাই স্বামির অনুমতি ছারা বাহিরে যাওয়া, এমন কি স্বামির অনুমতি ছারা নফল রোজা রাখাও জায়েজ নাই। অর্থাৎ স্বামি যখন স্ত্রীর নিকটে থাকে।
হে আল্লাহ তা’আলা ! আমাদেরকে কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফীক দান করুন। আমীন