রাগ নিয়ন্ত্রণের ৮ উপায়
প্রশ্ন:
যে সব মানুষ খুব তাড়াতাড়ি রাগ করে অথবা যারা খুব রাগী তারা কিভাবে তার রাগ
কমাবে? এ বিষয়ে কুরআন-হাদীসে বর্ণিত কোন দোয়া ও পদ্ধতি থাকলে দয়া করে
জানাবেন।
উত্তর:
আমাদের জানা দরকার যে, সব রাগ খারাপ নয়। কখনো কখনো রাগ প্রশংসনীয় আর কখনো নিন্দনীয়। যদি আল্লাহর উদ্দেশ্যে রাগ করা হয় এবং অন্যায় ও হারাম কাজ প্রতিরোধে রাগ ব্যবহার করা হয় তাহলে তা প্রশংসনীয়। বরং অন্যায় দেখে মনে রাগ সৃষ্টি হওয়া মজবুত ঈমানের আলামত। পক্ষান্তে ব্যক্তিগত স্বার্থে বা দুনিয়াবী ছোট-খাটো বিষয়ে রাগ করা নিন্দনীয়।
আমাদের জানা দরকার যে, সব রাগ খারাপ নয়। কখনো কখনো রাগ প্রশংসনীয় আর কখনো নিন্দনীয়। যদি আল্লাহর উদ্দেশ্যে রাগ করা হয় এবং অন্যায় ও হারাম কাজ প্রতিরোধে রাগ ব্যবহার করা হয় তাহলে তা প্রশংসনীয়। বরং অন্যায় দেখে মনে রাগ সৃষ্টি হওয়া মজবুত ঈমানের আলামত। পক্ষান্তে ব্যক্তিগত স্বার্থে বা দুনিয়াবী ছোট-খাটো বিষয়ে রাগ করা নিন্দনীয়।
নিন্মে নিন্দনীয় রাগ দমানের চিকিৎসার কতিপয় উপায় প্রদান করা হল:
নিন্দনীয় ক্রোধের চিকিৎসা:
১. দু‘আ করা: কেননা
আল্লাহই সকল বিষয়ের তাওফিক দাতা। সঠিক পথে পরিচালনাকারী, দুনিয়া ও
আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণ তাঁর হাতেই। আত্মা বিনষ্টকারী যাবতীয় অপবিত্রতা
থেকে আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য তিনিই একমাত্র উত্তম সাহায্যকারী। তিনি বলেন,
ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ
“তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।” (সূরা গাফেরঃ ৬০)
২. অধিক হারে আল্লাহ্র জিকির করা: যেমন
কুরআন পাঠ, তাসবীহ, তাহলীল পাঠ, ইস্তিগফার ইত্যাদি করা। কেননা মহান আল্লাহ
ঘোষণা করেছেন যে, একমাত্র তাঁর জিকিরই অন্তরে প্রশান্তি আনতে পারে। তিনি
বলেন,
أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
“জেনে রাখ আল্লাহ্র জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে।” (সূরা রা’দঃ ২৮)
৩. যে সকল আয়াত ও হাদীস ক্রোধ সংবরণ করার রতে উৎসাহ দেয় সেগুলো এবং যেগুলো ক্রোধের ভয়বহতা সম্পর্কে সর্কত করে সেগুলো মনে করা এবং ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করা:
যেমন হাদীসে এসেছে, আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি স্বীয় ক্রোধকে সংবরণ করে, অথচ সে বাস্তবায়ন
করতে সক্ষম ছিল, তাকে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের ময়দানে সকল মানুষের সামনে
আহবান করবেন। অতঃপর জান্নাতের আনত নয়না হুর থেকে যাকে ইচ্ছা বেছে নিতে
স্বাধীনতা দিবেন এবং তার ইচ্ছানুযায়ী তাদের সাথে তার বিবাহ দিয়ে দিবেন।”[1]
৪. শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা: অর্থাৎ আউযুবিল্লাহিমিনাশ শায়তারির রাজীম (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি) পাঠ করা।
সহীহ্ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমে সুলাইমান
ইবনে সুরাদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,একদা দু’জন লোক রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে পরষ্পরকে গালিগালাজ করছিল। তদের
একজন ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছিল। তার ক্রোধ এত অধিক হয়েছিল যে,তার ঘাড়ের রগগুলো
ফুলে উঠছিল এবং তার বর্ণ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। তার এই অবস্থা দেখে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
” إِنِّي
لَأَعْلَمُ كَلِمَةً لَوْ قَالَهَا ذَهَبَ عَنْهُ مَا يَجِدُ لَوْ ، قَالَ :
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ ذَهَبَ عَنْهُ مَا يَجِدُ
“আমি এমন একটি বাক্য জানি, লোকটি তা বললে
তার রাগ দুর হয়ে যাবে। এক ব্যক্তি তার নিকট এগিয়ে গিয়ে রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেছেন তা তাকে জানালো। বলল, তুমি
শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর। সে বলল, আমার মধ্যে কি
অসুবিধা দেখেছ? আমি কি পাগল নাকি? তুমি যাও এখান থেকে ।”[2]
৫. অবস্থান পরিবর্তন করা:
অর্থাৎ যদি দণ্ডায়মান থাকে তবে বসে পড়বে বা শুয়ে যাবে। আবু যর রা. থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমাদের কেউ
যদি রেগে যায় তবে সে যদি দণ্ডায়মান থাকে তাহলে বসে পড়বে। তাতেও যদি রাগ না
থামে তবে শুয়ে পড়বে।” [3]
আধুনিক যুগের মনোবিজ্ঞানীগণ ক্রোধের
চিকিৎসায় এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। অথচ আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উক্ত ব্যবস্থাপত্র ১৪শত বছর আগেই বলে দিয়েছেন। পাশ্চাত্য সভ্যতার
ফিতনায় নিমজ্জিত ব্যক্তিদের কি হুঁশ হবে? ফিরে আসবে কি তাদের দ্বীনে যা সকল
মানুষের ফিতরাটি ধর্ম? যার মধ্যেই রয়েছে তাদের ইহ-পরকালীন মুক্তি ও
কল্যাণ?
৬. সঠিকভাবে দেহের হক আদায় করা: প্রয়োজনীয়
নিদ্রা ও বিশ্রাম গ্রহণ করা, সাধ্যের বাইরে কোন কাজ না করা, অযথা উত্তেজিত
না হওয়া। ক্রুদ্ধ ব্যক্তিদের ক্রোধের কারণ খুঁজতে গিয়ে অধিকাংশ ব্যক্তির
মধ্যেই এ কারণগুলো পাওয়া গেছে -অধিক পরিশ্রমের কাজ করা, ক্লান্তি, অনিদ্রা,
ক্ষুধা ইত্যাদি।
আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. বলেন, আমাকে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি শুনেছি যে, তুমি
দিনের বেলা রোযা রাখ এবং রাতের বেলা নফল নামায আদায় কর-এটা কি ঠিক? আমি
বললাম, হ্যাঁ আপনি ঠিকই শুনেছেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন, তুমি এরূপ করো না। বরং মাঝে মাঝে রোযা রাখবে এবং মাঝে মাঝে রোযা
ছাড়বে এবং রাতের কিছু অংশে নামায পড়বে এবং কিছু অংশে বিশ্রাম নিবে। কারণ
– তোমার উপরে তোমার শরীরের হক রয়েছে,
– তোমার চোখের হক রয়েছে,
– তোমার উপরে তোমার স্ত্রীর হক রয়েছে,
তোমার জন্য প্রতিমাসে তিন দিন রোযা রাখাই
যথেষ্ট। এতে সারা বছর রোযা রাখার সওয়াব রয়েছে। কেননা প্রতিটি নেক আমলের
সওয়াব দশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। কিন্তু আমি আমার নিজের উপর কঠোরতা
আরোপ করলাম এবং বললাম হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
আমিতো একাধারে রোযা রাখতে এবং রাতের বেলা নামায পড়তে সক্ষম। আব্দুল্লাহ বিন
আমর বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয়ে বললেন, হায় আফসোস! আমি যদি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপদেশ মেনে নিতাম,তাহলে কতইনা ভাল হত। ( (মূল
হাদীসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)
৭. ক্রোধের যাবতীয় কারণ থেকে দূরে থাকা।
৮. রাগের সময় চুপ থাকা:
ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা শিক্ষা প্রদান কর, মানুষের উপর সহজ কর, কঠোরতা আরোপ
করোনা, তোমাদের কেউ রাগন্বিত হয়ে গেলে সে যেন চুপ থাকে।”[4]
টিকা:
[1] [1] (হাসান) আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদাব, অনুচ্ছেদঃ ক্রোধ নিবারণকারীর ফজীলত, হাদীছ নং- ৪১৪৭। তিরমিজী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল বিররি ওয়াস্ সিলাত, অনুচ্ছেদঃ ক্রোধ নিবারণ করা, হাদীছ নং- ১৯৪৪। ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুজ্ জুহ্দ, অনুচ্ছেদঃ ধৈর্যধারণ করা, হাদীছ নং- ৪১৭৬। ইমাম আলবানী হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। সহীহ আল-জামেউ।
[1] [1] (হাসান) আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদাব, অনুচ্ছেদঃ ক্রোধ নিবারণকারীর ফজীলত, হাদীছ নং- ৪১৪৭। তিরমিজী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল বিররি ওয়াস্ সিলাত, অনুচ্ছেদঃ ক্রোধ নিবারণ করা, হাদীছ নং- ১৯৪৪। ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুজ্ জুহ্দ, অনুচ্ছেদঃ ধৈর্যধারণ করা, হাদীছ নং- ৪১৭৬। ইমাম আলবানী হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। সহীহ আল-জামেউ।
[2]
(সহীহ) বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদাব, অনুচ্ছেদঃ গালিগালাজ এবং লা’নত করা
নিষেধ, হাদীছ নং- ৫৫৮৮। মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল বিররি ওয়াস্ সিলাত,
অনুচ্ছেদঃ রাগের সময় যে নিজেকে সংবরণ করতে পারে, তার ফজীলত, হাদীছ নং-
৪৭২৫।
[3]
– (সহীহ) আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদাব, অনুচ্ছেদঃ রাগের সময় যা বলা
হবে, হাদীছ নং- ৪১৫১। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন, ১/৬৯৫,
মিশকাত হাদীছ নং- ৫১১৪।
[4]
(সহীহ) আহমাদ, মুসনাদে বানী হাশেম, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের হাদীছ, হাদীছ
নং- ২০২৯। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহ আল-জামেউ ২/৪০২৭,
সিলসিলায়ে সহীহাহ, হাদীছ নং- ১৩৭৫
লেখক: আব্দুল্লাহ আল কাফী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যায়ল, সৌদি আরব)