কাদিয়ানীরা নিন্দনীয় কেন?

 কাদিয়ানীরা নিন্দনীয় কেন?


অনুবাদকের ভূমিকা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছিলেন যে, কিয়ামত এর পূর্বে ৩০ এর মত মিথ্যুক লোক নবুওয়াতের দাবী করবে, তাঁর সে ভবিষ্যদ্বাণীর প্রমাণ আমরা দেখতে পাই গোলাম আহম্মেদ কাদিয়ানীর নবুওয়াতের দাবীর মাঝ দিয়ে। আমাদের দেশের আলেমগণ অনেক আগ থেকেই বিভিন্ন ভাবে তার দাবীর অবৈধতা প্রমাণ করেছিলেন, এবং এক সময় আলেমরা সবাই তার বিরুদ্ধে এজমা, বা ঐক্যমত পোষণ করে অমুসলিম ভন্ড নবুওয়াতের দাবীদার বলে তার ফেৎনা কে সাময়িক ভাবে রুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অনেকে তার সাথে বিতর্কে গিয়েছিলেন এবং তাকে বিতর্কেও হারিয়েছিলেন, মনে পড়ে কাজী দানভিল্লা অমৃতসরী সাহেবের সাথে তার তর্কের কথা, ভন্ড তার নবুওয়াতের সমর্থনে দলীল হিসাবে কুরআনে করিমের সূরায় ছফ-এর() শদ্ব দ্বারা দলীল নিলে কাজী সাহেব বললেন তোমার নাম তো গোলাম আহমদ এখানে বলা হয়েছে আহমদ, অর্থাৎ তুমি আহমদের গোলাম, আহমদ নও, তখন সে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ভাবে আরবী ব্যাকরণের নিয়ম অনুসারে নামের প্রথম অংশ যেখানে উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ তা ত্যাগ করে বলে উঠল, আমার নামের শেষাংশই নয়,
কাজী সাহেব দেখলেন তার সাথে তর্কে যাওয়া বৃথা, কারণ সে গোড়ামী করে কুরআনের মনগড়া ব্যাখ্যা করার পরও প্রমাণ হাজির করতে না পেয়ে আরবী ভাষার ব্যাকরণের বিপরীতে গিয়ে তার নামের দ্বিতীয়াংশ  আহমদ কেই প্রকৃত নাম বলে সাব্যস্ত করতে যাচ্ছে, তখন তিনি সম্পূর্ণ তর্কের খাতিরে বললেন, যদি নামের শেষাংশই উদ্দেশ্য হয় তবে আমার নাম সানাউল্লাহ, আমার নামের শেষাংশ আল্লাহ, তা হলে আমি তোমার আল্লাহ হয়ে তোমার মত খবিসকে কক্ষনো মানুষের জন্য নবী হিসাবে পাঠাই নি।”
অনুরূপভাবে এক সময় কাদিয়ানী নিজকে মারিয়াম (আ) বলে দাবী করলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, মহিলাদের ঋতুস্রাব হয়ে থাকে, তোমার কি তাও হয়?
সে নির্লজ্জের মত  বলে উঠল হ্যাঁ অমুক রাত থেকে অমুক রাত পর্যন্ত আমার ঋতুস্রাব ছিল। যেহেতু তার জীবনের সব সময়ই সে বিভিন্ন নতুন নতুন দাবী নিয়ে বের হত, কখনো, ঈসা, আবার কখনো মাহদী, আবার কখনো নবী, আবার কখনো ধর্ম সংস্কারক, আবার কখনো বা সকল ধর্মের বিচারক ইত্যাদি দাবীর থুবড়িতে মুখরিত ছিল, আলেমগণ তাকে মাতাল জ্ঞানে ত্যাগ করাই সমীচিন ছিল, বরং তাকে শরীয়তের কাঠগড়ায় আসামী করে শরীয়তের হুকুম অনুসারে তার ফয়সালা করা জরুরী ছিল কিন্তু তখন ছিল উপনিবেশবাদী ব্রিটিশ সরকারের রাজত্ব, মূলত তারাই তাকে এগুলো বলতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং তারা তাকে সব রকম সহযোগিতা ও সহানুভূতি দ্বারা সর্বদা রক্ষা করেছে সেহেতু আলেমগণ তার বিরুদ্ধে মোনাজেরা  বা বিতর্কে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন পথ পাননি, সে অবশ্য ব্রিটিশ সরকারেরজন্য বিরাট পুরুস্কার ছিল কারণ, সে যখন দাবী করল যে, সে ঈসা (আ) তখন মুসলিমদের হাদীস মতে  ঈসা (আ) এর আবির্ভাবের পর আর জিযিয়া কর গ্রহণ করা হবে না এবং জ্বিহাদ এর হুকুমে পরিবর্তন হবে বলা হয়ে থাকে এজন্য সে ইংরেজদের জন্য অতি মূল্যবান পুরস্কার স্বরূপ তাদের বিরুদ্ধে জ্বিহাদ বা আযাদী আন্দোলন কে হারাম ঘোষনা দিয়ে দিল, আর তখনি দিবালোকের মত স্পষ্ট হলো যে, কার হাতের ক্রিড়নক হিসাবে সে এসব কাজ করছিল
 কিন্তু আলেমগণ এতেই নিরস্ত থাকেন নি, বরং তারা তাকে মুবাহালার জন্য ডেকেছিল, সেই মুবাহালা বা পরস্পর আল্লাহর গজবকে আহবান করে মিথ্যাবাদীর উপর তার পতন কামনা করাই তার জন্য কাল হয়েছিল, কারণ কাজী ছানাউল্লা সাহেবের সাথে মুবাহালায় সে বলেছিল, আমাদের মধ্যে যে মিথ্যুক আল্লাহ যেন তাকে অপরের জীবদ্দশায় নিকৃষ্ট অবস্থায় মৃত্যু দেনতিনি বলেছিলেন আমীন, আল্লাহ কবুল করুনঅত:পর কাজী সাহেবের মৃত্যুর পূর্বেই গোলাম আহমদ কাদিয়ানী একদা পায়খানায় প্রবেশ করে সেখানেই পড়ে মারা যায়। আর এভাবে আল্লাহ মিথ্যাবাদীদের শাস্তি দিয়ে থাকেন। তার মৃত্যুর পর কাদিয়ানী আন্দোলন কিছুদিন স্তিমিত থাকলেও পরবর্তীতে তাদের কাজের ধারা দ্বিগুন চতুর্গুণ হারে পৃথিবীর চতুর্দিকে প্রসার লাভ করতে থাকে, বর্তমানেও তারা ইসলামের নাম ব্যবহার করেই তাদের মতবাদ প্রচার ও প্রসার করে থাকে। সাম্রাজ্যবাদীদের সার্বিক সহায়তায় তারা আমেরিকা ও দক্ষিন আফ্রিকায় তাদের ব্যাপক তৎপরতা দেখাচ্ছে, ইসলামী বিশ্বের আলেমদের উচিত তাদের বিরুদ্ধে কলম যুদ্ধ শুরু করা। যাতে করে উম্মতকে তাদের ফিতনা থেকে বাঁচানো সম্ভব হয়। আর সে যুদ্ধে এটি আমার এক ক্ষুদ্র প্রয়াসআল্লাহ তা‘আলার কাছে দো‘আ করছি তিনি আমার এ প্রচেষ্টাকে কবুল ও মঞ্জুর করুন। আমীন, ছুম্মা আমীন।
যাকারীয়া
মদীনা শরীফ, ১৪১৩ হি.



উপস্থাপনা
- ড. সালেহ ইব্‌ন আব্দিল্লাহ আল-আবূদ
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ্‌র অসংখ্য প্রশংসা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অগণিত দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক, যাকে আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত নবী ও রাসূলদের সর্বশেষে প্রেরণ করে এ ধারা বন্ধ করে দিয়েছেন। এবং যার দ্বীনকে কিয়ামত পর্যন্ত টিকিয়ে রাখার ওয়াদা করেছেন, যার পরে কোন নবী আসেনি  এবং আসবেওনা যদিও মিথ্যুকরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করতে কম করেনি।
আল্লাহ ইসলামকেই একমাত্রমনোনিত দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করেছেন সুতরাং কারো থেকে অন্য কোন দ্বীনের অনুসারী হওয়া মেনে নেবেননা। আল্লাহ বলেন:
 অর্থ্যাৎ: আর যে ইসলাম ছাড়া অপর কোন দ্বীন চায়, তার থেকে তা কখনো গ্রহন করা হবেনা, বরং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে গণ্য হবে। (সূরা আল ইমরান ৮৫)

• ইসলামের তিনটি স্তর রয়েছে:

প্রথম স্তর: ইসলাম (বাহ্যিক দিক) এর ৫টি প্রধান অঙ্গ রয়েছে।
১. আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সঠিক উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লার প্রেরিত পুরুষ রাসূল বলে সাক্ষ্য দেয়া
২. নামাজ প্রতিষ্ঠা করা।
৩. যাকাত প্রদান করা।
৪. রমজানের রোজা রাখা।
৫. সক্ষম ব্যক্তির জন্য আল্লাহর ঘর কাবা শরিফের হজ্জ করা।
দ্বিতীয় স্তর: ঈমান (অভ্যন্তরীন দিক) এর ৬টি প্রধান অঙ্গ রয়েছে:
১. আল্লাহর উপর ঈমান আনা।
২. ফেরেশতাদের উপর ঈমান
৩. আল্লাহর কিতাবসমূহের উপর ঈমান, কুরআনে কারীমে সকল কিতাবের কথাই  এসেছে।
৪. আল্লাহর রাসূল সমূহের উপর ঈমান আনা যার ধারা শেষ হয়েছে, মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ দ্বারা যিনি আরবী; হাশেমী গোত্র থেকে ছিলেন, জন্ম ও নবী হিসেবে মনোনিত হয়েছিলেন মক্কাতে হিজরত ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন মদীনা মুনাওয়ারায়।
৫. আখেরাতের উপর ঈমান আনা।
৬. তাকদীর বা ভাগ্যের উপর ঈমান আনা, এমনভাবে যে, ভাল-মন্দ সবকিছু আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে।
তৃতীয় স্তর: ইহ্‌সান, যার অর্থ হলো: প্রত্যেক মুমিন মুসলিম এমনভাবে আল্লাহর উপাসনা করবে যেমন সে তাকে দেখছে, আর যদি তা সম্ভব না হয়ে উঠে, তবে এমনভাবে ইবাদতে মনোনিবেশ করা যেন আল্লাহ তাকে দেখছেন।
তবে ইসলামের (বাহ্যিক অংশের) ভিত্তি ও চুড়া হলো, এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সঠিক কোন উপাস্য নেই, আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁরই প্রেরিত রাসূল
 এ শাহাদাত বা সাক্ষ্য দেয়ার অর্থ হচ্ছে:
আল্লাহ ছাড়া কোন  উপাসনার যোগ্য সঠিক উপাস্য বা মাবুদ নেই। এ সব জানা, বুঝা, বিশ্বাস করা এবং মনে প্রাণে আঁকড়ে ধরা; আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রাসূল বা প্রেরিত পুরুষ তার বান্দা, সুতরাং তার ইবাদত বা উপাসনা না করা, তিনি তাঁর রাসূল হেতু তাকে সত্য বলে বিশ্বাস করা; তিনি যে সমস্ত সংবাদ দিয়েছেন সেগুলিকে সত্য বলে জানা তিনি যা নির্দেশ দিয়েছেন সে গুলিকে অনুসরণ করা, যা নিষেধ করেছেন তা ত্যাগ করা; আর আল্লাহর ইবাদতের ব্যাপারে তার কথার উপর নির্ভর করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবর্তিত পন্থা ছাড়া অন্য কোন পন্থায় আল্লাহর ইবাদত না করা, আর সে অনুসারে আমল করা, এবং অপরের কাছে সেটা পৌঁছানো, জানানো, বিবৃত করণ এবং অপরকে নির্দেশ দেয়া, আর যতটুকু সম্ভব এ ব্যাপারে বাধ্য থাকা বা আনুগত্য করা।
তবে এই সাক্ষ্য ঐ পর্যন্ত যথার্থভাবে সম্পন্ন হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত সাক্ষ্যদাতা এর অর্থ অন্তনিহিত তথ্য সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে জ্ঞাত না হবে, সাথে সাথে তার সে জ্ঞান হতে হবে দৃঢ় বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত; যার সামনে সন্দেহ ও অজ্ঞতার কোন স্থান থাকবে না, তিরোহিত দূরিভূত করবে মিথ্যার ও অসত্যের বেড়াজাল।
অনুরূপভাবে এ সাক্ষ্য সম্পন্ন হওয়ার অন্য আরেকটি শর্ত হলো: সাক্ষ্যদাতাকে সম্পূর্ণ কায়োমনোবাক্যে খাঁটি আল্লাহর উদ্দেশ্যে অবিকৃতভাবে তা মেনে নিতে হবে, যাতে করে তার বিপরীত শিরক্‌ বা বিদ‘আত সেখানে স্থান না পায়।
শিরক হলো, ইবাদতের কোন অংশকে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের দিকে নিবদ্ধ করা, আর বিদ‘আত হলো ইবাদত বা উপাসনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত এর বিপরিতে অনুষ্ঠিত হওয়া।
সুতরাং যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দান পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করবে তাকে শিরক বিদ‘আত স্পর্শ করতে পারবে না।
এমনিভাবে এ সাক্ষ্য হতে হবে এমন দৃঢ় বিশ্বাস ওপূর্ণ বশ্যতার ভিত্তিতে যার সামনে এর অন্তর্নিহিত ও অবশ্যাম্ভাবী বস্তুসমূহে অস্বীকার বিদ্রোহ, ও ঘৃনার নাম তা ব্যত্ত থাকবেনা। আর তা হলো, শুধুমাত্র এক আল্লাহর ইবাদত এবং কেবলমাত্র তাঁর রাসূলেরই অনুসরণ। আর এ সাক্ষ্য হতে হবে সম্পূর্ণভাবে এ সাক্ষ্য দান ও সাক্ষ্যদানকারীদের মনে প্রাণে ভালবেসে; যাতে করে এ সাক্ষ্য যারা দেয় না অন্তরের অন্তস্থলে তাদের প্রতি অপছন্দভাব ফুটে উঠবে; যা মূলত শির্ক ও বিদ‘আতকেই অপছন্দ করা এবং শির্ককারী মুশরিক ও বিদ‘আতকারীদেরকে এমন অপছন্দ করতে হবে যেমন তাকে আগুনে নিক্ষেপ করা সে অপছন্দ করে।
এ বন্ধুত্ব এবং শত্রুতার নীতির উপর ভিত্তি করে আমার প্রিয় ভাই রফি উনলা বাছিরি “কাদিয়ানীরা নিন্দনীয় কেন?” এ প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রয়াস পেয়েছেন। যদিও মুসলিমগণ তাদেরকে আগেই অমুসলিম সংখ্যালঘু হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। কারণ তাদের কাছ থেকে এটা স্পষ্টভাবে এসেছে যে, তারা এক মিথ্যুক নবুওয়াতের দাবীদারের অনুসারী। কিন্তু তারা ইসলাম নামের ছত্রছায়ায় সারা বিশ্বে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বের অনেক স্থানে শক্তিশালী আস্তানা গেড়ে তার মাধ্যমে ইসলামের বিকৃত চিত্র মানুষের কাছে পেশ করছে। সুতরাং এ ব্যাপারে সাবধান করার প্রয়োজন রয়েছে।
বিশেষ করে মিথ্যাবাদীদেরকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল এর বাণীতে যেভাবে ধিকৃত করা হয়েছে তা প্রচার ও প্রসার করা আজকের দিনে খুব প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
আল্লাহ বলেন:
“তার চেয়ে কে বেশী অত্যাচারী যে আল্লাহর উপর মিথ্যার সম্পর্কে দেখায় অথবা বলে আমার কাছে ওহী (বাণী) এসেছে অথচ তার কাছে কিছুই আসেনি”[1]
অনুরুপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 
“যে পর্যন্ত ত্রিশ জনের মত মিথ্যুক প্রতারক, যাদের সবাই মনে করবে তারা আল্লাহর রাসূল, তারা প্রকাশ না পাবে সে পর্যন্ত কিয়ামত হবে না।”[2] 
তিনি আরও বলেন: 
“আমি সমস্ত নবীদের ধারা সমাপ্তকারী, আর আমার মসজিদ হলো শ্রেষ্টত্বের দিক থেকে সর্বশেষ মসজিদ”। [3]
সূতরাং যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরে নবুওয়াতের দাবী করবে সে মিথ্যুকআর এই কাদিয়ানীরা যদিও তার নিজেদের মুসলিম মনে করে থাকে; বস্তুত তারা ইসলামের উপর জঘণ্য আঘাত হেনেছে। ইবাদতের ক্ষেত্রে, নবুওয়াতের মূলে করেছে কুঠারাঘাত, যে প্রধান মূলনীতির উপর ইসলামের প্রতিষ্ঠা সেটা নষ্ট করেছে; আর তা হলো আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সঠিক উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল তারা এ প্রধান বিশ্বাসকে জলাঞ্জলী দিয়েছে। আল্লাহ তাদের সাথে প্রাপ্য ব্যাবহারই করুন এবং তাদের ফেৎনা ও অনুরূপ প্রত্যেক প্রতারকের ফেৎনা থেকে আমাদেরকে হিফাযত করুন।
দো‘আ করি যেন আল্লাহ এর লিখককে উত্তম প্রতিদান প্রদান করেন।
وصلى الله على خاتم الأنبياء ورسله وعلى آله وأصحابه أجمعين.
সালেহ বিন আবদুল্লাহ আল আবুদ[4]
১০/০৯/১৪১৩ হি:


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
الحمد لله وحده، وصلوات الله وسلامه على من لا نبي بعده، وبعد!
• কাদিয়ানীদের বাহ্যিক চাকচিক্যময় কথা-বার্তায় অনেকেই প্রতারিত হয় এবং প্রশ্ন রাখে কাদিয়ানীদেরকে খারাপ বল কেন? তারা তো নিজেদেরকে মুসলিমই বলে থাকে।
এ উদ্ভূত প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে আমাদের নিম্নের কয়েকটি বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
ক. তাদের ইতিহাস
খ. তাদের আকিদা বিশ্বাস
গ. তাদের দৈনন্দিন সম্পাদিত কার্যাদি, অর্থাৎ আরকানে ইসলাম সম্পর্কে তাদের মতামত।
ক. তাদের ইতিহাস

প্রথমেই যেটা লক্ষ্যণীয় তা হলো: ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সাহায্যে মীর্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এ দলটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। যারা ১৮৮৯ সালে ব্রিটিশের আনুগত্যের প্রতি নিষ্ঠাবান বলে সনদ লাভ করে এবং ১৯০০ সাথে ভারতস্থ ব্রিটিশ শাসনের অধীন ধর্মীয় দল হিসাবে নিবন্ধিত হয়।
১৯০৮ সালে যখন গোলাম আহমদ কাদিয়ানী মারা যায়, তখন থেকেই তাদের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাপারে মত-পার্থক্য দেখা দিতে থাকে১৯১৪ সালে তা প্রকটরূপ লাভ করে, যার পরিনতিতে তারা দু’টি উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
ক. কাদিয়ানী: যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তনয় মীর্যা বশীরুদ্দীন মাহমুদের নেতৃত্বাধীন.
খ. লাহোরী: যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নবুওয়াতের দাবীর প্রধান পৃষ্ঠপোষক মৌলবী মুহাম্মাদ আলীর নেতৃত্বাধীন।
তাদের এ দু’টি উপদল ১৯৪৭ সাল থেকে পাকিস্তানের মাটিতে কাজ করছে,  তবে ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান কর্তৃক তাদেরকে অমুসলিম সংখ্যালঘু বলে ঘোষিত হয়। ১৯৮৪ সালে পাকিস্তানে তাদের কর্মকাণ্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়। ফলে তাদের বর্তমান নেতা: মীর্যা তাহের আহমাদ (গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর পৌত্র) পাকিস্তান থেকে পালিয়ে নিয়ে লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে রয়েছে।
 এ দিকে তাদের লাহোরী গ্রুপ পাঞ্জাবের দারুস্‌সালাম পল্লীতে তাদের আস্তানা গাড়ে, তবে তাদের প্রচার ও প্রসার অপরটির তুলনায় বেশী নয়।
কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক হলো যে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইউনিভার্সিটিগুলো, (যেমন শিকাগো ইসলামিক ইউনিভার্সিটি যা তাদের প্রতিষ্ঠিত), বিভিন্ন ইসলামী দেশ ও প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য ছাত্র গ্রহণ করে এবং তাদেরকে ব্রেন ওয়াশ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার সুযোগ সুবিধা দ্বারা আকৃষ্ট করার ও ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
খ. তাদের আক্বীদা ও বিশ্বাস

১. আল্লাহর উপর ঈমান সম্পর্কে:
মুসলিম মাত্রই এটা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তা‘আলার উপর বিশ্বাস তিন দিক থেকে হতে হয়:
এক: সমস্ত সৃষ্টি জগতের সৃষ্টি করা, পালন করা, আইন দান, মৃত্যু ও জীবন দান এগুলো একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই বিশেষত্ব।
দুই: অনুরূপভাবে যিনি সৃষ্টি করেন, লালন করেন, জন্ম মৃত্যু প্রদান করেন জীবন বিধান নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন শুধু সে আল্লাহই যাবতীয় ইবাদত বা উপাসনার একমাত্র হক্কদার, অন্য কেউ এতে অংশীদার নয়সুতরাং দো‘আ,  মান্নত, কুরবানী, বিপদমুক্তি, সাহায্য ইত্যাদি তথা সর্বপ্রকার ইবাদতে একমাত্র তাঁকেই উদ্দেশ্য করতে হবে।
তিন: আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল কতৃক আল্লাহর জন্য নির্দিষ্টকৃত নাম ও গুণাগুণকে কোন প্রকার পরিবর্তন ও বিকৃত না করে তাঁর উপযোগী যেভাবে হবে সেভাবে তার জন্য তা সাব্যস্ত করা।
কিন্তু যদি কাদিয়ানীদের দিকে দৃষ্টি দেয়া হয় তাহলে দেখা যাবে তারা এ তিনটি বিশ্বাসেই মুসলিমদের আক্কীদা-বিশ্বাসের বিরোধিতা করছে। যেমন:
মীর্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ‘শিরক ফির রাবুবিয়াত’ বা আল্লাহ তা‘আলার সাথে নিজেকেও সবকিছুর স্রষ্টা ও মালিক বলে দাবী করেছে। এ ব্যাপারে তার মতামত হলো: সে এ মর্মে ওহী বা বাণী পেয়েছে যে, তাকে বলা হচ্ছে:
“আমার যেমন আকাশ ও ভুমণ্ডলের মালিকানা রয়েছে তেমনি তা তোমারও।”[5]
এ কথা ঠিক রাখতেই সে তার উর্দু ‘তাওদীহুল মারাম[6] বইয়ে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয়ঙ্কর সামুদ্রিক  অক্টোপাস[7] এর সাথে তুলনা করেছে।
অনুরূপভাবে ইবাদত যে, শুধুমাত্র আল্লাহকেই করতে হবে তাতেও সে দ্বিমত পোষণ করেছে, বরং আল্লাহর সাথে তারও ইবাদত করার জন্য সে লোকদের আহবান করেছে’ যেমন:  তার দাবী অনুযায়ী তার কাছে এই মর্মে বাণী এসেছে (!) যে:
“তোমার সাথে আমার সম্পর্ক হলো, তুমি আমার সাথে একীভূত, একই সূত্রে গ্রথিত...... আল্লাহ তোমার পবিত্রতা জপ করছে ..... আর যে কেউ আল্লাহর প্রকাশ্য রূপের[8] সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তার কাছে কোন মঙ্গল নেই।”[9]
আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণবাহী কুরআন-হাদীস কর্তৃক প্রমাণিত আল্লাহর নাম ও গুনাবলীসমূহ সম্পর্কে তার মতামত আরো জঘন্য সে আল্লাহকে এমন কতেক নাম ও গুণে বিভূষিত করেছে যা কক্ষনো আল্লাহর (স্রষ্টার) শান এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে না। বরং তা কেবল বান্দার (সৃষ্টিজগতের) গুণই হতে পারে; যেমন সে বলছে “আল্লাহ .... তরবারী নির্মাতা[10]
আরও বলছে: “আমার রব চৌকিদারের মত আমার সামনে সামনে হাঁটে।”[11]
উপরন্তু সে সর্বেশ্বরবাদ (وحدة الوجود-Pantheism) বা জগতের সবকিছু এক, তথা সৃষ্টি জগত এবং স্রষ্টা একই বস্তুর দুইদিক, এ ভ্রান্ত বিশ্বাসের প্রবক্তা। তাই সে তার আরবী গ্রন্থ (الاستفتاء) তে তার দাবী মোতাবেক আল্লাহর সাথে কথোপকথনের সময় আল্লাহ তা‘আলা নাকি তাকে বলছে (!) “তুমি আমার থেকে, আর আমি তোমার থেকে।”[12]
 অন্য এক স্থানে আল্লাহকে তার মহৎ গুণাগুণের বিপরীত গুণে ভূষিত করেছে। যেমন: তার দাবী অনুসারে আল্লাহর সাথে কথোপকথনের সময় তার কাছে নাকি এ মর্মে বাণী এসেছে যে,  “তোমার সাথে আমার সম্পর্ক পিতা পুত্রের সম্পর্ক, তুমি আমার পুত্রতুল্য।”[13]
এতেই শেষ নয় বরং অন্য স্থানে বলছে তার কাছে নাকি ওহী এসেছে এই বলে যে,  “হে আল্লাহর নবী! আমি তোমাকে চিনতে পারি নি[14]
 এ হলো তাওহীদ বা একত্ববাদ  সম্পর্কে কাদিয়ানীদের মোটামুটি সংক্ষিপ্ত বিশ্বাস
প্রত্যেক মুসলিমকেই তাদের এ বিশ্বাস সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানী হতে হবে। যাতে তারা কাদিয়ানীদের প্রকাশ্য কথা-বার্তা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ধোকা না খায়; কারণ তারা প্রকাশ্যে শিরক থেকে মুক্ত থাকার অঙ্গিকার করে থাকে, কিন্তু প্রতিষ্ঠাতা নবুওয়াতের দাবীদারের সব গ্রন্থই শির্কে পরিপূর্ণ।

২. ফেরেশতার উপর ঈমান সম্পর্কে:
ফেরেশতা জগত সম্পর্কে ভণ্ড নবুওয়াতের দাবীদার গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর আক্বীদা ও বিশ্বাস হলো ফেরেশতা ও আল্লাহ একই বস্তু। তাই সে তার আরবী গ্রন্থ (حمامة البشرى) তে ফেরেশতাদের সম্পর্কে বলছে: “এদেরকে আল্লাহ তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ রূপে তৈরী করেছেন”[15]
এর থেকে বুঝলাম যে, সে ফেরেশতাদের অস্তিত্বই মানে না, বরং ফেরেশতা বলতে, আল্লাহর অঙ্গপ্রত্যঙ্গই বুঝে।
মোটকথা: মুসলিমদের অবশ্যই তাদের এই বিশ্বাস সম্পর্কে জানতে হবে; আর জ্ঞানীদের জন্য ইঙ্গিতই যথেষ্ট

৩. ঐশী গ্রন্থ সমুহের উপর ঈমান আনা সম্পর্কে:
ভণ্ড কাদিয়ানী তার আরবী গ্রন্থ (الاستفتاء) তে বলছে, “আল্লাহ .... আমার সাথে কথা বলেছেন যেমন তার রাসূলদের সাথে বলেছেন। .... আর আমি এই কালেমাসমূহের সত্যতার বিশ্বাস রাখি যেমন আল্লাহর অন্যান্য কিতাবের উপর রাখি” পৃষ্টা নং : ২২, ৮৬
ফলে সে তার স্বহস্তে লিখিত বিভিন্ন ভাষার বিভিন্ন প্রবন্ধের সমষ্টি (تذكرة الوحي المقدس) বা ‘ঐশী বাণী স্মারক’ নামে যার নামকরণ করেছিল; সেটাকে আল্লাহর কাছ থেকে যথাযথ অবতীর্ণ অন্যান্য কিতাবাদীর সাথে তুলনা করেছে।
এটা প্রমাণ করতে গিয়ে তার অনুসারীরা সূরা আল-বাকারার আয়াত:
﴿وَٱلَّذِينَ يُؤۡمِنُونَ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبۡلِكَ وَبِٱلۡأٓخِرَةِ هُمۡ يُوقِنُونَ ٤ [البقرة: 4]
এর মধ্যকার (ٱلۡأٓخِرَةِ) শব্দের বিকৃত অর্থ (Distortion) করে বুঝতে চায় যে, (আখেরাত)[16] দ্বারা কাদিয়ানীর নবুওয়াতের কথা বুঝানো হয়েছে; অবশ্য তারা কুরআন হাদীসের অর্থ বিকৃত করার কায়দা কানুন তাদের পুর্বসূরী কাদিয়ানীর কাছ থেকেই নিয়েছেফলে যদি তার স্বহস্তে লিখা বিভিন্ন ভাষায় রচিত রচনাবলীকে ঐশী বাণী বলতে হয়, তবে কুরআনকেও বলতে হয় যে, মানুষের রচনা বা মানবের লিখা।[17] আল্লাহর কালাম নয়। (নাউযুবিল্লাহ)

৪. রাসূলদের উপর ঈমান আনা সম্পর্কে:
মুসলিমদের বিশ্বাস হলো যে, নবীগণ পবিত্র নসল ও নসব থেকে নির্বাচিত হতে হয়ে থাকেন, সুতরাং তাদের নসব এ কোন প্রকার ব্যাভিচারের নাম গন্ধও নেই কিন্তু গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মতে নবীদের আসল নসব পবিত্র হতে হবে এমন কোন কথা নেই, বরং সে তার উর্দু বই (কিসতিয়ে নুহ) তে মরিয়াম (আ) সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলছে, (সে তার গর্ভসহ বিবাহ বসতে বাধ্য হয়েছিল, কারণ তার স্বজাতীয় মুরব্বীরা তাকে বিবাহের জন্য পীড়াপীড়ি করছিল)[18]
তারপর তার নবুওয়াতের দাবীর দ্বিতীয় পর্যাযে সে যখন নিজকে ঈসা (আ) এর অনুরূপ বা স্বদৃশ্য (Analogous) বলে বর্ণনা করত, তখন বলত “ঈশার সদৃশ ব্যক্তি ঈশা থেকেও উত্তম”[19]
অতপর তার জীবনের তৃতীয় স্তরে যখন সে পূর্ণ নবুওয়াত দাবী করলো তখন সে স্পষ্টাক্ষরে নিজের নবুওয়াতের কথা বলতে নিরস্ত থেকে প্রথমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শানে না‘ত কসীদা লিখতে আরম্ভ করল, এ সমস্ত কসিদায় সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রশংসায় সীমালঙ্গন করতে লাগল। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুই নাম ছিল, (মুহাম্মাদ, আহমাদ) সেহেতু সে এসব কসীদায় দ্বিতীয় নামটির ব্যবহার বেশী করে করতে লাগল; তবে এসব কিছুতে ধাঁধাঁ ও প্রহেলিকা এমন ব্যাপকহারে ব্যাবহার করতো যে, সে কি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রশংসা করছে নাকি আহমদ (নিজ নাম এর শেষাংশ) এর প্রশংসা করছে তা অনেকেই বুঝতে পারত না।
অতপর সে  সরাসরি আহমাদ দ্বারা নিজকে বুঝাবার এক চমৎকার পন্থা আবিস্কার করলো, এবং বললো “আমার এ জুব্বায় (পোষাকে) আল্লাহর নুর ছাড়া আর কিছুই নেই, আসহাবে সুফফা তোমার উপর দরুদ পাঠ করছে, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে মহীয়ানরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। কিন্তু আহমাদ সে আত্ম প্রকাশ করেছে, সম্মোহনীরূপ নিয়ে”[20]
অনুরূপভাবে ধাঁধাঁর ব্যবহার সম্পন্ন হওয়ার পর এক সময় সরাসরি নবুওয়াতের দাবী করে বললো: “আমি যা কিছুই বলেছি, সেটা আমার রব এর পক্ষ থেকে যে আমার নিত্য সঙ্গী”[21]
 তার অনুসারীরা তার নবুওয়াতের দাবীকে চাঙ্গা করতে সূরা আল-জুমু‘আ এর আয়াত (২-৩)
﴿هُوَ ٱلَّذِي بَعَثَ فِي ٱلۡأُمِّيِّۧنَ رَسُولٗا مِّنۡهُمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبۡلُ لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٖ ٢ وَءَاخَرِينَ مِنۡهُمۡ لَمَّا يَلۡحَقُواْ بِهِمۡۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٣﴾ْ [الجمعة: 2-3]
এর অনুবাদ করতে যেয়ে সম্পূর্ণ বিকৃত ভাবে (وَءَاخَرِينَ مِنۡهُمۡ لَمَّا يَلۡحَقُواْ بِهِمۡۚ) এর অনুবাদে এ কথা ঢোকালো যে, এর অর্থ হলো (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয়বার গোলাম আহমাদ এর রূপ নিয়ে আবার দুনিয়ায় আসবে।[22] এর চেয়ে বড় কুফরী আর কি হতে পারে?
যেখানে সে নিজকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্ণজম্মের রূপ বলে দাবী করছে? [23]
মুসলিমরা এ ব্যাপারে যতটুকু সাবধান হয়েছে?
এ পুনর্জন্মবাদের এ বিশ্বাস হিন্দুদের থেকে ধার করা বুলি মাত্র।

৫. আখেরাতের উপর ঈমান সম্পর্কে:
প্রত্যেক মুসলিমই এটা বিশ্বাস করে যে, পরকাল আছে; যেখানে পাপ পূণ্যের বিচার হবে এবং প্রত্যেকের কাজ অনুযায়ী সে প্রতিফল ভোগ করবে, কিন্তু গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এ ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষন করে, সে ১৮৯৩ সর্বপ্রথম ১৩১১ হি মোতাবেক কেয়ামতের যে সমস্ত আলামত রয়েছে:
১. সেগুলোকে অস্বীকার করে যেমন তার আরবী বই (حمامة البشرى) তে সূরা আ‘রাফ এর ১৮৭ নং আয়াত[24]
﴿يَسَۡٔلُونَكَ عَنِ ٱلسَّاعَةِ أَيَّانَ مُرۡسَىٰهَاۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ رَبِّيۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقۡتِهَآ إِلَّا هُوَۚ ثَقُلَتۡ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ لَا تَأۡتِيكُمۡ إِلَّا بَغۡتَةٗۗ يَسَۡٔلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِيٌّ عَنۡهَاۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ ٱللَّهِ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعۡلَمُونَ ١٨٧ [سورة الأعراف: 187]
এর ব্যাখ্যা বিকৃত করতে গিয়ে শব্দটিকে (بَغۡتَةٗۗ) হিসাবে লিখে:[25] আয়াতের ভুল ব্যাখ্যায় গিয়ে বলে যে, (بغطة) শব্দটি দ্বারা প্রকাশ্যভাবে বুঝায় যে, কিয়ামতের যে সমস্ত আকাট্য প্রমাণ বা প্রকাশিত হবে বলে বলা হয়, তা কখনো অনুষ্ঠিত হবে না।[26]
এতো গেল তার প্রথম প্রদক্ষেপ, দ্বিতীয় স্তরে এসে ১৩১৮ হিজরী মোতাবেক ১৯০১ সালে সে সরাসরি পরকাল অস্বীকার করার জন্য প্রথমে শব্দের নম্বর হিসাব করে গানিতীয় কায়দায় বললো “আজকের দিনে কাল তার সর্বশেষ গুর্ণায়নে পৌঁছেছে, সূরা ফাতেহায় বর্ণিত ইহকাল এর নির্ধারিত সময় সাত হাজার চন্দ্র বছর এবং সূর্য্য বছর শেষ হতে চলেছে”[27]
 এ কথার ব্যাখ্যায় তার ছেলে মাহমুদ বলে: “পরকাল মৃত্যুর পরেই শুরু হয়ে থাকে, মৃত্যু সময় থেকে পৃথক করে হাজার বছর পরে নির্দিষ্ট সময়ে পরকাল বলতে কিছু নেই”[28]
মোট কথা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী যখন দাবী করল যে, সেই হলো প্রতিশ্রুত মসীহ,[29] তখন থেকেই সে তার এ দাবীর সমর্থনে বলতে আরম্ভ করল যে, তার আবির্ভাবের পরবর্তী সময়টাই হলো কিয়ামত, আর এ ব্যাপারে তার যুক্তি হলো যে, প্রতিটি শব্দের গোপন একটা নম্বর রয়েছে। সেই শুধুমাত্র তা জানে আর সে অনুসারে হিসাব নিকাশ করে সে সিদ্ধান্ত নিয়াছে যে, ইহকালীন বয়স যত হবার কথা তা শেষ হয়ে গেছে তার আবির্ভাবের সাথে সাথেই; সুতরাং তার আবির্ভাবের পরবর্তী জীবনটাকে পরকালীন জীবন হিসাবে মানতে হবে। এভাবেই সে তার সমস্ত প্রচেষ্টা ইয়াহূদী নাসারাদের কিয়ামত সম্পর্কিত বিশ্বাস এর সাথে সম্পৃক্ত করতে চাইলো, কিন্তু যখন তার মারা যাওয়ার পরও দুনিয়ার অস্তিত্ব রয়ে গেল, তখন তার অনুসারীরা সেই বিশ্বাসটাকে নতুন করে সাজাবার চেষ্টা করতে লাগল, কিন্তু হায়! তার সমস্ত পুস্তকাদী এব্যাপারে এত স্পষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণবহ যে সেটা কোন ব্যাখ্যাই গ্রহণ করছে না।

৬. তাকদীর বা ভাগ্যের উপর ঈমান আনা সম্পর্কে:
গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী  অন্যান্য পাচঁটি রুকন এর মত এখানেও ভ্রষ্ট  হয়েছে।
এ ব্যাপারে সে তার আরবী বই (الاستفتاء) তে বলছে যে, আল্লাহ নাকি তাকে প্রেমের ভান বা ছিনালি করে বলছে “হে আল্লাহর নবী! আমি তোমাকে চিনতে পেরেছিলাম না”[30] [না‘উযুবিল্লাহ]
 এতে করে সে বুঝাতে চাইলো যে, আল্লাহ তার সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল, এ জন্যই অনেক দেরীতে তাকে নবুওয়াতের খবর দিয়েছে। [না‘উযুবিল্লাহ]
এ সব দাবীর পিছনে যে রহস্যটা কাজ করেছে সেটা হলো, সে যে বারবার তার অবস্থান পরিবর্তন করত; সেটাকে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ প্রচেষ্টা; কারণ সে কখনো নিজেকে বলতো প্রতিশ্রুত মসীহ, আবার কখনো বলতো: মাহদী, আবার ক্ষনিক পরেই বলতো, সে হলো মুজাদ্দিদ বা ধর্ম সংস্কারক, আবার কখনো বলতো, সে হলো নবী: আবার কখনো দাবী করতো যে, সে সমস্ত ধর্মের সংশোধনকারী।
সে যখন দেখলো যে, তার বিভিন্ন অবস্থান লোকের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করবে, তখন দাবী করলো যে,  আল্লাহ তাকে প্রথমে চিনতে ভুল করেছিল। [না‘উযুবিল্লাহ]
অনুরূপভাবে পূর্ববর্তী বইতেই সে বলছে যে, আল্লাহ তাকে বলছে “কোন কিছু করার ইচ্ছা করলে তখন তোমার শুধুমাত্র হও বলতে হবে, তাতেই তা হয়ে যাবে”[31]
 সে এটাকে তার গ্রহনীয় প্রার্থনা হিসাবে বর্ণনা করে তার আরবী বই তে বলছে “কখনো কখনো আল্লাহ তার অমোঘ ইচ্ছাকে ত্যাগ করে তার বান্দার প্রার্থনা শুনেন”[32]
যাতে বুঝা গেল যে, তার মতে আল্লাহর অমোঘ ইচ্ছা পরিবর্তনশীল, সুতরাং সে তাকদীরের উপর ঈমান রাখার প্রয়োজন মনে করে না।
আমরা যদি তার এ বিশ্বাসের মূল খুজতে যাই তাহলে দেখতে পাবো যে, সে এ কথাগুলো মথি লিখিত সু সমাচার থেকে গ্রহণ করেছে, কারণ সেখানে ঈসা (আ) এর দিকে সম্পর্কিত করে বলা হয়েছে, তিনি নাকি তার সাথী পিটারকে বলেছেন “তুমি ধরাপৃষ্ঠে যা কিছু করবে তাই উর্ধ্বাকাশে গৃহিত হবে, আর ভূপৃষ্ঠে যাই সংগঠিত হবে,  উর্ধ্বাকাশেও তাই ঘটবে)[33]
সুতরাং যদি তার শিক্ষা ইসলামী ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী না হয়ে অন্যান্য বিভিন্ন মতবাদ থেকে নেয়া হয়ে থাকে বা মন গড়া কিছু কার্যকলাপকে ধর্মের রূপে রূপায়িত করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে, তা হলে কিভাবে বলা যাবে যে, তার অনুসারীদেরকে মুসলিমরা অনাহুত নিন্দা করে? আর কিভাবেই বা তাদেরকে আমরা মুসলিম বলবো? সুতরাং তারা যেখানেই থাকুক অবশ্যই নিন্দনীয় ও ধিকৃত।

গ. তাদের রীতি নীতি

১. কালেমায়ে শাহাদাত (لا إله إلا الله محمد رسول الله) সম্পর্কে তাদের মতামত:
আগেই বলেছি ইবাদতের ক্ষেত্রে কাদিয়ানী নিজকে আল্লাহর সাথে ইবাদতের জন্য আহবান করেছে এবং নিজকে আল্লাহর প্রকাশ্য রূপ বলে দাবী করেছে।[34]
 অনুরূপভাবে অন্যস্থানে বলছে যে, “আল্লাহ নবীদের সাজে সজ্জিত হয়ে জগতে আগমন করেছেন” অর্থাৎ নবীরা পূজনীয় হবার ক্ষমতা রাখেন, অন্যস্থানে নিজকে মূসা (আ) এর সাথে তুলনা করে বলছে তার কাছে যে ওহী এসেছে তাতে আছে “তুমি উম্মতে মুহাম্মাদীয়ার জন্য মূসার মত”[35]
অর্থাৎ মূসা যেমন নতুন শরীয়ত নিয়ে এসেছিল তুমি তেমনি নতুন শরীয়ত নিয়ে প্রেরিত অনুরূপভাবে তুমি অন্যান্য নবীদের মত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
উপরোক্ত কথা দ্বারা ভণ্ড নবুওয়াতের দাবীদার নিজকে ইবাদত পাওয়ার যোগ্য বলে সাব্যস্ত করছে। অপরদিকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবর্তে তাকেই সমীহ ও সম্মানের অধিকারী মনে করার জন্য তার অনুসারীদের চেষ্টার কারণও উদঘাটিত হয়েছে।
এ জন্যই সে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুটো রূপ সাব্যস্ত করেছে, প্রথমরূপে আরবীয় মুহাম্মাদ আর দ্বিতীয় রূপে; অনারব আহমদ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, আর এটা প্রমান করার জন্য সে বাস্তবকে অস্বীকার করতেই এমন অসার তর্কে যেতেও দ্বিধা করে নি।
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, কাদিয়ানীরা (لا إله إلا الله) (আল্লাহ ছাড়া কোন সঠিক উপাস্য নেই) এটাকেই অস্বীকার করছে; (محمد رسول الله) বা মুহাম্মাদ আল্লাহর বাসূল বা প্রেরিত পুরুষ, এটার সাক্ষ্য তাদের কাছে পাওয়া তো অনেক দূরের কথাফলে তারা ইবাদতের জন্য যেমন গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর ব্যক্তিত্বকে; তেমনি নবুওয়াতের জন্যও তারই সত্বাকে কল্পনা করবে এটাই স্বাভাবিক।

২. নামাজ কায়েম করা সম্পর্কে তাদের মতামত:
ইসলামের এ বিশেষ নিদর্শনের ব্যাপারে গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী যে সব প্রকাশ্য বিরোধিতায় লিপ্ত তা হলো:
 # তার মতে যারা মসজিদে থাকবে তাদের জন্য মুয়াজ্জিনের আজানের জওয়াব দেয়া মুস্তাহাব নয়।[36]
# আরবী জানা সত্বেও যে কোন ভাষায় নামাজ পড়লেই শুদ্ধ হবে।[37]
# মাহিলাদের উপর জুমা ওয়াজিব, জুমা ওয়াজিব হওয়ার জন্য দুইজন লোকই যথেষ্ঠ; এমনকি কোন লোক তার স্ত্রী ব্যতীত কাউকে না পেলে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে জুমা পড়া তার উপর ওয়াজিব[38]
অনুরূপভাবে সে সুফীবাদে বিখ্যাত নিরবিচ্ছিন্ন অনবরত চল্লিশ দিনের নির্জন বাস বা বদ্ধ ঘরে একাকীত্বে থাকাকে মনে প্রাণে সমর্থন দেয়, এবং এটাকে বিরাট পূণ্যের কাজ বলে মনে করে”[39]
যদিও সে পরকালে বিশ্বাস করে না তবুও মানুষকে ধোকা দেবার নিমিত্তে সে তার বই (الوصية) তে তার অনুসারী যারা বেহেস্তি কবরস্থান (যা ‘কাদিয়ান’ নামক স্থানে অবস্থিত) সেখানে দাফন হবে তাদেরকে বেহেস্তের ওয়াদা প্রদান করেছে।[40]
সুতরাং গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী যদি তার অনুসারীদের জন্য আল্লাহ ও তার রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রদর্শিত পথের বাইরে নতুন নতুন নিয়ম কানুন জারী করে, তা হলে তাদেরকে নিন্দা করা কি প্রত্যেক মুমিনের জন্য ওয়াজিব নয়?  তাদের প্রকাশ্যরূপে মানুষ যাতে বিভ্রান্ত না হয় সে ব্যাপারে লোকদেরকে সাবধান করা কি জরুরী নয়?
 প্রশ্ন হতে পারে : তারা তো, আমাদের মতই নামাজে হাত বেধে দাঁড়ায়, নিবিষ্ট মন নিয়ে নামাজ পড়ে। এমনকি সিজদায় যাবার সময় আগে হাত রেখে তারপর দুই হাটু স্থপন করে থাকেন।[41] আপনি বি বলতে চান তারা এটা তাদের মোনাফেকী?
 উত্তরে বলবো : হ্যাঁ নি:সন্দেহে এটা তাদের মোনাফেকী।
আল্লাহ তা‘আলা বলছেন:
﴿۞لَّيۡسَ ٱلۡبِرَّ أَن تُوَلُّواْ وُجُوهَكُمۡ قِبَلَ ٱلۡمَشۡرِقِ وَٱلۡمَغۡرِبِ وَلَٰكِنَّ ٱلۡبِرَّ مَنۡ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ وَٱلۡكِتَٰبِ وَٱلنَّبِيِّۧنَ [البقرة: 177]
(মুখ পূর্ব পশ্চিম ফিরানোর মাঝে কোন সওয়াব নেই, সওয়াব হলো ঐ ব্যক্তির জন্য যে, ঈমান এনেছে আল্লাহ পরকাল, ফেরেস্তা, আল্লাহর কিতাবাদী এবং তার রাসূলদের প্রতি।)[42]

৩. যাকাত আদায় করা সম্পর্কে তাদের মতামত:
গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যাকাতকে নিজের মনগড়া ভাবে ফরয করেছে। কারণ সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যে সমস্ত হাদীসে যাকাতের বিধান বর্ণিত হয়েছে সেগুলোকে অস্বীকার করেছে কারণ তার মতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসসমূহ কুরআনের বিরোধিত করছে। অনুরূপভাবে সে মনে করে যে, হাদীস লেখা হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর অনেক যুগ পরে। সুতরাং তা গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। উপরন্ত সে মুসলিমদেরকে এই বলে আক্রমন করে বসলো যে, “যারা হাদীসের ব্যাপারে গুরুত্ব দেয় তারা কুরআনের মর্যাদাহানি করে।”[43]
 এ জন্যই সে তার প্রথম ফতোয়াতেই এই বলে আহবান করেছে যে, “তার মতের বিপরিত যত সহীহ বা বিশুদ্ধ হাদীস আছে তা বাদ দিতে হবে।”[44]
আর এজন্যই সে তার অনুসারীদের প্রত্যেক জীবিত লোকের উপর নির্দিষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা তাদের আয় থেকে মাসিক ১/১৬ অংশ বা ১/১০ থেকে শুরু করে ১/৩ অংশ পর্যন্ত সবাইকেই আন্দেলনের বাক্স এ আন্দোলনের স্বার্থে জমা দিতে হবে।[45]
অনুরূপভাবে সে তার অনুসারী প্রত্যেক মৃত্যু পথ যাত্রীর উপর ধার্য করেছে যে, যদি সে বেহেস্তি কবরস্থানের সৌভাগ্যে গৌরবাম্বিত হতে চায় তবে যেন তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির ১/১০ অংশ আন্দোলনের স্বার্থে দান করে যায়।[46]
তার এই নির্দেশ কাদিয়ানীদের উভয় গ্রুপ (কাদিয়ানী ও লাহোরী) এর মাঝে এখনো প্রচলিত রয়েছে।
এ সমস্ত কিছুর ফলে তারা: একদিকে নির্দিষ্ট পরিমান দান মনগড়াভাবে নিজেদের উপর ধার্য করলো, শরীয়ত এর হুকুমকে অস্বীকার করলো; অপর দিকে খৃষ্টানদের মত বেহেস্তের কেনা বেচার চেক হস্তান্তরের ন্যায় বেহেস্তি কবরস্থান বিক্রি করার অভিনব পদ্ধতি চালু করল।
 একবার ইসলামে যাকাত বিধানের দিকে তাকানো যাক, দেখা যাবে সেখানে অত্যন্ত ইনসাফের সাথে তা গ্রহণ করা হয়ে থাকে, যেমন: যে সমস্ত ভূমিতে নিজ কষ্টে কৃষকরা ফসল ফলায় সেখানে ১/২০ অংশ, আর যেখানে কৃষকের কষ্ট ব্যতীত প্রাকৃতিক নিয়মে ফসল উৎপন্ন হয় সেখানে ১/১০ অংশ, বরং অন্যান্য সম্পদের উপর মাত্র ১/৪০ অংশ যাকাত ধার্য করা হয়েছে; যাতে ইনসাফ ও ন্যায়ের চরম উৎকর্ষতা ফুটে উঠেছে। এর সাথে গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মতামতের কি কোন তুলনা চলে?

৪. রমজানের রোজা সম্পর্কে তাদের মতামত:
গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মতে রমজানের রোজা ভাঙ্গা প্রত্যেক মুসাফির ও রোগীর উপর ওয়াজিব, চাই কি তার সফর দীর্ঘ হউক বা সংক্ষিপ্ত হোক, রোগ বেশী হোক আর কমই হউক সর্বাবস্থায়ই রোজা ভঙ্গ করা ওয়াজিব। অনুরূপভাবে যারা ই‘তিকাফে থাকবে তাদের জন্য যে কোন দুনিয়ার কথা বলতে নিষেধ নেই, যেমনি ভাবে তারা ইচ্ছা করলে রোগীর দেখা শুনার জন্য বাহির হতে পারে।[47]
ফরজ রোজার ব্যাপারে উদাসীনতা স্বত্বেও সে সুফীদের থেকে ধার করে অনবরত ৮ মাস পর্যন্ত (১৮৭৫-১৮৭৬) নফল রোজা রাখার পদ্ধতি আবিস্কার করে।[48]
তার আরেক অনুসারী তার এ অন্তরীন থাকার ঘটনাকে ফলাও করে প্রচার করতে গিয়ে কিভাবে চল্লিশ দিন পর্যন্ত সুফীদের নির্জনবাসে অবস্থান করে ধন্য হয়েছে তা বিস্তারিত বর্ণনা করেছে।[49]
 বরং সে এ শরিয়ত গর্হিত কাজকে অশেষ পূণ্যের কাজ মনে করে বসেছে, এবং বলছে যে, সে এই নির্জন বাসের দ্বারা অদৃশ্যের পর্দাকে ছিন্ন করতে সক্ষম হয়েছে।
আর এখান থেকে বের হবার পরই সে ১৮৭৬ সালে তার বানোয়াট বিভিন্ন ভাষার ভুলে পরিপূর্ণ বাক্যাবলীকে ওহী বলে দাবী করতে লাগল।[50]
সুতরাং তার অবস্থা থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারছি যে, সে শয়তানের মন্ত্রনাকে ওহী বলে চালাতে চেষ্টা করেছে। তা হলে প্রত্যেক মুসলিমকে তার শয়তানী থাবা থেকে সাবধান করা কি জরূরী নয়?

৫. হজ্জ সম্পর্কে তাদের মতামত:
কাদিয়ানীদের চতুর্থ খলিফা মীর্যা তাহের আহমদ তার এক জুম‘আর আরবী খোতবায় এই বলে দাবী করেছে যে, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আন্তরিক আকাংঙ্খা ছিল মক্কা মদীনায় কবরগুলিতে গিয়ে সেগুলির মাটি দ্বারা ধন্য হবে।[51] (তবে হজ্জ করবে এ জন্য নয়)
হজ্জের জন্য তার আকাংখা প্রকাশ না পাওয়ার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে তার মুখপাত্র (মৌলবী সায়ফী কাদিয়ানী তার ইংরেজী বই (ملفوظات المسيح الموعود) এ বলছে (যার পড়শী ক্ষুধার্ত থাকবে, ফকির থাকবে, তার জন্য হজ্জ করা হারাম, বরং গরিবের প্রতি সমবেদনা এবং পড়শীর রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বকে ইসলাম ফরয হজ্জের উপর স্থান দেয়।)[52]
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে সে হজ্জ না করার জন্য শস্তা একটা যুক্তি দাড় করাতে চেষ্টা করেছে।
তবুও ১৩১১ হি: (মোতাবেক ১৮৯৩) সালে তার সাথীরা তাকে নিজে স্বয়ং হজ্জ পালন করতে বললে সে শস্তা দামের জবাব দিল (حتى يأذن الله)[53] অর্থাৎ তার উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে হুকুম হয় নি।
কিন্তু এতেও সে সন্তুষ্ট হতে না পেরে ১৩১৫ হি: মোতাবেক ১৮৯৭ সালের দিকে তার আরবী বই (الاستفتاء) তে প্রহেলিকা এবং ধাঁধাঁর মত কিছু কথা বলে হজ্জের স্থান পরিবর্তন করতে উদ্বুদ্ধ করলো; তাই সে বলছে:
 (আল্লাহ চায় তোমাদের গুনাহ ঝরে যাক তোমাদের জিঞ্জির খসে যাক এবং শুস্ক ভূমি থেকে শষ্য শ্যামল ভূমিতে তোমরা স্থানান্তরিত হও। কিন্তু তোমরা নিজদের দেহ কে পাপ পঙ্কিলে রাখতে সচেষ্ট, তোমাদের প্রিয় ভূমি থেকে দুরে থাকতে তোমরা সন্তুষ্ট, আমি তোমদেরকে প্রাচীন ঘরের দিকে ডাকছি, তোমরা সেখান থেকে মূর্তির দিকে ধাবিত হচ্ছো, কতক্ষন তোমরা এ বিড়ম্বনায় থাকবে? )[54]
 এ সমস্ত ধাধা আর প্রহেলিকা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ‘কাদীয়ান’ নগরী, যেখানে মানুষ নামের জানোয়ারগুলো বাস করে। যেখানকার মুসলিমরা চতুস্পদ জন্তুর চেয়েও অধম, যেমন সে নিজেই তার অন্য বইতে তা লিখছে। (তিনি অর্থাৎ আল্লাহ হিন্দুস্তানের দিকে তাকিয়ে এ (কাদীয়ান)কেই একমাত্র খিলাফতের কেন্দ্রস্থল হিসাবে পেলেন।[55]
 এ সব কারণে তার অনুসারীদের যারা তখনো হজ্জে আগ্রহী ছিল তাদেরকে এই শর্ত আরোপ করতো যে, “হজ্জের জন্য বাধা-বিপত্তি দূরীভূত হওয়া দরকার”[56] তা হচ্ছে না বিধায় হজ্জ করা যাবে নাতার চেয়েও স্পষ্ট ভাবে নিজের অবস্থান বর্ণনা করতে গিয়ে সে বলছে “নিশ্চয়ই আমিই হচ্ছি হাজরে আসওয়াদ বা কৃষ্ণ পাথর। যমিনের উপর আমাকে গ্রহণ যোগ্য করা হয়েছে আমার স্পর্শতায় সবার জন্য বরকত নিহিত।”[57]
কিন্তু এ সমস্ত ইশারা ইঙ্গিতে তার অনুসারীরা নিরস্ত না হয়ে মক্কায় হজ্জ করার জন্য আগ্রহ দেখায়; অথচ তাদের নবী তার উর্দু বই (دافع البلاء)[58] তে বলছে, “আমি তাকে অবতীর্ণ করেছি কাদিয়ানের নিকটে”
অনুরূপভাবে আরও স্পষ্টভাবে অন্য স্থানে বলছে “আর আল্লাহ তার কাদিয়ানের ঘরকে নি:শঙ্ক ভয়হীন হারামে পরিণত করেছেন .... অথচ এর আশে পাশে মানুষের উপর ছিনতাই হচ্ছে।[59]

বন্ধুরা !
কাদিয়ানীর এ সব প্রহেলিকা বাদ দিয়ে একবার কুরআনের বাণীর দিকে তাকান দেখবেন সেখানে কোন প্রহেলিকা বা ধাঁধাঁর ব্যাবস্থা করা হয়নি, যা বলা হয়েছে তা স্পষ্টভাবে মানুষের শান্তি ও মুক্তির জন্য বিবৃত করা হয়েছে। সূরা আল-বাকারাহ এর ১৯৬ নং আয়াতের দিকে তাকান, দেখবেন যেখানে বলা হয়েছে “তোমরা আল্লাহর জন্যই হজ্জ এবং উমরা পূর্ণ করে আদায় করো।”[60]
তাহলে কাদিয়ানীদের বিরোধিতার কারণ আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে আমরা আরও দেখতে পাই গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী স্পষ্টাক্ষরেই বলছে “আমি এ সবগুলিতে স্বাতন্ত্র বোধ করছি। সুতরাং তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে নামাজের স্থান বানাও।”[61]
এর উপর টীকা লিখতে গিয়ে সে লিখছে “আমাকে ইবরাহীম নামে নামকরণ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে আমাকে আদম থেকে খাতেমুর রাসূল মুহাম্মাদ পর্যন্ত সমস্ত নবীর নামে নামকরণ করা হয়েছে।”[62]
এসব কিছু বলার মূল উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই; আর তা’ হলো, এ কথা বলা যে, হাজরে আসওয়াদ এবং তাকে ইবরাহীম নামকরণ করার কারণে মাকামে ইবরাহীমে যে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হতো তা পড়তে হবে সে যেখানে অবস্থান করছে সেখানে অর্থাৎ কাদিয়ানে।
তবে তারকথা (খাতেমুর রাসূল) দ্বারা সে বুঝাতে চাচ্ছে নবীদের মোহর বা আংটি; মুসলিমরা যা বিশ্বাস করে যে, (খাতেমুর রাসূল) অর্থ শেষ নবী এটা তার উদ্দেশ্য নয়।
কারণ সে নবুওয়াতের অভিনব নতুন ব্যাখ্যা সংযোজন করেছে, তার মতে নবুওয়াত দ্বারা “আল্লাহ কর্তৃক অধিক আলাপ সম্ভাষন”[63] করাকেই বুঝায়।
সুতরাং তার (খাতেমুর রাসূল) দ্বারা অর্থ নেয়, উৎকৃষ্ট নবী; যদিও আরবী ভাষায় এর অর্থ হলো শেষ নবী। কিন্তু তারা এ অর্থ করতে নারাজ; কারণ এতে করে তাদের প্রতিষ্ঠাতার নবুওয়াতের দাবী করাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলতে হয়।
সবশেষে আমার অনুরোধ আমরা যেন তাদের তৎপরতায় প্রতারিত না হই। আর এ জন্যই মুসলিম যুবকদেরকে তাদের প্রতিষ্ঠানে, হাসপাতালে এবং প্রচার প্রপাগান্ডা থেকে দুরে রাখার জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি
সাথে সাথে অনুরোধ করব আমরা যেন আমাদের প্রতিটি সমাজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতের ব্যাপক প্রসার ঘটাই; কারণ যেখানেই সুন্নাতের ব্যাপক প্রসার হয়েছে সেখান থেকে এসব বাতিল মতবাদ তিরোহিত হয়েছে। পক্ষান্তরে যেখানেই মুসলিমরা সুন্নাতে রাসূল থেকে দুরে সরে এসেছে সেখানেই বাতিল দানা বেঁধে উঠেছে। কারণ কাদিয়ানী নিজেই তার নবুওয়াতের দাবীর উৎস হিসাবে ঐ অঞ্চলের মানুষের ব্যাপক অজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর কথা বলেছে, এ ব্যাপারে সে তার বইতে বলছে “তুমি মুসলিম যুবকদের দেখবে যে তারা ইসলামী আচার অনুষ্ঠান ত্যাগ করেছে, সুন্নাত ত্যাগ করেছে, দাড়ী কামিয়েছে, মাটি পর্যন্ত কাপড় পরিধান করছে, মোচ লম্বা রাখছে, খৃষ্টানদের যাবতীয় রসম রেওয়াজ তাদের মন মগজ দখল করে আছে।”[64]
পরিশেষে সবাইকে এ, ফেৎনা থেকে মুক্ত থাকার জন্য আবারো অনুরোধ জানিয়ে শেষ করছি।
ওমা তাওফিকী ইল্লা বিল্লাহ

সমাপ্ত




[1] সূরা আল-আনআম, ৯৩
[2] .বুখারী ৩/২৪৩, মুসলিম ৪/২২৪০ নং
[3] . মুসলিম শরীফ; ২/১০১২
[4] প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মদীনা শরীফ।
[5] . Ahmadiet Movement: Mirja Bashiruddin . p. 118
[6] . توضيح المرام  পৃ.৬৮-৬৯
[7] . সামুদ্রিক প্রাণী বিশেষ, যার আটটি শিং থাকে আর শরীর থাকে অত্যন্ত নরম।
[8] .প্রকাশ্যরূপ বলতে তার উদ্দেশ্য: সে আল্লাহর প্রকাশ্য রূপ হয়ে দুনিয়াতে আগমন করেছে।
[9] الاستفتاءপৃ. ৫, ২৮, ৮৮, ৮৯, ৯৪।
[10] . الاستفتاءপৃ.৪৬
[11] مواهب الرحمن পৃ.২৩
[12] . الاستفتاءপৃ: ৮১
[13] الاستفتاءপৃ: ৯১
[14] . الاستفتاءপৃ: ৯৫
[15] .  حمامة البشرى পৃ: ২২১
[16] বস্তুত: আখেরাত দ্বারা মৃত্যু পরবর্তী জীবনকেই বুঝানো হয়ে থাকে।
[17] .মূলত আখেরাত দ্বারা পরকাল বা হিসাব নিকাসের দিনকেই আরবীতে বুঝাতে হয়েছে।
[18] . কিসতিয়ে নূহ: পৃ: ২১
[19] . Our teaching- p.17
[20] . আল-ইসতেফতা: পৃ. ১৮. ৮৮. ৯৪
[21] . কসীদা-পৃ: ৬
[22] কুরআনের ইংরেজী অনুবাদ সূরা জুম‘আ দ্রষ্টব্য।
[23] আয়াতটির সরল অর্থ হলো:  আল্লাহ বলছেন: (তিনি আল্লাহ যিনি অশিক্ষিত লোকদের মাঝে তাদের থেকে একজনকে নবী বানিয়ে পাঠিয়েছেন যিনি তাদের কাছে তাঁর আয়াত পাঠ করবে কিতাব ও সুন্নাত শিক্ষা দিবে, যদিও তারা এর পূর্বে প্রকাশ্য ভ্রষ্টতায় ছিল। আর (তার দ্বারা আরও যারা দুনিয়াতে আসেনি (অর্থাৎ পরবর্তী প্রজন্ম) তারাও হেদায়াত প্রাপ্ত হবে। আর আল্লাহ হলেন প্রবল পরাক্রমশালী,  বিজ্ঞময়, এই তাফসীরটাই সাহাবায়ে কেরাম এবং সলফে সালেহীন এর সর্বসম্মত মত: এখানে কারো কোন দ্বিমত নেই, আর আরবী ভাষার অনুবাদেও এর বাহিরে কিছু বুঝায় না,
সুতরাং কাদীয়ানীদের অনুবাদের সাথে এর কোন মিল নেই। বরং তাদের অনুবাদ এর সাথে আয়াতের কোন সম্পর্কেই নেই।
[24] .আয়াতটির অর্থ নিম্নরূপ: আল্লাহ বলেন “তারা আপনাকে প্রশ্ন করছে কিয়ামত কখন হবে? বলুন, এর জ্ঞ্ন একমাত্র আমার রব এর কাছেই, তিনি ছাড়া অপরের কাছে তার সময় তিনি প্রকাশ করেননা, আকাশ ও জমীন এর জ্ঞান জানতে অপারগ হয়েছে, শুধু হঠাৎ করেই সেটা সংঘটিত হবে, তারা আপনাকে প্রশ্ন করছে,  যেন আপনি এর সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখেন, বলুন, এর জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছেই অথচ অনেক লোকই সেটা জানেনা। সূরা আরাফ-১৮৭
গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী এ কিয়ামতের “হঠাৎ করে অনুষ্ঠিত হবার” কথা দ্বারা কিয়ামতের পূর্বে যে সমস্ত আলামত বের হবার ভবিষ্যদ্বাণী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে গেছেন, সেগুলিকে অস্বীকার করতে চেষ্টা করল।
[25] . যদিও আরবী ভাষায় এমন কোন শব্দ নেই।
[26] . (حمامة البشرى) পৃ: ২৮৩
[27] . إعجاز المسيح في تفسير أم الكتاب পৃ: ২৯
[28] . (الحركة الأحمدية), AHMADIATS. MOVEMENT.P.103.
[29] ইসা আলাইহিসসালাম এর অপর নাম, বা উপনাম, মুসলিমরা সবাই বিশ্বাস করেন যে, তিনি বায়তুল মোকাদ্দাস এর মিনারায় দাজ্জালকে হত্যা করার জন্য, আকাশ থেকে অবতরণ করবেন।
[30] . (الاستفتاء) পৃ: ৯৫
[31] .(الاستفتاء) পৃষ্ঠা : ৯৬
[32] . (سفينة نوح)পৃষ্টা: ২৪
[33] . মথি ১৬/১৯
[34] .( الاستفتاء) পৃ: ৯৪
[35] . (الاستفتاء) পৃ: ৮৯
[36] .(ملفوظات المسيح الموعود) সংগ্রহও গ্রন্থনা:  আহমাদীয়া জামাতের মুখপাত্র নুর মুহাম্মাদ নাসিম সায়েফী কাদীয়ানী পৃ: ১০, ফতোয়া নং ৪ দ্র:
[37] . (ملفوظات المسيح الموعود) পৃ: ১৩, অনুবাদ, ১৩,১৮, ২০, পৃ: ১৯ এর ২৩ অনুচ্ছেদ।
[38] . (ملفوظات المسيح الموعود) পৃ: ৩৫ =৫৭, ও পৃ: ৩৭ অনু: ৬২ ।
[39] . AHMADIATS. MOVEMENT.P.39.  الأحمدية ولادة جديدة للإسلام পৃ. ৩৫, ৩৬, (ইংরেজি সংস্করণ)
[40] . (الوصية) পৃ: ৫০, ইংরেজী সংস্করণ।
[41]  এটা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত
[42] . সূরা বাকারা: আয়াত নং ১৭৭।
[43] .(حمامة البشرى ) পৃ: ১, ১১৬, ১৮৬।
[44] .(ملفوظات المسيح الموعود) পৃ: ৮, ফতোয়া নং ১,ইংরেজী সংস্করণ
[45] . (الحركة الأحمدية) মীর্যা বশিরুদ্দিন মাহমুদ পৃ: ১৩১ ইংরেজী সংস্করণ।
[46] . (الوصية) গোলাম আহমাদ কাদীয়ানী পৃ: ৪১,৫৫।
[47] . (ملفوظات المسيح الموعود، لمولوي صائفي القادياني) পৃ: ৪০, ফতোয়া নং ৬৯; ও পৃ: ৪২ ফতোয়া নং, ৭১ ও পৃ. ৪৩ ফতোয়া নং ৭২।
[48] . حضرة أحمد পৃ: ৫ (ইংরেজী সংস্করণ)
[49] .(الحركة الأحمدية) পৃ: ৩৫, (ইংরেজী সংস্করণ)
[50] .( الاستفتاء) পৃ: ৩০.৩১।
[51] (حب العرب إيمان) পৃষ্টা: ১৩৫
[52] (ملفوظات المسيح الموعود) পৃ: ৩৮, ফতোয়া ৬৪ (ইংরেজী সংস্করণ)
[53] (حمامة البشرى) পৃ: ১২
[54] (الاستفتاء) পৃ: ৪০-৪১
[55] . (الاستفتاء) ২৮, ১২
[56] . (تعليمنا) পৃ: ১৪ ইংরেজী সংস্করণ।
[57] .( الاستفتاء) পৃ: ৪৫
[58] . (دافع البلاء) পৃ: ১৬
[59] . (الاستفتاء) পৃ: ১৯
[60] . সূরা বাকারা আয়াত নং : ১৯৬
[61] . (الاستفتاء) পৃ: ৯১
[62] . (الاستفتاء) পৃ: ৯১ (টীকা দ্রষ্ঠব্য)
[63] (الاستفتاء) ১৮ (টীকা)।
[64] .(الاستفتاء) পৃ: ৩৪
_________________________________________________________________________________

সংকলন : ড. রফী‘ উওন্‌লা বাসীরী ইজীবুঈ
অনুবাদক : আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব