কুরআন ও হাদীসের কষ্টিপথরে শবেবরাত

মুহাম্মদ হামিদুল ইসলাম আজাদ

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ।
প্রাণ প্রিয় ভাই, রামাযানুল মোবারকের প্রস্তুতির মাস শাবান আমাদের মাঝে উপস্থিত । এ মাসে আমাদের জন্য রয়েছে কিছু করণীয় । রয়েছে কিছু বর্জনীয় । এ বিষয়টি নিয়েই আমাদের এই লেখার অবতারণা ।
শবেবরাতের পরিচয় : আরবী শা‘বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে সাধারণভাবে ‘শবেবরাত’ বা ‘লায়লাতুল বারাআত’ (ليلة البراءة) বলা হয় । ‘শবেবরাত’ শব্দটি ফারসী । এর অর্থ হিস্সা বা নির্দেশ পাওয়ার রাত্রি । দ্বিতীয় শব্দটি আরবী । যার অর্থ বিচ্ছেদ বা মুক্তির রাত্রি । এদেশে শবেবরাত ‘সৌভাগ্য রজনী’ হিসাবেই পালিত হয় । এজন্য সরকারী ছুটি ঘোষিত হয় । লোকেরা ধারণা করে যে, এ রাতে বান্দাহর গুনাহ মাফ হয় । আয়ু ও রূযী বৃদ্ধি করা হয় । সারা বছরের হায়াত-মউতের ও ভাগ্যের রেজিষ্ট্রার লিখিত হয় । এই রাতে রূহগুলো সব আত্মীয়-স্বজনের সাথে মুলাক্বাতের জন্য পৃথিবীতে নেমে আসে । বিশেষ করে বিধবারা মনে করেন যে, তাদের স্বামীদের রূহ ঐ রাতে ঘরে ফেরে ।
এজন্য ঘরের মধ্যে আলো জ্বেলে বিধবাগণ সারা রাত মৃত স্বামীর রূহের আগমনের আশায় বুক বেঁধে বসে থাকেন । বাসগৃহ ধুপ-ধুনা, আগরবাতি, মোমবাতি ইত্যাদি দিয়ে আলোকিত করা হয় । অগণিত বাল্ব জ্বালিয়ে আলোকসজ্জা করা হয় । এজন্য সরকারী পুরস্কারও ঘোষণা করা হয় । আত্মীয়রা সব দলে দলে গোরস্থানে ছুটে যায় । হালুয়া-রুটির হিড়িক পড়ে যায় । ছেলেরা পটকা ফাটিয়ে আতশবাজি করে হৈ-হুল্লোড়ে রাত কাটিয়ে দেয় । যারা কখনো ছালাতে অভ্যস্ত নয়, তারাও ঐ রাতে মসজিদে গিয়ে ‘ছালাতে আল্ফিয়াহ’ الصلاة الألفية বা ১০০ রাক‘আত ছালাত আদায়ে রত হয়, যেখানে প্রতি রাক‘আতে ১০ বার করে সূরায়ে ইখলাছ পড়া হয় । সংক্ষেপে এই হ’ল এদেশে শবেবরাতের নামে প্রচলিত ইসলামী পর্বের বাস্তব চিত্র ।

ইসলামী শরীয়াতে শবেবরাতের হুকুম বা ভিত্তি :
মোটামুটি দু’টি ধর্মীয় আক্বীদাই এর ভিত্তি হিসাবে কাজ করে থাকে । ১. ঐ রাতে বান্দাহর গুনাহ মাফ হয় । আগামী এক বছরের জন্য ভাল-মন্দ তাক্বদীর নির্ধারিত হয় এবং এই রাতে কুরআন নাযিল হয় । ২. ঐ রাতে রূহগুলি ছাড়া পেয়ে মর্ত্যে নেমে আসে । হালুয়া-রুটি সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে, ঐদিন আল্লাহর নবী ছাঃ এর দান্দান মুবারক ওহোদের যুদ্ধে শহীদ হয়েছিল । ব্যথার জন্য তিনি নরম খাদ্য হিসাবে হালুয়া-রুটি খেয়েছিলেন বিধায় আমাদেরও সেই ব্যথায় সমবেদনা প্রকাশ করার জন্য হালুয়া-রুটি খেতে হয় । অথচ ওহোদের যুদ্ধ হয়েছিল ৩য় হিজরীর শাওয়াল মাসের ১১ তারিখ শনিবার সকাল বেলায় । আর আমরা ব্যথা অনুভব করছি তার প্রায় দু’মাস পূর্বে শা‘বানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রে ... ! এক্ষণে আমরা উপরোক্ত বিষয়গুলির ধর্মীয় ভিত্তি কতটুকু তা খুঁজে দেখব । প্রথমটির সপক্ষে যেসব আয়াত ও হাদীছ পেশ করা হয়, তা নিম্নরূপ : ১. সূরায়ে দুখান - এর ৩ ও ৪ নং আয়াত-

إِنَّا اَنْزَلْنَاهُ فِىْ لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ، فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍحَكِيْمٍ

অর্থ : ৩. আমরা তো এটি অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক রজনীতে; আমরা তো সতর্ককারী ৪. এ রজনীতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়’ ।
আলোচ্য আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে আল্লামা হাফেয ইবনে কাছীর রহঃ বলেন :
হাফেয ইবনে কাছীর (৭০১-৭৭৪ হিঃ) স্বীয় তাফসীরে বলেন, ‘এখানে মুবারক রজনী অর্থ লায়লাতুল ক্বদর’ । যেমন সূরায়ে ক্বদর ১ম আয়াতে আল্লাহ বলেন , إِنَّا اَنْزَلْنَاهُ فِىْ لَيْلَةٍ الْقَدْرِ ‘নিশ্চয়ই আমরা এটা নাযিল করেছি ক্বদরের রাত্রিতে’ । আর সেটি হ’ল রামাযান মাসে । যেমন সূরায়ে বাক্বারাহর ১৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِىْ أُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْانُ، ‘এই সেই রামাযান মাস যার মধ্যে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে’ । এই রাতে এক শা‘বান হ’তে আরেক শা‘বান পর্যন্ত বান্দার রূযী, বিয়ে-শাদী, জন্ম-মৃত্যু ইত্যাদি লিপিবদ্ধ হয় বলে যে হাদীছ প্রচারিত আছে, তা ‘মুরসাল’ ও যঈফ এবং কুরআন ও ছহীহ হাদীছ সমূহের বিরোধী হওয়ার কারণে অগ্রহণযোগ্য । তিনি বলেন, ক্বদর রজনীতেই লওহে মাহফূযে সংরক্ষিত ভাগ্যলিপি হ’তে পৃথক করে আগামী এক বছরের নির্দেশাবলী তথা মৃত্যু, রিযিক ও অন্যান্য ঘটনাবলী যা সংঘটিত হবে, সেগুলি লেখক ফেরেশতাগণের নিকটে প্রদান করা হয় । এরূপভাবেই বর্ণিত হয়েছে আব্দুল্লাহ বিন ওমর, মুজাহিদ, আবু মালিক, যাহ্হাক প্রমুখ সালাফে ছালেহীনের নিকট হ’তে ।
অতঃপর ‘তাক্বদীর’ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য হ’ল,

وَكُلُّ شَيْءٍ فَعَلُوْهُ فِى الزُّبْرِ، وكُلُّ صَغِيْرٍ وَّكَبِيْرٍ مُسْتَطَرٌ

তাদের সমস্ত কার্যকলাপ আছে আমলনামায়, আছে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ সমস্ত কিছুই লিপিবদ্ধ’ । ক্বামার ৫৪ : ৫২-৫৩
রাসূলুল্লাহ সা: এরশাদ করেন,

كَتَبَ اللهُ مَقَادِيْرَ الخَلاَئِقِ قَبْلَ أنْ يَّخْلُقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأرْضَ بِخَمْسِيْنَ أَلْفَ سَنَةٍ..

আসমান সমূহ ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বৎসর পূর্বেই আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় মাখলূক্বাতের তাক্বদীর লিখে রেখেছেন’ । মুসলিম হা/২৬৫৩ আবু হুরায়রাহ রাঃ কে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমার ভাগ্যে যা আছে তা ঘটবে; এ বিষয়ে কলম শুকিয়ে গেছে’ (পুনরায় তাক্বদীর লিখিত হবে । বুখারী হা/৫০৭৬
এক্ষণে শবেবরাতে প্রতিবছর ভাগ্য লিপিবদ্ধ হয় বলে যে ধারণা প্রচলিত আছে, তার কোন ছহীহ ভিত্তি নেই । বরং ‘লায়লাতুল বারাআত’ বা ভাগ্যরজনী নামটিই সম্পূর্ণ বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত । ইসলামী শরী‘আতে এই নামের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না ।
বাকী রইল এই রাতে গুনাহ মাফ হওয়ার বিষয় । সেজন্য দিনে সিয়াম পালন ও রাতে ইবাদত করতে হয় । অন্ততঃ ১০০ শত রাক‘আত সালাত আদায় করতে হয় । প্রতি রাক‘আতে সূরায়ে ফাতিহা ও ১০ বার করে সূরায়ে ‘ক্বুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ’ পড়তে হয় । এই সালাতটি গোসল করে আদায় করলে গোসলের প্রতি ফোঁটা পানিতে ৭০০ শত রাক‘আত নফল সালাতের সওয়াব পাওয়া যায় ইত্যাদি ।
আলোচ্য আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে আল্লামা সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী রহঃ বলেন :

إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ ۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ

আমি এটি এক বরকত ও কল্যাণময় রাতে নাযিল করেছি ৷ কারণ, আমি মানুষকে সতর্ক করতে চেয়েছিলাম ৷

فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ

এটা ছিল সেই রাত যে রাতে আমার নির্দেশে প্রতিটি বিষয়ে বিজ্ঞোচিত ফায়সালা দেয়া হয়ে থাকে ৷ সূরায়ে দুখান : ৩ ও ৪
কোন কোন মুফাসসির সেই রাত কুরআন নাযিল করার অর্থ গ্রহণ করেছেন এই যে, ঐ রাতে কুরআন নাযিল শুরু হয় আবার কোন কোন মুফাসসির এর অর্থ গ্রহণ করেন, ঐ রাতে সম্পূর্ণ কুরআন 'উম্মুল কিতাব' থেকে স্থানান্তরিত করে অহীর ধারক ফেরেশতাদের কাছে দেয়া হয় এবং পরে তা অবস্থা ও পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজন মত ২৩ বছর ধরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাযিল করা হতে থাকে । প্রকৃত অবস্থা কি তা আল্লাহই ভাল জানেন ।
ঐ রাত অর্থ সূরা কদরে যাকে 'লাইলাতুল কদর' বলা হয়েছে । সেখানে বলা হয়েছে আরবী لَيْلَةِ الْقَدْرِ আর এখানে বলা হয়েছে আরবি لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ তাছাড়া কুরআন মজীদেই একথা বলা হয়েছে যে সেটি ছিল রমযান মাসের একটি রাত সূরা বাক্বারাহর ১৮৫ নং আয়াত ।
এ বিষয়টি সূরা কদরে বলা হয়েছে এভাবে : সেই রাতে ফেরেশতারা ও জিবরাঈল তাদের রবের আদেশে সব রকম নির্দেশ নিয়ে অবতীর্ণ হয় । এ থেকে জানা যায়, আল্লাহর রাজকীয় ব্যবস্থাপনায় এটা‌ এমন এক রাত যে রাতে তিনি ব্যক্তি, জাতি এবং দেশসমূহের ভাগ্যের ফায়সালা অনুসারে কাজ করতে থাকে । কতিপয় মুফাসসিরের কাছে এ রাতটি শা'বানের পনের তারিখের রাত বলে সন্দেহ হয়েছে তাদের মধ্যে হযরত ইকরিমার নাম সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য । কারণ, কোন কোন হাদীসে এ রাত সম্পর্কে এ কথা উল্লেখ আছে যে, এ রাতেই ভাগ্যের ফায়সালা করা হয় । কিন্তু ইবনে আব্বাস, ইবনে উমর, মুজাহিদ, কাতাদা, হাসান বাসারী, সাঈদ ইবনে জুবাইর, ইবনে যায়েদ, আবু সালেক, দাহ্‌হাক এবং আরো অনেক মুফাসসির এ ব্যাপারে একমত যে, এটা রমযানের সেই রাত যাকে "লাইলাতুল কদর" বলা হয়েছে । কারণ, কুরআন মজীদ নিজেই সুস্পষ্ট করে তা বলছে । আর যে ক্ষেত্রে কুরআনের সুস্পষ্ট উক্তি বিদ্যমান সে ক্ষেত্রে 'আখবারে আহাদ'* ধরনের হাদীসের ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না । ইবনের কাসীর বলেন : এক শা'বান থেকে অন্য শা'বান পর্যন্ত ভাগ্যের ফায়সালা হওয়া সম্পর্কে উসমান ইবনে মুহাম্মাদ বর্ণিত যে হাদীস ইমাম যুহরী উদ্ধৃত করেছেন তা একটি 'মুরসাল'** হাদীস । কুরআনের সুস্পষ্ট উক্তির বিরুদ্ধে এ ধরনের হাদীস পেশ করা যায় না । কাযী আবু বকর ইবনুল আরাবী বলেন : শা'বানের পনের তারিখের রাত সম্পর্কে কোন হাদীসই নির্ভরযোগ্য নয় , না তার ফযীলত সম্পর্কে, না ঐ রাতে ভাগ্যের ফয়সালা হওয়া সম্পর্কে । তাই সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করা উচিত । (আহকামুল কুরআন)
*আখবারে আহাদ বলতে এমন হাদীস বুঝায় যে হাদীসের বর্ণনা সূত্রের কোনো এক স্তরে বর্ণনাকারী মাত্র একজন থাকে । এ বিষয়টি হাদীসের মধ্যে তুলনামূলভাবে কিছুটা দুর্বলতা সঞ্চার করে ।
** যে হাদীসে মূল রাবী সাহাবীর নাম উল্লেখিত থাকে না বরং তাবেঈ নিজেই রাসূলের সা. থেকে হাদীস বর্ণনা করেন তাকে মুরসাল হাদীস বলে । ইমাম মালেক ও ইমাম আবু হানীফা ছাড়া অন্য কোনো ইমামই এ ধরনের নিসংকোচে গ্রহণ করেননি । (তাফহীমুল কুরআন)
আলোচ্য আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে মুফতী মুহাম্মদ শফী রহঃ বলেন :
অধিকাংশ তাফসীরবিদের মতে এখানে শবে-কদর বোঝানো হয়েছে, যা রমযান মাসের শেষ দশকে হয় । যদি এ রাত্রিকে ‘শবেবরাত’ বা ‘লায়লাতুল বারাআত’ ধরা হয় তাহলে তা হবে কুরআন ও হাদীসের অন্যান্য বর্ণনার পরিপন্থী । মা’আরেফুল কোরআন সপ্তম খন্ড পৃঃ ৭৪৭-৭৪৯

এ সম্পর্কে প্রধান যে তিনটি দলীল পেশ করা হয়ে থাকে, তা নিম্নরূপ :
১ . আলী রাঃ হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ছাঃ এরশাদ করেন,

إِذَا كَانَتْ لَيْلَةٌ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَقُوْمُوْا لَيْلَهَا وَصُوْمُوْا نَهَارَهَا الخ


মধ্য শা‘বান এলে তোমরা রাত্রিতে ইবাদত কর ও দিনে ছিয়াম পালন কর । কেননা আল্লাহ পাক ঐদিন সূর্যাস্তের পরে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন ও বলেন, আছ কি কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব; আছ কি কেউ রূযী প্রার্থী আমি তাকে রূযী দেব । আছ কি কোন রোগী, আমি তাকে আরোগ্য দান করব’ ।
এই হাদীছটির সনদে ‘ইবনু আবী সাব্রাহ’ নামে একজন রাবী আছেন, যিনি হাদীছ জালকারী । সে কারণে হাদীছটি মুহাদ্দেছীনের নিকটে ‘যঈফ’ । বিস্তারিত দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/২১৩২
দ্বিতীয়তঃ হাদীছটি ছহীহ হাদীছের বিরোধী হওয়ায় অগ্রহণযোগ্য । কেননা একই মর্মে প্রসিদ্ধ ‘হাদীছে নুযূল’ ইবনু মাজাহর ৯৮ পৃষ্ঠায় মা আয়েশা রাঃ হ’তে (হা/১৩৬৬) এবং বুখারী শরীফের (মীরাট সাপা ১৩২৮ হিঃ) ১৫৩, ৯৩৬ ও ১১১৬ পৃষ্ঠায় এবং ‘কুতুবে সিত্তাহ’ সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে সর্বমোট ৩০ জন ছাহাবী কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে । সেখানে ‘মধ্য শা‘বান’ না বলে ‘প্রতি রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশ’ বলা হয়েছে । অতএব ছহীহ হাদীছ সমূহের বর্ণনানুযায়ী আল্লাহপাক প্রতি রাত্রির তৃতীয় প্রহরে নিম্ন আকাশে অবতরণ করে বান্দাকে ফজরের সময় পর্যন্ত উপরোক্ত আহবান করে থাকেন; শুধুমাত্র নির্দিষ্টভাবে মধ্য শা‘বানের একটি রাত্রিতে নয় ।
২ . মা আয়েশা রাঃ হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ছাঃ একদা রাত্রিতে একাকী মদীনার ‘বাক্বী’ গোরস্থানে গিয়েছিলেন । সেখানে তিনি এক পর্যায়ে আয়েশাকে লক্ষ্য করে বলেন, মধ্য শা‘বানের দিবাগত রাতে আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং ‘কল্ব’ গোত্রের ছাগল সমূহের লোম সংখ্যার চাইতে অধিক সংখ্যক লোককে মাফ করে থাকেন’। এই হাদীছটিতে ‘হাজ্জাজ বিন আরত্বাত’ নামক একজন রাবী আছেন, যার সনদ ‘মুনক্বাত্বা’ হওয়ার কারণে ইমাম বুখারী প্রমুখ মুহাদ্দিছগণ হাদীছটিকে ‘যঈফ’ বলেছেন । যঈফুল জামে‘ হা/৬৫৪
প্রকাশ থাকে যে, ‘নিছফে শা‘বান’-এর ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ছাঃ হ’তে কোন ছহীহ মরফূ হাদীছ নেই ।
৩. ইমরান বিন হুছাইন রাঃ বলেন যে, একদা রাসূলুল্লাহ ছাঃ জনৈক ব্যক্তিকে বলেন যে, তুমি কি ‘সিরারে শা‘বানের’ ছিয়াম রেখেছ ? লোকটি বললেন, ‘না’ । আল্লাহর নবী ছাঃ তাকে রামাযানের পরে ছিয়াম দু’টির ক্বাযা আদায় করতে বললেন’ । বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩৮
জমহূর বিদ্বানগণের মতে ‘সিরার’ অর্থ মাসের শেষ । উক্ত ব্যক্তি শা‘বানের শেষাবধি নির্ধারিত ছিয়াম পালনে অভ্যস্ত ছিলেন অথবা ঐটা তার মানতের ছিয়াম ছিল । রামাযানের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলার নিষেধাজ্ঞা লংঘনের ভয়ে তিনি শা‘বানের শেষের ছিয়াম দু’টি বাদ দেন । সেকারণ রাসূলুল্লাহ ছাঃ তাকে ঐ ছিয়ামের ক্বাযা আদায় করতে বলেন । বুঝা গেল যে, এই হাদীছটির সঙ্গে প্রচলিত শবেবরাতের কোন সম্পর্ক নেই ।
শাবান মাসের পনের তারিখের ব্যাপারে আরো একটি হাদীস ও তার পর্যালোচনা ও তার শিক্ষা :
অর্ধ শাবানের রাতের ব্যাপারে নিম্নোক্ত হাদীসটি সহীহ না যঈফ এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে । তবে আল্লামা আলবানী সহ একদল মুহাদ্দিস হাদীসটিকে বিভিন্ন সনদের সমন্বয়ে সহীহ বলেছেন । পক্ষান্তরে অন্য একদল মুহাদ্দিস এটিকে দূর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন । হাদীসটি হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন:

إن الله ليطلع في ليلة النصف من شعبان ، فيغفر لجميع خلقه ، إلا لمشرك أو مشاحن
“আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে (পৃথিবীর) দিকে তাকিয়ে দেখে মুশরিক এবং বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি ছাড়া সমস্ত সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন ।” উক্ত হাদীসটি সহীহ ও যঈফ হওয়ার ব্যাপারে একটি পর্যালোচনা ।
সুনান ইব্‌ন মাজাহ । অধ্যায়: সালাত প্রতিষ্ঠা করা । বূসীরী রাহ. তাঁর যাওয়াযেদ ইব্‌ন মাজাহ কিতাবে বলেন: আবু মূসার সনদে বর্ণিত হাদীস যঈফ । আব্দুল্লাহ বিন লাহীআ থেকে এবং ওলীদ বিন মূসা তাদলীস থেকে আবু মূসা অধিক দূর্বল । ত্ববারানী রাহ. হাদীসটি আল মুজামুল কাবীর গ্রন্থেমুআয বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণনা করেন । ইমাম হায়সামী মাজমাউয যাওয়ায়িদ গ্রন্থে বলেন : ত্ববারানী রাহ. তাঁর কাবীর এবং আওসাত গ্রন্থে এ হাদীসটি বর্ণনা করেন এবং এর বর্ণনাকারীগণ সকলেই গ্রহণ যোগ্য । ইব্‌ন হিব্বানও তার সহীহ ইব্‌ন হিব্বান গ্রন্থেহাদীসটি উল্লে করেছেন উল্লেখ করেন । তবে আল্লামা আলবানী রহ: হাদীসটিকে একাধিক সূত্রের সমন্বয়ে সহীহ বলে সাব্যস্ত করেছেন । দেখুন সিলসিলা সহীহাহ মুখতাসারাহ: হাদীস নং ১৫৬৩ ।
এ হাদীসে নিসফে শাবানের ফযীলত প্রমাণিত হলেও
এতে বিশেষ কোন ইবাদত প্রমাণিত হয় না এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামও এ রাতে বিশেষ কোন এবাদত করেন নি বা করতে বলেন নি । সুতরাং এটাকে কেন্দ্র করে চৌদ্দ তারিখ দিনে রোযা রাখা এবং রাতে একশ রাকাত নামায পড়া এবং এ উপলক্ষ্যে অন্যান্য অনুষ্ঠানাদী পালন করা কিভাবে গ্রহণ যোগ্য হতে পারে ?
বরং উক্ত হাদীসে শিরকের ভয়াবহতা প্রমাণিত হয় । যে ব্যক্তি আল্লাহর নাম, গুণাবলী, কাজ বা ইবাদতে অন্যকে অংশীদার করবে তাকে মুশরিক বলা হয় । সুতরাং য ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া কোন সৃষ্টি জীবের কাছে বিপদ-মুসিবত থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা জানাবে সে শিরক করবে । যে পীর-ওলী, নবী বা ফেরেশতার নিকট সাহায্যের হাত পাতবে সে শিরক করবে । যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু যবেহ করবে বা মান্নত করবে সে শিরক করবে । আল্লাহ তায়ালা শিরককারীকে ক্ষমা করবেন না বলে কুরআন ও সহীহ হাদীসে বিভিন্ন স্থানে স্পষ্টভাবে সর্তক করেছেন ।
ইমাম আওযাঈ রাহ: বলেন: হাদীসে বিদ্বেষ পোষণকারী’ বলতে সে সকল বিদাতপন্থীকে বুঝানো হয়েছে, যারা দন্দ-কলহ করে মুসলমানদের জামাআত থেকে বের হয়ে যায় । সুতরাং এ হাদীস থেকে স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় দ্বীন ইসলামের মধ্যে বিদআত করা এবং মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করার কতটা ভয়াবহ !
অনুরূপভাবে হাদীসে পরস্পরে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানী, মারামারীতে লিপ্ত থাকার ভয়াবহতা সম্পর্কেও জানা যায় । কিন্তুবাস্তবতা হচ্ছে, মুসলমানগণ এসব বিষয়কে কত নগণ্য মনে করে । আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হেফাযত করুন ।

শবে বরাত উদ্‌যাপন করা বিদআত:

শবে বরাতে ব্যক্তিগতভাবে বাড়ীতে বা মসজিদে কি বিশেষ কিছু এবাদত-বন্দেগী করা যায় কি ? এ ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কথা হল, শবে বরাতকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোন ইবাদত-বন্দেগী করা বিদআতের অর্ন্তভূক্ত । চাই তা বাড়ীতে হোক বা মসজিদে হোক একাকী হোক বা দলবদ্ধভাবে হোক । (যদিও কতিপয় আলেম মনে করেন এতে দোষের কিছু নেই কিন্তু তাদের কথা দলীল দ্বারা সমর্থিত নয় ।)
মোটকথা, শবে বরাতের রাতের বিশেষ ফযীলতে বিশুদ্ধ কোনদলীল নেই । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে কোন প্রমাণ নেই যে তারা এ রাতে কোন এবাদত-বন্দেগী করতেন । সুতরাং এটি একটি দ্বীনের মধ্যে একটি সংযোজিত বিদআত । যার পক্ষে কুরআন, সুন্নাহর দলীল নেই এবং সাহাবী-তাবেঈগণেরও এজমা তথা সম্মিলিত কোন সিদ্ধান্তও পাওয়া যায় না ।
নিম্নে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুগের কয়েকজন আলেমের বক্তব্য তুলে ধরা হল:
১ . হাফেয ইব্‌ন রাজাব রাহ: (মৃত্যু: ৭৯৫ হিজরী) বলেন : শামের কতিপয় তাবেঈ যেমন খালেদ ইব্‌ন মাদান, মাকহুল, লোকমান ইব্‌ন আমের প্রমূখ অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত) কে সন করতেন এবং এ রাতে বেশী বেশী ইবাদত-বন্দেগী করতেন । তাদের নিকট থেকে অন্যান্য মানুষ অর্ধ শাবানের ফযীলত এবং মর্যাদার বিষয়টি গ্রহণ করে । বলা হয়ে থাকে যে, তারা এ ব্যাপারে কিছু ইসরাঈলী বর্ণনা পেয়েছিলেন । এঁদের নিকট থেকে বিষয়টি বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়লে মানুষের মাঝে দ্বিধা-বিভক্তি সৃষ্টি হয়ে গেল । কিছু মানুষ তাদের এ মতকে সমর্থন করে অর্ধ শাবানের রাতটিকে সন্মানের সাথে পালন করতে আরম্ভ করল । যারা এ মতকে সমর্থন করল তারা হল ইরাকের বাসরা এলাকার কতিপয় আবেদ এবং অন্যান্য আরো কিছু লোক । আর হেজাযের অধিকাংশ আলেম যেমন, আত্বা, ইব্‌ন আবী মুলাইকা প্রমূখ এর বিরোধীতা করলেন । আব্দুর রহমান বিন যায়দ বিন আসলাম বর্ণনা করেন যে, মদীনার ফকীহগণও এ মতের বিরোধীতা করলেন । ইমাম মালেক এবং তার সহচরদেরও মতামতও অনুরূপ । তারা সকলেই বলেন, এসব কার্যক্রম বিদআত ।”
ইবন রাজাব রাহ : আরও বলেন : অর্ধ শাবানের রাতে নামায পড়ার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে কোন দলীল প্রমাণিত হয় নি । তবে শামের কয়েকজন ফেকাহবীদ এ রাতে কিছু এবাদত-বন্দেগী করতেন বলে তথ্য পাওয়া যায় ।” (লাতায়িফুল মাআরিক: ১৪৫ পৃষ্ঠা)
২ . আবু শামা রহ: (মৃত্যু: ৬৬৫হি:/১২৬৭খৃ:) বলেন : হাফেয আবুল খাত্তাব বিন দেহিয়া তার শবান মাস সম্পর্কিত লিখিত কিতাবে বলেন: ইলমুল জারহি ওয়াত তাদীল’বিশেষজ্ঞ আলেমগণ বলেছেন, অর্ধ শাবানের রাতের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই । (আল বায়েস পৃষ্টা নং ৩৩)
৩ . শাইখ ইব্‌ন বায রহ: বলেন: অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত) এর ফযীলতের ব্যাপারে কিছু দূর্বল হাদীস বর্ণিত হয়েছে যেগুলোর উপর নির্ভর করা জায়েয নেই । আর এ রাতে নামায পড়ার ব্যাপারে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো সবই জাল । যেমনটি অনেক আলেম সতর্ক করেছেন ।” (আত তাহযীর মিনাল বিদা: ১১ পৃষ্ঠা)
আল্লামা সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী রহ: সূরা দুখানের তাফসীর করতে গিয়ে বলেন: যে ক্ষেত্রে কুরআনের সুস্পষ্ট উক্তি বিদ্যমান সে ক্ষেত্রে 'আখবারে আহাদ' ধরনের হাদীসের ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না ।
ইবনের কাসীর বলেন: এক শা'বান থেকে অন্য শা'বান পর্যন্ত ভাগ্যের ফায়সালা হওয়া সম্পর্কে উসমান ইবনে মুহাম্মাদ বর্ণিত যে হাদীস ইমাম যুহরী উদ্ধৃত করেছেন তা একটি 'মুরসাল' হাদীস । কুরআনের সুস্পষ্ট উক্তির বিরুদ্ধে এ ধরনের হাদীস পেশ করা যায় না ।
কাযী আবু বকর ইবনুল আরাবী বলেন : শা'বানের পনের তারিখের রাত সম্পর্কে কোন হাদীসই নির্ভরযোগ্য নয় , না তার ফযীলত সম্পর্কে, না ঐ রাতে ভাগ্যের ফয়সালা হওয়া সম্পর্কে । তাই সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করা উচিত । (আহকামুল কুরআন)
*আখবারে আহাদ বলতে এমন হাদীস বুঝায় যে হাদীসের বর্ণনা সূত্রের কোনো এক স্তরে বর্ণনাকারী মাত্র একজন থাকে । এ বিষয়টি হাদীসের মধ্যে তুলনামূলভাবে কিছুটা দুর্বলতা সঞ্চার করে ।
** যে হাদীসে মূল রাবী সাহাবীর নাম উল্লেখিত থাকে না বরং তাবেঈ নিজেই রাসূলের সা. থেকে হাদীস বর্ণনা করেন তাকে মুরসাল হাদীস বলে । ইমাম মালেক ও ইমাম আবু হানীফা ছাড়া অন্য কোনো ইমামই এ ধরনের নিসংকোচে গ্রহণ করেননি ।
মুফতী মুহাম্মদ শফী রহঃ বলেন : আরবী শা‘বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রিকে ‘শবেবরাত’ বা ‘লায়লাতুল বারাআত’ ধরা হয় তাহলে তা হবে কুরআন ও হাদীসের অন্যান্য বর্ণনার পরিপন্থী । (মা’আরেফুল কোরআন সপ্তম খন্ড পৃঃ ৭৪৭-৭৪৯)
মোট কথা : যেহেতু শবে বরাতে বিশেষ কোন এবাদত করার কথা বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয় তাই এ রাতে বিশেষ কোন এবাদত করা- চাই তা একাকী হোক বা দলবদ্ধভাবে হোক, প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক সর্বাবস্থায় তা বিদআত হিসেবে পরিত্যাজ্য হবে । কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
من عمل عملاً ليس عليه أمرنا فهو رد
“যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল যার ব্যাপারে আমার নির্দেশ নেই তা পরিত্যাজ্য ।” (বুখারী ও মুসলিম)

শবে বরাত উপলক্ষ্যে প্রচলিত কতিপয় বিদআত :

১ . শবে বরাত উপলক্ষ্যে একশত রাকাআত নামায আদায় করা :
এ রাতে এক অদ্ভূত পদ্ধতিতে একশত রাকাআত নামায আদায় করা হয় । পদ্ধাতিটি হল নিম্নোরূপ : মোট একশত রাকাআত নামায পড়তে হয় । প্রতি দু রাকাত পর সালাম ফিরাতে হবে । প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতিহার পর দশ বার সূরা ইখলাস পাঠ করতে হবে । একশত রাকাআত নামাযে সূরা ইখলাস পাঠ করতে হয় মোটএক হাজার বার । তাই এ নামাযকে সালাতে আলফিয়া বলা হয় । (ইমাম গাযালী রাহ.এ পদ্ধতিটি এহিয়া উলুমুদ্দীন কিতাবে উল্লেখ করেছেন । দেখুন: ১ম খন্ড ২০৩ পৃষ্ঠা ।)
১. শবে বরাতে একশত রাকাআত নামায পড়ার বিধান :
ইসলামে এ ধরণের নামায পড়ার নিয়ম সম্পূর্ণ নতুন আবিস্কৃত বিদআত । এ ব্যাপারে সর্ব যুগের সমস্ত আলেমগণ একমত । কারণ, তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং খোলাফায়ে রাশেদীন কখনো তা পড়েন নি । তাছাড়া ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক,ইমাম শাফেঈ, আহমদ বিন হাম্বল, সুফিয়ান সাওরী, আওযাঈ, লাইস প্রমূখ যুগ শ্রেষ্ঠ ইমামগণ কেউ এ ধরণের বিশেষ নামায পড়ার কথা বলেন নি । এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসটি হাদীস বিশেষজ্ঞদের মতে বানোয়াট এবং জাল । যেমন, ইব্‌নুল জাওযী উক্ত হাদীসটি মাওযু’আত (জাল হাদীস সংগ্রহ) কিতাবে তিনটি সনদে উল্লেখ করে বলেছেন, এটি যে বানোয়াট তাতে কোন সন্দেহ নেই । তিনটি সনদেই এমন সব বর্ণনাকারী রয়েছে যাদের অধিাকংশরই পরিচয় অজ্ঞাত । আরো কতিপয় বর্ণনাকারী খুব দূর্বল । সুতরাং হাদীসটি নিশ্চিতভাবে জাল । (আল মাউযূআত ২য় খন্ড ১২৭-১৩০ পৃষ্ঠা ।)
এ নামায কে কখন কীভাবে চালু করল?
ইমাম তরতূশী রাহ: বলেন : শাবান মাসের পনের তারিখ রাতে একশত রাকআত নামায পড়ার পদ্ধতি সর্ব প্রথম যে ব্যক্তি চালু করে তার নাম হল ইব্‌ন আবুল হামরা । তিনি ছিলেন ফিলিস্তিনের নাবলুস শহরের অধিবাসী । তিনি ৪৪৮ হিজরী সনে বাইতুল মাকদিসে আসেন । তার তেলাওয়াত ছিল খুব সুন্দর । তিনি শাবান মাসের পনের তারিখ রাতে মসজিদুল আকসায় এসে নামায শুরু করে । আর এক লোক তার পেছনে এক্তেদা করে । অতঃপর আর একজন আসে । কিছুক্ষণপর আরে আরও একজন । এভাবে নামায শেষে দেখা গেল বিরাট জামাআতে পরিণত হয়েছে ।
পরিবর্তী বছর শবে বরাতে সে ব্যক্তির সাথে প্রচুর পরিমাণ মানুষ নামাযে শরীক হয় । এভাবে এ নামাযটি মসজিদে আক্বসা সহ বিভিন্ন মসজিদে পড়া আরম্ভ হয়ে গেল । কিছু মানুষ নিজেদের বাড়িতে এ নামায পড়া শুরু করে দিল । পরিশেষে এমন অবস্থা দাঁড়ালো যেন এটি একটি সুন্নাত । (আত্‌ ত্বারতুশী রচিত আত্‌তাহযীর মিনাল বিদা । পৃষ্টা: ১২১ ও ১২২ ।)
২ . এ রাতে কুরআন অবর্তীণ হওয়া এবং এ রাতেই মানুষের আগামী বছরের ভাগ্য নির্ধারিত হওয়ার ধারণা ।
৩ . হালুয়া-রুটি খাওয়া :
শবে বরাত উপলক্ষ্যে ঘরে ঘরে হালওয়া-রুটি খাওয়র হিড়িক পড়ে যায় । শুধু তাই নয় বরং সে দিন গরীব মানুষও টাকা হাওলত করে হলেও এক বেলা গোস্ত কিনে খায় । কারণ, সে দিন যদি ভাল খাবার খাওয়া যায় তাহলে নাকি সারা বছর ভাল খাবার খাওয়া যাবে । আর হালওয়া-রুটি খাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহুদ যুদ্ধে দাঁত ভাঙ্গার পর শক্ত খাবার খেতে পারেন নি । তাই তাঁর প্রতি সমবেদনা জানানোর উদ্দেশ্যে এ দিন ঘটা করে হালওয়া রুটি খাওয়া হয় ।
কিন্তুবাস্তবতা কি তাই ? আমরা জানি ওহুদের এক রক্তক্ষয়ী ও অসম যুদ্ধে কাফেরদের আঘাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁত ভেঙ্গে গিয়ে ছিল । কিন্তু শাবান মাসে তো ওহুদ যুদ্ধ হয় নি । বরং তা হয়েছিল ৩য় হিজরী শাওয়াল মাসের সাত তারিখে । তাহলে এ সমবেদনা শাবান মাসের পনের তারিখে টেনে নিয়ে আসার অর্থ কী ?
২য় কথা হল, তিনি নরম খাবার কি শুধু একদিন খেয়ে ছিলেন ? তাহলে এ কেমন ভালবাসা ? আপনি শাবান মাসের পনের তারিখে কিছু হালওয়া-রুটি খেলেন আবার কিছুক্ষণ পর গরুর গোস্ত তো ঠিকই চাবিয়ে চাবিয়ে ভক্ষণ করতে থাকেন ?
৩য়ত : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো কাফেরদের সাথে এক কঠিন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বীরে মত যুদ্ধ করে তার পবিত্র দাঁত হারিয়েছেন কিন‘ আমাদের এসব নবী ভক্তের অধিকাংশের অবস্থা হল, আল্লাহর নবীর রেখে যাওয়া সাধারণ সুন্নতগুলোও পালন করে না । অনেকে তো ফরজ নামাযই ঠিকমত আদায় করে না । এটাই হল এদের তথাকথিত ভালবাসার নুমনা !
৪ . ছবি ও মূর্তি তৈরি : শবে বরাত উপলক্ষ্যে দেখা যায় নানা রং-বেরঙ্গের ছবি ও মূর্তি তৈরি কৃত মিষ্টান্নতে বাজার ছেয়ে যায় । অথচ ছবি ও মূর্তি-প্রকৃতি ইত্যাদি তৈরি করা ইসলামে হারাম । আবার আল্লাহর দেয়া রিযিক নিয়ে এভাবে খেল-তামাশা ?
শাবান মাস: সুন্নত উপেক্ষিত বিদআত সমাদৃত ।
৪ . মীলাদ ও যিকির : শবে বরাত উপলক্ষ্যে মসজিদ, খানকাহ ও দরগায় সমূহে শুরু হয় মীলাদ মাহফিল । চলে মিষ্টি খওয়ার ধুম । চলতে থাকে বিদআতী পন্থায় গরম যিকিরের মজলিশ । এ সব কাজ দ্বীনের মধ্যে বিদআত ছাড়া কিছু নয় ।
৫ . কবর যিয়ারত : এক শ্রেণীর মানুষ এ রাতে গোরস্থান বা মাযার জিয়ারতে বের হয় । এমনকি কোথাও কোথাও এ প্রথাও দেখা যায় যে, একদল মানুষ এ রাতে ধারাবাহিকভাবে এলাকার সকল কবর যিয়ারত করে থাকে । এদের দলীল হল, শাবান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাকী গোরস্থান যিয়ারতের হাদীস অথচ মুহাদ্দসিগণ উক্ত হাদীসটি জাল হিসেবে সাব্যস- করেছেনচিচি । যেমনটি পূর্বে আলোচনা করেছি ।
৬ . আলোক সজ্জা : শবে বরাত উপলক্ষ্যে রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, মসজিদ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি আলোকসজ্জা করা হয় । মূলত: এসব কাজ একদিকে লক্ষ লক্ষ টাকা শুধু অপচয় করা হয় না তেমনি এটা অগ্নি পুজকদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ।
৭ . মৃতদের আত্মার দুনিয়াতের পূণরাগমনের বিশ্বাস : এ উপলক্ষ্যে দেখা যায় মহিলাগণ ঘর-বাড়ি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে আতর সুগন্ধি লাগিয়ে পরিপাটি করে রাখে । বিশেষ করে বিধবা মহিলাগণ এমনটি করেন । এমনকি তারা কিছু খাবার একটুকরো কাপড়ে পুরে ঘরে ঝুলিয়ে রাখে । কারণ, তাদের বিশ্বাস হল, তাদের মৃত স্বামী-স্বজনদের আত্মা এ রাতে ছাড়া পেয়ে নিজ নিজ পরিবারের সাথে দেখা করতে আসে । এটা যে কতবড় মূর্খতা তা একমাত্র আল্লাহ জানেন ।
মানুষ মারা গেলে তাদের আত্মা বছরের কোন একটি সময় আবার দুনিয়াতে ফিরে আসা মুসলমানদের আকীদাহ নয় । বরং অনেকটা তা হিন্দুয়ানী আকীদার সাথে সাঞ্জস্যপূর্ণ । এই রাত্রিতে ‘বাক্বী‘উল গারক্বাদ’ নামক কবরস্থানে রাতের বেলায় রাসূলুল্লাহ সা: এর নিঃসঙ্গ অবস্থায় যেয়ারত করতে যাওয়ার হাদীছটি (ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৯)
যে যঈফ ও মুনক্বাত্বা‘ তা আমরা ইতিপূর্বে দেখে এসেছি । এখন প্রশ্ন হ’ল, এই রাতে সত্যি সত্যিই রূহগুলো ইল্লীন বা সিজ্জীন হ’তে সাময়িকভাবে ছাড়া পেয়ে পৃথিবীতে নেমে আসে কি-না । যাদের মাগফেরাত কামনার জন্য আমরা দলে দলে কবরস্থানের দিকে ছুটে যাই । এমনকি মহিলাদেরকেও এ রাতে কবরস্থানে দেখা যায় । এ সম্পর্কে সাধারণতঃ সূরায়ে ক্বদর-এর ৪ ও ৫নং আয়াত দু’টি পেশ করা হয়ে থাকে । যেখানে বলা হয়েছে,
تَنَزَّلُ الْمَلآئِكَةُ وَالرَّوْحُ فِيْهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ سَلاَمٌ، هِىَ حَتَّى مَطْلِعِ الْفَجْرِ
সে রাত্রিতে ফিরিশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে । সকল বিষয়ে কেবল শান্তি; ঊষার উদয়কাল পর্যন্ত’। এখানে ‘সে রাত্রি’ বলতে লায়লাতুল ক্বদর বা শবেক্বদরকে বুঝানো হয়েছে- যা এই সূরার ১ম, ২য় ও ৩য় আয়াতে বলা হয়েছে ।
অত্র সূরায় ‘রূহ’ অবতীর্ণ হয় কথাটি রয়েছে বিধায় হয়তবা অনেকে ধারণা করে নিয়েছেন যে, মৃত ব্যক্তিদের রূহগুলি সব দুনিয়ায় নেমে আসে । অথচ এই অর্থ কোন বিদ্বান করেননি । ‘রূহ’ শব্দটি একবচন । এ সম্পর্কে হাফেয ইবনে কাছীর রহঃ স্বীয় তাফসীরে বলেন, ‘এখানে রূহ বলতে ফিরিশতাগণের সরদার জিবরাঈলকে বুঝানো হয়েছে । তাফহীমুল কুরআনে আল্লামা সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী রহঃ বলেন : রূহ বলতে জিব্রীল আলাইহিস সালামকে বুঝানো হয়েছে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার কারণে সমস্ত ফেরেশতা থেকে আলাদা করে তাঁর উল্লেখ করা হয়েছে ।

শা‘বান মাসে আমাদের করণীয় :

১ . রামাযানের আগের মাস হিসাবে শা‘বান মাসের প্রধান করণীয় হ’ল অধিকহারে ছিয়াম পালন করা । শাবান মাসে নফল রোযা রাখা সম্পর্কে বণির্ত সহীহ হাদীস সমূহ :
শাবান মাসে নফল রোযা রাখা সম্পর্কে অনেক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে । নিন্মে এ সম্পর্কীত কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হল :
ক. আয়েশা রা. হতে বর্ণিত । তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন (নফল) রোযা রাখতে শুরু করতেন তখন আমরা বলতাম যে তিনি রোযা রাখা আর বাদ দিবেন না । আবার যখন রোযা বাদ দিতেন তখন আমরা বলতাম তিনি আর রোযা করবেন না । তবে তাঁকে রামাযান ছাড়া পরিপূর্ণভাবে অন্য কোন মাসে রোযা রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে অন্য কোন মাসে এত বেশি রোযা রাখতে দেখিনি ।” বুখারী, কিতাবুস সাওম , মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম ।
খ . নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের চেয়ে অধিক রোযা আর কোন মাসে রাখতেন না । তিনি (প্রায়) পুরো শাবান মাস রোযা রাখতেন । তিনি বলতেন : “তোমরা এমন আমল গ্রহণ কর যা তোমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে । কারণ, আল্লাহ তাআলা বিরক্ত হন না যতক্ষণ না তোমরা বিরক্ত হও । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এমন নামাযই পছন্দনীয় যা নিয়মিতভাবে আদায় করা হয় যদিও তা সল্প হয় । তাঁর নিয়ম ছিল, যখন তিনি কোন নামায পড়তেন নিয়মিতভাবে তা পড়তেন । বুখারী, কিতাবুস সাওম , মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম ।
গ . উসামা বিন যায়দ রা. হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনাকে শাবান মাসে যে পরিমান রোযা পালন করতে দেখি অন্য মাসে তা দেখি না । এর কারণ কী ? তিনি বললেন : “রজব এবং রামাযানে মধ্যবর্তী এ মাসটি সম্পর্কে মানুষ উদাসিন থাকে । অথচ এটি এত গুরুত্বপূর্ণ মাস যে, এ মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে মানুষের আমল সমূহ উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় । আমি চাই রোযা অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক ।” মুসনাদ আহমাদ ৫ম খন্ড ২০১ পৃষ্ঠা । সুনান নাসাঈ, কিতাবুস সিয়াম । আলবানী রা. বলেন, এ সনদটি হাসান । দ্র: সিলসিলাতুল আহাদীস আস সাহীহাহ । হাদীস নং ১৮৯৮ ।
ঘ . আবু হুরায়রা রা: হতে বণির্ত । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : “শাবান মাস অধের্ক হয় গেলে তোমরা রোযা রাখিও না । ” মুসনাদ আহমাদ (২/৪৪২), আবু দাউদ, অনুচ্ছদে, এমনটি করা অর্থাৎ অবচ্ছিন্নিভাব শাবান ও রামাযান রোযা রাখা অনুচতি ।
এ হাদীসের অর্থ হল: যে ব্যক্তি শাবান মাসের প্রথম থেকে রোযা রাখে নি সে যেন অর্ধ শাবানের পর আর রোযা শুরু না করে করে । তবে যে ব্যক্তি শাবান মাসের শুরু থেকে রোযা রেখেছে, বা যার উপর গত বছরের রোযা কাজা আছে অথবা যার প্রতি সোম ও বৃহ:বার রোযা রাখা অভ্যাস সেও পনের তারিখের পর রাখতে পারে ।
ঙ . কারো যদি রামাযানের রোযা ছুটে যায় তবে সে তা শাবান মাসে কাযা করে নিতে পারে । যেমন, আবু সালামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা রা. কে বলতে শুনেছি, আমার রামাযানের কিছু রোযা বাকি থাকত । সেগুলো আমি শাবান ছাড়া কাযা করতে পারতাম না । বুখারী, কিতাবুস্‌ সাওম , মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম , ইয়াহয়া বলেন: এর কারণ ছিল তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেবায় ব্যস্ত থাকতেন ।
অর্থাৎ আয়েশা রা: গত রমাযানের ছুটে যাওয়া ফরজ রোযাগুলো শাবান মাসে কাযা করতেন ।
মা আয়েশা রাঃ বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ ছাঃ কে রামাযান ব্যতীত অন্য কোন মাসে শা‘বানের ন্যায় এত অধিক ছিয়াম পালন করতে দেখিনি । শেষের দিকে তিনি মাত্র কয়েকটি দিন ছিয়াম ত্যাগ করতেন’ । নাসাঈ হা/২১৭৯, সনদ ছহীহ
যারা শা‘বানের প্রথম থেকে নিয়মিত ছিয়াম পালন করেন, তাদের জন্য শেষের পনের দিন ছিয়াম পালন করা উচিত নয় । অবশ্য যদি কেউ অভ্যস্ত হন বা মানত করে থাকেন, তারা শেষের দিকেও ছিয়াম পালন করবেন । শাবান মাসে যথাসম্ভব বেশি বেশি নফর রোযা রাখা ।
২ . শিরক, বিদআত ও মুসলমানদের মাঝে হিংসা বিদ্বেষ, হানাহানী, শত্রুতা পরিহার করা ।
৩ . শা‘বান,রামাযান মাসকে সামনেরেখে সমাজে প্রচলিত শিরক ও বিদআত সম্পর্কে মানুষদের সাথে আলোচনা করা ।
৪ . আমাদের জন্য প্রয়োজন সকল প্রমাণহীন অনুষ্ঠানাদী বর্জন করা এবং সঠিক দ্বীনের দিকে ফিরে আসা ।
৫ . রামাযান মাসের দিন গুলো কি ভাবে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত, বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেয়া জায় তার জন্য শা‘বান মাসে একটি রুটিন তৈরি করা ।
৬ . রামাযান মাসে কিভাবে ইসলামের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যাবে তার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা ।
মোটকথা শা‘বান মাসে অধিক হারে নফল ছিয়াম পালন করা সুন্নাত । ছহীহ দলীল ব্যতীত কোন দিন বা রাতকে ছিয়াম ও ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করা সুন্নাতের বরখেলাফ । অবশ্য যারা ‘আইয়ামে বীয’-এর তিন দিন নফল ছিয়ামে অভ্যস্ত, তারা ১৩, ১৪ ও ১৫ই শা‘বানে উক্ত নিয়তেই ছিয়াম পালন করবেন, শবেবরাতের নিয়তে নয় । নিয়তের গোলমাল হ’লে কেবল কষ্ট করাই সার হবে । কেননা বিদ‘আতী কোন আমল আল্লাহ পাক কবুল করেন না এবং সকল প্রকার বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা ও প্রত্যাখ্যাত । আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র কুরআন ও হাদীছের আলোকে নিজ নিজ আমল সমূহ পরিশুদ্ধ করে নেওয়ার তাওফীক দান করুন - আমীন !

লেখক : মুহাম্মদ হামিদুল ইসলাম আজাদ
দাঈঃ বাংলাদেশ ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার , ঢাকা
mdhamidulislamazad@gmail.com
01773268684