বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও প্রচলিত রাষ্ট্র
কাঠামো হলো গণতন্ত্র। বিশ্ব নেতৃত্ব দানকারী পাশ্চাত্য দেশগুলোকে
গণতন্ত্রের মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। গণতন্ত্র পুঁজিবাদের
রাজনৈতিক রূপরেখা। তাই মডেল খ্যাত রাষ্ট্রগুলো গণতন্ত্রের সফলতা নিয়ে
বিতর্ক থাকলেও সারাবিশ্বকে গণতান্ত্রিক কাঠামোতে রূপায়িত করতে চায়।
সমাজতন্ত্রের ব্যর্থতার পর এ কথা মানতে বাধ্য, গণতন্ত্র এখন পর্যন্ত বিজয়ী
বেশেই হাজির রয়েছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো সমাজতন্ত্রীরাও আজকাল গণতন্ত্রের
ফেরি করে বেড়ায়! সমস্যা হলো গণতন্ত্রের পরেই যে বিষয়টি সামনে আসে তা নিয়ে।
সেটি হলো সেক্যুলারিজম। গণতন্ত্র নিয়ে যতটা না বিতর্ক তার চেয়ে বেশি বিতর্ক
সেক্যুলারিজম নিয়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের ধারণা একই ধরনের হলেও
(যদিও এটা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে) সেক্যুলারিজমের ধারণা দেশে দেশে ভিন্ন
ভিন্ন রূপ লাভ করেছে। পাশ্চাত্য তথা গণতন্ত্রের বিশ্ব মোড়লরা নিজ দেশে
গণতন্ত্রের চর্চা অনেকটা করলেও মুসলিম বিশ্বকে তারা গণতান্ত্রিক অধিকার
দিতে নারাজ। এক্ষেত্রে তাদের মূল বিষয় হলো তাদের মনঃপুত হলেই হলো। তখন সে
গণতন্ত্রিই হোক কিংবা স্বৈরতন্ত্রিই হোক তাতে কিছু যায়-আসে না।
বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৪২ বছর অতিক্রম করলেও এখানে পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক
কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অধিকাংশ সময়ই গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন
ব্যবস্থাই চলেছে। মূলত স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে আজ অবধি যারাই রাষ্ট্র
পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন তারা কেউই গণতান্ত্রিক কাঠামোতে রাষ্ট্র
ব্যবস্থাকে নির্মাণ করতে সক্ষম হননি। জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র
পরিচালনার মৌলিক কাঠামোগুলোও এ পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। বরং বিভ্রান্তিকর ও
নোংরা রাজনীতি জাতিকে করেছে বিভক্ত। এই বিভ্রান্তিকর ও নোংরা রাজনীতির
প্রধানতম উৎস হলো অভিশপ্ত সেক্যুলার ধারার রাজনীতি। এই আর্টিকেলে
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে অভিশপ্ত সেক্যুলার রাজনীতি সম্পর্কে আলোচনার প্রয়াস
চালাবো। কোনো ধরনের তাত্ত্বিক ব্যাখা-বিশ্লেষণে না গিয়ে সেক্যুলার রাজনীতির
প্রায়োগিক রূপ নিয়ে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখতে চেষ্টা করবো। বলে রাখা দরকার,
আমাদের দেশে লিবারেলিজম বা উদারবাদ নিয়েও কিছুটা আলোচনা হয়। এটা অনর্থক।
অযথা। যেখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশই গড়ে ওঠেনি, সেখানে উদারবাদ নিয়ে আলোচনা
সম্পূর্ণই অযাচিত।
সেক্যুলারিজম-এর অর্থ করা হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। এটি একটি প্রতারণা,
ধোঁকাবাজি এবং হঠকারিতা। সেক্যুলারিজমের মূল থিম হলো ধর্ম যার যার রাষ্ট্র
সবার। এ মতবাদ মানুষকে ধর্মহীন করে তুলে। ফলে মানুষ হয়ে উঠে স্বেচ্ছাচারি ও
বিবেকহীন। সেক্যুলার’রা রাজনীতিকে ধর্ম মুক্ত রাখতে চায়। যাতে করে অন্যায়,
জুলুম-নির্যাতন, দুর্নীতি, চুরি-চামারি ইত্যাদি অনায়াসে করা যায়। ধর্ম যেন
সেখানে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। ব্যক্তিজীবনে কেউ সৎ-নামাজী আর রাষ্ট্রীয়
কাজ-কারবারে একই ব্যক্তি অসৎ-চোর। এটি হাস্যকর। অযৌক্তিক। আসলে
সেক্যুলারিস্টদের মধ্যে প্রবল ইসলাম বিরোধী মনোভাব লুকায়িত থাকে।
সেক্যুলারিজমের আরেকটি অযৌক্তিক ধারণা হলো রাষ্ট্র সকল ধর্মের নাগরিকদের
সমান অধিকারের কথা বলে। অথচ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথা বলে তারাই
সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রতিনিধি দাবি করে রাজনৈতিক সংখ্যালঘুদের মতামতকে
সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে থাকে। বাংলাদেশে সেক্যুলারিজমের আমদানি করা হয়
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে। সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার তথা
ইনসাফকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে
নির্ধারণ করা হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী শাসক শ্রেণী আধিপত্যবাদী ভারতের আদলে
রাষ্ট্র কাঠামো নির্মাণের জন্যই সেক্যুলারিজমের আমদানি করেছিল। শাসক শ্রেণী
বেমালুম ভুলে গিয়েছিল এখানকার ৯০ ভাগ মানুষের ধর্ম ইসলাম। এখানকার
সামাজিক-সাংস্কৃতিক চিন্তাধারা নির্মিত হয়েছে ইসলামের ধর্মীয় চেতনার
আলোকেই। এভাবে নবগঠিত রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সাথে চরম
বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়।
বাংলাদেশে সেক্যুলারিজমের রাজনীতির অন্যতম প্রধান উপাদান হলো ধর্মীয়
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দু, বৌদ্ধ কিংবা খ্রিস্টান
সম্প্রদায়কে রাজনৈতিকভাবে সংখ্যালঘু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। এটা করা
হয় ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই। অথচ বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের অনুশাসনের
ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হয় না। এখানে অনুন্নত পুঁজিতান্ত্রিক সমাজ
ব্যবস্থা বিদ্যমান। পুঁজিতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার ব্যর্থতার কারণেই এ
প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষগুলো অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে অবহেলিত, বঞ্চিত
এবং শোষিত হয়ে আসছে। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশে ধর্মীয় দিক থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ
মুসলমান কৃষক, দিনমজুর কিংবা খেটে খাওয়া মানুষগুলোও অবহেলিত, বঞ্চিত এবং
শোষিত হয়ে আসছে। এছাড়া ইসলামপন্থী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর বিরুদ্ধেও
রাষ্ট্র-সরকার খড়গহস্ত। তখন কী বলা হয় সংখ্যাগরিষ্ঠদের নির্যাতন করা হচ্ছে?
ফলে দেখা যাচ্ছে, সকল ধর্মের অনুসারী প্রান্তিক মানুষগুলো
রাষ্ট্রব্যবস্থার বৈষম্যের শিকার। এখানে ধর্ম কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি
করেনি। বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করবার জন্য বুর্জোয়া দলগুলোর কূট-কৌশলে
সংখ্যালঘু (!) সম্প্রদায় নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এক্ষেত্রে
সেক্যুলারিস্টরা একধাপ এগিয়ে আছে। বলতে গেলে সংখ্যালঘু (?) রাজনৈতিক খেলায়
সেক্যুলার’রা পারঙ্গম। ইতিহাস এর সাক্ষী। ফলে সম-অধিকার (!) ভিত্তিক
রাষ্ট্র কাঠামোতে নাগরিকদের রাজনৈতিক কারণে সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগরিষ্ঠ
বানানো সেক্যুলার রাজনৈতিক খেলারই অংশবিশেষ নয় কী?
মৌলবাদ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাÑ সেক্যুলার রাজনীতির আরেকটি উপাদান।
ইসলামের অনুসারী বিশেষ করে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে
মৌলবাদের আখ্যা দেয়া হয়। বাংলাদেশে মৌলবাদ শব্দের প্রচলন ঘটে ‘সাপ্তাহিক
বিচিত্রা’র মাধ্যমে। কথিত মৌলবাদের বিরুদ্ধে সেক্যুলারদের নিরন্তর
সংগ্রামের আহ্বান জানানো হয়। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো প্রফেসর
হান্টিংটনের সভ্যতার সংঘাত তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে ইসলামকে মোকাবেলার
চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এই পদক্ষেপের মোড়কী প্যাকেজ হলো মৌলবাদ,
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূল। বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের মোকাবেলার জন্য
সেক্যুলার শক্তি পাশ্চাত্য থেকেই এই মৌলবাদ ধার করেছে গালি হিসেবে। মৌলবাদ ও
সাম্প্রদায়িক গালির মাধ্যমে সেক্যুলার’রা কিছুটা সফলতাও অর্জন করেছে।
ইসলামপন্থীদের বিভক্তি ও হীনম্মন্যতা এর জন্য দায়ী। তবে বাস্তব সত্য হলো
ইসলামের বিধি-বিধান, নির্দেশনা সর্বকালেই মৌলিক, প্রকৃত ও আধুনিক। অন্যদিকে
ইসলাম কোনো বিশেষ শ্রেণী বা সম্প্রদায়ের ধর্ম নয়। ইসলামের কল্যাণময়তা
সমগ্র মানবতার জন্য। সুতরাং মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার সাথে ইসলামের যোজন-
যোজন দূরত্ব বিদ্যমান।
সেক্যুলার রাজনৈতিক ধারা কথিত মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা মোকাবেলায়
মুসলমান পরিচয় বাদ দিয়ে ‘বাঙালি’ চেতনা নির্মাণ করেছে। যা জাতির বিভক্তির
ফারাক বাড়িয়েছে দ্বিগুণ। কোনো কল্যাণ বয়ে আনেনি। ‘গণতান্ত্রিক বিপ্লবের তিন
লক্ষ্য’ কলামে বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার লিখেছেন-
“হিন্দু কি মুসলমান কেউই ইতিহাসের বাইরে দাঁড়িয়ে নিজ নিজ পরিচয় নির্মাণ
করেনি এবং কারো পক্ষেই ইতিহাসের বাইরে দাঁড়িয়ে বিকাশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
এই বাস্তবতার মধ্যে লড়াই-সংগ্রামের চরিত্র বিচার করতে পারাই এখনকার
গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সেই বিচারের দরকারেই আমাদের সবসময়ই মনে রাখতে হবে
‘মুসলমান’ পরিচয়ের বিপরীতে নিজেকে ‘বাঙালি’ বলার মধ্যে অসাম্প্রদায়িকতা নয়,
বরং নিজের সাম্প্রদায়িক ইতিহাস ও পরিচয় সম্পর্কে অজ্ঞতাই প্রকাশিত হয়।
অর্থাৎ বাঙালি মুসলমানের বিপরীতে কেউ ‘বাঙালি’ পরিচয় বহন করেন বলে তিনি
ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা থেকে মুক্ত নন। ইতিহাস বলে সেই দাবি করার কোনো সুযোগ
নাই। বরং এই ঐতিহাসিক অজ্ঞতা আরও অনেকগুলো বিপদের মধ্যে ঠেলে দেয়।”
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। বাংলাদেশে মূল ধারার
ইসলামপন্থীদের কোনো প্রকার মিলিট্যান্ট উইং না থাকা সত্ত্বেও সেক্যুলার
শক্তি জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের সাথে বরাবরই ইসলামপন্থী রাজনৈতিক শক্তিকে
সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ করে। এটি সেক্যুলারদের রাজনৈতিক স্লোগানে পরিণত হয়েছে।
মূলত নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে আড়াল করতেই এই অপবাদে ইসলামপন্থীদের
নির্মূল করার আওয়াজ তোলা হয়। এর আরেকটি কারণ হলো ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থায়
আঘাত দেয়া। তারা সকল ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেই জঙ্গি ও সন্ত্রাস তৈরির
কেন্দ্র হিসেবে প্রচার করে থাকে। বাংলাদেশের কোথাও কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে
আজ পর্যন্ত কোনো অস্ত্রবাজি কিংবা হত্যার ঘটনা না ঘটলেও
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেক্যুলার অনুসারীদের অস্ত্রবাজি, সন্ত্রাস,
হত্যা, ধর্ষণ আর মরণাস্ত্র প্রদর্শণীর প্রতিযোগিতা নিত্যনৈমত্তিক ঘটনায়
পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্র ও সেক্যুলার সন্ত্রাসীদের আক্রমণের শিকার হয়ে
প্রতিরোধ করার প্রয়াস চালালে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার
করে চিরুনী অভিযান কিংবা যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে অমানবিক হত্যাযজ্ঞ
চালানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি’র গণহত্যা, ৫
মে’র অপারেশন শাপলা চত্বর কিংবা সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনীর পৈশাচিক নির্মূল
অভিযান ইতিহাসে সেক্যুলার শক্তির বর্বরতার সাক্ষ্য হয়ে থাকবে নিঃসন্দেহে।
স্বাধীনতা বিরোধী ইস্যু। এটি সেক্যুলার ও বাম ধারার যৌথ রাজনৈতিক
ব্যর্থতার দায় এড়ানোর অপকৌশল। বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ সামাজিক শক্তি হলো ইসলামী
চেতনা। এই চেতনা সামাজিকভাবে যতটা সংগঠিত ও শক্তিশালী রাজনীতিতে ততটা নয়।
কারণ ইসলামপন্থীদের ঐক্যহীনতা ও রাজনৈতিক অপরিপক্কতা। যদি বিভক্তি মিটিয়ে
ইসলামপন্থী’রা একই প্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে তখন বাকিরা সমাজ ও
রাষ্ট্রে অপাংক্তেয় হয়ে পড়বে। এখানেই সেক্যুলার ও বাম ধারার রাজনীতির
ভয়-উৎকণ্ঠা। তাই সেক্যুলার’রা ইসলামপন্থীদের মাঝে বিভক্তি জিঁইয়ে রাখতে
সচেষ্ট। ইসলামপন্থীদের মৌলবাদী, জঙ্গিবাদী কিংবা সাম্প্রদায়িক হিসেবে
চিত্রায়িত করার উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা
পাওয়া। অন্যদিকে, ঘরোয়াভাবে ইসলামপন্থীদের স্বাধীনতা বিরোধী কিংবা
দেশদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করে নির্মূল করার প্রয়াস। এ প্রয়াস দেশকে ভয়াবহ
সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করে সেক্যুলার’রা দেশ ও
জাতির নেতৃত্ব নিজেদের একচেটিয়া অধিকার বলে মনে করে থাকে। তবে সময়ের
ব্যবধানে, মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামকে পরস্পর বিরোধী হিসেবে মুখোমুখি দাঁড়
করানোর কৌশল সেক্যুলারদের হিতে বিপরীত হতে বাধ্য। ফলে ইসলামপন্থীরাই
নেতৃত্বে উঠে আসতে পারে। আসাটাই স্বাভাবিক। মেজর (অব.) এম এ জলিল তাঁর
‘দাবি আন্দোলন দায়িত্ব’ বইতে লিখেছেন-
“উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত নেতৃত্বের কথা বাদ দিলে দেশ ও জাতির সামনে
আর যে নেতৃত্ব দৃশ্যমান, তার মধ্যে একটি দলের বিরাটত্ব থাকলেও সে দলটির
নেতৃত্ব ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বিরুদ্ধাচরণ করার ফলে আপাততঃ নানাভাবেই
বিতর্কের সম্মুখীন। তবে দেশ ও জাতির নেতৃত্ব দানের বিষয়টি যেমন উত্তরাধিকার
সূত্রে নির্ধারিত হতে পারে না ঠিক একইভাবে তা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের
শক্তিরও একচেটিয়া অধিকার বলে বিবেচিত হতে পারে না। ১৯৭১ সনের মুক্তিযুদ্ধে
অংশগ্রহণের অর্থই যদি স্থায়ী দেশপ্রেমবোধ হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে, তাহলে
আরেকটি অনুরূপ মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত না হওয়া পর্যন্ত দেশপ্রেমের সনদপত্র কেউ
কি পাবে না? এরূপ হলে ১৯৭১ সনের মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীকাল থেকে এ পর্যন্ত
স্বাধীন বাংলাদেশে যারা জন্ম নিয়েছে তাদের দেশপ্রেম নির্ণিত হবে কোন
মানদণ্ডের ভিত্তিতে?” (‘দাবি আন্দোলন দায়িত্ব’ পৃষ্ঠা ১৪)
পৌত্তলিকতার প্রচার-প্রসার সেক্যুলারদের টিকে থাকার শক্তি। এর উদ্দেশ্য
ইসলাম মনষ্ক সাধারণ মানুষের চিন্তাচেতনায় মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটানো এবং নব
প্রজন্মকে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে উদাসীন করে তোলা। সেক্যুলারদের
অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই মঙ্গলপ্রদীপ, বর্ষবরণ, মঙ্গল শোভাযাত্রা,
বসন্ত উৎসব, শিখাচিরন্তন বা শিখা অনির্বাণ, ভাস্কর্য-প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা
জানানো এবং পবিত্র কুরআনের সাথে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ পাঠসহ প্রভৃতি
অপসংস্কৃতি দেশে প্রতিষ্ঠিত করবার প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া ভালোবাসা
দিবস পালন, ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশা, ডেটিং, নারী স্বাধীনতার যথেচ্ছ
ব্যবহারসহ এগুলোকে কমন করে তোলার প্রচষ্টা দেখা যাচ্ছে।