মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী
আল্লাহ কোথায় আছেন ?
গোটা আকাশ ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সমস্ত কিছুই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের । এই আকীদার প্রশ্নে মুসলমানকে বুঝতে হবে জানতে হবে আল্লাহ কোথায় আছেন ? এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ মুসলমানদের মধ্যে রয়েছে একটি মারাত্মক বিভ্রান্তি । কোরআন ও সহীহ হাদীসে এ ব্যাপারে স্পষ্ট বক্তব্য এসেছে , তবুও না জানার কারণে মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি বিরাজ করছে। যে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিপালন করছেন ,তাঁর অবস্থান সম্পর্কে জানা প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। অনেকে বলে থাকেন যে , মহান আল্লহ তা’য়ালা সর্বত্র বিরাজমান এবং হাজির নাজির। এই ধারণা ও বিশ্বাস সঠিক নয়, কোরআন ও হাদীসের বিপরীত । কোরআন -হাদীসের দৃষ্টিতে সঠিক কথা হলো আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অবস্থান আরশের ওপর কিন্তু তিনি তাঁর অসীম জ্ঞান ,ক্ষমতা ,কুদরত ও দেখা শোনার মাধ্যমে সর্বত্র বিরাজমান। তিনি সত্তাগতভাবে সর্বত্র বিরাজমান নন।
আল্লাহ কোথায় আছেন ,এই প্রশ্নের জবাব কোনো মানুষের পক্ষে দেয়া সম্ভব হবে না
বিধায় স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালাই তাঁর বান্দাদের জানিয়ে দিয়েছেন ,তিনি কোথায়
আছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতা’য়ালা নিজের অবস্থান সম্পর্কে সাতবার বলেছেন
যে, তিনি আরশে আযীমে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রসঙ্গ উল্লেখ
র্পূবক মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন- () এরপর স্বীয় আরশের ওপর আসীন হয়েছেন ।
(সূরা আল আ’রাফ -৫৪ )
এই একই বিষয় আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা ইউনুস ,সূরা রা’দ ,সূরা
ত্বাহা , সূরা ফোরকান ,সূরা সিজদা ও সূরা হাদীদে উল্লেখ করেছেন। সমস্ত কিছু
সৃষ্টি করার পর তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন -আল্লাহ তা’য়ালার এ কথার বাস্তব
রূপ অনুধাবন করা কোন মানুষের পক্ষে কক্ষণই সম্ভব নয়। তবে একটি বিষয় আল্লাহ
তা’য়ালা এই কথার মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এই মহাবিশ্ব এবং এর বাইরে
যা কিছু রয়েছে ,এসব সৃষ্টি করে আল্লাহ তা’য়ালা ক্লান্ত হয়ে পড়েননি বা তিনি
সৃষ্টি কাজ সমাপ্ত কের তাঁর সৃষ্টি থেকে তিনি সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেননি।
তিনি নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে অচেতন , বেখবর ,অসজাগ ,অসতর্ক বা দৃষ্টি ফিরিয়ে
নেননি। অথবা সৃষ্টি করে তিনি তার সৃষ্টি জগৎ পরিচালনার দায়িত্ব ও কারো
প্রতি অর্পন করেনি। এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দেয়ার লক্ষেই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন
যে,তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন । অর্থাৎ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন গোটা
মহাবিশ্বেও শুধুমাত্র সৃষ্টি কর্তাই নন, তিনি এই মহাবিশ্বেও প্রতিপালক
,নিয়ন্ত্রক ,ব্যবস্থাপক ,পরিচালক ,পর্যবেক্ষক ,সমস্ত সৃষ্টির প্রয়োজন
পূরণকারী ,আবেদন শ্রবণকারী, দোয়া কবুলকারী এবং সম্স্ত সৃষ্টির প্রয়োজনীয়
আইন কানুন ও বিধান দানকারী।
আল্লাহ তা’য়ালা আরশের ওপর সমাসীন হয়েছেন এই বিষয়টি মানুষকে জানিয়ে দিয়ে
তিনি এ কথাই স্পস্ট করে দিয়েছেন যে. তিনি এই মহাবিশ্বকে অস্তিত্বশীল করে
অবসর গ্রহণ করেননিএবং মহাবিশ্ব থেকে নিঃসম্পর্ক হয়ে যাননি। বরং মহাবিশ্ব
লোকের ক্ষুদ্র থেকে সর্ববৃহৎ অংশ পর্যন্ত সবস্তরের বিষয়াদিও ওপর কর্তৃত্ব
তিনিই করছেন। শাসন কার্য পরিচালনা ও সার্বভৌমত্বও সমস্ত ক্ষমতা ও ইখতিয়ার
একমাত্র তাঁরই মুষ্ঠিতে নিবদ্ধ। মহাবিশ্ব ও এর বাইরে যা কিছু রয়েছে ,সবকিছু
তাঁরই অধীন ও মুখাপেক্ষী । প্রত্যেকটি অণু পরমাণু তাঁর বিধানের অধীনে
ক্রিয়াশীল । সৃষ্টিসমূহের ভাগ্য চিরস্থায়ীভাবে তাঁর বিধানের অধীনে বন্দী।
আল্লাহতা’য়ালা কয়েকটি স্তরের মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে আরশে সমাসীন হয়েছেন এই
কথার মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পৃথিবীর মানুষের কাছে এ কথা
স্পস্ট করে দিয়েছেন যে ,তাঁর সৃষ্টি কাজে যেমন কারো কোনো অংশীদার ছিলনা
,অনুরূপভাবে সৃষ্টি কাজের পরিচালন ,প্রতিপালন ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে কারো
সমান্যতম অংশীদারিত্ব নেই। তাঁর আরশ বা সিংহাসন যা সমস্ত সৃষ্টির কেন্দ্রে
,সেখানে থেকেই তিনি সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। মানুষকেও তিনি স্বাধীন
ক্ষমতা দিয়ে ছেড়ে দেননি। মানুষের প্রত্যেকটি স্পন্দনের প্রতি তিনি সজাগ
দৃষ্টি রেখেছেন। মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য যেসব বিধি বিধান প্রয়োজন,সে
বিধানও তিনি আরশ বা সিংহাসন থেকে অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং মানুষের
স্বেচ্ছাচারী হওয়া বা নিজের ভাগ্যেও মালিক নিজেকে মনে করার কোন অবকাশ নেই
এই কথাটিই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্পস্ট করে দিয়েছেন এভাবে যে,তিনি আরশে
সমাসীন হয়েছেন । অর্থাৎ মূল কেন্দ্রে থেকে তিনিই সমস্ত কিছুর নিয়ন্ত্রণ
করছেন্ । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসল্লাম বলেছেন -() নিশ্চয়ই আল্লাহ
তা’য়ালা নিজ আরশের ওপর রয়েছেন । তাঁর আরশ হচ্ছে সমস্ত আকাশের ওপর । (আবু
দাউদ )
মহান আল্লাহ তা’য়ালা আরশে আসীন হয়েছেন আর আরশ হলো অগণিত আকাশের ওপরে ।
আল্লাহ তা’য়ালা যে তাঁর মহান আরশে অধিষ্ঠিত এবং আরশ যে ওপরে অবস্থিত এ
বিষয়ে কোরআন ও হাদীসে অসংখ্য প্রামণ রয়েছে। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে বলা হয়েছে-
() “ফেরেশতাগণ এবং রুহ আল্লাহ তা’য়ালার দিকে ঊর্ধ্বগামী হয়। (সূরা মায়ারিজ
৪)
তাঁরই দিকে আরোহন করে উত্তম কথা এবং সৎকর্ম তাকে তুলে নেয়। (সূরা ফাতির ১০ )
বরং আল্লাহ তাঁকে (ঈসাকে )উঠিয়ে নিয়েছেন নিজের দিকে । (সূরা আন নিসা ১৫৮ )
বিশ্বমানবতার মুক্তি সনদ মহাগ্রন্থ আল কোরআন সম্পর্কে বলা হয়েছে,- এই কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে।
পাশাপাশি কোনো স্থান থেকে বা নীচু স্থানে থেকে কোন কিছু প্রেরণ করা হলে
অবতীর্ণ করা করা বুঝায় না। ওপর থেকে কোনো কিছু প্রেরণ করা হলে তা অবতীর্ণ
করা বুঝায় । আল্লাহ তা’য়ালা কোরআন সম্পর্কে বলেছেন -() এই একটি কিতাব যা
আমি তোমার প্রতি অবর্তীণ করেছি যাতে তুমি মানুষকে অন্ধাকার থেকে আলোর দিকে
নিয়ে এসো। (সূরা ইবরাহীম ১) ()
নিশ্চয়ই আমি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতরণ করেছি ,যাতে আল্লাহ তোমাকে যা
বুঝিয়েছেন তা দিয়ে তুমি মানুষের মধ্যে শাসন ও ফয়সালা করতে পারো। (সূরা নিসা
১০৫ )
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার পর
বায়তুল মাকদাসকে কিবলা হিসেবে নামায আদায় করতেন। তিনি মনে মনে কামনা করতেন
,মক্কার কা’বাঘরকে যদি কিবলা বানানো হতো । এ জন্য তিনি বার বার আকাশের দিকে
দৃষ্টি দিতেন। তাঁর দৃষ্টি দেয়ার অর্থ এটা ছিলো যে,ওপর থেকেআল্লাহতা’য়ালা
যদি কোনো আদেশ দিতেন । মহান আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর রাসূলের মনের অবস্থা
দেখলেন এবং রাসূলকে জানিয়ে দিলেন- () নিশ্চয়ই আমি তোমাকে বার বার আকাশের
দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে দেখি । (সূরা বাকারা ১৪৪)
আল্লাহর রাসূলের থেকে মহান আল্লাহর পরিচয় আর কে বেশী জানতে পারে ? তিনিই সব
থেকে বেশী আল্লাহর পরিচয় ও অবস্থান সম্পর্কে অবগত ছিলেন । তিনি জানেনে যে
,মহান আল্লাহ তা’য়ালা ওপরে আরশে আযীমে অবস্থান করছেন। এ জন্যই তিনি বার বার
ওপরের দিকে তাকাতেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জে
আরাফার দিনে উপস্থিত সমস্ত সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে বললেন আল্লাহ পক্ষ
থেকে আমার কাছে যা কিছু অবতীর্ন হয়েছে ,আমি কি তা তোমাদের কাছে পৌঁছিয়েছি ?
উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ জবাব দিলেন অবশ্যই ।তখন তিনি উপস্থিত সাহাবায়ে
কেরামকে ইশারা করে আকাশের দিকে শাহাদাত আঙ্গুলি উঠিয়ে বললেন, হে আল্লাহ !
তুমি সাক্ষী থেকো। (মুসলিম )
এ কথা যদি বলা হয় যে,আল্লাহ তা’য়ালা সব জায়গায় আছেন বা তিনি সর্বত্র
বিরাজমান। তাহলে তিনি পাহাড় -পর্বত ,নদী- নালা ,খাল- বিল, হাওড়- সাগর
মহাসগর, আকাশ- বাতাস, আগুন -পানি ,ময়লা -আবর্জনার, ভাগাড়, মল -মূত্রের
ভান্ড তথা বাঞ্ছিত-অবাঞ্ছিত সকল স্তরেই তিনি রয়েছেন । সেসব জায়গা
অবাঞ্ছনীয়, অবান্তর সেসব জায়াগতেও আল্লাহকে থাকতে হয়। পৃথিবীর সব থেকে
নিকৃষ্টি, দুগন্ধময়,অপবিত্র তথা যেখানে বা যে স্থান কোনো মানুষের পক্ষে বাস
করা সম্ভব নয় সেখানেও আল্লাহ তা’য়ালা রয়েছে।
হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত
মুয়াবিয়া ইবনে হাকাম আসলামী রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুর দাসীকে প্রশ্ন
করলেন -() বলো আল্লাহ তা’য়ালা কোথায় ? দাসী জবাব দিলো আল্লাহতা’য়ালা আকাশের
ওপর ।তিনি পুনরায় সেই দাসীকে প্রশ্ন করলেন বলো আমি কে ?দাবী জাবাব দিলো
আপনি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তখন হযত মুয়াবিয়া ইবনে হাকামকে আদেশ দিলেন এই দাসীকে মুক্ত করে
দাও। কারণ সে ঈমানদার (মুসলিম )
শাসন কর্তৃত্বের আসনে তিনি সমাসীন
প্রকৃত বিষয় এটা নয় এবং মহান আল্লাহ তা’য়ালা সর্বত্র বিরাজমান নন। মূল কথা
হলো আল্লাহ সব জায়গায় আছেনএবং তিনি সবত্র রিরাজমান এই কথার অর্থ হলো
আল্লাহর ইলমে,আল্লাহ জ্ঞানের মধ্যে আল্লাহর নজরের সামনে গোটা সৃষ্টি জগত
রয়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোথায় রয়েছেন এই প্রশ্ন মানুষের মনে
জাগবে ।মানুষ এই প্রশ্নের সঠিক জবাব কারো কাছ থেকে পাবে না। এ কারণে স্বয়ং
আল্লাহ তা”য়ালাই এই প্রশ্নের জবাবএভাবে দিয়েছেন। () তিনি পরম দয়াবান ।বিশ্ব
জাহানের শাসন কর্তৃত্বের আসনে তিনি সমাসীন। যা কিছু পৃথিবীতে ও আকাশে
রয়েছে, যা কিছু পৃথিবী ও আকাশের মাঝখানে রয়েছে এবং যা কিছূ ভুগর্ভে রয়েছে
সবকিছুর মালিক তিনিই ।তুমি যদি নিজের কথা উচ্চকন্ঠে বলো ,তবে তিনি তো
চুপিসারে বলা কথা বরং তার চাইতেও গোপনে বলা কথাও জানেন। (সূরা ত্বা- হা
-৫-৭)
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন ,এই পৃথিবীতে তোমাদের স্থিতি অবস্থিতি ও
তোমাদের শান্তি- নিরাপত্তা প্রত্যেক মুহুর্তেই আমার অনুগ্রহের ওপর
একান্তভাবে নির্ভরশীল । তোমরা এখানে আনন্দ ফু’র্তি করছো ,অহঙ্কার প্রদর্শন
করছো ,আমার বিধানে বিরুদ্ধে কথা বলছো, লিখছো ,মিছিল মিটিং করছো ,আমার
আদেশের বিপরীত পথে জীবন পরিচালিত করছো। এসবকিছু তোমরা করছো তোমাদের নিজেদের
ক্ষমতাবলে নয়। তোমাদের জীবনের এখানে অতিবাহিত প্রত্যেকটি মুহুর্ত মহান
আল্লাহ তা’য়ালার সংরক্ষণ বা হেফাযতের পরিণতি মাত্র । তাঁর ইঙ্গিত যে কোনো
মুহুর্তে প্রলঙ্করী ভূকম্পনের মাধ্যমএই যমীন তোমাদের জন্য আনন্দফু’র্তির
স্থান না হয়ে কবরস্থানে পরিণত হতে পারে। তোমরা যেসব বিলাস সামগ্রী নির্মাণ
করেছো,সুউচ্চ প্রাসাদ নিমার্ণ করেছো, তা মুহুর্তে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে মাটির
সাথে মিশে যেতে পারে । () তোমরা কি নির্ভয় হয়ে গিয়েছো সেই মাহন সত্তা
সম্পর্কে যিনি আকাশে রয়েছেন ,এ ব্যাপারে যে, তিনি তোমাদেরকে মাটির মধ্যে
বিধ্বস্ত করে দিবেন এবং এই ভূ তল সহসা হ্যাচকা টান টল-টলায়মান হয়ে কাঁপতে
শুরু করবে ?(সূরা মূলক১৬)
তোমরা কি এই ব্যাপারে নির্ভয় হয়ে গিয়েছো যে,তিনি আকাশে রয়েছেন তিনি তোমাদের
ওপর প্রস্তর বর্ষণকারী প্রবলবায়ূ প্রবাহিত করবেন ?(সূরা মূলক ১৭ ) নবী
করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন () তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি
দয়া করো, তাহলে আসমানের ওপর যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন
।(আবু দাউদ, তিরমিজী )
এই হাদীসেও আল্লাহতা’য়ালার অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় যে,
তিনি আসমানের ও আরশেআযীমে অবস্থান করছেন। আল্লাহ তা’য়ালা আরশে আযীমে। নবী
করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন -তোমাদের মধ্যে দিন ও রাতে
পালাক্রমে আল্লাহর ফেরেশতারা যাওয়া আসা করে থাকেন। এই পালা পরিবর্তন হয় আসর
ও ফজরের নামাযের সময়। এরপর যেসব ফেরেশতারা তোমাদের সাথে রাতে থাকেন,তারা
আকাশে উঠে যান। তখন মহান আল্লা তা’য়ালা তোদেরকে প্রশ্ন করেন ,তোমরা আমার
বন্দাকে কোন অবস্থায় ছেড়ে এসেছো? অথচ তিনি বান্দার অবস্থা সম্যক অবগত
রয়েছেন । প্রশ্নের জবাবে ফেরেশতাগণ বলেন ,তাদেরকে নামায আদায়রত অবস্থায়
রেখে এসেছি এবং তারা যখন নামায আদায় করছিলো, তখন তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছে
ছিলাম। (বোখারী ও মুসলিম )
পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের সাথে আল্লাহ তা’য়ালা ফেরেশতা নিয়োজিত রেখেছেন ।
এই ফেরেশতারা ফজর ও আসরের সময় পালাপরিবর্তন করেন । এ জন্য এই সময় অত্যন্ত
গুরত্বপূর্ণ। রাতে যে ফেরেশতারা বান্দার সাথে থাকেন তাঁরা ফজরের নামাযের
সময় চলেন যান এবং আরেক ফেরেশতা বান্দার কাছে আসেন। বান্দা যদি নামাযে থাকে
তাহলে যে ফেরেশতা চলে গেলেন তিনি আল্লাহ তায়ালাকে জানান বান্দাকে নামায
আদায়রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। আর যিনি এলেন তিনিও আল্লাহ তায়াকে জানান
,বান্দাকে নামায আদায়রত অবস্থায় পেয়েছি । এভাবে আসরের সময়ও ফেরেশতাদের পালা
পরিবর্তন হয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন -() তোমরা
কি আমাকে বিশ্বস্ত বলে স্বীকৃতি দাও না ? আমি তো ঐ সত্তার কাছে বিশ্বস্ত
যিনি আকাশের ওপর রয়েছেন। সকাল ও সন্ধ্যায় আমার কাছে আকাশের সংবাদ এসে থাকে ।
(বোখারী ও মুসলিম)
তাঁর জ্ঞান সৃষ্টি জগতকে বেষ্টন করে রয়েছে
তিনি সদা সর্বত্র বিরাজমান এ কথার অর্থ হলো- আল্লাহ তা’য়ালার ইলম গোটা
সৃষ্টি জগতকে বেষ্টন করে রেখেছে। তাঁর ইলমের ভেতরে রয়েছে সব। পবিত্র কোরআনে
বলা হয়েছে- () নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা সর্ব বিষয়েয় সর্বশক্তিমান । আর
আল্লাহ তা’য়ালা নিজে জ্ঞান দ্বারা সমস্ত কিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন । (সূরা
তালাক -১২ )
অর্থাৎ মহাবিশ্বে ও মহাবিশ্বের বাইরে যা কিছু রয়েছে এর মধ্যে অণুপরমাণু বা
তার থেকেও অতিক্ষুদ্র কোনো বিষয় মহান আল্লাহর জ্ঞানের বাইরে নয়। সমস্তকিছুই
তাঁর জ্ঞানের জগতে বিরাজমান ,ক্ষুদ্রতম কোন বিষয় ও তাঁর জানার বাইরে নেই।
অনুরূপভাবে তাঁর রহমতও সমস্ত সৃষ্টিকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে । মহান আল্লাহ
বলেন- () আমার রহমত সকল জিনিসকেই পরিব্যপ্ত করে রয়েছে । (সূরা আরাফ- ১৫৬)
নবীকরীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন -() যখন মহান আল্লাহতা’য়ালা
যাবতীয় সৃষ্টি করলেন ,তখন তাঁর আরশের ওপরে একটি কিতাবে লিখেছেন ,নিশ্চয়ই
আমার রহমত আমার গযবের ওপর বিজয়ী হয়েছে। (বোখারী ,মুসলিম ,তিরমিযী)
সৃষ্টির ক্ষুদ্রতম বিষয় ও তাঁর কাছে গোপন নেই
সৃষ্টিসমূহের ক্ষুদ্রতম কোনো বিষয়ও আল্লাহ তা’য়ালার কাছে গোপন নেই ,তিনি
সমস্ত কিছু জানেন। মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন -() বস্তুত কোনো কিছুই আল্লাহর
কাছে গোপন নেই,আকাশেও নয় বরং যমীনেও নয়। তিনি মাতৃগর্ভে যেভাবে ইচ্ছা
তোমাদের আকৃতি গঠন করে থাকেন । (সূরা ইমরান ৫)
মহাকাশের প্রত্যেকটি স্তরে প্রত্যেক মহুর্তে যে পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে ,এই
পরিবর্তনের ধারা সম্পর্কে তিনি সজাগ রয়েছেন এবং যা কিছুই ঘটছে ,তা তাঁরই
নির্দেশে ঘটছে । সৌর ঝড় ,সূর্যের বুকে মহা প্রলয় ,প্রত্যেকটি ছায়াপথের
চলমান গতি ,একটি সাথে আরেকটির সংঘর্ষ ঘটে যেন কোনো বিশৃংখলা না ঘটে এসবকিছু
তিনিই নিয়ন্ত্রণ করছেন। গ্রহ ,উপগ্রহ ,নক্ষত্র ,তারকাপুঞ্জ ও সূর্যেও
ক্ষতিকর রশ্মি যেন পৃথিবীবাসীর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়, এসব কিছুই
একমাত্র তিনিই নিয়ন্ত্রণ করছেন।
যমীনের তলদেশ মৃত্তিকা গর্ভেও অভ্যন্তরে উত্তপ্ত সময়ের প্রত্যেক মুহুর্তে
আলোড়িত হচ্ছে সেই লাভ হঠাৎ উদগিরণ হয়ে পৃথিবীর সমস্ত জীবের জন্য যেন ক্ষতির
কারণ হয়ে না দাড়ায়ে ব্যাপারে তিনি সজাগ রয়েছেন। আগ্নেয়গিরি থেকে ক্ষতির
গ্যাস নির্গত হয়ে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী মুহুর্তে যেন মৃত্যু মুখে পতিত না
হয় এ বিষয়টি ও তিনিই নিয়ন্ত্রণ করছেন। সমস্ত সাগর মহাসাগরের পানি একই
মুহুর্তে জলোচ্ছাসের সৃষ্টি করে পৃথিবীর যমীনকে তলিয়ে দিতে না পারে এসব
যাবতীয় বিষয় তিনিই নিয়ন্ত্রণ করছেন।
মায়ের গর্ভে -যেখানে কোনো মানুষের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নেই ,সেখানে কার
কি আকৃতি হবে ,কার হাতের আঙ্গুল দশটির স্থানে বারটি হবে, কার এক পা ছোট
আরেক পা বড় হবে ,কে কুৎসিত দর্শন হবে আর কে সুশ্রী হবে, কে মুক- বধির হবে
আর কে বাক ও শ্রবণশক্তি সম্পন্ন হবে এসব কিছুই তিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন।
অর্থাৎ সর্বত্র তাঁর ক্ষমতা ও জ্ঞান ক্রিয়াশীল রয়েছে জন্য মহান আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাকে এভাবে তাঁর কাছে দোয়া করতে শিখিয়েছেন -() হে
আমাদের প্রতিপালক ! নিশ্চয়ই তুমি জান যা আমরা গোপন করি ও প্রকাশ করি । আকাশ
ও যমীনে কোনো কিছুই আল্লাহর কাছে গোপন নয়। (সূরা ইবরাহীম-৩৮ )
দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান সবকিছুই তাঁর আয়ত্বে
পরিদৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান যা কিছু রয়েছে তার সবকিছুই মহান আল্লাহ তা’য়ালার
আয়ত্বে রয়েছেন । আল্লাহতা’য়ালা বলেন -() তারা কি জানতো না যে ,তাদের
অন্তরের গোপন কথা ও তাদের গোপন পরামর্শ আল্লাহ জানেন এবং যা অদৃশ্য তাও
তিনি বিশেষভাবে জানেন। (সূরা তওবা ৭৮)
অদৃশ্য জগতে কোথায় কি পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে এবং এই পরিবর্তনের প্রভাবে
মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর ও জীব জগতের কি অবস্থা হবে ,এই বিষয় জানার কোনো
মাধ্যম মানুষের কাছে নেই,কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালার কাছে এসব বিষয় গোপন নেই
এবং তিনি তাঁর মহাশক্তিবলে এসব পরিবত’ন ঘটান এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতি তিনি
স্বয়ং নিয়ন্ত্রণ করেন। কারণ এসব কিছুর ওপরে তাঁর বিধান কার্যকর রয়েছে।
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন -() তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা,পরাক্রমশালী
প্রজ্ঞাময়। (সূরাতাগাবুন ১৮)
মানুষের মন-মস্তিষ্ক কখন কি চিন্তা পরিকল্পনা করে মনের গহীনে কখন কোন
মুহুতে কি কল্পনা ও আশার উদ্রেক হয় তা জানার মতো কোন যন্ত্র আবিষ্কার করা
মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে মানুষের
মনে জগৎ তথা চিন্তার জগৎ অজ্ঞাত নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন- () তাদের অন্তর
যা গোপন করে এবং তারা যা প্রকাশ করে ,তা তোমার প্রতিপালক অবশ্যই জানেন।
(সূরা নামল -৭৪)
সৃষ্টি কাজে মহান আল্লাহর সাথে অন্য কারো বিন্দুমাত্র অংশ ছিল না। সুতরাং
মানুষের দেহ একজন সৃষ্টি করলো আর আরেকজন তার চিন্তার জগৎ বা মনের জগৎ
সৃষ্টি করলো বিষয়টি এমন নয়। মানুষের দেহ ও মন মস্তিষ্ক তথা চিন্তার জগৎ সেই
একজনই সৃষ্টি করেছেন যাঁর নাম আল্লাহ রাব্বুল আল্লামীন ।আল্লাহ তা’য়ালা
বলেন- () বিশ্ববাসীর অন্তঃকরণে যা আছে ,আল্লাহ তা’য়ালা কি তা সম্যক অবগত
নন? (সূরা আনকাবুত ১০)
আল্লাহ তায়ালা কত কাছে ?
আল্লাহ তা’য়ালার জ্ঞান ও ক্ষমতার বাইরে কোনো কিছুই নেই। তিনি মানুষের মনের
কল্পনা ও চিন্তা ভাবনা সম্পর্কে পূর্ণমাত্রা অবগত রয়েছেন এবং তাঁর ক্ষমতা
মানুষের সমস্ত সত্তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন -() আর আমিই
মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং প্রবৃত্তি তাকে যে কুমন্ত্রণা দেয় তা আমি জানি।
আমি তার কাছে তার গ্রীবাস্থিত ধমনী অপেক্ষাও নিকটতর । (রূরা কাফ- ১৬ )
মানুষে একা একা নীরবে নির্জনে মনে মনে যে চিন্তা কল্পনা করে ,সেটা
আল্লাহতা’য়ালার জ্ঞানের বাইরে নয়,তেমনি দুইজন মানুষ যখন কোথাও নির্জনে গোপন
সলাপরামর্শ করে ,সেটাও আল্লাহর কাছে অজানা থাকে না। সর্বত্র আল্লাহর জ্ঞান
ও ক্ষমতা বিরাজ করছে । আল্লাহতা’য়ালা বলেন -() তুমি কি অনুধাবন করোনা
,আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে আল্লাহ তা’য়ালা তা জানেন তিনি ব্যক্তির
মধ্যে এমন কোনো গোপন পরামর্শ হয় না চতুর্থজন হিসেবে তিনি উপস্থিত থাকে না
এবং পাঁচ ব্যক্তির মধ্যে এমন কোনো গোপন পরামর্শ হয় না যেখানে ষষ্ঠজন হিসেবে
তিনি উপস্থিত থাকেন না,তারা এর চেয়েও কম হোক বা বেশী হোক ,তারা যেখানেই
থাকুক না কেনো আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন। তারা যা কিছু করে তিনি তাদের কে
কিয়ামতের দিন তা জানিয়ে দেবেন ।আল্লাহ তা’য়ালা সর্ব বিষয়ে সম্যক অবগত।
(সূরা মুজাদালা- ৭)
পৃথিবীর সূচনা থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এই পৃথিবীর বুকে কোথায় কত সংখ্যক
কি আকৃতির মানুষ বাস করেছে এবং কোন অঞ্চলে কি আকৃতির কত সংখ্যক প্রাণী বাস
করেছে তার সঠিক পরিসংখ্যান পরিপূর্ণ ভাবে জানা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
গবেষণার মাধ্যমে কিছুটা অনুমান করতে পারে মাত্র। অনুসন্ধানের মাধ্যমে
প্রাণীসমূহের ফসিল ওমানুষের কঙ্কাল যা কিছু পাওয়া যাচ্ছে,তার ওপর গবেষণা
করে একটি অনুমান ভিত্তিক সিদ্ধান্তে মানুষ পৌঁছতে পারে। পৃথিবীর সূচনা
বর্তমান সময় পর্যন্ত সৃষ্টি জগতে যেখানে যে পরিবর্র্তন ঘটেছে পাহাড় পবর্ত
নদী সাগর মহাসাগর আগ্নেয়গিরি মৃত্তিকার তলদেশে তথা সমগ্র সৃষ্টি জগৎ জুড়ে
পরিবর্তন ঘটেছে ,তার সঠিক কারণ নির্ণয় এবং সঠিক সময় ও কি ধরনের পরবর্তন
ঘটেছে তার যথাযথ তথ্য জানা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
অতীত ,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবই তাঁর নিয়ন্ত্রণে
শুধু তাই নয় -বর্তমান সময় থেকে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কোথায় কি
ধরনের পরিবর্তন ঘটবে ,কোন আকার -আকৃতির,চিন্তা -চেতনা এবং রুচির অধিকারী
মানুষ পৃথিবীতে আগামীতে আগমন করবে ,এর সঠিক তথ্য মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব
নয়। কিন্তু মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামী এসব বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ অবগত
রয়েছেন। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- () তোমাদের পূর্বে যারা আতিবাহিত হয়েছে আমি
তাদেরকে জানি এবং পরে যারা আসবে তাদেরকেও জানি (সূরা হিজর -২৪)
তাঁর অজ্ঞাতে একটি পাতাও পড়ে না
কোথায় বৃষ্টি হবে ,পৃথিবীর কোন অঞ্চলে খরা হবে, কখন কোন নদী বা সাগরে
জলোচ্ছাস ঘটবে, আকাশের কোন কোণে মেঘমালা পূঞ্জিভূত হয়ে প্রচন্ড ঝড়ের সৃষ্টি
হবে ,পৃথিবীর কোন স্থানে মৃত্তিকার তলদেশে কি আলোড়ন হচ্ছেএবং তা
ভূমিকাকম্পের আকারে কখন কিভাবে আঘাত করবে এসব বিষয় মানুষের জানা নেই । তারা
শুধু অনুমান করতে পারে এবং তাদের অনুমান প্রচার মাধ্যমে প্রচার করতে পারে।
কিন্তু নিশ্চিতভাবে কিছুই বলতে পারে না। মাটির ওপরে যে দুর্বা ঘাস সেই
ঘাসের ওপরে উপর থেকে গাছের পাতা পড়ার কারণে যে শব্দ হয় এবং দূর্বা ঘাসের
ওপর থেকে ঐ পাতা যখন মাটিতে পড়ার সময় যে শব্দ তরঙ্গের সৃষ্টি হয় সেটাও মহান
আল্লাহর অগোচরে থাকে না। মৃত্তিকার অভ্যন্তরে গভীর অন্ধকারে কোথায় কখন কোন
উদ্ভিদের বীজ অঙ্কুরিত হবে এবং কোন বীজ বিনষ্ট হবে ,মহানআল্লাহর জ্ঞানে
সবকিছু রয়েছে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- () অদৃশ্যেও কুঞ্জি তাঁরই কাছে রয়েছে ।
তিনি ব্যতীত অন্য কেই তা জানেনা। জলে ও স্থলে যা কিছু আছে তা তিনিই অবগত।
তাঁর অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও পড়ে না ,মৃত্তিকার অন্ধকারে এমন কোনো শস্যকণাও
অঙ্কুরিত হয় না অথব রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক এমন কোনো বস্তু নেই যা সুস্পষ্ট
কিতাবে নেই (সূরা আনআম -৫৯) () আকাশসমূহ ও পৃথিবীর অণু-পরিমাণও তোমার
প্রতিপালকের অগোচর নয়। (সূরা ইউনুছ- ৬১ )
সৃষ্টি কাজে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাথে কেউ অংশীদার ছিলো না । তিনি
একাই আপন ক্ষমতা বলে সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং গোলামী করতে হবে
একমাত্র আল্লাহতায়ালার। যেসব মানুষ আইন কানুন মতবাদ মতাদর্শ তৈরী করে অন্য
মানুষকে তা মেনে চলার জন্য আহবান জানায় তারা হলো পথভ্রষ্টকারী। আল্লাহ
তা’য়ালার সৃষ্টি কাজে এদের অংশ গ্রহণ দূরে থাক, এরা নিজেরাই মহান আল্লাহর
সৃষ্টি । সুতরাং যিনি সৃষ্টি করেছেন ,একমাত্র তারই আইন মেনে চলতে হবে।
আল্লাহতা’য়ালা বলেন- () আমি আকাশ ওযমীন সৃষ্টি করার সময় তাদেরকে ডেকে
পাঠাইনি । আর না আমার সৃষ্টি কাজে তাদেরকে শরীক করেছিলাম। আর
পথভ্রষ্টকারীদেরকে নিজের সাহায্যকারী হিসেবে গ্রহণ করা আমার নীতি নয়। (সূরা
কাহফ- ৫১)
সৃষ্টি কাজে কেউ অংশীদার ছিল না
সৃষ্টি কাজে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাথে কেউ অংশীদার ছিলো না । তিনি
একাই আপন ক্ষমতা বলে সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং গোলামী করতে হবে
একমাত্র আল্লাহতায়ালার। যেসব মানুষ আইন কানুন মতবাদ মতাদর্শ তৈরী করে অন্য
মানুষকে তা মেনে চলার জন্য আহবান জানায় তারা হলো পথভ্রষ্টকারী। আল্লাহ
তা’য়ালার সৃষ্টি কাজে এদের অংশ গ্রহণ দূরে থাক, এরা নিজেরাই মহান আল্লাহর
সৃষ্টি । সুতরাং যিনি সৃষ্টি করেছেন ,একমাত্র তারই আইন মেনে চলতে হবে।
আল্লাহতা’য়ালা বলেন- () আমি আকাশ ওযমীন সৃষ্টি করার সময় তাদেরকে ডেকে
পাঠাইনি । আর না আমার সৃষ্টি কাজে তাদেরকে শরীক করেছিলাম। আর
পথভ্রষ্টকারীদেরকে নিজের সাহায্যকারী হিসেবে গ্রহণ করা আমার নীতি নয়। (সূরা
কাহফ- ৫১)
আল্লাহর সৃষ্টি উদ্দেশ্যহীন নয়
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন - () তিনিই সূর্যকে উজ্জ্বল ভাস্বর বানিয়েছেন
,চন্দ্রকে দিয়েছেন দীপ্তি । এবং চন্দ্রেও হ্রাস্ বৃদ্ধি লাভের এমন সব মনযিল
সঠিকভাবে নির্ধারিত করে দিয়েছেন ,যার ফলে তোমরা এর সাহায্যে বছর ও
তারিখসমূহের হিসাব জেনে নাও। আল্লাহতা’য়ালা এসব কিছু (খেলার ছলে নয়, বরং )
স্পষ্ট উদ্দেশ্য সম্পন্ন করে সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাঁর নির্দশনসমূহ একটি
একটি করে সুস্পষ্টরূপে পেশ করেছেন তাদের জন্য যারা জ্ঞানবান । (সূরা ইউনুস
-৫)
নিস্প্রাণের মাঝে তিনিই প্রাণ দানকারী
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- () তিনি জীবন্তকে মৃত থেকে বের করেন এবং মৃতকে জীবন্ত
থেকে বের করে আনেন। আর যমীনেক তার মৃত্যুও পর জীবন দান করেন। এমনিভাবে
তোমাদেরকেও মৃত অবস্থা থেকে বের করে আনা হবে (সূরা রূম- ১৯)
তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন
তোমাদের রব যা কিছু ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং নির্বাচিত করে নেন। (সূরা কাসাস
-৬৮ ) () তিনি সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্রসমূহ সৃষ্টি করেছেন। সবই তাঁর আইন
বিধানের অধীনে বন্দী ।সাবধান! সৃষ্টি তাঁরই এবং সর্বভৌমত্বে ও তাঁরই
।অপরিসীম বরকতময় আল্লাহ সমগ্র জাহানের মালিক ও প্রতিপালক । তোমরা আল্লাহকে
ডাকো ,মিনতি পূর্ণ কন্ঠে ও চূপে চূপে । (সূরা আরাফ- ৫৪- ৫৫ )
রাত ও দিনকে তিনি যদি দীর্ঘ করে দেন
আল্লাহ রাব্বুল আলামনি বলেন
-() হে নবী !বলে দাও তোমরা কি কখনো চিন্তা করে দেখেছো যে আল্লাহ তা’য়ালা
যদি রাতকে কিয়ামত পর্যন্ত তোমাদের ওপরে দীর্ঘ করে দেন তাহলে আল্লাহ ব্যতীত
আর কোন ইলাহ তোমাদেরকে আলো এনে দিতে পারবে ?তোমরা কি শুনতো পাওনা?
হে নবী তাদেরকে জিজ্ঞেস করো ,তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো আল্লাহ যদি কিয়ামত
পর্যন্ত তোমাদেরে জন্য দিন বানিয়ে দেন তাহলে আল্লাহব্যতীত আর কে ইলাহ আছে
যে রাত এনে দিতে পারবে যেন তোমরা শান্তি লাভ করতে পারো? তোমরা কিন্তু এসব
কথা ভেবে দেখো না (সূরা কাসাস -৭১ -৭২)
সমস্ত কিছুর ভান্ডার আল্লাহরই হাতে
এমন কোনো জিনিস নেই যার ভান্ডার আমার কাছে নেই এবং আমি যে জিনিসই অবতীর্ণ
করি একটি নির্ধারিত পরিমাণেই করে থাকি। বৃষ্টিবাহী বায়ূ আমিই পাঠাই । তারপর
আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি এবং এ পানি দিয়ে তোমাদেও পিপাসা মিটাই। এ
সম্পদেও ভান্ডার তোমাদের হাতে নেই। জীবন ওমৃত্যু আমিই দান করি এবং আমিই হবো
সবার উত্তরাধিকারী। তোমাদের পূর্বে যারা গত হয়েছে তাদেরকে আমি দেখে রেখেছি
এবং পরবর্তী আগমনকারীরাও আমার দৃষ্টি সমক্ষে আছে। অবশ্যি তোমার রব তাদের
সবাইকে একত্র করবেন। তিনি জ্ঞানময় ও সবকিছু জানেন। (সূরা আল হিজর- ২১ -২৫)
() আর তিনিই দুই সাগরকে মিলিত করেছেন। একটি সুস্বাদু ও মিষ্ট এবং অন্যটি
লোনা ও খার। আর দুয়ের মাঝে একটি অন্তরাল রয়েছে,একটি বাধা তাদের একাকার হবার
পথে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করে রেখেছে। আর তিনিই পানি থেকে একটি মানুষ তৈরী
করেছেন, আবার তার থেকে বংশীয় ও শ্বশুরালয়ের দুটো পৃথক ধারা চালিয়েছেন।
তোমার রব বড়ই শক্তি সম্পন্ন। (সূরা আল ফুরকান- ৫৩- ৫৪)
তিনিই ভাগ্য নির্ধারণকারী
বড়ই বরকত সম্পন্ন তিনি যিনি এই ফুরকান তাঁর বান্দার ওপর নাযিল করেছেন, যাতে
সে সারা বিশ্ববাসীর জন্য সতর্ককারী হয়। যিনি পৃথিবী ও আকাশের রাজত্বেও
মালিক ,যিনি কাউকে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেননি, যাঁর সাথে রাজত্বে কেউ শরীক
নেই। যিনি প্রত্যেকটি জিনিস সৃষ্টি করেছেন তারপর তার একটি তাকদীর নির্ধারিত
করে দিয়েছেন। (সূরাআল ফুরকান- ১ -২)
তিনিই সৃষ্টিতে ভারসাম্যতা রক্ষা করেছেন
মহাবিশ্বেও কোনো একটি জিনিসও বিশৃংখল ও অপরিমিতভাবে সৃষ্টি করা হয়নি।
প্রত্যেকটি জিনিসেরই একটি তাকদির বা একটি সামুগ্রিক পরিমাণ নির্ধারণ রয়েছে।
এই পরিমাণ অনুযায়ীই একটি বিশেষ সময় তা অস্তিত্বশীল হয় এবং একটি বিশেষ রূপ ও
আকার আকৃতি ধারণ করে। একটি বিশেষ পরিমাণ পর্যন্ত তা প্রবৃদ্ধি ও ক্রমবিকাশ
লাভ করে এবং একটি শেষ মেয়াদ পর্যন্ত তা অবশিষ্ট থাকে এবং একটি বিশেষ সময়ে
তা শেষ হয়ে যায়। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন ,আমি প্রত্যেকটি জিনিসই একটি পরিমাপসহ
সৃষ্টি করেছি। (সূরা কামার -৪৯)
তিনি রব, কোন কিছুই ভারসাম্যহীন করে সৃষ্টি করেননি। যা সৃষ্টি করেছেন, তার
ভেতরে ভারসাম্য রক্ষা করেই সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীতে মানব সভ্যতা
সৃপ্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য মানব সমাজের নিয়ম – শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে
মহান রব এমন নিয়ম করে দিয়েছেন যে, তিনি বিভিন্ন মানব গোষ্ঠিকে একটি
নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত আধিপত্য ও শক্তি সামর্থ লাভের সুযোগ দেন। কিন্তু
কোন দল যখন সেই সীমা লংঘন করতে শুরু করে,তখন অপর এক মানব গোষ্ঠীকে দিয়ে তার
শক্তিকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেন। পৃথিবীতে যদি একটি দল ও একটি জাতির স্থায়ী
প্রভুত্ব বিস্তারের ব্যবস্থা করা হতো এবং স্বৈরাচারী নীতি আর জুলুম মূলক
ব্যবস্থা অমর অক্ষয় হয়ে থাকতো ,তাহলে পৃথিবীতে এক চরম দুর্যোগ ,ধ্বংস আর
বিপর্যয় দেখা দিত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন- “আল্লাহ যদি এভাবে মানুষের
একটি দলকে অপর একটি দলের মাধ্যমে দমন না করতেন, তবে পৃথিবীর নিযম শৃঙ্খলা
সব বিনষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু পৃথিবীবাসীদের প্রতি বড়ই করুণাময়।” (সূরা বাকারা
২৫১)
এভাবে মহান আল্লাহ সমস্ত কিছুতেই ভারসাম্য রক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। পৃথিবীর
বুকে কোন জালিমই স্থায়ীভাবে তার রাজত্ব টিকিয়ে রাখতে পারেনি। দম্ভ ,
অহঙ্কার স্থায়ী হয়নি। প্রাণীজগতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেও দেখা যায়,
রাব্বুল আলামীন তাদের ভেতরে কি সুন্দর করে ভারসাম্য রক্ষা করেছেন।
সামুদ্রিক কাছিমগুলোর যখন ডিম দেয়ার সময় ঘনিয়ে আসে তখন তারা রাতের অন্ধকারে
সমুদ্রের বেলাভূমিতে উঠে আসে, দিনের আলোয় আসে না। দিনের আলোয় এসে ডিম দিয়ে
গেলে তা মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর চোখে পড়বে। তার ডিম ক্ষতিগ্রস্থ হতে
পারে,তারপর পা দিয়ে তারা বালির ভেতরে গর্ত করে। গর্ত করা শেষ হলেই একের পর
এক ডিম দিতে থাকে। মুরগী, হাঁস বা অন্যান্য পাখি যে সংখ্যক ডিম দিবে, তা
প্রতিদিন একটি করে দিয়ে থাকে। আর কাছিম যে ডিমগুলো দিবে তা একই সময়ে একটির
পর একটি করে দিতে থাকে। যতগুলো ডিম দেয়া প্রয়োজন, তা পনের বা বিশ মিনিটের
মধ্যে দিয়ে দেয়। তারপর ডিমে পরিপূর্ণ গর্ত পায়ের সাহায্যে বালি দিয়ে ভরে
দেয়।
ডিমের ওপরে বসে তা দিতে হয় না। মাটি বা বালির অভ্যন্তরীণ তাপেই ডিমগুলো
নির্দিষ্ট দিন পর ফোটে। যেখানে মাটি বা বালির ঘনত্ব বেশি সেখানেও তারা ডিম
দেয় না। কারণ বাচ্চাগুলো তা দীর্ণ করে পৃথিবীতে আসতে পারবে না। সমুদ্রের
পানি থেকে মাত্র দশ অথবা বিশ ফুট দূরে কাছিম এভাবে ডিম দেয়। অনেক দূর থেকে
আসতে আসতে বাচ্চারা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
স্থলে কাছিম দ্রুত গতিতে চলতে পারে না। এ জন্য তারা পানির খুব কাছেই ডিম
দেয় যেন বাচ্চা বের হয়েই দ্রুত পানির ভেতরে যেতে পারে। সদ্যজাত বাচ্চাগুলো
ডিম থেকে বেরিয়েই পানির দিকে ছুটতে থাকে। ওদের গতি পানির বিপরীত দিকে কখনোই
হয় না। এই সাবধানতা অবলম্বন করে ডিমগুলো রক্ষা করতে হবে, পানির কাছিকাছি
ডিম দিতে হবে, বাচ্চাগুলোকে পানির দিকে ছুটতে হবে, কাছিমের ভেতরে যিনি এই
চেতনা দিয়েছেন, তিনিই হলেন রব।
কাছিম ডিম দিয়ে চলে যায়, ওদের ডিমের অনুসন্ধানে চলে আসে শিয়াল, বেজি এবং
অন্যান্য প্রাণী। এরা সন্ধান পেলেই ডিমগুলো খেয়ে নেয়। যেগুলো সন্ধান পায়না
সেগুলোর বাচ্চা ফোটে। এই বাচ্চাগুলো ডিম থেকে বেরিয়ে পানির দিকে যাবার পথে
নানা ধরনের প্রাণী এদের খেয়ে ফেলে। পানির ভেতরে বড় বড় মাছ এই বাচ্চাগুলো
খেয়ে ফেলে। আল্লাহ তা’য়ালা যদি সমস্ত কাছিমের ডিম হেফাযত করে বাচ্চা ফুটিয়ে
বাচ্চাগুলোকে বাঁচতে দিতেন,তাহলে গোটা পৃথিবীই কাছিমে পরিপূর্ণ হয়ে যেতো।
মহান রাব্বুল আলামীন বলেন- “আমারই কাছে রয়েছে প্রতিটি বস্তুর অফুরন্ত
ভান্ডার এবং আমিই তাদের সরবরাহ করি এক পরিজ্ঞাত পরিমাপে। ”(সূরা আল হিজর
২১)
কুমিরের ডিমেরও এই একই অবস্থা। কুমির স্থলে ডিম দিয়ে কোন কিছু দিয়ে ঢেকে
দেয়। তারপর পাহারা দিতে থাকে। শিয়াল, বেজি এবং অন্যান্য প্রাণী কুমিরকে
প্রহরা দিতে দেখেই বুঝে নেয়, ওখানে ওর ডিম আছে। ওরা কুমিরের গতি বিধির ওপরে
নজর রাখে। ডিমের কাছ থেকে একটু দূরে গেলেই ওরা এসে ডিম খেয়ে নেয়। তারপরেও
যে বাচ্চাগুলো জন্ম নেয়, সেগুলোকে ধরে মাছসহ অন্যান্য প্রাণী খেয়ে নেয়।
সমস্ত কুমির, সাপ, বাঘ,ভল্লুক ইত্যাদি যত বাচ্চা দেয়, তা যদি বাঁচতে পারতো
,তাহলে এই পৃথিবী আর মানুষ বসবাসের উপযোগী থাকতো না। এদের সৃষ্টির ভেতরে
রাব্বুল আলামীন ভারসাম্যতা রক্ষা করেছেন। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন -“তোমার মহান
শ্রেষ্ঠ রব এর নামের তসবীহ করো। যিনি সৃষ্টি করেছেন এবং ভারসাম্যতা স্থাপন
করেছেন।” (সূরা আ’লা ১- ২)
পৃথিবীর সমস্ত উদ্ভিদেরও এই অবস্থা । আল্লাহ তা’য়ালা কোন একটি উদ্ভিদকেও
মাত্রার অতিরিক্ত বিস্তৃতি ঘটতে দেন না। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন
-“আল্লাহর বিধানে প্রত্যেক বস্তুও জন্য নির্ধারিত রয়েছে একটি পরিমাপ।”
(সূরা আর রা’দ ৮)
বিশেষ বিশেষ ঋতুতে অসংখ্য উদ্ভিদ জন্ম নেয়। আবার এমন ঋতু পৃথিবীতে আগমন
করে, কতকগুলো উদ্ভিদ ক্রমশঃ নিঃশেষ হয়ে যেতে থাকে। এভাবে আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন এই পৃথিবীকে তাঁর বান্দাদের বসবাসের অনুকুল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য
সমস্ত সৃষ্টির ভেতরে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন।
বান্দাদেরকে তিনিই প্রতিপালন করেন, বান্দার কল্যাণে এসব ব্যবস্থা তিনিই
করেন। অতএব একমাত্র তাঁরই প্রশংসা ও দাসত্ব করতে হবে।
তিনি সকল সৃষ্টি সম্পর্কে পূর্ণরূপে অবগত
মাটি বা পানির অতল তলদেশে একটি পাথরের মধ্যে এমন একটি প্রাণী বাস করে,যা
অনুবীণযন্ত্র ব্যতীত মানুষের চোখে পড়বে না। সেই প্রাণী সম্পর্কেও মহান
আল্লাহ অমনোযোগী নন।
ঐ প্রাণীর যাবতীয় প্রয়োজন তিনিই পূরণ করছেন। মহান আল্লাহ বলেন-
-------------------------------------------- “আমি আমার সৃষ্টি জগৎ
অমনোযোগী নই।”------------------------------------------ “তোমার রব পৃথিবী
ও আকাশের সৃষ্টিসমূহকে বেশী জানেন।” (সূরাবনী ইসলাঈল ৫৫)
------------------------------------------ “তুমি কি দেখনা, আল্লাহর
পবিত্রতা বর্ণনা করছে যারা আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীতে আছে তারা সবাই এবং যে
পাখিরা ডানা বিস্তার করে আকাশে ওড়ে ? প্রত্যেকেই জানে তার নামাযের ও
পবিত্রতা বর্ণনা করার পদ্ধতি। আর এরা যা কিছু করে আল্লাহ তা জানেন।” (সূরা
নূর ৪১)
যমীনে বিচরণশীল কোনো জীব এমন নেই,যার রিযক দানের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর
ন্যস্ত নয় এবং যার সম্পর্কে তিনি জানেন না যে, কোথায় সে থাকে আর কোথায় তাকে
সোপর্দ করা হয়।” (সূরা হূদ ৬)
তবে কি যিনি প্রতিটি প্রাণীরই উপার্জনের ওপর দৃষ্টি রাখেন, (তাঁর মোকাবেলায়
এই ধরনের দুঃসাহস করা হচ্ছে যে,) লোকজন তাঁর কিছু শরীক নির্দিষ্ট করে
রেখেছে? (সূরা আর রা’দ ৩৩)
------------------------------------------------------ এটাই কি যথেষ্ট নয়
যে, তোমার রব প্রতিটি জিনিস দেখছেন? (সূরা হা’মিম আস সিজদাহ ৫৩)
-------------------------------- যা কিছু আমাদের সামনে ও যা কিছু পেছনে
এবং যা কিছু এর মাঝখানে আছে তার প্রত্যেকটি জিনিসের তিনিই মালিক এবং তোমার
রব ভুলে যান না। (সূরা মারয়াম ৬৪)
------------ আমার রব ভুলও করেন না, বিস্মৃত ও হন না। (সূরা ত্বা’হা ৫২)
আল্লাহ শব্দ কিভাবে এলো
মানব সৃষ্টির সূচনা থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত খুব অল্প সংখ্যক মানুষই
আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করেছে। ফেরাউন, নমরুদ এবং এতেদর মতো আরো যারা
ছিল, তারা কেউ আল্লাহর অস্তিত্বে অবিশ্বাসী ছিলনা। তারা কখনো এ কথা বলেনি
যে, এই গোটা বিশ্ব আমি সৃষ্টি করেছি। বরং তারা বলেছে, কোরআনের ভাষায় -
--------------- আমিই তোমাদের শ্রেষ্ঠ রব। আমার চেয়ে শক্তিশালী আর কেউ নেই।
অর্থৎ তারা দাবী করেছে,‘ এই বিশাল ভূখন্ডের শাসক হিসাবে দেশের জনগণের ওপরে
আইন ও বিধান চলবে আমার। এখানে অন্য কারো আইন কানুন চলবে না। জনগণ অন্য কারো
আইন অনুসরণ করতে পারে না। আইন চলবে একমাত্র আমার এবং আমাকেই ইলাহ হিসাবে
পূজা অর্চনা করতে হবে। মাথানত করতে হবে একমাত্র আমার কাছে। ’ এভাবে দেশের
জনগোষ্ঠী আল্লাহকেও বিশ্বাস করেছে, সেই সাথে তারা আল্লাহর অংশীদার
বানিয়েছে। পবিত্র কোরআনে দেখা যায় আরবের যারা মূর্তিপূজক ছিল তারা আল্লাহকে
বিশ্বাস করতো। মুখে তারা আল্লাহর নাম বেশ শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারণ করতো।
কিন্তু তাদের বিশ্বাস ছিল, আল্লাহর কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম হলো এসব মূর্তি।
পক্ষান্তরে ইসলাম মানুষকে শিখালো, আল্লাহ এমন এক অদ্বিতীয় সত্তার নাম,ডিনি
গোটা বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন। দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান যা কিছু আছে, সমস্ত
কিছুই তাঁরই সৃষ্টি। সমস্ত সৃষ্টির সব ধরনের প্রয়োজন যিনি পূরণ করেন তিনিই
হলেন মহান আল্লাহ। আল্লাহ শব্দের বিকল্প কোন শব্দ নেই। তিনিই মানব জাতির সব
ধরনের বিধান দাতা। প্রাচীন সিমেটিক ভাষাগোষ্ঠীর প্রত্যেকটি শাখাতেই
সামান্য রূপান্তর ভেদে আল্লাহ কথাটি এক,অদ্বিতীয়, অনাদী, অনন্ত উপাস্য
সত্তার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভাষাবিদগণ অনুমান করেন যে,মানব সভ্যতার
সূচনাকাল থেকেই তাওহীদবাদী জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিশ্ব প্রতিপালকের একক সত্তা
বোঝানোর জন্য আল্লাহ শব্দটির প্রচলন রয়েছে। যেমন প্রাচীন কালদানীয় ও
সুরইয়ানী ভাষায় আল্লাহ শব্দটি আলাহিয়া,‘প্রাচীন হিব্রু“ভাষায় উলুহ এবং আরবী
ভাষায় ইলাহ রূপে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিবর্তিত আরবী ভাষায় ইলাহ শব্দের সাথে
আরবী আল অব্যয় যুক্ত হয়ে আল ইলাহ বা আল্লাহ শব্দে রূপান্তরিত হয়েছে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের পূর্বেও আরবদের মধ্যে
আল্লাহ শব্দটিই মহান পরওয়ারদেগারের একক শব্দরূপে হতো। আল্লাহ শব্দটির কোন
লিঙ্গান্তর হয়না। এর কোন দ্বিবচন বা বহুবচনও হয় না। এ প্রাচীন শব্দটিই পরম
উপাস্যেও সত্তা বোঝানোর জন্য পবিত্র কোরআনে বারবার ব্যবহৃত হয়েছে। ইসলামী
শরীয়াতে আল্লাহ নামের কোন বিকল্প নেই। মহান আল্লাকে তাঁর যে কোন গুণবাচক
নামেও ডাকা যায়। তবে আল্লাহ ও আল্লাহর গুণবাচক নামের বিকল্প যেমন,
গড,ঈশ্বও,পরমেশ্বর,ভগবান ইত্যাদি কোননামে ডাকা স্পষ্ট হারাম। কারণ এসব
শব্দের মধ্য দিয়ে তওহীদ বিশ্বাসের অনুরূপভাব প্রকাশ পায় না। কারণ ঐসমস্ত
শব্দের লিঙ্গান্তর করা যায় এবং স্ব স্ব ভাষায় ব্যকরণ শুদ্ধভাবে করা যায়।
ইংরেজী গড শব্দের ইংরেজী বানান (GOD).এখানে ইংরেজী বর্ণমালার তিনটি অক্ষর
রয়েছে। এই শব্দটি যদি উল্টিয়ে উচ্চারণ করা হয় তাহলে তা একটি চতুষ্পদ জন্তুর
নাম প্রকাশ করবে। আল্লাহ কে এবং তাঁর পরিচয় স্বয়ং তিনিই এভাবে দিয়েছেন-
------------ “হে নবী ! আপনি বলে দিন, আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয় ,তিনি অভাব
শুন্য। তাকে কেউ জন্ম দেয়নি তিনিও কাউকে জন্ম দেননি। (সূরা ইখলাস)
আর ভগবানের সংজ্ঞা শ্রী মদ্ভাগবত গীতা দিয়েছেএভাবে ,অর্জুনের এক প্রশ্নের উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন
যদা যদা হি ধর্ম্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভুত্থনমধর্ম্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম।।
পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম। ধর্ম্মসঙস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।
(গীতা, চতুর্থোহধ্যায়ঃ জ্ঞানযোগ ৭-৮)
অভুত্থনমধর্ম্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম।।
পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম। ধর্ম্মসঙস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।
(গীতা, চতুর্থোহধ্যায়ঃ জ্ঞানযোগ ৭-৮)
অনুবাদঃ হে অর্জ্জুন ! যে যে সময়ে ধর্ম্মের পতন আর পাপের প্রাদুর্ভাব
হয়,সেই সেই সময়ে আমি জন্ম লইয়া থাকি। এইভাবে পাপীদের বিনাশ করিতে (শাস্তি
দিতে)আর সৎ লোকদের বাঁচাইতে এবং ধর্ম্মকে আবার প্রতিষ্ঠিত করিতে যুগে যুগে
আমি জন্মগ্রহণ করি।
হিন্দু সম্প্রদায় শ্রী কৃষ্ণকে স্বয়ং ভগবান নামে অভিহিত করেন। সুতরাং ভগবান
প্রয়োজনে বা বাধ্য হয়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন। এই ভগবান পৃথিবীতে
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নরূপে পিতার ঔরসে মায়ের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছেন। ভগবান
একবার চার অংশে রাজা দসরথের ঔরসে জন্মগ্রহণ করে রাম,লক্ষণ, ভরত ও শত্রুঘ্ন-
এই চার নাম ধারণ করেছিল। ভগবান তার ভক্ত প্রহল্লাদের সামনে পশুরাজ সিংহের
আকৃতি ধারণ করে নিজেকে প্রকাশ করেছিল। তাহলে দেখা গেল ভগবান এই পৃথিবীতে
মাতৃগর্ভে পিতার ঔরসে প্রয়োজনে জন্মগ্রহণ করে। যে কোন পশুর রূপও ধারণ করতে
পারে। সুতরাং ,স্রষ্টাকে নামের পরিচয়ে আবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে মানুষ এমন সব
শব্দ আবিষ্কার করেছে যে, এসব শব্দের যে কি অর্থ এবং শব্দকে খন্ডিত করলে যে
কি অর্থ প্রকাশ করে, সেদিকে লক্ষ্য না রেখেই মানুষ তার সীমিত জ্ঞান প্রয়োগ
করে কল্পিত স্রষ্টার একটি নাম রেখেছে। কেবলমাত্র ব্যতিক্রম হলো ইসলাম।
ইসলাম আল্লাহ নামের যে পরিচয় দিয়েছে,তার কোন বিকল্প নেই ।
আরবের ছাফা পর্বতের অনেক শিলালিপিতে আরবী আল্লাহ শব্দটি সেই যুগ থেকেই লিখা
ছিল এবং এখনো আছে। উত্তর আরবের জনগোষ্ঠী এবং নাবাতী জনগোষ্ঠী নামের একটি
অংশ আল্লাহ নাম ব্যবহার করতো। নাবাতীদের কাছে আল্লাহ নামটা পৃথক কোন উপাস্য
হিসাবে বিবেচিত না হলেও তাদের শিলালিপিতে দেবতাদের নামের সাথে আল্লাহ নাম
সংযুক্ত দেখা যায়। পকাষান্তরে সেল, মাবগলিউথসহ অনেক ইসলাম বৈরী পাশ্চাত্য
গবেষক ‘আল্লাহ’ শব্দটি জাহিলিয়াত যুগের ‘আল লাত’ নামক দেবমূর্তিও নামের
রূপান্তর বলে যে কষ্ট কল্পনা করেছে,আরবী শব্দ গঠন পদ্ধতির বিচারে এটা
নিতান্তই হাস্যষ্পদ অপচেষ্টা মাত্র। আল্লাহ শব্দের অনুবাদ কেউ যদি স্রষ্টা
লিখে তাহলে তা হবে এক মারাত্মক ভুল। কারণ স্রষ্টা হিসাবে তো মহান আল্লাহর
খালিক নামক একটি গুণবাচক নাম রয়েছে । শুধু একটি নয়, আল্লাহর অনেকগুলো
সর্বোত্তম গুণবাচক নাম রয়েছে। মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন -() আল্লাহ সুন্দর
সুন্দর নামের অধিকারী, তাঁকে সুন্দর সুন্দর নামেই ডাকো। সেই লোকদের কথার
কোন মূল্য দিও না যারা তাঁর নামকরণে বিপথগামী হয়। তারা যা কিছুই করতে থাকে
,তার বিনিময় তারা অবশ্যই লাভ করবে। (সূরা আল আ’রাফ১৮০)
আল্লাহর গুণবাচক নাম রহমান, এ নামেও তাঁকে ডাকা যায়। মহান আল্লাহ বলেন-()
হে নবী! এদেরকে বলে দাও ,আল্লাহ অথবা রহমান যে নামেই ডাকো না কেন তাঁর জন্য
সব ভালো নামই নির্দিষ্ট। (সূরা বনী ইসলাঈল ১১০)
মহান আল্লাহ অসংখ্য গুণাবলীর অধিকারী এবং গুণ ও বৈশিষ্ট্যেও কারণে তাঁর
গুণবাচক নাম প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর গুণবাচক নাম সম্পর্কে স্বয়ং তিনিই সূরা
ত্বা-হায় বলেছেন-() তিনি আল্লাহ, ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, তাঁর জন্য রয়েছে
সর্বোত্তম নামসমূহ ।(সূরা ত্ব-হা)
আল্লাহর এসব গুণবাচক নামও অতীব সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। এসব নামেরও
তসবীহ করতে হবে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-() ( হে নবী!) তোমার মহান শ্রেষ্ঠ রব
এর নামের তাসবীহ করো। (সূরা আ’লা -১)
আল্লাহ শব্দের অর্থ কোনক্রমেই স্রষ্টা হিসাবে অনুবাদ করা যেতে পারে নাএবং এ
নামের কোন অনুবাদও হতে পারে না। আল্লাহ নামের কোন বিকল্প হতে নেই। স্রষ্টা
হিসাবে আল্লাহ তা’য়ালার একটি নাম রয়েছে। কোরআন বলছে-() তিনিই আল্লাহ ,যিনি
সৃষ্টি পরিকল্পনা রচনাকারী ও তার বাস্তবায়নকারী এবং তা অনুসারে আকার আকৃতি
প্রদানকারী তাঁরই জন্য অতীব উত্তম নামসমূহ। (সূরা হাশর ২৪)
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল্লাহ নাম দিয়েই তিনি তাঁর পরিচয় এভাবে তুলে
ধরেছেন-() আল্লাহ সেই চিরঞ্জীব শাশ্বত সত্তা যিনি সমগ্র বিশ্বচরাচরকে
দৃঢ়ভাবে ধারণ করে আছেন ,তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনি সদাজাগ্রত এবং
তন্দ্রা তাকে স্পর্শ করতে সক্ষম নয়। আকাশমন্ডলে ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে
সবকিছুর সার্বভৌমত্ব তাঁর। (সূরা বাকারা ২৫৫)
আল্লাহ হলেন তিনি, যিনি একমাত্র দাসত্ব লাভের অধিকারী এবং অসীম দয়ালু তাঁর
কাছে গোপন ও প্রকাশ্য বলে কোন কিছু নেই। কোরআন ঘোষণা করছে -() তিনিই আল্লাহ
যিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছুরই জ্ঞাতা, তিনিই
রহমান ও রাহীম (সূরা হাশর ২২)
আল্লাহ মহাপবিত্র এবং তিনি সমস্ত কিছুর মালিক সমস্ত কিছুরই বাদশাহ
রাজাধিরাজ। কোরআন তাঁর পরিচয় এভাবে পেশ করছে-() তিনিই আল্লাহ যিনি ব্যতীত
কোন ইলাহ নেই। তিনি মালিক বাদশাহ। অতীব মহান ও পবিত্র। সম্পূর্ণ শান্তি
,নিরাপত্তা দানকারী, সংরক্ষণকারী, সর্বজয়ী নিজের নির্দেশাবলী শক্তি প্রয়োগে
কার্যকরী এবং স্বয়ং বড়ত্ব গ্রহণকারী । (সূরা হাশর ২৩)
সমস্ত কিছুর একচ্ছত্র অধিপতি হলেন আল্লাহ। তাঁর নাম বিকৃত করার সামান্যতম
অবকাশ নেই। আল্লাহ নামের প্রতিটি অক্ষর দিয়েই তাঁর পরিচয় কোরআন উপস্থাপন
করেছে। আল্লাহ নাম লিখতে প্রথমে আরবি অক্ষর আলিফ এর প্রয়োজন হয়। এই আলিফ
অক্ষর বাদ দিলেও আল্লাহর নাম বিকৃত করা যাবে না। কোরআন বলছে-() আকাশ রাজ্য ও
পৃথিবীতে যা কিছুই রয়েছে,তা সবই আল্লাহর ।তোমাদের মনের কথা প্রকাশ করো
অথবা নাই করো আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের কাছ থেকে সে সম্পর্কে হিসাব গ্রহণ
করবেন। (সূরা বাকারা ২৮৪)
পবিত্র কোরআন আল্লাহ শব্দের আলিফ ব্যতিতই এ ধরনের বহু আয়াতে আল্লাহ
তা’য়ালার পরিচয় প্রকাশ করেছে,তাঁর অসীম ক্ষমতার কথা তুলে ধরেছে। উল্লেখিত
আয়াতে আল্লাহ শব্দ থেকে আলিফ উহ্য রাখার কারণেআল্লাহ শব্দের সামান্যতম
বিকৃতি ঘটেনি। আল্লাহ শব্দ থেকে আলিফ উহ্য রাখলে শব্দ হলো লিল্লাহ অর্থাৎ
আল্লাহর জন্য বা আল্লাহর । এই লিল্লাহ শব্দ থেকেও যদি একটি পবিত্র কোরআন
মহান আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেছে এভাবে- () আকাশ ও যমীনের ভান্ডারসমূহের চাবি
তাঁরই হাতে নিবদ্ধ, যাকে ইচ্ছা অঢেল রিযিক দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা মেপে
দেন। তিনি সব কিছু জানেন। (সূরা আশ শূরা১২)
এভাবে আল্লাহ শব্দ থেকে আলিফ অক্ষরটি বাদ দেয়া হলো, তারপর দুটো লাম অক্ষরের
প্রথমটি বাদ দেয়া হলো। এবারে দ্বিতীয় লাম অক্ষর টি বাদ দেয়ার পরে থাকে
শুধুমাত্র হা অক্ষর টি ।এই হা অক্ষরের সাথে পেশ যুক্ত করে হু আকারে
উচ্চারিত হয়ে মহান আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেছে। পবিত্র কোরআন এই হু শব্দ দিয়ে
আল্লাহর পরিচয় এভাবে পেশ করছে-() তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেন এবং তিনিই
পুনরায় সৃষ্টি করবেন। আর তিনি ক্ষমাশীল, প্রেমময়,আরশ- অধিপতি, মহান
শ্রেষ্ঠতর। নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী সব কাজ সম্পন্নকারী (সূরা বৃরুজ)
সুতরাং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আল্লাহ নামের কোনভাবেই বিকৃতি ঘটানো
সম্ভব নয়। আল্লাহ শব্দটি আরবী অক্ষরে লিখতে যে কয়টি অক্ষরের প্রয়োজন,এর যে
কোনো একটি অক্ষর ও ছেড়ে দিলেও তা অবিকৃত থাকেএবং সঠিক অর্থ প্রকাশ করে। এ
নামের সাথে কোন কিছুর তুলনা করা যায়না এবং এ নামের কোন ভাষান্তও করাও যায়
না।