আল-কুরআনে ঈমান ও ঈমানদার প্রসঙ্গ


মুহাম্মদ হামিদুল ইসলাম আজাদ


আল্লাহর প্রতি ঈমানের মর্ম হাকীকত
খাঁটি ঈমান- প্রাণের প্রাণ, সুখের প্রান্তর ...............
আল্লাহর প্রতি ঈমান ছাড়া আত্মার প্রশান্তি অর্জন অসম্ভব। আর ঈমানহীন আত্মা সদাসন্ত্রস্ত, হীন দূর্বল থাকে, সে আত্মায় থাকেনা কোন স্থিরতা প্রশান্তি। আল্লাহর প্রতি ঈমান হলো নাজাত মুক্তির মূলমন্ত্র। 'আল্লাহর প্রতি ঈমান' এর অর্থ হলো, এমর্মে দৃঢ় বিশ্বাস করা যে,- আল্লাহই সবকিছুর প্রতিপালক, মালিক স্রষ্টা এবং সালাত, সিয়াম, দু', আশা, ভয়, বিনয় নম্রতাসহ অপরাপর সকল ইবাদতের একক হকদার কেবল তিনিই এবং তিনিই পূর্ণতার সব গুন-বৈশিষ্ট্যে পরিপূর্ণ যাবতীয় ত্রুটি অপূর্ণতা হতে পবিত্র।


ফেরেশতাগন এবং আসমানী কিতাব সমূহ, নাবী-রাসুলগণ এবং পরকাল তাকদীরের প্রতি ঈমান মূলত: আল্লাহর প্রতি ঈমানেরই অধীভুক্ত।
ঈমানদারের জন্য ঈমান হলো ইহলৌকিক জীবনের জান্নাত, আর শেষ পরিণতি ভাল হলে সেটা আল্লাহর ইচ্ছায় পরলৌকিক জীবনের জান্নাত।
আল্লাহর প্রতি ঈমান হলো, ন্যয়বিচার, স্বাধীনতা, জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা, হিদায়াত আত্মার প্রশান্তির জন্য আলোকবর্তিকার মতো।
শরিয়তের পরিভাষায় ঈমান হলো-অন্তর দ্বারা বিশ্বাস, মুখে স্বিকার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারায় আমল করা। আর আমল আনুগাত্য দ্বারা ঈমান বাড়ে এবং গুনাহের মাধ্যমে কমে।
ঈমান হলো আল্লহর নিকট যেকোন আমল কবুলের পূর্বশর্ত। কেননা, আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন: {অতঃপর যে বিশ্বাসী অবস্থায় কর্ম সম্পাদন করে.. } (সুরা: আম্বিয়া, আয়াত: ৯৪)
ঈমানের গুরুত্ব :
সন্দেহ নেই, আল্লাহর নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ সবচে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো ঈমান। আবুযার রা: বর্ণনা একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করেছিলেন,"ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন্ আমলটি সর্বোত্তম? জবাবে তিনি বলেন, আল্লাহর প্রতি ঈমান তাঁর পথে জিহাদ।" (হাদীসটি ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন)
হিদায়াত এবং ইহ পরকালীন সুখ-সৌভাগ্যের কারণ হলো ঈমান। {অতঃপর আল্লাহ যাকে পথ-প্রদর্শন করতে চান, তার বক্ষকে ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দেন } (সুরা: আন"আম, আয়াত: ১২৫)
ঈমানদারকে তার ঈমান আল্লাহর নাফরমানী গুনাহ থেকে বিতর রাখে। {যাদের মনে ভয় রয়েছে, তাদের উপর শয়তানের আগমন ঘটার সাথে সাথেই তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনাশক্তি জাগ্রত হয়ে উঠে।} (সুরা: "রাফ, আয়াত: ২০১)
আমল গ্রহণযোগ্য হওয়ার পূর্বশর্ত ঈমান। আল্লাহ তা"আলা বলেন, {আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের পতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন।} (সুরা: যুমার, আয়াত: ৬৫)
সুতরাং খাঁটি ঈমানের দ্বারা আল্লাহ তা"আলা আমলে বরকত দান করেন এবং দু"আসমূহ কবুল করেন। {আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের পতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন। } (সুরা: যুমার, আয়াত: ৬৫)
সুতরাং খাঁটি ঈমানের দ্বারা আল্লাহ তা"আলা আমলে বরকত দান করেন এবং দু"আসমূহ কবুল করেন।
সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হল ঈমান। ঈমানের বিপরীত কুফর। ঈমান সত্য, কুফর মিথ্যা। ঈমান আলো, কুফর অন্ধকার। ঈমান জীবন, কুফর মৃত্যু। ঈমান পূর্ণ কল্যাণ আর কুফর পূর্ণ অকল্যাণ। ঈমান সরল পথ, আর কুফর ভ্রষ্টতার রাস্তা।
1. ঈমানদারের অভিভাবক হলেন মহান আল্লাহ্‌:
আল্লাহ্ বলেনঃ
যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে। [সুরা বাকারা: ২৫৭]

অন্ধকার মানে মূর্খতা অজ্ঞতার অন্ধকার। যে অন্ধকারে পথ হারিয়ে মানুষ নিজের কল্যাণ সাফল্যের পথ থেকে দূরে সরে যায় এবং সত্যের বিরুদ্ধাচরণ করে নিজের সমস্ত শক্তি প্রচেষ্টাকে ভুল পথে পরিচালিত করে, সেই অন্ধকারের কথা এখানে বলা হয়েছে।

বন্ধুবর্গ সেদিন একে অপরের শত্রু হবে, তবে খোদাভীরুরা নয়। [সুরা যূখরুফ: ৬৭]

হে আমার বান্দাগণ, তোমাদের আজ কোন ভয় নেই এবং তোমরদুঃখিতও হবে না। [সুরা যূখরুফ: ৬৮]

. ঈমানদার কর্মশীলগণ সৃষ্টির সেরা:
আল্লাহ্ বলেনঃ
যারা ঈমান আনে কর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা। [সুরা বাইয়্যেনাহ: ]
. ঈমান অটুট অভঙ্গুর রশিতুল্য অবলম্বন:
আল্লাহ্ বলেনঃ

দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকত  নেই। নিঃসন্দেহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এখন যারা গোমরাহকারী `তাগুত'দেরকে মানবে না এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল যা ভাংবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন। [সুরা বাকারা: ২৫৬]
. ঈমানদারের উচ্চমর্যাদা:

আল্লাহ্ বলেনঃ

আর যারা তাঁর কাছে আসে এমন ঈমানদার হয়ে যায় কর্ম সম্পাদন করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে সুউচ্চ মর্তবা। [সুরা ত্বা-হা: ৭৫]

আল্লাহ্ বলেনঃ

বসবাসের এমন পুষ্পোদ্যান রয়েছে যার তলদেশে দিয়ে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে এটা তাদেরই পুরস্কার, যারা পবিত্র হয়। [সুরা ত্বা-হা: ৭৬]

. ঈমান হশর ময়দানের নূর:
আল্লাহ্ বলেনঃ

যেদিন আপনি দেখবেন ঈমানদার পুরুষ ঈমানদার নারীদেরকে, তাদের সম্মুখ ভাগে ডানপার্শ্বে তাদের জ্যোতি ছুটোছুটি করবে বলা হবেঃ আজ তোমাদের জন্যে সুসংবাদ জান্নাতের, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তাতে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই মহাসাফল্য। [সুরা হাদীদ: ১২]

যেদিন কপট বিশ্বাসী পুরুষ কপট বিশ্বাসিনী নারীরা মুমিনদেরকে বলবেঃ তোমরা আমাদের জন্যে অপেক্ষা কর, আমরাও কিছু আলো নিব তোমাদের জ্যোতি থেকে। বলা হবেঃ তোমরা পিছনে ফিরে যাও আলোর খোঁজ কর। অতঃপর উভয় দলের মাঝখানে খাড়া করা হবে একটি প্রাচীর, যার একটি দরজা হবে। তার অভ্যন্তরে থাকবে রহমত এবং বাইরে থাকবে আযাব। [সুরা হাদীদ: ১৩]

তারা মুমিনদেরকে ডেকে বলবেঃ আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না? তারা বলবেঃ হঁ্যা কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ। প্রতীক্ষা করেছ, সন্দেহ পোষণ করেছ এবং অলীক আশার পেছনে বিভ্রান্ত হয়েছ, অবশেষে আল্লাহর আদেশ পৌঁছেছে। এই সবই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করেছে। [সুরা হাদীদ: ১৪]

অতএব, আজ তোমাদের কাছ থেকে কোন মুক্তিপন গ্রহণ করা হবে না। এবং কাফেরদের কাছ থেকেও নয় তোমাদের সবার আবাস্থল জাহান্নাম। সেটাই তোমাদের সঙ্গী। কতই না নিকৃষ্ট এই প্রত্যাবর্তন স্থল। [সুরা হাদীদ: ১৫]

যারা মুমিন, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবর্তীর্ণ হয়েছে, তার কারণে হৃদয় বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি? তারা তাদের মত যেন না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের উপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী। [সুরা হাদীদ: ১৬]

. ঈমানদার শয়তান হতে সুরক্ষিত:
আল্লাহ্ বলেনঃ

তার আধিপত্য চলে না তাদের উপর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আপন পালন কর্তার উপর ভরসা রাখে। [সুরা নাহল: ৯৯]
. প্রকৃত ইযযত মর্যাদা:
আল্লাহ্ বলেনঃ

মানুষের কাছে কি আশ্চর্য লাগছে যে, আমি ওহী পাঠিয়েছি তাদেরই মধ্য থেকে একজনের কাছে যেন তিনি মানুষকে সতর্ক করেন এবং সুসংবাদ শুনিয়ে দেন ঈমনাদারগণকে যে, তাঁদের জন্য সত্য মর্যাদা রয়েছে তাঁদের পালনকর্তার কাছে। কাফেররা বলতে লাগল, নিঃসন্দেহে লোক প্রকাশ্য যাদুকর। [সুরা ইউনুস: ]

. ঈমান কল্যাণ সমৃদ্ধির অবলম্বনঃ
আল্লাহ্ বলেনঃ

আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে। [সুরা আরাফ: ৯৬]
. ঈমানের প্রতিদান চিরস্থায়ী:
আল্লাহ্ বলেনঃ

তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে তাদের প্রতিদান চিরকাল বসবাসের জান্নাত, যার তলদেশে নির্ঝরিণী প্রবাহিত। তারা সেখানে থাকবে অনন্তকাল। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটা তার জন্যে, যে তার পালনকর্তাকে ভয় কর। [সুরা বাইয়্যেনাহ: ]

১০. ঈমানদারের জন্য মনোমুগ্ধকর হৃদয়গ্রাহী ব্যাবস্থাপনা:
আল্লাহ্ বলেনঃ

তোমরা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস স্থাপন করেছিলে এবং তোমরা আজ্ঞাবহ ছিলে। [সুরা যূখরুফ: ৬৯]

জান্নাতের প্রবেশ কর তোমরা এবং তোমাদের বিবিগণ সানন্দে। [সুরা যূখরুফ: ৭০]

তাদের কাছে পরিবেশন করা হবে স্বর্ণের থালা পানপাত্র এবং তথায় রয়েছে মনে যা চায় এবং নয়ন যাতে তৃপ্ত হয়। তোমরা তথায় চিরকাল অবস্থান করবে। [সুরা যূখরুফ: ৭১]

এই যে, জান্নাতের উত্তরাধিকারী তোমরা হয়েছ, এটা তোমাদের কর্মের ফল। [সুরা যূখরুফ: ৭২]

তথায় তোমাদের জন্যে আছে প্রচুর ফল-মূল, তা থেকে তোমরা আহার করবে। [সুরা যূখরুফ: ৭৩]

নিশ্চয় অপরাধীরা জাহান্নামের আযাবে চিরকাল থাকবে। [সুরা যূখরুফ: ৭৪]

তাদের থেকে আযাব লাঘব করা হবে না এবং তারা তাতেই থাকবে হতাশ হয়ে। [সুরা যূখরুফ: ৭৫]

আমি তাদের প্রতি জুলুম করিনি; কিন্তু তারাই ছিল জালেম। [সুরা যূখরুফ: ৭৬]

তারা ডেকে বলবে, হে মালেক, পালনকর্তা আমাদের কিসসাই শেষ করে দিন। সে বলবে, নিশ্চয় তোমরা চিরকাল থাকবে। [সুরা যূখরুফ: ৭৭]

আমি তোমাদের কাছে সত্যধর্ম পৌঁছিয়েছি; কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই সত্যধর্মে নিস্পৃহ! [সুরা যূখরুফ: ৭৮]

তারা কি কোন ব্যবস্থা চুড়ান্ত করেছে? তাহলে আমিও এক ব্যবস্থা চুড়ান্ত করেছি। [সুরা যূখরুফ: ৭৯]

তারা কি মনে করে যে, আমি তাদের গোপন বিষয় গোপন পরামর্শ শুনি না? হঁ্যা, শুনি। আমার ফেরেশতাগণ তাদের নিকটে থেকে লিপিবদ্ধ করে। [সুরা যূখরুফ: ৮০]
১১. ঈমানবিহীন নেকআমল নিষ্ফল প্রায়াস:
আল্লাহ্ বলেনঃ

বলুনঃ আমি কি তোমাদেরকে সেসব লোকের সংবাদ দেব, যারা কর্মের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। [সুরা কাহফ: ১০৩]

তারাই সে লোক, যাদের প্রচেষ্টা পার্থিবজীবনে বিভ্রান্ত হয়, অথচ তারা মনে করে যে, তারা কর্ম করেছে। [সুরা কাহফ: ১০৪]

তারাই সে লোক, যারা তাদের পালনকর্তার নিদর্শনাবলী এবং তাঁর সাথে সাক্ষাতের বিষয় অস্বীকার করে। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়। সুতরাং কেয়ামতের দিন তাদের জন্য আমি কোন গুরুত্ব স্থির করব না। [সুরা কাহফ: ১০৫]

জাহান্নাম- টাই তাদের প্রতিফল; কারণ, তারা কাফের হয়েছে এবং আমার নিদর্শনাবলী রসূলগণকে বিদ্রূপের বিষয় রূপে গ্রহণ করেছে। [সুরা কাহফ: ১০৬]

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে কর্ম সম্পাদন করে, তাদের অভ্যর্থনার জন্যে আছে জান্নাতুল ফেরদাউস। [সুরা কাহফ: ১০৭]

সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে স্থান পরিবর্তন করতে চাইবে না। [সুরা কাহফ: ১০৮]

১২. ঈমান আখিরাতের কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়:
আল্লাহ্ বলেনঃ

যে ব্যক্তি ইসলামের দিকে আহুত হয়েও আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে; তার চাইতে অধিক যালেম আর কে? আল্লাহ যালেম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। [সুরা সফ: ]

তারা মুখের ফুঁকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে চায়। আল্লাহ তাঁর আলোকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে। [সুরা সফ: ]

তিনি তাঁর রসূলকে পথ নির্দেশ সত্যধর্ম নিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে একে সবধর্মের উপর প্রবল করে দেন যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। [সুরা সফ: ]

মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? [সুরা সফ: ১০]

তা এই যে, তোমরা আল্লাহ তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ জীবনপণ করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ। [সুরা সফ: ১১]

তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জান্নাতে উত্তম বাসগৃহে। এটা মহাসাফল্য। [সুরা সফ: ১২]

এবং আরও একটি অনুগ্রহ দিবেন, যা তোমরা পছন্দ কর। আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়। মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ দান করুন। [সুরা সফ: ১৩]

মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও, যেমন ঈসা ইবনে-মরিয়ম তার শিষ্যবর্গকে বলেছিল, আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে? শিষ্যবর্গ বলেছিলঃ আমরা আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। অতঃপর বনী-ইসরাঈলে একদল বিশ্বাস স্থাপন করল এবং একদল কাফের হয়ে গেল। যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, আমি তাদেরকে তাদের শত্রুদের মোকাবেলায় শক্তি যোগালাম, ফলে তারা বিজয়ী হল। [সুরা সফ: ১৪]

১৩. ঈমান পার্থিব শাস্তি থেকে রক্ষা করে:
আল্লাহ্ বলেনঃ

আর আমার আদেশ যখন উপস্থিত হল, তখন আমি নিজ রহমতে হুদ এবং তাঁর সঙ্গী ঈমানদারগণকে পরিত্রাণ করি এবং তাদেরকে এক কঠিন শাস্তি থেকে রক্ষা করি। [সুরা হুদ: ৫৮]

ছিল আদ জাতি, যারা তাদের পালনকর্তার আয়াতকে অমান্য করেছে, আর তদীয় রসূলগণের অবাধ্যতা করেছে এবং প্রত্যেক উদ্ধত বিরোধীদের আদেশ পালন করেছে। [সুরা হুদ: ৫৯]

দুনিয়ায় তাদের পিছনে পিছনে লা'নত রয়েছে এবং কেয়ামতের দিনেও; জেনে রাখ, আদ জাতি তাদের পালনকর্তাকে অস্বীকার করেছে, হুদের জ্ঞাতি আদ জাতির প্রতি অভিসম্পাত রয়েছে জেনে রাখ। [সুরা হুদ: ৬০]

১৪. আল্লাহর নিয়ামতের প্রকৃত হকদার বা অধিকারী ঈমানদার:
আল্লাহ্ বলেনঃ

আপনি বলুনঃ আল্লাহর সাজ-সজ্জাকে , যা তিনি বান্দাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন এবং পবিত্র খাদ্রবস্তুসমূহকে কে হারাম করেছে? আপনি বলুনঃ এসব নেয়ামত আসলে পার্থিব জীবনে মুমিনদের জন্যে এবং কিয়ামতের দিন খাঁটিভাবে তাদেরই জন্যে। এমনিভাবে আমি আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করি তাদের জন্যে যারা বুঝে। [সুরা আরাফ: ৩২]

আপনি বলে দিনঃ আমার পালনকর্তা কেবলমাত্র অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন যা প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য এবং হারাম করেছেন গোনাহ, অন্যায়-অত্ যাচার আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে অংশীদার করা, তিনি যার কোন, সনদ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা, যা তোমরা জান না। [সুরা আরাফ: ৩৩]

১৫. আল্লাহর অপূর্ব নিদর্শনাবলী থেকে ঈমানদারই উপকৃত হয়:
আল্লাহ্ বলেনঃ

ব্যক্তির চাইতে বড় জালেম কে হবে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা বলেঃ আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয়েছে। অথচ তার প্রতি কোন ওহী আসেনি এবং যে দাবী করে যে, আমিও নাযিল করে দেখাচ্ছি যেমন আল্লাহ নাযিল করেছেন। যদি আপনি দেখেন যখন জালেমরা মৃত্যু যন্ত্রণায় থাকে এবং ফেরেশতারা স্বীয় হস্ত প্রসারিত করে বলে, বের কর স্বীয় আত্মা! অদ্য তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি প্রদান করা হবে। কারণ, তোমরা আল্লাহর উপর অসত্য বলতে এবং তাঁর আয়াত সমূহ থেকে অহংকার করতে। [সুরা আনয়াম: ৯৩]

তোমরা আমার কাছে নিঃসঙ্গ হয়ে এসেছ, আমি প্রথমবার তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম। আমি তোদেরকে যা দিয়েছিলাম, তা পশ্চাতেই রেখে এসেছ। আমি তো তোমাদের সাথে তোমাদের সুপারিশকারীদের কে দেখছি না। যাদের সম্পর্কে তোমাদের দাবী ছিল যে, তারা তোমাদের ব্যাপারে অংশীদার। বাস্তুবিকই তোমাদের পরস্পরের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তোমাদের দাবী উধাও হয়ে গেছে। [সুরা আনয়াম: ৯৪]

নিশ্চয় আল্লাহই বীজ আঁটি থেকে অঙ্কুর সৃষ্টিকারী; তিনি জীবিতকে মৃত থেকে বের করেন মৃতকে জীবিত থেকে বের করেন। তিনি আল্লাহ অতঃপর তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছ? [সুরা আনয়াম: ৯৫]

তিনি প্রভাত রশ্মির উন্মেষক। তিনি রাত্রিকে আরামদায়ক করেছেন এবং সূর্য চন্দ্রকে হিসেবের জন্য রেখেছেন। এটি পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানীর নির্ধারণ। [সুরা আনয়াম: ৯৬]

তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্রপুঞ্জ সৃজন করেছেন যাতে তোমরা স্থল জলের অন্ধকারে পথ প্রাপ্ত হও। নিশ্চয় যারা জ্ঞানী তাদের জন্যে আমি নির্দেশনাবলী বিস্তারিত বর্ণনা করে দিয়েছি। [সুরা আনয়াম: ৯৭]

তিনি তোমাদের কে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অনন্তর একটি হচ্ছে তোমাদের স্থায়ী ঠিকানা একটি হচ্ছে গচ্ছিত স্থল। নিশ্চয় আমি প্রমাণাদি বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি তাদের জন্যে, যারা চিন্তা করে। [সুরা আনয়াম: ৯৮]

তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন অতঃপর আমি এর দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদ পন্ন করেছি, অতঃপর আমি থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ পন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙ্গুরের বাগান, যয়তুন, আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ্য কর যখন সেুগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্কতার প্রতি লক্ষ্য কর। নিশ্চয় গুলোতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদারদের জন্যে। [সুরা আনয়াম: ৯৯]

তারা জিনদেরকে আল্লাহর অংশীদার স্থির করে; অথচ তাদেরকে তিনিই সৃস্টি করেছেন। তারা অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহর জন্যে পুত্র কন্যা সাব্যস্ত করে নিয়েছে। তিনি পবিত্র সমুন্নত, তাদের বর্ননা থেকে। [সুরা আনয়াম: ১০০]

তিনি নভোমন্ডল ভূমন্ডলের আদি স্রষ্টা। কিরূপে আল্লাহর পুত্র হতে পারে, অথচ তাঁর কোন সঙ্গী নেই ? তিনি যাবতীয় কিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনি সব বস্তু সম্পর্কে সুবিজ্ঞ। [সুরা আনয়াম: ১০১]

তিনিই আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনিই সব কিছুর স্রষ্টা। অতএব, তোমরা তাঁরই এবাদত কর। তিনি প্রত্যেক বস্তুর কার্যনির্বাহী। [সুরা আনয়াম: ১০২]

দৃষ্টিসমূহ তাঁকে পেতে পারে না, অবশ্য তিনি দৃষ্টিসমূহকে পেতে পারেন। তিনি অত্যন্ত সুক্ষদর্শী, সুবিজ্ঞ। [সুরা আনয়াম: ১০৩]

তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিদর্শনাবলী এসে গেছে। অতএব, যে প্রত্যক্ষ করবে, সে নিজেরই উপকার করবে এবং যে অন্ধ হবে, সে নিজেরই ক্ষতি করবে। আমি তোমাদের পর্যবেক্ষক নই। [সুরা আনয়াম: ১০৪]

এমনি ভাবে আমি নিদর্শনাবলী ঘুরিয়ে-ফির িয়ে বর্ণনা করি যাতে তারা না বলে যে, আপনি তো পড়ে নিয়েছেন এবং যাতে আমি একে সুধীবৃন্দের জন্যে খুব পরিব্যক্ত করে দেই। [সুরা আনয়াম: ১০৫]

আপনি পথ অনুসরণ করুন, যার আদেশ পালনকর্তার পক্ষ থেকে আসে। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং মুশরিকদের তরফ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন। [সুরা আনয়াম: ১০৬]

যদি আল্লাহ চাইতেন তবে তারা শেরক করত না। আমি আপনাকে তাদের সংরক্ষক করিনি এবং আপনি তাদের কার্যনির্বাহী নন। [সুরা আনয়াম: ১০৭]

১৬. ঈমানদার আলোর মাঝে বেঁচে থাকে:
আল্লাহ্ বলেনঃ

যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে। [সুরা বাকারা: ২৫৭]

১৭. ঈমানদারই আল্লাহকে বেশী ভালোবাসে:
আল্লাহ্ বলেনঃ

আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। আর কতইনা উত্তম ' যদি জালেমরা পার্থিব কোন আযাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি করে নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর আযাবই সবচেয়ে কঠিনতর। [সুরা বাকারা: ১৬৫]
 
মুহাম্মদ হামিদুল ইসলাম আজাদ

দাঈ:বাংলাদেশ ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার


01773268684