প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্ তায়ালার নামে-
[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী (১৯০৯) ও ইমাম মুসলিম (৭৩৮)]
প্রশ্ন : তারাবীর (তারাবি)
নামায কি ১১ রাকাত, নাকি ২০ রাকাত? সুন্নাহ অনুযায়ী তো তারাবীর নামায ১১
রাকাত । শাইখ আলবানী রহিমাহুল্লাহ “আলক্বিয়াম ওয়াত তারাউয়ীহ” বইতে বলেছেন
তারাবী নামায ১১ রাকাত। এখন কিছু মানুষ সেসব মসজিদে নামায পড়েন যেখানে ১১
রাকাত তারাবী পড়া হয়। আবার কিছু মানুষ সেসব মসজিদে নামায পড়েন যেখানে ২০
রাকাত তারাবী পড়া হয়। এখানে যুক্তরাষ্ট্রে এটি একটি সংবেদনশীল মাসয়ালা হয়ে
দাঁড়িয়েছে। যিনি ১১ রাকাত তারাবী পড়েন তিনি ২০ রাকাত সালাত আদায়কারীকে
ভৎর্সনা করেন। আবার যিনি ২০ রাকাত তারাবী পড়েন তিনি ১১ রাকাত সালাত
আদায়কারীকে ভৎর্সনা করেন। এটা নিয়ে একটা ফিতনা (গোলযোগ) সৃষ্টি হয়েছে।
এমনকি মসজিদে হারামেও ২০ রাকাত তারাবী পড়া হয়। তাহলে মসজিদে হারাম ও মসজিদে
নববীতে সুন্নাহর বিপরীত আমল হচ্ছে কেন? কেন তাঁরা মসজিদে হারাম ও মসজিদে
নববীতে ২০ রাকাত তারাবী নামায আদায় করেন?
উত্তর: আলেমদের
ইজতিহাদনির্ভর মাসয়ালাগুলো নিয়ে কোন মুসলিমের সংবেদনশীল আচরণ করাকে আমরা
সমীচীন মনে করি না। যে আচরণের কারণে মুসলমানদের মাঝে বিভেদ ও ফিতনা সৃষ্টি
হয়।
শাইখ ইবনে উছাইমীন রহিমাহুল্লাহকে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়
যিনি ইমামের সাথে ১০ রাকাত তারাবী নামায পড়ে বিতিরের নামাযের অপেক্ষায় বসে
থাকেন, ইমামের সাথে অবশিষ্ট তারাবী নামায পড়েন না, তখন তিনি বলেন:
“এটি খুবই দুঃখজনক যে, আমরা
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে এমন একটি দল দেখি যারা ভিন্ন মতের সুযোগ আছে এমন বিষয়
নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করেন। এই ভিন্ন মতকে তারা অন্তরগুলোর বিচ্ছেদের কারণ
বানিয়ে ফেলেন। সাহাবীদের সময়েও এই উম্মতের মাঝে মতভেদ ছিল, কিন্তু তা
সত্ত্বেও তাঁদের অন্তরগুলো ছিল ঐক্যবদ্ধ। তাই দ্বীনদারদের কর্তব্য,
বিশেষভাবে যুব-সমাজের কর্তব্য হচ্ছে- ঐক্যবদ্ধ থাকা। কারণ শত্রুরা তাদেরকে
নানারকম ফাঁদে ফেলানোর জন্য ওঁত পেতে বসে আছে।”[আশ-শারহুল মুমতি‘ (৪২২৫)]
এই মাসয়ালার ব্যাপারে দুই পক্ষই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে। প্রথম
পক্ষের লোকেরা যারা ১১ রাকাতের বেশি তারাবী পড়েন তাদের আমলকে একেবারে
অস্বীকার করে এ আমলকে বিদআত আখ্যায়িত করেন। আর দ্বিতীয় পক্ষের লোকেরা যারা
শুধু ১১ রাকাতে সীমাবদ্ধ থাকেন তাদের আমলকে অস্বীকার করে বলেন: তারা ইজমা‘
এর খেলাফ করছে।
চলুন আমরা এ ব্যাপারে শাইখ ইবনে উছাইমীন রহিমাহুল্লাহ এর উপদেশ শুনি, বলেন:
“এক্ষেত্রে আমরা বলব: বাড়াবাড়ি বা শিথিলতা কোনটাই উচিত নয়। কেউ কেউ আছেন
সুন্নাহ্ তে বর্ণিত সংখ্যা মানার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করেন এবং বলেন:
সুন্নাহ্ তে যে সংখ্যার বর্ণনা এসেছে তা থেকে বাড়ানো নাজায়েয। যে ব্যক্তি
সে সংখ্যার বেশী তারাবী পড়ে তার কঠোর বিরোধিতা করেন এবং বলেন যে, সে
গুনাহগার ও সীমালঙ্ঘণকারী।
এই দৃষ্টিভঙ্গি যে ভুল এতে কোন সন্দেহ নেই। কিভাবে সে ব্যক্তি গুনাহগার
বা সীমালঙ্ঘণকারী হবে যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাতের
সালাত (কিয়ামুল লাইল) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন:“দুই রাকাত
দুই রাকাত।” তিনি তো কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেননি। এ কথা সবারই জানা আছে
যে,যেই সাহাবী রাতের সালাত সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
কে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি রাতের নামাযের সংখ্যা জানতেন না। কারণ যিনি
সালাতের পদ্ধতিই জানেন না,রাকাত সংখ্যা সম্পর্কে তার না-জানবারই কথা। আর
তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সেবকও ছিলেন না যে আমরা এ
কথা বলব- তিনি রাসূলের বাসার ভিতরের আমল কি সেটা জানতেন। যেহেতু নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই সাহাবীকে কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট করে
দেননি, শুধু সালাতের পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন,এতে জানা গেল যে, এ বিষয়টি
উন্মুক্ত। সুতরাং যে কেউ ইচ্ছা করলে ১০০ রাকাত তারাবীর নামায ও ১ রাকাত
বিতির নামায আদায় করতে পারেন।
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বাণী :
(صلوا كما رأيتموني أصلي)
“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখলে সেভাবে সালাত আদায় কর।” (বুখারী -১ম খণ্ড হা:-৬৩১, আল-মাদানী প্রকাশনী)
এই হাদিসটির বিধান সাধারণ নয়; এমনকি এ মতাবলম্বীদের নিকটও নয়। তাই তো
তারা কোন ব্যক্তির উপর একবার ৫ রাকাত,একবার ৭ রাকাত, অন্যবার ৯ রাকাত বিতির
আদায় করা ওয়াজিব বলেন না। আমরা যদি এ হাদিসকে সাধারণভাবে গ্রহণ করি তাহলে
আমাদেরকে বলতে হবে যে বিতিরের নামায কোনবার ৫ রাকাত,কোনবার ৭ রাকাত এবং
কোনবার ৯ রাকাত আদায় করা ওয়াজিব। বরং “তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে
দেখলে সেভাবে সালাত আদায় কর”-এ হাদিস দ্বারা সালাত আদায়ের পদ্ধতি বুঝানো উদ্দেশ্য; সালাতের রাকাত সংখ্যা নয়। তবে রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট করে এমন অন্য কোন দলীল পাওয়া গেলে সেটা ভিন্ন কথা।
যাই হোক,যে বিষয়ে শরিয়তে প্রশস্ততা আছে সে বিষয়ে কারো উপর চাপ প্রয়োগ
করা উচিত নয়। ব্যাপারটি এ পর্যন্ত গড়িয়েছে যে,আমরা দেখেছি কিছু ভাই এ
বিষয়টি নিয়ে এত বেশি বাড়াবাড়ি করেন যে,যেসব ইমাম ১১ রাকাতের বেশি তারাবী
নামায পড়েন এরা তাদের উপর বিদআতের অপবাদ দেন এবং (১১ রাকাতের পর) মসজিদ
ত্যাগ করেন। এতে করে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বর্ণিত
সওয়াব থেকে বঞ্চিত হন। তিনি বলেছেন:“ইমাম
নামায শেষ করা পর্যন্ত যে ব্যক্তি ইমামের সাথে কিয়ামুল লাইল (রাতের নামায)
পড়বে তার জন্য সম্পূর্ণ রাতে নামায পড়ার সওয়াব লেখা হবে।”
[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন তিরমিযি (৮০৬)এবং ‘সহীহুত তিরমিযি গ্রন্থে (৬৪৬)
আলবানী হাদিসটিকে সহীহ্ আখ্যায়িত করেছেন] এ শ্রেণীর লোকদের মধ্যে অনেকে ১০
রাকাত বিতির আদায় করে বসে থাকে; ফলে কাতার ভঙ্গ হয়। আবার কখনও তারা
কথাবার্তা বলে; যার ফলে মুসল্লিদের সালাতে বিঘ্ন হয়।
আমরা এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করছি না যে তাঁরা ভাল চাচ্ছেন এবং
এক্ষেত্রে তাঁরা মুজতাহিদ; কিন্তু সব মুজতাহিদ সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছেন না।
আর দ্বিতীয় পক্ষটি প্রথম পক্ষের সম্পূর্ণ বিপরীত। যারা ১১ রাকাতের মধ্যে
তারাবীকে সীমাবদ্ধ রাখতে চান এরা তাদের কঠোর বিরোধিতা করেন এবং বলেন যে,
তুমি ইজমা‘ থেকে বের হয়ে গেছ। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:“আর
যে তার কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মু’মিনদের
পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে আমি তাকে সেদিকে পরিচালিত করব যেদিকে সে অভিমুখী
হয় এবং আমি তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর তা কতই না খারাপ
প্রত্যাবর্তন।” [আন-নিসা, ৪:১১৫]
তারা বলেন যে, আপনার আগে যারা অতিবাহিত হয়েছেন তাঁরা শুধু ২৩ রাকাত
তারাবীই জানতেন। এরপর তারা বিপক্ষবাদীদের তীব্র বিরোধিতা শুরু করেন। এটাও
ভুল।[আশশারহুল মুমতি (৩/৭৩-৭৫)]
যারা ৮ রাকাতের বেশি তারাবীর নামায পড়া নাজায়েয মনে করেন তারা যে
দলীল দেন সেটা হলো আবু সালামাহ্ ইবনে আব্দুর রহমান এর হাদিস যাতে তিনি
আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) কে প্রশ্ন করেছিলেন :“রমজানে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সালাত কেমন ছিল?” তিনি বললেন:
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানে বা রমজানের বাইরে ১১
রাকাতের বেশি আদায় করতেন না। তিনি ৪ রাকাত সালাত আদায় করতেন- এর সৌন্দর্য ও
দৈর্ঘ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন না (অর্থাৎ তা এতই সুন্দর ও দীর্ঘ হত)।
এরপর তিনি আরো ৪ রাকাত সালাত আদায় করতেন-এর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে
প্রশ্ন করবেন না (অর্থাৎ তা এতই সুন্দর ও দীর্ঘ হত)। এরপর তিনি ৩ রাকাত
সালাত আদায় করতেন। আমি বলতাম:“ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কি বিতির পড়ার আগে
ঘুমিয়ে যাবেন?” তিনি বলতেন:
“হে আয়েশা! আমার চোখ দুটি ঘুমালেও অন্তর ঘুমায় না।”
তারা বলেন: এই হাদিসটি নির্দেশ করছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম রমজানে ও রমজানের বাইরে রাতের বেলা নিয়মিত এভাবেই সালাত আদায়
করতেন। আলেমগণ এ হাদিস দিয়ে দলীলের বিপক্ষে বলেন যে, এই হাদিসটি রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল সাব্যস্ত করছে। কিন্তু কোন আমল
দ্বারা তো ওয়াজিব সাব্যস্ত করা যায় না।
আর রাতের সালাত (এর মধ্যে তারাবীর নামাযও শামিল) যে কোন সংখ্যার মধ্যে
সুনির্দিষ্ট নয় এ ব্যাপারে বর্ণিত স্পষ্ট দলীলগুলোর মধ্যে একটি হলো ইবনে
উমর (রাঃ) এর হাদিস- “এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে রাতের সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:“রাতের সালাত দুই রাকাত, দুই রাকাত। আপনাদের
মধ্যে কেউ যদি ফজরের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা করেন তবে তিনি যেন আরো এক
রাকাত নামায পড়ে নেন। যাতে করে এ রাকাতটি পূর্বে আদায়কৃত সংখ্যাকে বিতির
(বেজোড়) করে দেয়।”[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন,ইমাম বুখারী (৯৪৬)ও ইমাম মুসলিম
(৭৪৯)]
বিভিন্ন গ্রহণযোগ্য ফিক্বহী মাজহাবের আলেমগণের মতামতের দিকে দৃষ্টি
দিলে পরিষ্কার হয় যে, এ বিষয়ে প্রশস্ততা আছে। ১১ রাকাতের অধিক রাকাত তারাবী
পড়তে দোষের কিছু নেই।
হানাফী মাজহাবের আলেম ইমাম আস্সারখাসী বলেন:
“আমাদের মতে বিতির ছাড়া তারাবী ২০ রাকাত ।”[আল্মাবসুত (২/১৪৫)]
ইবনে ক্বুদামাহ বলেন: “আবু-আবদুল্লাহ অর্থাৎ ইমাম আহমাদ
(রাহিমাহুল্লাহ) এর কাছে পছন্দনীয় মত হলো তারাবী ২০ রাকাত। এই মতে আরো
রয়েছেন ইমাম ছাওরী, ইমাম আবু-হানীফা ও ইমাম শাফেয়ী। আর ইমাম মালেক বলেছেন:
“তারবীহ ৩৬ রাকাত।”[আলমুগনী (১/৪৫৭)]
ইমাম নববী বলেছেন:
“আলেমগণের ইজমা অনুযায়ী তারাবীর সালাত পড়া সুন্নত। আর আমাদের মাজহাব
হচ্ছে- তারাবীর নামায ১০ সালামে ২০ রাকাত। একাকী পড়াও জায়েয, জামাতের সাথে
পড়াও জায়েয।”[আলমাজমূ (৪/৩১)]
এই হচ্ছে তারাবী নামাযের রাকাতের সংখ্যার ব্যাপারে চার মাজহাবের অভিমত। তাঁদের সবাই ১১ রাকাতের বেশী পড়ার ব্যাপারে বলেছেন। সম্ভবত যে কারণে তাঁরা ১১ রাকাতের বেশি পড়ার কথা বলেছেন সেটা হলো:
১.তাঁরা দেখেছেন যে,আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)এর হাদিস নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নির্ধারণ করে না।
২.পূর্ববর্তী সাহাবী ও তাবেয়ীগণের অনেকের কাছ থেকে ১১ রাকাতের বেশি তারাবী পড়ার বর্ণনা পাওয়া যায়। [আল-মুগনী (২/৬০৪)ও আল-মাজমূ (৪/৩২)]
৩.নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ১১ রাকাত সালাত আদায় করতেন তা এত দীর্ঘ
করতেন যে এতে পুরো রাতই লেগে যেত। এমনও ঘটেছে এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে তারাবীর সালাত আদায় করতে করতে
ফজর হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ আগে শেষ করেছিলেন। এমনকি সাহাবীগণ সেহেরী খেতে
না-পারার আশঙ্কা করেছিলেন। সাহাবীগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের পিছনে সালাত আদায় করতে পছন্দ করতেন এবং এটা তাঁদের কাছে দীর্ঘ
মনে হত না। কিন্তু আলেমগণ খেয়াল করলেন ইমাম যদি এভাবে দীর্ঘক্ষণ ধরে সালাত
আদায় করেন তবে মুসল্লিদের জন্য তা কষ্টকর হবে। যা তাদেরকে তারাবীর নামায
থেকে বিমুখ করতে পারে। তাই তাঁরা তেলাওয়াত সংক্ষিপ্ত করে রাকাত সংখ্যা
বাড়ানোর পক্ষে মত দিলেন।
সার কথা হলো- যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত
পদ্ধতিতে ১১ রাকাত সালাত পড়েন সেটা ভাল এবং এতে সুন্নাহ পালন হয়। আর যিনি
তেলাওয়াত সংক্ষিপ্ত করে রাকাতের সংখ্যা বাড়িয়ে পড়েন সেটাও ভাল। যিনি এই
দুইটির কোন একটি করেন তাঁকে নিন্দা করার কিছু নেই।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেছেন:
“যিনি ইমাম আবু হানীফা,শাফেয়ী ও আহমাদের মাজহাব অনুসারে ২০ রাকাত তারাবী
সালাত আদায় করল অথবা ইমাম মালেকের মাজহাব অনুসারে ৩৬ রাকাত তারাবী আদায়
করল অথবা ১৩ বা ১১ রাকাত তারাবী আদায় করল প্রত্যেকেই ভাল আমল করল। এ
ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকার কারণে ইমাম আহমাদ এ মতই পোষণ করতেন।
তাই তেলাওয়াত দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত করার অনুপাত অনুযায়ী রাকাত সংখ্যা বেশি বা
কম হবে।”[আল-ইখতিয়ারাত, পৃষ্ঠা- ৬৪]
আস-সুয়ুতী বলেছেন:
“রমজানে ক্বিয়াম তথা রাতের নামায আদায় করার আদেশ দিয়ে ও এ ব্যাপারে
উৎসাহিত করে অনেক সহীহ ও হাসান হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এক্ষেত্রে কোন সংখ্যাকে
সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ২০ রাকাত
তারাবী পড়েছেন বলে সাব্যস্ত হয়নি। বরং তিনি রাতে সালাত আদায় করেছেন। কিন্তু
কত রাকাত আদায় করেছেন এই সংখ্যা উল্লেখিত হয়নি। এরপর ৪র্থ রাতে দেরি করলেন
এই আশঙ্কায় যে তারাবীর সালাত তাঁদের উপর ফরয করে দেয়া হতে পারে, পরে তাঁর
উম্মত তা পালন করতে অসমর্থ হবেন।”
ইবনে হাজার হাইসামী বলেছেন:
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে তারাবীর সালাত ২০ রাকাত
হওয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায়নি। আর এই ব্যাপারে যা বর্ণিত
হয়েছে- “তিনি ২০ রাকাত সালাত আদায় করতেন; তা অত্যন্ত জয়ীফ
(দুর্বল)।”[আল্মাওসূ‘আহ আল-ফিক্বহিয়্যাহ (২৭/১৪২-১৪৫)]
অতএব প্রশ্নকারী ভাই, আপনি তারাবীর সালাত ২০ রাকাত হওয়ার ব্যাপারে
অবাক হবেন না। কারণ এর আগে ইমামগণ প্রজন্মের পর প্রজন্ম তা পালন করেছেন। আর
তাঁদের সবার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।