ইসলামী বাড়ীর বৈশিষ্ট্য

ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
ভূমিকা :
একজন সত্যিকার মুসলমানের সতত সাধনা থাকে দিন-রাত ইসলামী বিধান মুতাবেক অতিবাহিত করার। তার প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি সেকেন্ড, প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি সময় ইসলামী শিক্ষার  আলোকে  অতিক্রম  করে  এবং  এটা  তার  জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। যাতে দ্বীন ও দুনিয়া সর্বত্র সে কামিয়াবী ও সফলতা লাভ করে এবং সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাতে পারে। গৃহ প্রত্যেক মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নে‘মত। মানুষ সেখানে জীবন যাপন করে এবং পরিবার-পরিজনের সাথে বসবাস করে। তাই মানব জীবনে ঘর-বাড়ীর গুরুত্ব ও উপকারিতা বস্তীবাসী, ফুটপাথ, রাস্তার পার্শ্বে, রেলওয়ে স্টেশনের পার্শ্বে বসবাসকারীদের প্রতি খেয়াল করলে অনুধাবন করা যায়। ঘর থেকেই হেদায়াতের আলোকে মানুষের জীবন আলোকিত হয়। কারণ মুসলমান কিভাবে ঘরে প্রবেশ করবে, কিভাবে ঘর থেকে বের হবে, ঘরে কিভাবে থাকবে, ঘরকে জিনিসপত্র কিভাবে রাখবে এবং ঘরে কি করবে প্রভৃতি বিষয়ের বিশদ বিবরণ রয়েছে কুরআন ও হাদীছে। এজন্য যদি আমরা আমাদের ঘরে ইসলামী শিক্ষা ও বৈশিষ্ট্য দ্বারা সুশোভিত করি তাহ’লে আমাদের এ ঘর আমাদের জন্য সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তায় পরিপূর্ণ হবে এবং সচ্ছলতা আসবে। সেই সাথে আমাদের সন্তানরা সহজেই ইসলামী শিক্ষার উপরে গড়ে উঠবে।

নিম্নে ইসলামী বাড়ী-ঘরের কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হ’ল, যাতে মুসলমান নিজের বাড়ী-ঘরকে ইসলামী গুণাবলী সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পারে। এমনকি তাকে দাওয়াতের কেন্দ্র ও উত্তম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে তৈরী করতে পারে।
১. বাড়ীতে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলা :
বাড়ীতে প্রবেশ ও বের হওয়ার কিছু সুন্নাতী নিয়ম আছে। যা পালন করা হ’লে বাড়ী শয়তানের কবল থেকে হেফাযতে থাকে। দুনিয়াবী বিভিন্ন ফেৎনা-ফাসাদ থেকে মুক্ত থাকে। নানাবিধ অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ فَذَكَرَ اللهَ عِنْدَ دُخُوْلِهِ وَعِنْدَ طَعَامِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ لاَ مَبِيْتَ لَكُمْ وَلاَ عَشَاءَ. وَإِذَا دَخَلَ فَلَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ دُخُوْلِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيْتَ. وَإِذَا لَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ طَعَامِهِ قَالَ أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيْتَ وَالْعَشَاءَ- ‘কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে এবং খাবার গ্রহণকালে আল্লাহর নাম স্মরণ করলে শয়তান (তার সংগীদেরকে) বলে, তোমাদের রাত্রিযাপন এবং রাতের আহারের কোন ব্যবস্থা হ’ল না। কিন্তু কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমরা রাত্রিযাপনের জায়গা পেয়ে গেলে। সে আহারের সময় আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমাদের রাতের আহার ও শয্যা গ্রহণের ব্যবস্থা হয়ে গেলো’।[1]
২. গৃহে প্রবেশকালে সালাম দেওয়া :
সালাম দেওয়া এক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। এজন্য গৃহে প্রবেশকালে প্রবেশকারী সালাম দিবে, যদিও ঐ ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ ঐ ঘরে বসবাস না করে। আল্লাহ বলেন,فَإِذَا دَخَلْتُمْ بُيُوْتًا فَسَلِّمُوْا عَلَى أَنْفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِنْ عِنْدِ اللهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ- ‘অতঃপর যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে তখন পরস্পরে সালাম করবে। এটি আল্লাহর নিকট হ’তে প্রাপ্ত বরকমন্ডিত ও পবিত্র অভিবাদন’ (নূর ২৪/৬১)
অন্যের গৃহে প্রবেশকালেও সালাম দিবে। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُيُوْتًا غَيْرَ بُيُوْتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوْا وَتُسَلِّمُوْا عَلَى أَهْلِهَا ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নিবে এবং এর বাসিন্দাদের সালাম দিবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর’ (নূর ২৪/২৭)
রাসূল (ছাঃ) বলেন,ثَلاثَةٌ كُلُّهُمْ ضَامِنٌ عَلَى اللهِ إِنْ عَاشَ رُزِقَ وَكُفِيَ وَإِنْ مَاتَ أَدْخَلَهُ اللهُ الْجَنَّةَ مَنْ دَخَلَ بَيْتَهُ فَسَلَّمَ فَهُوَ ضَامِنٌ عَلَى اللهِ وَمَنْ خَرَجَ إِلَى الْمَسْجِدِ فَهُوَ ضَامِنٌ عَلَى اللهِ وَمَنْ خَرَجَ فِيْ سَبِيْل الله فَهُوَ ضَامِن على الله. ‘তিন ব্যক্তি আল্লাহর যিম্মায় থাকে। যদি তারা বেঁচে থাকে তাহ’লে রিযিকপ্রাপ্ত হয় এবং তা যথেষ্ট হয়। আর যদি মৃত্যুবরণ করে তাহ’লে জান্নাতে প্রবেশ করে। যে ব্যক্তি বাড়ীতে প্রবেশ করে বাড়ীর লোকজনকে সালাম দেয়, সে আল্লাহর যিম্মায়। যে ব্যক্তি মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয়, সে  আল্লাহর যিম্মায়। যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় বের হয়, সে  আল্লাহর যিম্মায়’।[2]
এমনকি পরিত্যক্ত ঘরে প্রবেশ করলে বলবে,السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ- (আমাদের উপরে ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক)।[3]
৩. গৃহে সুন্নাত ছালাত সমূহ আদায় করা :
সুন্নাত-নফল ছালাত সমূহ ঘরে আদায় করা উত্তম। রাসূল (ছাঃ) বলেন,فَعَلَيْكُمْ بِالصَّلاَةِ فِىْ بُيُوْتِكُمْ فَإِنَّ خَيْرَ صَلاَةِ الْمَرْءِ فِىْ بَيْتِهِ إِلاَّ الصَّلاَةَ الْمَكْتُوْبَةَ. ‘তোমাদের জন্য বাড়ীতে ছালাত আদায় করা যরূরী। কেননা ফরয ছালাত ব্যতীত লোকেরা ঘরে যে ছালাত আদায় করে তাই উত্তম’।[4] অন্যত্র তিনি বলেন,إِذَا قَضَى أَحَدُكُمْ صَلاَتَهُ فَلْيَجْعَلْ لِبَيْتِهِ مِنْهَا نَصِيبًا فَإِنَّ اللهَ جَاعِلٌ فِىْ بَيْتِهِ مِنْ صَلاَتِهِ خَيْرًا. ‘তোমাদের কেউ যখন ছালাত আদায় করে, তখন তার উচিত সে যেন ঘরে কিছু ছালাত আদায় করে। কেননা ঘরে ছালাত আদায়ের ফলে আল্লাহ এতে কল্যাণ দান করেন’।[5]
আব্দুল্লাহ ইবনু সা‘দ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,سَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَيُّمَا أَفْضَلُ الصَّلاَةُ فِى بَيْتِى أَوِ الصَّلاَةُ فِى الْمَسْجِدِ قَالَ أَلاَ تَرَى إِلَى بَيْتِى مَا أَقْرَبَهُ مِنَ الْمَسْجِدِ فَلأَنْ أُصَلِّىَ فِى بَيْتِى أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ أَنْ أُصَلِّىَ فِى الْمَسْجِدِ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ صَلاَةً مَكْتُوبَةً. ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কোনটি উত্তম, আমার ঘরে ছালাত আদায় করা অথবা মসজিদে? তিনি বললেন, তুমি কি দেখ না আমার ঘর মসজিদের কত নিকটে? তা সত্ত্বেও মসজিদে ছালাত আদায় করার চেয়ে ঘরে ছালাত আদায় করা আমার নিকটে অধিক প্রিয়, ফরয ছালাত ব্যতীত’।[6] তিনি আরো বলেন,اجْعَلُوْا فِىْ بُيُوْتِكُمْ مِنْ صَلاَتِكُمْ، وَلاَ تَتَّخِذُوْهَا قُبُوْرًا. ‘তোমাদের ঘরেও কিছু ছালাত আদায় করবে এবং ঘরকে তোমরা করব বানিয়ে নিও না’।[7]
৪. ঘরে ছবি-মূর্তি না ঝুলানো :
ছবি-মূর্তি ইসলামে নিষিদ্ধ। তাই এসব থেকে বাড়ী-ঘর মুক্ত রাখা মুমিনের অন্যতম কর্তব্য। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, বর্তমানে অধিকাংশ মুসলমানের ঘর ছবি-মূর্তিতে ভরপুর থাকে। দেওয়ালে নিজের, মৃত পিতা-মাতার, প্রিয় ব্যক্তিত্বের বা নেতার ছবি ঝুলানো থাকে। কখনোবা নেতার প্রতিকৃতি ও ভাষ্কর্যও শোভা পায় মুসলমানদের ঘরে। কখনও শোভা বর্ধনের নামে বিভিন্ন প্রাণী-মূর্তির শোপিচ সাজানো থাকে শোকেচ, আলমারী ও কর্ণার সেলফে। অথচ এসবের জন্য ইহ-পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ تَدْخُلُ الْمَلاَئِكَةُ بَيْتًا فِيْهِ كَلْبٌ وَلاَ تَصَاوِيْرُ- ‘যে ঘরে কুকুর ও ছবি থাকে সে ঘরে (রহমত ও বরকতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না’।[8]
আয়েশা (রাঃ) বলেন,أَنٌَ النَّبِيَّ لَمْ يَكُنْ يَتْرُكُ فِيْ بَيْتِهِ شَيْئًا فِيْهِ تَصَالِيْبُ إِلاٌَ نَقَضَهُ-  ‘রাসূল (ছাঃ) ছবিপূর্ণ  কোন  কিছু  তাঁর
বাড়ীতে দেখলে তা ছিড়ে বা ভেঙ্গে ফেলতেন’।[9]
তিনি আরো বলেন,قَدِمَ رَسُوْلُ اللهِ مِنْ سَفَرٍ وَقَدْ سَتَرْتُ بِقِرَامٍ لِيْ عَلَى سَهْوَةٍ لِيْ فِيْهَا تَمَاثِيْلُ فَلَمَّا رَآهُ رَسُوْلُ اللهِ هَتَكَهُ وَقَالَ أَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِيْنَ يُضَاهُوْنَ بِخَلْقِِ اللهِ. ‘একদা রাসূল (ছাঃ) সফর হ’তে আসলেন, এমতাবস্থায় আমি একটি ছবিপূর্ণ পর্দা তাকের উপর দিয়ে রেখেছিলাম। রাসূল (ছাঃ) তা দেখে ছিড়ে টুকরা করে দিলেন এবং বললেন, ‘যারা ছবি-মূর্তি অংকন করে ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি হবে’।[10]
অন্যত্র তিনি বলেন,قَدِمَ النَّبِيُّ مِنْ سَفَرٍ وَعَلَّقْتُ دُرْنُوْكًا فِيهِ تَمَاثِيْلُ فَأَمَرَنِيْ أَنْ أَنْزِعَهُ فَنَزَعْتُهُ. ‘একদা রাসূল (ছাঃ) এক সফর থেকে আসলেন, তখন আমি একটি ছবিপূর্ণ পর্দা ঝুলিয়ে রেখেছিলাম। রাসূল (ছাঃ) সেটা সরিয়ে ফেলতে বললেন, আমি তা সরিয়ে দিলাম’।[11]
আয়েশা (রাঃ) একটি ছোট বালিশ ক্রয় করেছিলেন, তাতে ছবি অাঁকা ছিল। রাসূল (ছাঃ) ঘরে প্রবেশের সময় তা দেখতে পেলেন। তিনি ঘরে প্রবেশ না করে দরজায় দাঁড়িয়ে গেলেন। আয়েশা (রাঃ) তাঁর মুখ দেখে বুঝতে পেরে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট তওবা করছি। আমি কি পাপ করেছি? (আপনি ঘরে প্রবেশ করছেন না কেন?)। রাসূল (ছাঃ) বললেন, مَا بَالُ هَذِهِ النُّمْرُقَةِ قُلْتُ اشْتَرَيْتُهَا لَكَ لِتَقْعُدَ عَلَيْهَا وَتَوَسَّدَهَا فَقَالَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ أَصْحَابَ هَذِهِ الصُّوَرِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُعَذَّبُوْنَ فَيُقَالُ لَهُمْ أَحْيُوْا مَا خَلَقْتُمْ وَقَالَ إِنَّ الْبَيْتَ الَّذِيْ فِيْهِ الصُّوَرُ لاَ تَدْخُلُهُ الْمَلاَئِكَةُ. ‘এই ছোট বালিশটি কোথায় পেলে? তিনি বললেন, আমি এটা এজন্য ক্রয় করেছি, যাতে আপনি হেলান দিয়ে বিশ্রাম করতে পারেন। রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘নিশ্চয়ই যারা এই সমস্ত ছবি তোলে বা অংকন করে, ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে এবং বলা হবে, তোমরা যাদের তৈরি করেছ তাদের জীবিত কর। তিনি বললেন, ‘যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে (রহমত ও বরকতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না’।[12]
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘জিবরীল (আঃ) আমার কাছে এসে বললেন, আমি গত রাতে আপনার কাছে এসেছিলাম, কিন্তু আমি ঘরে প্রবেশ করিনি। কারণ গৃহদ্বারে অনেকগুলি ছবি ছিল এবং ঘরের দরজায় একখানা পর্দা টাঙ্গানো ছিল যাতে অনেকগুলি প্রাণীর ছবি ছিল। আর ঘরের অভ্যন্তরে ছিল একটি কুকুর। বস্তুতঃ যে ঘরে এ সমস্ত জিনিস থাকে, আমরা সে ঘরে প্রবেশ করি না। সুতরাং ঐ সমস্ত ছবিগুলির মাথা কেটে ফেলার আদেশ দিন, যা ঘরের দরজায় রয়েছে। তা কাটা হ’লে গাছের আকৃতি হয়ে যাবে এবং পর্দাটি সম্পর্কে আদেশ দিন তাকে কেটে দু’টি গদি তৈরি করা হয়, যা বিছানা এবং পায়ের নিচে থাকবে। আর কুকুরটি সম্পর্কে আদেশ দিন যেন তাকে ঘর থেকে বের করা হয়। সুতরাং রাসূল (ছাঃ) তাই করলেন’।[13] আবু মাসঊদ উক্ববাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত,أَنَّ رَجُلاً صَنَعَ لَهُ طَعَامًا فَدَعَاهُ فَقَالَ أَفِي الْبَيْتِ صُوْرَةٌ؟ قَالَ نَعَمْ فَأَبَى أَنْ يَّدْخُلَ حَتَّى كَسَرَ الصُّوْرَةَ ثُمَّ دَخَلَ. ‘এক লোক তাঁর জন্য খাদ্য তৈরী করল। এরপর তাঁকে দাওয়াত দিল। অতঃপর তিনি বললেন, ঘরে কি ছবি আছে? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি ঘরে প্রবেশ করতে অস্বীকার করলেন, শেষ পর্যন্ত ছবি ভেঙ্গে ফেলা হ’ল। অতঃপর তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন।[14]
৫. বাড়ীতে কুকুর প্রতিপালন না করা :
বাড়ীতে কুকুর প্রতিপালন করা মুসলমানের জন্য বৈধ নয়। আর এজন্য মুসলমানের নেক আমলের ছওয়াব নষ্ট হয়ে যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,لاَ تَدْخُلُ الْمَلاَئِكَةُ بَيْتًا فِيْهِ كَلْبٌ وَلاَ تَصَاوِيْرُ- ‘যে ঘরে কুকুর ও ছবি থাকে সে ঘরে (রহমত ও বরকতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না’।[15] আর কুকুর প্রতিপালনে বহু নেকী হ্রাস পায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ أَمْسَكَ كَلْبًا فَإِنَّهُ يَنْقُصُ كُلَّ يَوْمٍ مِنْ عَمَلِهِ قِيْرَاطٌ، إِلاَّ كَلْبَ حَرْثٍ أَوْ مَاشِيَةٍ ‘যে ব্যক্তি শস্য ক্ষেতের পাহারা কিংবা পশুর হিফাযতের উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে কুকুর পোষে, প্রতিদিন তার নেক আমল হ’তে এক ক্বীরাত পরিমাণ কমতে থাকবে’।[16] অন্য হাদীছে দুই ক্বীরাতের কথা উল্লেখিত হয়েছে।[17] তবে তিনটি কারণে কুকুর পোষা জায়েয। যথা- ১. পশুপাল পাহারা দেওয়া, ২. শস্যক্ষেত পাহারা দেওয়া ও ৩. শিকার করার জন্য।[18]
৬. ক্রুস ও ক্রুসের জন্য ব্যবহৃত হয় এমন কিছু বা অন্য কোন ধর্মের নিদর্শন না রাখা :
মুসলমান স্বীয় দ্বীনের উপরে বেঁচে থাকে। তার সমস্ত হুকুম-আহকাম ও নির্দেশ মোতাবেক তার দিন-রাত অতিবাহিত করে। শরী‘আতে নিষিদ্ধ কোন কাজ সে করে না। এজন্য অন্য কোন ধর্মের প্রতীক দ্বারা সে নিজের গৃহকে সজ্জিত করবে না। বরং সেগুলোকে স্বীয় গৃহ থেকে দূরে রাখবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন,أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم لَمْ يَكُنْ يَتْرُكُ فِى بَيْتِهِ شَيْئًا فِيْهِ تَصَالِيْبُ إِلاَّ نَقَضَهُ  ‘নবী করীম (ছাঃ) নিজের ঘরের এমন কিছুই না ভেঙ্গে ছাড়তেন না, যাতে ক্রুসের চিহ্ন বা ছবি থাকত’।[19] রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,لاَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى يَنْزِلَ فِيْكُمُ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا مُقْسِطًا، فَيَكْسِرَ الصَّلِيْبَ، وَيَقْتُلَ الْخِنْزِيْرَ، وَيَضَعَ الْجِزْيَةَ، وَيَفِيضَ الْمَالُ حَتَّى لاَ يَقْبَلَهُ أَحَدٌ ‘ইবনু মারয়াম [ঈসা (আঃ)] তোমাদের মাঝে ন্যায়বিচারক হয়ে অবতরণ না করা পর্যন্ত কিয়ামত হবে না। তিনি এসে ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং জিযয়া কর তুলে দিবেন। তখন ধন-সম্পদের এত প্রাচুর্য হবে যে, তা গ্রহণ করার মতো কেউ থাকবে না’।[20]
৭. ঘরে চিতাবাঘের চামড়া ঝুলিয়ে বা বিছিয়ে না রাখা :
যেসব জিনিস থেকে ঘরকে মুক্ত রাখা যরূরী তন্মধ্যে চিতাবাঘের চামড়া অন্যতম। মিকদাম ইবনু মা‘দীকারীব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হিংস্র জন্তুর চামড়া ব্যবহার করতে এবং এর চামড়ার তৈরী গদিতে আরোহী হ’তে নিষেধ করেছেন।[21] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَ تَرْكَبُوْا الْخَزَّ وَلاَ النِّمَارَ ‘তোমরা রেশমের এবং চিতা বাঘের তৈরী গদিতে আরোহী হবে না’।[22]
অন্য বর্ণনায় এসেছে,نَهَى عَنْ رُكُوبِ النِّمَارِ وَعَنْ لُبْسِ الذَّهَبِ. ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) চিতাবাঘের চামড়ার গদিতে বসতে এবং স্বর্ণের জিনিস পরিধান করতে নিষেধ করেছেন’।[23] রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,لاَ تَصْحَبُ الْمَلاَئِكَةُ رُفْقَةً فِيْهَا جِلْدُ نَمِرٍ ‘ফেরেশতারা চিতাবাঘের চামড়ার তৈরী আসনে আসিন ব্যক্তির সঙ্গী হয় না’।[24]
৮. ঘর বা অন্যত্র বাদ্যযন্ত্র না রাখা :
বর্তমানে ইসলামী জীবন যাপনে যেসব জিনিস অত্যধিক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে, তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র। সর্বত্র এসবের দৌরাত্ম্য পরিলক্ষিত হয়। আর এসব শোনা ও শুনানোর জন্য বর্তমানে বিভিন্ন উপায়-উপকরণ বের হয়েছে। সেগুলো মানুষ নিজের উপার্জন থেকে সংগ্রহ করছে। বিভিন্ন প্রকার মোবাইল, কম্পিউটার, টেলিভিশন ইত্যাদি ব্যবহার করছে। এসব জিনিস একদিকে মানুষের জীবনযাত্রা অতীব সহজ করে দিয়েছে। অন্যদিকে এসবের অপব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। যা কেউ রোধ করতে পারছে না। অথচ গান-বাজনা পাপের মূল। এর মাধ্যমে অন্তরে মুনাফিকী পয়দা হয় এবং এটা খারাপ কাজ বৃদ্ধির একটি অন্যতম উৎস। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন,الْغِنَاءُ يُنْبِتُ النِّفَاقَ فِي الْقَلْبِ، كَمَا يُنْبِتُ الْمَاءُ الْبَقْلَ، ‘গান-বাজনা অন্তরে নিফাক্বী সৃষ্টি করে যেমন পানি সবজি উৎপাদন করে’।[25]
সুতরাং আমাদের জন্য করণীয় হ’ল আধুনিক এসব আবিষ্কারকে বৈধ কাজে ব্যবহার করা। যেমন মোবাইল ব্যবহার করে আত্মীয়-স্বজনের খবর নেওয়া, কম্পিউটারে বৈধ কাজ করা, টিভিতে ওয়ায-নছীহত শোনা, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখা ও খবর শোনা যেতে পারে। মোটকথা পাপ কাজ ব্যতিরেকে বৈধ কাজে এসব ব্যবহার করা।
৯. গৃহে স্বর্ণ-রূপার থালা ব্যবহার না করা :
স্বর্ণ-রূপার জিনিস যেমন- থালা-বাটি, পেয়ালা বা এ জাতীয় কোন কিছু ব্যবহার করা মুসলমানের জন্য বৈধ নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,الَّذِىْ يَشْرَبُ فِىْ إِنَاءِ الْفِضَّةِ إِنَّمَا يُجَرْجِرُ فِىْ بَطْنِهِ نَارَ جَهَنَّمَ ‘যে ব্যক্তি রৌপ্যের পাত্রে পান করে সে তো তার উদরে জাহান্নামের অগ্নি প্রবিষ্ট করায়’।[26] তিনি আরো বলেন,وَلاَ تَشْرَبُوْا فِىْ آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلاَ تَأْكُلُوْا فِى صِحَافِهَا فَإِنَّهَا لَهُمْ فِى الدُّنْيَا- ‘তোমরা স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পান করবে না। কেননা এগুলো দুনিয়াতে তাদের অর্থাৎ অমুসলিমদের জন্য ভোগ্যবস্ত্ত। আর তোমাদের জন্য হ’ল আখিরাতের ভোগ্যবস্ত্ত’।[27]
১০. গৃহে প্রবেশকালে অনুমতি নেওয়া :
অন্যের গৃহে প্রবেশকালে অনুমতি নেওয়া যরূরী। এমনকি মায়ের ঘরে প্রবেশের পূর্বেও অনুমতি নিতে রাসূল (ছাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন। অনুমতি সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবূ মূসা (রাঃ) ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর কাছে এসে বললেন, আস-সালামূ আলাইকুম আনা (আমি) আবদুল্লাহ ইবনু কায়েস। কিন্তু তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন না। তখন আবার বললেন, আসসালামু আলাইকুম এই যে, আবূ মূসা। আস-সালামু আলাইকুম এই যে আশ‘আরী। এরপর (জবাব না পেয়ে) তিনি ফিরে গেলেন। তখন ওমর (রাঃ) বললেন, তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন। ফিরে এলে তিনি বললেন, কিসে তোমাকে ফিরিয়ে দিল, হে আবূ মূসা? আমরা কোন কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি, অনুমতি চাও তিনবার। এতে তোমাকে অনুমতি দেওয়া হ’লে ভাল, অন্যথা ফিরে যাও’।
ওমর (রাঃ) বললেন, এ বিষয়ে অবশ্যই তুমি আমার কাছে প্রমাণ নিয়ে আসবে। অন্যথা আমি এমন করব তেমন করব, (শাস্তি দিব)। তখন আবূ মূসা (রাঃ) চলে গেলেন। ওমর (রাঃ) বললেন, প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারলে বিকালে তাকে তোমরা মিম্বারের কাছে দেখতে পাবে, আর যদি প্রমাণ না পায় তাহ’লে তোমরা তাকে দেখতে পাবে না।
বিকালে তিনি এলে তারা তাকে (মিম্বারের কাছে দেখতে) পেলেন। ওমর (রাঃ) বললেন, হে আবূ মূসা! কি বলছ? প্রমাণ পেয়েছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ উবাই ইবনু কা‘ব! তিনি বললেন, ইনি বিশ্বস্ত।
(তখন উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বললেন,) হে আবূ তুফায়েল! তিনি কী বললেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে এরূপ বলতে আমি শুনেছি। হে ইবনুল খাত্ত্বাব! আপনি কখনো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণের জন্য আযাব স্বরূপ হয়ে পড়বেন না। তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ! (আমি তা কখনো চাই না)। আমি তো একটি বিষয় শোনার পর সে সম্পর্কে সুনিশ্চিত হওয়া পসন্দ করেছি।[28] তিন বার প্রবেশের অনুমতি চাওয়া যায় যা উপরোক্ত হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয়। এরপর অনুমতি না পেলে ফিরে যেতে হবে। আল্লাহ বলেন,فَإِنْ لَّمْ تَجِدُوْا فِيْهَا أَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوْهَا حَتَّى يُؤْذَنَ لَكُمْ وَإِنْ قِيْلَ لَكُمُ ارْجِعُوْا فَارْجِعُوْا هُوَ أَزْكَى لَكُمْ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ- ‘যদি তোমরা গৃহে কাউকে না পাও, তাহ’লে সেখানে প্রবেশ করো না তোমাদেরকে অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয় ফিরে যাও! তাহ’লে তোমরা ফিরে এসো। এটাই তোমাদের জন্য পবিত্রতর। আর আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সর্বাধিক অবগত’ (নূর ২৪/২৮)
১১. মেহমানদারীর জন্য বাড়ীতে আবশ্যকীয় জিনিস রাখা :
মানুষ থাকলে তার আত্মীয়-স্বজন থাকবে এবং বাড়ীতে মেহমানও আসবে। তাই মেহমানের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহে রাখা যরূরী। রসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,فِرَاشٌ لِلرَّجُلِ وَفِرَاشٌ لاِمْرَأَتِهِ وَالثَّالِثُ لِلضَّيْفِ وَالرَّابِعُ لِلشَّيْطَانِ- ‘একটি শয্যা পুরুষের, দ্বিতীয় শয্যা তার স্ত্রীর, তৃতীয়টি অতিথির জন্য আর চতুর্থটি (যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয়) শয়তানের জন্য’।[29]
এ হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য যরূরী হচ্ছে মেহমানের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস বাড়ীতে সংরক্ষণ করা তাহ’লে মেহমানকে বাড়ী রাখা সম্ভব হবে এবং তার আপ্যায়ন করা সহজ হবে।
১২. পানাহারে অপচয় থেকে বেঁচে থাকা :
অপচয় ও অপব্যয় নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন,وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلاَ تُسْرِفُوْا إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ- ‘তোমরা খাও ও পান কর। কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালবাসেন না’ (আ‘রাফ ৭/৩১)। তিনি আরো বলেন,وَلاَ تُبَذِّرْ تَبْذِيْرًا، إِنَّ الْمُبَذِّرِيْنَ كَانُوْا إِخْوَانَ الشَّيَاطِيْنِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُوْرًا- ‘আর তুমি মোটেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় কৃতজ্ঞ’ (ইসরা ১৭/২৬-২৭)
রাসূল (ছাঃ) বলেন, كُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَتَصَدَّقُوْا وَالْبَسُوْا مَا لَمْ يُخَالِطْهُ إِسْرَافٌ أَوْ مَخِيْلَةٌ- ‘তোমরা পানাহার করো, দান-খয়রাত করো এবং পরিধান করো যতক্ষণ না তার সাথে অপচয় বা অহংকার যুক্ত হয়’।[30] এজন্য মুসলমানের উচিত পানাহারে প্রয়োজন অনুপাতে ব্যয় করা এবং অল্পে তুষ্ট থাকা। আর সার্বিকভাবে অপব্যয় এড়িয়ে চলা। রাসূল (ছাঃ) বলেন,طَعَامُ الْوَاحِدِ يَكْفِى الاِثْنَيْنِ وَطَعَامُ الاِثْنَيْنِ يَكْفِى الأَرْبَعَةَ وَطَعَامُ الأَرْبَعَةِ يَكْفِى الثَّمَانِيَةَ- ‘একজনের খাবার ২ জনের জন্য, ২ জনের খাবার ৪ জনের জন্য এবং ৪ জনের খাবার  ৮ জনের জন্য যথেষ্ট’।[31]
১৩. বসতবাড়ী নির্মাণে প্রতিযোগিতা পরিহার করা :
বাড়ী-ঘর, অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা না করা। জিবরীল (আঃ) ক্বিয়ামতের আলামত সম্পর্কে প্রশ্ন করলে রাসূল (ছাঃ) বলেন,أَنْ تَلِدَ الأَمَةُ رَبَّتَهَا وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُوْنَ فِى الْبُنْيَانِ- ‘দাসী তার মনিবকে জন্ম দেবে (অর্থাৎ সন্তান তার মায়ের নাফরমানী করবে); আর তুমি দেখবে যে, খালি পা ও খালি গায়ের অধিকারী মুখাপেক্ষী রাখাল সম্প্রদায়ের লোকেরা উঁচু-উঁচু প্রাসাদ তৈরী করে গর্ব প্রকাশ করবে’।[32]
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন,مَرَّ بِىْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا أُطَيِّنُ حَائِطًا لِىْ أَنَا وَأُمِّى فَقَالَ مَا هَذَا يَا عَبْدَ اللهِ. فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ شَىْءٌ أُصْلِحُهُ فَقَالَ الأَمْرُ أَسْرَعُ مِنْ ذَاكَ. ‘একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি ও আমর মা তখন আমার একটি দেয়াল মেরামত করছিলাম। তিনি বললেন, হে আব্দুল্লাহ! কি হচ্ছে? আমি বললাম, মেরামত করছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমি দেখছি, নির্দেশ (ক্বিয়ামত বা মৃত্যু)-এর চেয়েও দ্রুত ধাবমান’।[33]
১৪. ঘরে কুরআন তেলাওয়াতের ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া :
বাড়ীতে কুরআন তেলাওয়াত বরকত লাভ এবং শয়তান দূর হওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর উপায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,لاَ تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ مَقَابِرَ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الَّذِىْ تُقْرَأُ فِيْهِ سُوْرَةُ الْبَقَرَةِ- ‘তোমাদের ঘরকে কবর বানিয়ে নিয়ো না। অবশ্যই শয়তান সেই ঘর হ’তে পলায়ন করে যে ঘরে সূরা বাক্বারাহ পাঠ করা হয়’।[34]
১৫. ঘরের ভিতরের সাপ মারার পূর্বে তা তাড়ানোর চেষ্টা করা :
ঘরের সাপ মারার ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া। নবী করীম (ছাঃ) ঘরে বসবাসকারী সাপ হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। ফলে তিনি সাপ মারা বন্ধ করে দেন।[35] অন্যত্র তিনি বলেন,إِنَّ بِالْمَدِيْنَةِ نَفَرًا مِنَ الْجِنِّ قَدْ أَسْلَمُوْا فَمَنْ رَأَى شَيْئًا مِنْ هَذِهِ الْعَوَامِرِ فَلْيُؤْذِنْهُ ثَلاَثًا فَإِنْ بَدَا لَهُ بَعْدُ فَلْيَقْتُلْهُ فَإِنَّهُ شَيْطَانٌ- ‘মদীনায় জ্বিনদের একটি দল রয়েছে, যারা ইসলাম কবুল করেছে। তাই যে ব্যক্তি এসব বাড়ি-ঘরে বসবাসকারী (সাপ ইত্যাদির রূপধারী)-দের কোন কিছু দেখতে পায়, সে যেন তাকে তিনবার সতর্ক সংকেত দেয়। এরপরও যদি তার সামনে তা প্রকাশ পায়, তবে সে যেন তাকে মেরে ফেলে, কেননা সে একটা (অবাধ্য) শয়তান’।[36]
১৬. ঘরে পরপুরুষ ও নারীতে নির্জনে অবস্থান না করা :
ঘরে নির্জনে পরপরুষ ও পরনারীতে একত্রে অবস্থান করা নিষিদ্ধ। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِيَّاكُمْ وَالدُّخُوْلَ عَلَى النِّسَاءِ. فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَفَرَأَيْتَ الْحَمْوَ. قَالَ الْحَمْوُ الْمَوْتُ. ‘মহিলাদের নিকট একাকী যাওয়া থেকে বিরত থাক। এক আনছার ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! দেবরের ব্যাপারে কী হুকুম? তিনি উত্তর দিলেন, দেবর হচ্ছে মৃত্যুতুল্য’।[37] তিনি আরো বলেন,لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلاَّ كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ- ‘একজন স্ত্রীলোকের সাথে একজন পুরুষ একাকী থাকলে তাদের মধ্যে শয়তান তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে যোগ দেয়’।[38]
উপরোক্ত হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, নারীরা ফিৎনা। এজন্য রাসূল (ছাঃ) তাদের সাথে নির্জনে একাকী অবস্থান করতে নিষেধ করেছেন। কেননা এমতাবস্থায় শয়তান তাকে সুশোভিত করে পেশ করে এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করতে যারপর নেই চেষ্টা করে। তাই পরনারীর সাথে একাকী নির্জনে অবস্থান করা সর্বতোভাবে পরিহার করা যরূরী। যাতে শয়তান আমাদেরকে কোনভাবে ভুল পথে পরিচালিত করে পাপে লিপ্ত করতে না পারে।
১৭. ঘর প্রশস্ত করা :
বসবাসের ঘর প্রশস্ত ও বড়সড় হওয়া উচিত। রাসূল (ছাঃ) বলেন,أَرْبَعٌ مِنَ السَّعَادَةِ : الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ، وَالْمَسْكَنُ الْوَاسِعُ، وَالْجَارُ الصَّالِحُ، وَالْمَرْكَبُ الْهَنِيْءُ، ‘সৌভাগ্যের বিষয় চারটি; সতী-সাধবী স্ত্রী, প্রশস্ত বাড়ী, সৎকর্মশীল প্রতিবেশী ও আরামদায়ক বাহন’।[39] এ হাদীছ প্রমাণ করে যে, প্রশস্ত গৃহ সৌভাগ্যের প্রতীক। কারণ তাতে বসবাস করে এবং পরিবারের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও অতি দরকারী জিনিস স্বাচ্ছন্দ্যে রাখা যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,طُوبَى لِمَنْ مَلَكَ لِسَانَهُ، وَوَسِعَهُ بَيْتُهُ، وَبَكَى عَلَى خَطِيئَتِهِ- ‘সুসংবাদ ঐ ব্যক্তির জন্য যে তার জিহবাকে সংযত করতে সক্ষম হয়েছে, বাড়ীকে প্রশস্ত করেছে এবং নিজের পাপের জন্য ক্রন্দন করেছে’।[40]
১৮. শয্যা গ্রহণের সময় দরজা বন্ধ করা, আগুন নিভানো ও খাবার পাত্র ঢেকে রাখা :
ঘুমানোর পূর্বে রাসূল (ছাঃ) কিছু কাজ করতে বলেছেন, প্রত্যেক পরিবারের জন্য তা মেনে চলা যরূরী। কেননা এতে বহু উপকারিতা রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا كَانَ جُنْحُ اللَّيْلِ أَوْ أَمْسَيْتُمْ فَكُفُّوْا صِبْيَانَكُمْ، فَإِنَّ الشَّيَاطِيْنَ تَنْتَشِرُ حِيْنَئِذٍ، فَإِذَا ذَهَبَ سَاعَةٌ مِنَ اللَّيْلِ فَحُلُّوْهُمْ، فَأَغْلِقُوْا الأَبْوَابَ وَاذْكُرُوْا اسْمَ اللهِ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لاَ يَفْتَحُ بَابًا مُغْلَقًا، وَأَوْكُوْا قِرَبَكُمْ وَاذْكُرُوْا اسْمَ اللهِ، وَخَمِّرُوْا آنِيَتَكُمْ وَاذْكُرُوْا اسْمَ اللهِ، وَلَوْ أَنْ تَعْرُضُوْا عَلَيْهَا شَيْئًا وَأَطْفِئُوْا مَصَابِيْحَكُمْ- ‘যখন সন্ধ্যা হয়, তখন তোমাদের সন্তানদের ঘরে আটকে রাখ। কেননা এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতের কিছু অংশ অতিক্রম করলে তখন তাদের ছেড়ে দিতে পার। আর ঘরের দরজা বন্ধ করবে। কেননা শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। আর তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাদের মশকের মুখ বন্ধ করবে এবং আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাদের পাত্রগুলোকে ঢেকে রাখবে, কমপক্ষে পাত্রগুলোর উপর কোন বস্ত্ত আড়াআড়ি করে রেখে দিও। আর (শয্যা গ্রহণের সময়) তোমরা তোমাদের প্রদীপগুলো নিভিয়ে দিবে’।[41]
১৯. বাড়ীকে আল্লাহর যিকরের স্থানে পরিণত করা :
ঘর-বাড়ীকে আল্লাহর যিকরের স্থানে পরিণত করা প্রতিটি মুসলমানের উপরে করণীয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَثَلُ الْبَيْتِ الَّذِىْ يُذْكَرُ اللهُ فِيْهِ وَالْبَيْتِ الَّذِىْ لاَ يُذْكَرُ اللهُ فِيْهِ مَثَلُ الْحَىِّ وَالْمَيِّتِ- ‘যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় আর যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় না এরূপ দু’টি ঘরের তুলনা হচ্ছে জীবিত ও মৃতের সঙ্গে’।[42] তিনি আরো বলেন,مَنْ قَعَدَ مَقْعَدًا لَمْ يَذْكُرِ اللهَ فِيْهِ كَانَتْ عَلَيْهِ مِنَ اللهِ تِرَةً وَمَنِ اضْطَجَعَ مَضْجَعًا لاَ يَذْكُرُ اللهَ فِيْهِ كَانَتْ عَلَيْهِ مِنَ اللهِ تِرَةً- ‘যে ব্যক্তি কোন স্থানে বসলো অথচ আল্লাহকে স্মরণ করলো না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে লাঞ্ছনা। আর যে ব্যক্তি কোথাও শয়ন করার পর আল্লাহর নাম নিলো না তার জন্যও আল্লাহর পক্ষ থেকে লাঞ্ছনা’।[43] উপরোক্ত হাদীছ দ্বারা অনুমিত হয় যে, ঘর-বাড়ীতে থাকাবস্থায় যতটুকু সময় বা ফুসরত পাওয়া সেটুকু আল্লাহর যিকরে ব্যয় করা যরূরী। তাছাড়া প্রতিটি কাজের সাথে সাথে আল্লাহর নাম স্মরণ করা বাঞ্ছনীয়।
উপসংহার :
পরিশেষে বলা যায়, দুনিয়াবী জীবনে বসবাসের জন্য বাড়ী-ঘর এক গুরুত্বপূর্ণ নে‘মত। আল্লাহ বলেন, وَاللهُ جَعَلَ لَكُمْ مِنْ بُيُوْتِكُمْ سَكَنًا- ‘আর আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের গৃহকে করেছেন আবাসস্থল’ (নাহল ১৬/৮০)। এ বাড়ী-ঘরে অবস্থান করা দুনিয়াবী ফিৎনা-ফাসাদ থেকে নিরাপদ থাকার উপায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,سَلَاَمَةُ الرَّجُلِ فِيْ الْفِتْنَةِ أَنْ يَّلْزِمَ بَيْتَهُ- ‘ব্যক্তির নিরাপত্তা হচ্ছে বাড়ীতে বা ঘরে অবস্থান করায়’।[44] বাড়ীতে অবস্থানের ফলে তার থেকে অন্য মানুষ নিরাপদে থাকে এবং সেও শান্তি লাভ করে। তাছাড়া এতে সে আল্লাহর যিম্মায় থাকে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,أَوْ قَعَدَ فِيْ بَيْتِهِ فَيَسْلَمُ النَّاسُ مِنْهُ وَيَسْلَمُ- ‘কিংবা সে তার বাড়ীতে বসে থাকবে তাহ’লে তার থেকে মানুষ নিরাপদে থাকবে এবং সেও নিরাপদে থাকবে’।[45] সুতরাং বাড়ী-ঘরকে ইসলামী গুণাবলী সম্পন্ন করে গড়ে তুলে সেখানে অবস্থান করলে উপরোক্ত ফযীলত লাভ করা যাবে। আল্লাহ আমাদের সকলের বাড়ী-ঘরকে ইসলামী বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করার তাওফীক দিন-আমীন!

[1]. মুসলিম হা/২০১৮; আবু দাউদ হা/৩৭৬৫; মিশকাত হা/৪১৬১।
[2]. ছহীহ ইবুন হিববান হা/৪৯৯; আবু দাউদ হা/২৪৯৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/৩২১, সনদ ছহীহ।
[3]. মুওয়াত্ত্বা হা/৩৫৩৫; আদাবুল মুফরাদ হা/১০৫৫, সনদ হাসান।
[4]. বুখারী হা/৭৩১; মুসলিম হা/৭৮০।
[5]. ইবনু মাজাহ হা/১৩৭৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৩৯২।
[6]. ইবনু মাজাহ হা/১৩৭৮; ছহীহ আত-তারগীব হা/৪৩৯।
[7]. বুখারী হা/৪৩২, ১১৮৭; আবু দাউদ হা/১০৪৩, ১৪৪৮; তিরমিযী হা/৪১৫; ইবনু মাজাহ হা/১১৪১; মিশকাত হা/৭১৪।
[8]. বুখারী হা/৩২২৫, ৩৩২২; মুসলিম হা/২১০৬; মিশকাত হা/৪৪৮৯।
[9]. বুখারী হা/৫৯৫২।
[10]. বুখারী হা/৫৯৫৪।
[11]. বুখারী হা/৫৯৫৫।
[12]. বুখারী হা/৫৯৬১।
[13]. তিরমিযী হা/২৮০৬; মিশকাত হা/৪৫০২, সনদ ছহীহ।
[14]. আলবানী, আদাবুয যিফাফ পৃঃ ১৬৫।
[15]. বুখারী হা/৪০০২, ৫৯৪৯; মুসলিম হা/২১০৬; মিশকাত হা/৪৪৮৯ ‘পোষাক’ অধ্যায়।
[16]. বুখারী হা/২৩২২, ৩৩২৪; মুসলিম হা/১৫৭৫; আহমাদ ৯৪৯৮।
[17]. বুখারী হা/৫৪৮০-৮২; মুসলিম হা/১৫৭৪-৭৫।
[18]. নাসাঈ হা/৪২৯০-৯১, সনদ ছহীহ।
[19]. বুখারী হা/৫৯৫২; মিশকাত হা/৪৪৯১।
[20]. বুখারী হা/২৪৭৬; মুসলিম হা/১৫৫; মিশকাত হা/৫৫০৫।
[21]. আবু দাউদ হা/৪১৩১।
[22]. আবু দাউদ হা/৪১২৯, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৪৩৫৭।
[23]. আবু দাউদ হা/৪২৩৯, সনদ ছহীহ।
[24]. আবু দাউদ হা/৪১৩০, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৩৯২৪।
[25]. আবু দাউদ হা/৪৯২৭; মাওকূফ হিসাবে ছহীহ। দ্র. ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং ২৮৩০২১।
[26]. বুখারী হা/৫৬৩৪; মুসলিম হা/২০৬৫; মিশকাত হা/৪২৭১।
[27]. মুসলিম হা/২০৬৭।
[28]. মুসলিম হা/২১৫৪।
[29]. মুসলিম হা/২০৮৪; আবু দাউদ হা/৪১৪২; মিশকাত হা/৪৩১০।
[30]. ইবনু মাজাহ হা/৩৬০৫; মিশকাত হা/৪৩৮১, সনদ হাসান।
[31]. মুসলিম হা/২০৫৯; ইবনু মাজাহ হা/৩২৫৪; মিশকাত হা/৪১৭৮।
[32]. মুসলিম হা/৮; মিশকাত হা/২।
[33]. আবু দাউদ হা/৫২৩৫; মিশকাত হা/৫২৭৫, সনদ ছহীহ।
[34]. মুসলিম হা/৭৮০।
[35]. বুখারী হা/৩৩১২-১৩।
[36]. মুসলিম হা/২২৩৬; আবু দাউদ হা/৫২৫৬, ৫২৫৮।
[37]. বুখারী হা/৫২৩২; মুসলিম হা/২১৭২; মিশকাত হা/৩১০২।
[38]. তিরমিযী হা/১১৭১; মিশকাত হা/৩১১৮, সনদ ছহীহ।
[39]. ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫৭৬; ছহীহাহ হা/২৮২।
[40]. ত্বাবারাণী, আল-আওসাত্ব; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৮৫৫।
[41]. বুখারী হা/৫৬২৩; মুসলিম হা/২০১২; মিশকাত হা/৪২৯৪।
[42]. মুসলিম হা/৭৭৯।
[43]. আবু দাউদ হা/৪৮৫৬; নাসাঈ হা/৬৮৮; মিশকাত হা/২২৭২; ছহীহুল জামে‘ হা/৬১৩০।
[44]. ছহীহুল জামে‘ হা/৩৬৪৯।
[45]. আহমাদ হা/২২১৪৬; ছহীহ আত-তারগীব হা/১২৬৮।