বুস্তানুল মুহাদ্দিসীন ডাউনলোড

লেখকের নামঃ শাহ আব্দুল আযীয বিন অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী।

লেখক পরিচিতিঃ সম্মানিত লেখক ১১৫৯ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১২৩৯ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি এমন এক সময় ভারত উপমহাদেশের আকাশে উদিত হন যখন ভারত উপমহাদেশের মুসলমানগণ ইংরেজদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে মুক্তির পথ খুজছিল।
মহান আল্লাহ হয়তো মুক্তির পথ বাতলে দেয়ার জন্যই এই মহান মানবকে দুনিয়াতে পাঠান। তাইতো তিনিই সাইয়েদ আহমাদ ব্রেলভীকে ইংরেজ বিরোধী আমীর নিযুক্ত করে শাহ ইসমাঈল শহীদকে তার আনুগত্য করার জন্য বলেন। তিনি অল্প বয়সেই পবিত্র কুরআন হিফজ করেন। নিজ পিতা শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভীর নিকট থেকে মৌলিক জ্ঞান হাসিল করেন।



সম্পূর্ণ মিশকাতুল মাসাবীহ ও ছহীহ বুখারীর প্রথম থেকে নিয়ে কিতাবুল হজ্জ পর্যন্ত তিনি তার পিতার নিকট পড়েন। এর মধ্যেই তার পিতার মৃত্যু ঘটে তাই তিনি তার পিতার বিশেষ ছাত্রদের নিকট থেকে ইলম হাসিল করতে থাকেন। নিজস্ব স্মৃতি শক্তির দক্ষতা ও পরিশ্রমের বদৌলতে তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে দারস প্রদানের যোগ্যতা লাভ করেন। ১৫ থেকে নিয়ে ২৫ বছর পর্যন্ত তিনি অত্যন্ত সুন্দর ভাবে দারস দিয়ে আসছিলেন। স্বল্প সময়ের মধ্যেই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ২৫ বছর বয়সে তিনি বিভিন্ন রোগে অক্রান্ত হয়ে পড়েন । ঐতিহাসিকগণের মতে প্রায় ১৪ টি রোগে। তাই নিয়মিত দারস প্রদান তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন তিনি ফতওয়া লিখা, কিতাব প্রণয়ন এবং সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিনে দারস দেওয়া শুরু করেন। তার বিখ্যাত ছাত্রদের অন্যতম হচ্ছেন। তার নিজ ভাই আব্দুল কাদির, আব্দুল গণি ও রফিউদ্দীন এছাড়া তার ভ্রাতুষ্পুত্র শাহ ইসমাঈল (আল্লাহ তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন) ।
গ্রন্থাবলীঃ
১. ফাতহুল আযীযঃ কুরআনের তাফসীর। তিনি ফারসীতে লিখেছিলেন। অনেক সুক্ষ্ম ইলমী আলোচনায় ভরপুর ছিল কিতাবটি। ভারত স্বাধীন হওয়ার সময় হিন্দু মুসলিম দাঙ্গায় এর অনেকাংশ হারিয়ে যায়। এখন দুই খন্ড প্রকাশিত রয়েছে।
২. আল ফাতাওয়া ফিল মাসায়িল আল মুশকিলা – এটি তার ফাতাওয়া সংকলন।
৩. তুহফা ইছনা আশারিয়া – শিয়া ফিরকা ইছনা আশারাদের বিরুদ্ধে লেখা দুনিয়ার বেনজীর বই।
৪. আল উজালা আন নাফিয়া – উসুলে হাদীছের উপর লেখা চমৎকার বই।

বুস্তানুল মুহাদ্দিছীন পরিচিতিঃ
নামঃ বুস্তানুল মুহাদ্দিছীন ফি বায়ানি কুতুবিল হাদীছ ওয়া আসহাবিহাল গুররিল মায়ামিন। নামের অর্থঃ হাদীছের কিতাবসমূহ ও তার মহান সম্মানিত লেখকগণের পরিচয়ে লিখিত মুহাদ্দিছগণের বাগান।
বৈশিষ্ট্যঃ
ক. প্রসিদ্ধ প্রায় সকল হাদীছগ্রন্থের পরিচয় বর্ণনা করেছেন।
খ. আলোচিত প্রতিটি হাদীছ গ্রন্থের লেখকগণের পরিচয়ও বর্ণনা করেছেন।
গ. ইলমে হাদীছের প্রতিটি ছাত্র যারা হাদীছ ও মুহাদ্দিছগণ সর্ম্পকে প্রাথমিক ধারণা লাভ করতে চান তাদের দাবী পুরণে বইটি শতভাগ সফল।
ঘ. প্রতিটি বইয়ের পরিচয় দিতে গিয়ে বইয়ে কি আলোচনা করা হয়েছে? কিভাবে বইটি সাজানো হয়েছে ? বইটির কোন তাহকীক বা ব্যাখ্যা আছে কিনা ? সবই বর্ণনা করেছেন।
ঙ. লেখকগণের বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তাদের গ্রহণীয় ও অগ্রহণীয় হওয়ার বিষয়ে মুহাদ্দিছগণের মন্তব্য পেশ করেছেন।
চ. কোন বই যদি লেখক থেকে প্রমাণিত না হয় কিন্তু লেখকের নামেই সমাজে প্রসিদ্ধ তাহলে তিনি তা বর্ণনা করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন, ‘ইমাম আবু হানীফার নামে প্রচলিত মুসনাদে আবি হানিফা কিতাবটি আবু হানিফা (রহঃ)-এর কিতাব নয়’।
ছ. বইয়ের মান নির্ণয় করেছেন। তখা বইটি কেমন ? বইয়ের কোথাও ভুল আছে কিনা ? ইত্যাদী বিষয় বর্ণনা করেছেন।
যে সমস্ত বইয়ের উপর আলোচনা রয়েছেঃ চার ইমামের লিখিত কিতাব এবং কুতুবে সিত্তাহ সহ প্রায় ৯০ টি হাদীছ গ্রন্থ ও তার লেখকগণের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে অত্র বইয়ে।
তার বইয়ের প্রতি কিছু অভিযোগঃ ১. তিনি বইটি সুন্দর ভাবে সাজাতে পারেন নি। যে আলোচনাকে যেখানে করা উচিত ছিল সেই ভাবে করতে পারেননি। ২. মুসনাদে আহমাদের উপর কিছু অভিযোগ আরোপ করেছেন। তার কথার সারর্মম হচ্ছে, ‘ ইমাম আহমাদ মুসনাদে আহমাদের জন্য হাদীছ জমা করা শেষ করেছিলেন কিন্তু দ্বিতীয়বার দেখা, যাচাই বাছাই করা এবং সাজানোর সুযোগ পান নি। পরবর্তীতে তার ছেলে বইটি সাজায় এবং তাতে অনেক ভুল করে সিরিয়ানদের হাদীছকে মাদানীদের হাদীছের সাথে সংমিশ্রণ ঘটিয়ে ফেলেন’। নাছিরুদ্দীন আলবানী রহঃ এর ‘আয যাব’ নামে একটি গ্রন্থ রয়েছে যাতে তিনি মুসনাদে আহমাদের উপর করা সকল অভিযোগের জবাব দিয়েছেন।
তার বইয়ের উপর কাজঃ ডঃ মুহাম্মাদ আকরাম নাদভী বইটির ফারসী থেকে আরবীতে অনুবাদ করেছেন। সাথে সাথে বইটিকে সাজানো প্রতিটি হাদীছ ও কুরআনের আয়াতের হাওয়ালা এবং টীকা লাগানোর চেষ্টা করেছেন। শায়খ আবুল হাসান আলী হাসান নাদভী আরবী অনুবাদটির ভূমিকা লিখে দিয়েছেন।
শেষ কথাঃ প্রতিটি কাজের ভুল ত্রুটি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের উচিত উপকারিতাকে প্রাধান্য দেয়া। সেই দৃষ্টিকোন থেকে বইটি ইলমে হাদীছের ছাত্রদের জন্য অসাধারণ উপকারী।
ডাউনলোড:

বইয়ের রিভিউ ও লেখকের বর্ণনা : আবদুল্লাহ বিন আবদুর রাযযাক