খ্রিস্টান ধর্মের মিথ্যাচার (১ম পর্ব)

ঈসা মাসীহের ধর্মে মিথ্যার অনুপ্রবেশ: ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহঃ
 সম্পাদনাঃ মুহাম্মদ হামিদুল ইসলাম আজাদ


খৃস্টধর্মে মিথ্যার অনুপ্রবেশের বড় প্রমাণ ২৫শে ডিসেম্বরকে বড়দিন (ক্রিসমাস: Christmas) বা ঈসা মাসীহের জন্মদিন বলে বিশ্বাস, প্রচার ও উদযাপন করা। অথচ ঈসা মাসীহ ২৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেছেন- কথাটি যেমন শতভাগ অসত্য, তেমনি এ দিবসটি পালন করা ঈসা মাসীহের শিক্ষা- এ কথাও শতভাগ অসত্য। এ দুটি মহা অসত্য-ই এখন “ঈসায়ী তরীকা”-য় পরিণত হয়েছে।
খৃস্টধর্মের সর্বোচ্চ গুরূ পোপ বেনিডিক্ট ১৬ (Benedict XVI) স্বয়ং Jesus of Nazareth: The Infance Narratives নামে একটি পুস্তক রচনা করেছেন, যাতে তিনি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, ২৫ শে ডিসেম্বর ঈসা মাসীহের জন্মদিন হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। পাঠক ইন্টারনেটে পোপের নাম বা বইটির নাম দিয়ে সার্চ করলেই বইটি পেয়ে যাবেন।
এ মিথ্যার সাথে সংযুক্ত হয়েছে “বিদআত” বা উদ্ভাবন। ঈসা মাসীহের জন্ম যে দিনই হোক না কেন, দিনটি উদযাপন করার কোনোরূপ  নির্দেশনা ইঞ্জিলে নেই। খৃস্টান গবেষকগণ একমত যে, যীশুর পরের ৩০০ বৎসর পর্যন্ত কোনো খৃস্টান কখনোই যীশুর জন্মদিন পালন করেন নি। ঈসা মাসীহ নিজে এবং পরবর্তী ৩০০ বৎসরের খৃস্টানরা যা পালন করলেন না সেটিকে “ঈসায়ী তরীকা” বা “খৃস্টধর্ম”  নামে প্রতিষ্ঠা করা হলো। মাইক্রোসফট এনকার্টায় ক্রিসমাস আর্টিকেলের বক্তব্য: Historians are unsure exactly when Christians first began celebrating the Nativity of Christ. However, most scholars believe that Christmas originated in the 4th century as a Christian substitute for pagan celebrations of the winter solstice.
“ঠিক কবে থেকে যীশুর জন্মদিন উদযাপনের জন্য খৃস্টানগণ ক্রিসমাস পালন শুরূ করেন সে বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ নিশ্চিত নন। তবে অধিকাংশ গবেষক বিশ্বাস করেন যে, পৌত্তলিক শীতকালীন উত্তরায়ণ উৎসবের বিকল্প হিসেবে ৪র্থ শতকে ক্রিসমাস পালনের আয়োজন করা  হয়।”
পাঠক যে কোনো ইনসাইক্লোপিডিয়া বা ইন্টারনেটে (Origin of Christmass) বা ক্রিসমাসের উৎপত্তি বিষয়ে পাঠ করলে দেখবেন যে, মূলত রোমান-গ্রীকদের দলে ভেড়ানোর জন্যই খৃস্টান ধর্মগুরূগণ এ উৎসবটির উদ্ভাবন করেন। গ্রীক-রোমান পৌত্তলিক ধর্মের অনুসারীরা ডিসেম্বরের শেষে ফসলের দেবতা (Saturn) এবং আলোর দেবতা (Mithra)-এর পূজা উপলক্ষ্যে ব্যাপক উৎসব করত। পাদরিগণ পৌত্তলিকদেরকে ধর্মে ভেড়ানোর জন্য এ সময়ে ক্রিসমাস উৎসব চালু করেন। তারা বলতে চান, আমরাও তো তোমাদের মতই একই ধর্মের মানুষ এবং একই উৎসব করি। যেমন মুসলিমদেরকে তারা বলেন: ‘আমরাও মুসলিম, ঈসায়ী মুসলিম!
বড়দিনের আরেকটি জালিয়াতি “সান্তা ক্লজ” (Santa Claus)। সারা বিশ্বে খৃস্টানগণ বিশ্বাস ও প্রচার করেন যে, ক্রিসমাস-রাত্রিতে সান্তা ক্লজ প্রত্যেক খৃস্টান বাড়িতে যেয়ে ক্রিসমাসের দোয়া-উপহার রেখে আসেন। বিশেষত “ভাল” ছেলেমেয়েদের পায়ের মোজার মধ্যে উপহার রেখে আসেন! যুগযুগ ধরে এ মিথ্যাটি খৃস্টানগণ জেনেশুনেই বলেন। এ পুরো কাহিনীই বানোয়াট।
সম্মানিত পাঠক, ঈসায়ী প্রচারককে বলুন: যে মিথ্যা কথাটি ব্যবসা, সমাজ বা রাজনীতিতে বললে ফৌজদারি অপরাধ ও শাস্তি হতো, তার চেয়েও ভয়ঙ্কর মিথ্যা আপনারা ধর্মের নামে বলছেন!! আপনি যে ‘কিতাবুল মোকাদ্দস’ প্রচার করছেন সে গ্রন্থেও তো মিথ্যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে: “তোমরা চুরি করিও না এবং আপন আপন স্বজাতীয়কে বঞ্চনা করিও না, ও মিথ্যা বলিও না।” (লেবীয় ১৯/১১)। আপনার ইঞ্জিলের শেষ বইয়েও বলা হয়েছে যে, মিথ্যার শাস্তি অনন্ত জাহান্নাম: “কিন্তু জ্বলন্ত আগুন ও গন্ধকের হ্রদের মধ্যে থাকাই হবে ভীতু, বেঈমান, ঘৃণার যোগ্য, খুনী, জেনাকারী, জাদুকর, মূর্তিপূজাকারী এবং সব মিথ্যাবাদীদের  শেষ দশা। এটাই হল দ্বিতীয় মৃত্যু।” (প্রকাশিত বাক্য/ কালাম ২১/৮)। আসুন না আমার সত্য বলি!


উৎসঃ কিতাবুল মোকাদ্দস, ইঞ্জিল শরীফ ও ঈসায়ী ধর্ম , লেখকঃ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহঃ 

চলবে ইনশা আল্লাহ ..............