মুহাম্মদ সাঃ এর চারিত্রিক গুণাবলী !

মুহাম্মদ সাঃ এর চারিত্রিক গুণাবলী !
মুহাম্মদ হামিদুল ইসলাম আজাদ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি পরিপূর্ণতার গুণাবলী দ্বারা অনুগ্রহ করেছেন এবং তাদের একের উপর অন্যের মর্যাদাকে সমুন্নত করেছেন; যাতে তাদেরকে পরীক্ষা করা যায় সেসব বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে, যা থেকে তাদেরকে দেয়া হয়েছে; আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই,
তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, তার রয়েছে বিরাট রাজত্ব, আর তিনি সুউচ্চ; আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্াহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, যাঁকে প্রেরণ করা হয়েছে সর্বোত্তম চরিত্র ও সুন্দর কর্মের পরিপূর্ণতা বিধান করার জন্য; রাত-দিন আল্লাহ রহমত ও শাস্তি বর্ষণ করুন তাঁর প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রতি, তাঁর সাহাবীগণের প্রতি এবং তাঁদের সর্বোত্তম অনুসরণকারী তাবেয়ীগণের প্রতি ...।
অতঃপর: আল্লাহ তাআলা মহান রিসালাতের দায়িত্ব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অর্পণ করেছেন; আল্লাহ তাআলা বলেছেন: আল্লাহ তাঁর রিসালাত কোথায় অর্পণ করবেন তা তিনিই ভাল জানেন।- [আল-আনআম: ১২৪]
তিনি তা এমন এক ব্যক্তির নিকট অর্পণ করেছেন, যাঁকে তিনি সৃষ্টিগত, চরিত্রগত । ও আকৃতি-প্রকৃতিগতভাবে পূর্ণতা দান করেছেন, যাতে তিনি এই মহান রিসালাতের দায়িত্ব বহন করতে পারেন; সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টিগত ও চরিত্রগতভাবে সবচেয়ে পরিপূর্ণ মানুষ ছিলেন।

 মুহাম্মদ সাঃ-এর চারিত্রিক গুণাবলী
 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সুমহান, পূর্ণ ও শ্রেষ্ঠতর চরিত্রে সুসজ্জিত, সবদিকে অতুলনীয়। মহান আল্লাহ বলেন: "এবং নিশ্চয় তুমি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত"। (সূরা কালাম :৪)
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উৎকৃষ্ট চরিত্রের কতিপয় দিক্তবিশেষত: তাঁর শিষ্টাচার সম্পর্কে নিম্নে আলোকপাত করছি, যাতে আমরা তা অনুকরণ করতে পারি, আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারি, মুসলিম ভাইদেরকে এর প্রতি আহ্বান করতে পারি। মহান আল্লাহ বলেন: যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মাঝে উত্তম নমুনা রয়েছে। (সূরা আহযাব: ২১)
সহীহ হাদিসে আছে- সবচেয়ে সুন্দর চরিত্রবান ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা পূর্ণ ঈমানদার। (তিরমিজী: ২৫৩৭)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম আরো বলেন: "তোমাদের মাঝ থেকে সবচেয়ে বেশি চরিত্রবান ব্যক্তিই আমার নিকট অধিক প্রিয় এবং কেয়ামত দিবসে সর্বাপেক্ষা আমার অধিক নিকটে উপবেশনকারী। (তিরমিজী: ১৯৪১)
মুহাম্মদ সাঃ এর কতিপয় চরিত্র নিম্নে উল্লেখ করা হল

তাকওয়া ও আল্লাহর ভীতি: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাপেক্ষা তাকওয়া অবলম্বনকারী ছিলেন। গোপনে ও প্রকাশ্যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ সম্পর্কে আমি তোমাদের চেয়ে বেশি অবগত এবং আল্লাহকে আমি তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি।" স্বয়ং সাহাবায়ে কেরাম একথার সমর্থনে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আব্দুল্লাহ বিন উমর রা: বলেন: আমরা গণনা করে দেখতাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মজলিসে একশত বার নিম্নের দুআটি পড়তেন: "হে আমার রব, তুমি আমাকে ক্ষমা কর, এবং আমার তাওবা কবুল কর, নিশ্চয় তুমি তাওবা কবুলকারী, দয়াশীল।"
নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় রবের অনুগত ছিলেন। তিনি মেনে চলতেন তার আদেশ-নিষেধ। আমলে সালেহ বেশি করতেন। আয়েশা রা: নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবস্থার বিবরণ দিয়ে বলেন: নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমল ছিল ধারাবাহিক। তিনি যা পারতেন তোমাদের কেউ কি তা পারবে? তিনি সিয়াম পালন করতেন এমনকি আমরা বলতাম তিনি এর ধারাবাহিকতা আর পরিত্যাগ করবেন না। তিনি সিয়াম পালন বাদ দিতেন এমনকি আমরা বলতাম তিনি আর সিয়াম পালন করবেন না। তুমি তাঁকে রাত্রে সালাতরত অবস্থায় দেখতে না চাইলেও সালাতরত অবস্থায় তাঁকে দেখতে পাবে। তুমি তাঁকে রাত্রে ঘুমন্তাবস্থায় দেখতে না চাইলেও ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁকে দেখতে পাবে। তিরমিজী: ৭০০
আউফ বিন মালেক রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: "এক রজনিতে রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম-এর সাথে ছিলাম, তিনি মিসওয়াক করলেন, অতঃপর ওজু করলেন, এরপর দাঁড়িয়ে সালাত আরম্ভ করলেন, আমি ও তাঁর সাথে দাঁড়ালাম, তিনি সূরা বাকারা পড়া শুরু করলেন, দয়া সংবলিত আয়াত পড়া মাত্র থেমে প্রার্থনা করলেন। শাস্তির অর্থ সংবলিত আয়াত পড়া মাত্র থেমে মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইলেন। অতঃপর দাঁড়ানোর পরিমাণ রুকতে অবস্থান করলেন, এবং পড়তে লাগলেন: মহা প্রতাপশালী, সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, রাজত্ব ও মহত্ত্বের অধিকারী সত্তার পবিত্রতা ও মহিমা ও ঘোষণা করছি।" অতঃপর সেজদা করলেন, এবং অনুরূপ পড়লেন, এরপর আলে-ইমরান পড়লেন। অতঃপর একেকটি সূরা পড়তেন থেমে । নাসায়ি: ১১২০
আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত আদায় করতেন দাঁড়িয়ে আদায় করতেন এমনকি তাঁর উভয় পা ফেটে যেত, আমি বললাম্তহে রাসূলুলাহ! কেন আপনি এমন করছেন অথচ আপনার পূর্বের ও পশ্চাতের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে? জওয়াবে তিনি বললেন,"হে আয়েশা আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না? (আহমদ: ২৩৭০০)

দানশীলতা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দানশীলতা, উদারতা ও বদান্যতায় ছিলেন সর্বোচ্চ উদাহরণ। জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন " রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু চাওয়া হলে তিনি না বলতেন না। "আনাছ বিন মালেক রা: বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কিছু চাওয়া হলে তিনি দিয়ে দিতেন। এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট চাইল, তিনি তাকে দুই পাল ছাগলের মধ্য থেকে এক পাল দিয়ে দিলেন, সে লোক নিজ গোত্রে এসে বলল, হে গোত্রের লোকেরা! তোমরা মুসলমান হয়ে যাও, কেননা "মোহাম্মদ এমন ব্যক্তির ন্যায় দান করে যে দারিদ্র্যের ভয় করে না" মুসলিম: ৪২৭৫
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বদান্যতার ব্যাপারে আব্বাস রা: উক্তিই যথেষ্ট। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মাঝে অধিকতর দানশীল। তিনি রমজান মাসে অধিক দান করতেন যখন জিবরাইল তাঁর নিকট ওহি নিয়ে আসতেন, তাঁকে কোরআন শিক্ষা দিতেন। নিঃসন্দেহে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুক্ত বায়ুর চেয়ে অধিক দানশীল ছিলেন। বুখারী: ৩২৯০
(মুক্ত বায়ুর তুলনায় রাসূলের দানশীলতা অধিক এ তুলনার মর্মার্থ হচ্ছে, বায়ু মুক্ত হলেও তার যেমন কিছু কিছু দৌর্বল্য থাক্তেযেমন সে পৌঁছতে পারে না আবদ্ধ ঘওে রাসূলের দানশীলতার তেমন কোন দৌর্বল্য নেই। তার দানশীলতা পৌঁছে যেত সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে।)

নিজের উপর অপরকে প্রাধান্য দিতেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের উপর অপরকে প্রাধান্য দিতেন । ফলে তিনি দান করে দিতেন, অথচ তাঁর উপর একমাস বা দুইমাস অতিবাহিত হয়েযেত, তাঁর ঘরে আগুন জ্বলত না । উরওয়ার. থেকে বর্ণিত, তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলতেন: “আল্লাহর কসম! হে আমার বোনের ছেলে! আমরা (মাসের) নতুন চাঁদ দেখতাম, অতঃপর আবার নতুন চাঁদ দেখতাম, তারপর আবার নতুন চাঁদ দেখতাম; অর্থাৎ দুই মাসে তিনটি নতুন চাঁদ দেখতাম। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো ঘরেই আগুন জ্বালানো হতো না। তিনি (উরওয়ার.) বলেন: আমি জিজ্ঞাসা করলাম: হে খালা! আপনারা তা হলে কিভাবে বেঁচে থাকতেন? তিনি বললেন: দুটি কালো জিনিস: খেজুর ও পানি; তবে কয়েক ঘর আনসার পরিবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিবেশী ছিল; তাঁদের কিছু দুধালো উটনী ও বকরী ছিল। তাঁরা হাদিয়া হিসাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য দুধ পাঠাতেন; আর তিনি আমাদেরকে তা পান করতে দিতেন। [মুসলিম, আস-সহীহ: যুহুদ, হাদিস নং- ২৯৭২, ৪ / ২২৮৩]
জনৈক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে একটি ঝালরসহ বোনা চাদর হাদিয়া (উপহার) স্বরূপ দান করলেন এবং বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমি এটি আপনাকে পরিধানের জন্য দিলাম; আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাদরখানা এমনভাবে গ্রহণ করলেন, যেন তাঁর এটির দরকার ছিল। এরপর তিনি এটি পরিধান করলেন। তারপর সাহাবীদের মধ্য থেকে একজন সেটি তাঁর দেহে দেখে আবেদন করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা কতই না সুন্দর! আপনি এটি আমাকে দিয়ে দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওযাসাল্লাম বললেন: হ্যাঁ (দিয়ে দেব)। অতঃপর যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে চলে গেলেন, তখন অন্যান্য সাহাবীগণ তাঁকে দোষারোপ করে বললেন: তুমি ভাল কাজ কর নি। যখন তুমি দেখলে যে, তিনি চাদরখানা এমনভাবে গ্রহণ করেছেন, যেন এটি তাঁর প্রয়োজন ছিল; এরপরও তুমি সেটা চেয়ে বসলে; অথচ তুমি অবশ্যই জান যে, তাঁর কাছে যখনই কোন জিনিস চাওয়া হয়, তখন তিনি কাউকে বিমুখ করেন না। তখন সেই ব্যক্তি বলল: যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি পরিধান করেছেন, তখন তাঁর বরকত হাসিল করার আশায়ই আমি এই কাজ করেছি, যেন আমি এ চাদরটাকে আমার কাফন বানাতে পারি। সহীহ বুখারী, আস-সহীহ: আদব / ৩৯, ৭ / ৮২

সহনশীলতা: সহনশীলতায় ও ক্রোধ-সংবরণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বোচ্চ আদর্শ। কখনো তাঁর পক্ষ হতে মন্দ কথন ও কর্ম প্রকাশ পায়নি, নির্যাতন-অবিচারের শিকার হলেও কখনো প্রতিশোধ নেননি। কখনো কোন সেবক বা স্ত্রীকে প্রহার করেননি। আয়েশা রা: বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নিষিদ্ধ সীমা-রেখা লঙ্ঘন না হল্তেকখনো নিজের প্রতি জুলুম-নির্যাতনের কোন প্রতিশোধ নিতে আমি দেখিনি। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা ব্যতীত তিনি কখনো কোন কিছুকে স্বীয় হস্ত দ্বারা প্রহার করেননি। এবং তিনি কখনো কোন সেবক বা স্ত্রীকে প্রহার করেননি। মুসলিম: ৪২৯৬
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহনশীলতার সমর্থনে কয়েকটি ঘটনা নিম্নে উল্লেখ করা হল উহুদ যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখমন্ডল আঘাত প্রাপ্ত হল, কয়েকটি দাঁত ভেঙে গেল, মাথায় পরিধেয় শিরস্ত্রাণ খন্ড-বিখন্ড হল, তারপরেও তিনি কোরাইশদের বিরুদ্ধে বদ-দোআ করেননি। বরং তিনি বলেছেন, হে আল্লাহ! আমার জাতিকে ক্ষমা কর, কেননা তারা জানে না। মুসলিম: ৪২১৮
জনৈক বেদুইন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাদর শক্তভাবে টান দিলে তাঁর গলায় দাগ হয়ে গেল। তিনি বললেন: "আল্লাহর যে সব মাল তোমার কাছে আছে আমার এই দু'উটের উপর আমার জন্য তা তুলে দাও। কেননা তুমি আমার জন্য তোমার সম্পদ ও তোমার পিতা-মাতার সম্পদ তুলে দেবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে আচরণে সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, তিনি শুধু বললেন: "মাল হচ্ছে আল্লাহর, আমি তাঁর বান্দা। হে বেদুইন! তোমার কাছ থেকে আমার সাথে কৃত অনাচারের কেসাস নেয়া হবে।" বেদুইন বলল: নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ললাম বললেন: কেন? সে বলল: 'কেননা, তুমি তো খারাপের প্রতিশোধ খারাপ দিয়ে নাও না।' একথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসলেন, এবং এক উটের উপর গম অন্য উটের উপর খেজুর বহন করে দেয়ার আদেশ প্রদান করলেন।'

ক্ষমা প্রদর্শন: প্রতিশোধ নেয়ার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সীমা-লঙ্ঘন কারীকে মার্জনা করা একটি উদার ও মহৎ গুণ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত আল্লাহর আদেশ মান্য করত: এ-গুণে সর্বাপেক্ষা গুণান্বিত ছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: "তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন কর, সৎ কর্মের আদেশ দাও অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চলো। (সুরা আ'রাফ: ১১৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ক্ষমা প্রদর্শনের অনেক ঘটনাবলির বিবরণ বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত আছে, নীচে দু'টি উলেখ করা হল। ততিনি যখন মক্কা বিজয় করলেন, কোরাইশের বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিবর্গকে তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় নতশীরে উপবিষ্ট পেলেন। তিনি তাদেরকে বললেন: হে কোরাইশগণ! তোমাদের সাথে এখন আমার আচরণের ধরন সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কি? তারা বলল: আপনি উদার মনস্ক ভাই ও উদার মনস্ক ভাইয়ের ছেলে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: 'যাও, তোমরা মুক্ত।' তিনি তাঁর ও সাহাবায়ে কেরামের বিরুদ্ধে ঘটানো সমস্ত অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দিলেন।
রাসূলকে হত্যার উদ্দেশ্যে এক লোক আসল, কিন্তু তা ফাঁস হয়ে গেল। সাহাবিগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! এই লোক আপনাকে হত্যা করার মনস্থ করেছে, এ-কথা শুনে লোকটি ভীত হয়ে অস্থির হয়ে পড়ল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ভয় করো না, ভয় করো না, যদিও তুমি আমাকে হত্যা করার ইচ্ছা করেছ কিন্তু তুমি আমাকে হত্যা করতে পারবে না।
কেননা আল্লাহ তাআলা তাঁকে অবহিত করেছেন যে, তিনি তাঁকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ক্ষমা করে দিলেন অথচ সে তাঁকে হত্যা করার মনস্থ করেছিল।

সাহসিকতা: সাহসিকতা, নির্ভীকতা, যথা-সময়ে উদ্যোগ গ্রহণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিশেষ গুণ ছিল। তাঁর সাহিসকতা বড় বড় বীরদের নিকট অবিসংবাদিতভাবে স্বীকৃত। আলি ইবনে আবু তালিব রা: বলতেন: যুদ্ধ যখন প্রচন্ড রূপ নিত, প্রবলভাবে ক্রোধান্বিত হওয়ার ফলে চোখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করত তখন আমরা (তীর-তরবারির আঘাত থেকে বাঁচার জন্য) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রক্ষা-কবচ হিসেবে গ্রহণ করতাম। ইমরান ইবনে হাছিন র: বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন বাহিনীর মুখোমুখী হলে প্রথম আঘাতকারী হতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহসিকতার একটি নমুনা নীচে উল্লেখ করা হল।
এক রাত্রে মদিনার এক প্রান্ত কারো চিৎকারের আওয়ায শুনা গেল। কিছু মানুষ আওয়াজের দিকে অগ্রসর হলো, কিন্তু দেখা গেল রাসূলুল্লাহ সা. একাই আওয়াজের উৎসস্থলে তাদের আগে গিয়ে পৌঁছলেন বরঞ্চ তিনি যখন অবস্থা দেখে ফিরছিলেন তখন তাদের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হলো। তিনি ছিলেন আবু তালহার অসজ্জিত ঘোড়ার উপরে। তরবারি ছিল তাঁর স্কন্ধে। আবু তালহা বলতে লাগলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বাপেক্ষা সুন্দর, সর্বাপেক্ষা দানশীল, সর্বাপেক্ষা সাহসী। বুখারী:২৬০৮

ধৈর্যধারণ: আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করা ও আত্মঃসংবরণশীল হওয়া এক মহৎ গুণ। ধৈর্যের মহত্ত্বতার দিকে লক্ষ্য রেখে আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ প্রদান করে বলেন, অতএব, তুমি ধৈর্যধারণ কর, যেমন ধৈর্যধারণ করেছেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ রাসূলগণ। (সুরা আহকাফ: ৩৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর আদেশ যথাযথভাবে পালন করেছেন, এমনকি ধৈর্যধারণ তাঁর অনন্য ও সুমহান চরিত্রে মূর্ত-মান হয়েছে। তিনি রেসালতের দায়িত্ব পালনের স্বার্থে দাওয়াতের কণ্টকাকীর্ণ পথে দীর্ঘ তেইশ বছর ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। নানা প্রতিকূলতার মুখাপেক্ষী হওয়া সত্ত্বেও তিনি বিচলিত কিংবা রাগের বশবর্তী হননি। যেমন কোরাইশ কর্তৃক তাঁকে প্রহার, তাঁর পিঠের উপর উটের নাড়িভুঁড়ি তুলে দেয়া, আবু তালেব উপত্যকায় তিন বছর পর্যন্ত তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখা ; তাঁর প্রতি অধিকাংশ লোকের বৈরী আচরণ; জাদুকর, গণক ও পাগল্তইত্যাদি অবমাননামূলক উপাধি দ্বারা আখ্যা দেয়া, হিজরতের রাতে হত্যার প্রয়াস, মদিনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবিদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়ার লক্ষ্যে কোরাইশের সৈন্য-প্রস্তুতি, মদিনায় তাঁর বিরুদ্ধে ইহুদিদের ষড়যন্ত্র, পরস্পর সম্পাদিত চুক্তি ইহুদি কর্তৃক ভঙ্গ, রাসূলকে হত্যার জন্য ইহুদিদের চেষ্টা ও তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্তরের মানুষকে সংগঠিত করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এবং তাঁর সাহাবিগণ, ও পরিবার-বর্গ আহারের ক্ষেত্রেও ধৈর্যধারণ করেছেন। এমনকি রাসুল সাঃ কখনো একদিনে দু'বেলা যবের রুটি পেট ভরে খেতে পারেননি। এমন হত যে, দুই তিন মাস অতিবাহিত হত, অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘরে চুলায় আগুন জ্বলত না। অধিকাংশ সময় তাদের খাবার থাকতো খেজুর আর পানি।
ন্যায় পরায়ণতা: ন্যায় পরায়ণতা এক উৎকৃষ্ট মানবীয় চরিত্র ও অত্যবশ্যকীয় বিশেষ গুণ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ-গুণে গুণান্বিত ছিলেন। এ-সম্পর্কে অনেক ঘটনাবলি বর্ণিত হয়েছে। নীচে প্রসিদ্ধ কয়েকটি উল্লেখ করা হল।
মাখযুমিয়্যাহ যখন চুরি করল, সে অভিজাত পরিবারের সদস্য হওয়ায় কিছু সাহাবায়ে কেরামের নিকট তার উপর হাত কর্তনের মত দন্ড-বিধি বাস্তবায়ন করা কঠিন মনে হল। এমনকি উসামা বিন যায়েদ তাদের প্রতিনিধি হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে তার ব্যাপারে সুপারিশ করলেন। জওয়াবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে উসামা! তুমি কি আল্লাহ কর্তৃক অবধারিত দন্ড-বিধি মওকুফের ব্যাপারে সুপারিশ করছ? আলাহর কসম! মুহাম্মদের মেয়ে ফাতেমাও যদি চুরি করে অবশ্যই আমি তার হাত কেটে দেব। মুসলিম: ৩১৯৬
তবদর প্রান্তে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হস্তে বিদ্যমান লাঠি দ্বারা সৈন্যদের কাতার সুবিন্যস্ত করেন, এ-সময়, ছাওয়াদ বিন গাজিয়াহ কাতারের বাহিরে থাকার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পেটে লাঠি দ্বারা খোঁচা মেরে বললেন: হে ছাওয়াদ, সোজা হয়ে দাঁড়াও। সে বলল: হে আল্লাহর রাসূল আপনি আমাকে কষ্ট দিয়েছেন অথচ আল্লাহ আপনাকে হক ও ইনসাফ সহকারে প্রেরণ করেছেন। আপনি আমাকে আপনার কাছ থেকে কিসাস্ (প্রতিশোধ) নেয়ার সুযোগ করে দিন। এ-কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্তুষ্ট চিত্তে নিজের পেট খুলে দিলেন এবং বললেন : হে ছাওয়াদ ! তুমি আমার কাছ থেকে কিসাস নিয়ে নাও। কিন্তু ছাওয়াদ তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন এবং তাঁর পেটে চুমু খেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে ছাওয়াদ তুমি এ-রকম কেন করলে? উত্তরে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যা দেখছেন (যুদ্ধ) তা একেবারে সন্নিকটে, অতএব, আমার ইচ্ছা হচ্ছে, আমার চামড়া আপনার চামড়ার সাথে স্পর্শ হওয়া যেন আপনার সাথে শেষ মিলন হয়। এ কথা শ্রবণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কল্যাণের দোয়া করলেন।
আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব বদর যুদ্ধে বন্দী হয়েছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচা হওয়ার সুবাদে আনসারগণ বিনা মুক্তিপণে ছেড়ে দেওয়ার আবেদন করলেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না, তার জন্য এক দিরহামও ছাড় দিয়ো না। এ-দ্বারা রাসূলের লক্ষ্য হচ্ছে, যাতে সবার সাথে সমান আচরণ হয়, কোনভাবেই স্বজনপ্রীতি প্রকাশ না পায়।

বাকরীতি: তিনি হাসিমুখে বিশুদ্ধ, মার্জিত ও সুন্দরভাবে কথা বলতেন। যা দ্রুত শ্রোতাকে আকৃষ্ট করত। আর একেই লোকেরা জাদু বলত। তাঁর উন্নত ও শুদ্ধভাষিতায় মুগ্ধ হয়েই ইয়ামনের যেমাদ আযদী মুসলমান হয়ে যান। মুসলিম হা/৮৬৮ (৪৬); মিশকাত হা/৫৮৬০।
নিরক্ষর হওয়া সত্ত্বেও তিনি ছিলেন আরব ও অনারবের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ভাষাবিদ। (মুক্বাদ্দামা ফাৎহুল মুলহিম শারহু মুসলিম ১৬ পৃঃ।)
এমনকি হাদীস জাল হওয়ার অন্যতম নিদর্শন হল তার শব্দসমূহের উচ্চ মানবিশিষ্ট না হওয়া (ফাৎহুল মুগীছ)। একারণেই আরবী সাহিত্যে কুরআন ও হাদীসের প্রভাব সবার উপরে। বরং বাস্তব কথা এই যে, এই ভাষার বুকে কুরআন ও হাদীসের অবস্থানের কারণেই তা বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আর কুরআন ও হাদীসের সর্বোচ্চ বাকরীতি ও আলংকরিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই আরবী ভাষা ও সাহিত্য সর্বোচ্চ মর্যাদায় আসীন হতে পেরেছে এবং ক্রোমোন্নতির দিকে এগিয়ে চলেছে। অথচ হিব্রু, খালেদী, ল্যাটিন, সংস্কৃত প্রভৃতি পৃথিবীর প্রাচীন ভাষা সমূহ বিলুপ্ত হয়ে গেছে অথবা বিলুপ্তির পথে।

ক্রোধ দমন শৈলী: ক্রোধ দমনের এক অপূর্ব ক্ষমতা ছিল তাঁর মধ্যে। তিনি বলতেন, প্রকৃত বীর সেই, যে ক্রোধের সময় নিজেকে দমন করতে পারে। বুখারী হা/৬১১৪; মুসলিম হা/২৬০৯ (১০৭); মিশকাত হা/৫১০৫ শিষ্টাচার অধ্যায় ২০ অনুচ্ছেদ।
আয়েশা (রাঃ) বলেন, তিনি কখনো কাউকে নিজের স্বার্থে নিজ হাতে মারেননি। কোন মহিলা বা খাদেমকে কখনো প্রহার করেননি। মুসলিম হা/২৩২৮ (৭৯); মিশকাত হা/৫৮১৮।

হাসি-কান্না: তিনি মৃদু হাস্য করতেন। কখনোই অট্টহাস্য করতেন না। সদা প্রফুল্ল থাকতেন। কখনোই গোমড়ামুখো থাকতেন না। তবে দুশ্চিন্তায় পড়লে তার ছাপ চেহারায় পড়ত এবং তখন তিনি সালাতে রত হতেন। আবুদাঊদ হা/১৩১৯; সহীহুল জামে হা/৪৭০৩; মিশকাত হা/১৩২৫।
ছোটখাট হালকা রসিকতা করতেন। যেমন,
(ক) একদিন স্ত্রী আয়েশার নিকটে এসে তার এক বৃদ্ধা খালা রাসূল সাঃ-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য আল্লাহর নিকটে দোআ করুন যেন তিনি আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। জবাবে রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, হে অমুকের মা! কোন বৃদ্ধা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। একথা শুনে উক্ত মহিলা কাঁদতে শুরু করল। তখন আয়েশা বললেন, তাদের কি দোষ? জবাবে রাসূল সাঃ বললেন, তুমি কি কুরআনে পড়োনি যে আল্লাহ বলেছেন, আমরা জান্নাতী নারীদের বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদের চিরকুমারী করেছি। সদা সোহাগিনী, সমবয়স্কা। ডান সারির লোকদের জন্য (ওয়াক্বিআহ ৫৬/৩৫-৩৮)। ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা ওয়াক্বিআহ ৩৫-৩৮ আয়াত; রাযীন, মিশকাত হা/৪৮৮৮, সনদ সহীহ শিষ্টাচার সমূহ অধ্যায় ঠাট্টা করা অনুচ্ছেদ।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, জান্নাতবাসী নারী-পুরুষ সবাই ৩০ থেকে ৩৩ বছর বয়সী হবে। তিরমিযী হা/২৫৪৫; আহমাদ হা/২২১৫৯; সহীহাহ হা/২৯৮৭; মিশকাত হা/৫৬৩৯।
(খ) এক সফরে তিনি দেখেন যে, মহিলাদের নিয়ে তাঁর কৃষ্ণকায় উষ্ট্রচালক গোলাম আনজাশাহ দ্রুত গতিতে উট হাঁকিয়ে চলেছে। তখন রাসূল (সাঃ) তাকে বললেন, ধীরে চালাও হে আনজাশা! কাঁচের পাত্রগুলি ভেঙ্গে ফেল না। বুখারী হা/৬২১১; মুসলিম হা/২৩২৩; মিশকাত হা/৪৮০৬।
(গ) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) আমাদের সঙ্গে মিশতেন। এমনকি আমার ছোট ভাই আবু ওমায়ের একটি নুগায়ের অর্থাৎ লাল ঠোট ওয়ালা চড়–ই জাতীয় পাখি পুষত। যা নিয়ে সে খেলা করত। রাসূল (সাঃ) যখন এসে তাকে খেলতে দেখতেন, তখন বলতেন, হে আবু ওমায়ের! কি করছে তোমার নুগায়ের? বুখারী হা/৬১২৯; মুসলিম হা/২১৫০ (৩০); মিশকাত হা/৪৮৮৪ ‘ঠাট্টা করা অনুচ্ছেদ।
সালাতের মধ্যে বিশেষ করে তাহাজ্জুদের সালাতে তিনি আল্লাহর ভয়ে কাঁদতেন। অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেখলে তার অন্তর কেঁদে উঠতো এবং তার অভাব দূরীকরণে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। চাচা হামযা, কন্যা যয়নব ও পুত্র ইবরাহীমের মৃত্যুতে তিনি শিশুর মত হুহু করে কেঁদেছিলেন। তিনি অন্যের মুখে কুরআন শুনতে পসন্দ করতেন। একবার ইবনু মাসঊদের মুখে সূরা নিসা শুনে তাঁর চোখ বেয়ে অবিরল ধারে অশ্রু প্রবাহিত হয়। অতঃপর ৪১ আয়াতে পৌঁছলে তিনি তাকে থামতে বলেন। বুখারী হা/৫০৫০; মুসলিম হা/৮০০; মিশকাত হা/২১৯৫।

বীরত্ব ও ধৈর্যশীলতা: কঠিন বিপদের মধ্যেও তিনি দৃঢ় হিমাদ্রির ন্যায় ধৈর্যশীল থাকতেন। মাক্কী জীবনের আতংকময় পরিবেশে এবং মাদানী জীবনের প্রতি মুহূর্তে জীবনের হুমকির মধ্যেও তাঁকে কখনো ভীত-বিহ্বল ও অধৈর্য হতে দেখা যায়নি। হযরত আলী রাঃ বলেন, ঘনঘোর যুদ্ধের বিভীষিকার মধ্যে আমরা রাসূল সাঃ-এর পিছনে গিয়ে আশ্রয় নিতাম। তিনিই সর্বদা শত্রুর নিকটবর্তী থাকতেন (আহমাদ হা/৬৫৪, সনদ ছহীহ)। শত্রুর ভয়ে যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাবার কোন ঘটনা তাঁর জীবনে নেই। অভাবে-অনটনে, দুঃখে-বেদনায়, সর্বাবস্থায় তিনি কঠিন ধৈর্য অবলম্বন করতেন। এমনকি তিনদিন না খেয়ে পেটে পাথর বেঁধে সৈন্যদের সাথে অবর্ণনীয় কষ্টে খন্দক খোঁড়ার কাজে অংশ নিলেও চেহারায় তার প্রকাশ ঘটতো না। বরং সৈন্যদের সাথে আখেরাতের কবিতা পাঠের মধ্য দিয়েই খুশীমনে নিজ হাতে খন্দক খুঁড়েছেন। শত্রুদের শত্রুতা যতই বৃদ্ধি পেত তাঁর ধৈর্যশীলতা ততই বেড়ে যেত। ওহোদ ও হোনায়েন যুদ্ধে তাঁর বীরত্ব ও অসম সাহসিকতা ছিল অচিন্তনীয়। আনাস রাঃ বলেন, আমি একদিন রাসূল সাঃ-এর সাথে চলছিলাম। এসময় তাঁর উপর মোটা জরিদার একটি নাজরানী চাদর শোভা পাচ্ছিল। হঠাৎ এক বেদুঈন এসে তাঁর চাদর ধরে এমন হেচকা টান দিল যে, তিনি বেদুঈনের বুকে গিয়ে পড়েন। এতে আমি দেখলাম যে, জোরে টান দেওয়ার কারণে রাসূল সাঃ-এর ঘাড়ের উপর চাদরের দাগ পড়ে গেল। অতঃপর লোকটি বলল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহর মাল যা তোমার কাছে আছে, তা থেকে আমাকে দেবার নির্দেশ দাও, তখন রাসূল সাঃ তার দিকে তাকালেন ও হাসলেন। অতঃপর তাকে কিছু দান করার জন্য আদেশ দিলেন। বুখারী হা/৬০৮৮; মুসলিম হা/১০৫৭; মিশকাত হা/৫৮০৩ ফাযায়েল ও শামায়েল অধ্যায় ১ অনুচ্ছেদ।
উক্ত ঘটনায় রাসূল সাঃ-এর অতুলনীয় ধৈর্য ও দানশীলতার প্রমাণ পাওয়া যায়। এরূপ অসংখ্য ঘটনা তাঁর জীবনে রয়েছে।

সেবা পরায়ণতা: কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি তার বাড়ীতে গিয়ে সেবা করতেন ও সান্তনা দিতেন। তার জন্য দোআ করতেন। কি খেতে মন চায় শুনতেন। ক্ষতিকর না হলে তা দেবার ব্যবস্থা করতেন। নিজের ইহূদী কাজের ছেলেটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি তার বাড়ীতে গিয়ে তাকে সান্তনা দেন ও পরিচর্যা করেন। এ সময় তিনি বলেন, তুমি ইসলাম কবুল কর। তখন ছেলেটি তার বাপের দিকে তাকাল যে তার নিকটে বসা ছিল। বাপ তাকে বলল, তুমি আবুল ক্বাসেম-এর কথা মেনে নাও। তখন ছেলেটি কালেমা শাহাদাত পাঠ করে ইসলাম কবুল করল। অতঃপর মারা গেল। এরপর রাসূল (সাঃ) বের হবার সময় বললেন, আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা, যিনি তাকে আমার মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলেন। আবুদাঊদ হা/৩০৯৫; বুখারী হা/১৩৫৬; মিশকাত হা/১৫৭৪ জানায়েয অধ্যায় ১ অনুচ্ছেদ।

সহজ পন্থা অবলম্বন: হযরত আয়েশা রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ-কে যখনই দুটি কাজের এখতিয়ার দেওয়া হত, তখন তিনি সহজটি বেছে নিতেন। যদি তাতে গুনাহের কিছু না থাকত। তিনি নিজের জন্য কোন অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতেন না। কিন্তু আল্লাহর জন্য হলে প্রতিশোধ না নিয়ে ছাড়তেন না। বুখারী হা/৬১২৬; মুসলিম হা/২৩২৭; মিশকাত হা/৫৮১৭ ফাযায়েল ও শামায়েল অধ্যায় ৩ অনুচ্ছেদ।
ওয়ায-নছীহত করতেন, যতক্ষণ না মানুষ বিব্রতবোধ করে। বুখারী হা/৬৪১১; মুসলিম হা/২৮২১; মিশকাত হা/২০৭।
নফল সালাত চুপে চুপে আদায় করতেন, যাতে অন্যের কষ্ট না হয়। তিনি বলতেন, তোমরা এমন আমল কর, যা তোমাদের সাধ্যে কুলায়। বুখারী হা/১৯৬৬ সওম অধ্যায়-৩০ সওমে বেছালে বাড়াবাড়ির শাস্তি অনুচ্ছেদ-৪৯।

দুনিয়া বিমুখতা: প্রয়োজনের অধিক পার্থিব বস্তু ভোগ পরিহার করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল। একদা উমর রা: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলেন, তখন তাঁকে খেজুর-আঁশ-ভর্তি চামড়ার বিছানায় দেখে বললেন: কায়সার ও কিসরা (রোম ও পারস্যের সম্রাটরা) এমন এমন (অনেক আরামদায়ক) স্থানে ঘুমায়, অথচ আপনি আলাহর রাসূল, তবুও আপনি ঘুমান এরকম বিছানায়। রাসূল সালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমার সাথে দুনিয়ার: ভোগ-বিলাসের সাথে কীসের সম্পর্ক? আমি তো এখানে পথিকের মত, যে গাছের ছায়া গ্রহণ করে, অতঃপর তা ছেড়ে চলে যায়।" তিরমিজী: ২২৯৯
রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করতেন, হে আল্লাহ মুহাম্মদের পরিবারের জীবিকা পরিমিত মাত্রায় দান কর। সহীহ বুখারী: ৫৯৭৯
তাঁর দুনিয়া বিমুখতার অন্যতম প্রমাণ হচ্ছে, তিনি যখন ইহকাল ত্যাগ করেন, তখন তাঁর ঘরে কেবল আয়েশার আলমারিতে স্বল্প পরিমাণে গম ছাড়া কিছুই ছিল না। একটি লৌহ বর্ম ছিল; সেটিও ত্রিশ সা' (প্রাচীন আরবে প্রচলিত পরিমাপের নির্দিষ্ট একটি ওজন) খেজুরের বিনিময়ে এক ইহুদির নিকট বন্দক ছিল।

লজ্জা: লাজুকতা অন্যতম উৎকৃষ্ট গুণ, এ-গুণেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুণান্বিত ছিলেন। এ-বিষয়ে আল্লাহ তাআলা নিজেই সাক্ষী দিয়ে বলেন: নিশ্চয় তোমাদের এ আচরণ নবীকে পীড়া দেয়, সে তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করে, কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচ বোধ করেন না। (সূরা আহযাবঃ ৫৩)
বিশিষ্ট সাহাবি আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরদায় অবস্থানকারী কুমারী মেয়ের চেয়েও অধিক লাজুক ছিলেন। তিনি যখন কোন কাজ অপছন্দ করতেন তাঁর চেহারায় আমরা তা চিনতে পারতাম । বুখারী: ৫৬৩৭

উত্তম সঙ্গ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহচরদের সাথে উত্তম ও সুন্দরভাবে মেলামেশা করতেন। আলী রাঃ বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বাপেক্ষা প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী, সর্বাপেক্ষা সত্যভাষী, সর্বাপেক্ষা সম্মান জনক লেনদেনকারী। তিরমিজী: ৩৫৭১
ইবনে আবু হারাহ বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সদা প্রফুল্লচিত্ত, কোমল চরিত্রের অধিকারী, সরল হৃদয়বান। রূঢ় স্বভাবের ছিলেন না, নির্দয় প্রকৃতির ও ছিলেন না, নির্লজ্জ, গিবতকারী ও বিদ্রুপকারী ছিলেন না। অতিরিক্ত গুণকীর্তনকারীও ছিলেন না, মনে চায়না এমন বস্তু থেকে বিমুখ থাকতেন, কিন্তু কাউকে তা থেকে নিরাশ করতেন না। কেউ ডাকলে সাড়া দিতেন, কেউ উপহার দিলে গ্রহণ করতেন, যদিও তা ছাগলের খুর হত, এবং তার উত্তম প্রতিদান দিতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন কোন সাহাবি বা পরিবারের কোন সদস্য ডাকতেন তিনি লাব্বাইক বলে সাড়া দিতেন। তিনি সাহাবাদের সাথে রসিকতা করতেন। গল্প করতেন তাদের সাথে। তাদের সন্তানদের সাথে খেলা করতেন এবং নিজের কোলে বসাতেন। মদিনার দূর প্রান্তে বসবাসকারী কেউ অসুস্থ হলে তারও খোঁজখবর নিতেন। আবেদনকারীর আবেদন গ্রহণ করতেন। সাহাবাদেরকে উপনামে ডাকতেন। তিনি তাদের সম্মান করে তাদের প্রিয় নাম দ্বারা ডাকতেন। সীমা-লঙ্ঘন না করলে কাউকে কথা বলা থেকে বারণ করতেন না।

বিনয়: বিনয় উঁচু মাপের চারিত্রিক গুণ। এ-গুণের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বোচ্চ উদাহরণ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কাপড় নিজে সেলাই করতেন। নিজ হাতে ছাগলের দুগ্ধ দোহন করতেন। নিজের জুতা নিজে সেলাই করতেন। নিজের সেবা নিজে করতেন, নিজের ঘর নিজে পরিষ্কার করতেন। নিজের উট নিজে বাঁধতেন। নিজের উটকে নিজে ঘাস ভক্ষণ করাতেন। গোলামের সাথে খেতেন, প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিজে বহন করে বাজারে নিতেন। একদা এক লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসল, কিন্তু সে তাঁর ভয়ে শিহরিত হল, তিনি তাকে বললেন: তুমি নিজকে হালকা (স্বাভাবিক) করে নাও, কেননা আমি রাজা বাদশা নই। নিশ্চয় আমি কোরাইশের এমন এক মহিলার সন্তান, যে শুকনো গোশত খায়। ইবনে মাজাহ: ৩৩০৩
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যধিক প্রশংসা থেকে বারণ করে বলেছেন: তোমরা আমার অত্যধিক প্রশংসা করো না, যে-রকম খ্রিস্টানরা মরিয়ময়ের ক্ষেত্রে করেছে। নিশ্চয় আমি আল্লাহর বান্দা। অতএব তোমরা (আমাকে) বলবে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। সহীহ বুখারী: ৩১৮৯
সাহাবিদেরকে তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়ানো থেকে বারণ করে বলেছেন: নিশ্চয় আমি আল্লাহর গোলাম। আমি খাদ্য গ্রহণ করি, যে রকম গোলাম খাদ্য গ্রহণ করে। আমি উপবেশন করি, যে রকম গোলাম উপবেশন করে।

দয়া: দয়া আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক বিশেষ গুণ। আল্লাহ তাআলা বলেন: নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে হতে তোমাদের নিকট এক রাসূল এসেছেন, তোমাদেরকে যা বিপন্ন করে, তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গলকামী, মোমিনদের প্রতি সে দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা ১২৮)
তিনি আরো বলেন: আমি তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি রহমত রূপে প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া ১০৭)
রাসূল সাঃ এর কতক উক্তি থেকেও তা প্রমাণিত হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে দয়া করে না, তার প্রতি দয়া করা হয় না । বুখারী: ৫৫৩৭
দয়াশীলদেরকে আল্লাহ দয়া করেন। তিরমিজী: ৮৪৭১
প্রত্যেক প্রাণীর সেবায় রয়েছে পুণ্যের ছোঁয়া। বুখারী: ২২৮২
প্রত্যেক নামাজের সময় মিসওয়াক করা যদি আমার উম্মতের উপর পীড়াদায়ক না হত তবে তা বাধ্যতামূলক করে দিতাম। বুখারী: ১৪৪৭

বিশ্বস্ততা: বিশ্বস্ততা ছিল রাসূলের অন্যতম গুণ, নীচে রাসূলের বিশ্বস্ততার নমুনা উল্লেখ করা হল। যেমন খাদিজা রা. এর সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সত্য-নিষ্ঠ আচরণ: আয়েশা রা. বর্ণনা করে বলেন: "আমি কোন মহিলার ব্যাপারে ঈর্ষা করতাম না, যা খাদিজার ব্যাপারে করতাম। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর কথা স্মরণ করতে শুনতাম। এমনকি তিনি কোন ছাগল জবাই করলে তাঁর বান্ধবীদের নিকট তা থেকে হাদিয়া প্রেরণ করতেন। একদা তাঁর বোন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন এবং স্বস্তি বোধ করলেন। অন্য একজন মহিলা প্রবেশ করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উৎফুল্ল হলেন, সুন্দরভাবে তার খোঁজখবর নিলেন। যখন তিনি বের হয়ে গেলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এ মহিলা খাদিজার জীবদ্দশায় আমার কাছে আসতো। নিশ্চয় সু-সম্পর্ক রক্ষা ঈমানের পরিচায়ক।
সাদাসিদে ও অনাড়াম্বর জীবনযাপনে চরম ধৈর্যশীল মানুষ ছিলেন: তাঁর বালিশ ছিল যার অভ্যন্তরে ছিল খেজুুরের ছোবড়া। আনাস ইবন মালেক রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াাসাল্লামের নিকট গিয়ে হাযির হলাম এমতাবস্থায় যে, তিনি শুয়ে আছেন এমন এক খাটে, যা খেজুরের রশি দ্বারা তৈরি করা এবং তাঁর মাথার নীচে ছিল তাম্রবর্ণের বালিশ, যা খেজুর পাতার দ্বারা ভর্তি; অতঃপর তাঁর নিকট হাযির হলে এক দল সাহাবী এবং সাথে ওমর রা. উপস্থিত হলেন; অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মোড় নিলেন, তাতে ওমর রা. তাঁর পার্শ্বদেশ ও খেজুরের রশির মাঝখানে (বিছানো) কোন কাপড় দেখতে পেলেন না, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পার্শ্বদেশে খেজুরের রশির চিহ্ন লেগে ছিল; তা দেখে ওমর রা. কেঁদে পেললেন; অতঃপর তাঁকে লক্ষ্য করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে ওমর! তুমি কাঁদছ কেন? জবাবে ওমর রা. বললেন: আল্লাহর কসম! আমি জানি যে, আপনি আল্লাহ তাআলার নিকট কিসরা ও কায়সার থেকে অনেক বেশি সম্মানিত ও প্রিয়; অথচ তারা দুনিয়ার মধ্যে আমোদ-প্রমোদ করে যাচ্ছে; আর হে আল্লাহর রাসূল! আপনার অবস্থান তো আমি দেখতেই পাচ্ছি! তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম বললেন: তুমি কি পছন্দ কর না যে, তাদের জন্য (সমৃদ্ধ) হউক দুনিয়া, আর আমাদের জন্য (সমৃদ্ধ) হউক আখিরাত? জবাবে ওমর রা. বললেন: হ্যাঁ, অবশ্যই; তিনি বললেন: সুতরাং (প্রকৃত) বিষয়টি অনুরূপই। আহমদ

সংসার জীবনে: হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) নিজের জুতা নিজেই সেলাই করতেন ও কাপড়ে তালি লাগাতেন। নিজের কাপড় নিজেই সেলাই করতেন, সংসারের কাজ নিজ হাতে করতেন, নিজে বকরী দোহন করতেন, কাপড় ছাফ করতেন ও নিজের কাজ নিজে করতেন। আহমাদ হা/২৬২৩৭; মিশকাত হা/৫৮২২ সনদ সহীহ ফাযায়েল ও শামায়েল অধ্যায়।
স্ত্রীদের মধ্যে আয়েশা (রাঃ) ছিলেন কুমারী ও সবচেয়ে কম বয়স্কা। তাই রাসূল (সাঃ) কখনো কখনো সাথীদের এগিয়ে দিয়ে নিজে তার সাথে দৌড়ে পাল্লা দিতেন। তাতে আয়েশা জিতে যেতেন। আবার আয়েশা ভারী হয়ে গেলে প্রতিযোগিতায় তিনি হেরেও যান। ইবনু মাজাহ হা/১৯৭৯; সহীহাহ হা/১৩১।
তাকে নিয়ে বিয়ে বাড়ীতে বেদুঈন মেয়েদের নাচ-গান শুনেছেন। বুখারী হা/৫১৯০; মুসলিম হা/৮৯২ (১৮); মিশকাত হা/৩২৪৪; বুখারী হা/৫১৪৭; মিশকাত হা/৩১৪০।
রাসূল (সাঃ) যে কত বাস্তব বাদী ও সংস্কৃতিমনা ছিলেন, এতে তার প্রমাণ মেলে। খায়বর যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে নব পরিণীতা স্ত্রী ছাফিইয়াকে উটে সওয়ার করার জন্য তিনি নীচু হয়ে নিজের হাঁটু পেতে দেন। অতঃপর ছাফিইয়াহ নবীর হাঁটুর উপরে পা রেখে উটে সওয়ার হন। বুখারী হা/৪২১১ খায়বর যুদ্ধ অনুচ্ছেদ ।

সমাজ জীবনে: বন্ধুদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন। নিজের ও স্ত্রী সম্পর্কিত আত্মীয়-স্বজনের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক রক্ষা করতেন। কারু ক্ষতি হতে পারে এমন কাজ হতে দূরে থাকতেন। পরনিন্দা ও পরচর্চা হতে বেঁচে থাকতেন। সঙ্গী-সাথীদের খোঁজ-খবর নিতেন। তিনি শত্রুদের দেওয়া কষ্টে ও মূর্খদের বাড়াবাড়িতে ধৈর্য ধারণ করতেন। তিনি মন্দকে মন্দ বলতেন ও ভালকে ভাল বলতেন। কিন্তু সর্বদা মধ্যপন্থী আচরণ করতেন। বুখারী হা/৩৯; মিশকাত হা/১২৪৬।
তিনি সকলের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকতেন। তাঁর নিকটে লোকেদের মর্যাদার ভিত্তি ছিল তাক্বওয়া বা আল্লাহভীরুতা (আহমাদ হা/২৩৫৩৬)
সমাজের দুর্বল শ্রেণীর প্রতি তাঁর করুণা ছিল সর্বাধিক। তিনি বলতেন, তোমরা আমাকে দুর্বল শ্রেণীর মধ্যে তালাশ করো। কেননা তোমরা রূযিপ্রাপ্ত হয়ে থাক এবং সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে থাক দুর্বল শ্রেণীর মাধ্যমে। আবুদাঊদ হা/২৫৯৪; মিশকাত হা/৫২৪৬; সিলসিলা সহীহাহ হা/৭৭৯।
অর্থাৎ তাদের প্রতি সদাচরণের মাধ্যমে তোমরা আমার সন্তুষ্টি তালাশ কর। 

সমাজ সংস্কারে তিনি জনমতের মূল্যায়ন করতেন। যেমন-
(১) কুরায়েশদের নির্মিত কাবাগৃহে ইবরাহীম (আঃ) নির্মিত কাবাগৃহ থেকে কিছু অংশ ছেড়ে রাখা হয়েছিল। ছাড়া অংশটিকে রুকনে হাত্বীম বলা হয়। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) চেয়েছিলেন ওটাকে ইবরাহীমী ভিতের উপর কাবাগৃহের মধ্যে শামিল করতে এবং কাবাগৃহের দুটো দরজা করতে। কিন্তু জনমত বিগড়ে যাবার ভয়ে তিনি তা করেননি। এবিষয়ে তিনি একদিন আয়েশা (রাঃ)-কে বলেন, যদি তোমার কওম নওমুসলিম না হত, তাহলে আমি কাবা ভেঙ্গে দিতাম এবং এর দুটি দরজা করতাম। একটি দিয়ে মুছল্লীরা প্রবেশ করত এবং অন্যটি দিয়ে বেরিয়ে যেত। কিন্তু কুরায়েশরা তা না করে অনেক উঁচুতে দরজা নির্মাণ করে। যাতে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ সেখানে প্রবেশ করতে না পারে। পরবর্তীতে আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (৬৪-৭৩ হি.) সেটি করেন। বুখারী হা/১২৬ ইলম অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-৪৮; ঐ, হা/১৫৮৪ হজ্জ অধ্যায়-২৫, অনুচ্ছেদ-৪২।
(২) তিনি সাধ্যপক্ষে উম্মতের ঐক্য রক্ষার চেষ্টা করতেন। যেমন মুনাফিকদের অপতৎপরতা সীমা ছাড়িয়ে গেলে ওমর ফারূক (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-কে বলেন, আমাকে অনুমতি দিন এই মুনাফিকটাকে (ইবনু উবাইকে) শেষ করে দিই। জবাবে রাসূল (সাঃ) বলেন, না। তাতে লোকেরা বলবে যে, মুহাম্মাদ তার সাথীদের হত্যা করছেন। (তিরমিযী হা/৩৩১৫ সনদ সহীহ।)
(৩) তিনি লোকদের সাথে নর্ম আচরণ করতেন। বৈঠকে তিনি কোনরূপ অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় কথা বলতেন না। বেদুঈনদের রূঢ় আচরণে তিনি ধৈর্য অবলম্বন করতেন। বলা চলে যে, তাঁর এই বিনয়ী ব্যবহার ও অতুলনীয় ব্যক্তি মাধুর্যের প্রভাবেই রুক্ষ স্বভাবের মরুচারী আরবরা দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করেছিল। আল্লাহ বলেন, আর আল্লাহর রহমতেই তুমি তাদের প্রতি (অর্থাৎ স্বীয় উম্মতের প্রতি) কোমলহৃদয় হয়েছ। যদি তুমি কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয়ের হতে, তাহলে তারা তোমার পাশ থেকে সরে যেত। (আলে ইমরান ৩/১৫৯) রাসূল সাঃ-এর এই অনন্য চরিত্র মাধুর্য ছিল নিঃসন্দেহে আল্লাহর বিশেষ দান। 

বিনয় ও নম্রতা: তিনি ছিলেন বিনয়ী ও নিরহংকার চরিত্রের মানুষ। তিনি সবাইকে মানুষ হিসাবে সমান জ্ঞান করতেন। উঁচু-নীচু ভেদাভেদ করতেন না। তাঁকে দেখে সম্মানার্থে দাঁড়াতে সাহাবীগণকে নিষেধ করতেন। (তিরমিযী হা/২৭৫৪; মিশকাত হা/৪৬৯৮।)
দাস-দাসীদের নিকটে কখনোই অহংকার প্রকাশ করতেন না। তাদের কোন কাজে অসন্তুষ্ট হয়ে উহ্ শব্দটি করতেন না। বরং তাদের কাজে নিজে সাহায্য করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি ১০ বছর রাসূল (সাঃ)-এর খিদমত করেছি। কিন্তু তিনি কখনো আমাকে কোন কাজের জন্য কৈফিয়ত তলব করেননি। (বুখারী হা/৬০৩৮; মুসলিম হা/২৩০৯; মিশকাত হা/৫৮০১।)
অবশ্য তার অর্থ এটা নয় যে, অন্যায় কথা বা কাজের জন্য তিনি কাউকে ধমকাতেন না বা ভর্ৎসনা করতেন না। যেমন তিনি উসামা ও খালেদকে ধমকিয়েছেন এবং তাদের ব্যাপারে তিনি দায়ী নন বলে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চেয়েছেন। (মুসলিম হা/৯৬; বুখারী হা/৪৩৩৯।)
তিনি সর্বদা আগে সালাম দিতেন ও মুছাফাহার জন্য আগে হাত বাড়িয়ে দিতেন। সাহাবীগণকে সম্মান করে অথবা আদর করে কখনো কখনো তাদেও উপনামে ডাকতেন। যেমন আব্দুল্লাহ বিন ওসমানকে তার উপনামে আবুবকর, আব্দুর রহমান বিন ছাখারকে আবু হুরায়রা (ছোট বিড়ালের বাপ), আলীকে আবু তোরাব (ধূলি ধুসরিত), হুযায়ফাকে নাওমান (ঘুম কাতর), অতি সতর্ক ও সাবধানী হওয়ার কারণে আনাসকে যুল উযনাইন (দুই কান ওয়ালা), সফরে অধিক বোঝা বহনকারী হিসাবে মুক্তদাস মিহরান বিন ফার্রূখ-কে সাফীনাহ (নৌকা) বলে ডাকতেন। আবু হুরায়রা (তিরমিযী হা/৩৮৪০); আবু তোরাব (বুখারী হা/৬২০৪); নাওমান (মুসলিম হা/১৭৮৮ (৯৯); যুল-উযনাইন (আবুদাঊদ হা/৫০০২; তিরমিযী হা/১৯৯২; মিশকাত হা/৪৮৮৭); সাফীনাহ (আহমাদ হা/২১৯৭৮, সনদ হাসান; হাদীছের প্রমাংশ মিশকাত হা/৫৩৯৫)
উল্লেখ্য যে, খুশী অবস্থায় উপনামে ডাকা আরবীয় রীতি হিসাবে প্রসিদ্ধ।
(ক) দুগ্ধদায়িনী মা, রোগী, বৃদ্ধ, মুসাফির ইত্যাদি বিবেচনায় তিনি জামাআতে সালাত সংক্ষেপ করতেন। (বুখারী হা/৭০৩; মুসলিম হা/৪৬৭ (১৮৩); মিশকাত হা/১১৩১, ৩৪, ২৯।)
(খ) রাসূল (সাঃ)-এর আযবা নামড়বী একটা উষ্ট্রী ছিল। সে এতই দ্রুতগামী ছিল যে, কোন বাহন তাকে অতিক্রম করতে পারত না। কিন্তু একদিন এক বেদুঈনের সওয়ারী আযবা-কে অতিক্রম করে গেল। বিষয়টি মুসলমানদের কাছে কষ্টদায়ক মনে হল। তখন রাসূল (সাঃ) তাদের সান্তনা দিয়ে বলেন, দুনিয়াতে আল্লাহর নীতি এটাই যে, কাউকে উঁচু করলে তাকে নীচুও করে থাকেন। (বুখারী হা/৬৫০১ রিক্বাক্ব অধ্যায়-৮১ নর্মতা অনুচ্ছেদ-৩৮।)
(গ) জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাঃ-কে (সৃষ্টির সেরা) বলে সম্বোধন করলে তিনি তাকে বলেন, তিনি হলেন ইবরাহীম আঃ । (মুসলিম হা/২৩৬৯; মিশকাত হা/৪৮৯৬ শিষ্টাচারসমূহ অধ্যায় ১৩ অনুচ্ছেদ।)
(ঘ) একবার এক ব্যক্তি রাসূল সাঃ-এর সামনে এসে ভয়ে বিহ্বল হয়ে পড়ে। তখন তিনি তাকে বলেন, স্থির হও! আমি কোন বাদশাহ (সৈরাচার বাদশা) নই। আমি একজন কুরায়েশ মহিলার সন্তান মাত্র। যিনি শুকনা গোশত ভক্ষণ করতেন। ইবনু মাজাহ হা/৩৩১২; সহীহাহ হা/১৮৭৬।
উল্লৈখ্য যে, আরবের গরীব লোকেরা শুকনা গোশত খেতেন। এ সকল ঘটনায় বাস্তব জীবনে রাসূল সাঃ-এর বিনয় ও নর্মতা অবলম্বনের ও নিরহংকার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতিপয় চারিত্রিক গুণাবলি ও শিষ্টাচার:
১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দৃষ্টি অবনত রাখতেন। কোন জিনিসের প্রতি পুনরায় দৃষ্টি দিতেন না, স্থির দৃষ্টিতেও তাকাতেন না। আকাশের চেয়ে জমির দিকে বেশি তাকাতেন।
২) সাহাবাদের সঙ্গে হাঁটার সময় তাদেরকে আগে দিতেন। তিনি তাদের আগে বাড়তেন না। কারো সাথে দেখা হলে সালাম দিতেন।
৩) তাঁর কথা ছিল সংক্ষিপ্ত, অথচ ব্যাপক অর্থবোধক ও সুস্পষ্ট। প্রয়োজন অনুসারে কথা বলতেন বেশিও বলতেন না কমও বলতেন না। রাসূলের সব কথা ছিল ভাল ও কল্যাণধর্মী। কিন্তু তিনি দীর্ঘ নীরবতা অবলম্বনকারী ছিলেন।
৪) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বাধিক কোরআন তেলাওয়াতকারী, এস্তেগফার ও জিকিরকারী এবং প্রার্থনাকারী। সারাটি জীবন সত্যের আহ্বানে ও সৎকাজে ব্যয় করেছেন। তিনি ইসলামের আগে ও পরে অর্থাৎ সদা সত্যবাদী ও আমানতদার ছিলেন।
৫) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন বুদ্ধিমান, গাম্ভীর্যপূর্ণ, ও সঠিক সিদ্ধাস্তের অধিকারী, প্রজ্ঞাময় মহান নেতা, ক্রোধ সংবরণকারী, নর্ম। সব কিছুতে নর্মতা পছন্দ করতেন, এবং বলতেন: "যে নর্মতা থেকে বঞ্চিত, সে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। সহীহ মুসলিম: ৪৬৯৬
৬) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সদা চিন্তাশীল, কোমল, শান্ত ও ভদ্র চরিত্রের অধিকারী, রূঢ় স্বভাবের ও হীন চরিত্রের অধিকারী ছিলেন না। নিয়ামত কম হলেও বেশি মনে করতেন। ব্যক্তিগত বা পার্থিব স্বার্থে আঘাত হলে রাগ করতেন না। আলাহর বিধান লঙ্ঘিত হলে প্রতিবিধান না করা পর্যন্ত ক্রোধ থামতেন না এবং ক্ষান্ত হতেন না।
৭) হাসির সময় প্রায় মুচকি হাসতেন। এক কথা তিন বার বলতেন। তিন বার সালাম দিতেন। তিন বার অনুমতি চাইতেন। যাতে তার কথা ও কর্ম, আচার-আচরণ সহজে বোধগম্য হয়, অনায়াসে মানুষের হৃদয়ে আসন করে নেয়।
এই হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্রের উজ্জ্বল কিছু মণি-মুক্তা; সুতরাং আপনারা তাকে আপনাদের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় মশাল বা পাঞ্জেরী হিসেবে গ্রহণ করুন, তার প্রতি আস্থা রাখুন, তাকে গ্রহণ করুন, তার উপর পথ চলুন এবং সঠিক পথের অনুসারী হউন; আল্লাহ তাআলা তাঁকে উত্তম চরিত্র দান করেছেন এবং আমাদেরকে তাঁর অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন; আল্লাহ তাআলা বলেছেন: কাজেই তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূল উম্মী নবীর প্রতি, যিনি আল্লাহ ও তাঁর বাণীসমূহে ঈমান রাখেন। আর তোমরা তার অনুসরণ কর, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও। [সূরা আল-আরাফ: ১৫৮]।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এবং আপনাদেরকে এই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহব্বত করার সুযোগ দান করুন এবং আমাদেরকে আজীবন তাঁর সুন্নাহ ও হিদায়েতের অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন।

লেখক: মুহাম্মদ হামিদুল ইসলাম আজাদ
চেয়ারম্যানঃ বাংলাদেশ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার