সালাতুল জানাযার পদ্ধতি
মুহাম্মদ হামিদুল ইসলাম আজাদ
১. মৃতকে মুছল্লীদের সামনে রাখতে হবে। মৃত পুরুষ হলে ইমাম মাথা বরাবর দাঁড়াবেন আর মহিলা হলে দাঁড়াবেন মাঝ বরাবর।
عَنْ أَبِي غَالِبٍ، قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَلَى جَنَازَةِ رَجُلٍ فَقَامَ حِيَالَ رَأْسِهِ ثُمَّ جَاءُوا بِجَنَازَةِ امْرَأَةٍ مِنْ قُرَيْشٍ فَقَالُوا يَا أَبَا حَمْزَةَ صَلِّ عَلَيْهَا . فَقَامَ حِيَالَ وَسَطِ السَّرِيرِ . فَقَالَ لَهُ الْعَلاَءُ بْنُ زِيَادٍ هَكَذَا رَأَيْتَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَامَ عَلَى الْجَنَازَةِ مُقَامَكَ مِنْهَا وَمِنَ الرَّجُلِ مُقَامَكَ مِنْهُ قَالَ نَعَمْ . فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ احْفَظُوا . وَفِي الْبَابِ عَنْ سَمُرَةَ . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ أَنَسٍ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ وَقَدْ رَوَى غَيْرُ وَاحِدٍ عَنْ هَمَّامٍ مِثْلَ هَذَا . وَرَوَى وَكِيعٌ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ هَمَّامٍ فَوَهِمَ فِيهِ فَقَالَ عَنْ غَالِبٍ عَنْ أَنَسٍ . وَالصَّحِيحُ عَنْ أَبِي غَالِبٍ . وَقَدْ رَوَى هَذَا الْحَدِيثَ عَبْدُ الْوَارِثِ بْنُ سَعِيدٍ وَغَيْرُ وَاحِدٍ عَنْ أَبِي غَالِبٍ مِثْلَ رِوَايَةِ هَمَّامٍ . وَاخْتَلَفُوا فِي اسْمِ أَبِي غَالِبٍ هَذَا فَقَالَ بَعْضُهُمْ يُقَالُ اسْمُهُ نَافِعٌ وَيُقَالُ رَافِعٌ . وَقَدْ ذَهَبَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ إِلَى هَذَا وَهُوَ قَوْلُ أَحْمَدَ وَإِسْحَاقَ
আবু গালিব রহঃ হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আনাস রাঃ এর সাথে আমি এক লোকের জানাযার নামায আদায় করলাম। তিনি লাশের মাথা বরাবর দাঁড়ালেন। তারপর লোকেরা কুরাইশ বংশের এক মহিলার লাশ নিয়ে আসলো। তারা বলল, হে হামযার পিতা! এর জানাযা আদায় করুন। তিনি তার খাটিয়ার মাঝ বরাবর দাঁড়ালেন। তাকে আলা ইবনু যিয়াদ রাহঃ বললেন, স্ত্রীলোকটির খাটিয়ার মাঝ বরাবর এবং পুরুষ লোকটির মাথা বরাবর আপনি যেভাবে দাড়ালেন, এভাবে কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দাড়াতে দেখেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। নামায শেষে তিনি বললেন, তোমরা এই নিয়ম ভালোভাবে স্মরণ রাখ।১
সামুরা রাঃ হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আনাস রাঃ হতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। হাম্মামের সূত্রে একাধিক বর্ণনাকারী একইরকম হাদীস বর্ণনা করেছেন। এই হাদীস হাম্মামের সূত্রে ওয়াকী রাহঃ বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তিনি সনদে গড়মিল করেছেন। তিনি বলেছেন গালিব আনাস হতে, সঠিক হল আবূ গালিব। আব্দুল ওযারিস এবং আরও অনেকে হাম্মামের মতই আবু গালিব হতে বর্ণনা করেছেন। আবু গালিবের নাম নিয়ে মত পার্থক্য আছে। কেউ বলেছেন, তার নাম নাফি, কেউ বলেছেন রাফি। এ হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম আমল করেছেন। এই মত আহমাদ ও ইসহাকেরও।
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ، وَالْفَضْلُ بْنُ مُوسَى، عَنْ حُسَيْنٍ الْمُعَلِّمِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم صَلَّى عَلَى امْرَأَةٍ فَقَامَ وَسَطَهَا . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَقَدْ رَوَاهُ شُعْبَةُ عَنْ حُسَيْنٍ الْمُعَلِّمِ
সামুরা ইবনু জুনদাব রাঃ হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলার জানাযা আদায় করলেন, তিনি তার কোমর বরাবর দাড়ালেন।২ আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। হুসাইন আল-মুআল্লিমের সূত্রে শুবা রহঃ এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
وَعَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ قَالَ: صَلَّيْتُ وَرَاءَ رَسُولِ اللّهِ ﷺ عَلَى امْرَأَةٍ مَاتَتْ فِىْ نِفَاسِهَا فَقَامَ وَسَطَهَا
সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব রাঃ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে এক মহিলার জানাযার সালাত আদায় করেছি। মহিলাটি নিফাস অবস্থায় মারা গেছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাযার সালাতে তার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়েছেন।৩
এ হাদীস প্রমাণ করে যে, মৃতব্যক্তি মহিলা হলে সুন্নাত হলো ইমাম সাহেব লাশের মাঝামাঝি বা কোমর বরাবর দাঁড়াবে। কেউ যদি একাকীও জানাযাহ্ আদায় করে তার জন্যও একই হুকুম। কিন্তু ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও ইমাম মালিক রহঃ এর মতামত ভিন্ন। ইমাম আবূ হানীফাহ্ রহঃ এর এক্ষেত্রে দু’টি মত পাওয়া যায়। তার প্রসিদ্ধ মত হলো- ইমাম নারী-পুরুষ উভয়েরই সীনা বরাবর দাঁড়াবে। ইমাম মালিক রহঃ এর মতে লাশের মাথা বরাবর দাঁড়াবে।
আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী রহঃ বলেনঃ ইমাম আত্ তিরমিযী, ইমাম আহমাদ-এর মত বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম মহিলার মাঝ বরাবর দাঁড়াবে আর পুরুষের মাথা বরাবর দাঁড়াবে। ইমাম শাফি‘ঈ, মালিক, আহমাদ, ইসহাক্ব, আবূ ইউসুফ প্রমুখ ইমামগণের মাযহাব এটাই, আর এটা হকও বটে। সামনে আনাস রাঃ ও সামুরাহ্ রাঃ কর্তৃক বর্ণিত হাদীস এ মতেরই পোষকতায় বর্ণিত হয়েছে। স্বয়ং হিদায়া গ্রন্থে ইমাম আবূ হানীফাহ্ রহঃ এর দ্বিতীয় মতটি এটাই বর্ণিত হয়েছে। কেননা আনাস রাঃ এ রকম ‘আমাল করেছেন এবং বলেছেন, এটাই ‘সুন্নাত’। ইমাম ত্বহাবী রহঃ ইমাম আবূ হানীফার এ মতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
আত্ তিরমিযীর ভাষ্যকার শায়খুল হাদীস ‘আল্লামা ‘আবদুর রহমান মুবারকপূরী রহঃ, ইবনুল হুমাম-এর বুক ও কোমর বরাবর দাঁড়ানোর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে যে তাবীল করেছেন তার প্রেক্ষিতে বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পুরুষের মাথা বরাবর এবং নারীর কোমর বরাবর দাঁড়ানোর হাদীস প্রমাণিত হওয়ার পর অন্য কোন তাবীল বা ব্যাখ্যার দিকে ভ্রুক্ষেপ করার কোনই প্রয়োজন নেই।
২. জানাযার সালাতের নিয়্যাত করাঃ অনেক ধার্মিক মুসলিম জানাযার সালাতের নিয়ম অথব নিয়্যাত জানেন না বা ভয় পান। জানাযার সালাত অত্যন্ত সহজ ইবাদত। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সাওয়াবের উদ্দেশ্যে মৃত ব্যক্তির জন্য জানাযার সালাত আদায় করছি, এ কথাটুকু মনের মধ্যে থাকাই যথেষ্ট।
৩. নিয়্যাত-সহ তাকবীরে তাহরীমা এবং পরে আরো তিনটি/চারটি অথবা এর অধিক নয়টি পর্যন্ত তাকবীর ও সালামের মাধ্যমে এ সালাত আদায় করা হয়। ইমাম ও মুক্তাদীগণ সকলেই এ তাকবীরগুলো ও সালাম মুখে উচ্চারণ করবেন। জানাযার সালাতের প্রত্যেক তাকবীরে দুই হাত উত্তোলন করতে হবে মর্মে রাসূল সাঃ থেকে কোন সহীহ হাদীছ নেই।৪ তবে অনেক সাহাবী থেকে সহীহ আছার বর্ণিত হয়েছে। তাই প্রত্যেক তাকবীরেই হাত উত্তোলন করা জায়েজ।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ عَلَى كُلِّ تَكْبِيْرَةٍ مِنْ تَكْبِيْرِ الْجَنَازَةِ
ইবনু ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি জানাযার প্রত্যেক তাকবীরে দুই হাত উত্তোলন করতেন।৫ ইমাম বুখারী রহঃও উক্ত আছারের বিষয়টি ইঙ্গিত করেছেন।৬
حَدَّثَنَا مُسْلِمٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ حَدَّثَنَا الشَّيْبَانِيُّ عَنْ الشَّعْبِيِّ قَالَ أَخْبَرَنِي مَنْ شَهِدَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَتَى عَلَى قَبْرٍ مَنْبُوذٍ فَصَفَّهُمْ وَكَبَّرَ أَرْبَعًا قُلْتُ مَنْ حَدَّثَكَ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ
শা‘বী রহঃ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এমন এক সাহাবী যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, তিনি আমাকে খবর দিয়েছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পৃথক ক্ববরের নিকট গমন করলেন এবং লোকেদের কাতারবন্দী করে চার তাকবীরের সঙ্গে (জানাযার সালাত) আদায় করলেন। [শাইবানী (রহ.) বলেন] আমি শা‘বী (রহ.) কে জিজ্ঞেস করলাম, এ হাদীস আপনাকে কে বর্ণনা করেছেন? তিনি বললেন, ইবনু ‘আববাস রাঃ।৭
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ نَعى لِلنَّاسِ النَّجَاشِيَّ الْيَوْمَ الَّذِىْ مَاتَ فِيهِ وَخرج بِهِمْ إِلَى الْمُصَلّى فَصَفَّ بِهِمْ وَكَبَّرَ أَرْبَعَ تَكْبِيرَاتٍ
আবূ হুরায়রাহ্ রাঃ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাবশার বাদশাহ নাজাশীর মৃত্যু সংবাদ তাঁর মৃত্যুর দিনই মানুষদেরকে জানিয়েছেন (অথচ তিনি মারা গিয়েছিলেন সুদূর হাবশায়)। তিনি সহাবা (সাহাবা) কিরামকে নিয়ে ঈদগায় গেলেন। সেখানে সকলকে জানাযার সালাতের জন্য কাতারবদ্ধ করলেন এবং চার তাকবীর বললেন।৮
অন্য হাদীসে এসেছে,
অন্য হাদীসে এসেছে,
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمنِ بْنِ أَبِىْ لَيْلى قَالَ: كَانَ زَيْدُ بْنُ أَرْقَمَ يُكَبِّرُ عَلى جَنَائِزِنَا أَرْبَعًا وَأَنَّه كَبَّرَ عَلى جَنَازَةٍ خَمْسًا فَسَأَلْنَاهُ فَقَالَ: كَانَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ يُكَبِّرُهَا
‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা রাঃ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যায়দ ইবনু আরক্বাম রাঃ সালাতুল জানাযায় চার তাকবীর বলতেন। এক জানাযায় তিনি পাঁচ তাকবীরও বললেন। আমরা তখন তাঁকে (এর কারণ) জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ তাকবীরও দিয়েছেন।৯
জানাযার সালাত চার তাকবীরে আদায় করতে হয়। এ হাদীসে পাঁচ তাকবীরের উল্লেখ রয়েছে। তাকবীরের সংখ্যা নিয়ে ইমাম ও ফকীহদের ইখতিলাফ বিদ্যমান।
ফাতহুল বারী, আল মুহাল্লা, মুগনী, মাসবূত প্রভৃতি গ্রন্থে ইমাম আবূ ইউসুফ ও আহলে জাওয়াহিরদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তারা পাঁচ তাকবীরের পক্ষপাতি ছিলেন।
কেউ কেউ বলেছেন, চারের অধিক তাকবীর বিশেষ মর্যাদাশীল ব্যক্তিদের সৌজন্যে। যেমন ‘আলী রাঃ সাহল ইবনু হুনায়ফ-এর জানাযায় ছয় তাকবীর প্রদান করে বললেন, তিনি একজন বাদরী সাহাবী। ত্বহাবী, ইবনু আবী শায়বাহ্, দারাকুত্বনী, বায়হাক্বী প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ উল্লেখ করেছেন, ‘আলী রাঃ বাদরী সাহাবীদের জন্য ছয়, সাধারণ সাহাবীদের জন্য পাঁচ, অন্যান্য মুসলিমদের জন্য চার তাকবীর দিতেন।
অন্য আরেক শ্রেণীর ‘আলিম বলেন, এটা ইমাম সাহেবের ইখতিয়ার সে যে কয় তাকবীর ইচ্ছা দিতে পারবে। মুক্তাদীগণ ইমামের পূর্ণ ইত্তেবা করবে। মুনযিরী ইবনু মাস্‘ঊদ রাঃ থেকে নয়, সাত, পাঁচ ও চার তাকবীরের বিবরণ উল্লেখ করেছেন। ইবনু মাস্‘ঊদ রাঃ বলেছেন, তোমাদের ইমাম যে কয় তাকবীর দেয় তোমরাও সে কয় তাকবীর দাও। ইবন মাসউদ রাঃ বলেন, জানাযার সালাতের কোনো নির্দিষ্ট তাকবীর নেই।১০
তিন ইমাম সহ জমহূর সাহাবী, তাবি‘ঈন পরবর্তী আয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন তথা সালাফ ও খালাফগণ জানাযার সলাতে চার তাকবীরের পক্ষপাতি ছিলেন, এর বেশীও নয় কমও নয়। এরা চারের অধিক তাকবীর আবূ হুরায়রাহ্ রাঃ এর হাদীস দ্বারা মানসূখ বা রহিত বলে মনে করেন; কিন্তু এ কথাও প্রশ্নাতীত নয়। আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী রহঃ বলেনঃ আমার নিকট অধিক গ্রহণীয় মত হলো চারের অধিক তাকবীর দিবে না।
কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এটাই ছিল সাধারণ ‘আমাল ও রীতি। তবে ইমাম সাহেব যদি পাঁচ তাকবীর দিয়ে ফেলে তাহলে মুক্তাদীরা তার অনুসরণ করবে। কেননা পাঁচ তাকবীরের হাদীসও রদ করার মতো নয়।
আবার কেউ কেউ বলেন, জানাযার সালাত ৪ থেকে ৯ পর্যন্ত তাকবীরে পড়া নাবী সাঃ থেকে প্রমাণিত। এবং প্রত্যেক তাকবীর বলার সময় রফউল ইয়াদাইন করতে হবে। এটি ইবনু ‘উমার রাঃ এর আমল- (এটা বাইহাকী সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন- আহকামুল জানায়িয ১৪৮ পৃষ্ঠা)। ৪ থেকে ৯ তাকবীরের যেটাই করবে যথেষ্ট হবে। এক প্রকারকে অপরিহার্যভাবে ধরে রাখতে চাইলে সেটা হল ৪ তাকবীর। কেননা এ ব্যাপারে হাদীসসমূহ শক্তিশালী ও অধিক।১১
চারের কম তাকবীর মোটেও বৈধ নয়, কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন মারফূ' হাদীসেই চারের কমের কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। তাই উভয় হাদীসের যে কোনো একটি পদ্ধতির উপর আমল করলেই সুন্নাত আদায় হবে। তবে তাকবীর এর সংখ্যা নিয়ে ঝগড়া করা, বিবাদ করা, মারামাড়ি করা, মসজিদ আলাদা করা এককথায় মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টিকরা সকল অবস্থায় হারাম।
৪. প্রথমে মৃতের জন্য দু‘আ করার আন্তরিক নিয়্যাত-সহ তাকবীরে তাহরীমার মাধ্যমে সালাত শুরু করবেন। তাকবীরে তাহরীমার পরে আমাদের দেশের প্রচলিত নিয়ম অনুসারে সালাতের সানা পাঠ করবেন।
জানাযার সালাত চার তাকবীরে আদায় করতে হয়। এ হাদীসে পাঁচ তাকবীরের উল্লেখ রয়েছে। তাকবীরের সংখ্যা নিয়ে ইমাম ও ফকীহদের ইখতিলাফ বিদ্যমান।
ফাতহুল বারী, আল মুহাল্লা, মুগনী, মাসবূত প্রভৃতি গ্রন্থে ইমাম আবূ ইউসুফ ও আহলে জাওয়াহিরদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তারা পাঁচ তাকবীরের পক্ষপাতি ছিলেন।
কেউ কেউ বলেছেন, চারের অধিক তাকবীর বিশেষ মর্যাদাশীল ব্যক্তিদের সৌজন্যে। যেমন ‘আলী রাঃ সাহল ইবনু হুনায়ফ-এর জানাযায় ছয় তাকবীর প্রদান করে বললেন, তিনি একজন বাদরী সাহাবী। ত্বহাবী, ইবনু আবী শায়বাহ্, দারাকুত্বনী, বায়হাক্বী প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ উল্লেখ করেছেন, ‘আলী রাঃ বাদরী সাহাবীদের জন্য ছয়, সাধারণ সাহাবীদের জন্য পাঁচ, অন্যান্য মুসলিমদের জন্য চার তাকবীর দিতেন।
অন্য আরেক শ্রেণীর ‘আলিম বলেন, এটা ইমাম সাহেবের ইখতিয়ার সে যে কয় তাকবীর ইচ্ছা দিতে পারবে। মুক্তাদীগণ ইমামের পূর্ণ ইত্তেবা করবে। মুনযিরী ইবনু মাস্‘ঊদ রাঃ থেকে নয়, সাত, পাঁচ ও চার তাকবীরের বিবরণ উল্লেখ করেছেন। ইবনু মাস্‘ঊদ রাঃ বলেছেন, তোমাদের ইমাম যে কয় তাকবীর দেয় তোমরাও সে কয় তাকবীর দাও। ইবন মাসউদ রাঃ বলেন, জানাযার সালাতের কোনো নির্দিষ্ট তাকবীর নেই।১০
তিন ইমাম সহ জমহূর সাহাবী, তাবি‘ঈন পরবর্তী আয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন তথা সালাফ ও খালাফগণ জানাযার সলাতে চার তাকবীরের পক্ষপাতি ছিলেন, এর বেশীও নয় কমও নয়। এরা চারের অধিক তাকবীর আবূ হুরায়রাহ্ রাঃ এর হাদীস দ্বারা মানসূখ বা রহিত বলে মনে করেন; কিন্তু এ কথাও প্রশ্নাতীত নয়। আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী রহঃ বলেনঃ আমার নিকট অধিক গ্রহণীয় মত হলো চারের অধিক তাকবীর দিবে না।
কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এটাই ছিল সাধারণ ‘আমাল ও রীতি। তবে ইমাম সাহেব যদি পাঁচ তাকবীর দিয়ে ফেলে তাহলে মুক্তাদীরা তার অনুসরণ করবে। কেননা পাঁচ তাকবীরের হাদীসও রদ করার মতো নয়।
আবার কেউ কেউ বলেন, জানাযার সালাত ৪ থেকে ৯ পর্যন্ত তাকবীরে পড়া নাবী সাঃ থেকে প্রমাণিত। এবং প্রত্যেক তাকবীর বলার সময় রফউল ইয়াদাইন করতে হবে। এটি ইবনু ‘উমার রাঃ এর আমল- (এটা বাইহাকী সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন- আহকামুল জানায়িয ১৪৮ পৃষ্ঠা)। ৪ থেকে ৯ তাকবীরের যেটাই করবে যথেষ্ট হবে। এক প্রকারকে অপরিহার্যভাবে ধরে রাখতে চাইলে সেটা হল ৪ তাকবীর। কেননা এ ব্যাপারে হাদীসসমূহ শক্তিশালী ও অধিক।১১
চারের কম তাকবীর মোটেও বৈধ নয়, কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন মারফূ' হাদীসেই চারের কমের কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। তাই উভয় হাদীসের যে কোনো একটি পদ্ধতির উপর আমল করলেই সুন্নাত আদায় হবে। তবে তাকবীর এর সংখ্যা নিয়ে ঝগড়া করা, বিবাদ করা, মারামাড়ি করা, মসজিদ আলাদা করা এককথায় মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টিকরা সকল অবস্থায় হারাম।
৪. প্রথমে মৃতের জন্য দু‘আ করার আন্তরিক নিয়্যাত-সহ তাকবীরে তাহরীমার মাধ্যমে সালাত শুরু করবেন। তাকবীরে তাহরীমার পরে আমাদের দেশের প্রচলিত নিয়ম অনুসারে সালাতের সানা পাঠ করবেন।
«سُبْحانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ»
উচ্চারণ: সুব‘হা-নাকাল্লা-হুম্মা, ওয়া বি‘হামদিকা, ওয়া তাবা-রাকাসমুকা, ওয়া তা‘আ-লা- জাদ্দুকা, ওয়া লা- ইলা-হা গ্বাইরুকা।
অর্থ: “আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, হে আল্লাহ, এবং আপনার প্রশংসাসহ। আর মহাবরকতময় আপনার নাম, সুউচ্চ আপনার মর্যাদা। আর কোনো মা’বুদ নেই আপনি ছাড়া।” রাসূলুল্লাহ সাঃ সালাতের শুরুতে একথাগুলো বলতেন।১২
এ সময়ে সূরা ফাতিহা পড়ার বিষয়ে সাহাবীগণ মতভেদ করেছেন। তাবিয়ী তালহা ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু আউফ বলেন:
وَعَنْ طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ اللّهِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ: صَلَّيْتُ خَلْفَ ابْنِ عَبَّاسٍ عَلى جَنَازَةٍ فَقَرَأَ فَاتِحَةَ الْكِتَابِ فَقَالَ: لِتَعْلَمُوا أَنَّهَا سُنَّةٌ. رَوَاهُ البُخَارِيُّ
আমি ইবনু আব্বাস রাঃ এর পিছনে জানাযার সালাত আদায় করি। তিনি সূরা ফাতিহা পাঠ করেন (সশব্দে)... আমি তাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন: যেন তারা জানে যে, এটি সুন্নাত (এটি সুন্নাতের অংশ বা সুন্নাতের পূর্ণতার অংশ)।১৩
হাদীস শাস্ত্রের মহাপন্ডিত হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী এ হাদীস সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন- হাদীসটির বর্ণনা সূত্র বিশুদ্ধ।
অন্য হাদীসে আবূ উমামা রাঃ বলেন:
“সালাতুল জানাযায় সুন্নাত নিয়ম প্রথম তাকবীরের পর সূরা ফাতিহা চুপে চুপে পাঠ করা, এরপর তিনটি তাকবীর বলা এবং শেষ তাকবীরের সময় সালাম বলা।” হাদীসটি সহীহ।১৪
অন্য হাদীসে তাবিয় নাফি বলেন: “আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রাঃ সালাতুল জানাযায় কুরআনের কিছুই পাঠ করতেন না।” হাদীসটি সহীহ।১৫
অন্য সহীহ হাদীসে আবূ সাঈদ মাকবুরী বলেন, আমি আবূ হুরাইরা রাঃ কে প্রশ্ন করলাম, সালাতুল জানাযা কিভাবে আদায় করব। তিনি বলেন: “যখন মৃতদেহ রাখা হবে তখন তাকবীর বলবে, অতপর আল্লাহর হামদ-প্রশংসা করবে, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর উপর সালাদ পড়বে, অতঃপর দুআ করবে...।”১৬
সাহাবীগণের মতভেদের কারণে ফকীহগণও মতভেদ করেছেন। অধিকাংশ ফকীহ সালাতুল জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ আবশ্যক বলেছেন। হানাফী ফকীহগণের মতে প্রথম তাকবীরের পর আল্লাহর গুণবর্ণনা বা সানা পাঠ করতে হবে। তবে হামদ-সানা বা দুআর উদ্দেশ্যে সূরা ফাতিহা পাঠ করা যাবে। মোল্লা আলী কারী, শুরনুবলালী ও অন্যান্য হানাফী ফকীহ এ সময়ে সূরা ফাতিহা পাঠ করা মুস্তাহাব বলেছেন।১৭
জানাযার সালাতে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ বা চিরাচরিত নিয়ম। এ শাশ্বত সুন্নাহর ‘আমালকে সার্বজনীন করার জন্য বা তার অবহতির জন্য ইবনু ‘আব্বাস রাঃ জানাযার সালাতে জোরে জোরে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করেছেন। এটা তার নিজের বক্তব্যেই প্রকাশ করেছেন। সুতরাং জানাযার সালাতে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করতে হবে এ হাদীস তার প্রকৃষ্ঠ দলীল। (অসংখ্য সাহাবীদের মধ্যে ইবনু ‘আব্বাস রাঃ সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করলেন এবং সুন্নাত বলে দাবী করলেন এতে একজন সাহাবীও তার প্রতিবাদ অথবা বিরোধিতা করেননি, সুতরাং এটা ইজমায়ে সাহাবীর মর্যাদা রাখে)।
এছাড়াও বহু সাহাবী থেকে জানাযার সালাতে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠের হাদীস বর্ণিত হয়েছে। মুনযিরী এর বিস্তারিত তথ্যাদি পেশ করেছেন।
ইমামদের মধ্যে আয়িম্মায়ে সালাসা তথা ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাকসহ অসংখ্য ইমাম ও ফকীহ এ মতেরই অনুসারী ছিলেন।
ইমাম তুরকিমানী বলেনঃ হানাফীদের নিকট জানাযার সলাতের সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ ওয়াজিবও নয় মাকরূহও নয়। মালিকীদের মতে এটা মাকরূহ। ইমাম মালিক বলেছেনঃ আমাদের মাদীনায় এ ‘আমাল প্রচলিত নয়। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ ইমাম মালিক-এর এ কথার তীব্র প্রতিবাদ করে বলেছেন, আবূ হুরায়রাহ্, আবূ ‘উমামাহ্, সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব প্রমুখসহ মাদীনার বড় বড় সাহাবী, তাবি‘ঈ ও ফকীহ থেকে (সূরাহ্ আল ফা-তিহার) ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠের ‘আমাল পাওয়া সত্ত্বেও তিনি কিভাবে বললেন, এটা মাদীনাবাসীর ‘আমাল নয়? এরপরও কথা হলো এই যে, মাদীনাবাসীদের কোন ‘আমাল শারী‘আতের দলীল নয়।
ইবনু ‘আব্বাস-এর কথা- ‘এটা সুন্নাত’, এ সুন্নাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চিরাচরিত সুন্নাহ বা নিয়ম। সুন্নাহ মানে ফারযের (ফরযের/ফরজের) বিপরীত এমনটি নয়, এটা ইস্তিলাহে উরফী বা স্বভাবসিদ্ধ পরিভাষা। আশরাফ বলেছেন, সুন্নাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যা বিদ্‘আতের বিপরীত। আল্লামা কুসতুলানী বলেনঃ সুন্নাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এটা শার‘ঈ প্রণেতার পথ ও পন্থা। সুন্নাহ বলা এটা ওয়াজিব হওয়াকে নিষেধ করে না। ইমাম শাফি‘ঈ বলেনঃ অধিকাংশ ‘আলিমের নিকট কোন সাহাবীর সুন্নাহ দাবী এটা মারফূ' হাদীসের মর্যাদা রাখে। (ইবনু ‘আব্বাস-এর আরেকটি বর্ণনা মিশকাতুল মাসাবীহ/মিশকাত ১৬৭৩ নং হাদীসে দেখুন)
জানাযার সালাতে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ কোথায় পাঠ করতে হবে? এ হাদীসে তার উল্লেখ নেই। কিন্তু ইমাম শাফি‘ঈর কিতাবুল উম্ম, বায়হাক্বী, নাসায়ী প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থে জাবির রাঃ প্রমুখাত হাদীসে স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে প্রথম তাকবীর দিয়েই সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করবে।
মুসন্নাফে ‘আবদুর রাযযাক্ব, নাসায়ী প্রভৃতি গ্রন্থে আবূ ‘উমামাহ্ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জানাযার সালাতে সুন্নাত হলো প্রথম তাকবীর দিয়ে উম্মুল কুরআন সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করবে। এরপর (তাকবীর দিয়ে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পড়বে..... প্রথম তাকবীর ছাড়া ক্বিরাআত (কিরআত) পড়বেন।
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার রাঃ জানাযায় ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তেন না মর্মে যে কথাটি রয়েছে এর উপর ভিত্তি করে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ বর্জন মোটেও সঠিক নয়। কেননা এটা ছিল তার ব্যক্তিগত ‘আমাল। তাছাড়া তিনি ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তেন না। তার অর্থ এই নয় যে, তিনি সূরাহ্ আল ফা-তিহাও পাঠ করতেন না বরং এর অর্থ হলো তিনি সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ ছাড়া অন্য কোন সূরাহ্ পাঠ করতেন না। উপরন্তু এটি নেতিবাচক কথা, আর সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠের হাদীসটি হলো ইতিবাচক; উসূলে হাদীস তথা হাদীস বিজ্ঞানের মূলনীতি হলো ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু’টি হাদীস পরস্পর সাংঘর্ষিক হলে ইতিবাচক হাদীসটি প্রাধান্য পাবে। সর্বোপরি সাহাবীর কোন কথা বা ‘আমাল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাশ্বত সুন্নাহকে বর্জন কিংবা রহিত করতে পারে না।
সমস্ত উম্মাতের ইজমা বা ঐকমত্য হলো, জানাযার সলাতও সলাতের অন্তর্ভুক্ত। এতে রয়েছে ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো, হাত বাঁধা, জামা‘আত হওয়া ইত্যাদি। সুতরাং অন্যান্য সলাতের ন্যায় এখানে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠও আবশ্যক। তাছাড়াও সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠের নির্দেশ ও ‘আমাল সংক্রান্ত সুস্পষ্ট হাদীস যেখানে বিদ্যমান সেখানে সংশয় সন্দেহ আর কি থাকতে পারে?
জানাযাহ্ আদায়কালে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ অন্যান্য দু‘আগুলো স্বরবে না নীরবে পড়বে এ নিয়ে কিছুটা মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ইবনু ‘আব্বাসের হাদীসের ভিত্তিতে কতিপয় ‘আলিম জোরে পাঠ করাকে মুস্তাহাব মনে করেন। কিন্তু জমহূর ইমাম ও মুহাদ্দিসের মতে নীরবে পাঠ করাটাই মুস্তাহাব। আরেকদল বলেন, জোরে আস্তে পড়া হলো ইমামের ইখতিয়ার সে জোরেও পড়তে পারে আস্তেও পড়তে পারে।
শাফি‘ঈ মাযহাবের কোন কোন ‘আলিম বলেছেনঃ জানাযাহ্ রাতে পড়লে জোরে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তে আর দিনে হলে আস্তে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়বে।
‘আবদুর রহমান মুবারকপূরী বলেনঃ ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস-এর জোরে পড়ার বিষয়টি ছিল শিক্ষার জন্য, জোরে পড়াই যে সুন্নাত এ উদ্দেশ্য নয়।
সালাতে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ না করার স্বপক্ষে মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত রিওয়ায়াতটি পেশ করা হয়, যার অর্থ হলঃ ইবনু মাসউদ রাঃ বলেছেন, আমাদের পক্ষে মাইয়্যিতের জানাযায় কোন কিরা‘আত ও কাওল নির্ধারণ করা হয়নি। অর্থাৎ সালাতে জানাযায় কিরা‘আতের স্থান বা সময়সূচী নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। এ সম্পর্কে আল্লামাহ রাহমানী বলেন, এ রিওয়ায়াতটি কিরা‘আত পাঠ না করা প্রমাণ করে না। তাছাড়া ইবনু মাসউদ থেকেই পরিষ্কার রিওয়ায়াত আছে, তিনি সালাতে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ করেছেন।
হানাফী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ হাসানসার নাবলালী তাঁর রচিত ‘‘আল নাজমুল মুস্তাতাব লি হুকমিল রিফাতে ফি সালাতিল জানাযাতে বে উম্মিল কিতাব’’ নামক গ্রন্থে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, সলাতে সূরা ফাতিহা পাঠ না করার চেয়ে ফাতিহা পাঠ করা বহুগুণে উত্তম। আল্লামাহ আবদুল হাই লাক্ষ্ণৌবী হানাফী তাঁর শরহে বিকায়ার ভাষ্য উমদাতুর রিয়ায়া গ্রন্থে লিখেছেন, সলাতে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফার সিদ্ধান্তের চেয়ে ইমাম শাফিয়ীর সিদ্ধান্তই দলীল হিসেবে অনেক মজবুত। আমাদের হানাফী ফকীহমন্ডলীর আল্লামাহ সার নাবলালী ইমাম শাফিয়ীর ফতওয়া পছন্দ করেছেন। কেননা আবূ উমামাহ বলেছেন, জানাযার সলাতে সূরা ফাতিহা পাঠ নাবী -এর নির্ধারিত বিধান ।১৮
কাযী সানাউল্লাহ পানিপথী জীবনের অন্তিমকালে বহু বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও পুত্র পরিজনের সামনে শক্তভাবে অসিয়ত রাখেন যে, আমার সালাতে জানাযায় যেন বিপুল মুসল্লীবৃন্দের সমাবেশ ঘটে, আর মুহাম্মাদ আলী অথবা হাকীম সুখয়া অথবা পীর মুহাম্মাদ আমার জানাযায় পেশ ইমাম হন। বায়াদা তাকবীরে উলা সূরা ফাতিহা হাম খোয়াননদ। অর্থাৎ তারা যেন প্রথম তাকবীরের পর সূরা আল-ফাতিহাও পাঠ করেন।১৯
মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর মহাগুরু মাওলানা রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন- ইমাম সাহেব রহঃ জানাযার সালাতে কিরা‘আতের নিয়তে কুরআন পাঠ নিষেধ করেছেন, তা দু‘আর নিয়তে পাঠ করলে দোষ নেই। অতঃপর তিনি বলেন, যদি কিরা‘আতের নিয়তেও পাঠ করা হয় তাহলেও গুনাহগার হবে না। কেননা হাদীস বিশারদ মুহাদ্দিসমন্ডলীর ও ইমাম শাফিয়ীর গবেষণা মতে সালাতে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ রসূলুল্লাহ সাঃ এর বিধান। কাজেই গুনাহগারও হবে না।২০
হানাফী ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী বলেন, সলাতে জানাযায় দু‘আর নিয়তে সূরা ফাতিহা পাঠ মুস্তাহাব। এতে ইমাম শাফিয়ীর শক্ত দলিল ভিত্তিক অভিমতের বিরোধিতা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।২১
বড় পীর সাহেব তাঁর বিশ্ব বিশ্রুত গুনিয়াতুত তালেবীনে লিখেছেন- সালাতে জানাযায় তাকবীর বলবে প্রথম তাকবীরের পর সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। কেননা ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আববাস রাঃ বলেছেন- আল্লাহর রাসূল সাঃ আমাদের নির্দেশ দান করেছেন, সালাতে জানাযায় যেন সূরা ফাতিহা পাঠ করা হয়। অতঃপর দ্বিতীয় তাকবীরের পর সালাতের তাশাহ্হুদের মত যেন নাবীর প্রতি দরূদ পাঠ করা হয়, কেননা তাবিয়ী ইমাম মুজাহিদ বলেছেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাঃ এর অষ্টাদশ সহচরকে সালাতে জানাযা বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছি, তাঁরা সকলেই বলেছেন, তুমি তাকবীর উচ্চারণ করবে, তারপর সূরা আল-ফাতিহা পাঠ করবে। আবার তুমি তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করে নাবী সাঃ এর প্রতি দরূদ পড়বে। অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে তোমার পছন্দমত মাইয়্যিত ব্যক্তির উদ্দেশে দু‘আ আবৃত্তি করবে।২২
ইমাম ও মুজতাহিদমন্ডলীর শিরোমণি শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী লিখেছেন- সালাতে জানাযার বিধানসমূহের মধ্যে সূরা ফাতিহা পাঠও একটি বিধান। যেহেতু সূরা ফাতিহা সর্বাপেক্ষা উত্তম ও সবচাইতে পূর্ণাঙ্গ দু‘আ যা খোদ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাগণকে স্বীয় পবিত্র কিতাবে শিক্ষাদান করেছেন।২৩
ইবন আবী দাউদ রহঃ ...... আবু উমামা ইবন সাহল ইবন হুনায়ফ রহঃ থেকে বর্ণনা করেন যে, (তিনি আনসারদের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ও তাঁদের আলেমদের এবং রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সাথে যারা বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলেন তাঁদের সন্তানদের অন্যতম ছিলেন) রাসুলুল্লাহ সাঃ এর এক সাহাবী তাঁকে খবর দিয়েছেনঃ সালাতুল জানাযার সুন্নাত হলো ইমাম তাকবীর বলবেন, তারপর নিঃশব্দে মনে মনে সূরা ফাতিহা পড়বেন। এরপর (আরো) তিন তাকবীরের মাধ্যমে সালাতুল জানাযা সমাপ্ত করবে।২৪
এভাবে আমরা দেখছি যে, হাদীস ও ফিকহের আলোকে সালাতুল জানাযার প্রথম তাকবীরের পর সূরা ফাতিহা পাঠ করাই উত্তম। এরপর দ্বিতীয় ‘তাকবীর’ বলে দরুদে ইবরাহীমী পাঠ করবেন। এরপর তৃতীয় ‘তাকবীর’ বলে মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ করবেন। এরপর ৪র্থ তাকবীরের পর সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করবেন। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,
“যখন তোমরা মৃতের উপর (জানাযার) সালাত আদায় করবে তখন তার জন্য দু‘আ করার বিষয়ে আন্তরিক হবে।” হাদীসটি হাসান।২৫
এ সময়ে রাসূলুল্লাহ সাঃ বিভিন্ন দু‘আ পাঠ করতেন। শুধু (আল্লা-হুম্মাগ্ফির লাহু) “আল্লাহ তাকে মাফ করে দিন” বা অনুরূপ বাক্যের মাধ্যমে দু‘আ করলেই দু‘আর ন্যূনতম দায়িত্ব পলিত হবে। তবে মুমিনের উচিত একাধিক মাসনূন দু‘আ মুখস্থ করে তা এ সময়ে পাঠ করা।
কোন কোন বিদ্বান বলেন, চতুর্থ তাকবীরের পরে
হাদীস শাস্ত্রের মহাপন্ডিত হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী এ হাদীস সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন- হাদীসটির বর্ণনা সূত্র বিশুদ্ধ।
অন্য হাদীসে আবূ উমামা রাঃ বলেন:
“সালাতুল জানাযায় সুন্নাত নিয়ম প্রথম তাকবীরের পর সূরা ফাতিহা চুপে চুপে পাঠ করা, এরপর তিনটি তাকবীর বলা এবং শেষ তাকবীরের সময় সালাম বলা।” হাদীসটি সহীহ।১৪
অন্য হাদীসে তাবিয় নাফি বলেন: “আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রাঃ সালাতুল জানাযায় কুরআনের কিছুই পাঠ করতেন না।” হাদীসটি সহীহ।১৫
অন্য সহীহ হাদীসে আবূ সাঈদ মাকবুরী বলেন, আমি আবূ হুরাইরা রাঃ কে প্রশ্ন করলাম, সালাতুল জানাযা কিভাবে আদায় করব। তিনি বলেন: “যখন মৃতদেহ রাখা হবে তখন তাকবীর বলবে, অতপর আল্লাহর হামদ-প্রশংসা করবে, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর উপর সালাদ পড়বে, অতঃপর দুআ করবে...।”১৬
সাহাবীগণের মতভেদের কারণে ফকীহগণও মতভেদ করেছেন। অধিকাংশ ফকীহ সালাতুল জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ আবশ্যক বলেছেন। হানাফী ফকীহগণের মতে প্রথম তাকবীরের পর আল্লাহর গুণবর্ণনা বা সানা পাঠ করতে হবে। তবে হামদ-সানা বা দুআর উদ্দেশ্যে সূরা ফাতিহা পাঠ করা যাবে। মোল্লা আলী কারী, শুরনুবলালী ও অন্যান্য হানাফী ফকীহ এ সময়ে সূরা ফাতিহা পাঠ করা মুস্তাহাব বলেছেন।১৭
জানাযার সালাতে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ বা চিরাচরিত নিয়ম। এ শাশ্বত সুন্নাহর ‘আমালকে সার্বজনীন করার জন্য বা তার অবহতির জন্য ইবনু ‘আব্বাস রাঃ জানাযার সালাতে জোরে জোরে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করেছেন। এটা তার নিজের বক্তব্যেই প্রকাশ করেছেন। সুতরাং জানাযার সালাতে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করতে হবে এ হাদীস তার প্রকৃষ্ঠ দলীল। (অসংখ্য সাহাবীদের মধ্যে ইবনু ‘আব্বাস রাঃ সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করলেন এবং সুন্নাত বলে দাবী করলেন এতে একজন সাহাবীও তার প্রতিবাদ অথবা বিরোধিতা করেননি, সুতরাং এটা ইজমায়ে সাহাবীর মর্যাদা রাখে)।
এছাড়াও বহু সাহাবী থেকে জানাযার সালাতে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠের হাদীস বর্ণিত হয়েছে। মুনযিরী এর বিস্তারিত তথ্যাদি পেশ করেছেন।
ইমামদের মধ্যে আয়িম্মায়ে সালাসা তথা ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাকসহ অসংখ্য ইমাম ও ফকীহ এ মতেরই অনুসারী ছিলেন।
ইমাম তুরকিমানী বলেনঃ হানাফীদের নিকট জানাযার সলাতের সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ ওয়াজিবও নয় মাকরূহও নয়। মালিকীদের মতে এটা মাকরূহ। ইমাম মালিক বলেছেনঃ আমাদের মাদীনায় এ ‘আমাল প্রচলিত নয়। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ ইমাম মালিক-এর এ কথার তীব্র প্রতিবাদ করে বলেছেন, আবূ হুরায়রাহ্, আবূ ‘উমামাহ্, সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব প্রমুখসহ মাদীনার বড় বড় সাহাবী, তাবি‘ঈ ও ফকীহ থেকে (সূরাহ্ আল ফা-তিহার) ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠের ‘আমাল পাওয়া সত্ত্বেও তিনি কিভাবে বললেন, এটা মাদীনাবাসীর ‘আমাল নয়? এরপরও কথা হলো এই যে, মাদীনাবাসীদের কোন ‘আমাল শারী‘আতের দলীল নয়।
ইবনু ‘আব্বাস-এর কথা- ‘এটা সুন্নাত’, এ সুন্নাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চিরাচরিত সুন্নাহ বা নিয়ম। সুন্নাহ মানে ফারযের (ফরযের/ফরজের) বিপরীত এমনটি নয়, এটা ইস্তিলাহে উরফী বা স্বভাবসিদ্ধ পরিভাষা। আশরাফ বলেছেন, সুন্নাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যা বিদ্‘আতের বিপরীত। আল্লামা কুসতুলানী বলেনঃ সুন্নাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এটা শার‘ঈ প্রণেতার পথ ও পন্থা। সুন্নাহ বলা এটা ওয়াজিব হওয়াকে নিষেধ করে না। ইমাম শাফি‘ঈ বলেনঃ অধিকাংশ ‘আলিমের নিকট কোন সাহাবীর সুন্নাহ দাবী এটা মারফূ' হাদীসের মর্যাদা রাখে। (ইবনু ‘আব্বাস-এর আরেকটি বর্ণনা মিশকাতুল মাসাবীহ/মিশকাত ১৬৭৩ নং হাদীসে দেখুন)
জানাযার সালাতে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ কোথায় পাঠ করতে হবে? এ হাদীসে তার উল্লেখ নেই। কিন্তু ইমাম শাফি‘ঈর কিতাবুল উম্ম, বায়হাক্বী, নাসায়ী প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থে জাবির রাঃ প্রমুখাত হাদীসে স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে প্রথম তাকবীর দিয়েই সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করবে।
মুসন্নাফে ‘আবদুর রাযযাক্ব, নাসায়ী প্রভৃতি গ্রন্থে আবূ ‘উমামাহ্ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জানাযার সালাতে সুন্নাত হলো প্রথম তাকবীর দিয়ে উম্মুল কুরআন সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করবে। এরপর (তাকবীর দিয়ে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পড়বে..... প্রথম তাকবীর ছাড়া ক্বিরাআত (কিরআত) পড়বেন।
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার রাঃ জানাযায় ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তেন না মর্মে যে কথাটি রয়েছে এর উপর ভিত্তি করে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ বর্জন মোটেও সঠিক নয়। কেননা এটা ছিল তার ব্যক্তিগত ‘আমাল। তাছাড়া তিনি ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তেন না। তার অর্থ এই নয় যে, তিনি সূরাহ্ আল ফা-তিহাও পাঠ করতেন না বরং এর অর্থ হলো তিনি সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ ছাড়া অন্য কোন সূরাহ্ পাঠ করতেন না। উপরন্তু এটি নেতিবাচক কথা, আর সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠের হাদীসটি হলো ইতিবাচক; উসূলে হাদীস তথা হাদীস বিজ্ঞানের মূলনীতি হলো ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু’টি হাদীস পরস্পর সাংঘর্ষিক হলে ইতিবাচক হাদীসটি প্রাধান্য পাবে। সর্বোপরি সাহাবীর কোন কথা বা ‘আমাল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাশ্বত সুন্নাহকে বর্জন কিংবা রহিত করতে পারে না।
সমস্ত উম্মাতের ইজমা বা ঐকমত্য হলো, জানাযার সলাতও সলাতের অন্তর্ভুক্ত। এতে রয়েছে ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো, হাত বাঁধা, জামা‘আত হওয়া ইত্যাদি। সুতরাং অন্যান্য সলাতের ন্যায় এখানে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠও আবশ্যক। তাছাড়াও সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠের নির্দেশ ও ‘আমাল সংক্রান্ত সুস্পষ্ট হাদীস যেখানে বিদ্যমান সেখানে সংশয় সন্দেহ আর কি থাকতে পারে?
জানাযাহ্ আদায়কালে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ অন্যান্য দু‘আগুলো স্বরবে না নীরবে পড়বে এ নিয়ে কিছুটা মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ইবনু ‘আব্বাসের হাদীসের ভিত্তিতে কতিপয় ‘আলিম জোরে পাঠ করাকে মুস্তাহাব মনে করেন। কিন্তু জমহূর ইমাম ও মুহাদ্দিসের মতে নীরবে পাঠ করাটাই মুস্তাহাব। আরেকদল বলেন, জোরে আস্তে পড়া হলো ইমামের ইখতিয়ার সে জোরেও পড়তে পারে আস্তেও পড়তে পারে।
শাফি‘ঈ মাযহাবের কোন কোন ‘আলিম বলেছেনঃ জানাযাহ্ রাতে পড়লে জোরে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তে আর দিনে হলে আস্তে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়বে।
‘আবদুর রহমান মুবারকপূরী বলেনঃ ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস-এর জোরে পড়ার বিষয়টি ছিল শিক্ষার জন্য, জোরে পড়াই যে সুন্নাত এ উদ্দেশ্য নয়।
সালাতে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ না করার স্বপক্ষে মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত রিওয়ায়াতটি পেশ করা হয়, যার অর্থ হলঃ ইবনু মাসউদ রাঃ বলেছেন, আমাদের পক্ষে মাইয়্যিতের জানাযায় কোন কিরা‘আত ও কাওল নির্ধারণ করা হয়নি। অর্থাৎ সালাতে জানাযায় কিরা‘আতের স্থান বা সময়সূচী নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। এ সম্পর্কে আল্লামাহ রাহমানী বলেন, এ রিওয়ায়াতটি কিরা‘আত পাঠ না করা প্রমাণ করে না। তাছাড়া ইবনু মাসউদ থেকেই পরিষ্কার রিওয়ায়াত আছে, তিনি সালাতে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ করেছেন।
হানাফী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ হাসানসার নাবলালী তাঁর রচিত ‘‘আল নাজমুল মুস্তাতাব লি হুকমিল রিফাতে ফি সালাতিল জানাযাতে বে উম্মিল কিতাব’’ নামক গ্রন্থে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, সলাতে সূরা ফাতিহা পাঠ না করার চেয়ে ফাতিহা পাঠ করা বহুগুণে উত্তম। আল্লামাহ আবদুল হাই লাক্ষ্ণৌবী হানাফী তাঁর শরহে বিকায়ার ভাষ্য উমদাতুর রিয়ায়া গ্রন্থে লিখেছেন, সলাতে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফার সিদ্ধান্তের চেয়ে ইমাম শাফিয়ীর সিদ্ধান্তই দলীল হিসেবে অনেক মজবুত। আমাদের হানাফী ফকীহমন্ডলীর আল্লামাহ সার নাবলালী ইমাম শাফিয়ীর ফতওয়া পছন্দ করেছেন। কেননা আবূ উমামাহ বলেছেন, জানাযার সলাতে সূরা ফাতিহা পাঠ নাবী -এর নির্ধারিত বিধান ।১৮
কাযী সানাউল্লাহ পানিপথী জীবনের অন্তিমকালে বহু বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও পুত্র পরিজনের সামনে শক্তভাবে অসিয়ত রাখেন যে, আমার সালাতে জানাযায় যেন বিপুল মুসল্লীবৃন্দের সমাবেশ ঘটে, আর মুহাম্মাদ আলী অথবা হাকীম সুখয়া অথবা পীর মুহাম্মাদ আমার জানাযায় পেশ ইমাম হন। বায়াদা তাকবীরে উলা সূরা ফাতিহা হাম খোয়াননদ। অর্থাৎ তারা যেন প্রথম তাকবীরের পর সূরা আল-ফাতিহাও পাঠ করেন।১৯
মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর মহাগুরু মাওলানা রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন- ইমাম সাহেব রহঃ জানাযার সালাতে কিরা‘আতের নিয়তে কুরআন পাঠ নিষেধ করেছেন, তা দু‘আর নিয়তে পাঠ করলে দোষ নেই। অতঃপর তিনি বলেন, যদি কিরা‘আতের নিয়তেও পাঠ করা হয় তাহলেও গুনাহগার হবে না। কেননা হাদীস বিশারদ মুহাদ্দিসমন্ডলীর ও ইমাম শাফিয়ীর গবেষণা মতে সালাতে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ রসূলুল্লাহ সাঃ এর বিধান। কাজেই গুনাহগারও হবে না।২০
হানাফী ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী বলেন, সলাতে জানাযায় দু‘আর নিয়তে সূরা ফাতিহা পাঠ মুস্তাহাব। এতে ইমাম শাফিয়ীর শক্ত দলিল ভিত্তিক অভিমতের বিরোধিতা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।২১
বড় পীর সাহেব তাঁর বিশ্ব বিশ্রুত গুনিয়াতুত তালেবীনে লিখেছেন- সালাতে জানাযায় তাকবীর বলবে প্রথম তাকবীরের পর সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। কেননা ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আববাস রাঃ বলেছেন- আল্লাহর রাসূল সাঃ আমাদের নির্দেশ দান করেছেন, সালাতে জানাযায় যেন সূরা ফাতিহা পাঠ করা হয়। অতঃপর দ্বিতীয় তাকবীরের পর সালাতের তাশাহ্হুদের মত যেন নাবীর প্রতি দরূদ পাঠ করা হয়, কেননা তাবিয়ী ইমাম মুজাহিদ বলেছেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাঃ এর অষ্টাদশ সহচরকে সালাতে জানাযা বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছি, তাঁরা সকলেই বলেছেন, তুমি তাকবীর উচ্চারণ করবে, তারপর সূরা আল-ফাতিহা পাঠ করবে। আবার তুমি তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করে নাবী সাঃ এর প্রতি দরূদ পড়বে। অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে তোমার পছন্দমত মাইয়্যিত ব্যক্তির উদ্দেশে দু‘আ আবৃত্তি করবে।২২
ইমাম ও মুজতাহিদমন্ডলীর শিরোমণি শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী লিখেছেন- সালাতে জানাযার বিধানসমূহের মধ্যে সূরা ফাতিহা পাঠও একটি বিধান। যেহেতু সূরা ফাতিহা সর্বাপেক্ষা উত্তম ও সবচাইতে পূর্ণাঙ্গ দু‘আ যা খোদ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাগণকে স্বীয় পবিত্র কিতাবে শিক্ষাদান করেছেন।২৩
ইবন আবী দাউদ রহঃ ...... আবু উমামা ইবন সাহল ইবন হুনায়ফ রহঃ থেকে বর্ণনা করেন যে, (তিনি আনসারদের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ও তাঁদের আলেমদের এবং রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সাথে যারা বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলেন তাঁদের সন্তানদের অন্যতম ছিলেন) রাসুলুল্লাহ সাঃ এর এক সাহাবী তাঁকে খবর দিয়েছেনঃ সালাতুল জানাযার সুন্নাত হলো ইমাম তাকবীর বলবেন, তারপর নিঃশব্দে মনে মনে সূরা ফাতিহা পড়বেন। এরপর (আরো) তিন তাকবীরের মাধ্যমে সালাতুল জানাযা সমাপ্ত করবে।২৪
এভাবে আমরা দেখছি যে, হাদীস ও ফিকহের আলোকে সালাতুল জানাযার প্রথম তাকবীরের পর সূরা ফাতিহা পাঠ করাই উত্তম। এরপর দ্বিতীয় ‘তাকবীর’ বলে দরুদে ইবরাহীমী পাঠ করবেন। এরপর তৃতীয় ‘তাকবীর’ বলে মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ করবেন। এরপর ৪র্থ তাকবীরের পর সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করবেন। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,
“যখন তোমরা মৃতের উপর (জানাযার) সালাত আদায় করবে তখন তার জন্য দু‘আ করার বিষয়ে আন্তরিক হবে।” হাদীসটি হাসান।২৫
এ সময়ে রাসূলুল্লাহ সাঃ বিভিন্ন দু‘আ পাঠ করতেন। শুধু (আল্লা-হুম্মাগ্ফির লাহু) “আল্লাহ তাকে মাফ করে দিন” বা অনুরূপ বাক্যের মাধ্যমে দু‘আ করলেই দু‘আর ন্যূনতম দায়িত্ব পলিত হবে। তবে মুমিনের উচিত একাধিক মাসনূন দু‘আ মুখস্থ করে তা এ সময়ে পাঠ করা।
কোন কোন বিদ্বান বলেন, চতুর্থ তাকবীরের পরে
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ইহকালে কল্যাণ দান কর এবং পরকালেও কল্যাণ দান কর। আর আমাদেরকে দোযখ-যন্ত্রণা থেকে রক্ষা কর।’২৬
দো‘আটি পড়বেন। আর পঞ্চম তাকবীর দিলে কোন সমস্যা নেই; বরং সেটিও সুন্নাত সম্মত।২৭ সেজন্য মাঝে মাঝে পঞ্চম তাকবীর দেওয়া উচিৎ, যাতে এই সুন্নাতটি বিলুপ্ত না হয়ে যায়। তবে যদি তিনি পঞ্চম তাকবীর দেওয়ার নিয়্যত করেন, তাহলে দো‘আ চতুর্থ ও পঞ্চম তাকবীরে ভাগ করে পড়বেন। আল্লাহই ভাল জানেন।
দো‘আটি পড়বেন। আর পঞ্চম তাকবীর দিলে কোন সমস্যা নেই; বরং সেটিও সুন্নাত সম্মত।২৭ সেজন্য মাঝে মাঝে পঞ্চম তাকবীর দেওয়া উচিৎ, যাতে এই সুন্নাতটি বিলুপ্ত না হয়ে যায়। তবে যদি তিনি পঞ্চম তাকবীর দেওয়ার নিয়্যত করেন, তাহলে দো‘আ চতুর্থ ও পঞ্চম তাকবীরে ভাগ করে পড়বেন। আল্লাহই ভাল জানেন।
উৎসঃ
১. সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] ১০৩৪। সহীহ, ইবনু মা-জাহ ১৪৯৪, তাহাবী শরীফ ২য় খন্ড জানাযা অধ্যায়, হাঃ নং ২৫৯৪, ২৫৯৫, ২৫৯৬।
২. সহীহ, ইবনু মা-জাহ ১৪৯৩; বুখারী-মুসলিম; সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] ১০৩৫।
৩. বুখারী-মুসলিম, সহীহ : বুখারী ১৩৩১, ১৩৩২, মুসলিম ৯৬৪, আবূ দাঊদ ৩১৯৫, নাসায়ী ৩৯৩, ইবনু মাজাহ্ ১৪৯৩, আহমাদ ২০১৬২, ইবনু হিব্বান ৩০৬৭, মিশকাতুল মাসাবীহ/মিশকাত ১৬৫৭। তাহাবী শরীফ ২য় খন্ড জানাযা অধ্যায়, হাঃ নং ২৫৯২,২৫৯৩, হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৪. সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৪৫।
৫. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৭২৪৩; সুনানুছ ছুগরা হা/৮৬৬; সনদ সহীহ, আহকামুল জানাইয, পৃঃ ১১৭- نعم روى البهقي (৪ / ৪৪) بسند صحيح عن ابن عمر أنه كان يرفع يديه على كل تكبيرة من تكبيرات الجنازة فمن كان يظن أنه لا يفعل ذلك إلا بتوقيف من النبي صلى الله عليه وسلم فله أن يرفع।
৬. সহীহ বুখারী হা/১৩২২-এর আলোচনা দ্রঃ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৬, ১/১৭৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/১২৪৪-এর আলোচনা, ২/৩৯৬; ফাৎহুল বারী ৩/২৪৫ পৃঃ। শায়খ বিন বায উক্ত হাদীছ সম্পর্কে বলেন, وهى مقبولة على الراجح عند أئمة الحديث ويكون ذلك دليلا على شرعية رفع اليدين فى تكبيرات الجنازة।
৭. (৮৫৭) (সহীহ বুখারী (তাওহীদ) ১৩১৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৪০)
৮. বুখারী-মুসলিম; সহীহ: বুখারী ১৩৩৩, আবূ দাঊদ ৩২০৪, মুয়াত্ত্বা মালিক ২৫৭, ইবনু হিব্বান ৩০৬৮, ইরওয়া ৭২৯, মুসলিম ৯৫১, নাসায়ী ১৯৭১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৯৩১, মিশকাতুল মাসাবীহ/মিশকাত ১৬৫২। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৯. মুসলিম সহীহ: মুসলিম ৯৫৭, আবূ দাঊদ ৩১৯৭, আত্ তিরমিযী ১০২৩, ইবনু মাজাহ্ ১৫০৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১১৪৪৮, আহমাদ ১৯৩২০, মিশকাতুল মাসাবীহ/মিশকাত ১৬৫৩। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
১০. তাহাবী শরীফ ২য় খন্ড জানাযা অধ্যায়, হাঃ নং ২৬৩০, ২৬৩১
১১. আহকামুল জানায়িয ১৪১ পৃষ্ঠা। আরো বিস্তারিত দেখুনঃ তাহাবী শরীফ ২য় খন্ড জানাযা অধ্যায়, হাঃ নং ২৬০৪ থেকে ২৬৫১ পর্যন্ত।
১২. তিরমিযী (আবওয়াবু সালাত, ৬৫-বাব ইফতিতাহিস সালাত) ২/৯-১১; ভারতীয় ১/৫৭। মুসলিম, নং ৩৯৯; আর সুনান গ্রন্থকার চারজন। আবু দাউদ, নং ৭৭৫; তিরমিযী, নং ২৪৩; ইবন মাজাহ্, নং ৮০৬; নাসাঈ, নং ৮৯৯। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ১/৭৭; সহীহ ইবন মাজাহ্ ১/১৩৫।
১৩. বুখারী (২৯-কিতাবুল জানাইয, ৬৪-বাব ইয়াকারাউ ফাতিহা) ১/৪৪৮; ভাতীয় ১/১৭৮; তিরমিযী (৮-কিতাবুল জানাইয, ৩৯- বাব .. ফিল কিরাআতি... ৩/৩৪৬; ভারতীয় ১/১৯৮-১৯৯; নাসায়ী ২/৩৭৮; ভাতীয় ১/২১৮। সহীহ: বুখারী ১৩৩৫, নাসায়ী ১৯৮৭, ইবনু হিব্বান ৩০৭১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৯৫৬, মিশকাতুল মাসাবীহ/মিশকাত ১৬৫৪। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
১৪. নাসায়ী, কিতাবুল জানাইয, বাবুদ্দুআ; ২/৩৭৮; ভাতীয় ১/২১৮; আলবানী, আহকামুল জানাইয, পৃঃ ১১১।
১৫. মালিক, আল-মাআত্তা ১/২২৮।
১৬. মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান, আল-মুআত্তা ২/৯৮। হাদীসটির সনদ সহীহ।
১৭. আব্দুল হাই লাখনবী, আত-তালীকুল মুমাজ্জাদ (মুআত্তা ইমাম মুহাম্মাদ-সহ) ২/৯৮; ইবনু আবিদীন, হাশিয়াত রাদ্দিল মুহতার ২/২১৪।
১৮. উমদাতুর রিয়ায়া ১ম খন্ড ১৮৯ পৃষ্ঠা।
১৯. মালাবুদ্দা মিনহু
২০. ফাতওয়া রাশিদীয়া কামিল ২৫৮ পৃষ্ঠা।
২১. রাদ্দুল মুহতার।
২২. গুনিয়াতুত তালেবীন- উর্দু অনুবাদ সহ ১০৫ পৃষ্ঠা।
২৩. হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা- উর্দু অনুবাদ সহ ১২৩ পৃষ্ঠা।
২৪. তাহাবী শরীফ ইফাঃ ২য় খন্ড জানাযা অধ্যায়, হাঃ নং ২৬৪৪।
২৫. আবু দাউদ (কিতাবুল জামাইয, বাবুদ্দুআ) ৩/২০৭; ভারতীয় ২/৪৫৬; আলবানী, আহকামুল জানাইয, পৃঃ ১২৩। হাদীসটি হাসান।
২৬. সূরা আল-বাকারা' ২/২০১।
২৭. মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৫৭। জানাযার বিধিবিধান শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীহ রহঃ
১. সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] ১০৩৪। সহীহ, ইবনু মা-জাহ ১৪৯৪, তাহাবী শরীফ ২য় খন্ড জানাযা অধ্যায়, হাঃ নং ২৫৯৪, ২৫৯৫, ২৫৯৬।
২. সহীহ, ইবনু মা-জাহ ১৪৯৩; বুখারী-মুসলিম; সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] ১০৩৫।
৩. বুখারী-মুসলিম, সহীহ : বুখারী ১৩৩১, ১৩৩২, মুসলিম ৯৬৪, আবূ দাঊদ ৩১৯৫, নাসায়ী ৩৯৩, ইবনু মাজাহ্ ১৪৯৩, আহমাদ ২০১৬২, ইবনু হিব্বান ৩০৬৭, মিশকাতুল মাসাবীহ/মিশকাত ১৬৫৭। তাহাবী শরীফ ২য় খন্ড জানাযা অধ্যায়, হাঃ নং ২৫৯২,২৫৯৩, হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৪. সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৪৫।
৫. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৭২৪৩; সুনানুছ ছুগরা হা/৮৬৬; সনদ সহীহ, আহকামুল জানাইয, পৃঃ ১১৭- نعم روى البهقي (৪ / ৪৪) بسند صحيح عن ابن عمر أنه كان يرفع يديه على كل تكبيرة من تكبيرات الجنازة فمن كان يظن أنه لا يفعل ذلك إلا بتوقيف من النبي صلى الله عليه وسلم فله أن يرفع।
৬. সহীহ বুখারী হা/১৩২২-এর আলোচনা দ্রঃ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৬, ১/১৭৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/১২৪৪-এর আলোচনা, ২/৩৯৬; ফাৎহুল বারী ৩/২৪৫ পৃঃ। শায়খ বিন বায উক্ত হাদীছ সম্পর্কে বলেন, وهى مقبولة على الراجح عند أئمة الحديث ويكون ذلك دليلا على شرعية رفع اليدين فى تكبيرات الجنازة।
৭. (৮৫৭) (সহীহ বুখারী (তাওহীদ) ১৩১৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৪০)
৮. বুখারী-মুসলিম; সহীহ: বুখারী ১৩৩৩, আবূ দাঊদ ৩২০৪, মুয়াত্ত্বা মালিক ২৫৭, ইবনু হিব্বান ৩০৬৮, ইরওয়া ৭২৯, মুসলিম ৯৫১, নাসায়ী ১৯৭১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৯৩১, মিশকাতুল মাসাবীহ/মিশকাত ১৬৫২। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৯. মুসলিম সহীহ: মুসলিম ৯৫৭, আবূ দাঊদ ৩১৯৭, আত্ তিরমিযী ১০২৩, ইবনু মাজাহ্ ১৫০৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১১৪৪৮, আহমাদ ১৯৩২০, মিশকাতুল মাসাবীহ/মিশকাত ১৬৫৩। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
১০. তাহাবী শরীফ ২য় খন্ড জানাযা অধ্যায়, হাঃ নং ২৬৩০, ২৬৩১
১১. আহকামুল জানায়িয ১৪১ পৃষ্ঠা। আরো বিস্তারিত দেখুনঃ তাহাবী শরীফ ২য় খন্ড জানাযা অধ্যায়, হাঃ নং ২৬০৪ থেকে ২৬৫১ পর্যন্ত।
১২. তিরমিযী (আবওয়াবু সালাত, ৬৫-বাব ইফতিতাহিস সালাত) ২/৯-১১; ভারতীয় ১/৫৭। মুসলিম, নং ৩৯৯; আর সুনান গ্রন্থকার চারজন। আবু দাউদ, নং ৭৭৫; তিরমিযী, নং ২৪৩; ইবন মাজাহ্, নং ৮০৬; নাসাঈ, নং ৮৯৯। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ১/৭৭; সহীহ ইবন মাজাহ্ ১/১৩৫।
১৩. বুখারী (২৯-কিতাবুল জানাইয, ৬৪-বাব ইয়াকারাউ ফাতিহা) ১/৪৪৮; ভাতীয় ১/১৭৮; তিরমিযী (৮-কিতাবুল জানাইয, ৩৯- বাব .. ফিল কিরাআতি... ৩/৩৪৬; ভারতীয় ১/১৯৮-১৯৯; নাসায়ী ২/৩৭৮; ভাতীয় ১/২১৮। সহীহ: বুখারী ১৩৩৫, নাসায়ী ১৯৮৭, ইবনু হিব্বান ৩০৭১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৯৫৬, মিশকাতুল মাসাবীহ/মিশকাত ১৬৫৪। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
১৪. নাসায়ী, কিতাবুল জানাইয, বাবুদ্দুআ; ২/৩৭৮; ভাতীয় ১/২১৮; আলবানী, আহকামুল জানাইয, পৃঃ ১১১।
১৫. মালিক, আল-মাআত্তা ১/২২৮।
১৬. মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান, আল-মুআত্তা ২/৯৮। হাদীসটির সনদ সহীহ।
১৭. আব্দুল হাই লাখনবী, আত-তালীকুল মুমাজ্জাদ (মুআত্তা ইমাম মুহাম্মাদ-সহ) ২/৯৮; ইবনু আবিদীন, হাশিয়াত রাদ্দিল মুহতার ২/২১৪।
১৮. উমদাতুর রিয়ায়া ১ম খন্ড ১৮৯ পৃষ্ঠা।
১৯. মালাবুদ্দা মিনহু
২০. ফাতওয়া রাশিদীয়া কামিল ২৫৮ পৃষ্ঠা।
২১. রাদ্দুল মুহতার।
২২. গুনিয়াতুত তালেবীন- উর্দু অনুবাদ সহ ১০৫ পৃষ্ঠা।
২৩. হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা- উর্দু অনুবাদ সহ ১২৩ পৃষ্ঠা।
২৪. তাহাবী শরীফ ইফাঃ ২য় খন্ড জানাযা অধ্যায়, হাঃ নং ২৬৪৪।
২৫. আবু দাউদ (কিতাবুল জামাইয, বাবুদ্দুআ) ৩/২০৭; ভারতীয় ২/৪৫৬; আলবানী, আহকামুল জানাইয, পৃঃ ১২৩। হাদীসটি হাসান।
২৬. সূরা আল-বাকারা' ২/২০১।
২৭. মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৫৭। জানাযার বিধিবিধান শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীহ রহঃ
বাংলাদেশ ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার