আমাদের সমাজে আলেমদের যথাযথ সম্মান না থাকার কারণ ও প্রতিকার
বিন্যাস ও গ্রন্থনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(পিসটিভি বাংলা এর গ্রুপ আলোচনা থেকে গৃহীত)
ভূমিকা: আলেমদের সম্মান
দেয়ার উদ্দেশ্য হল ইলমের সম্মান দেয়া। আমরা যদি ইলমকে সম্মান করি তাহলে সেই
ইলমের ধারক-বাহকগণ নি:সন্দেহে সম্মান পাওয়ার হকদার। বর্তমান সময়ে আমাদের
সমাজে আলেমদের মর্যাদার ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে বিভিন্ন কারণে। তাই বিজ্ঞ
আলেমগণ তাদের মতামতের আলোক এই মর্যাদা ঘাটতির কারণগুলো চিহ্নিত করার পর
সেগুলোর প্রতিকারের উপায়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। পিস টিভি
বাংলা এর ‘গ্রুপ আলোচনা’ থেকে বিষয়টির সারাংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল:
১) আখিরাত বিমুখতা: আমাদের
সমাজে আলেম সমাজ মানুষের নিকট যথাযথ মর্যাদা না পাওয়ার অন্যতম কারণ হল,
বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ দুনিয়ার প্রতি প্রচণ্ড ভাবে ঝুঁকে পড়েছে এবং
আখিরাতের প্রতি তাদের ঈমানে দুর্বলতা সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে,মানুষ
দুনিয়াদার লোকদেরকে যেমন, বিজ্ঞানী,তারকা, ক্রিকেটার, আর্কিটেকচার ইত্যাদি
শ্রেণি লোকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করছে। পক্ষান্তরে আলেমগণ যারা
আখিরাতের দিকে মানুষকে আহ্বান করেন তারা যথাযথ মর্যাদা পাচ্ছেন না।
২) সাধারণ মানুষের ইলমের গুরুত্ব অনুধাবনে ব্যার্থতা: অধিকাংশ
দীনদার শ্রেণির মানুষও আলেমদের মর্যাদার মূল কারণ বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছেন। আর
তা হল,তাদের নিকট থেকে ওহীর ইলম গ্রহণ করা এবং তা দ্বারা উপকৃত হওয়া। যার
কারণে তারা আলেমদের কাছে যান,শুধু দুয়া,মিলাদ,খতমে ইউনুস ইত্যাদি বিদয়াতী
কাজের জন্য!
৩) আলেমদের মতবিরোধের প্রতি ভুল ধারণা: শরীয়তের
বিষয়ে আলেমদের মাঝে সৃষ্ট মতবিরোধকে সাধারণ মানুষ ভুল বুঝে থাকেন। অথচ
বিভক্তি ও মতবিরোধ থাকা খুবই স্বাভাবিক। কেননা,মানুষের বুঝ শক্তি এক নয়।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে আগেই ভবিষ্যৎ বাণী করে
গেছেন। তাই এই মতবিরোধকে ভুল বুঝার কোন সুযোগ নাই।
৪) দীন থেকে মানুষ বিমুখ হওয়ার একটি
কারণ,হল এটি কিয়ামতের আলামত। তাছাড়া বর্তমান যুগটা মুসলমানদের পতনের যুগ।
আলেমদেরর উচিত হবে,নিজ নিজ স্থান থেকে তারা যেন কুরআন-সুন্নাহর দাওয়াতকে
মানুষের নিকট ছড়িয়ে দেন। মানুষ যখন কুরআন-সুন্নাহর মর্যাদার কথা বুঝতে
পারবে তখন তারা কুরআন-সুন্নাহর ধারক-বাহক আলেম সমাজের মর্যাদা বুঝতে সক্ষম
হবে।
৫) মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রীয় সংবিধান হিসেবে কুরআনকে বিসর্জন দেয়া: ১৮৭৬
খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত সারা মুসলিম বিশ্বের সংবিধান ছিল আল কুরআন। ১৮৭৬
খৃষ্টাব্দে তুরস্কের সুলতান আব্দুল মজীদ সর্ব প্রথম কুরআনকে বাদ দিয়ে
আলাদাভাবে একটি সংবিধান রচনা করেন যার নাম ‘ম্যাসেলে’। যতদিন কুরআন ছিল
রাষ্ট্রীয় সংবিধান ততদিন পর্যন্ত কুরআনের ব্যাখ্যাকার-মুফাসসির, মুহাদ্দিস,
ফকীহ, ইমাম ও আলেমদের মর্যাদা ছিল। বর্তমানেও সউদী আরবে এ মর্যাদা বলবত
আছে। কারণ সেখানে এখনও কুরআন-সুন্নাহ হল রাষ্ট্রীয় সংবিধান।
৬) মিডিয়ার অপপ্রচার: আলেমদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী মিডিয়ার ব্যাপক অপপ্রচার এবং ছোট-খাটো ভুলগুলোকে বড় করে তুলে ধরা।
৭) সহীহ ইলমের প্রচার কম থাকা:
বর্তমানে ইলমের নামে অনেক ভেজাল কথা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে গেছে। অথচ সহীহ
ইলমের প্রচার ও প্রসার খুব নগণ্য। যার কারণে মানুষ খাঁটি জিনিসটি খুঁজে
পাচ্ছে না। তাই আলেমগণ যত বেশী সহীহ ভাবে কুরআন-সুন্নাহর ইলম ধারণ করবেন
এবং ইলমের নামে লক্ষ লক্ষ কিতাবে যে সকল অজ্ঞতা ও মূর্খতা ছড়িয়ে আছে
সেগুলোকে বর্জন করবেন তত তাড়াতাড়ি তাদের সেই হারানো মর্যাদা ফিরে আসবে।
৮) অসুস্থ চর্চা: অনেক মানুষ আছে যারা আলেমদের প্রতি তার কি করণীয় সেটা না ভেবে তারা আলেমদের বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
৯) জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলেমদের বিচরণ না থাকা:
ইলম বলতে বুঝায় কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান,তাওহীদের
জ্ঞান,ইবাদত,আখলাক-মুয়ামালাতের জ্ঞান ইত্যাদির পাশাপাপাশি বস্তু বিজ্ঞানের
জ্ঞানও শামিল। যেমন, কুরআনিক সাইন্স,ভুগল, আলজেব্রা,গণিত,চিকিৎসা,মহাকাশ
বিদ্যা,ভূতত্ব বিদ্যা,রসায়ন বিদ্যা, বায়োলজি ইত্যাদি সব বিষয় কুরআনে রয়েছে
এবং আমাদের পূর্ববর্তী আলেমগণ সেগুলো আবিষ্কার করে গেছেন।
সুতরাং বর্তমান যুগের উলামাদের উচিৎ উপরোক্ত সকল সাইটে বিচরণ করা। যদি তারা এ পথে বিচরণ করতেন তবে মানুষ তাদেরকে এক চোখে দেখতো না।
১০) আলেমদের কর্তব্য রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শের আলোকে নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করা। আলেমগণ
যে ইলম প্রচার করছেন তাদেরকে হতে হবে সে ইলমের মূর্ত প্রতীক ও আদর্শ। তাদের
কবর্ত্য হবে,সঠিক কথাটি সমাজের সর্বস্তরে সাহসিকতার সাথে নি:স্বার্থ ভাবে
প্রচারে সচেষ্ট হওয়া। কাজে-কর্মে তাকে হতে হবে আদর্শবান ও অনুসরণীয়।
যাদের আলোচনা থেকে উক্ত বিষয়টি নেয়া হয়েছে:- শায়খ মুফতী কাযী মুহাম্মদ ইবরাহীম
- শায়খ আহমাদুল্লাহ
- শায়খ মুযাফফার বিন মুসহিন
পরিবেশনায়: পিসটিভি বাংলা