ধর্ম যার যার, উৎসব সবার !
একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা ও ইসলামী দৃষ্টিকোণঃ
ধর্ম যার যার, উৎসব সবার- বাক্য দুটি ঈমানের দাবীদার অনেক মুসলিম ভাই ও বোনকে বলতে শোনা যায়। এবং তারা বিশ্বাস করেন যে, নিজের ধর্ম পালন করার পাশাপাশি অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহন করা বৈধ!
এমন অনেক অজ্ঞ মুসলিম আছে, যারা জেনে অথবা না জেনে বিজাতীয় উৎসব পালন করে থাকেন যেমন পুজা, রাখি বন্ধন, নববর্ষের শুভেচ্ছা, বড়দিন, ভালবাসা দিবস ইত্যাদি। এছাড়াও আরও কতো দিবস যে আমরা পালন করে থাকি তার সঠিক হিসাব একমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে।
এমন বহু মুসলিম রয়েছেন যারা অমুসলিমদের ধর্মীয় বা শিরকি উৎসবে নিজে অথবা পরিবারসহ উপস্থিত হন ও তাদেরকে শুভেচ্ছা জানান। অথবা নিজেরাই উৎসব উদযাপন করে থাকেন। কেউ কেউ নতুন পোশাক পরিধান করেন, উত্তম খাবারের ব্যাবস্থা করেন ও উপহার সামগ্রী আদান প্রদান করে থাকেন। আবার সমাজ ও রাষ্ট্রের গণ্যমান্য লোকদের মধ্যে কেউ কেউ এমন বিজাতীয় অনুষ্ঠানে সভাপতি হন অথবা সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে থাকেন।
আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত ও গ্রহণযোগ্য দ্বীন ইসলাম এছাড়া আর যত ধর্ম আছে তা সবই মিথ্যা ও বাতিলঃ
পবিত্র কুরআন মাজীদে মহান আল্লাহ তায়ালা উল্লেখ করেনঃ ‘’নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন ইসলাম’’ আলে ইমরান ৩/১৯
মহান আল্লাহ তায়ালা আরও বলেনঃ ‘’যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম গ্রহন করতে চাইলে, কখনো তার নিকট থেকে তা গ্রহন করা হবে না। এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’’ আলে ইমরান ৩/৮৫
বাতিল ধর্মের উৎসবও বাতিলঃ
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ‘’যারা কোনো মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না, আর বেহুদা কর্মকাণ্ডের সম্মুখীন হলে সসম্মানে পাশ কাটিয়ে চলে যায়’’ ফুরকান ২৫/৭২
বিধর্মীদের উৎসবে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোও একটা অনর্থক কাজঃ
কাউকে শুভেচ্ছা জানানো বা কারো শুভ কামনা করা মুলত ইসলামী পরিভাষায় দু’আর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং অমুসলিমদের জন্য হিদায়াত ব্যতীত অন্য কোনো দু’আ করা কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ‘’নবী ও মুমিনদের জন্য শোভনীয় নয় মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, তারা আত্মীয়-স্বজন হলেও, যখন এটা তাদের কাছে সুস্পষ্ট যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী’’ তাওবা ৯/১১৩
অন্য আরেকটি আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ‘’তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো আর নাই করো (উভয়ই তাদের জন্য সমান)। তুমি তাদের জন্য সত্তর বার ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ কখনো তাদেরকে ক্ষমা করবেন না। এটা এজন্য যে, তারা আল্লাহ ও তার রাসুলের সাথে কুফরী করেছে। আর আল্লাহ ফাসিক লোকদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন না’’ তাওবা ৯/৮০
বিজাতীয় ও শিরকি অনুষ্ঠানে সাহায্য সহযোগিতা করা জায়েজ নয়ঃ
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ‘’তোমরা সৎ ও তাকওয়ার কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করো। এবং পাপ ও অন্যায় কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর’’ মায়িদাহ ৫/২
শিরকি উৎসবে অংশগ্রহন তো দুরের কথা, বরং সেই স্থানে উপস্থিত হওয়াও যায়েজ নয়ঃ
সাবিত ইবন দাহহাক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ)-এর যুগে এক ব্যক্তি মানত করে যে, ‘বুওয়ানা’ নামক স্থানে একটি উট যবেহ করবে। সে নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বলল, আমি ‘বুওয়ানা’ নামক স্থানে একটি উট কুরবানি করার মানত করেছি।
নবী (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, সেখানে কি জাহেলী যুগের কোনো মূর্তি রয়েছে? লোকেরা বলল, না। নবী (সাঃ) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, সেখানে কি তাদের কোনো মেলা বসতো? লোকেরা বলল, না। অতঃপর নবী (সাঃ) বললেন, তোমার মানত পূর্ণ করতে পারো। কেননা আল্লাহর নাফরমানী মুলক কাজের জন্য মানত পূর্ণ করা জায়েয নয়। এবং আদম সন্তান যে জিনিসের মালিক নয় তারও কোনো মানত নেই’’ আবু দাউদ ৩৩১৫ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
যে ব্যাক্তি আল্লাহ্র প্রতি ঈমানের দাবী করে, মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে শেষ নবী হিসাবে স্বীকার করে, পরকালের প্রতি বিশ্বাস করে এমন কোনো ব্যাক্তির জন্য বৈধ নয় অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহন করা, তাদেরকে সহযোগিতা করা। এমনকি তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোও কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ হতে পারেনা।
এজকন মুসলিমের কোনো কাজই বৃথা নয়। তাকে যেকোন কাজ করার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে এবং তাঁকে খেয়াল রাখতে হবে যে, এই কাজের মাধ্যমে সে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারছে কিনা।
ইসলাম এমন এক ধর্ম ও মুসলিম এমন এক জাতি, যার সতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেই বৈশিষ্ট্য উপেক্ষা করে কোনো মুসলিম বিজাতীয় বৈশিষ্ট্য গ্রহন করতে পারে না। একজন মুসলিমের উচিৎ নিজের দ্বীন নিয়ে গর্ব করা এবং নিজ জীবনব্যাবস্থাকে সকল ধর্মের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া।
যারা ইসলামের শত্রু, ইসলাম বিরোধী, ইসলাম অস্বীকারকারী, কাফের তাদের অনুকরন ও অনুসরন বৈধ নয়। অন্তর থেকে তো নয়ই, বাহ্যিকভাবেও তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন বৈধ নয়। অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে মহান আল্লাহর ইবাদত বাদ দিয়ে অথবা ইসলামের সাথে সাংঘরসিক বিষয়ে একতা পোষণ করা, তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর মানে হচ্ছে আল্লাহ ও রাসুলের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করাঃ
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ‘’আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী এমন কোনো সম্প্রদায় তুমি পাবে না, যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধচারীগনকে ভালোবাসে, যদিও সে তাদের পিতা অথবা পুত্র, ভ্রাতা অথবা একান্ত আপনজন কেউ হয়। আল্লাহ এদের অন্তরে ঈমান বদ্ধমুল করে দিয়েছেন, আর নিজের পক্ষ হতে রুহ দিয়ে তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন। তাদেরকে তিনি দাখিল করবেন জান্নাতে যার তলদেশ দিয়ে বয়ে চলেছে নির্ঝরিণী, তাতে তারা চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট, আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এরাই আল্লাহর দল। জেনে রেখ, আল্লাহর দলই সাফল্যমণ্ডিত’’ মুজাদালাহ ৫৮/২২
অমুসলিম তথা কাফিরদের অনুসরনের কারনে মুসলিমেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেঃ
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ''হে ঈমানদারগন! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য করো তাহলে তারা তোমাদেরকে পিছনের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে, তখন তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে'' আলে ইমরান ৩/১৪৯
কাফিরেরা আশা করে মুসলিমেরাও যেন তাদের মতো হয়ে যায়ঃ
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ''তারা আকাঙ্ক্ষা করে যে, তারা নিজেরা যেমন কুফরী করেছে, তোমরাও তেমনি কুফরী করো, যাতে তোমরা তাদের সমান হয়ে যাও'' নিসা ৪/৮৯
মুসলিমদের উৎসবের দিন দুটি- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাঃ
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’প্রত্যেক জাতির জন্যই আনন্দোৎসব রয়েছে। আর এটা (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা) হল আমাদের আনন্দের দিন’’ বুখারী ৯৪৯, ৯৫২, ৯৮৭, ৩৯৩১; মুসলিম ১৪৭৯-(ক)-(১৬/৮৯২), ১৪৮০-(১৭/...)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) মদীনায় আগমন করার পর দেখেন, মদীনাবাসীরা নির্দিষ্ট দুটি দিনে খেলাধুলা ও আমোদ-প্রমোদ করে থাকে। নবী (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এ দুটি কিসের দিন? তারা বলল, ইসলামের পূর্বে জাহেলিয়াতের সময় এ দিন দুটিতে আমরা খেলাধুলা করতাম।
তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, এ দু দিনের পরিবর্তে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য আরও উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। এর একটি হল ঈদুল আযহার দিন অপরটি ঈদুল ফিতরের দিন’’ নাসায়ী ১৫৫৬; আবু দাউদ ১১৩৪; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৪৩৯ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
এছাড়া জুম’আর দিনকে সাপ্তাহিক ঈদ বা উৎসবের দিন হিসাবে অভিহিত করা হয়েছেঃ
ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’নিশ্চয়ই আল্লাহ এ দিনকে ঈদের দিন হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুম’আর সলাত আদায় করতে আসবে, সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মেসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য’’ ইবন মাযাহ ১০৯৮; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৩৯৯ (আলবানি হাসান বলেছেন)
উবায়েদ ইবন সাব্বাক (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কোনো এক জুম’আর দিন বলেছেনঃ ‘’হে মুসলিমগণ! এ দিন, যে দিনকে আল্লাহ তায়ালা ঈদ হিসাবে গণ্য করেছেন। অতএব তোমরা এ দিন গোসল করবে। যার কাছে সুগন্ধি আছে, সে তা ব্যবহার করলে কোনো ক্ষতি নেই। তোমরা অবশ্য অবশ্যই মেসওয়াক করবে’’ মিশকাতুল মাসাবীহ ১৩৯৮ (আলবানি হাসান বলেছেন)
বাৎসরিক ঈদ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা এবং সাপ্তাহিক ঈদ জুম’আ ছাড়া অন্য কোনো দিনকে উৎসবের দিন হিসাবে পালন করা মুসলিমদের জন্য উচিৎ নয়। আর অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে যোগদান করা, উৎসবে সাহায্য করা অথবা সমর্থন দেয়া বা শুভেচ্ছা জানানো হারাম।
উপরোক্ত কুরআনের আয়াত ও হাদীস সমুহ থেকে প্রমানিত হয় যে, মুসলিমেরা শুধুমাত্র তাঁদের খুশির দিনেই উৎসব পালন করবে এবং বিজাতীয় রীতিনীতি ও তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকবেঃ
উমার ইবন খাত্তাব (রাঃ) বলেনঃ ‘’তোমরা আল্লাহর দুশমনদের ঈদে তাদের থেকে দূরে থাকো’’ বাইহাকি ১৯৩৩৪
তিনি আরও বলেন, (অপ্রয়োজনে) অনারবের ভাষা শিখো না এবং মুশরিকদের উৎসবের দিনে তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করো না।
আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) বলেনঃ ‘’যে ব্যক্তি অমুসলিমদের দেশে বসবাস করে, তাদের নওরোজ (নববর্ষ) ও উৎসব পালন করে এবং তাদের সাদৃশ্য গ্রহন করে এবং এই অবস্থায় মারা যায়, সেই ব্যক্তির তাদের সাথে হাশর হয়’’ বাইহাকি ১৯৩৩৫
নিম্নে আরও কয়েকজন ইসলামী বিদ্বানদের বক্তব্য উল্লেখ করা হলঃ
হাফিয ইবন হাজার ‘ফাতহুল বারীতে’ মুশরিকদের উৎসবসমুহে আনন্দ প্রকাশ করা ও তাদের সাথে সাদৃশ্য হওয়াকে ঘৃণিত হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
বিশিষ্ট হানাফী বিদ্বান আবু হাফস আল আন-নাসাফী বিধর্মীদের উৎসবে যোগদানের করার সমালোচনা করে বলেন, কেউ যদি মুশরিকদের ঐ দিনে একটি ডিমও উপহার দেয়ার মাধ্যমে তাদের উৎসবকে সম্মান করে, তাহলে সে আল্লাহর সাথে কুফরী করলো।
কাযী মানসুর হানাফী বলেন, ঐ দিনে, ঐ দিনের সম্মানে কেউ যদি কোনো কিছু ক্রয় করে অথবা অন্য কাউকে উপহার দেয় তাহলে সে কাফির। আর যদি ভোগের উদ্যেশ্যে ক্রয় করে আর স্বাভাবিক ভালোবাসার বন্ধুত্ব চালু রাখার জন্য উপহার দেয় তাহলে সে কাফির হবে না, তবে কাজটি ঘৃণিত এবং এর থেকে বেঁচে থাকা প্রয়োজন।
ইবন হাজার বলেন, এ কু-সংস্কৃতি চালু করেছে মিসরবাসীরা। তাদের অধিকাংশরা ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের উৎসব ও সংস্কৃতির সাথে মিশে গিয়েছিল তাদেরকে সম্মান করতে গিয়ে। যেমন খাওয়া-দাওয়া, ও পোশাক-আশাকে মিশে গিয়েছিল।
উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী বলেন, অনুরুপভাবে প্রচুর সংখ্যক ভারত ও পাকিস্তানের মুসলিম কাফের বিশেষ করে হিন্দু, খ্রিষ্টান, ইয়াহুদী ও অগ্নিপুজকদের সাথে তাদের উৎসবের সংস্কৃতির সাথে মিশে গেছে। তারা যা করে মুসলিমেরাও তা করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস একাডেমী ১৪৩৯ হাদীসের টিকা দ্রষ্টব্য)
ইমাম মালিক বলেনঃ ‘’ওরা ওদের ঈদের দিন পালনের জন্য যে নৌযানে চড়ে, ষে নৌযানে চড়া মাকরুহ। যেহেতু ওদের উপর (আল্লাহর) গযব ও অভিশাপ অবতীর্ণ হয়’’ আল-লাম ফিল হাওয়াদিসি ওয়াল-বিদ’ ১/২৯৪
ইমাম মালিক-এর অনেক অনুসারী বলেনঃ ''যে ব্যক্তি নওরোজের দিন তরমুজ ভাঙল, ষে যেন শুকর যবাই করলো’’ আল-লাম ফিল হাওয়াদিসি ওয়াল বিদ’ ১/২৯৪
আমর বিন মুররাহ বলেনঃ ‘’রহমানের বান্দারা শিরকি ব্যাপারে মুশরিকদের সহযোগিতা করে না। এবং (তাদের শিরকি অনুষ্ঠানে) নিজেকে মিশিয়ে দেয় না’’ ইকতিযা ১/৪২৭
ইবন তাইমিয়া বলেনঃ ‘’মহান আল্লাহ তাদের ঈদ অনুষ্ঠানকে বাতিল বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং রহমানের বান্দাদেরকে সেখানে উপস্থিত হতে ও তা দর্শন করতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং যদি সেখানে উপস্থিত হওয়া ও দর্শন করা বৈধ না হয়, তাহলে তাতে অংশগ্রহন করা এবং তাতে সহমত পোষণ করা কিভাবে বৈধ হতে পারে? ইকতিযা ১/৪২৬
ইবনুল কাইয়িম বলেনঃ ‘’আল্লাহ তাদের ঈদ অনুষ্ঠানকে বাতিল বলে অভিহিত করেছেন। আর বাতিলকে সাহায্য বা সাফল্যমণ্ডিত করা বৈধ নয়’’ আহকামু আহলিল যিম্মাহ ৩/১২৪৪
ইবন উসাইমিন বলেনঃ ‘’ক্রিসমাস ডে অথবা অন্য কোনো ধর্মীয় উৎসব ও খুশিতে কাফেরদের মুবারাকবাদ দেয়া সর্বসম্মতিক্রমে অবৈধ। যেমন ইবনুল কাইয়িম তাঁর ‘আহকামু আহলিজ যিম্মাহ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, বিশিষ্ট কুফরের প্রতীক ও নিদর্শনের ক্ষেত্রে মুবারকবাদ দেয়া সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। যেমন ওদের ঈদ অথবা ব্রত উপলক্ষে মুবারকবাদ দিয়ে বলা ‘তোমার জন্য ঈদ মুবারক হোক’ অথবা ‘শুভেচ্ছা গ্রহন করো’ ইত্যাদি।
এ কাজে যদিও শুভেচ্ছাদাতা কুফর থেকে বেঁচে যায়, তবুও তা হারামের অন্তর্ভুক্ত। বরং এটা আল্লাহর নিকট গুনাহ এবং গযবের দিক থেকে মদ্যপান, খুন, ব্যভিচার ইত্যাদির উপর মুবারকবাদ দেয়ার চাইতেও অধিক বড় ও বেশি। বহু মানুষই যাদের নিকট দ্বীনের কোনো কদর নেই, তারা উক্ত পাপে পতিত হয়ে থাকে। কৃতকর্মের কুফল সম্পর্কে জানতে পারেনা। উপরন্তু কোনো মানুষকে পাপ, বিদা’আত অথবা কুফরের উপর শুভেচ্ছা জানিয়ে নিশ্চিতভাবে আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির শিকার হয়ে যায়।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ‘’যদি তোমরা কুফরী করো (তবে জেনে রাখ) আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। তিনি তার বান্দাদের কুফরী আচরন পছন্দ করেন না। যদি তোমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও, তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তা পছন্দ করেন’’ যুমার ৩৯/৭
ইবন জিবরীন বলেনঃ ‘’কাফেরদের কোনো উৎসব অনুষ্ঠানে মুসলিমদের অংশগ্রহন করা জায়েজ নয়। তাদের সাথে সামাজিক শিষ্টাচার বজায় রাখার খাতিরেও ঐ সমস্ত নব আবিষ্কৃত অবৈধ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া আল্লাহর বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আসমানী কিতাবসমুহে এবং আল্লাহর শরীয়তে এ ধরনের কার্যকলাপ বৈধ হওয়ার কোনোই প্রমান নেই। বরং এ হল বিধর্মী খ্রিষ্টানদের উদ্ভাবিত ও ইসলামী শরীয়ত বহির্ভূত কর্মকাণ্ড। এ ব্যাপারে আল্লাহর কোনো অনুমতি নেই।
বিজাতীয় ও অমুসলিমদের অনুষ্ঠান বর্জন করা এবং ইসলামের দেয়া বিধান ও উৎসবই একজন মুসলিমের জন্য পালনীয়। এবং শুধুমাত্র এতেই একজন মুসলিম সার্বিক কল্যাণ লাভ করতে পারে। নতুবা যারা অমুসলিমদের রীতিনীতি অনুসরন করবে ও তাদের আনন্দ উৎসবে উল্লাসিত হবে তারা রাসুল (সাঃ)-এর দলভুক্ত নয় বরং যাদের রীতিনীতি অনুসরন করবে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হিসাবে গণ্য হবেঃ
ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ''যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে সে তাদেরই দলভুক্ত গণ্য হবে'' আবু দাউদ ৪০৩১ (আলবানি হাসান বলেছেন)
আমর ইবন শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর বাবা ও দাদার সুত্রে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’বিজাতির অনুকরণকারী ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়। তোমরা ইয়াহুদী-নাসারাদের অনুকরণ করো না। কেননা ইয়াহুদীগন আঙ্গুলের ইশারায় এবং নাসারাগন হাতের ইশারায় সালাম দেয়’’ তিরমিযি ২৬৯৫; সাহীহাহ ২১৯৪ (আলবানি হাসান বলেছেন)
সুতরাং মুসলিমদের উচিৎ একমাত্র তাদের নিজেদের ধর্মীয় উৎসব পালন করা আর অমুসলিমদের রীতিনীতি ও ধর্মীয় উৎসব বর্জন করা। মহান আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুল (সাঃ)-এর মাধ্যমে যা কিছু এসেছে তাতেই আনন্দ লাভ করা, শুকরিয়া আদায় করা একজন মুমিনের কর্তব্য। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ‘’বল- আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ার বদৌলতে (যা এসেছে), এজন্য তারা আনন্দিত হোক’’ ইসরা ১০/৫৮
অন্য আরেক আয়াতে তিনি বলেনঃ ‘’সুতরাং তোমাকে যা দিয়েছি, তা গ্রহন করো আর শোকর আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হও’’ আ’রাফ ৭/১৪৪
নোটঃ অমুসলিমদের সাথে পার্থিব লেনদেন হতে পারে, তাদের সাথে সদাচার ও সদ্ব্যবহার করতে হবে। প্রতিবেশী যদি অমুসলিম হয় তাহলে তাকে ইসলাম প্রদত্ত হক প্রদান করতে হবে। তবে কোনো অবস্থাতেই তাদের ধর্মীয় উৎসবে যোগদান করা তো দুরের কথা কোনোরকম সাহায্য সহযোগিতা ও শুভেচ্ছা জানানো যাবে না। মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক জ্ঞান দান করুন।
লেখাটির ভুমিকা, তথ্য-উপাত্ত ও বিভিন্ন রেফারেন্সের জন্য যে সমস্ত গ্রন্থের সহযোগিতা নেয়া হয়েছেঃ
১) বিদা’আত হতে সাবধান- আব্দুল আযীয বিন আবদুল্লাহ বিন বায।
২) বিদা’আতের ভয়াবহতা- মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন।
৩) ফাতাওয়া আরাকানুল ইসলাম- মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন।
৪) ইসলামের দৃষ্টিতে মিত্রতা ও বৈরিতা- সালেহ বিন ফাওজান আল-ফাওজান।
৫) বিদা’আত থেকে সাবধান- সালেহ বিন ফাওজান আল-ফাওজান।
৬) বারো মাসে তের পরব- আব্দুল হামীদ ফাইযী।
৭) খুতবাতুল ইসলাম- ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর।
মহান আল্লাহ তায়ালা সবাইকে জাযায়ে খায়ের দান করুন।